তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-১২+১৩

0
270

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আহান কে দেখে প্রচুর ঘৃণা লাগছে অধরার।রেগে আহান’কে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।আহান কিছু বলছে না দেখে।আহান কে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল।

–জানোয়ার একটা।সব আপনার জন্য হয়েছে।আমি কালকে বারবার করে বলেছিলাম।স্যার আমার ছুটি লাগবে আমাকে ছুটি দেন।আপনি আমাকে ছুটি দেন নাই।আপনার শান্তি হয়েছে।কেনো এসেছেন,আমি কষ্ট পাচ্ছি।এটা দেখতে এসেছেন।এখনি বের হয়ে যান।না হলে আমি সবকিছু শেষ করে ফেলবো।বলছিলো আর আহানে ধাক্কা দিচ্ছিলো।স্যালাইন করার ফলে হাতে প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছে অধরা।তবুও আহানকে মেরেই যাচ্ছে।কেনো জানি অধরার মনে হচ্ছে,এই মানুষটার জন্য তার বাবা মারা গেছে।কখনো এই মানুষটাকে ক্ষমা করা উচিৎ হবে না।

অধরা একবার দৌড়ে বাবার কাছে যাচ্ছে।আরেকবার এসে আহান’কে মারছে।আর বলছে আপনি আর আপনার বাবা।আমার বাবার খুনি।আপনরার বেড়িয়ে যান।এভাবে দৌড়া দৌড়ি করতে করতে অধরা অজ্ঞান হয়ে যায়।অধরাকে একটা রুমে শুইয়ে রাখা হয়।ডক্টর নিয়ে আসেন আশরাফুল চৌধুরী।ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিনি।তার-ও মনে হচ্ছে অধরার বাবা মারা যাওয়ার পেছনে কোথাও না কোথাও তিনি-ও দায়ী।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম এসে জমা হয়েছে।আহান একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।মিসেস আফরোজা চৌধুরীর’ও আজ অধরার জন্য খারাপ লাগছে।না চাইতেই মেয়েটার ওপরে মায়া জমে যাচ্ছে।রুবিনা বেগম লাশের কাছে যাবে।তখনি মিনারা বেগম আসেন।

–কেনো এসেছো মা।তুমি খুব খুশি হয়েছো তাই না বলো।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।আমার কষ্ট দেখে তুমি তৃপ্তি হাসি হাসতে এসেছো মা।কেনো এসেছো।এখনি বেড়িয়ে যাও তুমি।

তখনি রুবিনা বেগম তার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।মেয়ের সাথে তিনিও কান্না করছেন।বহুদিন পরে মায়ের কোল পেয়ে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো মিনারা বেগম।মাকে ছেড়ে দিয়ে,আবার পাগলামি করতে লাগলো।সবাই সামলাতে না পেরে মিনারা বেগম কে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলো।ঘুমের ঔষধ টাও আজ বড্ড বেইমান হয়ে গেছে।কাজ করছে না।প্রায় একঘন্টা পরে কান্না করতে করতে পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলো।আস্তে করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।

বেলা এগারোটার দিকে মনির সাহেবের। জানাজা সম্পূর্ন হলো।পারা প্রতিবেশীরা রান্না করে অধরাদের বাসায় দিয়ে গেছে।কয়েকজন আহানদের নিজে হাতে বেড়ে খাইয়ে গেছে।সবাই খেলেও আহান খেলো না।চুপচাপ বসে আছে সবাই।পুরো বাড়ি জুরে পিনপিন নীরবতা।সন্ধ্যার দিকে অধরার ঘুম ভাঙে।কিছুক্ষণ পাগলামি করে।একদম চুপ হয়ে যায়।শান্তি দৃষ্টিতে মাটির দিকে চেয়ে বসে আছে।হাতে স্যালাইন চলছে।অধরার নানি অধরার পাশে এসে বসেছে।অধরা কোনো কথা বলছে না।এতক্ষণে অধরার আকাশের কথা মনে হলো।সারাদিন পাগলামির জন্য আকাশের খোঁজ নেওয়া হয় নাই।ছেলেটা গেলো কোথায়।ভাঙা কণ্ঠে বলে উঠলো।

–চাচি আকাশ কোথায়।সারাদিন কিছু খেয়েছে আকাশ।মানুষজন খুব ভয় পায়।একটু দেখবেন।বলল অধরা।

–তুই বস।এত চিন্তা করিস না।আমি দেখছি আকাশ কোথায়।বললেন রুবিনা বেগম।

–থাক তোমার আর নাটক করা লাগবে না।যদি পারো যাও নিজের মেয়ের পাশে থাকো।বলে’ই উঠতে যাবে।তখনি আহান আকাশকে নিয়ে ভেতর প্রবেশ করে।আহানের সাথে আকাশকে দেখে অধরা চিৎকার দিয়ে আকাশকে নিজের কাছে ডেকে নিলো।এত জোরে চিৎকার দেওয়াতে আকাশ চমকে উঠলো।

–আপনি কোন সাহসে আমার ভাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছেন।আমার বাবাকে মেরে আপনাদের শান্তি হয় নাই।আবার আমার ভাইকে মারতে আসছেন।

–অধরা আমি..

–আমি আপনার থেকে একটা কথাও শুনবো না।কি দেখতে এসেছেন।রং তামাশা দেখতে এসেছেন।রং তামাশা দেখে হয়ে গেলে চলে যান।আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে আপনাদের টাকা টা নিয়ে যাবেন।ওটা আমার কোনো কাজে আসে নাই।টাকার কথা মনে হতে অধরার ব্যাগের কথা মনে পড়লো।কি জানি ব্যাগ টা কোথায় আছে।

–আপাই তুই ওনাকে বকছিস কেনো।বাসায় এত মানুষ দেখে আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম।পরে রান্না ঘরে লুকিয়ে ছিলাম।আমার অনেক ক্ষুদা লেগেছিল আপাই জানিস।কেউ আমাকে খেতে দেয় নাই।উনি আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।আপাই জানিস আমি’ও না।বাবার করবে মাটি দিয়েছি।আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল আপাই।পরে উনি আমাকে বুঝিয়ে নিয়ে এসে খাবার খাইয়েছেন।আমার দিকে কারো নজরই ছিলো না।এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছ ছিলো।আর কথা গুলো বলছিলো।ছোট আকাশ টা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু এখনো বুঝে উঠতে পারে নাই।সে,কি হারিয়ে ফেলছে জীবন থেকে।

–এই তোকে খাবার খাইয়েছে মানে।তুই কেনো ওনার হাতে খাবার খেলি।তোর খাবারে আবার বিষ মিশিয়ে দেয় নাই তো আবার।

–কি বলছো এসব অধরা।আমি কেনো ওর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে যাব।

–আপনি একদম চুপ।আমি একটা কথা শুনতে চাই না আপনার থেকে।আকাশ এদিকে আয়।বলেই আবার আকাশকে নিজের কাছে টেনে নিলো।

–এটা তুমি কি করলে,আমি তোমাকে অধরাকে মারতে বলছিলাম।আর তুমি অধরার বাবাকে মেরে ফেললে।

–বিশ্বাস করো।আমি অধরার বাবাকে মারি নাই।আমি তো অধরা মনে করে।একটা নার্সকে মেরে ফেলছি।

–তোমাকে আমি একদম বিশ্বাস করি না।তুমি খালি মিথ্যা কথা বলো।

–বিশ্বাস করো আমি একদম মিথ্যা কথা বলছি না।আমি খবর পেয়েছিলাম।অধরা বিকেলের গাড়িতে উঠে বাসায় যাবে।আমি অধরার আগেই পৌঁছে গিয়ে ছিলাম।তুমিই তো বলেছিলে অধরা খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ে ছিলো।রাতে একটা নার্স খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ে বাসায় ফিরছিলো।আমি অধরা মনে করে তাকে মেরে ফেলছি।

–একদম মিথ্যা কথা বলবে না।আমি জানি অধরার বাবার অপারেশন থিয়েটারে তুমি ছিলে।আমি একশো পারসেন্ট শিওর।

–দেখো আমি একজন ডক্টর হয়ে।একটা রুগীকে মারতে পারি বলো।আমি খারাপ হতে পারি।কিন্তু এতটা খারাপ না।অধরার বাবার অপারেশন থিয়েটারে আমি ছিলাম না।

–তুমি যে কি তা আমি ভালো করেই জানি।আমি অধরাকে মেরে আমার বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি।কিন্তু অধরার বাবাকে মারতে চাই নাই।

–কি অধরার বাবা অধরার বাবা করছো।মনির কি অধরার বাবা নাকি।অধরার আসল বাবা মা তো।বলতে গিয়ে থেমে গেলো।মহিলাটি।

–অধরার বাবা মা তো কি।

–কিছু না।

–বলো।

–আমি তোমাকে সব কৈফিয়ত দিতে বাধ্য না।

–তোমার শহরে থাকা মুশকিল করে দিব।তুমি আমাকে চিনো না।

–আমি যদি ফেঁসে যাই।তাহলে তোমাকেও ফাঁসিয়ে দিব।

–তুমি যে,কি করছো।তোমার সত্যি টা সামনে আসলে।তোমার ফাঁসি নিশ্চিত।আমার বাবার অনেক টাকা আছে।কয়দিন পরে ঠিক জামিন করে নিয়ে আসবে।আমি তোমার মতো এত জঘন্য কাজ করি নাই।

–নিজে করো নাই।আমাকে দিয়ে করাচ্ছো।

–একদম বাজে কথা বলবে না।তোমার আমলনামা খুললে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাবে না।

–তোমার এত সাহস আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছো।আবার আমাকেই হুমকি দিচ্ছো।একটা ইনজেকশন দিয়ে দিব।দুই মিনিট এর মধ্যে শেষ তুমি।

–তোমার মতো মহিলাকে কে ডক্টর বানিয়েছেন।নিশ্চয় উনিও পাগল ছিলেন।তাই তোমার মতো মহিলাকে ডক্টর বানিয়েছেন।

–একদম আমাকে পাগল বলবে না।খবর খারাপ করে দিব।এই পাগল যদি পাগলামি শুরু করে না।তাহলে তুমি শেষ।

–দাঁড়াও তোমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছি।অধরাকে আমি একাই মারতে পারবো।বলেই মেয়েটি চলে যাচ্ছিলো।তখনি মহিলাটি মেয়েটির চুল টেনে ধরে।

–তোমার এত বড় সাহস।তুমি আমার চুল টেনে ধরো।আজকে তো আমাকে আমি ছাড়বোই না।বলেই দু’জন চুল টানাটানি করে মারামারি করতে লাগলো।

এভাবেই সাতটা দিন কেটে গেলো।মিনারা বেগম থেকে স্বাভাবিক আচরন করে।আবার থেকে থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করে।অধরা প্রথমে বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও।এখন ভেতরে ভেতর কেমন জানি সন্দেহ লাগে।ডক্টর যে ঔষধ গুলো দিয়ে যায়।সেগুলো খেলেই কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরণ করে।

সকালেও কি সুন্দর ভাবে কথা বললেন।জড়িয়ে ধরে কান্না করলো।কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো তাকে।কিন্তু ডক্টর আসায় বলতে পারলো না।ডক্টরের চোখ দু’টি অধরার ভিষণ চেনা চেনা লাগে।কিন্তু মনে করতে পারে না।কালকে শহরে চলে যাবে সবাই।মিনারা বেগমকে অধরার নানি তার সাথে নিয়ে যাবে।অধরা রুমে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলো।তখনি আহান এসে অধরার পায়ের কাছে বসে।অধরা রেগে জানালার কাছে চলে যায়।এই সাতদিন অধরা আহানের সাথে একটা কথা বলে নাই।আহানকে দেখলে তার ঘৃণা হয়।সয্য করতে পারে না।সে আহানকে।আহান অনেক রকম ভাবে অধরার কাছে মাফ চেয়েছে।আহানের কোনো কথায় অধরার মন গলাতে পারে নাই।হঠাৎ করেই অধরা আগুনে ফুলকি দেখতে পেলো জানালার কাছে।বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে অনেক দিকে চলে আসলো।টেবিলে থাকা চাকু টা হাতে নিলো।ব্যক্তিটি যখনি ম্যাচের কাটি ধরিয়ে রুমের মধ্যে ফেলতে যাবে।তখনি অধরা ব্যক্তিটির হাতে চাকু বসিয়ে দেয়।মা গো বলে চিৎকার করে উঠলো মানুষটি।অধরা দৌড়ে বাড়ির পেছনে গেলো।গিয়ে দেখলো চারিদিকে দাউ দাউে চারিদিকে জ্বলে উঠছে।অধরার এমন কাজ দেখে আহান প্রচুর অবাক হচ্ছে।একটা মেয়ে হতে এতকিছু কি ভাবে করতে পারে।অধরা সবাইকে ডাক দিলে সবাই এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।অধরা বাড়ির দেওয়া শুঁকে দেখলো।পুরো বাড়ির দেওয়ালে কেরোসিন তেল দেওয়ার।অধরার আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো।কেউ ইচ্ছে করে তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।কিন্তু সে কে।উত্তর খুঁজে পেলো না।অধরা রুমে আসতেই আহান প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

–তুমি এত সুন্দর ভাবে চাকু মারলে কিভাবে।তুমি খুবই দক্ষ হাতে চাকু চালালে।প্রশিক্ষণ ছাড়া এভাবে কোনো সাধারণ মানুষ চাকু চালাতে পারে না।

–এটা কোনো বিষয় টা আপাই এর কাছে।আমার আপাই তো…বলতে পারলো না।অধরা আকাশের মুখ চেপে ধরলো।

–তোর খুব বেশি কথা হয়ে গেছে।একরাতে না ঘুমিয়ে জেগে আছিস কেনো তুই।রাত জাগলে শরীর খারাপ হবে।যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর।

–আমাদের বাড়িতে দু’টো রুম।ঐ রুমে সবাই শুয়ে বসে আছে।বিছানায় জায়গা নাই।মাটিতেও জায়গায় নাই।তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো।সবাই সেই গল্প করছে।আম্মুর মন খারাপ সবাই আম্মুকে নিয়ে ব্যস্ত।

–কেনো আমার এতবড় একটা রুম তোর চোখে পড়ছে না।যা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়।

–তাহলে তুই আর দুলাভাই কোথায় ঘুমাবি।

–তোর মাথায় কে ঢুকিয়ে দিলো এসব।উনি তোর কেউ হয় না।একদম ভাই টাই বলে ডাকবি না।

–কিন্তু আম্মু বলেছে উনি আমার বড় ভাই হয়।সন্মান দিয়ে কথা বলতে বলছে।তুই তো বলিস বড়দের কথা অমান্য করতে হয় না।বড়দের কথা অমান্য করলে নাকি বেয়াদবি করা হয়।

অধরা আর কোনো কথা বলল না।চুপচাপ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।অধরার বিয়ের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তার মাকে।তার মা কিছু বলে নাই।শুধু কিছুক্ষণ আহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তারপরে সবাইকে বলছে।তার জামাইয়ের যেনো কোনো অযন্ত না হয়।এরপরে আর কোনো কথা বলে নাই অধরার মা।অধরা জানালা দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।শুকনো পাতার ওপরে রক্ত পড়ে আছে।ঘরের আলো দিয়ে তা বেশ ভালো বোঝা যাচ্ছে।সকালে গিয়ে ভালো ভাবে দেখতে হবে।তবে যে আসছিলো আগুন লাগাতে।সে,কোনো ছেলে না।চিৎকার শুনে-ই বুঝতে পেরেছিলো মেয়ের কণ্ঠ।কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিলো অধরা।তবে কি সে লক্ষের কাছাকাছি চলে এসেছে।মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।পাখি যখন নিজে যেচে ধরা দিতে চাইছে।তাকে ধরতে আমার কিসের সমস্যা।ভাবতে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অধরা।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

পরের দিন সকাল বেলা।সবাই রেডি হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।অধরার নানি মিনারা বেগমকে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছেন।আশরাফুল চৌধুরী অধরা কে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যাবে।এর জন্য তাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে।মাঝ রাস্তায় এসে,মিনারা বেগম আবার অস্বাভাবি আচরণ করলে লাগলো।মিনারা বেগমের পাশে আকাশ বসে ছিলো।আকাশকে নিজের পাশে বসে থাকতে দেখে আকাশের চুল ধরে মারতে লাগলো।উপায় না পেয়ে আকাশকে অধরার পাশে বসিয়ে দিলো।সন্ধ্যার দিকে সবাই যে,যার গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।

রাতে ফ্রেশ হয়ে সবাই খেতে বসেছে।আকাশ’কে দেখে চৌধুরী বাড়ির কাজের মেয়েটি কেমন জানি করছে।সবার খাওয়া শেষ।সবাই উঠে চলে গেলো।সুযোগ বুঝে।কাজের মেয়েটি কাকে একটা এসএমএস করে দিলো।সাথে সাথে মেয়েটির ফোনে কল আসলো।কলটি রিসিভ করে মেয়েটি বলল।

–আকাশ যদি সবাইকে সত্যি বলে দেয়।তাহলে আমরা সবাই ধরা পড়ে যাব।

–আকাশ যাতে মুখ খুলতে না পারে,তুমি তাড়াতাড়ি সেই ব্যবস্তা করো।না হলে আমি তোমার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

–কিন্তু আমি কি করবো আপনি বলেন।আকাশকে কি মেরে ফেলবো।

–একদম না।ছোট বাচ্চা ও।ওর তো কোনো দোষ নেই।তাহলে কেনো শুধু শুধু শাস্তি পাবে।ছেলেটা বাজে ভাবে জড়িয়ে গেছে।তুমি ছেলেটাকে ভয় দেখাও।বলো তুই যদি সত্যি কথা বলে দিস।তাহলে তোর আপাই মরে যাবে।ভয় দেখিয়ে কয়টাদিন রাখো।

–আর আকাশের মা।

–ওনার কথা তোমার চিন্তা করা লাগবে না।ওনার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

–আকাশকে তিতলির সাথে ঘুমাতে বলা হয়েছে।প্রথমে তিতলি রাগ করলে।বাবার রাগের কারণে চুপ হয়ে যায়।

–এই ছেলে একদম আমার রুমের কোনো জিনিসপত্রে হাত দিবি না।চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়।বলল তিতলি।

–আচ্ছা আপু।বলেই আকাশ চুপচাপ শুয়ে পড়ল।তিতলি অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বাধ্য ছেলে,কথা বলার সাথে সাথে শুনলো।মুখে মুখে তর্ক করলো না।এত সুন্দর শিক্ষা কে দিয়েছে ওকে।

অধরার নানি মিনারা বেগম-কে কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়ে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।মিনারা বেগম কিছু বলছে না।চুপ বসে আছে।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে।কি এমন ক্ষতি হতো,এই ভালোবাসাটা মনিরের সাথেও দেখাইতো।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই খাওয়া করছে।অধরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে।রেডি হয়ে নিলো।

–তুমি রেডি হয়ে নিচে আসলে যে,কোথাও যাবে মা।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–হ্যাঁ আমি অফিসে যাব স্যার।আপনার থেকে টাকা নিয়ে ছিলাম।ওটা তো আমার কোনো কাজেই আসে নাই।কিন্তু টাকা টা আমি হারিয়ে ফেলছি।এখন যদি অফিস না করি।তাহলে টাকা শোধ করবো কি করে।

–আমি বলছি কি মা।এখন তোমার মনের অবস্থা খারাপ।কয়টা দিন বাসায় থাকো।পরে না হয় অফিস শুরু করবে।

–সরি স্যার অধরা কারো দয়ায় বাঁচে না।ঋন যখন নিয়েছি।সেটা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার।বলেই গটগট করে চলে গেলো।

অফিসের আসতে-ই আদিল অধরার দিকে এগিয়ে আসলো।আদিলের সাথে মিমি,রিয়াও ছিলো।মিমিকে দেখে একটু ভাব নিয়েই চলে গেলো অধরা।

–দেখলে কেমন অ্যাটিটিউড দেখিয়ে চলে গেলো।বলল মিমি।

–অ্যাটিটিউড না।অধরার মনের অবস্থা এখন ভালো না।আর তুমি এসব বলছো মিমি।বলল রিয়া।

–অধরার জন্য দরদ উথলে পড়ছে।যে,মেয়ের বাবা মারা গেছে।সেই মেয়ের এতভাব আসে কই থেকে।বলল মিমি।

–নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্যের অবস্থা কখনো বোঝা যায় না।যেদিন নিজের সাথে ঘটবে।সেদিন বুঝতে পারবে।চলো রিয়া আমরা অধরার সাথে দেখা করে আসি।বলেই আদিল চলে গেলো।

–অধরা কেমন আছো।বলল রিয়া।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা কাজ বাদ দিয়ে।আমার সাথে কথা বলতে আসছো।স্যার দেখলে রেগে যাবে।

–তুমি কি রাগ করছো অধরা।

–না রাগ করবো কেনো।তোমরা কাজ করো যাও।ভালো ভাবেই বলল।

ওরা আর কিছু বলল না।চুপচাপ চলে গেলো।একটু পরে আহান আসলো।কোনো কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে গেলো।অধরা একগাদা ফাইল নিয়ে আহানের কাছে গেলো।অনুমতি নিয়ে আহানের রুমে প্রবেশ করলো।

–স্যার অনেক গুলো ফাইল জমা হয়ে গেছে।প্লিজ এগুলো সাইন করে দিন।তাহলে অনেক গুলো কাজ কমে যাবে।

–এখানে তো অনেক গুলো ফাইল আছে।সময় লাগবে।তুমি বসো আমি সাইন করে দিচ্ছি।

–আমার আরো কাজ আছে স্যার।সাইন করা হলে বলবেন।আমি এসে নিয়ে যাব।

–এমন করছো কেনো।কতবার আসা যাওয়া করবে।একটু বসো,আমি করে দিচ্ছি।

অধরা কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসলো।আহান ফাইলগুলো দেখে দেখে সাইন করছে।

–একটা কথা বলবো।

–আপনি একটা কথা বলবেন।তা-ও আবার অনুমতি নিচ্ছেন।

–না মানে তুমি বাসায় আমার সাথে কথা বলো না।অফিসে এসে বললে,তার আর কি।

–আপনার ফাইলগুলো,সাইন করা হয়ে গেছে।

–হ্যাঁ।

–তাহলে আমি আসছি।বলেই চলে গেলো।

রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে আহান।নিজেকে আজকাল বড্ড বেশি অপরাধী মনে হয়।সে,আসলেই খুব খারাপ,ভীষণ খারাপ।আজ তার জন্য অধরা তার বাবাকে হারিয়ে ফেলল।তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ছেড়ে চলে গেলো।আহান তার বাবা-মাকে কষ্ট দিলো।সে,আসলে কোনো কিছু হবার যোগ্যই না।না পেড়েছে ভালো সন্তান হতে,না পেড়েছে ভালো স্বামী হতে,না পেড়েছে কারো ভালোবাসার মানুষ হতে।জীবনে কষ্ট ছাড়া কাউকে কিছুই দিতে পারে নাই আহান।আজ নিজের তার ব্যর্থ মনে হচ্ছে।আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে।এবার নিচের দিকে তাকালো।এখানে থেকে যদি লাফ দেওয়া যায়।তাহলে আজকেই আমার সব কাহিনি শেষ।তাহলে অধরা’ও শান্তি পাবে।ছাঁদের রেলিং ধরে উপরের দিকে উঠতে যাবে।তখনি হাতে টান অনুভব করতে পারলো আহান।পেছনে অধরাকে দেখে চমকে উঠলো।আহান কিছু বলতে যাবে।অধরা কড়া কণ্ঠে বলে উঠলো।

–কি করতে যাচ্ছিলেন।এত রাতে ছাঁদে কি আপনার।

–না মানে কিছু না।ঘুম আসছিলো না।তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম।আজকের চাঁদ টা অনেক সুন্দর তাই না বলো।

–আমি জানতাম চাঁদ আকাশে থাকে।এখন আপনার থেকে প্রথম জানলাম চাঁদ মাটিতে থাকে।দেখি সরুন আমি দেখি আপনি কেমন চাঁদ দেখছিলেন।

–না,দূরে সরো পড়ে যাবে।

–এই কথাটা একটু আগে আপনার মনে ছিলো না।আপনি চাঁদ আকাশে না দেখে মাটিতে দেখছিলেন কেনো।আচ্ছা আপনি এমন কেনো।রাগ তো ঠিকি করতে পারেন।আর একটা মানুষের মন গলাতে পারেন না।আত্নহত্যা করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।আপনি এত ভিতু কেনো।এর থেকে আমার ছোট ভাই আকাশ বেশি সাহসী।একটা কিছু হতেই পারে না।টুক করে মরার জন্য তৈরি হয়ে যান।আরে নিজের জীবন কি এতটা সস্তা নাকি।ছেলে মানুষ এত দুর্বল হলে চলে।আমি তো জানতাম ছেলে মানুষ সব সময় সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকে।তাদের অনেক সাহস হয়।তারা সব সময় সব কিছুর সাথে যুদ্ধ করতে পারে।আপনার বেলা উল্টো কেনো।দেখা গেলো রাস্তায় একদল পাজি ছেলে এসে আমাকে পিটাচ্ছে আর আপনি আমাকে রেখে দৌড়ে পালাচ্ছেন।

আহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।অধরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।অধরার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আহানের স্পর্শ পেয়ে।আগে কখনো কোনো ছেলের এতটা কাছাকাছি যায়নি সে।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার।কাঁধে গরম পানির স্পর্শ পেতেই অধরা খেয়াল করলো আহান কান্না করছে।

–আচ্ছা আপনি এমন কেনো।ছেলে মানুষ হয়ে কান্না করেন।কখনো দেখেছেন ছেলে মানুষ কান্না।

–ছেলেরা তো মানুষ না।তাদের মন নেই।তাদের কান্না করতে ইচ্ছে করে না।তাদের কষ্ট প্রকাশ করার অধিকার নেই।ছেলে হয়েছি বলে কান্না করা পাপ নাকি।

–এতক্ষণ এই বড় বড় কথা কোথায় গিয়েছিল।আমি না আসলে টুস করে নিচে পড়ে যেতেন।

–তাতে তোমার কি।তোমার শান্তি হতো।প্লিজ অধরা তুমি আমাকে মাফ করে দাও।বিশ্বাস করো আমি আর এই অপরাধের বোঝা নিয়ে বেড়াতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হয়।আমি সে দিন তোমাকে যেতে না দিয়ে কি যে,বড় অপরাধ করেছি।ক্ষমা চাওয়ার কোনো ভাষা আমার নেই।

–হতেও পারে আপনি সে,আমাকে যেতে না দিয়ে অনেক বড় উপকার করেছেন।আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।

–মানে।

অধরা কিছু বলতে যাবে।তখনি একটি ছোট গোলাকার লাল আলো এসে তাঁদের দুজনের উপরে এসে পড়লো।অধরা আহান কে নিয়েই নিচে শুইয়ে পড়ল।

–কি হলো নিচে শুইয়ে পড়লে কেনো।

অধরা আহানের কানে কানে বলল।

–ভাবছি জামাই এর সাথে বাসর করি নাই।আজ রাতে এই ময়লার মধ্যে বাসর করবো।কেমন হবে।

অধরার কথায় আহান কেমন জানি লজ্জা পেলো।আস্তে করে বলল।

–এই ময়লার মধ্যে লাল আলো।

–এই ময়লার মধ্যে লাল আলো মানে।বলল অধরা।

–তুমি দেখলে অধরা কেউ আমাদের ছাঁদে টার্গেট লাইট দিয়ে টার্গেট করছে।

–আরে না সামনে বাসায় একটা টাকলা কাকু আছে।ওনার বিয়ে হয় নাই।আমরা প্রেম করছি।তাই ওনার সয্য হচ্ছে না।তাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।কোনো কথা বলবেন না।শুয়ে শুয়ে সিঁড়ির কাছে চলুন।

–আমি কেনো তোমার কথা শুনতে যাব।আমি এখন উঠে নিজের রুমে যাব।

–আমার কথা না শুনলে একদম জানে মেরে দিব।

–তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো।

–কাজে প্রমাণ দেখিয়ে দিব।একটু আগে বাঁচিয়ে দিয়েছি।এখন আমি-ই মেরে দিব।

আহান অধরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত এক চাহনি।চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট।আহানের কাছে অধরাকে নতুন মনে হচ্ছে।

–কাল খালি অফিসে যাই।তোমাকে আমি দেখে নিব।বলেই হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ির কাছে চলে গেলো।অধরা’ও আহানের পিছু পিছু গেলো।

আহান সিঁড়ি দিয়ে নামছে আর বকবক করছে।বেশি কথা বলা অধরা একদম পছন্দ করে না।এই ছেলে তো রীতিমতো তার মাথা খেয়ে দিচ্ছে।অধরা অদ্ভুত ভাবে পেছনে তাকালো।তারপরে বলল আহান পালান ভূত বলেই দৌড়ে দিলো।

–অধরা দাঁড়াও আমাকে রেখে যেও না।আমার ভয় লাগে।বলে’ই সেও দৌড় দিলো।তখন কষ্ট থেকে এসেছিলো আহান।তেমন কিছু মনে হয় নাই।কিন্তু অধরা এসে তাকে বোঝানোর পরে হিতাহিত জ্ঞান আসছে।কেনো যে,আসতে গেলাম।

অধরা রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।আহান খুলতে বললেও খুলছে না।তখনি আকাশ আসে।

–আহারে দুলাভাই আপু ঘরে নিচ্ছে না তোমাকে।

–তুমি এখানে কি করছো এতরাতে।

–আমার রাতে অনেক ক্ষুদা লাগে।তাই জন্য তিতলি আপুকে বলছিলাম।তিতলি আপু আমাকে নুডলস রান্না করে দিচ্ছে।

আহান ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো।তারপরে বলল।

–আকাশ তুমি আমার সাথে মজা করছো।রান্না তা-ও আবার তিতলি করছে।এটাও আমার বিশ্বাস করতে হবে।

–তুমি আমার বান্ধবী লাগো আমি তোমার সাথে মজা করবো।

–আমাকে কি তোমার মেয়ে মনে হয়।যে,বান্ধবী বলে সন্মধোন করলে।

–সরি ভাইয়া।

–ঠিক আছে।নিজের রুমে যা-ও।

আকাশ কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

অধরা রুমে বসে ভাবছে।তার নানির মেয়ে তিন টা।একটা তার মা।আরেকটা স্বামীর সাথে আমেরিকায় থাকে।তাহলে আরেকটা মেয়ে কোথায় থাকে।এটা তো আগে কখনো মাথায় আসে নাই।তার নানি’কে বলতে হবে।তার নানি নিশ্চয় জানবে।এটা এতদিন মাথায় আসে নাই কেনো।ভিষণ অস্থিরতা কাজ করছে অধরার মাঝে।কেনো যে,এতদিন মাথায় আসে নাই।এই ছোট বিষয় টা।ভাবতে ভাবতে খেয়াল হলো।আহান দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।দরজা খুলে দেখলো আহান দরজার কাছে নেই।ড্রয়িং রুমে আসতেই অধরার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

চলবে…..