তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-৫+৬+৭

0
247

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০৫

–তোর আব্বুও অফিস থেকে ছুটে চলে আসছে,ইন্তিহাজ তো পা’গলের মতো করছিলো,জানিসতো ছেলেটা তোকে নিয়ে কতো চিন্তা করে

–চিন্তা না ছাঁই,আজ তোমার ছেলের জন্যই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।শয়’তান ছোলে কি করেছে জানো,মাঝরাস্তায় আমাকে বাইক থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে দিয়েছে,কতবড় সাহস (রাগীস্বরে বললো ইয়ানা)

–কে ইন্তিহাজ?কিন্তু ও-তো এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে নয়,তোকে মাঝরাস্তায় ফেলে চলে আসবে এটা কি করে সম্ভব,তোকে নিয়ে আমার ছেলেটা বরাবরই অনেক সিরিয়াস,ও এরকম কাজ করবে বিশ্বাস করা যায় না

–(এই সুযোগ,প্রতিশোধ সুদে-আসলে তুলতে হবে।আমাকে বাইক থেকে টেনে নামিয়ে দেওয়া তাইনা,দেখো এবার আমি তোমার কি করি,আমিও ইয়ানা,আমার লেজে পা দিলে ছোবল তো খেতেই হবে)
মামনী,আমি কি তাহলে মিথ্যা কথা বলছি,তুমি জানোনা আমি সত্যিই বলছি,তোমার ছেলে আমাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে এসেছে,আমি রিকশা করে বাড়ি ফিরেছি

–দাঁড়া আমি দেখছি ওকে,এই কটা দিনেই এতো অবনতি।
একটা মেয়েকে এভাবে রাস্তায় রেখে চলে আসে,মতিভ্রম হয়েছে নাকি ওর,বিয়াদপ কোথাকার।
ইয়ানা সোনা,তুই ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়,কিছু তো খাসনি,আমি ওকে দেখছি (রেগে বললেন খাদিজাতুলনেসা)

–কিন্তু মামনী,আমি বাইরে গেলে যদি সবাই আবারও আমাকে বকে (গাল ফুলিয়ে বললো ইয়ানা)

–আমি আছিতো রে পাগলি,কেউ কিছুই বলবে না।
যা মুখেচোখে পানি দিয়ে লক্ষি মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে বাইরে আয়,তোর জন্য পেস্ট্রি কেক এনেছি,খাবিনা?

পেস্ট্রি কেকের কথা শুনে খুশিতে আপ্লুত ইয়ানা লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে নিচে দাঁড়ালো,হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ওয়াসরুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
কলেজ থেকে আসার পর ফ্রেশ হওয়া হয়নি,আর কান্নাকাটি করার জন্য কেমন একটা লাগছে,তাই গোসল করে নিলো ইয়ানা।গোসল শেষে ড্রেস চেঞ্জ করে রুমের বাইরে আসতেই দেখে ডায়নিং টেবিলের ওপর বেশ কয়েকটা পেস্ট্রির প্যাকেট রাখা,তৃষা,নাহিদ,বহ্নি সবার হাতেই একটা করে পেস্ট্রি।ইয়ানা টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখে পেস্ট্রি নেই,একে একে টেবিলের ওপরে থাকা সব-কয়টা প্যাকেট খুলেও কোনো পেস্ট্রি পেলো না ইয়ানা।

–কিরে,পেস্ট্রি খাবি?আহারে বনু পিছে আসলেতো ভাগ হারাবেই,সব পেস্ট্রি যে শেষ,তুই এবার শুধু প্যাকেটে থাকা পেস্ট্রির ছবি দেখেই পেট ভরিয়ে নে কেমন (হাসতে হাসতে বললো বহ্নি)

–আমাকে রেখে খেয়ে নিলে তোমরা বহ্নি আপু (ছলছল চোখে বললো ইয়ানা)

–ইয়ানাপু,তুমি আজকে সকলকে অনেক কাঁদাইছো,তাই এটা তোমার শাস্তি। (বললো তৃষা)

–তৃষা তুইইও
–এটা আমি বলিনি,ইন্তিহাজ ভাইয়া বলছে,আপু ইন্তিহাজ ভাইয়া আমাদের সবগুলো পেস্ট্রি খেয়ে নিতে বলছিলো

রাগে ফুঁসতে থাকা ইয়ানা বড়বড় পা ফেলে চললো ইন্তিহাজের রুমের দিকে,আজ এসপার নয়তো ওস্পার।ইয়ানা চলে যেতেই ফিক করে হেসে দিলো বহ্নি,তৃষা ও নাহিদ।
ইয়ানা রাগের বসে নক না করেই ইন্তিহাজের রুমে প্রবেশ করে দেখে ইন্তিহাজ হাতে বেন্ডেজ জড়ানোর চেষ্টা করছে,একহাতে কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না তারওপর বাম হাত দিয়ে আরও ইম্পসিবল।ইন্তিহাজ কে এমতাবস্থায় দেখে রাগ উড়ে গিয়ে চিন্তা আর কৌতুহল জেঁকে বসলো ইয়ানা’র মস্তিষ্কে।চিন্তিত ইয়ানা দ্রুত গিয়ে ইন্তিহাজের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ইন্তিহাজের হাত ধরতেই ইন্তিহাজ হাত সরিয়ে নিলো,

–কি সমস্যা, দাও আমি হেল্প করছি।আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট না হলেও ব্যান্ডেজ কিভাবে করতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি।দাও,হাতটা দাও আমি করে দিচ্ছি

–কোনো প্রয়োজন নেই,যা এখানে থেকে। আমার পারমিশন ছাড়া আমার রুমে আসার সাহস হয় কি করে তোর (রেগে বললো ইন্তিহাজ)

–ওকে ফাইন,আমি এখনই মামনী কে ডাকছি দাঁড়াও।সেও দেখুক তার গুণধর ডাক্তারি পড়ুয়া ছেলের অবস্থা

–এই না,ইয়ানা একদম আম্মুকে ডাকবিনা।শুধুশুধু আম্মুকে টেনশনে ফেলতে চাইনা আমি (ঘাবড়ে গিয়ে বললো ইন্তিহাজ)

–তাহলে হাতটা দাও,আমি ব্যান্ডেজ টা করে দিই।
ইন্তিহাজ আর কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো,ইয়ানা ইন্তিহাজের হাত থেকে কাপড় সরাতেই চমকে উঠলো,কি অবস্থা হাতটার,এতটা যখম হয়েছে?মনে হচ্ছে যেন ধারালো কিছু বেশকিছুক্ষন যাবৎ চেপে ধরা হয়েছিলো,ব্যান্ডেজ করতে করতে ইন্তিহাজের উদ্দেশ্যে ইয়ানা বললো,

–হাতের এই অবস্থা কিভাবে হলো ভাইয়া,সত্যি করে বলো।আই থিঙ্ক তুমি মিথ্যা বলবে না আমাকে,তুমিতো মিথ্যা আর মিথ্যাবাদী দু’টোকেই অপছন্দ করো রাইট,সো বলো

–তোকে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পারমিশন দিয়েছি মানে এই নয় আমার পারসোনাল বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার দিয়েছি।চুপচাপ নিজের কাজ করে চলে যা (কিছুটা রাগিস্বরে)

–ভাইয়াআআআ (ভেজা গলায় বললো ইয়ানা)

–ওহ্হো,তুই হঠাৎ আমার রুমে,উইথআউট পারমিশন,দ্যাট মিনস তোর নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য ছিল এখানে আসার।কেন এসেছিলি বলে ফেল,এমনিএমনি যে আমার রুমে তুই কখনো আসবিনা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি

–আমার পেস্ট্রি নাকি তুমি সবাইকে খেয়ে নিতে বলেছো,কেন বলেছো সেই কারণ জানার জন্যই এসেছিলাম

–ওহ্,তা-ই বল।খাওয়া,খাবার,নিজের স্বার্থগুলো ছাড়া তোর কোনোকিছুই চোখে পরেনা ইয়ানা।মানুষের আবেগ,তাদের কথাবার্তার ধরন সেগুলো যদি উপলব্ধি করতে পারতি।হাহ্,বাদ দে,দুনিয়াটাই এখন স্বার্থপরে ভরপুর,স্বার্থ ছাড়া কেউ এক পা-ও নড়েনা,সেখানে তোর মতো বাচ্চা মেয়ের আর কি দোষ।

–মানে,কি বলছো তুমি ভাইয়া,বুঝলাম না?

–কিছু না,ফ্রিজে তোর পেস্ট্রিগুলো রাখা আছে,খেয়ে নিস।এখন এখানে থেকে যা,আমি একটু রেস্ট নিব।আর শোন আম্মু বা কাকিয়া কে কিছু বলার দরকার নেই

–কিন্তু তোমার হাত?
–তোকে যেটা বলেছি সেটা কর,নয়তো পরিণাম খারাপ হবে,আমি মোটেও খুব ভালো মানুষ নই,আর কেউ না জানলেও তুই অন্তত সেটা খুব ভালো করেই জানিস ইয়ানা

ইয়ানা আর না দাঁড়িয়ে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,ইন্তিহাজ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একহাত কপালে রেখে বিছানায় শুয়ে পরলো,ইয়ানা’র এমন অবহেলা আচরণে হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়,সেটা কি ইয়ানা কখনোই বুঝবে না।ইন্তিহাজ তো সবসময়ই চায় ইয়ানা ওর ওপরে অধিকার ফলানোর চেষ্টা করুক,ওর ভুলগুলো ধরিয়ে দিক,কিন্তু সবার সব ইচ্ছে তো পূরণ হয়না।
ভাবতে ভাবতেই চোখ টা লেগে আসলো ইন্তিহাজের,সবই পেইন কি’লার এর সাইড ইফেক্টস।ইন্তিহাজ চোখ বুজে নেওয়ার কিছু সময় অতিবাহিত হতে না হতেই ইন্তিহাজ উপলব্ধি করলো কেউ ওর হাত ধরে টেনে উঠাবার চেষ্টা করছে,কিন্তু ইন্তিহাজ চেষ্টা করেও চোক্ষুজোড়া খুলে তাকাতে পারছে না,সকল প্রচেষ্টা বিফল হচ্ছে তার।
এবারে নেত্রপল্লবের ওপরে তরল কিছু পরতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ইন্তিহাজ,তাকিয়ে দেখে ইয়ানা ওর দিকে রাগী চাহনিতে তাকিয়ে আছে।অসময়ে এভাবে ঘুমে ডিস্টার্ব করার কারনে ইন্তিহাজর রাগটা মাথায় উঠে গেলো,রাগীস্বরে বললো,

–আবার কি চাই,বড্ড সাহস বেড়ে গেছে তাইনা,যখনতখন উইথআউট পারমিশন আমার রুমে আসছিস,আবার আমাকেই ডিস্টার্ব করছিস,কি ব্যাপার,কি চাই তোর

–উঠো তুমি, কখন থেকে ডাকছি এই অল্পসময়ের মধ্যেই এতো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে যে তাকাতেই পারছোনা তাইনা,তাড়াতাড়ি উঠো।চোখে-মুখে পানি দাও (কড়া কণ্ঠে বললো ইয়ানা)

ইন্তিহাজ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ইয়ানা’র এমন আচরণের কারণ টা কি,শান্তগলায় বললো ইন্তিহাজ,

–কি হয়েছে তোর,সমস্যা টা কি?ঘুমোতেও দিবিনা নাকি?

–আসলেই ভালোর মূল্য নেই এই পৃথিবীতে,যার জন্য করি চুরি সেইই বলে চোর,এটাই বাস্তবতা

–তোর ন্যাকামি অন্যকোথাও গিয়ে করিস,এখানে কি সেটা বল,কি হয়েছে

–আম্মু,মামনী তোমাকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছিলো।মামনী তো তোমাকে ডাকতে এদিকেই আসছিলো,আমি কতো কষ্টে ম্যানেজ করে নিজে তোমার জন্য খাবার সাজিয়ে এনেছি।মামনী এখানে আসলেই তো ধরা পরে যেতে,তখন বুঝতে কেমন লাগে,হাতটার যা অবস্থা করেছো তুমি

–বলতে পারলিনা আমার ক্ষুধা নেই,পাক’নামি করে খাবার আনতে কে বলেছে তোকে।আমি খাবোনা,খাবার নিয়ে যা

–আমিও কিন্তু কিছু খাইনি,তুমি না খেলে আমিও খাবোনা

–তোর ক্ষুধা লাগলে খা’না,কে ধরে রেখেছে তোকে।খেতে হলে খা নয়তো খাবার নিয়ে চলে যা,আমার খাওয়ার মুড নেই।

–দেখো আমি কোনোকিছু প্রতিজ্ঞা করলে যে করেই হোক সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবোই,আমি নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি তুমি না খেলে আমিও খাবোনা,আমারতো ভীষনই ক্ষুধা লেগেছে,সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি আমার।এবার তুমিই ডিসাইড করো আমাকে এভাবে অভুক্ত রাখতে চাও নাকি না…

–বড্ড পে’কে গেছিস তুই,ব্লাকমেইল করা শিখে গেছিস তাইনা

–যেটা মনে করার করতে পারো,তো কি ভাবলে,বলো বলো

–আমার ডান হাত টাতেই ইনজুরি হয়েছে,বাম হাতে খাওয়া সম্ভব নয়,বুঝার চেষ্টা কর,পাগলামি না করে তুই খেয়ে নে

–তোমার হাতে ইনজুরি হয়েছে তাতে কি,আমার হাতে তো হয়নি।মিঃলম্বু সাদা ম্যাঁও,নিচু হন আমি খাইয়ে দিচ্ছি

ইয়ানা’র কথায় চোখ বড়বড় করে তাকালো ইন্তিহাজ,

–কিহ্,তুই আমাকে খাইয়ে দিবি?
দু’দিনের পিচ্চি বলে কি (হেসে দিয়ে বললো ইন্তিহাজ)

–অপমান করছো?করো করো,ভালো করতে চাইলেও দোষ

–বাহ্,আমার পিচ্চি বউ টা দেখি মানঅপমানও বুঝে আজকাল,গুড গুড ভেরি গুড,বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে

–কি বললে,তুমি?বউ,কে বউ,কিসের বউ?

–বউ,বউ বললাম নাকি?সেটা আমি কখন বললাম,আমিতো বলেছি বোন,বেশি শুনছিস আজকাল,কি ব্যাপার বলতো?

–সরি,আচ্ছা বাদ দাও।এবার নিচু হও,খাইয়ে দি

–সত্যি করে বলতো,তোকে কে পাঠিয়েছে? আই মিন তুই নিজের ইচ্ছেতে খাবার নিয়ে এসেছিস নাকি অন্যকেউ পাঠিয়েছে কোনটা?

–আজবতো,আমাকে আবার কে পাঠাবে,আমি নিজেই এনেছি।নাও (খাবার মুখের সামনে ধরে)

ইন্তিহাজ কথা না বাড়িয়ে খাবার মুখে নিলো,এবার ইয়ানাও খাবার মুখে নিলো।একবার ইন্তিহাজ কে তো আবার নিজেকে এভাবেই খাওয়া শেষ করলো দু’জন।ইয়ানা গ্লাসে পানি ঢেলে ইন্তিহাজ এর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,

–আমি জানিতো তুমি আজকে খাবার খাবে না,তোমাকে আমি চিনিতো তুমি কেমন।মামনী যেদিন তোমাকে বকবে,সেদিন তুমি কিছুতেই খাবার খাবে না,যত রাগ তুমি এদিক দিয়ে উসুল করো,এটা তোমার ছোটবেলার স্বভাব।মামনী আমাকে সব বলেছে,তাইতো কৌশল করে খাবার খাওয়ালাম তোমাকে

–এর মানে তুই মিথ্যা বলেছিস আমাকে,আম্মু খাবার পাঠিয়েছে তাইনা (রেগে বললো ইন্তিহাজ)

–মোটেও না,আজকেতো এই বিষয়ে মামনীর সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি।জাস্ট গেস করলাম,মামনী আজকে তোমাকে বকেছে,তাই নিজে থেকেই খাবার এনেছি।আমি চাইনা আমার জন্য তুমি না খেয়ে থাকো।

কথাগুলো বলে একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ইয়ানা প্রস্থান করলো,কারণ এখানে থাকা এখন হ্যাভি রিস্কি,ঘুমন্ত বাঘকে যে উত্তেজিত করে দিয়েছে ও,ইয়ানা চলে যেতেই ইন্তিহাজ হেসে দিলো।যাক একটু হলেও ইয়ানা ওর জন্য ভাবে,তাই নিজেই খাবার নিয়েসেছে খাওয়ানোর জন্য,মেয়েটার বুদ্ধি আছে বলতে হয়,কিভাবে ইমোশনাল ব্লাকমেইলটাই না করলো
ইন্তিহাজের ভাবনার মাঝেই ইয়ানা আবার দৌড়ে এসে দাঁড়ালো ইন্তিহাজের সামনে,নাপা এক্সট্রা এগিয়ে দিয়ে বললো,

–ভাইয়া,হাতে ব্যাথা হবে,নাও এটা খেয়ে নাওতো চটপট

–তোকে কে বললো,নাপা খেলে ব্যাথা উপশম হবে?

–সবাইতো খায়,সবাই তো বলে নাপা ট্যাবলেট ব্যাথা উপশম সহ অনেক কাজ করে

–গা”ধি,তুই হয়তো জানিস না নাপা আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর,এটা প্যারাসেটিমল জাতীয় ঔষধ।পৃথিবীতে ৭০% কিডনি রুগীদের কিডনিতে প্রবলেম হওয়ার কারণ হলো এই নাপা।কারণে অকারণে,যেকোনো সমস্যায় এই-যে আমরা কথায় কথায় নাপা খাই,এটার সাইড ইফেক্ট পরে আমাদের কিডনিতে,একসময় কিডনি বিকলও হয়ে যেতে পারে।ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া পাক’নামি করে কথায়কথায় নাপা ওষুধ খাওয়াটা উচিত নয়,রোগ বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।আমাদের বেশি পাক’নামির কারণেই আজ আমাদের এত রোগব্যাধি,আমরা নিজেরাই রোগগুলি সৃষ্টি করছি,আমাদের নিজেদের দোষেই শরীরে রোগ বাসা বাঁধছে।

–আমি জানতাম না,সরি।তাহলে এখন কি করবে তুমি,তোমার তো ব্যাথা বাড়বে তাইনা

–চিন্তা করিসনা,আমি পেইনকি’লার খেয়ে নিব,তুই নিজের রুমে যা,আর সবাইকে বলে দিস আমার রুমে যেন কেউ না আসে,আসে বিজি আছি

–আচ্ছা,তুমি ঘুমিয়ে পরো,আমিও গিয়ে ঘুমাই।

–কানের নিচে দিব,পড়াশোনা নেই তোর?কিছু বলছিনা বলে পেয়ে বসেছিস নাকি,তোকে আমি যে হোমওয়ার্ক গুলো দিয়েছিলাম,কালকে সবগুলো দেখতে চাই আমি।আমার লেফ্ট হ্যান্ডটা এখনও ভালো আছে (ধমকে বললো ইন্তিহাজ)

–আসলেই একটা যা-তা,একটু ভালো ব্যবহার করলে কি হয়,এতকষ্ট করলাম,সেবা করলাম,তবুও নাম নেই আবার ধমকাচ্ছে,আজব লোক একটা।এতো কাহিনির পরেও একটা সরি পর্যন্ত বললোনা,কতটা বেক্কল ভাবা যায় (বিরবির করে)

–আমার নামে অভিযোগের বক্স খালি হলে এবার আসতে পারিস,আমিও পড়বো।পড়াশোনা ছাড়া গতি নেই রে,একসময় ঠিকই বুঝবি,এ পৃথিবীতে শিক্ষা আর টাকা ছাড়া কেউ কাউকে মূল্যায়ন করে না,বাবা-মাও একসময় মূল্যায়ন করবেনা,চিনবেওনা।

–ছি ভাইয়া,নিজের বাবা মাকেও তুমি স্বার্থপর বলছো,টাকার গরম দেখাচ্ছো।আরে তুমি এতো বড় হয়েছো,এতো পড়াশোনা করছো সব তো তাদের জন্যই,তারা যদি টাকা খরচ না করতো তাহলে কও তুমি এতদূর এগোতে পারতে?পারতেনা,তারা নিঃস্বার্থে তোমার পেছনে খরচ করে চলেছে,আর সেই তুমিই কিনা বলছো তোমার টাকা না থাকলে তারাও তোমাকে মূল্যায়ন করবেনা,ছিহ্ ভাইয়া ছিহ্

–দু’লাইন বেশি বুঝা বন্ধ কর,বাস্তবতা নিয়ে ভাব।আমাদের বাবা-মা আমাদের পেছনে এতো কারিকারি টাকা খরচ করে কেন পড়াশোনা করায় বলতো,তারা চায় আমরা যেন শিক্ষিত হয়ে ভালো কোনো জব করি,বা নিজেরাই টাকা ইনকামের জন্য কোনো কিছু তৈরি করি রাইট??

–হ্যাঁ,কিন্তু সেটাতো আমাদের জন্যই তাইনা,এতে তো তাদের স্বার্থ নেই,তাহলে কিভাবে বললে টাকা না থাকলে বাবা-মা আমাদের চিনবেনা,মূল্যায়ন করবেনা?

–পৃথিবীতে কোনো মানুষই চিরস্থায়ী নয়,শিশু থেকে কৈশোর,কৈশোর থেকে যুবক,এভাবে একসময় বার্ধক্যও আসবে।সেসময় তো আর আমরা ইনকাম করতে পারবোনা,পরিশ্রম করতে পারবোনা।বাবা-মায়ের ক্ষেত্রেও তাই,তারাও চাইবে সেই সময়ে একটু সুখে-শান্তিতে থাকতে,সারাটাজীবন তো কম স্ট্রাগল করেনি।নিজেদের সন্তানরাই তাদের ঠিকানা হবে,তাদের ওপরই ডিপেন্ডেট হবে।এখন আমরা সন্তান রা যদি ভালো ইনকাম করতে না পারি,টাকা না থাকে তাহলে নিজে চলবো কি করে তাদের চালাবো কি করে।অসুস্থ হলে,ট্রিটমেন্ট করাবো কি করে,মেডিসিন কিনবো কোই থেকে।এমন হলে তখন বাবা-মাও আমাদেরকে কথা শোনাতে ছারবেনা,দুরছাই করবে।আশেপাশের লোকজন,বন্ধুবান্ধব,সন্তান,পরিবার সবাই অবহেলা করবে,কেউ তোকে সম্মান করবেনা।কাছের মানুষগুলোও পর হয়ে যাবে,কেউ তোকে চিনবেনা,লোকসমাজে পরিচয় দেওয়াতো দূরে থাক।
কিন্তু তুই ভালো জব করিস,ভালো ইনকাম করিস,তোর অনেক টাকা,তখন দেখবি সবাই তোকে ভালোবাসবে,সম্মান করবে,মাথায় তুলে রাখবে।পর মানুষরাও তোকে আত্মীয় বলে পরিচয় দিবে।এই পৃথিবীতে টাকাই সব,টাকাকেই ভালোবাসে সবাই। মাটির তৈরি মানুষগুলো খুব সহজেই কাগজের তৈরি টাকা’তে বিক্রি হয়ে যায়।
তাই এত পরিশ্রম করি,অনেকতো পড়লাম বড়বড় ব্যাক্তিদের জীবনি,কতশত ইতিহাস।এখন আমার লক্ষ্য কি জানিস,”ইতিহাস পড়তে আসিনি,ইতিহাস লিখতে আসিনি,হয়তো এসেছি নিজেই এক ইতিহাস হয়ে”একসময় আমাকেও সবাই চিনবে,আমার নাম নিবে,মৃত্যুর পরেও যেন সবাই আমার কর্মের দ্বারা আমাকে মনে রাখে,হ্যাঁ এটাই আমার লক্ষ্য…..

To be continue……

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০৬

–মৃত্যুর পরেও যেন সবাই আমার কর্মের দ্বারা আমাকে মনে রাখে,হ্যাঁ এটাই আমার লক্ষ্য।

–হুম বুঝলাম,একদিক দিয়ে ঠিকই বলেছো তুমি।

–এইজন্যই বলি পড়াশোনা করতে,যা গিয়ে পড়তে বোস,অনেক পড়তে হবে,অনেক দূর এগোতে হবে,অনেক বড় হতে হবে,ফাঁকিবাজি করলে ক্ষতি টা তোরই হবে বুঝলি।

–কিন্তু আমাদের মেয়েদের এতো পড়াশোনা করে কি হবে,দিন শেষে বিয়ের পরেতো সেই উনুনই ধরাতে হবে,বাসন মাজতে হবে,রান্না করতে হবে,সংসার সামলাতে হবে।

–ওহ্ আচ্ছা এই ব্যপার,এখনই বিয়ের শখ।ওকে তোর পড়াশোনা করতে হবে না,আমি ছোটআব্বু কে বলি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতে,সেটাও গ্রামে।গ্রামের ছেলের সাথে বিয়ে দিব,বেছেবেছে সেই বাড়িতে যে বাসায় তোকে উনুন ধ’রাতে হবে,বাড়ির সবার বাসনপত্র পরিস্কার করতে হবে,সকলের জামাকাপড় ধোয়া,রান্না করা সবকিছু তুই করবি।ওহ্হ হ্যাঁ,মাস্টলি যেন জইন ফ্যামিলি হয়।অনেক মজা হবে বল।

–ভাইয়া আমি তো কথার কথা বলছিলাম,তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন (গাল ফুলিয়ে বললো ইয়ানা)

–শোন,নিজের জীবনের লড়াই নিজেকেই করতে হয়,জ্ঞান অনেকেই দিবে কিন্তু সঙ্গ কেউ দিবে না।

–এত লজিক কোথা থেকে আসে তোমার মাথায়,বাবাগো বাবা,যেন জ্ঞানের ভান্ডার খুলে বসে আছো।

–বাস্তব চিন্তা করি তাই মাথায় বাস্তব জ্ঞান থাকে,অনেক কথা হয়েছে এবার রুমে যা।কথা বললেই কথা বাড়ে,অনেক টাইম লস হয়েছে,আর কোনো কথা না,রুমে যা

–কিন্তু ভাইয়া..

–আবার রে,যেতে বলছিনা,কথা কানে যায়না নাকি অন্য ব্যবস্থা নিব বল,রুমে গিয়ে চুপচাপ পড়তে বসবি (ধমকে)
ইন্তিহাজ এর ধমকে ইয়ানা আর একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলো নিজের রুমের উদ্দেশ্যে,ইন্তিহাজ মুচকি হেসে দরজা লক করে দিয়ে বললো,”পা’গলি একটা,কবে যে বড় হবে”।
ইয়ানা কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখে ৪টা পেস্ট্রির প্যাকেট রাখা,চকোলেট ফ্লেভার,ভ্যানিলা ফ্লেভার,স্ট্রবেরি ফ্লেভার ও ব্লু-বেরী ফ্লেভার।ইয়ানা’র ফেবারিট চকোলেট ফ্লেভারের পেস্ট্রি বের করে চোখ বুজে জোরে ঘ্রাণ নিলো,এরপর একটা চামচ নিয়ে আরামচে তৃপ্তি সহকারে পেস্ট্রি খাওয়া শুরু করলো,২বার মুখে নিতে না নিতেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো,দৌড় লাগালো বাথরুমের উদ্দেশ্যে।

★সকালে সাড়ে ন’টা…
ইয়ানা’র বিছানার পাশে চেয়ারে বসে আছে ইন্তিহাজ,ইয়ানা’র পার্লস চেক করছে সে।আমেনা খাতুন “ওর স্যালাইন” গোলানো এক গ্লাস পানি এনে ইয়ানা’র মাথার পাশে বসলো।

–কাকিয়া,তুমি তাড়াতাড়ি ওকে খাইয়ে দাও,আব্বু স্যালাইন নিয়াসলেই ওকে স্যালাইন করবো।স্যালাইন চলাকালীন কিছু খাওয়ানো যাবে না বলে দিলাম

–কালকে সন্ধ্যায়ও তো ভালো ছিল মেয়েটা,হঠাৎ করে এমন হলো কেন বলতো,ইশশ একরাতেই কি অবস্থা হয়েছে আমার মেয়েটার,তাকানো যাচ্ছে না মেয়েটার দিকে।দেখেন ভাবি,কি অবস্থা হয়েছে আমার মেয়ের (বললেন আমিনা খাতুন)

–ইয়ানা,বাইরের কোনো আজেবাজে খাবার খেয়েছিলি নাকি বলতো সোনা?তাছাড়া এমন হওয়ার তো কথা না,বাড়িতে তো এমন কোনো খাবার রান্না হয়নি যে ফুড পয়জন হবে।আমার মনে হয় ও বাইরের কিছু খেয়েছে (বললো খাদিজাতুলনেসা)

–আমি জানতাম এমনকিছু হবে,তোমার মেয়েকে আরও বেশি বেশি ফুচকা খেতে বলো কাকিয়া,মাছি এসে বসছে,ঢাকনা দেওয়া নেই,হাত ধোয়া নেই,সেই হাতে ফুচকা বানাচ্ছে,ছিহ্।এসব আনহাইজিন খাবার খেলে ফুড পয়জন হবে না তো কি হবে,একটা-দুটো খেলে মানা যায়,পুরো ৪প্লেট খেয়েছে,আমি রাইট টাইমে না গেলে আরেক প্লেট সাবাড় করতো।এগুলো খায় কি করে,আমারতো দেখলেই রুচি হারিয়ে যায়,আর এরা তৃপ্তি করে খায় (বললো ইন্তিহাজ)

–আমার ফুচকা নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেনা ভাইয়া,তোমার পছন্দ নয়,তুমি খেতে পারোনা বলে কি আমিও খাবোনা নাকি।কখনো খেয়ে দেখছো নাকি,হ্যাভি টেস্ট,একবার খেয়ে দেখো বারবার খেতে চাইবে,দই ফুচকা তো আরও টেস্টি,আহ্ (ধীর গলায় বললো ইয়ানা)

–ফুসকা খেয়ে উনি বিছানায় পরেছেন,শরীরের এই অবস্থা তবুও ফুচকা ফুচকা করে যাচ্ছে।কাকিয়া তোমার মেয়েকে সুস্থ করে কি হবে বলোতো,সেইতো আবার ফুচকা খেতে দৌড় দিবে,বেয়া’দব একটা। (রেগে বললো ইন্তিহাজ)

–আহ্ ইন্তিহাজ,মেয়েটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে দেখতো,এমন করিসনা বাবা,এই নে স্যালাইন এনেছে তোর আব্বু,স্যালাইন কর ওকে।

–সে-তো করবোই,না করে আর উপায় আছে কি,ও সুস্থ হোক,
আবারও যদি ফুচকা খেতে দেখি তাহলে খবর আছে। আমি দেখবো ও কতো ফুচকা খেতে পারে,আমি নিজে খাওয়াবো ওকে (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)
আম্মু,হেল্প করো একটু,একহাতে সুঁচ ফোটানো টাফ আমার জন্য।

–তোমার জন্য আজকে শপিংয়ে যাওয়া হলোনা আপু,আর ৫দিন বাদে ঈদ,এখনও শপিং করা হলোনা।শেষে মার্কেটে গিয়ে দেখবো সব বাছনা পরে গেছে (বললো তৃষা)

–আসলেই,সবসময় আমাদেরই লেট করে শপিং করা হয়,ভালো কিছুই পাইনা,প্রতিবছরই ঈদের দু’দিন আগে শপিংয়ে যাই,এটা কোনো কথা (বললো বহ্নি)

–তো যা-না যা,বসে আছিস কেন,আমি কি ধরে রাখছি নাকি তোদের।তোরা শপিংয়ে যা,আমি বাড়িতেই আছি (ইয়ানা)

–তুই বললেই হলো নাকি,তোকে এভাবে রেখে কেউ যাবে না শপিংয়ে,বিরক্ত লাগছে আমার (বহ্নি)

–অনলাইনে শপিং করে নিস এবার,আমি নেটে ভালো কিছু ড্রেসের কালেকশন দেখেছি (খাদিজাতুলনেসা)

–তোদের একটা কথা বলা হয়নি,এবার ঈদ আমরা গ্রামে করবো বলে প্ল্যানিং করেছি,অনেকদিন তোদের দাদুরবাড়ি যাওয়া হয়না,তোদের দাদিমা কালকে কল দিয়ে কান্নাকাটি করছিলো (বললেন আমেনা খাতুন)

–হঠাৎ করে এই ডিসিশন নিলে,বলোনি তো কাকিয়া?

–আরে ইন্তিহাজ,তুইতো কালকে রুম থেকেই বের হসনি।তোর হাতে নাকি ব্যাথা পেয়েছিস,ইয়ানা বললো তুই ঘুমোচ্ছিস তাই আর ডিস্টার্ব করিনি,রাতেই প্ল্যানিং করলাম।মানুষটার বয়স হয়েছে,কখন কি হয়ে যায়,একবার ঘুরে আসি গিয়ে,নাহিদ,তৃষা ওরা তো ছোট,ওদেরও ভালো লাগবে গ্রামের পরিবেশ,সবাই সবকিছু গুছিয়ে নিস (খাদিজাতুলনেসা)

–আমার ওই বাড়িতে যেতে একদম ভালো লাগেনা,দাদিমার ওই ছেলের বউ,এক নম্বরের শয়’তান মহিলা,কিভাবে আমাদের অপদস্ত করা যায় সেগুলোই ভাবে (বহ্নি)

–আহ্,বহ্নি,এসব কি ধরনের কথা,উনি তোমার চাচিমা হন।সম্মান করতে শেখো বড়দের (খাদিজাতুলনেসা)

–আম্মু প্লিজ,কিসের চাচিমা,ওই মহিলা আমার কেউ হয়না আমার ঠিক আছে।সৎ চাচি হয় আমার,নিজের নয়।দাদিমার বোনের ছেলের বউ,কি দেখতে যে দাদিমা ওদেরকে আমাদের বাড়িতে রেখেছে আল্লাহ মালুম,ওই মহিলাতো দাদিমাকেও ভালোবাসেনা,স্বার্থপর কোথাকার।যার বাড়িতে থাকে,যার দয়ায় বেঁচে আছে তাকেই অসম্মান

–ওনারা না থাকলে আজ আমাদেরকে গ্রামে থাকতে হতো বহ্নি,দাদিমা তো শহরে আসবেননা।ওনাকে দেখাশোনা করার জন্য আমাদেরকেই গ্রামে যেতে হতো,তখন তোর খুব ভালো লাগতো বল?কৃতজ্ঞ থাক ওনাদের প্রতি,তোর মুখে যেন এসব বাজে কথা ২য় বার শুনি (ইন্তিহাজ)

–হ্যাঁ,যা খুশি করো তোমরা।শুনে রাখো,আমাকে যদি বাজে কথা বলে না, তো ওই মহিলাকে আমিও দেখে নিব বলে দিলাম।আমিও এখন বড় হয়েছি,কথা বলতে জানি আমি।(বলেই রেগে চলে গেলো বহ্নি?

–মানছি চাচিমা একটু অন্যরকম,কিন্তু বহ্নি আপু একটু বেশিবেশিই করে,ধুরর।তবে আমার তো বেশ লাগছে,অনেকদিন পর শিমলার সঙ্গে দেখা হবে,উফস কিযে আনন্দ হচ্ছে না আমা…আহ্হহহ (ইয়ানা)

–আস্তে,এতো এক্সাইটেড হওয়ার কিছু হয়নি।হাতে স্যালাইন করা হয়েছে,হাত নড়াসনা,ব্যাথা পাবি (ইন্তিহাজ)


পরশুদিন ঈদ,তাই আজকেই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে,সবার ব্যাকপ্যাক করা গতরাতেই কমপ্লিট,বাসার সামনে একটা বড় হাইস দাঁড়িয়ে আছে,এটা ইয়াকুব জামানের ফ্রেন্ডের,তাই ভাড়া করার প্রয়োজন হয়নি।ইন্তিহাজ ড্রাইভিং জানে বিধায় ড্রাইভার নেওয়ার দরকার নেই।একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসলো, ইন্তিহাজের পাশে বসেছে ইয়ানা,বাকিরা পেছনে।ইয়ানা’র আবার মাইক্রো জার্নি সহ্য হয়না,বমি হয়,তাই সঙ্গে অনেকগুলো পলিথিন রেখেছে।
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে ইন্তিহাজ একটা রুমাল ইয়ানা’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

–ধর,এটা নাকের সঙ্গে চেপে রাখ তাহলে বমি বমি ভাব হবেনা,হলেও দেরি হবে।চোখ বুজে থাকবি,বমিবমি লাগলে পলিথিন আছে,ওইটায় করিস,আমার গা মাখালে তোকে দিয়ে পরিস্কার করাবো বলে দিলাম, মনে রাখিস।

প্রায় আড়াই ঘন্টা জার্নির পরে কাঙ্ক্ষিত গ্রামে এসে পৌঁছালো ওরা,পাকা রাস্তা হলেও বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যাবে না,কারণ জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে আছে,আর যে পরিমাণ চিকন রাস্তা,গাড়ি উল্টে যাওয়ার চান্স বেশি,রিস্ক নেওয়ার কি প্রয়োজন।গ্রামের বাজারে থাকা এক গ্যারেজ মালিককে কিছু টাকা দিয়ে সেখানেই গাড়ি পার্ক করলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা একদম অসুস্থ হয়ে পরেছে,৫বার বমি করা হয়ে গেছে ওর,এখন একদম ক্লান্ত ইয়ানা,ঠিক ভাবে দাঁড়াতেও পারছেনা।
এটা গ্রাম,ইয়ানা’কে কোলে তুলে নিলে সবাই বিষয়টাকে খারাপ ভাবেই নিবে,তাই দুইটা অটো ভাড়া করলো আয়ুব জামান।সবাইকে অটোতে বসিয়ে ইয়াকুব জামান ও আয়ুব জামান দুই ভাই কিছু ফল,মিষ্টি কিনে আনলেন।
অটো বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই দৌড়ে আসলো সিয়াম (শিমলার ভাই,২য় শ্রেণীতে পড়ে,নাহিদের সঙ্গে ভালো খাতির),মালেকা বেগম,সঙ্গে আরও ২-৩জন।নাহিদ অটো থেকে নামতেই সিয়াম ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।তৃষা আর বহ্নি ইয়ানা’কে ধরে নামালো,খাদিজাতুলনেসা মালেকা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,

–হ্যাঁরে মালেকা,ঘরদোর পরিষ্কার করছিস না??আমাদের ইয়ানা একটু অসুস্থ হয়ে পরেছে,ওকে শোয়াবো

–হ্যাঁ ভাবি,সব সাফ কইরা রাখছি,কুনোঠি কুনো নোংরা পাইবেননা,আসেন আসেন,রান্নাবাড়াও করা হইয়া গেছে,আমারে শিমলা সব নিজের হাতে করছে,আপনেরা আসবেন শুইনা(পান চিবোতে চিবোতে বললল মালেকা বেগম)

–(শুরু হয়ে গেলো মেয়ের গুণগান করা)——বিরবির করে বললো বহ্নি)

–কি লো ছু’ড়ি রা,দাড়ায় আছিস কেন,আমাদের গ্রামে মাটিতে হাঁটতে পা ময়লা হচ্ছে নাকি,তোরা তো আবার শহরের মেয়ে,গ্রামের মাটি কি তোদের সহ্য হবে রে

–সহ্য হবে কি হবে না সেটা আমরা বুঝবো,আপনার না বললেও হবে,আমাদের বাড়িতে আছেন,খাচ্ছেন দাচ্ছেন সেটুকুতেই থাকুন,লিমিট ক্রস করতে আসবেননা।
চল তৃষা

বহ্নি রেগে তৃষার সাহায্যে ইয়ানা’কে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলো।

–কিছু মনে করিসনা মালেকা,আমার মেয়েটা না অন্যায় কথা সহ্য করতে পারে না তাই একটুআধটু,বাদ দে,বাচ্চা মেয়ে (কথাটা বলেই চলে গেলেন খাদিজাতুলনেসা)

–ভাবি,চলেন।এসব বাচ্চা মানুষের কথায় কিছু মনে করবেননা,বহ্নি টা ওরকমই,ওকে পিন্চ করে কিছু বললে ও সহ্য করতে পারেনা

–নাহ্ না কিছু মনে করিনি রে আমেনা,শহরের মাইয়া,চ্যাটাং চ্যাটাং কথাতো বলবোই,ঘরে যায়া বসেক,আমি আসতিচি।
কোইরে আমাদের ইন্তিহাজ বাজান টা কোই

ইন্তিহাজ অটো থেকে লাগেজ নামাচ্ছিলো,মালেকা বেগম চেচিয়ে বললেন,

–আরে বাবা,তুমি কষ্ট করতিচো কেন,এই ভাই আপনেরা ব্যাগগুলান ঘরে দিয়াসেনতো,টাকা বাড়িয়ে দিবোনি।
ইন্তিহাজ বাবা,তুমি আসো আসো,কাম করন লাগবোনা।


ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ঢুকলো ইন্তিহাজ,ফ্যান চালিয়ে দিয়ে পরনে থাকা শার্ট টা খুলতেই পেছন থেকে মেয়েলি কণ্ঠস্বর পেয়ে আবারও দ্রুত শার্ট পরে নিলো ইন্তিহাজ।পেছনে ঘুরে দেখে কালো থ্রিপিস পরিহিতা মাথায় ওড়না দেওয়া একজন ১৬/১৭ বছর বয়সী মেয়ে লাজুক মুখে মাথা নিচু করে পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে,ইন্তিহাজ ভ্রু-কুচকে বললো,

–কি চাই,কে তুমি?

–(নিশ্চুপ)

–এই মেয়ে,কথা বলছোনা কেন (ধমক দিয়ে)

–মা কইলো আপনি অনেক জার্নি কইরে আসছেন,তাই পানি পাঠাইলো,খাইয়া ল্যান

–তুই শিমলা না?বাহ্ বড় হয়ে গেছিস দেখছি,চিনতেই পারিনি।

ইন্তিহাজ শিমলা’র থেকে গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে বললো,

–পড়াশোনার কি খবর,কোন ক্লাসে জানি তুই?
–আজ্ঞে এসএসসি দিব,এখন ঈদের ছুটি চলতিছে
–ওহ্,কোন গ্রুপ থেকে পড়ছিস?
–আর্স
–ভালো করে পড়,রেজাল্ট ভালো হওয়া চাই কিন্তু।রেজাল্ট ভালো হলে গিফট আছে
–মা কইছে বিয়া দিয়া দিবে,পড়াশোনা করাইবোনা,একগাদা টেকা খরচ হয়।
আপনে বসেন আমি আপনার লাইগা কলের পাড় পানি তুইলা রাখি,গুসোল দিবেন আসেন

কথাগুলো ব’লে চলে গেলো শিমলা,ইন্তিহাজ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে শার্ট খুলে গেঞ্জি পরে নিলো,গোসল দেওয়া দরকার,তাহলে ফ্রেশ লাগবে।
বিকেলে বারান্দায় খেজুরপাতার পাটি বিছিয়ে বসে আছে ইয়ানা,শিমলা,গল্পগুজব করছে দু’জন,

–তো শিমলা,প্রেম করিসনা তুই?
–কি যে কও তুমি ইয়ানা,আমি প্রেম করলে আমার মা আমারে পিটিয়ে বাড়ি ছারা করবো,মা কইছে আমায় বড়লোক ডাক্তার ছেলের সাথে বিয়া দিবো,প্রেম কইরা গায়ে ট্যাগ লাগাইলে বিয়া হইবোনা

–কি বলিস,সত্যিই প্রেম করিসনা।ওমাই গড,এতো সুন্দরী হয়নি কি লাভ যদি প্রেম না করিস,হায় রে
–কেন,তুমি করো নাকি গো?

–করছিলাম কয়েকটা,৭দিনের বেশি টিকাইতে পারিনি,আমার ওইযে গুণধর ভাই আছে না,তার জ্বালায় এ জীবনে প্রেম করা হবে না আমার
–কে গো?

–আরে ইন্তিহাজ ভাইয়ার কথা বলছি আমি, ব্যাডা এক নম্বরের খা”টাস বুঝলি।নিজেও একটা নিরামিষ আমাকেও সেটাই বানাতে চায়,সারাদিন পড়া পড়া করে কানের পো নাড়িয়ে দেয়,অসহ্যকর একটা ছেলে
–তাই নাকি গো,খুব রাগী নাকি?

–রাগী,কিন্তু আমার সঙ্গে বেশী রাগ দেখাতে পারেনা।তবে ভাইয়ার ডিপার্টমেন্টের অনেকেই ভাইয়াকে ভয় পায়।তুই জানিস,রাগ উঠলে ভাইয়ার যা মন চায় তাই করে।সেদিন রাগের বসে আয়না ভেঙে ভাঙা কাঁচ হাতে নিয়ে চেপে রেখেছিলো,দেখলিনা হাত কাটা ভাইয়ার।আমাকেও অনেক কঠিন কঠিন শাস্তি দেয়,আমি শুধু ভাবি ওর বউয়ের কি অবস্থা হবে,বেচারীর হাওলাত ইমাজিন করলেই ভয় লাগে
–ওরে বাবা,আমি তাইলে বিয়া করবোনা।আমি মাই’র খাইতে চাইনা

–তোর আবার কি হলো,তুই ভয় পাচ্ছিস কেন,আমিতো ভাইয়ার বউয়ের কথা বলছি
–একটা কথা কমু,কাউকে বইলো না,প্রমিস করো?
–কি কথা রে,সিক্রেট নাকি?
–হুম,কথা দাও কাউকে বলবেনা
–আচ্ছা বল,কাউকে বলবোনা প্রমিস

–দাদি আর মা কইচে তোমার ইন্তিহাজ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়া করায় দিবে,এইবারই বিয়ার কথাটা চাচা চাচিরে বলবে বুঝছো……

To be continue……

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০৭

–এইবারই বিয়ার কথাটা চাচা চাচিরে বলবে বুঝছো,আমারতো খুবই লজ্জা লাগতেছে তোমার ভাইয়ার সামনে যাইতে,কিন্তু মা বারবার এটা-সেটা অজুহাতে তার কাছেই পাঠাচ্ছে আমাকে,লজ্জা লাগেনা কও।এখন তুমি যা বললা,আমারতো ভয় লাগতেছে এখন

–তুইকি বিয়েতে রাজী শিমু? (গম্ভীর ভাবে বললো ইয়ানা)

–তো রাজি হমুনা কেন,কত সুন্দর দেখতে,হিরোদের লাকান,আবার কতো শিক্ষিত,স্মার্ট কও।আমারতো ওনারে দেখলেই বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করে,কেমন কেমন ফিলিং হয়।জানো কি হইচে আজকে?

— কি হয়েছে (গম্ভীর ভাবে)

–পানির গ্লাস নিয়া আমি ওনারে পানি দেবার লাইগা ওনার ঘরে গেছি,যায়া দেখি উনি শার্ট খুলতাছেন,কি বডি ওমাইগড,সিনেমার হিরো দের লাকান,আমারতো সেই লজ্জা লজ্জা লাগতেছিলো জানো,এখনও কিরকমজানি লাগতেছে(লজ্জামিশ্রিত মুচকি হাসি দিয়ে বললো শিমলা)

–লজ্জা থাকা ভালো,কিন্তু উইথআউট পারমিশন কারোর রুমে যাওয়া অনুচিত,নেক্সটাইম বিনানুমতিতে ভাইয়ার রুমে যাবিনা,কথাটা যেন মনে থাকে

–ইয়ানা,শোনোনা।একটা কথা বলবে,প্লিজ প্লিজ?
–কি বলবো?

–আমাদের কে একসঙ্গে কেমন মানাবে কওনা,বেশ লাগবে বলো (লজ্জামিশ্রীত হাসি দিয়ে)

–আমি জানিনা,আমাকে এসব জিজ্ঞেস করে লাভ নেই

–জানো,আমি আমার সব বান্ধবীদের কইছি আজ আমার হবু বর আসবে বাড়িতে,ওরাতো আমার ডাক্তার বরের কথা শুনে দেখার জন্য পা’গল,কালকেই দেখতে আসবে কইছে

–ভাইয়া এসব জানলে তোকে আর তোর ফ্রেন্ডস দের উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রেখে দিবে,ভাইয়ার এসব পছন্দ না।আর শোন বিয়ের কথা উঠলেই বিয়ে হয়ে যায়না,ভাইয়াকি বলছে নাকি সে রাজী আছে তোকে বিয়ে করতে,পা’গল যতসব

–কেন,কেন বিয়ে করবিনা আমাকে।আমি কি দেখতে খারাপ নাকি কওতো,সবাই যে কয় আমি নাকি নায়িকা সাবানা’র লাকান দেখতে,দাদিমাও এইডা কয় আমারে

–শোন,ভাইয়া সিঙ্গেল না,গার্লফ্রেন্ড আছে ওর।তোর কি মনে হয়,এতবড় ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সিঙ্গেল? জীবনেও না,সো বিয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা কর,নয়তো অন্য ছেলে দেখ বিয়ের জন্য,আমি রুমে যাচ্ছি,তুই থাক (উঠে দাঁড়িয়ে বললো ইয়ানা)

–কে বলছে উনি প্রেম করে,আরে ইয়ানা এখনকার যুগে সব ছেলেই ২-৪টা প্রেম করে,তারমানে এই না যে তাদেরই বিয়া করে।দাদিমা কইছে ওনার সাথেই আমার বিয়া দিবো বুঝছো,আমি জানি উনি দাদীমার কথা কিছুতেই ফেলবেননা

–ওকে ফাইন,বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিস দেখছি।যা খুশি কর,কর বিয়ে,আমার আর কি।যে আদা খাবে সে ঝাল বুঝবে,সাবধান করার ছিল করে দিলাম,এখন তোর ইচ্ছে তুই কি করবি কি করবিনা।

কথাগুলো বলেই রুমে চলে গেলো ইয়ানা,কেন জানিনা ভীষণ রাগ লাগছে ওর,কিন্তু এর কারণ টা অজানা।শুধু ইচ্ছে হচ্ছে ইন্তিহাজ এর পিঠে ২-৪টা কিল বসিয়ে দিলে শান্তি পাওয়া যেতো,রাগে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে ইয়ানা’র,কোনোকিছুই ভালো লাগছেনা ওর।শিমলাকে বরাবরই পছন্দ ছিলো ইয়ানা’র,মূলত শিমলা’র জন্যই এখানে আসতে রাজি হয়েছিলো ইয়ানা,কিন্তু এখন শিমলা’কেই শত্রু মনে হচ্ছে,মনে হচ্ছে এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে ওর।
সন্ধ্যার দিকে বহ্নি আর তৃষা ডাকতে আসলো ইয়ানা’কে,এসে দেখে ইয়ানা উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,তৃষা গিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,

–আপু এই অসময়ে শুয়ে আছো কেন উঠো,আমরা সবাই বাজারে যাব।বাজারে নাকি এসময় গরম গরম পিঁয়াজু উঠে,অনেক টেস্টি,চলো যাবে চলো,রেডি হও

–আমি যাবোনা,তোরা যা,আমার ভালো লাগছেনা।

–আমরা সবাই যাব,তুমি যাবে না কেন।ইন্তিহাজ ভাইয়া,শিমলা আপু,আমি,বহ্নি,নাহিদ,সিয়াম সবাই যাবো

–কিহ্,শিমলাও যাবে নাকি তোদের সাথে???

–হুম সেটাই তো বলছি,তুমি না গেলে ভালো লাগবে না,চলো

–তোরা ওয়েট কর,আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি,আমিও যাব,আমি না গেলে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে,আমিতো যাবোই (শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইয়ানা)

–মানে বুঝলাম না,কি হয়ে যাবে ইয়ানা (বললো বহ্নি)
–না কিছু না,বসো তোমরা,আমি এখুনি আসছি

কথাটা বলেই ইয়ানা তোয়ালে নিয়ে বাইরে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য,ইন্তিহাজ বারান্দায় বসে থেকে নাহিদ আর সিয়ামকে কি দেখাচ্ছে ফোনে,ইয়ানা সেদিকে তাকাতেই ইন্তিজামের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো,ইয়ানা দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি মগে পানি নিয়ে মুখচোখ ধুয়ে নিলো,তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে এসে দেখে বহ্নি শিমলা’কে মেকআপ করিয়ে দিচ্ছে,শিমলা’র পরনে লাল রঙের হাতে কাজ করা থ্রিপিস,লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে সামনে এনে রাখা,ইয়ানা ভ্রু-কুচকে বললো,

–কিরে,তোর আবার মতিভ্রম হলো নাকি।যে মেয়ে বোরকা হিজাব ছাড়া বাইরে যায়না,সেই মেয়ে আজকে থ্রিপিস পরে সেজেগুজে মেকআপ করে বাজারে যাচ্ছে,কি ব্যাপার বলতো

–ওইযে তোমাকে তখন বললাম না,ও-ই জন্যই।মা কইছে এখন থাইকা সবসময় সাইজাগুইজা ঘুরে বেড়াতে,তাইলেই আমারে মনে ধরবো বুঝছো,এইজন্যই সাজতিচি (শিমলা)

-মানে কিরে শিমু,তুই আবার কাকে দেখানোর জন্য সাজুগুজু করছিস,বয়ফ্রেন্ডও আছে নাকি তোর,কিরে তোর মা কি এসব জানে,নাকি অন্য কেস (চোখ নাচিয়ে বললো বহ্নি)

–না আপু,ওরকম কিছুনা,আমি এমনই কইলাম,তুমি সুন্দর করে সাজিয়ে দাও,আমারে যেন অনেক সুন্দর লাগে


খয়েরী রঙের গাউন,সঙ্গে ম্যাচিং হিজাব,মুখে মেকআপ,চোখে কাজল,ঠোঁটে ডার্ক খয়েরী লিপস্টিপ দিয়ে রেডি হয়ে নিলো ইয়ানা।সাধারণত ও এরকম ভাবে সাজগোজ করেনা,কিন্তু আজকে শিমলা’কে এভাবে সাজতে দেখে অজানা কারণে ওরও মন চাইলো এরকম করে সাজতে।

★ইন্তিহাজ ফোনে গেমস খেলছিলো নাহিদ আর সিয়ামের সাথে, হঠাৎ নাহিদ বলে উঠলো,

–ওরেহ্ বাবা,ভাইয়া দেখো,আপুই আজকে পরীর মতো সেজেছে,আজতো আপুইয়ের থেকে কেউ চোখই সরাতে পারবে না,আমার আপুইকে আজ একদম পরী মনে হচ্ছে।

নাহিদের কথা শুনে ওদিকে তাকালো ইন্তিহাজ,ইয়ানা’কে এই লুকে দেখে কতগুলো হার্টবিট মিস হয়ে গেলো ওর,পলকহীন ভাবে ইয়ানা’র দিকে তাকিয়ে আছে ইন্তিহাজ,নাহিদের ধাক্কায় হুস আসলো ওর,ফোনটা নাহিদের হাতে দিয়ে দ্রুত ইয়ানা’র কাছে গেলো ইন্তিহাজ,তখনই শিমলা এসে বললো,

–আমাকে কেমন লাগছে,ভালো লাগছে বলেন?বহ্নি আপু আমাকে নিজে সাজিয়ে দিছে,আমিতো নিজেই নিজেরে চিনতে পারতাছিনা,আপু ভালোই সাজাতে পারে তাইনা

–তোকে অনেক সুন্দর লাগছে শিমলা,বারবি ডল মনে হচ্ছে তোকে।ওয়েট কর আমি এখুনি আসছি,ইয়ানা’র সঙ্গে কিছু পারসোনাল কথা আছে আমার।

কথাটা বলেই ইন্তিহাজ ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো,আচমকা ইন্তিহাজের এমন আচরণে রাগ হলো ইয়ানা’র,রাগিস্বরে বললো,

–কি সমস্যা,আমাকে এভাবে টেনে আনলে কেন।

নো রেসপন্স,চোখ বুজে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে ইন্তিহাজ,ইয়ানা আবারও প্রশ্ন করলো,

–আরে আজবতো,মানে কি এসবের,কিছু বলার থাকলে বলো নয়তো আমি যাচ্ছি

ইয়ানা রেগে চলে যেতে নিলে ইন্তিহাজ পেছন থেকে ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই ইয়ানা হুমড়ি খেয়ে পরলো ইন্তিহাজের বুকে,দুজনেই একে-অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,কিছু সময় অতিবাহিত হতেই ইয়ানা চোখ নামিয়ে নিলো,কিছুটা সরে আসলো ইন্তিহাজের থেকে।ইন্তিহাজ পকেট থেকে টিস্যু পেপার বের করে ইয়ানা’র চোখের কাজল মুছে দিতে দিতে বললো,
–চোখে কাজল দিয়েছিস কেন (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)

–আমার চোখ,আমি কাজল দিয়েছি তাতে তোমার কি??

–বড্ড বাড় বেড়েছিস তুই ইয়ানা,পেছনে ছেলে লেলাতে চাচ্ছিস?এমনিতেই গ্রামের দিকের ম্যাক্সিমাম ছেলেরা মেয়েদের দিকে যেভাবে তাকিয়ে থাকে,দেখলাম তো তখন কতগুলো ছেলে তোদের দিকে কিভাবে তাকাচ্ছিলো,এখন এভাবে বের হলে কি হবে কোনো ধারণা আছে তোর,স্টুপিড (রাগিস্বরে)

–বাহ্,শিমলা’র বেলায় ওয়াও,অনেক সুন্দর,বারবি ডল আর আমার বেলায় স্টুপিড,অসাধারণ,কি বিচার,ওয়াও,আই এম স্পিচলেস ভাইয়া,কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

–যেটা বুঝিস না,সেটা নিয়ে কথা বলিস না।মুখ বন্ধ কর,ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো তাইনা,এমনিতেই আল্লাহ কম রূপ দেয়নি,সেটাকে শো-অফ করার জন্য আটা ময়দা,রংচং মাখার প্রয়োজন নেই,কি অবস্থা করেছে ফেইসটসার,জঘন্য।কার বুদ্ধিতে এসব করেছিস বলতো (টিস্যু দিয়ে ইয়ানা’র ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিতে দিতে বললো ইন্তিহাজ)

–এগুলো কি হচ্ছে ভাইয়া,আমি এতকষ্ট করে সাজলাম আর তুমি সব নষ্ট করে দিলে,কি ধরনের আচরণ এগুলো হ্যাঁ?

–ফারদার তোকে এসব করতে দেখলে অন্য উপায়ে সব মুছে দিব,ওহ্ হ্যাঁ সেটা মোটেও সুখকর হবে না তোর জন্য,কথাটা মাথায় রাখিস,তুই অন্তত ভালো করেই জানিস আমি মানুষটা খুব একটা ভালো নই,তোর ক্ষেত্রে তো একদমই নয়।

–মানেটা কি,আমার সব বিষয়ে তুমি এরকম করতে পারো না ইন্তিহাজ ভাইয়া,আমারও নিজস্ব ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে।

–আমি কি করতে পারি আর কি করতে পারি না,তার কৈফিয়ত তোকে দিবোনা,এমনিতেই তোর চোখের মায়ায় হার্টবিট মিস হয়ে যায়,সেখানে কাজল লাগিয়ে মার্ডার করার প্ল্যানিং করছিস নাকি,ভালো হয়ে যা ইয়ানা,আই অর্ন ইউ।

–মানে,বুঝলাম না,ইকজেক্টলি কি মিন করলে তুমি? কার হার্টবিট মিস হয়ে যায়,কাকে মার্ডার করবো আমি,বুঝলাম না।

–তোকে বুঝতে হবেওনা,এখন চুপচাপ রুমে গিয়ে বোরকা আর নিকাব পরে বের হবি,তানাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম,আমার কথার নড়চড় হলে আমি সেটা বরদাস্ত করবো না,তাড়াতাড়ি কর,গো ফাস্ট (বললো ইন্তিহাজ)

–(কথা ঘুরাচ্ছো তুমি ভাইয়া,ঠিক আছে পরে জেনে নিবো,এখন ঘুরতে যাওয়াটা বেশি ইম্পর্টেন্ট,কথা না শুনলে শেষে দেখা যাবে আমাকে রেখেই চলে যাবে,এই শয়”তানটা কে বিশ্বাস করা যায় না)—বিরবির করে বললো ইয়ানা।

–কিরে,যাবি নাকি আমার বাহুডোর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা।উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে শেষে আমাকেই তো দোষারোপ করবি,আমি খারাপ কিছু করতে চাচ্ছি না,বের হ এখানে থেকে,আর আমি যেটা করতে বললাম সেটা কর।

ইন্তিহাজের কথা শুনে ইয়ানা দেয় করে দেখলো ও ইন্তিহাজের বাহুডোরে রয়েছে,এভাবেই ইন্তিহাজ এতক্ষণ ওর কাজল,লিপস্টিপ টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছিলো।নিজেকে এভাবে দেখে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে সরে আসলো ইয়ানা,ইয়ানা’র লজ্জামিশ্রীত চাহনি দৃষ্টিগোচর হতেই উল্টোদিকে ঘুরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো ইন্তিহাজ,কড়া কণ্ঠে বললো,

–কিরে,কথা কানে যায় না,যাবি নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নিবো।দেখ ইয়ানা,তোর ভালোর জন্যই বলছি,এইমূহুর্তে তুই এখানে থেকে না গেলে সত্যি সত্যিই খারাপ কিছু হয়ে যাবে,যেটা আমি একদম চাচ্ছিনা,বেড়িয়ে যা এখানে থেকে।

ইয়ানা আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত নিজের রুমের দিকে চলে গেলো, ইন্তিহাজ নিজের মাথার চুল টেনে বিছানায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো,ইয়ানা’কে এই লুকে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমশই মুশকিল হয়ে পরছিলো,কিন্তু নিয়ন্ত্রণ তো করতেই হবে নিজেকে,এছাড়া তো কোনো উপায় নেই।

–(রিল্যাক্স ইন্তিহাজ,কন্ট্রোল ইওর সেল্ফ।শরীরে স্পর্শ নয়,চোখের দিকে তাকিয়ে মনে স্পর্শ করাকে ভালোবাসা বলে।যেদিন পবিত্রতার সাথে হালাল ভাবে স্পর্শ করার অধিকার পাবি,সেদিনই সেভাবে স্পর্শ করবি,তার আগে নয়,ভালোবাসা হলো পবিত্র,সেটাকে অপবিত্র করার অধিকার তোর নেই,জাস্ট ফোকাস ইওর ড্রিম,এন্ড হার্ড ল্যাবর।নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসলে হবে না,অনেক পরিশ্রম করতে হবে তোকে,কঠোর পরিশ্রম।আল্লাহর সহায় হলে ইনশাআল্লাহ সবই সম্ভব,নিজের ওপর কনফিডেন্সে জিরো হলে একদম চলবে না,জীবনে এগোতে হলে এগোনোর তাগিদটা ভীষণ দরকার) —বিরবির করে বললো ইন্তিহাজ।

–ভাইয়া,তাড়াতাড়ি এসো,অন্ধকার বেড়ে যাচ্ছে তো,কখন বের হবে,পিঁয়াজু খাবে না (বললো নাহিদ)

–হুম চলো,যাবোতো।

উঠানে সবাই উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত শুধু ইয়ানা,ওর জন্যই সকলে অপেক্ষায় রয়েছে।মালেকা বেগম বলে উঠলেন,

–শহরের মাইয়া বলে কথা,সাজগোজ করতে দেরিতো হইবোই।আমার মাইয়াডারে দেখো কি সুন্দর রেডি হইয়া দাঁড়ায়া আছে,আর ওই ইয়ানা’র সাজনগোজনই শেষ হচ্ছে না।বলি এতো সাইজা কি হইবো,কাউরে রূপ দেখাতে যাচ্ছে নাকি। কিছু বুঝিনা বাপু,মুখে যে কিসের লাইগা পাউডার লাগায়,এসব লাগাইলে রূপ বাইড়া যাইবো নাকি,যতসব।

–শুনুন,অন্যকে কিছু বলার আগে নিজের দিকেও একবার তাকাবেন ঠিক আছে,আপনার মেয়েও কিন্তু আপনার ভাষায় মুখে পাউডার লাগিয়েছে,আর আমার বোন’কে আল্লাহ এমনিতেই অনেক সুন্দর বানিয়েছে,ওর এসব মাখার প্রয়োজন হয়না,হ্যা মাঝেমধ্যে একটু আকটু মেকআপ করলেও সেটা হালকা,আজকে তো শুধু….. (মেকি হাসি দিয়ে) ওদিকে তাকিয়ে দেখেন,আমার বোন মোটেও পাউডার লাগায়নি,ভদ্র সাবলীলভাবে বোরকা,নেকাব পরে এসেছে।

বহ্নি’র কথা শুনে মালেকা বেগম ইয়ানা’র দিকে তাকাতেই চোখ যেন রসগোল্লার মতো বড়বড় হয়ে গেলো,কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে ইয়ানা’র উদ্দেশ্য বললো,

–কি-লো ছু”ড়ি,যাচ্ছিসতো ঘুরাঘুরির লাইগা,এইভাবে নিজেরে প্যাকেট কইরা যাচ্ছোস ক্যান,সাজোন-গোজন করতে পারিসনা,আমার মাইয়াটারে দেখ কি সুন্দর ফিটফাট হইয়া দাঁড়ায়া আছে,কিছু শিখ আমার মাইয়ার থাইকা।

–এক মুখে কত ধরনের কথা বলবেন ভাবি,অনেক তো হলো এবার থামেন।
এই তোরা যা,দেখেশুনে যাস,গ্রামের রাস্তা সাবধান,ইয়ানা সবসময় ইন্তিহাজের সাথে সাথে থাকবি,নিজের খেয়াল রাখিস। তোরা সবাই ওকে একটু দেখিস,মেয়েটা আমার এমনিতেই অসুস্থ, পরে যেন না যায় (বললেন খাদিজাতুলনেসা)

–(উহ্ আদিখ্যেতা যতোসব) বলিই মাইয়াতো ছোট বাচ্চা না,এরকম করার কি আছে,ইন্তিহাজ বাবার কি কাজকাম নাই,ওরে কেন সামলাবে।আমার মাইয়াডা এতো আশা নিয়া বইসা আছে ওর ইন্তিহাজ ভাইয়ার সাথে ঘুরবার লাইগা।
বাবা ইন্তিহাজ,বলি আমার মাইয়াডারে কাছছারা কইরোনা,আমার একখান খাইয়া,আমি তুলায় মুড়ায় বড় করছি,একা বাইরে যাইতে দিনা,তোমার ভরসায় ওকে ছারলাম বুঝছোনি,ওরে একটু দেইখা রাইখো,কেমন

–আপনি এমন ভাব করছেন যেন আপনার মেয়েকে শশুরবাড়ি পাঠাচ্ছেন,যাব তো বাজারে,এইটুকু রাস্তা,৫মিনিট লাগবে।আপনার মেয়ে কি পথঘাট চিনেনা নাকি আজবতো।সুযোগ পেলেই হলো,শুরু হয়ে যান।আল্লাহ যে আপনার মুখের এসব ইউজলেস কথাবার্তা বন্ধ কেন করায়না তিনিই জানেন।মুখে লাগাম দিয়েন (রাগিস্বরে বললো বহ্নি)

–থামো সবাই,কি শুরু করছিস বহ্নি,তোকে কি এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা,বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
বড়রা যেটাই বলুক,ভালো লাগুক বা খারাপ,চুপ করে থাকবি,কথা বললেই কথা বাড়ে,ছোট নোস তুই,যথেষ্ট বড় হয়েছিস,বুঝদারও হয়েছিস,ফারদার তোকে যেন এমন বিহেভিয়ার করতে না দেখি।চল যাওয়া যাক,এসো সবাই।

কথাগুলো বলেই বেড়িয়ে গেলো ইন্তিহাজ,এরপর বাকিরাও ওর পিছনে পিছনে বের হয়ে গেলো,খাদিজাতুলনেসা মালেকা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,
–মালেকা,একটু রয়েসয়ে কথা বলিস,বয়স তো কম হলোনা তোর,স্বভাব চেঞ্জ হয়নি।স্বভাবগুলো চেঞ্জ করিস।


পিঁয়াজুর দোকানে বেঞ্চের ওপর বসে আছে সবাই,কর্ণারে ইন্তিহাজ,ইন্তিহাজের পাশে বসেছে শিমলা,শিমলা’র পাশে ইয়ানা,বাকিরা অন্য বেঞ্চে বসেছে।শিমলা আড়চোখে বারবার ইন্তিহাজের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু ইন্তিহাজ,সে-তো ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত,ইয়ানা’র ভীষণ রাগ লাগছে শিমলা’র ওপর,এটা কি ধরনের স্বভাব,জাস্ট অসহ্যকর।ইয়ানা’র ভাবনার মাঝেই শিমলা ইয়ানা’র দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বললো,

–ইয়ানা,একটা হেল্প করবে প্লিজ
–কি হেল্প

–ওনার সঙ্গে কিভাবে কথা শুরু করবো বুঝতে পারছি না,মা কইছে একটু একটু করে ওনার সাথে কথা বইলা ফ্রী হওয়ার লাইগা,কিন্তু আমারতো লজ্জা লাগতেছে,কি করমু কওতো।তুমি একটু হেল্প করোনা প্লিজ প্লিজ (লজ্জামিশ্রীত হাসি দিয়ে)

–ইন্তিহাজ ভাইয়া,তুমিতো শিমুর সাথে কথাই বলছোনা, বেচারি চুপচাপ বসে থেকে বোর হচ্ছে,একটু কথা বলো ওর সাথে,ফোন টা রেখে ওকে একটু সময় দাও,ফোনেতো পরেও কথা বলা যাবে তাইনা (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো ইয়ানা)

–আমি ওর সাথে কি কথা বলবো,তোরা কথা বল,গল্পগুজব কর।এসব মেয়েদের মাঝে আমাকে টানছিস কেন,তুইতো জানিস আমি বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করিনা।

–ওহ্ আচ্ছা,আমি থাকায় আনইজি ফিল করছো বুঝি,ওকে তোমাদের প্রাইভেসি দিলাম,তোমরা কথা বলো,আমি সাইডে আছি কেমন।বেস্ট অফ লাক মাই ডিয়ার ভাইয়া

কথাগুলো বলেই ইয়ানা সরে এসে দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল,ইন্তিহাজ ভ্যাবলাকান্তের মতো ওদিকে তাকিয়ে আছে,হুট করে ইয়ানা’র কি হলো সবটা ওর মাথার ওপর দিয়ে গেলো,ইন্তিহাজ উঠতে গেলে শিমলা বললো,

–আপনে কোই যান,বসেন,এখনই পিঁয়াজি দিবে,খাবেননা।
ইয়ানা এখুনি চলে আসবে,বসেন (লজ্জামিশ্রীত হাসি দিয়ে)

–মেয়েটা কিছু চিনেনা,প্রবলেম হতে পারে।তুই বস আমি ইয়ানা’কে নিয়ে আসছি (বলেই উঠে দাঁড়ালো ইন্তিহাজ)

ইন্তিহাজ বাইরে এসে দেখে ইয়ানা আকাশে চাঁদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,ইন্তিহাজ ইয়ানা’র পাশে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় গাট্টা মে’রে বললো,

–কি-রে একআনা,বাইরে মশার মধ্যে দাঁড়িয়ে কি করছিস,মশা কামড়াচ্ছে না,ভালো লাগছে নাকি কামড় খেতে

–না কামড় কেন দিবে,চুম্মা দিচ্ছে জানোনা?তুমিও দাঁড়িয়ে থাকো এখানে,মশার দল তোমাকেও চুম্মা দিবে

–কি হয়েছে তোর বলতো,এমন বিহেভিয়ার করছিস কেন?

–তুমি এখানে কি করছো সেটা বলো,তোমার বারবি ডল তোমার জন্য ওয়েট করছে,এই প্যাকেটের কাছে আসছো কেন

–এখনও রেগে আছিস আমার ওপর,আরে বোকা আমি তো ওকে এমনিএমনি বলেছি।আমি ওকে খারাপ বললে ওর মন খারাপ হতো না বল,তাই…

–তাই বারবি ডল বলে ইমপ্রেস করে নিলে তাইনা আর আমার বেলায় সব সাজ নষ্ট করে দিলে।ওকে তো আমার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে,এখনতো ওর দিকে তাকাবেই,ওর পাশে বসবে,গল্প করবে।আর আমাকে তো খালাম্মার মতো দেখাচ্ছে,আমাকে তো এখন চোখেই পরবে না তোমার।

–সাজগোজ করে মানুষকে দেখানো কি খুব ভালো কাজ ইয়ানা?পর্দা করা কি খারাপ?শোন বোরকা পরার পর কেউ যদি তোকে খালাম্মা বলে তাহলে বুঝে নিস তোর পর্দা সঠিক ছিলো।সাজগোজ করবি,প্রসাধনী ইউজ করবি নিজের বরের সামনে,বাইরের লোকজনদের দেখানোর জন্য নয়।


–হ্যাঁ মা,কও
~~~~~
–ছি,আমার লজ্জা করে,আমি পারবোনা
~~~~~
–মা,তোমার মেয়েরে কেন বলি’র পাঠা বানাচ্ছাও কওতো,আমার লজ্জা লাগে মা বিশ্বাস করো সত্যিই
~~~~~
–আচ্ছা আচ্ছা,ওইডাই করতিচি,রাখো এখন
~~~~~
–হ্যাঁ মনে আছে,তুমি যেইডা কইলে ওইডাই করতিচি এখন

ইয়ানা আর ইন্তিহাজ দোকানের ভেতরে এসে দেখে শিমলা ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলছে,ইয়ানা বললো,

–কিরে,তোর নাকি ফোন নাই,কার সাথে কথা বলিস,ফোন কোই পাইলি

–আসার সময় মা দিছে,পিঁয়াজি দিয়া গেছে বসো আর খাও।

ইয়ানা আর ইন্তিহাজ এবার পাশাপাশি বসলো,ইয়ানা একটা পিঁয়াজু মুখে নিয়ে চিবোতে লাগলো,ইন্তিহাজও খাচ্ছে,কিন্তু শিমলা চুপচাপ বসে আছে।

–কিরে তুই খাওয়া বাদ দিয়ে বসে আছিস কেন,খা

–ইয়ে মানে আমার হাতে ব্যাথা,কিছু ধরতে পারতিছিনা,কি কইরা খাবো

–আসার সময়তো ঠিকই ছিলি,ব্যথা লাগলো কখন,আচ্ছা আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোকে

–উফফ তুমি বুঝোনা ক্যান,মা কইছে নাটক করতে,তাইলে তোমার ভাই আমায় খাওয়ায় দিবে,তুমিও তাল মিলাও আমার সাথে বুঝছো……

To be continue…..