তৃ-তনয়া পর্ব-০৪

0
624

“তৃ-তনয়া”
পর্ব- ৪
(নূর নাফিসা)
.
.
এদিকে নাজিয়ারা বাড়িতে ফিরলে আরাফ স্কুলের জন্য রেডি হতে লাগলো। নাজিয়া কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখছে। বাসা থেকে চলে আসায় তারও মন খারাপ হয়ে আছে। যেটা আরাফ লক্ষ করেছে। নাজিয়া আলমারিতে কাপড় রাখতে গেলে আরাফ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– চলে আসায় মন খারাপ?
– উহুম।
– মিথ্যে বলছো। আমি কিন্তু বলিনি তোমাকে চলে আসতে।
– আমিও তো বলিনি তুমি চলে আসতে বলেছো।
– তাহলে মন খারাপ কেন!
নাজিয়া আরাফকে ছাড়িয়ে পেছনে ফিরে বললো,
– এমনি। শার্টের বোতাম খোলা কেন!
আরাফ মুচকি হেসে বললো,
– তোমার জন্য।
নাজিয়া আরাফের দুষ্টুমিতে ব্রু কুচকে তাকালো তার দিকে অত:পর শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিতে লাগলো। আরাফ বললো,
– এবার একটু স্বার্থপরের মতো কথা বলি, চলে এসেছো আমার জন্য ভালো হয়েছে। গত দু রাত ঘুম হয়নি আমার! পরশু রাতে একা ঘরে ছটফট করেছি আর কাল রাতে আশিকের ঘুম হারাম করেছি। সারারাত বসে বসে দু ভাই গল্প করে কাটিয়েছি।
– হুম, জানি আমি। সেজন্যই তো চলে এলাম।
– হ্যাঁ, আমিও জানি! চলে আসার দোষটা শেষ মেষ আমার উপরই পড়বে!
নাজিয়া হেসে উঠলো আরাফের কথায়। আরাফ তার কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
– আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
আরাফ চলে গেলো আর নাজিয়া ঘর গুছিয়ে বাইরে বের হলো। আয়েশা বেগম রান্নাঘরে ছিলো। নাজিয়াকে ঘর থেকে বের হতে দেখে কর্কশ গলায় বললেন,
– নাইওর শেষ হইছে তো! এইবার সংসারের কাজকর্মে হাত লাগাও। মেহমান আসবো দুপুরের পরে। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখো।
– আচ্ছা।
নাজিয়া কাজে লেগে গেলো। ঘরের সবগুলো রুম ঝেড়ে সম্পূর্ণ বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করলো। গত দু’দিনে থালাবাসন যা অপরিচ্ছন্ন ছিলো সব ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলো। কাজকর্ম শেষ করে গোসল করে আবার রান্না বসালো। রাতের রান্নাসহ একবারেই শেষ করবে সবটা। দুপুরে আয়াত কলেজ থেকে বাড়ি ফিরলো। আলফাজ সাহেব ও বাড়ি ফিরেছেন হাতে ফলফলাদি নিয়ে। কিছুক্ষণ পরেই মেহমান এলো। আয়াতের রুমেই বসানো হয়েছে মেহমানদের। আয়াত নাজিয়ার রুমে চলে গেলো। নাজিয়া মেহমানদের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করলো। অত:পর আয়াতের কাছে এলো। আয়াত ফোন নিয়ে নাজিয়ার খাটে বসে আছে। নাজিয়া বললো,
– আয়াত তুমি রেডি হওনি। মেহমান বসে আছে তো। তারাতাড়ি করো।
– ভাবি, আমি কারো সামনে যেতে পারবো না।
– এটা কেমন কথা! উনারা বসে আছে তো। আম্মা তোমাকে তারাতাড়ি যেতে বললো।
– মাকে গিয়ে বলো আমি যেতে পারবো না। আর মেহমানদের জন্য এতো দরদ হলে তুমি যাও!
– কি বলছো এসব! আর তুমি এখন না গেলে তো আব্বা আম্মার অসম্মান হবে।
– হোক, বলেছে কেন আসতে! যাবো না আমি।
আয়াত ভেঙচি কেটে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে রইলো। নাজিয়া তাকে মানাতে না পেরে আয়েশা বেগমের কাছে এসে বললো,
– আম্মা একটু প্রয়োজন ছিলো।
আয়েশা বেগম উঠতে যাবেন এমন সময় ছেলে মা বললো,
– এটা কে?
আয়েশা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– এটা আমার বড় ছেলের বউ।
– মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর বউ পেয়েছেন।
আয়েশা বেগম মনে মনে অসন্তুষ্ট হলেও প্রকাশ্যে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
– জ্বি।
ওদিকে আলফাজ সাহেব নাজিয়ার ও তার পরিবারের প্রশংসাও তুলে ধরছেন মেহমানদের কাছে। যেটা আয়েশা বেগমের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না!
তিনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে নাজিয়াকে বললো,
– বারবার মেহমানদের সামনে যেতে হবে তোমার! স্বামী জীবিত থাকতেও দ্বিতীয়বার বিয়ে করার শখ জেগেছে মনে! যেই দেখছে বিয়ের ঘর আসছে সেই মেহমানের সামনে যাওয়ার বাহানা খুজছে! বাবা-মা কি শিক্ষা দিয়েছে কে জানে!
কথাটা দুর্যোগের মতো আঘাত হানলো নাজিয়ার মনে! সে কি অপ্রয়োজনে গিয়েছিলো তাদের সামনে! চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে তার! সে তবুও তা নিয়ে কিছু বললো না! দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে খুব কষ্টে নিচু স্বরে উচ্চারণ করলো,
– আম্মা, আমি আপনাকে ডাকতে গিয়েছি। আয়াত রেডি হতে চাচ্ছে না!
আয়েশা বেগম হনহন করে নাজিয়ার রুমে চলে গেলো আর নাজিয়া দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে এসে ওড়নায় মুখ চেপে ধরে কান্না করতে লাগলো! মানুষ মানুষকে এভাবে আঘাত করে কেন! একটু বুঝতে চেষ্টা করে না কেন কেউ কাউকে! সে তো শাশুড়ির কোনোকথায় অবাধ্য হয় না, তবুও তাকে কেন এমন কথাবার্তা শুনতে হয়!
হঠাৎ নাজিয়ার কাধে কারো স্পর্শ পড়তেই নাজিয়া চমকে উঠলো! দু’হাতে দ্রুত চোখ মুছে পেছনে তাকিয়ে দেখলো আরাফ! নাজিয়া দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে অযথা থালাবাসনে হাত লাগিয়ে বললো,
– তুমি এতো তারাতাড়ি চলে এলে যে!
আরাফ কোনো জবাব না দিয়ে নাজিয়াকে তার দিকে ঘুরিয়ে দাড় করালো। দু’হাতের বৃদ্ধা আঙুলে চোখের নিচটা ভালোভাবে মুছে দিয়ে বললো,
– আজকের পর থেকে বাড়িতে মেহমান এলে প্রয়োজনেও সামনে যাবে না।
নাজিয়া কান্না আর লুকিয়ে রাখতে পারলো না। সে আরাফকে জড়িয়ে ধরে আরাফের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে বললো,
– বিশ্বাস করো, আমি অপ্রয়োজনে যাই নি। খাবার দিতে আর আম্মাকে আয়াতের জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম শুধু।
– চুপ। কান্না থামাও, শুনেছি আমি মায়ের কথা। মেহমান বাসায় আছে তাই কিছু বললাম না। আর এজন্যই তোমাকে বললাম, আর কখনো প্রয়োজনেও যাবে না।
– খবরদার, মা বাবার মুখের উপর কিছু বলবে না। এটা বেয়াদবি হবে।
নাজিয়ার কান্না যেন থামছেই না। কেন জানি আরাফের বুকে মাথা রেখে তার কাদতেও ভীষণ ভালো লাগছে! আরাফ মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– আরোহীর আম্মু, কান্না থামাও এবার। মাথা ব্যথা করবে কাদলে। দেখো, ক্ষুধায় আমার পেট পিঠ একে অপরের সাথে লেগে যাচ্ছে!
নাজিয়া তাকে ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে চোখ মুছতে লাগলো। আরাফ তার হাত সরিয়ে নিজ হাতে চোখ মুছে কপালে চুমু দিলো। নাজিয়া প্লেট নিতে নিতে বললো,
– হাতমুখ ধুয়ে এসো, খাবার দিচ্ছি আমি। টিফিনে খাওনি কিছু?
– উহুম, টিফিন হয়নি আজ। ইলেক্ট্রিসিটি প্রব্লেম থাকায় একসাথে পাচটা ক্লাস শেষ করে স্কুল ছুটি।
– ওহ, যাও হাতমুখ ধুয়ে এসো।
– গোসল করবো না?
নাজিয়ার একটুও মনে ছিলো না আজ সকালে যে তাদের বাসা থেকে এসেছে আর আরাফ গোসল করেনি। তাই প্লেট রেখে বললো,
– ওহ্! তুমি তো গোসল করোনি। যাও একেবারে গোসল সেড়ে আসো। দাড়াও আমি কাপড়চোপড় এনে দিচ্ছি।
নাজিয়া তার রুমে চলে এলো। আয়েশা বেগম ধমকে এদিকে আয়াতকে রেডি করাচ্ছে। নাজিয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে বললো,
– কোনো একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারে না! এইটুকু একটা মেয়েকে রেডি করাবে সেটাও পারলো না।
নাজিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। চুপচাপ আলমারি থেকে আরাফের কাপড় নিতে লাগলো। এদিকে আয়াত তার মায়ের কথায় জবাব দিলো,
– এইটুকু একটা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো লাফাচ্ছো কেন!
আয়েশা বেগম মেয়ের মাথায় ঠুসে বললো,
– চুপ থাক! তারাতাড়ি রেডি হ!
নাজিয়া কাপড়চোপড় নিয়ে চলে গেলো আর আয়াত বিরক্তি নিয়ে রেডি হয়ে গেলো। মেহমানের সামনেও সে বিরক্তিকর ভাব নিয়েই বসে রইলো। আরাফ গোসল করতে করতে মেহমানরা চলে গেছে। আরাফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে উঠুনে জামাকাপড় নাড়তে নাড়তে বললো,
– নাজিয়া, খাবার রুমে নিয়ে এসো।
– কাপড়চোপড় রেখে আসলেই হতো। আমি ধুয়ে দিতাম।
– সারাদিন তো অন্যান্য কাজে লেগেই থাকো, আমি না হয় একটু এগিয়ে দেই তোমার কাজ।
নাজিয়া কথা বাড়ালো না। কিচেনে এসে প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে এলো। আরাফ এক প্লেট খাবার দেখে বললো,
– এক প্লেট কেন! তুমি খেয়েছো?
– না খাবো।
– বিকেল হয়ে গেছে, এখনো বলবে “খাবো”! এখন নিয়ে এসো, যাও।
– আসছি।
দুজনেই একসাথে খেয়ে নিলো। সন্ধ্যায় ঘটক আবার তাদের বাড়িতে এলো। আরাফ সহ তার বাবা-মা বসেছে ঘটকের সাথে কথা বলার জন্য। আয়েশা বেগম বললেন,
– ঘটক সাহেব, কি বললো তারা?
– না মানে, আরাফের বউয়ের কি কোনো বোন আছে? তারা বউমার মতো একটা মেয়ে খোজতাছে। আয়েশা বেগম তেলে বেগুন ভাজির ন্যায় জ্বলে উঠলো এবং আলফাজ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– লোকের সামনে গুনগান করো আরও ছেলের বউ আর তার পরিবার নিয়া! আর নিজের মেয়ে রে ঘরে পাল্লা দিয়া রাখো! বাপই ভালো চায় না, আমি হুলস্থুল করলেই কি!
– চুপ থাকো! আল্লাহ হুকুম করলে এমনিতেই হইয়া যাইবো।
– হ! হাতপা গুটাইয়া ঘরের কোনায় বসে থাকলে আল্লাহ হুকুম করবো! না?
– আহ! মা কি শুরু করেছো! আয়াত মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী। ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে, তুমি এখনই বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো!
– চুপ থাক তুই! মাস্টার হইছত দেইখা বেশি বুঝিস না! মেয়ে লোকের আগে থেকেই বিয়ের ঘর দেখতে হয়। নতুবা বুড়ি হইয়া যায় বিয়া হয় না। ঘটক সাহেব, বউয়ের বোন আছে কিনা দেখা লাগবো না। আমার মেয়ের জন্য পাত্র দেখেন।
– আচ্ছা।
আরাফ উঠে চলে গেলো। আর ঘটক তার বাবামায়ের সাথে কথা বলতে লাগলো। আরাফ ঘরে এসে দেখলো নাজিয়া বাইরে থেকে কাপড়চোপড় এনে গুছিয়ে রাখছে। আরাফ তাকে খাটে বসিয়ে আলমারি থেকে একটা বাক্স নিলো। নাজিয়ার পাশে বসে বাক্স থেকে একটা চেইন বের করে নাজিয়ার গলায় পড়িয়ে দিলো। নাজিয়া অবাক হয়ে চেইনটা স্পর্শ করে বললো,
– এটা কি! স্বর্ণের চেইন!
– হুম। এটা তোমার বার্থডে গিফট। সেদিন আনতে পারিনি তাই দিতেও পারিনি।
– এটার কোনো প্রয়োজন ছিলো না! শুধু শুধু টাকা নষ্ট!
– তুমি তো আমার গিফট দেওয়ার আনন্দটাই মাটি করে দিচ্ছো! এটার প্রয়োজন ছিলো। পড়ে পড়ে টাকা উশুল করে দিবে। বিয়ের সময় পেয়েছোই বা কি! একজোড়া কানের দুল আর একটা নাকফুল! এইটুকু তো দিতেই পারি, তাই না!
– অলংকার শুধু শুধু ঘরে পড়েই থাকে। টাকা এভাবে নষ্ট না করে সঞ্চয় করে অন্য কাজে লাগাতে পারতে।
– এখন তোমার কি এটা নিতে অসুবিধা হচ্ছে?
– না।
– তাহলে এ নিয়ে আর একটা কথাও হবে না!
নাজিয়া মুচকি হেসে বললো,
– আচ্ছা, বললাম না আর কোনো কথা!
.
পড়তে বসার জন্য নাফিসা টেবিল থেকে বই নিতে লাগলো। কিছু একটা দেখে জোর গলায় নাহিদাকে ডাকতে লাগলো। নাহিদা তার মায়ের সাথে রান্নাঘরে একটু কাজ এগিয়ে দিচ্ছিলো। নাফিসার চেচানো কণ্ঠে ডাক শুনে সে রুমে এসে বললো,
– কি হয়েছে তোর?
– আমার কালার পেপার কাটছে কে?
– আমি কি জানি!
– জানোনা মানে! তুমি ছাড়া আর কে ধরবে! ঘরে কি দু চারটা বাচ্চা আছে আমার জিনিস ধরার জন্য !
– আশ্চর্য, আমি ধরেছি নাকি! আমাকে এভাবে বলছিস কেন!
তাদের চেচামেচি শুনে রুমানা বেগম রুমে এসে বললো,
– কি হয়েছে তোদের!
নাফিসা কান্নার ভঙ্গিতে বললো,
– মা, দেখো আমি ওয়ালমেট বানানোর জন্য পেপার এনেছি আর আপু ছিড়ে ফেলছে। এগুলো এমনিতেই এদিকে সহজে পাওয়া যায় না!
নাহিদা বললো,
– আরে আমি ছিড়ি নি তো!
– আবারও মিথ্যে বলো! মা তুমি ছিড়েছো?
– আমি এগুলো দিয়ে কি করবো। তোদের জিনিস ধরি আমি! ইদুর কেটেছে হয়তো।
– দুদিন আগে মাত্র আনলাম এখনই ইদুর কেটে ফেলবে! আর ইদুর কাটলে এমন সমান্তরালে কাটা থাকবে!
হঠাৎ কিছু মনে হতেই নাহিদার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। আশিক যে তার বইয়ে চিরকুট রেখেছে, সেটা এই লাল রঙেরই ছিলো! তাহলে সেটা নিশ্চয়ই নাফিসার কাগজ কেটে লিখেছে! তাই মনে মনে নাহিদা বললো, “আশিক ভাই! আপনার কপাল ভালো, নাফিসা দেখেনি! নতুবা আপনার কান কেটে ছাড়তো!”
নাহিদার মুখে হাসির রেখা দেখে নাফিসা বললো,
– মা, দেখছো দেখছো! আপু না করলেই কি হাসতো!
নাহিদা এবার আরও জোরে হেসে দিলো! রুমানা বেগম মেয়েদের এমন দুষ্টুমি দেখে বকাঝকা করতে করতে বেরিয়ে গেলেন ও ধমক দিয়ে পড়তে বসতে বললেন উভয়কে। নাফিসা বললো,
– এখন আমার কাগজ দিবে নয়তো টাকা দিবা।
– আচ্ছা, এক টাকা দিয়ে দিব।
– কিসের এক টাকা! একশো টাকা দিবে!
– কিইই! এইটার দাম একশো টাকা! এইটার দাম তো এক টাকা, তাও তো নষ্ট হয়েছে অর্ধেক। তারমানে সেই অর্ধেকের দাম পঞ্চাশ পয়সা হবে! তাহলে একশো টাকা কেন দিব!
– অপরাধ করলে কি আর দাম চায় কেউ নাকি জরিমানা করে! আমি তো জরিমানা করছি তোমার। আচ্ছা, যাও পঞ্চাশ টাকা দিবে।
– এক টাকার কাগজে আমি পঞ্চাশ টাকাই বা কেন দিবো! বড়জোর দুটাকা দাবি করতে পারছ!
– আহ! বুঝতে পারছো না কেন তুমি! দেখোনা প্রাইমারি স্কুলের দেয়ালে লেখা আছে, “এখানে প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ! যে প্রস্রাব করিবে তাহাকে পঞ্চাশ টা জুতার বাড়ি সাথে পাচশো টাকা জরিমানা দিতে হইবে!” তাহলে বলো, প্রস্রাবের মূল্য কি পাচশো টাকা হইবে? তাহলে তোমার কাছে নাফিসা এক টাকা দুটাকা দাবি করবে কেন! এখন হয় আমার কাগজ দিবে আর নাহয় টাকা দিবে।
– যা কাল, কাগজ কিনে দিব।
– কাল না! বাকি কাজে ফাকি চলে! আমাকে এই মুহূর্তে দিবে যে কোন একটা! দেড়ি করলে জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে!
নাহিদা চেচিয়ে বললো,
– ঘুষখোর!!!

চলবে।