তোমাতে বিভোর আমি পর্ব-০৩

0
237

#তোমাতে বিভোর আমি
পর্ব,,,,৩
লেখিকা,,,, মৌমো তিতলি

********
সন্ধ্যাবেলা বড়মা,,,আম্মু রান্না ঘরে রাতের খাবার বানাতে ব্যস্ত,,, লাকি আপু তাদেরকে টুকটাক হেল্প করছে,,,,

আশুরা আরিয়ানকে নিয়ে খেলছে,,,,আমি বসে টিভি দেখছিলাম,,,,কাল ফ্রাইডে,,, কলেজের ঝামেলা নেই,,,
এমন সময় কোথা থেকে আদ্র ভাইয়া এসে জুটলো,,,

:অধরা এক কাপ গরম গরম কফি করে নিয়ে আয় তো আমার রুমে,,,,

🙄🙄 আরামসে বসে একটু টিভি দেখছিলাম সেটা তার সহ্য হলোনা,,,,,
আচ্ছা বলে আমিও রান্না ঘরে ঢুকে গেলাম,,,,
এক কাপ কফি করে এক চুমুক দিয়ে চেক করলাম ঠিক আছে কিনা,,,,না হলে আবার এক গাদা কথা শোনাবে,,,,তবে এই কাজটা করার পেছনে আমার আরো একটা কারণ আছে,,,,,শালা উগান্ডার জামায় সব সময় আমাকেই খাটায়,,,তার কফি খেয়ে এঁটো করে দেই এটা যদি সে ঘুনাক্ষরেও টের পেতো তাহলে কি যে করতো আল্লাহ জানে,,,,,খা এবার আমার এঁটো খা,,,,,

তারপর চললাম নবাবজাদার ঘরে,,,,, গিয়ে দেখি টান টান হয়ে শুয়ে আছে,,,, ব্যাপার টা বুঝলাম না,,,এতো ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করা দ্যা গ্রেট আদ্রিয়ান রাইজাদা আদ্র কিনা ভর সন্ধ্যায় শুয়ে আছে,,,,,,ভাবা যায় এগ্লা!!!!!🤔🤔🤔

আমি গিয়ে কফির কাপটা টি-টেবিলের ওপর ঠকঠক শব্দ করে ভাইয়াকে ডাকলাম,,,,তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

:গরম গরম কফি এসে গেছে,,,,,কেমন হয়েছে খেয়ে বলা হোক 🙄

ঝট করে উঠে বসালো আদ্র ভাইয়া,,,, ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল,,,

:কেনো আজ খেয়ে চেক করে দেখিসনি ঠিক ঠাক আছে কিনা????

দুম করে জেনো পাতালে চলে গেছি এমন একটা ভাব নিয়ে চোখ বড় বড় করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,,😳😳😳তার মানে ভাইয়া জানে যে,,,,,,,,,, আল্লাহ বাঁচাও,,,,,এক মিনিট,,,,,,,,,,এতদিন যদি ব্যাপারটা ভাইয়া জানেই তাহলে আমাকে কিছু বলেনি কেনো??????🤔🤔🤔🤔🤔🤔

আদ্র ভাইয়া নির্বিকার ভাবে কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,,,

: তুই কি ভাবছিস আমি কিছু জানিনা???? আমি খুব ভালো করে জানি যে আমার কফি আমার আগে একটা বিড়ালে মুখ দেয়,,,,,

আমার মুখটা আমসত্ত্ব হতে হতে হাঃ হয়ে গেলো,,,,,,
শালা কত্ত বড় ধলা ইঁদুর,,,,,, আমাকে ইনডাইরেক্টলি বিড়াল বললো,,,,,,কই বাত নেহি,,,,,,সে তো আর জানেনা মনে মনে এর থেকেও বড় বড় ভয়ংকর সব গালি আমি তাকে দিয়ে থাকি,,,,,

আমাকে ওভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,,,

:মুখটা এবার বন্ধ কর,,নয়তো মাছি ঢুকবে,,,,

☹️☹️☹️☹️☹️☹️

হঠাৎ করে আদ্র ভাইয়া আমাকে হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো,,,, তারপর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো,,, বললো,,,

:মাথাটা ভিষণ ধরেছে,,,একটু মাথাটা টিপে দে তো,,,,বলেই চোখ বুজলো,,,

ধুরররর,,,,, ভাবলাম কাল ছুটির দিন,,একটু মান্জা মেরে বসে টিভি দেখবো এই ধলা হাতির জন্য তা আর হবে বলে মনে হয় না,,,,,কি আর করা,,,, আমার প্রতি এতো অত্যাচারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার আমার সাহস নেই,,,,, অগত্যা চুপচাপ বসে ভাইয়ার মাথা টিপতে লাগলাম,,,,,,
আহহহহ,,,,,,কি নরম নরম সিল্কি চুল,,,, আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলাম চুলে,,,,,, হঠাৎ করে ভাইয়ার মুখের দিকে চেয়ে থমকে গেলাম,,,,
আসলেই অসাধারণ সুন্দর দেখতে আদ্র ভাইয়া,,, হালকা জোড়া ভ্রু যেনো কপাল জুড়ে মায়াময় এক বক্ররেখা একে দিয়েছে,,, চোখের ঘন কালো পাপড়ি গুলো যেনো অতি আগ্রহের সাথে চোখদুটো ঢেকে রাখতে চায়ছে,,,ওই চোখে কারো নজর না লাগে,,, তার ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,,,,সরু নাক,, গোলাপি রঙের ঠোঁট জোড়ার দিকে তাকিয়ে যেনো হারিয়ে গেলাম আমি,,,,এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে আদ্র ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি,,,,কত মায়াবী লাগছে তাকে,,, একেবারে নিষ্পাপ,,,,
শুধু আমার ক্ষেত্রেই তার এই সুন্দর মুখটা দৈত্যের মতো হয়ে যায়,,,,,মনে মনে হাজারো কথা ভাবছি,,,,, হঠাৎ করেই আর্দ্র ভাইয়া বলে উঠলো,,,,,

: ওভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকিস না,,,,, জানি আমি দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম,,তাই বলে তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিস!!!!!

:😲😲😲😲😲আমি আবার কিসের সুযোগ নিলাম রে বাবা!!!!!!!

: ওভাবে তাকিয়ে থাকিস না,,,,আমি ঘুমাতে পারছিনা,,,

উউউউউ,,,,, আমি ঘুমাতে পারছিনা,,😏😏😏😏 ঢং দেখে বাচিনা,,,,বয়েই গেছে তাকিয়ে থাকতে,,,,,,
হঠাৎ ভাইয়া ঘুরে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুজলো,,,,,, সাথে সাথে ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠলাম,,,,শরিরের প্রত্যেকটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে,,,, অদ্ভুত এক অনুভূতি ঘিরে ধরেছে আমাকে,,,,ফ্রিজড হয়ে গেছি বোধহয়,,,,নড়ার শক্তিটাও পাচ্ছিনা,,,,
হুসে ফিরতেই উসখুস করতে লাগলাম,,,,, ভাইয়ার মাথাটা ঠেলে সরাতে চেষ্টা করছি,,,,,, কিন্তু তাতে আরও বিপরীত হলো,,,,,,,আদ্র ভাইয়া আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,

:উহহহ আধু,,,,,,এতো নড়াচড়া করছিস কেন????
চুপচাপ বসে থাক,,, ঘুমোতে দে আমাকে,,,,

এবার আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে,,,,, ভাইয়া কথা বলছে আর তার ঠোঁট বারবার আমার পেটে ছুঁয়ে যাচ্ছে,,,,,এক অসহ্যকর অনুভূতি হচ্ছে আমার,,,,

কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ পেয়ে বুঝলাম ঘুমিয়ে পড়েছে,,,,,,আলতো করে বালিশের উপর কোনমতে শুইয়ে দিয়ে আমি একছুটে আমার ঘরে এসে ধড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম,,,,,,😤😤😤

********

পরদিন সকালে স্নিগ্ধ মিষ্টি আলো আদ্রর মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়,,,,, আড়ামোড়া ভেঙে ওঠে আদ্র,,,,, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে জগিং স্যুট গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে যায়,,,,,,

জগিং সেরে বাড়িতে ফিরে আদ্র,,,, বাসায় ঢোকার আগে নজর যায় বাড়ির গার্ডেন এর দিকে,,,,, অধরা আর আশুরা একটা গাছের নিচে বসে কিছু একটা করছে,,,,, মেবি কিছু একটা তোলার চেষ্টা করছে,,,,
অধরা কি করছে সেটা দেখার জন্যই আদ্র এগিয়ে যায় গার্ডেনের দিকে,,,,,,
কিছুক্ষণ এগিয়েই থমকে যায় আদ্র,,,,, সকালের নির্মল রোদ্দুর এসে পড়েছে অধরার মুখে,,,,, অনেকটা বিরক্তি মাখা মুখ এখন অধরার,,,, কপাল কুঁচকানো মুখটা ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে,,,, রোদ্দুর এসে মুখের ওপর পড়ায় ঘামের ফোটা গুলো মুক্তার মতই চকচক করছে,,,,, বিরক্ত মুখে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে অধরা,,,, গোলাপি ঠোঁট দুটো নেড়ে কথা বলার ভঙ্গিতে যেন হুস উড়িয়ে দেয় আদ্রর,,,,,,
কয়েকটা বড় বড় ঢোক গিলে সেদিকে এগিয়ে যায় আদ্র,,,,,,
দেখে ছোট্ট একটা সাদা বিড়াল ছানা ঝোপের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে আছে,,, সেটাই টেনে বের করার চেষ্টা করছে অধরা,,,,,
পাশে দাঁড়িয়ে আশুরা অতি আগ্রহের সাথে তাকিয়ে আছে,,,,,
বুঝতে পারলো মূলত আশুরার আবদার রাখতেই এই বিড়ালছানা টা ধরার চেষ্টা করছে অধরা,,,,,

: এখানে কি হচ্ছে? কি করছিস তোরা????

চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সাদা বিলাই দাঁড়িয়ে আছে,,,, এমনিতেই বিরক্ত আমি,,,,আশুরা কোথা থেকে এই বিড়ালছানা টা দেখতে পেয়েছে আর এখন ধরে দেয়ার জন্য বায়না ধরছে,,,,, এক বিড়াল ধরতে পারছিনা,, আবার আরেক বিলাই এসে হাজির,,,,,

মুখটা বাংলার পাঁচের এর মত করে বললাম,,,,,,,

: দেখছোনা বিড়ালটা ধরার চেষ্টা করছি,,,,,,,

: হ্যাঁ দেখতেই পারছি,,, কিন্তু সকাল সকাল বিড়ালছানার পেছনে পড়লি কেন???

: বিড়ালছানা টা আশুরার খুব পছন্দ হয়েছে তাই তাকে এটা ধরে দিতে হবে,,,,,

: আচ্ছা তুই সর আমি দেখছি,,,,

বলে আর্দ্র ভাইয়া নিচু হয়ে হাত লম্বা করে বিড়ালছানা টাকে ধরে নিয়ে এলো তারপর আশুরার হাতে দিয়ে বলল,,,,

: নে তোর বিড়ালছানা,,,, পরিষ্কার করে রাখিস না হলে জীবাণু ছড়াবে,,,,

আশুরা বিড়ালছানা পেয়ে তো মহা খুশি,,,,, লাফাতে লাফাতে বাড়ির ভেতরে চলে গেল সে,,,,,

আদ্র ভাইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

: তুই এই ভাবে ভূতের মত দাড়িয়ে আছিস কেন?? যা ভেতরে যা,,,,,

(সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে) মনে মনে,,,,,,,
লম্বা লম্বা পা ফেলে ভেতরে ঢুকে গেলাম আমি,,,,,

আদ্র পেছনে দাঁড়িয়ে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,,

আজ শুক্রবার ছিলো তাই খুব আনন্দের সাথেই দিনটা পার করে দিলাম ,,,,বলাই বাহুল্য, আজকে সাদা বিলাই টা আমাকে একটু কম জ্বালিয়েছে,,,,, আহ ,,,,কি শান্তি প্রত্যেকটা দিন যদি এমন হতো,,,,,🤗🤗🤗🤗

রাতের খাবারের পর আমি আর আশুরা রুমে চলে গেলাম ঘুমাতে,,,,, আশুরা বড্ড ঘুম কাতুরে,,, বিড়ালছানা টা পেয়ে সারাদিন তার সাথে লম্ফঝম্পও করেছে সে,,, তাই শুয়ে পড়া মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে আশুরা,,,,,
আমি পড়ার টেবিলে বসে আগামীকালের কিছু পড়া কমপ্লিট করে ঘুমাতে চলে গেলাম,,,,

গভীর রাতে মনে হলো আমাকে কেউ যেনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,,, তার গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আমার মুখে,,,,কিন্তু ঘুমের কারণে চোখ খুলে দেখতে ইচ্ছা করছে না আমার,,,,, হঠাৎ মুখে নরম নরম কিছু একটা অনুভূত হচ্ছে,,,, হালকা একটু নড়েচড়ে উঠে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম,,,,

এদিকে কেউ একজন গভীর মনোযোগ দিয়ে অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,
“এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দেবে ,,,সেই ছোট্টবেলা থেকে যেন লতাপাতার মতোই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে আমার জীবনের সাথে,,,, ওকে এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারিনা আমি,,, ওর ঘুম ঘুম চোখ,, গোলাপি ঠোঁটের হাসি,, বোকা বোকা কথা,, মনে মনে বকা,, সবটাই যেনো নেশা ধরিয়ে দেয় আমার,,,,
ইচ্ছে করে সারা জীবন আমার সামনে বসিয়ে রাখি অধরাকে,,, তারপর অপলক ওর দিকে তাকিয়ে সারাজীবন পার করে দিই,,,,, ওকে ছাড়া যে এক মুহূর্তও চলবে না আমার,,,,, আমার অন্তরাত্মা জুড়ে যার বসবাস তাকে ছেড়ে থাকা তো দূর বাচাও অসম্ভব আমার পক্ষে,,,, বড্ড যে ভালোবাসি ওকে,, নিজের চাইতেও বেশি,,, অতিরিক্ত চাই তাকে,,,

অধরার কপালে আস্তে করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় লোকটি,,,,,

*********

পরদিন ভার্সিটিতে এসেই দেখি হারামিগুলা একজোট হয়ে বসে আছে,,,,, আমিও এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে,,,

: কিরে শাকচুন্নি আর খাটাশের দল,,, কি করছিস এখানে সব???

আলেক্স মুখটা আলুরদমের মতো করে বলল,,,,

: হোয়াট ডু ইউ মিন বাই খাঠাশ????

: ব্যাটা ইংরেজ তোর বুঝতে হবে না,,,,, এখানে সবাই মিলে কি মিটিং করছিস তাই বল,,,,

লিমন দাঁত কেলিয়ে বললো,,,,,

:একটা ব্রেকিং নিউজ আছে সেটা নিয়েই আলোচনা করি,,,, বাই দ্যা ওয়ে,,, তুই এত দেরি করে আসলি কেন???

: আর বলিস না,,,,,জানিস তো ওই খাটাশ টা আমাকে নিয়ে আসে প্রতিদিন তাই আমি আগে আগে আসতে পারি না,,,,,, যাইহোক ব্রেকিং নিউজ টা কি????

তামান্না মুখ টিপে হেসে বলল ,,,

:কি হয়েছে জানিস??? ওইযে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের তন্ময় আছেনা,,,!!!! তন্ময় ভাই রিয়াকে প্রপোজ করেছে ,,,, সেটা নিয়ে বেচারী রিয়া খুব টেনশন এ আছে,,,,

আমি আনন্দে চিৎকার করে বললাম,,,,,

: সেকি!!! তন্ময় ভাই প্রোপোজ করেছে রিয়াকে????
আরে এটা তো ভাল খবর,,, তা মুখটা এমন আমসত্ত্ব করে আছিস কেন!!!! তুইতো তন্ময় ভাইকে মনে মনে পছন্দ করতিস,,,,,,

রিয়ার মুখে উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠল ,,,,তবুও লজ্জায় বলল,,,,

: ধুর তাই বলে কি আমি ভেবেছিলাম নাকি যে তন্ময় আমাকে ভালবাসবে,,,,, আজ হঠাৎ করে প্রপোজ করলো তাই বিশ্বাস হচ্ছে না,,,, একটু নার্ভাস হয়ে গেছে বুঝলি,,,,

: আরে ভাই ছাড় এসব নার্ভাসনেস এর কথা,,,, ভাই তোর কাঙ্ক্ষিত প্রেমটা হয়ে গেছে এবার তুই আমাদেরকে ফুচকা খাওয়াবি,,,,,, মনে থাকে যেন!!!!!

সবাই হেসে সায় দিলো,,,, রিয়া ও বলল ঠিক আছে আজ কলেজ শেষে তোদেরকে আমি ফুচকা খাওয়াবো,,,,,
আমরাও খুশি হয়ে ক্লাসে চলে গেলাম,,,,

কলেজ শেষে সবাই রাস্তার মোড়ে মন্টু কাকুর দোকানে ফুচকা খেতে গেলাম,,, আজকে তো শনিবার ছুটির পর আবার আদ্র ভাইয়ের এক্সট্রা ক্লাস আছে,,, তাই আমাকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়,,,, ভালোই হলো ফুচকা খেতে খেতে সময় পার করা যাবে,,,,

এমন সময় তন্ময় ভাইয়া হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো,,,, তাকে দেখে রিয়া যেন একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেল তাই দেখে আমরা আবার ঠাট্টা করে বললাম,,,,

: বাবা এত লাজুক লতা হওয়ার কি আছে!!!!!

তন্ময় ভাইয়া এসে বলল ,,,,

:তোমরা ফুচকা খেতে এসেছে বুঝি,,,, ঠিক আছে তোমাদের যত ইচ্ছা খাও আমি বিল পে করবো ,,,,

আমরা আনন্দের সাথে উল্লাস করে উঠলাম ,,,মন্টু কাকু হাসিমুখে আমাদের ফুচকা বানিয়ে দিলো,,,
এক প্লেট ফুচকা নিয়ে তন্ময় ভাইয়া হাসিমুখে রিয়ার সামনে বসলো,,, রিয়ার মুখে একটা ফুচকা দিলো,,,,
রিয়া লজ্জায় লাল হয়ে ফুসকা খেলো,,,, সেটা নিয়ে আমরা খুব হাসাহাসি করলাম,,,, আমি আবার ঠাট্টা করে বললাম,,,,

:একি তন্ময় ভাইয়া শুধু গার্লফ্রেন্ডকে খাওয়ালেই হবে???? আমরাও তো এদিকে আছি নাকি ,,,শালীদেরোতো হক আছে,,,, আমাদের টা কে দেবে শুনি!!!!!!

তনময় ভাইয়া হাসতে হাসতে আমার গালেও একটা ফুচকা তুলে দিল,,,, আমিও হাসিমুখে ফুচকা টা নিয়ে খেতে লাগলাম,,,,,

এদিকে দূর থেকে একজন সেটা দেখে রাগে বোম হয়ে গেছে,,,,,

হঠাৎ করেই কোত্থেকে জানি আদ্র ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো,,, আদ্র ভাইয়ার রাগী ফেসটা দেখেই আমার ফুচকা নাকে মুখে উঠে গেল,,,,এমনিতেই প্রচুর ঝাল দিয়ে খাচ্ছিলাম নাকে মুখে উঠে আমার কাশতে কাশতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম,,,,

আদ্র ভাইয়া এক বোতল পানি আমার হাতে ধরিয়ে দিলো,,,, আমিও পানির বোতলটা নিয়ে ঢক ঢক করে পুরোটা শেষ করে দিলাম,,, তারপর হাঁপাতে লাগলাম,,,,

কিছু না বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল আদ্র ভাইয়া,,,,, হাতটা এত শক্ত করে ধরেছে যে আমার প্রচুর ব্যাথা লাগছে,,,, আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

:কি হয়েছে আদ্র ভাইয়া আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছ কেনো?? কি করেছি আমি ??হাত কিভাবে ধরেছে কেনো,, ব্যথা লাগছে তো আমার,,,,,

আমার কোন কথায় যেন আদ্র ভাইয়া কানে ঢুকছে না,,,, সে আমাকে হিড়হিড় করে টেনে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেললো,,, তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে ফুল স্পিডে গাড়িটা সোজা বাড়িতে নিয়ে এলো ,,,তারপর আমার হাত ধরে আবারো টেনে সোজা তার ঘরে নিয়ে গেলো,,, তারপর দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো,,,,

: তোকে কতবার বলতে হবে এক কথা?? বলেছিনা কোন ছেলেদের সাথে মিশবি না,,, খুব ভালো লাগে না ছেলেদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করতে ??ছেলেদের হাত থেকে ফুচকা খেতে!!!!!😠😠😠😠😠😠😠

এবার আমার সত্যিই খুব কান্না পেয়ে গেলো,,,, চোখ দিয়ে অনবরত টুপটুপ করে পানি পড়েই যাচ্ছে,,,,, আদ্র ভাইয়া আমাকে না বুঝেই এতগুলো কথা বলে দিলো,,, সত্যিটা না জেনেই আমাকে খারাপ মেয়েদের তকমা লাগিয়ে দিলো,,,ভেবেছিলাম সত্যিটা বুঝিয়ে বলবো কিন্তু ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে এতটা খারাপ লাগলো যে আমি আর মুখে কিছু বলতে পারলাম না শুধু কাঁদতে লাগলাম,,,,, আমাকে চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া যেন আরও রেগে গেলো,,,,
একহাতে আমার গাল টিপে ধরে বলল,,,,

: কথা বলছিস না কেন ড্যাম ইট,,,,,,, অন্য সময় তো মুখে খই ফোটে,,,, এখন চুপ আছিস কেনো???

আমার এত রাগ হচ্ছে যে কিছু বলতেও পারছি না,,,এই হল আমার আরেকটা দুর্বলতা ,,,বেশি রাগ হলে মেন মেন পয়েন্ট গুলো বলতে পারি না,, সেজন্য আমার আরো বেশি রাগ হয়,,,, রাগে দুঃখে অপমানে আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে,,,,,

এদিকে বাড়ির সবাই আমাকে এভাবে টেনে আনতে দেখে সবাই আদ্র ভাইয়ার দরজার সামনে এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো,,,,

লাকি আপু চেঁচিয়ে বলল,,,,

: ভাই কি হয়েছে অধরাক ওভাবে টেনে আনলি কেনো???দরজা খোল ভাই,,,, কি করছিস তুই মেয়েটার সাথে,,,, কি করেছে অধরা????

বাইরে থেকে সবাই সমানে দরজা ধাক্কে যাচ্ছে,,, সেদিকে আদ্র ভাইয়ের কোন হুশ নেই সে আমাকে জব্দ করতেই ব্যস্ত,,,,,,

:কি হয়েছে বল?? এভাবে চুপ করে থাকবি ????আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে,,,, কেন তন্মায়ের হাতে ফুচকা খেলি তুই???? কে হয় ও তোর???

এবার আমি ভ্যা,, ভ্যা করে কেঁদে দিলাম,,,,,
কাঁদতে কাঁদতেই কোনরকম এ জড়িয়ে কড়িয়ে বললাম,,,

: তন্ময়,,ভা..ভাইয়ায়া আমার কিছু হতে যাবে কেনো,,,, তন্ময় ভাইয়া তো ওই ,,ওই রিয়ার বয়ফ্রেন্ড ,,,রিয়াকে ফুচকা খাওয়াচ্ছিলো তাই আমরাও মজা করে খাচ্ছিলাম,,, সত্যি বলছি,,,আম…………

আর কিছু বলতে পারলাম না ,,,তার আগেই আদ্র ভাইয়া তার ঠোটজোড়া দিয়ে আমার ঠোঁটটা আঁকড়ে ধরলো,,,, এক মুহূর্তে কি হলো বুঝতে পারলাম না,,,, আপন মনেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার,, হাত দিয়ে জামাটা খামচে ধরলাম,,,ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি কি হচ্ছে ,,,চোখ দুটো লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে ,,ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল আমার দুই চোখ,,,,,তীব্র থেকে তীব্র ভাবে আমার ঠোঁট জোড়া আদ্র ভাইয়ার ঠোঁটের মধ্যে আবেশে প্রবেশ করছে,,,,
হুশ আসতেই ধাক্কা দিয়ে ভাইয়াকে সরাতে গেলাম,,,, কিন্তু এক চুলও নড়তে পারলাম না,,, বরং ভাইয়া আরো তীব্রভাবে ঠোটটা কামড়ে ধরলো,,,,
এবার ব্যথায় সত্যিই কেঁদে দিলাম আমি,,,,, আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আদ্র ভাইয়া,,,,

আবারো রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,,,

: যারই বয়ফ্রেন্ড হোক ,,,ভবিষ্যতে এমন কিছু করার আগে আজকের কথাটা যেন মনে থাকে,,,,,😡😡😡😡😡😡