তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০১

0
403

#তোমাতে বিভোর আমি

পর্ব,,,১

লেখিকা,,,,মৌমো তিতলি,লেখিকা,,,,মৌমো তিতলি,,,,,

********

দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে খুবই ক্লান্ত লাগছিলো,, তাই দুপুরে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম,,, ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।তাই উঠে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় আরামসে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ক্রল করছিলাম,,,,

তখনই লাকি আপু এসে বলল,,,

: অধরা কি করছিস???

আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

: দেখছ না কি করছি ??আবার জিজ্ঞাসা করছ কেন??

: এভাবে কথা বলছিস কেন বনু,,,,,দেখতেই পাচ্ছি তুমি আরামে বসে ফোন চালাচ্ছ কিন্তু আরাম বেশিক্ষণ টিকবে না,,, কারণ তোমার ডাক পড়েছে,,,,

আমি মুখ তুলে লাকি আপুর দিকে তাকালাম,,,লাকি আপু মুখ টিপে হাসছে,,, আপুর হাসি দেখেই বুঝতে পারলাম আমাকে কে ডেকেছে,,,,, মুহূর্তে মুখটা আমসত্ত্ব হয়ে গেল আমার,,, আমার মুখের অবস্থা দেখে লাকি আপু সিরিয়াস হয়ে বলল,,,

: আদ্র তোকে 2 মিনিটে ওর রুমে যেতে বলেছে,,, তাই আর দেরি না করে বই খাতা নিয়ে সোজা ওর রুমে চলে যাও,,,,,

এই লাকি আপুটা আর্দ্র ভাইয়ার এক নম্বরের চামচা,,, বলেছে 2 মিনিটে যেতে তাই এসে হিসেব করে দুই মিনিটই বলবে,,,,,আমিও মুখ ভেংচে বই-খাতা
গোছাতে লাগলাম,,, লাকি আপু আমার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,,

আমি অধরা এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি,,, আমরা দুই বোন আমি অধরা আর আমার ছোটবোন আশুরা,,, আর যে এতক্ষণ আমাকে ডেকে গেল সে আমার বড় আব্বুর মেয়ে লাকি,,, লাকি আপুর বিয়ে হয়েছে,,, তার হাজবেন্ড বাংলাদেশ আর্মির একজন উচ্চ পদস্থ অফিসার,,
ভাইয়া বাইরে থাকায় লাকি আপু আপাতত বাড়িতেই আছে,, লাকি আপুর একটা ছেলেও আছে,, ছোট্ট ছেলে,, নাম আরিয়ান ,,,খুব দুষ্টু পাকা পাকা কথা বলে,,,,,
আর যেই মহাশয় আমাকে ডেকেছেন তিনি আমার বড় আব্বুর ছেলে আদ্রিয়ান রাইজাদা আদ্র,,,, এবার মাস্টার্স পড়ছে আদ্র ভাইয়া,,,,

পৃথিবীতে আমি মাত্র দুজন মানুষকে ভয় পাই ,,,এটা আমার আব্বু আরেক আদ্র ভাইয়া,,,,,, আর্দ্র ভাইয়া ভীষণ রাগী তবে দেখতে মাশাল্লাহ ,,,সবাই বলে আদ্র ভাইয়াকে নাকি যে মেয়ে একবার দেখবে সেই প্রেমে পড়ে যাবে,,, আমি বুঝতে পারিনা এই সাদা বিলাইটাকে কিভাবে কেউ ভালবাসতে পারে ,,,আমারতো আদ্র ভাইয়ার রাগী লাল লাল চোখ দেখলে অন্তর আত্মা শুকিয়ে যায়,,,,,,,, আদ্র ভাইয়াকে পছন্দ না করার পেছনে অবশ্য অনেক কারণ আছে আমার,,,,ছোটবেলা থেকেই আমাকে কেন জানি ভিষণ কড়াকড়ি শাস্তির ওপরে রাখেন ভাইয়া,,,,
সারাক্ষণ অধরা এটা করবি না ,,ওটা করবি না,, পড়তে বস,,, টিভি দেখবি না,,,।
উফফফ ভাল্লাগেনা,,,,,!!!!!!!🥺🥺
কোথায় একটু আরাম সে ছোটাছুটি করে বেড়াবো বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াবো একটু পড়ায় ফাঁকি দিয়ে টিভি দেখবো কিন্তু এই সাদা বিলাই🙄,, তার কারণে কিচ্ছু হয়না,,,

বড় আব্বু ,,বড়মা,, আম্মু,, লাকি আপু সবাই আর্দ্র ভাইয়া কে ভয় পায়,,,, তার যে রাগ আর জেদ সেটা দেখে কেউ তাকে ঘাটায় না,,,, তাই তিনি আমাকে ভীষণভাবে টর্চার করে খুব শান্তি পান ,,,আমিও অবশ্য মনে মনে থাকে হাজারটা গালি দিয়ে পুষিয়ে নি,,,,

যাইহোক পরিচয়-পর্ব তো দিয়েই দিলাম এখন আমি যাই না হলে সাদা বিলাইটা আবার কি শাস্তি দিবে আল্লাহই জানে,,,, বই খাতা হাতে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে চললাম আদ্র ভাইয়ার ঘরের দিকে,,,,,

দরজার কাছে গিয়ে বললাম,,,

: আদ্র ভাইয়া আসবো???

ভাইয়া মেবি ল্যাপটপে কোন কাজ করছিলো,,, আমার ডাকে মুখ তুলে একবার দেখলো,,,, তারপর আবার কাজে মন দিলো,, মুখে বলল,,,,

: আয় ভেতরে আয় ,,,,কখন ডেকেছি তোকে??? আর তুই এখন আসছিস ??আজকাল পড়াই ভীষণ ফাঁকি দিচ্ছিস তুই,,,,

মেজাজটা দুম করে গরম হয়ে গেল আমার,,, তবু মুখে কিছু না বলে শান্তভাবে বললাম,,,

: কই লাকি আপু ডাকলো তখনই তো এলাম,,,,,,🙄🙄

: আচ্ছা হয়েছে হয়েছে,,,, এখানে এসে বোস !! আর বই খুলে পড়া শুরু কর,,,,

আমিও বাধ্য মেয়ের মত ভাইয়ার বিছানার উপর উঠে বসলাম ,,,তারপর বই খুলে পড়া শুরু করলাম,,,

দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমানোর ফলে চোখ মুখ ফুলে ফুলে আছে অধরার,,,, মুখ নিচু করে পড়ছে আর মাথার কিছু চুল সামনের দিকে ঝুঁকে আছে ,,,অধরার এই একটা অভ্যেস, পড়ার সময় মাথা নিচু করে বইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়বে,,, তাই চুল খোলা থাকলে মুখের সামনে এসে পড়ে,,,,

বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে হঠাৎ আমার চোখ যায় ভাইয়ার দিকে,,,, ভাইয়া মেবি আমার দিকে তাকিয়ে ছিল,,, আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো আদ্র ভাইয়া,,,,
ভাবলাম হয়তো চুলের জন্য আমার পড়ায় ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই ভাইয়া রেগে তাকিয়ে ছিলো,,,,

আমি চুল বাধার রাবারটাও নিয়ে আসিনি,,, তাই তাৎক্ষণিক কলমের ক্যাপটা খুলেন চুলের ভাজে আটকে দিলাম,,, অনেকটা ক্লিপের মতো করে,,,,

তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,, তার চোখের ভাষাটা আমি বুঝতে পারলাম না মাথা নিচু করে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম,,,, হঠাৎ করেই আর্দ্র ভাইয়া টান দিয়ে কলমের ক্যাপটা নিয়ে নিলো,,,, আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

: এটা কি হলো??

: তোর কলমের ক্যাপ কি চুল বাঁধার জন্যে?? আসার সময় চুল বেঁধে আসতে পারিস নি??? এখন কলমের ক্যাপ দিয়ে চুল সামলানো হচ্ছে!!! 😡😡😡😡😡

এবার অধরার সত্যিই রাগ হয়,,,, যাব্বাবা কলমের ক্যাপ দিয়ে চুল না হয় বেধেইছিলাম,, এটাকি খুব দোষের কিছু 🙄এভাবে বকার কি আছে বুঝলাম না,,,,

আমি খাট থেকে নামতে যাবো,,, আদ্র ভাইয়া আবার বলে উঠলো,,,

: আবার উঠে কোথায় যাচ্ছিস??

: ওই হেয়ার ব্যান্ড টা নিয়ে আসতে,,,,,,

: তোকে বলেছি যেতে???😡

অগত্যা আবার এসে পড়তে বসলাম,,,চুলটা হাত দিয়ে পেঁচিয়ে একটা হাত খোঁপা করে নিলাম,,,, বুঝি না বাপু এই সাদা বিলাইটার রাগ সব সময় নাকের ডগাতেই থাকে,,,,, আর সেটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই বেশি বেশি হয়,,,, আমি তার কোন জনমের শত্রু ছিলাম কে জানে,,,,🥴🥴

সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত একাধারে পড়তে পড়তে ঘাড় পিঠ ব্যথা হয়ে গেলো আমার,,,,, তারপর পড়া কমপ্লিট করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

: আর্দ্র ভাইয়া এবার আমি যাই!!!!!!!

: হুম যা,,,, আর শোন কাল তোর ক্লাস টেস্টের জন্য প্রিপারেশন কমপ্লিট করে দিলাম ,,,,আর কোন সমস্যা হবে না তো???

: না ভাইয়া কোন সমস্যা নেই,,,,
(সমস্যা হবে কি করে এতক্ষণ পড়িয়ে পড়িয়ে ঘাড় পিঠ ব্যথা করে দিলো,, আবার জিজ্ঞাসা করছে সমস্যা হবেনাতো? যদি বলি হবে ,তাহলে আজ সারারাতেও আমার পড়ানো শেষ হবেনা ,,তার আস্ত একটা সাদা বিলাই😺,,,,, মনে মনে)

: আচ্ছা যা,,,,, গিয়ে ডিনার করে সোজা শুয়ে পরবি,, ফোন চালাবি না কিন্তু,,,,

আচ্ছা,,, বলে আমিও সেখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলাম,,,,

রাতে খাবার টেবিলে,,,,,,

সবাই একসাথে খেতে বসেছে,,, আরমান খান
( অধরার বড় আব্বু) বলেন,,,,

: কি ব্যাপার সবাই খেতে বসেছে,, অধরা মামনি কোথায়!!!

আশুরা বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল,,

: আপু মনে হয় খাবে না,,, আমি ডেকেছিলাম বলল তুই যা আমার খেতে ইচ্ছা করছে না,,,

: সে কি কথা,,,,,ওর কি শরীর খারাপ???,,,,লাকি মামনি যা তো দেখতো কি হয়েছে,,,,

: জ্বী আব্বু আমি দেখছি,,,, বলে লাকি অধরা রুমের দিকে চলে যায়,,,,

আরমান খান আরিফ খান (অধরার আব্বু)এর দিকে তাকিয়ে বলেন,,,,

: আরিফ খাওয়ার পর একবার আমার রূমে যাস তো ব্যবসা সম্পর্কে কিছু কথা আছে,,,**

: জি ভাইজান,,, বলে খাওয়া শুরু করে আরিফ খান,,,

আরমান খান আর আরিফ খান দু’ভাইয়ের মধ্যে অসম্ভব মিল,,, সেই যুবক বয়স থেকে দুই ভাই একসাথে থেকে ব্যবসা সামলেছে,,,,, এখন তাদের ব্যবসা দেশের বাইরেও নামডাক করেছে,,, আর দেশেতো খান গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নাম সবার মুখে মুখে,,,,, পড়াশোনা শেষ করে আদ্রিয়ান রাইজাদা আদ্রও তাদের ব্যবসায় শামিল হবে এমনটাই আশা করেন আরমান খান আর আরিফ খান,,,,

লাকি এসে জানাই অধরা আসছেনা,, খাবে না বলল,,,
অধরার মা জেসমিন বেগম বলেন,,,

: খাবেনা কেনো,,, দুপুরে এসেই গোসল করে ঘুমিয়েছে না খেয়েই,,, আবার এখন খাবেনা বলছে কেনো,,,,
আচ্ছা আমি গিয়ে দেখছি,,,
জেসমিন বেগম যেতে নেই তখনই আদ্র বলে,,,,

: তুমি দাড়াও ছোট মা,,, আমি দেখছি,,!!!!

আর্দ্র অধরার রুমের দিকে চলে যায়,,,,, গিয়ে দেখে অধরা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে শুয়ে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে,,,, অমনি মেজাজটা গরম হয়ে যায় আদ্রর,,,

অধরার কাছে গিয়ে দুবার ডাক দেয় তবুও অধরার কোনো হেলদোল নেই একমনে শুয়ে গান শুনেই যাচ্ছে,,,
হুট করেই হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় আদ্র,,,

আরামসে শুয়ে শুয়ে গান শুনছিলাম,,, হুট করে ফোনটা কেটে নেয়াই মেজাজটা গরম হয়ে গেল নিশ্চয়ই লাকি আপু আবার এসেছে খেতে ডাকতে,,, চোখ মুখ খিঁচিয়ে বললাম,,,,,,

: আব্বে ওই লাকিল্লা আপু,,, একবার বললাম তো খাব না আবার ডাকছো কেন,,,,,

: মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর???? বেহুশের মত কাকে কি বলছিস ????আর এসব কি ধরনের ভাষা????

হঠাৎ আদ্র ভাইয়ের গলা শুনে পরানটা আমার টুসকে গেল,,,,, তাকিয়ে দেখি সাদা বিলাই চোখ মুখ লাল করে রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,, আমারতো কলিজা ডা হাডি যায় যায় অবস্থা,,,, কোনমতে ঢোক গিলে দাঁত কেলিয়ে বলি,,,,

:😁😁😁😁 আদ্র ভাইয়া তুমি,,,,,!!!!!

: কতবার খেতে ডেকেছে তোকে????? দুপুরে খাসনি, আবার এখনো খেতে যাচ্ছিস না ,,সমস্যা কি তোর ???কাল ক্লাস টেস্ট দেয়ার ইচ্ছা নেই নাকি???

: আসলে ভাইয়া,, আমি তো এমনি খেতে চাচ্ছিলাম না,, ইচ্ছা করছিল না তাই,,,, তাই বলে এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেনো,,,,🙄 আমি তো যাচ্ছি খেতে,,,,,🚶🚶🚶

ভদ্র মেয়ের মত ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম,,,, বাঘের সামনে বেশিক্ষণ থাকা উচিত না তারপরও ওই লাল লাল চোখের গরম দেখার থেকে খেয়ে নেয়ায় শ্রেয়,,,, টাই বেশি ঝামেলা না করে হাঁটা দিলাম,,,,,
আমার পিছন পিছন মেবি আদ্র ভাইয়াও আসছে তার পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি আমি,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,