তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব-১৪+১৫

0
265

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আকাশ,তিতলি,আহান তিন মিলে লুডু খেলছে আর নুডলস খাচ্ছে।অধরা তিতলির এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক।মনে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হে।অধরা কোনোকিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।

পরের দিন সকাল আশরাফুল চৌধুরী সবাইকে ডাকলেন।সবাই ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।তারপরে তিনি বলতে শুরু করলেন।

–আমি ঠিক করেছি।আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যাব।অধরা মা’র মন’ও খারাপ থাকে।ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে।আর সবাই মিলে ঘোড়াও হয়ে যাবে।এখন সবার মতামত চাচ্ছি।

–আমার অনেক দিনের শখ বাবা।আমি কক্সবাজারে ঘুরতে যাব।আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না বাবা।আমি ঠিক কতটা খুশি হয়েছি।বলল তিতলি।

–রোহান ক’টাদিন হলেই বলছে ঘুরতে যাবে।ওর বাবার কাজের জন্য নিয়ে যেতেই পারে না।গেলে খুব একটা খারাপ হবে না বাবা।বলল তিতির।

–তুমি যা ভালো মনে করো,তাই করো বাচ্চারা যদি খুশি হয়।তাহলে আমি’ও খুশি।বললেন মিসেস আফরোজা চৌধুরী।

–আমি যাব না।আমি সাঁতার জানি না।ওখানে অনেক পানি।আমার ভয় লাগে।বলল অধরা।

–আপাই এমন করে বলিস না।তুই ঘুরতে অনেক ভালোবাসিস।আমি জানি কক্সবাজারে যাওয়ার তোর কতটা ইচ্ছে ছিলো।এখন তুই না করতে পারবি না।

–বাবা ঘুরতে যাবে।সাথে ঝগড়াটে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার।দেখবে ওখানে গিয়েও সবার ঝগড়া করছে।বলল আহান।

–আপনি আমাকে ঝগড়াটে বললেন।বলল অধরা

–আমি কি একবারো তোমার নাম উল্লেখ করেছি।কোথায় আছে না।পড়লো কথা সবার মাঝে যার কথা তার মনে বাজে।সেই অবস্থা হয়েছে তোমার।এতগুলো মানুষ থাকতে তোমার কেনো মনে হলো আমি তোমাকে বলছি।তুমিই বা আমার কথা ধরলে কেনো।

–আমি ভাতমাছ খাই।ফিডার খাই না যে,এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারবো না।

–তোমার যেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি যাবে না,এমন করে পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছো কেনো।

–মিথ্যা কথা বললেন কেনো।আমি কোথায় আপনার পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছি।দেখাইতে না পারলে এবার সত্যি সত্যি আপনার পায়ের ওপরে উঠে দাঁড়াবো।

–কি ঝগড়াটে মেয়ে রে বাবা।এখন তো তোমার সাথে পারবো না।তুমি খালি অফিসে আইছো।তখন তোমাকে দেখাবো মজা।

–আপনি-ও এটা মনে রাখবেন।অফিস শেষ করে দিনশেষে আপনাকে আমার কাছেই আসতে হবে।তখন আপনাকে কে বাঁচাবে।বলেই গটগট করে চলে গেলো অধরা।

ওদের ঝগড়া দেখে সবাই হাঁসছে।

–আমি ঠিক করেছি,আমরা সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠবো।তাহলে সকালের মধ্যে পৌঁছাতে পারবো।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–আচ্ছা বাবা তাহলে আমরা সবকিছু গোছগাছ করে নেই।চল আকাশ বলেই চলে গেলো তিতলি।

সবাই যে,যার মতো চলে গেলো।আশা বাপের বাড়ি গেছে।আশাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হলো।আহানের বড় ভাই অফিস থেকে ছুটি নিলো।সবাই আনন্দে গোছগাছ করছে।আহান ও অধরার পিছু পিছু অফিসে চলে গেলো।মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

–অধরা কাজ করছিলো।তখনি আহান নিজের রুমে ডাকে।অধরা অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

–জ্বী বলুন স্যার আমাকে কি করতে হবে।

–বেশি কিছু না।পা আর মাথাটা ব্যাথা করছে একটু টিপে দিবে।

–স্যার আপনার গলা ব্যাথা করে না।

–কেনো।

–তাহলে আপনার গলাটা একটু টিপে দিতাম।

আহান গলা চেপে ধরে বলল।

–কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা।অধরা তুমি ভুলে গেছো।আমি তোমার কে।

–আপনি আস্ত একটা বলদ।চার পা আলা দেব।ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা।আর আমার একমাত্র অফিসের বস।

–কিছু বললে!

–সরি স্যার।

অধরা কোনো কথা না বলে আহানের মাথা টিপে দিতে লাগলো।ইচ্ছে করছে গলাটা একটু টিপে দেই।তাহলে শান্তি লাগতো।অধরার বিরক্তি দেখে আহান মনে মনে হাসলো।ত্রিশ মিনিট পরে আহান বলল।

–যা-ও আমার ক্ষুদা লাগছে।আমার জন্য হালকা কিছু খাবার নিয়ে আসো।অধরা চুপচাপ খাবার নিয়ে আসতে চলে গেলো।আজ খালি বাসায় ফিরুক।তারপরে মজা দেখাবো।আহান অধরার জন্য অপেক্ষা করছিলো।তখনি আশরাফুল চৌধুরী ফোন করলেন।

–আজকে দুপুরে বাসায় চলে এসো আহান।এটা বলার জন্য ফোন করেছিলাম।

–আচ্ছা বাবা চিন্তা করো না।

–এই নিনি আপনার খাবার।

–তুমি আমার রুমে অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করলে কেনো।আবার দরজার কাছে যা-ও।তারপরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে।

অধরা বিরক্ত হয়ে আবার গেলো।অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলো।আহানের খাওয়া শেষ হলে সেখানে থেকে বেড়িয়ে আসলো।

দুপুরের দিকে সবাই যে,যার মতো খাওয়া দাওয়া করছে।অধরা নিজের মতো কাজ করছে।আহান এসে বলল।

–চলো বাসায় যাব।

–এখনি কেনো।

–সেই কৈফিয়ত কি আমি তোমাকে দিব।

–আমি যাব না।আমার অনেক কাজ পরে আছে।

–তুমি আমার মুখে মুখে কথা বলছো।

–সরি স্যার।তারপরে সবকিছু গুছিয়ে অধরা আহানের সাথে বাসায় ফিরে গেলো।

আহান গোসল করার জন্য জামাকাপড় ওয়াশরুমে রেখে আসলো।বেলকনিতে বসে বসে ফোন চালাচ্ছে।এই সুযোগে অধরা আহানের জামাকাপড় সরিয়ে ফেললো।আহান আসছে না দেখে অধরা নিজেই গোসল করার জন্য ওয়াশরুম যাবে।তখনি আহান আসে।হয়তো অধরার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।

–চলে আসলেন পায়ের ওপরে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য বলল অধরা।

আহান কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।শরীরে কয়েক মগ পানি ঢালতেই খেয়াল করলো তার জামা কাপড় নেই।আরে এখানেই রেখে গিয়েছিল।গেলো কই।ওয়াশরুম থেকে চিৎকার করে বলল।

–অধরা তুমি আমার জামা কাপড় সরিয়েছো।

অধরা কোনো উওর দিলো না।দেখ ব্যাডা কেমন লাগে।অফিসে আপনি আমার বস হতে পারেন।আপনার রাজত্ব শুধু মাত্র অফিসে।এখন আপনার কি হবে আহান চৌধুরী।বাসায় তো আপনার হুকুম চলবে না।উওর না পেয়ে আহান আবার বলল।অধরা এবার উত্তর দিলো।

–সর্বনাশ আহান চৌধুরীর জামা কাপড় চুরি হয়ে গেছে।বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিছু করে নাই।

–দেখো মজা করো না।আমার জামাকাপড় দাও।সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠতে হবে।এখন গোসল করে আমি একটু ঘুমাবো। আমার ঘুমের দরকার আছে।

–দিতে পারি একটা শর্ত আছে।আপনি আগে আমাকে সরি বলুন।

–কেনো কিসের জন্য সরি বলবো।

–সকালে আপনি আমাকে ঝগড়াটে বলছিলেন।

–আচ্ছা বলবো।তুমি একহাতে জামাকাপড় দিবে।আমি তোমাকে সরি বলবো।

অধরা জামা কাপড় দিতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত টেনে ধরে ওয়াশরুমের মধ্যে ফেলে দিলো।তারপরে বালতির পানির মধ্যে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য অধরার মুখ চেপে ধরলো।অধরাকে ছেড়ে দিতেই অধরা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।আহান জামা কাপড় নিয়ে চলে যেতে লাগলে অধরা পা বাঁধিয়ে আহানকে ফেলে দিয়ে বলল।

–অধরার সাথে ধোঁকা বাজি।এবার আপনি দেখবেন আহান চৌধুরী আপনাকে আমি কি করি।

–তুমি আমার কচু করবে।তুমি আমার সাথে মারামারি লাগবে নাকি।যে,ভাবে তাকিয়ে আছো।

–দরকার পড়লে তাই লাগবো।

–ওকে দেখা যাক,কে জিতে।আমি তোমাকে হারিয়ে দিব।

আহান অধরার দিকে এগোতে যাবে।তখন অধরা সরে যায়।আহানের মাথা গিয়ে বালতির সাথে বাড়ি খায়।

অধরা মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বলল।

–আহারে বেচারা আহান চৌধুরী মারামারি শুরু করার আগেই টুস।আহান উঠতে যাবে।তখনি অধরা আহানকে ফ্লোরে শুয়ে আহানের পিঠের উপরে শুয়ে পড়ে।

–আম্মু তোমার ছেলেকে বাঁচাও।একটা হাতি এসে তোমার ছেলের উপরে পড়েছে।

–আমাকে কোন দিক দিয়ে আপনার হাতি মনে হয়।

–সব দিক দিয়ে।এখন আমার পিঠ থেকে আল্লাহর রস্তে নামো।

–আগে হার শিকার করবেন তারপরে।

–আমি চাইলে কিন্তু তোমাকে ফেলে দিতে পারি।ভালো ভাবে বলছি সরো।

–সরবো না।পারলে ফেলে দিয়ে দেখান।

আহান হাত বাড়িয়ে ঝরনা ছেড়ে দিলো।মুখে উপরে পানি পড়তেই অধরা কাত হয়ে গেলো।সাথে সাথে আহান হালকা উঠে পর।ফ্লোরের সাথে অধরার এক চেপে ধরলো।অধরার এক হাত অধরার পিঠের নিচে।

–এখন কোথায় যাবেন মিসেস অধরা চৌধুরী।এতক্ষণ তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলেন।এবার আপনাকে কে বাঁচাবে।

আহানের চুল থেকে টপ টপ করে পানি ঝরে অধরার মুখে পড়ছে।অধরা পিঠের নিচে থেকে এক হাত বের করে।আহানের চুলগুলো টেনে নিচে শুয়ে ফেলতে চেয়েছিলো।কিন্তু উল্টা হয়ে গেলো।আহান সোজা অধরার গায়ের উপরে পরে গেলো।

–তোমার এত সাহস আমার চুল টেনে আমাকে ফেলে দিতে চেয়েছিলে।এখন যদি তোমার একটা চুলও আমি আস্ত না রাখি।অধরার কানের কাছে গিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল আহান।আহানের এমন শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো অধরার মনে ঝড় তুলে দিয়েছে।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে অধরার।ধীর কণ্ঠে বলল।

–দেখি সরুন।ঠান্ডা লাগছে আমার।

–সরবো না।পারলে আমাকে সরিয়ে দেখাও।

–ভালো ভাবে বলছি।

–সরবো না।

অধরা কোনো কথা না বলে আহানের গলায় নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দিলো।সাথে সাথে আহান লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

–দেখছেন কথা না শুনলে কি করে কথা শোনাতে হয়।

–পেতনী সত্যি সত্যি আমাকে খেয়ে ফেলবে নাকি।মা’রে কি জোরে কামড়ে দিয়েছে।লাল হয়ে গেছে।এখন আমি সবাইকে মুখ দেখবো কি করে।বলেই দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।অধরা কোনো কথা বললো না।এটাই সুযোগ পালিয়ে যাওয়ার।অধরা উঠে দাঁড়ালো দরজা খুলতে যাবে।তখনি আহান অধরার হাত ধরে অধরার দিকে এগোতে লাগলো।আহান কি করতে চাইছে।তা বোঝার চেষ্টা করছে অধরা।আহান অধরার অনেক টা কাছে চলে এসেছে।অধরা কিছু বলতে যাবে।আহান অধরাকে ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে।বাহিরে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা বাহিরে থেকে লাগিয়ে দিলো।

–হারামি ছেলে একটা।এই ছিলো তোর মনে।আমার জালে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলো।একবার খালি বের হই তারপরে আছে।

দরজার ওপাশ থেকে আহান বলল।তুমি হার শিকার করলে আমি দরজা খুলে দিব।এর আগে না।এখন তুমি ঠিক করো তুমি কি করবে।

–আচ্ছা আমি হার শিকার করলাম।দরজাটা খুলে দিন।আহান কাপড় চেঞ্জ করে এসে দরজা খুলে দিলো।অধরাও চেঞ্জ করে ফেললো।

সন্ধ্যা বেলা সবাই যে,যার ব্যাগ নিয়ে নিচে আসলো।

–সবাইকে দেখছি।অধরাকে তো দেখছি না।অধরা কোথায়।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।

–অধরা ঘুমিয়ে ছিলো বাবা।আসছে।ওর একটু দেরি হয়ে গেছে।বলল আহান।তারপরে অধরা আসলে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়ল।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।সবাই সবার মতো মজা করছে।গান বলছে।গল্প করছে।অধরা আহানের পাশে চুপচাপ বসে আছে।ঘুম হয় নাই অধরার।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।তবুও সবাই খুশি দেখে নিজের বিরক্তিকে দূরে ঠেলে দিলো।অধরার ইচ্ছে করছে।খোলা আকাশে নিচে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে।নিজের ইচ্ছে টাকে আর দমিয়ে রাখলো না অধরা।আহানকে বলল।

–বলছিলাম কি গাড়ির গ্লাস টা একটু নামিয়ে দিতে বলুন না।আমি মাথা বের করে দিব।

–মাথা বের করে দিয়ে কোথায় যাবে।

–কেনো আপনার শশুর বাড়ি।

–কিন্তু আমার শশুর বাড়ি তো গ্রামে।

–আপনি বলবেন কি না।

–না গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে থাকো।গাড়ির গ্লাস নামানো যাবে না।বাহিরে মাথা দিয়ে রাখলে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

–প্লিজ আমার মাথা যন্তনা করছে।আমি বেশি মাথা বের করবো না।খালি একটু বের করে রাখবো।আহান কোনো কথা বলল না।ড্রাইভার করে বললে ড্রাইভার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলো।অধরা মাথা বের করে দিলো।বাতাস এসে অধরার মুখে পড়ছে।অধরার সামনে থাকা অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে।অধরা হাত বাড়িতে বাহিরের দিকে যাবে।তখনি আহান অধরাকে ধরে ফেলে।রাগি দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকায়।অধরা থেমে যায়।বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।রাতে কখনো জার্নি করা হয় নাই অধরার।এই প্রথম রাতে জার্নি করছে অধরা।বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে অধরা।আহান অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।অধরার ছোট ছোট গুলো বারবার অধরাকে বিরক্ত করছে।অধরা বারবার চুলগুলোকে কানে গুজে দিচ্ছে।এটা দেখে আহান বেশ মজা পাচ্ছে।

–পেয়েছি ওকে জ্বালানোর বুদ্ধি।এবার কোথায় যাবেন।মিসেস অধরা চৌধুরী।বলে’ই অধরার খোঁপা করা চুলগুলো খুলে এলোমেলো করে দিলো।

অধরা চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো।তারপরে রেগে বলল।

–এটা কি করলেন আপনি।জানেন এক ঘন্টা যুদ্ধ করার পরে আমি চুলের প্যাচ ছাড়িয়েছি।এভাবে আপনি আবার আমার সব এলোমেলো করে দিলেন।আমি আর চুল রাখবোই না।সব কেটে ফেলবো।রাগে,দুঃখে, কষ্টে অধরার কান্না আসছে।প্রতিদিন চুলের সাথে কম যুদ্ধ করতে হয় না অধরার।আহানকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।বেশ বিরক্ত আহানের ওপরে।সব চুলগুলো একসাথে অধরাকে হামলা করলো।অধরা বিরক্ত হয়ে উঠেছে।

–এমন করছো কেনো।থাক না উড়তে দাও।বেশ ভালো লাগছে।তুৃমি কি সুন্দর ভাবে উড়ছো।তোমার চুলগুলোরও তো ইচ্ছে করে উড়ে বেড়াতে।

অধরা আহানের প্রশ্নের কোনো উওর দিলো না।নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে।কখনো অন্যের অবস্থা বোঝা যায় না।দোয়া করি আহান চৌধুরী,আপনার কোমড় পর্যন্ত চুল হোক।তাহলে বুঝবেন কেমন লাগে।অধরা মন খারাপ করে,দুই হাতে চুলগুলো ধরে আছে।আহানের বেশ খারাপ লাগলো।আহান অধরার চুলগুলো নিজের দু’হাতে ধরে সুন্দর করে খোঁপা করে দিলো।

অধরা অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আপনি এত সুন্দর করে খোঁপা করলেন কিভাবে।এত শক্ত ভাবে আমি’ও খোঁপা করতে পারি না।

আহান কিছু টা ভাব নিয়ে বলল।

–আমি আহান চৌধুরী।আমি সব পারি।

–এমন ভাবে বলছেন।দশ বারোটা সংসার করে ফেলছেন।

–একটা বউয়ের জ্বালায় বাঁচি না।আবার দশ বারোটা।

–কেনো আমি আপনাকে কি করেছি।

–কি করোনি তাই বলো।

–বিয়ের আগে কয়টা প্রেম করছেন।কয়টা মেয়ের চুল এভাবে বেঁধে দিয়েছেন।

–একদম বাজে কথা বলবে না।আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি।একটা’ও প্রেম করি নাই।ভার্সিটিতে উঠে কিভাবে যে,রুহির সাথে রিলেশন হয়ে গেছে।আমি নিজে’ও জানি না।আমি কখনো কোনো মেয়ের আশেপাশে যায় নাই।খোঁপা তো দূরে থাকলো।একদিন শুধু রুহির হাত ধরে ছিলাম।তা-ও ওর রিকুয়েষ্টে।আমি নিজে থেকে ধরি নাই।রুহি নিজেই আমার হাত ধরে ছিলো।একদমে কথাগুলো বলল আহান।

অধরার মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো।আহানের কথার কোনো উওর দিলো না।ভেতরে ভেতরে কেমন অস্থিরতা কাজ করছে।এত খারাপ লাগছে কেনো তার।ভাবতে ভাবতে গাড়ির জানালায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো অধরা।আহান বোকার মতো তাকিয়ে আছে।এতগুলো কথা বলল কিন্তু কোনো উওর করলো না অধরা।অনেকক্ষন অধরার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,অধরাকে দু’বার ডাক দিলো।তা-ও অধরার কোনো হেল দোল নেই।অধরাকে সামনের দিকে ঘোরাতেই দেখলো অধরা ঘুমিয়ে গেছে।আহান ড্রাইভার কে বলল গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দিতে।তারপর অধরাকে নিজের বুকের মধ্যে শুইয়ে নিলো।

ভোর প্রায় হয়েই আসছে।সবাই গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে।অন্ধকার ছুটতে শুরু করছে।দু’একটা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে।আহানের ঘুম ভেঙে গেলো।সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,আহান বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো।একদল বাচ্চা, তাদের হাতে কায়দা।হয়তো আরবি পড়তে যাচ্ছে।আহানের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো।সে-ও ছোট বেলায় ভোরে উঠে অজু করে কায়দা হাতে নিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়তো।আরবি পড়া শেষ হলে,সবাই মিলে শিউলি ফুল কুড়াইত।সেই ফুলের মালা বানিয়ে তিতির আপুকে দিত।আপু কত যে,খুশি হত।খুশি হয়ে আহানকে কতগুলো যে,চকলেট কিনে দিতো।ভাবতেই আহানের ভালো লাগছে।অধরা আহানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।মেয়েটা কাছে থাকলে,আহানের ভেতরে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে।ভিষণ ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে অধরার জন্য।আমি যদি না থাকি তাহলে অধরা কার সাথে ঝগড়া করবে।অধরার সাথে ঝগড়া করার জন্য হলে-ও আমি কয়টা দিন বাঁচতে চাই।আল্লাহ যেনো আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।এসব ভাবছিলো আহান।তখনি আকাশ ঘুৃম ঘুম চোখে আহানকে বলে।

–ভাইয়া আমি’ও তোমার কোলের মধ্যে ঘুমাবো।

–কেনো তোমার ঘুৃম হয় নাই।

–হয়েছে।কিন্তু তুমি আপাই-কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো।আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে না কেনো।আমি ছোট মানুষ আমাকে বেশি আদর করা উচিৎ।তা-না করে তুমি আপাইকে বেশি আদর করলে।এই ছিলো তোমার মনে ভাইয়া।

–এই আকাশ কিসব বলছো।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি তোমার আপাইকে-ই তো আদর করছি।অন্য মানুষকে তো করি নাই।তোমার তো খুশি হবার কথা।

–এটা’ও সত্যি কথা বলছো।তাহলে আমি তিতলি আপুকে বলছি।তুমি আপাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো।তিতলি আপু যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।

–লক্ষি ভাই আমার।এখন কাউকে ডাকিস না।আমি আসার সময় তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।তুই যা,চাইবি তোকে তাই দিব।

–আমাকে চকলেট কিনে দিলে কাউকে ডাকবো না।

–আচ্ছা তোমাকে আমি চকলেট এর দোকান এসে দিব।তবু্ও কাউকে ডেকো না।

–আচ্ছা বলে-ই আবার সামনের দিকে ঘুরে বসলো আকাশ।

–আমার ভাইকে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে।আহানের কাছে থেকে সরতে সরতে বলল অধরা।আহান আবার নিজের কাছে টেনে নিলো অধরাকে।

–কি হচ্ছে টা কি।এমন করছেন কেনো।

–আমার বউ আমার যা,খুশি ইচ্ছে করবো আমি।

–আমি আপনার বউ হলে-ও আপনি ভালো অন্য কাউকে বাসেন।একদম ন্যাকামি করবে না।আপনার ভালোবাসা এত পাতলা কেনো।হালকা বাতাস উঠলেই ঝড়ে পড়ে যাবে।

অধরা কথাটা বলার সাথে সাথে আহান অধার কাছে থেকে দ্রুত সরে আসলো।অধরা তো সত্যি কথা বলছে।তাহলে সে,অধরার প্রতি এত দূর্বল হয়ে পড়ছে কেনো।রুহি ছাড়া সে,কাউকে ভালোবাসতে পারে না।ভাবতেই নিজের খুব রাগ হলো।আহান এক দিকে অধরা আরেক দিকে।দু’জন দুদিনকে তাকিয়ে আছে।সাতটার সময় তারা কক্সবাজারে এসে পৌঁছালো।আশরাফুল চৌধুরী আগে থেকে হোটেল বুক করে রেখে ছিলেন।তাই আর কোনো সমস্যা হয় নাই।সবাই চাবি নিয়ে যে,যার মতো রুমে চলে গেলো।

অধরা রুমে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল।

–সারারাত তো ঘুমালে।এখন আবার কিসের ঘুম।চলো বাহিরে যাই।

অধরা আহানের প্রশ্নের কোনো উওর দিলো না।আহান প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আহান চলে যেতেই অধরা লাফ দিয়ে উঠে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে একটা ফোন করলো।

–তুমি বেঁচে আছো।সবাই জানে না।

–না।

–তুমি সুস্থ হয়েছিলে,কে কে জানতো।

–আকাশ,মিনারা,আর ডক্টর।

–তোমার ডক্টর কে ছিলো।

–আমি জানি না।আমার জ্ঞান ছিলো না।আমাকে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়েছে।

–অধরাকে জানাও নাই।

–জানাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু অধরা ফোন ধরে নাই।অনেক বার ফোন করেছিলাম অধরাকে।

–এখানে আসলে কি করে।

–আমি জানি না।আমি হসপিটালে ছিলাম।রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে এখানে আবিষ্কার করছি।

–তারমানে তুমি সত্যি জানো না।

–আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না।আপনার কি মনে হয়।আমি আপনাকে মিথ্যা কথা বলছি।আপনাদের জন্য আমার আর আমার বউয়ের জীবন টা নষ্ট হয়ে গেলো।না জানি আমার অধরা কেমন আছে।কি করছে,আবার যদি…

–কি!

–কিছু না।আপনারা এখানে কি করে আসলেন।

–অপেক্ষা করো সব জানতে পারবে।

–কু*ত্তা*র বা*চ্চা আমাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়ে কেনো এখানে ডেকে নিয়ে আসলি।কেনো আমার সময় নষ্ট করলি।আজ সবাইকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।তোদের এত সাহস দিয়েছে কে।

বীর দৌড়ে এসে সাইকো কুইন কে আটকালো।

–ম্যাডাম প্লিজ আপনি শান্ত হন।আমরা ভুল খবর দেই নাই।আপনি রাগ করবেন না।ওরা এখানেই ছিলো।কিন্তু গতকাল দেশ ছেড়েছেন।এই দেখুন আমরা সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করেছি।

সাইকো কুইন ভিডিও টি দেখে ফোন টাকে দুই টুকরো করে ফেললো।দেওয়ালে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে লাথি মারলো।হাতের কাছে যেটা পাচ্ছে।ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নিজের চুল দু’হাতে খামচে ধরে মাটিতে বসে পড়লো।

–তোদের জন্য যদি আমি ধরা পড়ে যাই।একটাও আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না।একটা ছেলের কলার ধরে বলল।তারপরে ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

–বীর বলছিলাম কি।

–গলা দিয়ে আর একটা কথা বললে,দেখবে তুমি আছো।তোমার গলা নেই।

আকাশ আর তিতলি সমুদ্রের ধারে খেলছে।আহান গিয়ে তাদের সাথে যোগদান করলো।

চলবে…..