তোমাকে চিন্তে ভুল করেছি পর্ব-০১

0
633

গল্প:- #তোমাকে চিন্তে ভুল করেছি পর্ব:-(০১)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

যে মেয়েকে জন্ম দিতে গিয়ে ওর মা মৃ’ত্যু বরণ করেছে। যার জন্মের কথা শুনে এক ঘন্টা পড়ে ওর বাবাও গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মা`রা গেছে। যার মুখ দেখে বেরুলে আমার সব কাজে গন্ডগোল হয়ে যায় এমন অলক্ষী মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। আম্মু তোমার পায়ে পড়ি দরকার হলে রাস্থা থেকে একটা কালো একদম ক্ষেত টাইপের একটা মেয়ে এনে যদি বলো বিয়ে করতে তাও বিয়ে করবো কিন্তু এই অপাইয়া অলক্ষী মেয়েকে বিয়ে করতে বলো না।
সৌরভ তুই ভুলে যাস না নিরার জন্যই পৃথিবীতে এসেছিস। আমার বিয়ের দশ বছর হওয়ার পড়েও যখন আমার কোনো সন্তান হয়নি তখন ওকে নিয়ে আসার এক বছর পড়েই তোর জন্ম হয়। আমি কোনো কিছু শুনতে চাইনা আজকেই তোর সাথে ওর বিয়ে হবে। আমি সবাইকে বলেছি নিরাকে দুই দিনের মধ্যে বিয়ে দিবো আর আজ শেষ দিন এখন একটাই রাস্থা সেইটা হচ্ছে তোর সাথেই ওর বিয়ে দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিবো।

আম্মা আপনি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নিরার মুখ দেখে আমি কোনো কাজে গেলে সেই কাজে ব্যর্থ হয় আর ও যদি আমার বৌ হয় তাহলে আমার জীবনটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। প্রতিদিন ওর মুখ দেখে বেরুলে আমি কোনো কাজে সফল হতে পারবো না।

এসব কুসংস্কার আমি বিশ্বাস করি না নিরা তোর জন্য একদম পার্ফেক্ট। সৌরভ আমি তোর মা আমি তোর ভালো মন্দ সবকিছু বুঝি প্লিজ বাবা তুই আমার দিকে তাকিয়ে নিরাকে বিয়েটা কর। দেখিস তুই জীবনে অনেক সুখে থাকবি। আমি একদম চুপচাপ হয়ে আছি মা আমার হাতটা ধরে রাখছে আর চোখে পানি টলমল করছে পাশের রুমে নিরা দাঁড়িয়ে আমাদে সব কথা শুনছে তখন আমি আম্মার চোখের পানি গুলি মুছে বলি।

আম্মা নিরাকে ছোট বেলা থেকে আপনি লালন পালন করেছেন আর তাকে আমি সবসময় বড় বোন জেনে এসেছি। এখন ওকে বিয়ে করলে সমাজ বা আশে পাশের মানুষজন কি বলবে! আর আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে একবার কি সেই সব কথা ভেবে চিন্তে দেখেছেন?

তোর এত কিছু চিন্তা ভাবনা করতে হবে না আমি মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে তোর বাবাকে দিয়ে এই ব্যাপারে কথা বলিয়েছি। ওনি বলেছে যদি নিরাকে আমি আমার বুকের দুধ না খাওয়াই তাহলে তোর সাথে নিরার বিয়ে দিতে কোনো বাধা থাকবে না। আর আমি তো কখনো নিরাকে আমার বুকের দুধ খাওয়াইনি। বরং নিরাকে প্রথমবার কোলে নিয়ে আমি মনে মনে বলেছিলাম যদি আমার ঘরে কোনো ছেলে শন্তান হয় তাহলে নিরাকে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে ওকে আমার ছেলের বৌ করে রেখে দিবো। আমার মনে হয় সেই জন্য নিরার বিয়ে বার বার ঠিক হবার পরেও ভেঙ্গে যায়। বাবা সৌরভ আমি তোর মা তোর দুইটা হাত ধরে বলি তুই নিরাকে বিয়ে করে আমার মানসম্মান বাচিয়ে দে বাবা। আম্মার দিকে তাকিয়ে আমি বলি।

ঠিক আছে বিয়ে করবো তুমি যখন চায়ছো আমি নিরাকে বিয়ে করি তাহলে বিয়েটা করবো। তখন মা অনেক খুশি হয়েছে তবে আমি জানি এটা আমার জন্য সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আমি তোদের বিয়ের সবকিছু কেনাকাটা গত-কালকেই করে রাখছি। কিছুকক্ষণের মধ্যেই তোর আর নিরার বিয়েটা দিয়ে আমি সবার মুখে তালা বন্ধ করে দিবো। তোর বাবাকে আমি ফোন করে বলে দেয় কাজী সাহেব আর হুজুরকে সাথে করে নিয়ে আসতে।

ঠিক আছে বলো। আম্মা মুখে চওড়া হাসি নিয়ে চোখের পানি গুলি আঁচল দিয়ে মুছে চলে গেছে। আমি একবার নিরার দিকে তাকিয়েছি নিরার চোখে অশ্রু জমে আছে নিরা আমাকে বিয়ে করতে চাই কি’না এইটা একবার জিজ্ঞেস করবো করবো ভাবছি তখনি নিরা দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি নিরাকে কিছু বলার সুযোগ পায়নি। তবে একটা কথা সত্যি নিরাকে আম্মা যাকে বিয়ে করতে বলবে তাকেই চোখ বুঝে বিয়ে করে নিবে। তার কারণটা জানতে হলে কিছুটা পিছনে যেতে হবে চলেন সময় নিয়ে একটু নিরার অতীতটা জেনে আসি।

আজ থেকে দুইদিন আগে পাশের বাড়ির চাচি নিরাকে বলে নিরা তোর বিয়েটা এবারও নাকী ভেঙ্গে গেছে? তা এই নিয়ে তোর কয়টা বিয়ে ঠিক হবার পরেও ভেঙ্গে গেছে? পাশের বাসার আন্টির এমন কথা শুনে নিরা একটুও কষ্ট পাইনি কারণ নিরার এই নিয়ে পনের বার বিয়ের পাকা কথা হবার পরেও বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। নিরার বিয়ে ভাঙ্গার কারণটা সবারিই জানা সেটা হচ্ছে নিরাকে জন্ম দিতে গিয়ে ওর মা মৃত্যু`বরণ করেন। আর তার কিছুকক্ষণ পরেই নিরার বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মা`রা যান।

নিরার বাবা মা দুজনের এমন মৃত্যু’র পর নিরাকে কেউ কারো বাড়িতে নিতে রাজি হয়নি। নিরার দাদা দাদী আর চাচারা তো নিরার চেহারাটা পর্যন্ত দেখেনি। সবাই নিরাকে পুরা কপালনী বলে সম্মধন করে ওকে হাসপাতালে রেখে যার যার মত করে চলে গেছে। নিরার নামের চাইতে ওকে অপাইয়া অলক্ষী নামে সবাই ডাকতে পছন্দ করে শুধু মাত্র একজন ব্যাক্তি ছাড়া আর সেই ব্যাক্তিটা হচ্ছে আমার মা মানে নিরার খালাম্মা। ও ভালো কথা নিরা কিন্তু আমার আপন খালাত বোন তবে নিরা আমার থেকে এক বছরের বড়। তবে আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন থেকে আমি নিরার সাথে কোনো রকম কথাবার্তা বলি’না নিরাও আমার সামনে অত একটা আসে’না কারনটা হলো নিরাকে বলে একদিন আব্বার সাথে বাজারে গেছিলাম আর বাছ আমি হারিয়ে গেছি সমস্থ এলাকা মাইকিং করে আমাকে খুঁজে বের করে এরপর বাবা আম্মাকে স্রাফ জানিয়ে দিয়েছে আমি কোথাও গেলে আমার সামনে যেনো নিরা না আসে যার কারণে আমাকে বেশির ভাগ সময় বিভন্ন হোস্টেলে থাকতে হয়ছে পড়া লেখা করার জন্য। আমি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসলে সেই সময় নিরাকে ঘর বন্ধি করে রাকা হতো। নিরার বয়স এখন বাইশ বছর আর আমার একুশ বছর।

আম্মার বিয়ের দশ বছর পর্যন্ত কোনো শন্তান হচ্ছিলো না যার কারণে আম্মা নিরাকে নিয়ে আশে আমাদের বাড়িতে। আর তার ঠিক এক বছর পরেই আমার জন্ম হয়। আর তার তিন বছর পর আমার ছোট বোন রুবার জন্ম হয়। অনেকেই মনে করে নিরার ভাগ্যের কারণে আম্মা সন্তান লাভ করছেন যার কারণে আম্মা নিরাকে খুব আদর করে। তবে নিরা শুধু মাত্র আম্মার জন্যই লাকী অন্য কেউ নিরার মুখ দেখে শুভকাজে কোথাও গেলে তার নিশ্চিৎ কপালে অশুভ হয়ে ফিরতে হয়। আস্তে আস্তে এই খবর আমাদের আশে পাশে সব জায়গায় জানা’জানি হয়ে গেছে যার কারনে নিরার বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও ভেঙ্গে যায়।

আর সেই কথাটাই পাশের বাসার আন্টি বলেছিলো তখনি কথাটা আম্মা শুনে ফেলছে যার ফলে এক প্রকার আন্টিকে ধুয়ে দিছে হুইল পাউডার দিয়। তখন আন্টি রেগে বলে এই অপাইয়া অলক্ষী মেয়েকে নিয়ে এত বড়াই করেন। এই মেয়ের বিয়ে তো জীবনেও দিতে পারবেন না। আর এই অলক্ষী মেয়ের কারণে আপনার মেয়ের বিয়েও কোনো দিন হবে না তখন আম্মা রেগে বলে উঠলো।

নিরাকে আমি দুই দিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিবো। এরপর দেখবো নিরাকে কে অপাইয়া অলক্ষী বলে ডাকে। যে ডাকবে তার মুখ সুই সুতা দিয়ে সেলাই করে দিবো। এই কথা বলে আম্মা নিরাকে সাথে করে নিয়ে ঘরে চলে আসে। আম্মাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে আর নিরাকে বলছে তোকে আমি দুই দিনের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিবো। নিরা কিছু না বলেই রুমে গেছে। আর এদিকে আমি মনে মনে বলি সত্যিই তো এমন অপাইয়া অলক্ষী মেয়েকে কোন ছেলে বিয়ে করবে যার মুখ দেখে কোনো কাজে বেরুলে সেই কাজে সব সময় ব্যর্থ হতে হয়। যাক এত চিন্তা করে আমার কি যার ভাগ্যে আছে সেই বিয়ে করবে বলেই আমি সন্ধার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেছি তখনি আম্মা ফোন করে দ্রুত বাড়িতে যেতে বলে। আমি বাড়িতে যেতেই আম্মা নিরাকে বিয়ে করার কথা বলে। আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করতে তো রাজি হয়েছি এখন মনে মনে ভাবছি তাহলে এই অপাইয়া অলক্ষী মেয়েটির বর তাহলে শেষ পর্যন্ত আমি হতে যাচ্ছি? এসব বসে বসে ভাবতেছি তখনি রুবা এসে বলে।
রুবা:- ভাইয়া তোকে আম্মা বলেছে ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি পড়ে বসার ঘরে আসতি। কাজী সাহেব আর হুজুর চলে আসবে অল্প কিছুকক্ষণের মধ্যে।
সৌরভ:- হ্যা আসতেছি তখন রুবা চলে গেছে আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম। অল্প কিছুকক্ষণের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে যেতেই দেখি কাজী সাহেব, হুজর আর আমাদের বাড়ির আশে পাশের কিছু মুরুব্বি বসে আছে আমি গিয়ে সোফায় বসার সাথেই আব্বা বলে।

আব্বা:- কাজী সাহেব বিয়ের কার্জক্রম আরম্ভ করেন। কনে ভেতরের ঘরে আছে আর ছেলে আপনাদের সামনে বসা। কাজী সাহেব ওনার মত কিছু কাজ করে আমার থেকে বরের জায়গা সাক্ষর নিয়েছে এরপর ওনি ভিতরে গিয়ে নিরার সাক্ষর নিয়ে এসেছে। এবার হুজুর সাহেব ইসলামিক নিয়ম অনুসারে বিয়েটা পড়িয়ে দিয়েছেন। আব্বা সবাইকে খেজুর আর মিষ্টি খেতে দিয়েছে। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেছে আমি একা ঘরে বসে আছি বিয়েতে আপাদত তেমন কোনো অনুষ্টান করা হয়নি যার ফলে আমাদের কোনো আত্বীয় স্বজনকে দাওয়াত করা হয়নি তবে আব্বা বলেছে সামনে একটা ভালো দিন দেখে আমাদের বিয়ে উপলক্ষে একটা অনুষ্টান করবে তখন সব আত্বীয় স্বজনকে ইনবাইট করবে। আম্মা নিরাকে নিয়ে এসেছে নিরা একদম বৌ সেজে আছে আমার পাশে দাঁড় করিয়ে কিছু ছবি তুলে রুবা নিরাকে নিয়ে চলে গেছে আমি একা বসে আছি কিছুকক্ষণ পর রুবা এসে আমাকে বলে।

রুবা:- ভাইয়া যাও তোমার রুমে যাও আজ থেকে নিরা আপু আমাদের ভাবি আর তোর বৌ। এখন দেখবো নিরা আপুকে কে অপাইয়া অলক্ষী বলে ডাকে?

সৌরভ:- বিয়েটা তো আমার সাথে হয়ছে এখন আমার জীবনটা কেমন ভাবে যায় সেইটা দেখার বিষয়। তোরা সবাই মিলে আমার সব স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছিস এই বলে সৌরভ উঠে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছি। নিরা বসেই আছে আমার একটু আগ্রোহ হচ্ছে না নিরার কাছে যায় তাও একটু সামনে গিয়ে বলি আমাকে বিয়ে করতে তোমার একটু লজ্জা করেনি? আমি তোমার থেকে বয়সে ছোট তুমি মাকে বললে মা কি আমার সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দিতে রাজি হতো? নিরা চুপচাপ বসে আছে কোনো কথা বলছে না তখন আমি আবার বলি তোমাকে কিছু কথা বলি আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠবো তখন যেনো তোমার মুখটা না দেখি কারণ আমি চাইনা তোমার জন্য আমার প্রতিটা দিন মাটি হয়ে যাক। তোমার মুখ দেখে বেরুলে আমার সব কাজ বৃথা হয়ে যাবে। তুমি নিজে একটা অলক্ষী জন্মের সময় মা এবং জন্মের পরে বাবাকে মেরে ফেলছো এখন এসেছো আমার জীবনটা নষ্ট করতে? নিরা এবারও চুপচাপ হয়ে আছে তখন আমি বলি এক মাত্র মায়ের সামনে আমার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবে আর বাকী সময় আমার থেকে এক হাত দূরে থাকবে তখন চেয়ে দেখি নিরা একটা বালিস নিয়ে উঠে কোনো কথা না বলে সোজা নিচে এসে শুয়ে পড়ছে। আমি ওর কর্মকান্ডে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তখন হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছে চিরকুট খুলে দেখি এটাতে লিখা।

আমি জানি তুমি আমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছো তবে কথা দিচ্ছি কখনো আমার মুখ সকালে দেখতে হবে না আর আমি এটাও কথা দিচ্ছি আমি কোনো সময় তোমার কাছে স্ত্রী অধীকার প্রয়োগ করবো না। তুমি যেমনটা বলবে আমি তেমনটাই করবো। তাও প্লিজ দয়া করে আমার জন্ম নিয়ে কোনো কথা বলো না।

তখন আমি চুপচাপ করে খাটের উপরে গিয়ে শুয়ে পড়েছি আর মনে মনে ভাবছি নিরা আমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলো তো? আচ্ছা একবার জিজ্ঞেস করবো সে কখনো প্রেম করছে কিনা মনে হয় করেছে ওর সম্পর্কে সব জানার পর ছেড়ে চলে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি ঠিক মনে নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিরা ঘরে নেই যাক ভালোই হয়ছে অলক্ষীর মুখটা দেখতে হলো না। কিছুকক্ষণ বসে থেকে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেছি তখনি রুবা বলে।

রুবা:- ভাইয়া আজ মনে ঘুম ভালো হয়নি তোদের?
সৌরভ:- তুই এত কথা বলিস কেনো? তখন রুবা চুপচাপ হয়ে গেছে আমি দ্রুত খানা শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছি তখনি আম্মা ডাক দিয়ে বলে।
আম্মা:- সৌরভ তুই কি অফিসে যাচ্ছিস?
সৌরভ:- নাহ আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি আজ দুপুরে অফিসে যাবো।
আম্মা:- শুন আজ থেকে নিরাকে তোর সাথে বাইকে করে নিয়ে যাস আর প্রতিদিন ওর অফিস ছুটির পর নিয়ে আসবি।(আপনাদের বলতে ভুলে গেছি নিরা একটা কম্পানিতে চাকরি করে ভালো টাকা বেতন পায় আর আমি একটা কম্পানিতে ছোট চাকরি করি মানে পার্ট টাইম চাকরি বলতে পারেন যা দিয়ে কোনো মতে নিজের হাত খরচটা চলে। তবে আমার বাইক কিনার টাকাটা নাকি নিরা দিয়েছে এটা মা উঠতে বসতে বলে আমি রাগ করে একবার বাইকের চাবি দিয়ে দিছিলাম এরপর থেকে আর কোনো সময় এমন কথা আম্মা বলে না) কি বলেছি তোর মনে থাকবে তো? শেষ এই আপদ আমার বাইকে উঠলে বাইকটার কাম শেষ হয়ে যাবে তখনি নিরা এসে আমার পেছনে বসেছে আমি কিছু না বলে বাইক চালিয়ে যখনি মেইন রাস্থায় এসেছি তখনি বাইকটা থামিয়ে বলি।

সৌরভ:- নিরা তুমি নামো তো। নিরা কিছুটা রাগ করে নেমেছে তখন আমি মানি ব্যাগ থেকে একশ টাকার বের করে ওর হাতে দিয়ে বলি নাও এইটা দিয়ে রিকশা ভাড়া করে চলে যাও তোমাকে নিয়ে আমি বাইকে করে যেতে পারবো না আমার বন্ধুরা দেখলে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।

নিরা:- আমার টাকা দিয়ে বাইক কিনে আমাকেই মাঝ রাস্থায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাইনা? নাও তোমার টাকা লাগবে না আমার বলেই টাকাটা আমার বুক পকেটে দিয়ে বলে আমাকে নামিয়ে দিয়েছো দেখো তোমার বাইক এখানে নষ্ট হয়ে যাবে কথাটা বলেই একটা রিকশা ডাক দিয়ে উঠে গেছে। আমি নিরার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি তখনি আমার মনে পড়েছে আরে নিরার যে বলেছে আমার বাইক চলবে না তাহলে স্টার্ট দিয়ে দেখি তো! যেই বাইকা স্টার্ট দিয়েছি সত্যি সত্যি বাইক চালু হচ্ছে না। মনে মনে ভাবছি এমন মুখ পুরা মেয়েটা আমার ভাগ্যে কেনো দিলে আল্লাহ হে আমার আল্লাহ আপনি দয়া করে আমাকে ওর থেকে মুক্ত করে দাও বলেই বাইকে দুইটা লাথি দিয়ে গ্যারেজে নিয়ে মিস্ত্রী দেখিয়েছি ওনি ঘন্টা তিনেক দেখে শুনে ঠিক করে দিয়েছে ওনার বিলটা দিয়ে বাইক নিয়ে সোজা অফিসে গেছি। অফিসে ঢুকতেই রিসিভশনে বসে থাকা সান্তা বলে সৌরভ সাহেব এই চিটি’টা আতিক স্যার আপনাকে দিতে বলছে।
সৌরভ:- দেন তো দেখি বলে চিটি’টা খুলে দেখি আমাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয়ছে আর ওনাদের পার্ট টাইম লোকের দরকার নেই সাথে এক মাসের অগ্রিম বেতনের চেক দেওয়া আছে। আমি মুচকি হেসে মনে মনে বলি সেটা তো হবার কথা ছিলো বলে কোনো কথা না বলে সোজা বেরিয়ে এসে বাইকটা নিয়ে বাড়িতে আসতেছি আর মনে মনে ভাবতেছি আমার জীবনটা এমন ভাবে ধ্বংস করার কি দরকার ছিলো আম্মা? ঠিক তখনি চেয়ে দেখি নিরা একটা ছেলের সাথে রিকশা দিয়ে যাচ্ছে আর অনেক হাসতেছে নিরাকে এমন ভাবে আমি কখনো হাসতে দেখিনি। তাহলে কি নিরা আমাদের সবার সামনে নিজেকে ইচ্ছে এমন ভাবে গম্ভীর রাখে? মা কত চেষ্টা করে নিরা যেনো হাসি মুখে থাকে তাও নিরা হাসে না! আর নিরা ছেলেটার সাথে কি ভাবে হাসতেছে তাহলে কি নিরা আমাদের সবাইকে ঠকাচ্ছে ঠিক তখনি যা দেখলাম তা দেখে আরও অবাক হলাম।

চলবে…