তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০২

0
262

#তোমাতে বিভোর আমি
পর্ব,,,,,, ২
লেখিকা ,,,,,,,মৌমো তিতলি

*******

পরদিন সকাল বেলা ঘুমের মধ্যে মিষ্টি একটা স্বপ্ন দেখছিলাম,,,, একটা রাজপুত্র আমাকে হাত ধরে মেঘের রাজ্যে ঘুরে নিয়ে বেড়াচ্ছে,,, হঠাৎ মনে হলো আমি হাওয়ায় ভাসছি ,,,,,তারপর আস্তে আস্তে কোথায় যেন চলে যাচ্ছি,,,,,হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো,,, মুখে বৃষ্টির পানির ঝাপটায় হুড়মুড় করে চোখ খুলে ফেললাম ,,,,
আমি দেখি আদ্র ভাইয়া আমাকে তার কোল থেকে বাথটাবের মধ্যে ফেলে দিয়েছে,, সেই পানির ঝাপটাতেই ঘুম ভেঙে গেল আমার,,,,,

আমি কাঁদো কাঁদো মুখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,

মনে হচ্ছে প্রচণ্ড রেগে আছে ভাইয়া,,,, বলল,,,

: আজ তোর ক্লাস টেস্ট আছে সে কথা কি তোর মাথায় নাই???? এত বেলা হয়ে গেছে তাও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস,,,

আসলে আমি ভোরবেলা নামাজ পড়ার পর আবারও শুয়ে পড়ি ,,,,এটা আমার নিত্যদিনের অভ্যেস ,,,,ঘুম যেনো ছাড়তেই চাই না,,,, আজ আমার ক্লাস টেস্ট ছিলো সেটা তো আমি জানি,,,, কিন্তু এতটা বেলা হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি,,, অগত্যা চুপচাপ স্নান সেরে একেবারে রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম ,,,
দেখি বাড়ির প্রায় সবাই ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্টে বসেছে,,,,,,
আমিও গিয়ে আর্দ্র ভাইয়ার পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লাম,,,,
বরাবরের মতই সবাই প্রায় চুপচাপ,,,, আসলে এটা বড় আব্বুর রুটিন,,,, খাবার টেবিলে বেশি কথা বলা যাবে না,,,

বড়মা আমার প্লেটে দুটো স্যান্ডউইচ তুলে দিল,,,,
স্যান্ডউইচ দেখেই আমার কান্না এসে যাচ্ছে,,,, প্রতিদিন এই এক খাবার ভালো লাগে না,,,

আমি আবারও কাঁদোকাঁদো মুখে বড়মার দিকে তাকালাম,,,, বড়মা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে ইশারা করে আদ্র ভাইয়াকে দেখালো,,,,,
যার মানে হলো ,,,,(সকালে অন্য কিছু খাওয়া যাবেনা,,, এটাই খেতে হবে,,, না হলে ওই যে উনি!!!!! দেখতেই পাচ্ছো )
আমিও আড়চোখে একবার তাকালাম আর্দ্র ভাইয়ার দিকে,,, তিনি একমনে খেয়ে চলেছেন,,,,

শালার উগান্ডার জামাই কোথাকার,,, একমনে গিলেই যাচ্ছে,,, এদিকে আমার যে এই এক খাবার প্রতিদিন খেতে ভালো লাগেনা সেটা কেউ বোঝেনা,,,,

এখন আবার খেয়ে এই সাদা বিলাইটার সাথেই কলেজে যেতে হবে,,,,, তার ভার্সিটি আর আমাদের কলেজে একই কিনা,,,!!!!!!
কলেজে গিয়েও আমার এক দন্ড শান্তি নেই সাদা বিলাইটার চোখ সব সময় আমার দিকে সিসিটিভির মত লেগে থাকে,,,,, তিনি না থাকলেও তেনার সাঙ্গোপাঙ্গ গুলো ঠিকই সিসিটিভি ফিট করে রাখে,,,,,
জিন্দেগি মোর তেনা তেনা করে দিয়েছে এই সাদা বিলাইটা,,,, মনে-মনে একশ একটা গালি দিয়ে মনের ঝাল মিটাচ্ছিলাম,,,,
তখনই টেবিলের নিচে পায়ে কারো পায়ের স্পর্শ পেলাম,,,, বুঝতেই পারলাম যে পায়ের মালিকটা কে,,,, ঝট করে আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম ,,,,আদ্র ভাইয়া খানিকটা আমার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,,,,

: আমাকে যদি গালি দেয়া শেষ হয়ে থাকে তাহলে চুপচাপ খেয়ে নে,,, কলেজের জন্য লেট হচ্ছে,,,

আমি চোখ বড় বড় করে আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,

আমি তাকে গালি দিয়েছিলাম সেটা কি করে বুঝলো????

:তোর ওই ছোট্ট মাথায় সেটা ঢুকবে না,,,, গোবর ছাড়া তো কিছু নেই ,,,তাই এত চাপ দিসনা,,,, খালি খালি নোংরা হবে,,,,

আর্দ্র ভাইয়া কোথায় মনে হচ্ছে কাউ কে বিষ খাইয়ে দিই,,,,, শালা হাতি,, ইঁদুর ,,সাদা বিলাই সব সময় আমাকে অপমান করে ,,,,,আমাকে অপমান করার একটা সুযোগ যেন তার হাত ছাড়া করা যাবে না,,,,, (তোর জীবনে বউ জুটবে না দেখিস,,, জুটলেও তোর জীবনটা তেনা তেনা করে দেবে,,,, যেভাবে তুই আমার জীবনটা তেনা তেনা করছিস,,,,হুহহহহ,,,মনে মনে) আহহহ,,,,, একটু শান্তি শান্তি লাগছে,,,,

:সেটা দেখা যাবে,,, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে চল,,,,,

আবারও বুঝে ফেললো,,,,আজব তো,,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কলেজের মাঠে ঢুকতেই আমার হতচ্ছাড়া বান্ধবী গুলো হুড়মুড় করে এগিয়ে এলো,,,,,
কি ভাবছেন??? আমার জন্য এলো???
মোটেই না,,,, আসলে আমাকে যে সঙ্গে করে এনেছে সেই সাদা বিলাইটাকে দেখার জন্যই আমার লুচ্চি বান্ধবী গুলো হুমরি খেয়ে পড়েছে আর কি,,,,

বুঝিনা কলেজের মেয়ে গুলোর খেয়ে কি কোনো কাজ নেই,,,,, হা করে সবাই আদ্র ভাইয়ার দিকে কি ভাবে তাকিয়ে থাকে ,,,যেন চোখ দিয়ে গিলে খায়,,,

শালা এক একটা লুচ্চি মাইয়া,,,, তোগো কি জামায় নাই নাকি বয়ফ্রেন্ড নাই সারাক্ষণ আদ্র ভাইয়ার দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকিস,,,,,, গা টা জ্বলে যায় একেবারে,,,,, এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার কি আছে,,,,, যত্তসব

আর্দ্র ভাইয়া আমাকে ক্লাসে যেতে বলে তার ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেল,,,, আমি ও আমার লুচু বান্ধবীদের দিকে এগিয়ে গেলাম,,,, আমরা কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী মিলে একটা টিম হয়ে থাকি সবসময়,,, আমাদের টিমে 6 জন,,,,, ছয় জনই আমরা বেস্টফ্রেন্ড,,,,,

আমি অধরা,,, তামান্না যাকে আমরা শর্টকাটে তিমি বলে ডাকি,,, রিয়া,,, সোমা,,, লিমন,, আর অ্যালেক্স,,,,,

আমাদের মধ্যে একমাত্র অ্যালেক্স বিদেশি,,,, আমাদের সাথে থেকে অবশ্য বাংলাটা ভালোই শিখেছেন সে,,, তবে এখনো উচ্চারণ সঠিক হয় না,,, আমি ওকে ইংরেজ বলেই ডাকি,,,,প্রথম প্রথম অ্যালেক্স কারো সাথে মিশতে পারতো না,,,, কিভাবে জেনো আমাদের সাথেই তার বন্ধুত্বটা হয়ে গেছে,,,, ব্যস আমাদের দলের একজন হয়ে উঠেছে সে,,,,

আমি রিয়া সোমা লিমন আর অ্যালেক্স কলেজের পাশে বকুল গাছের নিচে বসেছিলাম,,, তিমি তখনও আসিনি,,,

লিমন বলল,,,

: ওই ছেরি আজকের ক্লাস টেস্টের কেমন পিপারেশন নিয়েছিস????

:আর প্রিপারেশন রে ভাই ,,,,ওই যে একটা খাটাস আছে না ,,কাল রাত দশটা পর্যন্ত পড়িয়ে আমার ঘাড় পিঠ ব্যথা করে দিয়েছে,,,,

রিয়া মধ্যিখানে বলে উঠলো,,,,

:আহা ,,,,,,তোর জায়গায় যদি আমি থাকতাম, আমি তো সারারাত পড়তাম ,,,, আদ্র ভাইয়ের মতো ভাই থাকলে তার সামনে তো সারা রাতটা পার করে দেয়া যায়,,

সোমা মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলে,,,,,

:ঠিক বলেছিস রিয়া,,,, আমার তো মনে হয় আদ্র কে শুধু দেখেই যাই,,,, দেখেই যাই,,,,, একটা ছেলে এত সুন্দর এত সুইট কিউট কি করে হতে পারে ,,,,,হাইইইই,,,,,,,,

ওদের প্রশংসা শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার অবস্থা,,, শালা লুচু মাইয়াগুলো কয় কি,,
এদের কি আল্লাহ লজ্জা শরম বলতে কোন বালাই নাই,,, আমি চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

: শোন ,,,,তোদের দুই কুত্তি যদি আর একবারও ওই সাদাবিলাইটার প্রশংসা আমার সামনে করিস,,, তোদের সবকটাকে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেবো,,,,,

লিমন বলল,,,,

:যাব্বাবা,,,,, সবকটাকে মানেআমাদের (লিমন আর অ্যালেক্স) দেখে কি তোর “গে” বলে মনে হয়?????
আমরা কখন তোরা আদ্রভাইয়ের প্রশংসা করলাম

:এখন করিস নি,,,, কিন্তু করিস তো,,, আর্দ্র ভাইয়া ভার্সিটির টপার,, বাহ কি চমৎকার প্লেয়ার,,, আদ্র ভাইয়ার কি অ্যাটিটিউড,,, দেখতে মাশাল্লাহ,, এসব কথাগুলো তোরাই তো বলিস

ঠিক সেই সময়ই তামান্না এসে হাজির হলো ঘাড়ের ব্যাথা ধপ করে ফেলে অ্যালেক্স এর পাশে বসে পড়ল,,,,

অ্যালেক্স পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,,

: হেই টিমি,,,, টোমার আসটে এটো লেট হলো কেন???

এমনিতেই মেজাজ টা খারাপ ছিলো,, তার ওপর আলেক্স এর ভুলভাল বাংলা শুনে আরো মেজাজটা চিরচির করে মাথায় উঠে গেল,,, একে হাজারবার শেখানোর পরেও ভুলভাল বাংলা বলা ছাড়লো না,,,

: ওই ব্যাটা ইংরেজ,,,,, তুই সোজাভাবে বাংলা বলতে পারিস না তাইলে বলিস কেন???

: আরে অডরা টুমি রাগ কেনো করছো???
আমি টো ঠিকই বললাম,,,

আলেক্স এর কথায় হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিনা,,, তামান্না বলল,,,,

:আর বলিস না কাল রাতে আজকের ক্লাস টেস্টের পড়াগুলো অর্ধেক রেখেই ঘুমিয়ে গেছিলাম সকাল বেলা উঠে সে গুলো কমপ্লিট করতে লেট হয়ে গেল,,,,

তখনই ক্লাসের ঘন্টা বেজে উঠলো,,, আমরা উঠে ক্লাসে চলে গেলাম,,,,,

গোপাল দাদু,,(হারুন স্যার,,,, স্যার মূলত একটু বেঁটে টাকলু আর ভুড়ি মোটা বলে স্যারকে আমরা গোপাল দাদু বলে ডাকি) এর বোরিং ক্লাসের পর মাথাটা ঝিমঝিম করছিল আমি তামান্নাকে বললাম,,,

: তিমি চল না একবার ক্যান্টিনে যাই ,,,গোপাল দাদুর বোরিং লেকচার শুনে মাথাটা ঝিম ধরে আছে সবকিছু ঠান্ডা খেয়ে আসি,,,,

তামান্না এক কথায় রাজি হয়ে গেল,,,,আমি আর তামান্না ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম ঠিক সেইসময় ভার্সিটির একটা সিনিয়র ভাইয়া (আবির ভাইয়া)
সামনে এসে হেসে বলল,,,,

: আরে অধরা কোথায় যাচ্ছ?? ক্লাস নেই এখন তোমাদের???

মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বললাম,,,

: এখন আমাদের অফ পেরিয়ড আবীর ভাইয়া,,, তাই একটু ক্যান্টিনে যাচ্ছিলাম,,,,

: ওহহ আই,সি,,,,, আমিওতো ক্যান্টিনের দিকেই যাচ্ছি,, আচ্ছা চলো তোমাদের সাথেই যায় ,,,,কি খাবে বলো,, আমি তোমাদের ট্রিট দিবো,,,,

বলতে বলতে আমরা ক্যান্টিনের ভিতরে ঢুকে গেলাম,,,,,

তামান্না ঠাট্টা করে হেসে বললো,,,,

:কেন আবির ভাই কোন উপলক্ষে আমাদের আপনি ট্রিট দিতে চাইছেন?? নতুন নতুন প্রেম করছেন নাকি ভাইয়া????

আমি পেছন থেকে তামান্নার হাতে চিমটি কাটলাম,,,এই তিমি টার মুখে কিছু আটকায় না ,,,,ভার্সিটির বড় ভাইদের মুখের উপরে কেউ এমন কথা জিজ্ঞাসা করে!!!!!

আবির ভাই এবার জোরে হেসে ফেললো বললো,,,,

:সে কি আর আমার কপালে আছে তামান্না ???কাউকে পছন্দ হলেও বলতে তো আর পারছিনা,,,,, তাই প্রেম নামক বস্তুটা ওখানেই আটকে আছে,,,,,

আমি বুঝতে পারছিলাম আবীর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন,,,, কেমন একটা অস্বস্তি ফিল হচ্ছে,, মনে হচ্ছে সাদা বিলাইটা আশেপাশে কোথাযও আছে,,,,,

ঠিক যা ভেবেছি তাই একটু পরে চোখ ঘুরিয়ে দেখি ক্যান্টিনের দরজার সামনে আমাদের দিকে তাকিয়েই আদ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে,,,,, মুখ দেখেই মনে হচ্ছে ভয়ঙ্কর রেগে আছে,,,,
আমি বড়োসড়ো একটা ঢোক গিলে বললাম,,,,

:আরে আদ্র ভাইয়া তুমি,,,,,,!!!!

আদ্র ভাইয়া আমাদের টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,,,,

:কেন আমি আসায় কি তোর প্রবলেম হয়ে গেলো????

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,,

: সে কি তা কেনো হবে!!!!

আদ্র ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে আবীর ভাইয়ার পাশে বসলো,,,, তারপর আবীর ভাইয়ার কাধে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,

: কি আবির,,,,, ট্রিট দেয়া হচ্ছিলো বুঝি,,,,,, তা কোন উপলক্ষে দিচ্ছো????

আবীর ভাইয়া ঢোঁক গিলে বলল,,,,

: আসলে আদ্র সেরকম কিছু নয়,,, অধরা আর তামান্না ক্যান্টিনে আসছিল,,,, তাই বললাম ওরা যদি কিছু খেতে চাই তো আমি ওদের খাওয়াতে পারি,,,,, এই আর কি,,,,,

:আচ্ছা ,,,,ওদের খাওয়া নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না,,,, তুমি যাও,,,,

আবীর ভাইয়া সাথে সাথে উঠে চলে গেলো,,,,, দেখে মনে হলো সে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে,,,,,,
তারপর আদ্র ভাইয়া আমার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে বলল,,,,

খুব বার বেড়েছে না তোর??,,,,যখন তখন যেখানে সেখানে চলে আসছিস,,, যার তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিস,,, আবার যার তার কাছ থেকে ট্রিট নিচ্ছিস,,,, খুব সাহস বেড়েছে না তোর?????

এই ঠান্ডা কথাগুলোর মাঝে আমি ঠিকই একটা ঝড়ের আভাস পাচ্ছি,,, কিছু একটা বলতে যাবো তার আগেই তামান্না বললো,,,,

: দেখেন আর্দ্র ভাইয়া,,, এখানে অধরার কোন দোষ নেই,,, আমরা দুজনেই ক্যান্টিনে আসছিলাম,,, মাঝপথে আবীর ভাইয়া এসে জুটলো,,,,,

আদ্র ভাইয়া হাত উঠিয়ে তামান্নাকে থামিয়ে দিলো,,,,,,

তামান্না চুপ হয়ে গেল,,,, আদ্র ভাইয়া আবার বলল,,,

:তামান্না তুমি কিছু খাবে ???যদি কিছু খাও ক্যান্টিন থেকে নিয়ে নাও,,, আমি বিল পে করে দেবো,,, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,

:তুই আমার সাথে চল,,,,,,

আমি ভয়ে ঢোক গিলে বললাম ,,,,

:কোথায় যাবো আদ্র ভাইয়া??? আমার ক্লাস টেস্ট!!!!

আদ্র ভাইয়া এবার জোরে ধমক দিয়ে বলল,,,

তোর ক্লাস টেস্ট ফাস্ট পিরিওডে হয়ে গেছে,,, সেটা আমি খুব ভাল করে জানি,,,, তাই কোন অজুহাত না দিয়ে আমার সঙ্গে চল,,,,

আমিও মুখটা আমসত্ত্ব করে তামান্নার দিকে একবার তাকালাম দেখি হারামিটা মুখ টিপে হাসছে,,,,, আমিও চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালাম তবুও নির্লজ্জের মতো হয়ে যাচ্ছে,,,, শালি আমার ফ্রেন্ড নাকি শত্রূ বুঝিনা,,,,

অগত্যা ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে যমরাজের পিছুপিছু এগিয়ে গেলাম,,,,,

********
গাড়ি আপন গতিতে চলছে ,,,,,আমি চোখ বন্ধ করে জানালার পাশে বসে আছি,,, আসলে বাতাস খাচ্ছি,,, গাড়িতে বসে এই কাজটা করতে আমার খুব ভালো লাগে,,,,,

হঠাৎ করে গাড়ি থামায় চমকে উঠলাম আমি,,,, তাকিয়ে চারপাশটা দেখে আমি তো অবাক ,,,,,,,,এটাতো বাড়ি নয়,, কোথায় নিয়ে এলো আদ্র ভাইয়া আমাকে,,,,,
আদ্র ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দরজা খুলে বলল ,,,,

:বেরিয়ে আয়,,,,!!!!!

আমি আবার কৌতুহল নিয়ে বললাম,,,,

: এটা কোথায় ভাইয়া??? তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো????

:এত কথা তোকে আমি বলতে বলেছি?? বেরিয়ে আসতে বলছি বেরিয়ে আয়,,,,

আমার একটা সাধারণ প্রশ্নের এত রাগার কি আছে বুঝলাম না,,, মুখ ভেংচে গাড়ি থেকে নেমে এলাম আমি,,,
ওমা এত নদীর পাড়,,,, কি সুন্দর একটা নদী তির তির করে বয়ে যাচ্ছে,,,,

আমি এক দৌড়ে নদীর পারে চলে গেলাম,,,

আদ্র ভাইয়া পেছন থেকে বলল ,,,,,

:এখানে আমি মাঝে মাঝেই আসি ,,,,আজ ভাল লাগছিলো না তাই কলেজ থেকে চলে আসতে চাইছিলাম,,,,, কিন্তু তোকে তো ওখানে একা রেখে আসা যাবেনা,,, কোথায় কি করে বসবি,, তাই তোকেউ নিয়ে এলাম,,,,,

আমিও আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,

: থ্যাংক ইউ আদ্র ভাইয়া,,,, এখানে আনার জন্য ,,,,,আমার খুব ভালো লেগেছে জায়গাটা,,,,

আদ্র ভাইয়া মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,,,,, আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো,,,, তারপর কিছু না বলে সামনের দিকে হাটতে লাগলো,,,,

আমিও ভাই আর পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলাম,,,,,

হঠাৎই পিছন দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

: এভাবে হুড়মুড় করে দৌড়াচ্ছিস কেন??? হেঁটে আসা যাচ্ছে না!!!!

আমি মুখ ভেংচে বললাম,,,,

: তুমিতো লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে যাচ্ছো !!!!তোমার সঙ্গে হেটে আমি পারছি নাকি তাই,,,,,

বেশ কিছুক্ষণ নদীর পাড়ে কাটিয়ে আবারো আমরা বাড়ির দিকে ফিরছি,,,, আদ্র ভাইয়ের মুখ দেখে বুঝার চেষ্টা করছি কি চলছে তার মনে,,, আমি তো ভেবেছিলাম কয়েকটা রাম ধমক খাবো,,,,,কিন্তু আমাকে না বকে নদীর পাড়ে বেড়াতে নিয়ে গেলো,,, ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না আমার,,,,,

হঠাৎ করেই আদ্র ভাইয়া বলল,,,,,

: শোন অধরা!!!!! কলেজে এই আবির ছেলেটার থেকে দূরে থাকবি,,,,, শুধু আবির কেন সব ছেলেদের থেকেই দূরে থাকবি,,,,,, মনে থাকবে???

আমি ও মাথা দুলিয়ে সায় দিলাম,,,,, বেশি কিছু বলতে আমার ইচ্ছা করছে না,,,, তবে মনে মনে ঠিকই বলছি,,,, কোন ছেলের সাথে কথা বলতেই বা কখন দাও তুমি,,, তোমার সিসিটিভিতে সব সময় আমার দিকে তাক করা,,,, একমাত্র লিমন আর আলেক্স ছাড়া কোন ছেলে যে আমার জীবনের ধারে কাছেও নেই সেটা আর বলতে,,,,!!!!!!!

চলবে,,,,,,,,,,