তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-২+৩+৪

0
314

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০২

–কথা বললে টাইম লিমিটস আরও বেড়ে যাবে
–ভাইয়া,সবসময় আমার সঙ্গে এরকম করতে পারোনা তুমি
–১৫মিনিট

ইয়ানা আর কিছু না বলে রাগে ফসফস করতে করতে কান ধরে একপায়ে দাঁড়ালো,চোখমুখ কুচকে বিড়বিড় করছে ইয়ানা।ইন্তিহাজ ইজি চেয়ারে হ্যালান দিয়ে বসে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ইয়ানা’র চোখের দিকে,এই চোখ জোড়াইতো ওর দূর্বলতার কারণ।এদিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ইয়ানা’কে,বারবার করে পা এক্সচেঞ্জ করছে,ওর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা বিরক্ত ও অস্বস্তি হচ্ছে ইয়ানা’র। ১৫মিনিট অতিবাহিত হতেই ইন্তিহাজ বলে উঠলো,

–হয়েছে হয়েছে,টাইম ইজ ওভার।
এবার এদিকে এসে বোস

ইন্তিহাজের কথা শেষ হতে না হতেই কান ছেড়ে দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ালো ইয়ানা,এতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে পা যেন ধরে এসেছে।ইয়ানা ছুটে এসে বিছানায় বসতে নিলেই ইন্তিহাজের কথায় থেমে গেলো,

–উহহু,ওখানে নয়,চেয়ারে এসে বোস।ইন্তিহাজ জামানের বেডে বসার রাইট কোনো মেয়ের নেই

–তোমার যত প্রবলেমস সব আমাকে নিয়ে,কোই আর কাউকে তো কিছু বলোনা।আমি তোমার রুমে আসলেই শুরু হয়ে যায় তোমার বক্তৃতা গুলো।সেদিন তৃষা এসে তোমার বিছানায় উঠে লাফালাফি করলো,তারপর বহ্নি এসে বসেছিলো তখনতো ওদের কিছু বললেনা।আমাকে নিয়ে যখন এতোই প্রবলেমস,তাহলে আমাকে নিজের রুমে ডাকো কেন,আমিতো নিজ ইচ্ছেতে কখনো আসিনা,আর আসতে চাইওনা

–আগের বেড টা পুরোনো ছিল,আর এই বেড টা আমার নিজের ইনকামের টাকায় বানানো,সো এই বেডে সর্বপ্রথম আমার ওয়াইফ বসবে তারপর অন্যমেয়ে,গট ইট।

নিজের কথা শেষ করে ইন্তিহাজ ইয়ানা’র দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়ানা’র চোখ থেকে অশ্রুধারা গড়িয়ে পরছে,মেয়েটা বেশ মনোকষ্ট পেয়েছে।ইন্তিহাজ জানে ইয়ানার অভিমান কি করে দূরিসাত করতে হয়।
ইন্তিহাজ উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ৩টা কিটক্যাট চকলেট আর কতগুলো সেন্টারফ্রেশ চুইংগাম বের করে ইয়ানা’র দিকে এগিয়ে ধরে বললো,

–লক্ষীসোনা রাগ করে না
একটু হাসো প্লিজ
চকোলেট গুলো না নিলে
হয়ে যাবে যে মিস

ইয়ানা চকলেট গুলো দেখে বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে চকলেট গুলো নিয়ে নিলো,খুশিতে আপ্লুত হয়ে বললো,

–এগুলো সব আমার জন্য

–না অন্যকারোর জন্য

ইয়ানা চোখ পিটপিট করে তাকালে ইন্তিহাজ বললো,

–কিহ্,নিবিনা?এভাবে তাকিয়ে থাকবি নাকি তৃষা,নাহিদ’কে ডেকে ওদের দিয়ে দিব

ইয়ানা সময় নষ্ট না করে খপ করে চকোলেটগুলো নিয়ে একগাল হাসি দিয়ে বললো,

–থেঙ্কু ইন্তিহাজ ভাইয়া,তুমি এগুলো দেওয়ার জন্যই ডেকেছিলে তাইনা?
আমি জানিতো তখন আমার সঙ্গে রুড বিহেভিয়ার করার জন্য তোমারও খারাপ লেগেছে তাই তুমি এখন আমাকে…

–ওয়ে,এক আনা,বেশিবেশি ভাবা বন্ধ কর।
চকোলেট সবার জন্যই এনেছি,তখন তোর ব্যবহারের জন্য তোরটা তোকে দেওয়া হয়নি তাই এখন দিচ্ছি।আর এই নে তোর ফোন,এখন বের হ রুম থেকে,আমার কাজ আছে

–যে উদ্দেশ্যেই ডাকোনা কেন তাতে আমার কি,চকোলেট গুলোর জন্য এত্তগুলো থেঙ্কস

কথাটা ব’লেই ইয়ানা হাসিমুখে ছুটে বেড়িয়ে গেলো,ইন্তিহাজ মুচকি হেসে বিরবির করে বললো,

–পা/গলি একটা।তবে পা/গলিটার হাসির জন্য আমি সব করতে পারি।কারণ তার হাসি যে আমাকে এক আকাশ পরিমাণ প্রশান্তি এনে দেয়

মনেমনে কথাগুলো বলে চেয়ারে হ্যালান দিয়ে আবেশে চোখ বুজে নিলো ইন্তিহাজ।

নিজের রুমে এসে বিছানায় চকোলেট গুলো রেখে ফোনের লক খুলতেই চমকে উঠলো ইয়ানা,ওয়ালপেপার চেঞ্জ।কিন্তু ইন্তিহাজ কে ফোন দেওয়ার আগে তো সবকিছু ঠিকই ছিল,ইন্তিহাজ ফোনের লকও জানেনা,তাহলে ওয়ালপেপার চেঞ্জ হলো কিভাবে।এর অর্থ,ইন্তিহাজ কি লক খুলতে পেরেছে,হতেও পারে।আজকালকার ছেলেরা এসব লক খুলতে ওস্তাদ,প্যাটার্ন লক দিয়ে বড্ড কাঁচা কাজ হয়ে গেছে,পাসওয়ার্ড লক দেওয়াই উচিত ছিল।
আচ্ছা ইন্তিহাজ ভাইয়া যদি নিজেই লক খুলে থাকে তাহলে তো মেসেঞ্জারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট গিয়েছে,আর মেসেঞ্জার মানেইতো বিপদ,আবির রয়েছে চ্যাটলিস্টে।যদিও মেসেঞ্জার অ্যাপস এও আলাদা লক দেওয়া আছে,কিন্তু…নাহ্ আর কিছু ভাবতে পারছেনা ইয়ানা।ভয়ে হাত-পা অসার হয়ে আসছে।কালকেই আবিরের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করতে হবে,যদিও এটা কোনো সম্পর্কের মধ্যে পরেনা,দু’দিন ভালোভাবে মিষ্টি করে কথা বললেই সেটাকে সম্পর্ক বলা চলে না।
ইয়ানা দ্রুত মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখলো সব ঠিকঠাকই আছে,কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব।ইন্তিহাজ ভাইয়ার মতো ছেলে মেসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ,ইমু চেইক করবে না এটা হতেই পারে না।মাথা যেন ঝিম ধরে আসছে ওর,শাস্তির কথা ইমাজিনেশন করতেই হাত-পা অসার হয়ে আসছে।ইন্তিহাজের এই ভালোমানুষি কেমন যেন ঝড়ের আগের পূর্বাভাস বলে মনে হচ্ছে,হিন্দিতে বলতে গেলে “ডালমে কুস কালা হ্যায়”


সন্ধ্যা ৭টা
মুড়ি চানাচুর মাখানো খেতে খেতে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছিলো ইয়ানা,তৃষা কার্টুন দেখার জন্য বায়না করছে সেই অনেকক্ষণ যাবৎ,কিন্তু ইয়ানা’ও নাছোরবান্দা।সিরিয়াল শেষ না হওয়া অবধি কিছুতেই উঠবেনা।
ইয়ানার আম্মু রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে আসলেন,

–ঢিঙ্গি মেয়ে,সন্ধ্যা বেলায় কোথায় পড়তে বসবে তা-না।নবাবজাদি বসে বসে টিভি দেখতে বসেছেন,ছোট বোনটা বায়না করছে,উনি বোনের সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে।কিরে,তোর কি ওর সাথে ঝগড়া করার বয়স বলতো

–আম্মু,সারাদিনে অনেক পড়েছি।
আর এই সিরিয়ালটা আমি রোজ দেখি,একটা এপিসোডও কখনো মিস করিনা

–বুঝলে ছোটআম্মু,এইভাবে যদি নিয়ম করে পড়তে বসতো তাহলে তোমার মেয়ের পড়াশোনায় এতো অবনতি হতোনা (রুম থেকে বেড়িয়ে এসে বললো ইন্তিহাজ)

–(আবার শুরু হয়ে গেলো,বিরক্তকর)
আমি বেশ পড়ার টাইমে ঠিকই পড়ি,তোমার মতো না।তুমি কি করছে হ্যাঁ,আম্মু যখনই আমাকে বকতে শুরু করে তখনই এসে হাজির হয়ে যাও।সবসময় তক্কেতক্কে থাকো নাকি,কখন আমার পেছনে লাগা যায়

–আমার তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে তোর পেছনে লাগতে যাব,আমি পড়তিছিলাম।পানি খেতে বাহিরে এসেছি।তোর মতো আজেবাজে কাজে টাইমওয়েস্ট করিনা,এসব সিরিয়াল দেখে দেখেই তোর মাথা বিগড়ে যাচ্ছে।ভালো শিক্ষার বদলে উল্টাপাল্টা শিক্ষা দেয় এসব সিরিয়ালগুলো,এসব দেখে দেখেই মেয়েরা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে

–তুমি কি করে জানলে এসব সিরিয়ালে কি হয়,তারমানে তুমিও দেখো নাকি এসব

–ইয়ানা (ধমক দিয়ে)

–বুঝিবুঝি,সবই বুঝি
চোরের মন পুলিশ পুলিশ

–ইয়ানা,বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছিস,এটা কি ধরনের স্বভাব।থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিব বিয়াদপ মেয়ে।
ইন্তিহাজ ভুল কি বলেছে,ঠিকই তো বলেছে।

–তুমিতো ভাইয়ার সাপোর্টই নিবে,তোমার কাছে তো আমার কোনো ভালোই চোখে পরেনা।
ইশ,ভাইয়ার মা যদি আমার নিজের নিজের মা হতো কতো ভালো হতো।বড়আম্মু আমাকে কতো ভালোবাসে।বড়আম্মু এখন নেই জন্যে যে যেমন পারছো আমাকে ধমকাচ্ছো তাইনা।কালকে বড় আম্মু আসুক তারপর দেখবো কিভাবে আমার সঙ্গে এরকম করো তোমরা।

–কালকেরটা কালকে দেখা যাবে,এখন পড়তে বসবি নাকি খুন্তি দিয়ে পি/টাব

–আমি পড়েছি,আর কতো পড়বো।
পড়ার সময় পড়া,টিভি দেখার সময় টিভি দেখা

–পড়ার কোনো সময়অসময় হয়না,যেকোনো মূহুর্তেই পড়া যায়।
এতো যে ফটরফটর করছিস,বলতো “Book” এর পূর্ণনাম কি?

–Book মানে বই,এর আবার কিসের পূর্ণরূপ

–কথা ঘুরাবিনা,বল

–বকছি,দাঁড়াও

ইয়ানা মাথা চুলকোতে চুলকোতে ভাবতে লাগলো,কিন্তু ওর কাছে এর উত্তর নেই।কিছু একটা ভেবে মেকি হাসি দিয়ে বললো ইয়ানা,

–তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন,তুমি কি জানোনা নাকি।

–আমি জানি বলেই তোকে জিজ্ঞেস করছি

–থাক ভাইয়া,হয়েছে।বুঝি বুঝি,ভা/ঙবে তবুও মচকাবে না।তুমি নিজেই জানোনা তাই আমার কাছে জানতে চাও

–book এর Full from হলো “Big Ocean Of Knowledge”
গা*ধা কোথাকার

–ইন্তিহাজ,ওর কথা ছার
শোন না বাবা,এখন ফ্রী আছিসতো নাকি কোথাও বের হবি?

–নাহ্ কাকিয়া,এসময় কোথায় যাব আবার।কেন কিছু বলবে?

–বলছিলাম যে এই ইয়ানা’র তো আর কিছুদিন পর ইয়ার চেঞ্জ পরিক্ষা,তারপর সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে।পড়াশোনা কিছুই করেনা,প্রাইভেট গুলো থেকে সেই যে পড়ে আসে,বাড়িতে বই হাতেই নেয়না।তুই আসার পর থেকে লোকদেখানো যা বই হাতে নিচ্ছে।ওকে একটু পড়াতে পারবি,যদি তোর সময় হয়

ইয়ানার মা ইসরাত জাহানের কথা শুনে ইন্তিহাজ চোখ ছোটছোট করে ইয়ানা’র দিকে তাকালো,ইয়ানা চোখ পাকিয়ে নিজের মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বিরবির করছে।

–কিরে এক আনা,তুই নাকি পড়ুয়া স্টুডেন্ট?এই তার নমুনা?

–আম্মুউউ,তুমি জেনেশুনে আমাকে জমের দুয়ারে পাঠাতে চাও?
আমি যথেষ্ট পড়াশোনা করি,আমার কারোর হেল্পের প্রয়োজন নেই।
তোমার আদরের ইন্তিহাজ বাবা’কে বলে দিও,এই ইয়ানা জামান তার কাছে কখনো মাথা নত করবে না হুহ।

–তোর মতামত জানতে চাওয়া হয়নি,আমার হুকুম তুই ইন্তিহাজের কাছে পড়বি এখন থেকে।
আর তুই যে কতটা পড়িস,সেটা হাফ ইয়ারলি পরিক্ষার রেজাল্ট দেখেই বুঝে গেছি আমি।
ইন্তিহাজ,ওকে নিয়ে পড়ানো শুরু কর,ত্যাড়ামি করলে স্কেল দিয়ে পি/টাবি।আমি রান্নাঘরে গেলাম

কথাগুলো বলেই ইয়ানা’র দিকে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন ইয়ানা’র মা ইসরাত জাহান।মায়ের যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইয়ানা,ইন্তিহাজ ধমক দিয়ে বললো,

–কিরে,হা করে ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি বইখাতা নিয়ে রুমে আসবি?
দেখ ইয়ানা,আমার পড়ার অনেক প্রেশার,কাকিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তোকে পড়াতে রাজি হয়েছি।তোর সময়ের মূল্য না থাকলেও আমার আছে,সো টাইমওয়েস্ট না করে চুপচাপ বইখাতা নিয়ে আমার রুমে আয়

কথাগুলো বলেই ইন্তিহাজ পানির বোতল নিয়ে কিচেনে গেলো,এরপর পানি নিয়ে ইয়ানা’কে আবারও আসতে বলে নিজের রুমে চলে গেলো।


পরদিন সকালে,
ইয়ানা অটো থেকে নেমে কলেজে যেতেই আবির আর মিথিলা এসে ওর সামনে দাঁড়ালো।মিথিলা ইয়ানা’কে হাগ করে বললো,

–কিরে,আজ এতো লেট করলি কেন?
তুইতো সকালসকাল আগেআগে কলেজে আসিস

–পরে বলবো,ক্লাসে চল

ইয়ানা মিথিলা’র হাত ধরে চলে যেতে লাগলে আবির বলে উঠলো,

–ইয়ানা দাঁড়াও,ইগনোর কেন করছো আমাকে?
গতরাত থেকে এমন করছো,এখনও কথা বলছোনা,কি হয়েছে বলবে?

To be continue….

( গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন)

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০৩

–গতরাত থেকে এমন করছো,এখনও কথা বলছো না,কি হয়েছে বলবে?

–আবির প্লিজ,আমার লেট হয়ে যাচ্ছে,সামনে থেকে সরে দাঁড়াও (গম্ভীর ভাবে বললো ইয়ানা)

–ইয়ানা,আমার প্রশ্নের উত্তর টা দিয়ে তারপর যাবে,কি সমস্যা টা কি বলো।আমাকে এভাবে ইগনোর করার মানে কি

–লিসেন আবির,আমি এইমূহুর্তে তোমার সঙ্গে কোনোরকম কথা বলতে ইন্টারেস্টেড না,সাইড দাও,আমরা ক্লাসে যাব

–তোমাকে তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে,আবির হোসেনকে ইগনোর করছো তুমি

আবির রেগে ইয়ানা’র হাত ধরতে উদ্যোত হতেই ইয়ানা ঠাস করে থা’প্পড় লাগিয়ে দিলো আবিরের গালে।

–ডন্ট টাচ মি,ডন্ট ক্রস ইওর লিমিটস ওকে?
নেক্সট আমার সামনে যেন তোমাকে না দেখি,আর শোনো তোমার সঙ্গে আমার কোনোরকম রিলেশন নেই বুঝেছো।
দু’দিন ফ্রেন্ডলি কথা বলেছি বলে মাথা কিনে নিয়েছো নাকি।আই জাস্ট হেট ইউ,মিথিলা চল এখানে থেকে।

মিথিলা আর ইয়ানা চলে যাবার পরপরই আবিরের বন্ধু রিপন আর শাকিল এসে দাঁড়ালো আবিরের পাশে।আবির গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শাকিল আবিরের কাঁধ চাপড়ে বললো,

–এটা কি হলো বন্ধু,ওই দুই পয়সার মেয়ে তোকে থা’প্পড় দিয়ে চলে গেলো,দেখ সবাই তোর দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে

–এতবড় সাহস,তোর গালে থা’প্পড় দেয়।ছিছি বন্ধু,এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না (রিপন)

আবির নিজের হাত দ্বারা নিজের পুরোমুখের ওপর থেকে থুতনি অবধি হাত বুলিয়ে নামিয়ে নিলো।দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রোষাক্ত কণ্ঠে বললো,

–আমি দেখে নিব ওকে,ছারবোনা
কলেজ ক্যাম্পাসে আমাকে থা’প্পড় দেওয়া,এর শোধ আমি শুধে আসলে তুলবো।আবির হোসেন কাউকে ক্ষমা করতে শিখেনি

–কি করবি তুই?

–দেখতেই পাবি সেটা,ইয়ানা কিভাবে এই কলেজে টিকতে পারে আমিও দেখে নেব


ক্লাসরুমে ঢুকে পেছনের দিক থেকে সামনে ৬নম্বর বেঞ্চে পাশাপাশি বসলো ইয়ানা ও মিথিলা।একটা বেঞ্চে দুজনের বেশি বসা যায়না,ওদের সামনের বেঞ্চে বসেছে রাজিয়া ও বৃষ্টি।

–কিরে ইয়ানা,মাই ক্রাশ এসেছে কি? (রাজিয়া)

–ক্রাশ,তোর আবার ক্রাশ ক্যাডা? (মিথিলা)

–আরে ইয়ানা’র ওই চাচা’তো ভাইটা আছে না,সেই দেখতে।পুরো চকলেট বয়,আমিতো ১ম দেখেই ফিদা হয়ে গেছি ইয়ার (রাজিয়া)

–আমিও ক্রাশ খাইচি রে,ওরকম ছেলেকে দেখলে কেউ ক্রাশ না খেয়ে থাকতেই পারবেনা।গেটআপ,স্টাইল সবকিছুতে পারফেক্ট,শুনেছি মেডিকেল ফাইনাল পড়ে,আর ১বছর গেলেই ডক্টর হয়ে বেড়িয়ে আসবে (বললো বৃষ্টি)

–কে,ইন্তিহাজ ভাইয়ার কথা বলছিস?
কিন্তু ইন্তিহাজ ভাইয়া তো এই বছরে এই প্রথম বাড়িতে আসলো।তোদের সঙ্গে তো আমাদের কলেজে উঠে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে,তোরা ভাইয়াকে কোথায় দেখলি? (মিথিলা)

–আরে নাহ্,সরাসরি কখনো দেখিনি কিন্তু ইয়ানা’র ফোনে ফটো দেখেছি।সেদিনের পর থেকে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে গায়েজ,শয়নেস্বপনে জাগরণে শুধু তাহাকেই দেখিতে পাই (গালে হাত রেখে চোখ বুজে বললো রাজিয়া)

–জানস্,ক্রাশ খাইচো ভালো কথা এবার ঝাড়ি খাওয়ার জন্য তৈরি হও বুঝলে।
একটা কথা জানিসতো,সুন্দর ছেলেরা অলওয়েজ রাগী হয়,তোদের এসব ফাইজলামি কথাবার্তা ইন্তিহাজ ভাইয়া জানলে তোদেরকে উল্টো করে ঝু’লিয়ে রড দিয়ে পে/টাবে। (বললো ইয়ানা)

–আহ্,ভালোবাসা কোনো বাঁধ মানেনা জানস্,সমস্ত প্রতিকূলতাকেই জয় করে নেয়।সহ্য করব নাহয় তার ভালোবাসাময় শাস্তি গুলো

–তোরা যদি আমার বান্ধবী হয়ে থাকিস তাহলে দয়া করে ভাইয়াকে নিয়ে আর প্যাঁচাল পারিসনা প্লিজ,দু’দিনেই আমার লাইফ টা হেল করে ছেড়ে দিয়েছে।উঠতে বসতে আম্মু ঝাড়ি দেয়,এখন আবার তোরা শুরু করলি।

ইয়ানা নিজের কথা শেষ করতে না করতেই ইংরেজি টিচার রুমে আসলো,সঙ্গে সঙ্গে পুরো রুম যেন তড়িৎগতিতে সাইলেন্ট হয়ে গেলো।এতক্ষণ তো বলতে গেলে পুরো ক্লাসরুমে মাছের হাঁট বসেছিলো।ইংরেজি টিচার হাসান মাহমুদ বেশ রাগী একজন মানুষ,তার চাহনি আর কড়া স্বরের কথা শুনলে যে-কোনো স্টুডেন্টস রাই ভয় পায়।
হাসান মাহমুদ নিজের চেয়ারে বসে সমস্ত ক্লাসরুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন,তারপর এটেন্ডেন্স এর খাতা হাতে নিয়ে এটেন্ডেন্স শুরু করে দিলো।
রাজিয়া ইয়ানা’র দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,

–জানস্,আজ কিন্তু তোমার বাড়িতে আমার দাওয়াত।আজ আমি ছুটির পর তোর বাড়িতে যাচ্ছি

–কিহ্ (কিছুটা জোড়েই বলে উঠলো ইয়ানা)

কারোর আওয়াজ পেয়ে হাসান মাহমুদ নিজের বিচক্ষণ চোখের দৃষ্টি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন আওয়াজটা কোথা থেকে আসলো,কিন্তু এতো স্টুডেন্টসদের ভীড়ে শব্দকারী কে আইডেন্টিটিফাই করা বেশ মুশকিল বৈকি।হাসান মাহমুদ এদিকওদিক চোখ বুলাচ্ছেন,হঠাৎ ওনার চোখ গেলো ইয়ানা’র দিকে।ইয়ানা কেমন কাচুমাচু করছে,ইয়ানা যে একপ্রকার বিচ্ছু টাইপের মেয়ে এটা পুরো কলেজ জানে,হাসান মাহমুদে’র বুঝতে বাকি রইলোনা এই কাজটা কার।তিনি ধমকের স্বরে বললেন,

–ইয়ানা,স্ট্যান্ড আপ
–(নো রেসপন্স)
–কি হলো,কথা শুনতে পাওনা।স্ট্যান্ড আপ (রেগে বললেন হাসান মাহমুদ)

ইয়ানা এবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেলো,হাসান মাহমুদ বললেন,

–ক্লাসের ডিসিপ্লিন নষ্ট করা আমার একদম পছন্দ নয়,গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস
–সস্যার,আআমি ইচ্ছে করে…
–নো এক্সকিউজ,লিভ মাই ক্লাস,গেট আউট

ইয়ানা আর কোনো কথা না বলে রাজিয়া’র দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলো।ইয়ানা চলে যেতেই হাসান মাহমুদ নিজের মতো ক্লাস নেওয়া শুরু করে দিলেন।

ক্লাস শেষে মিথিলা,রাজিয়া,বৃষ্টি ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে ইয়ানা’কে খুজতে শুরু করলো।কিন্তু ইয়ানা’তো লাপাত্তা,এদিকে সেকেন্ড ক্লাসের টাইমিং হয়ে যাচ্ছে।

–সব তোর জন্য হয়েছে,কি দরকার ছিল তখন এভাবে বলার (রেগে বললো মিথিলা?

–আরে ওরই বা কি দোষ,ইয়ানা এভাবে রিয়াক্ট করে বসবে আমরা জানতাম নাকি আজব (বৃষ্টি)

–বললি তো বললি অন্য সময়ে বলতে পারলিনা,এই হাসান স্যার এর ক্লাসেই বলতে হলো

–আমি বুঝলাম না,ইয়ানা’কে বের করে দিলো কেন।হাসান স্যার রাগী হলেও এখন অবধি কাউকে ১ম বারে ক্লাসরুম থেকে বের করে দেয়নি,দিলেও দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ক্লাস করার পারমিশন দেয়।বাট ইয়ানা’কে একেবারে আউট করে দিলো,হুয়াই ম্যান (রাজিয়া)

–তোর ক্রাসের সঙ্গে হাসান স্যারের পারসোনালি দ্বন্দ্ব আছে,একারণেই স্যার ইয়ানা’র সঙ্গে একটু বেশিই রুড বিহেভিয়ার করে,কারণ ইয়ানা ইন্তিহাজ ভাইয়ার বোন হয়।

–মানে,ইন্তিহাজ ভাইয়ার সাথে হাসান স্যার এর আবার কি ঝামেলা থাকতে পারে

–তোরা তো জানিসই,ইন্তিহাজ ভাইয়া মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে পড়ে,হাসান স্যার আর ইন্তিহাজ ভাইয়া ব্যাচমেট ছিল।মেডিকেল এডমিশনে ইন্তিহাজ ভাইয়া আর হাসান স্যার একজায়গায় বসেছিলো,ওরা দুজন ভালো ফ্রেন্ড।এক্সাম হলে ইন্তিহাজ ভাইয়া হাসান স্যার কে কোনো হেল্প না করায় ওনার এক্সাম খারাপ হয়,রেজাল্ট মোতাবেক ইন্তিহাজ ভাইয়ার মেডিকেলে চান্স হলেও হাসান স্যার এর হয়নি।একারণেই হাসান স্যারের এতো রাগ বুঝলি

–কেন,উনিকি পড়ে যাননি নাকি যে ইন্তিহাজ ভাইয়ার হেল্প না পেয়ে মেডিকেল চান্স হয়নি।আরে আজব কথা

–সেটা আমাকে না বলে হাসান স্যার কে গিয়ে বল (দাঁত কিড়মিড় করে বললো মিথিলা)
–আরে রাগ করছিস কেন,আমরা জানিনা বিধায় কুয়েশ্চন করলাম

–সেসব কথা বাদ দে,এখন ইয়ানা’কে খুঁজে পাওয়াটা বেশি ইম্পর্টেন্ট।কোই গেলো মেয়েটা বলতো (বললো বৃষ্টি)

–তোদের কারোর কাছে ফোন আছে?
ইয়ানা’কে কল করে দেখি একবার (মিথিলা)

–নে ধর (নিজের ফোনটা বাড়িয়ে দিলো রাজিয়া)

মিথিলা ফোনে ইয়ানা’র নম্বর ডায়াল করে কল করলো,একবার রিং হয়ে কেটে গেলেও দ্বিতীয়বার কল রিসিভ করলো ইয়ানা।

–ইয়ানা,কোই তুই?
তখন থেকে খুঁজে চলেছি,ক্লাস করার ইচ্ছে নাই নাকি তোর,তোর জন্য আমরাও ক্লাসে না গিয়ে তোকে খুঁজছি।মারিয়া ম্যামের হাতে মা’ইর খাওয়াবি নাকি আজ
কিরে কথা বলছিসনা কেন,বোবা হইচিস (রেগে বললো মিথিলা)

–তুই চুপ না করলে আমি কথা বলবো কি করে আজব।
আমি ক্যানটিন এড়িয়ায় আছি,আসছি ওয়েট কর

–কিহ্,তুই ক্যান্টিনে,কিন্তু কেন

–মনে হচ্ছে জানিসইনা,তুই জানিসনা নাকি মুড সুইং হলে আমার ক্ষুধা লাগে


দুপুর দেড়টার দিকে দিকে কলেজ ছুটি হওয়ার পর ৪বান্ধবী একসঙ্গে কলেজ গেইটের সামনে বসা ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো।৪জনের কেউ কারোর থেকে কম যায়না,চার’জনই এক নম্বরের ফুচকা পাগলি।ফুচকা পেলে দিনদুনিয়ার খেয়াল ভুলে যায় এমন ভাব।
ইয়ানা’র অলরেডি ৪প্লেট ফুচকা সাবাড় করা হয়ে গেছে,এবার ৫নম্বর প্লেট থেকে একটা ফুচকা মুখে নিতে যেতেই কেউ একজন ওর হাত ধরে আটকে দিলো।সচরাচর ইয়ানা’র ফুচকা খাওয়াতে কেউ ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে চরম রকমের রাগ হয় ওর,ইয়ানা রেগে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী ব্যাক্তি কে কড়া কথা শোনানোর জন্য উদ্যত হলেও সমস্ত কথা মুখেই আঁটকে গেলো,মুখ থেকে আর কথাগুলো বাইরে বের হলোনা।বেচারি ইয়ানা তোতলাতে তোতলাতে বললো,

–ইন্তিহাজ ভাইয়া,তুমি এখানে?
–কেন,আমি এসে খুব সমস্যা করে ফেললাম নাকি (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)
–ভাইয়া আআমি তো মাত্র এএই ১প্লেটই ইয়ে মানে এই ১প্লেটই খাইছি (মেকি হাসি দিয়ে বললো ইয়ানা)

ইন্তিহাজ ইয়ানা’র কথার প্রতিত্তোরে কিছু না বলে ফুচকাওয়ালার উদ্দেশ্যে বললো,

–মামা,কতো প্লেট দিয়েছেন?
–১৫প্লেট,৭৫০টাকা হয়েছে।টাকা কি আপনি দিবেন স্যার?

ফুচকা ওয়ালার কথা শুনে ইন্তিহাজ চোখ পাকিয়ে ইয়ানা’র দিকে তাকালো,ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া ইয়ানা তোতলানো গলায় বললো,

–বিশ্বাস করো ভাইয়া,আমি এতগুলো খাইনি।আমি তো শুধু ৪প্লেট খাইচি,আর এটা ৫নম্বর প্লেট।
বাকি ১০প্লেট ওরা খাইচে (বান্ধবীদের দিকে ইশারা করে বললো ইয়ানা)

ইয়ানা’র ইশারা মোতাবেক ইন্তিহাজ সেদিকে তাকিয়ে দেখে দুটো মেয়ে চোখ বুজে তৃপ্তি সহকারে ফুচকা খাচ্ছে,আর মিথিলা ফুচকার প্লেট হাতে ভীতু দৃষ্টিতে ইন্তিহাজের পানে চেয়ে আছে।

–ভাইয়া,এই প্লেট টা কি করবো,খাই প্লিজ (ভীতু কণ্ঠে বললো ইয়ানা)

ইন্তিহাজ হাত মুঠ করে চোখ বুজে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো,ইয়ানা’র হাত থেকে ফুচকার প্লেটটা নিয়ে ফুচকাওয়ালার সামনে রেখে বললো,

–মামা,এটা রেখে দিন
–স্যার,বানানোর পর ফেরত হয়না
–এই নিন,পুরো টাকাই দিলাম (১০০০টাকার নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললো ইন্তিহাজ)
–স্যার,আমার কাছে এতটাকা খুচরো নেই,একটু আগেই দোকান বসাইছি
–পুরোটাই রেখে দিন,বাকি টাকা দিয়ে হ্যান্ডগ্লোভস,আর কিছু ঢাকনা কিনে নিবেন।আপনার ফুচকার মশলাগুলোতে মাছি এসে বসছে,এতে কতো ধরনের ভাইরাস আছে জানেন,এসব খেলে শরীর খারাপ হবে।এভাবে উদাম করে না রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবেন।আর হাত না ধুয়ে ফুচকা বানাচ্ছেন,এতেও ভাইরাস ছড়ায়,হ্যান্ডগ্লোভস পরে কাজ করবেন।আজকাল বাজারে পলি হ্যান্ডগ্লোভস পাওয়া যাচ্ছে

নিজের কথাগুলো শেষ করে একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ইয়ানা’র দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা উঠে দাড়িয়ে একপ্রকার দৌড় লাগালো ইন্তিহাজের পিছুপিছু।দৌড়ে গিয়ে দেখে ইন্তিহাজ নিজের বাইকের সঙ্গে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ইয়ানা দৌড়ে এসে ইন্তিহাজের সামনে দাড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো।

–ভাইয়া,সরি
বিশ্বাস করো,আমি ইচ্ছে করে এমন…
–তুই কোনো ভুল করেছিস নাকি ইয়ানা,সরি বলছিস কেন?
–ভাইয়া আ…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই লেকসারার হাসান মাহমুদ এসে বললেন,

–মিঃইন্তিহাজ জামান,আপনার বোনকে ডিসিপ্লিনের শিক্ষা দেননি নাকি?
আপনি নিজে তো ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস,তাহলে আপনার বোনের মাঝে ডিসিপ্লিনের এতো অভাব কেন……

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০৪

–আপনি নিজে তো ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস,তাহলে আপনার বোনের মাঝে ডিসিপ্লিনের এতো অভাব কেন??

পুরুষালি কণ্ঠস্বর পেয়ে ইন্তিহাজ সেদিকে তাকাতেই ব্লেজার পরুয়া এক যুবককে দেখতে পেলো,যুবকটির চেহারা কেমন পরিচিত একজনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
ইন্তিহাজ কে ভাবান্তর দেখে সেই যুবক অর্থাৎ লেকচারার হাসান মাহমুদ বললেন,

–কিহ্,আমাকে চিনতে পারেননি নিশ্চয়ই।
অবশ্য এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,সময়ের স্রোতে মানুষ নিজের কাছের লোকজনদেরকেই মনে রাখেনা আর আমি তো হাহ্ (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
এনিওয়েস,আই এম…

–হাসান,তুই?এই কয়েক বছর কোথায় ছিলি তুই,তোর কোনো খোঁজই ছিল না,অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস বন্ধু (উৎফুল্ল হয়ে বললো ইন্তিহাজ)

–সরি,আপনি ভুল বললেন মিঃইন্তিহাজ জামান,আমি আপনার বন্ধু নই,না কখনো ছিলাম।
বায় দ্য ওয়ে,যেটা বলতে এসেছিলাম।এই মেয়েটা,ইয়ানা সম্ভবত আপনার কাজিন হয় রাইট?

–হুম,কেন কি করেছে ও,আর তুই আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছিস কেন।তুইতো এমন ছিলিনা।

–মিঃ জামান,আপনার বোন’কে টিচার্সদের রেসপেক্ট কিভাবে করতে হয় সেটা শিখিয়ে দিবেন।আপনার সিস্টার,ক্লাসে ননস্টপ কথা বলে,ক্লাসে অমনোযোগী প্লাস অভদ্র একজন মেয়ে।টিচার্স দেরকে রেসপেক্ট করাতো দূরে থাক,ভদ্র ভাবে কথা পর্যন্ত বলেনা।

হাসান মাহমুদের কথা শুনে ইন্তিহাজ চোখ পাকিয়ে ইয়ানা’র দিকে তাকালো,ভয়ে ঘাবড়ে যাওয়া ইয়ানা ডানে-বামে মাথা ঝাকিয়ে বোঝালো যে সে এটা করেনি।
ইন্তিহাজ তপ্তশ্বাস ছেড়ে হাসান মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–আই থিঙ্ক তোর কোথাও ভুল হচ্ছে হাসান,মানছি ইয়ানা দূরন্ত,চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে।বাট ও কাউকে অসম্মান করবে এটা ইম্পসিবল।আমাদের ফ্যামিলি আমাদেরকে এধরণের শিক্ষা দেয়নি।

–কনফিডেন্স ইজ গুড বাট অভার কনফিডেন্স ইজ ভেরি ব্যাড,একজন টিচার হিসেবে স্টুডেন্টের কোনো বিষয় খারাপ বলে মনে হলে স্টুডেন্টসদের গার্জিয়ান কে জানানো আমাদের কর্তব্য,আমার বিষয়টা জানানো টা ইমপোর্টেন্স মনে হয়েছে তাই জানালাম।আই থিঙ্ক বোন’কে সঠিক শিক্ষা দিবেন,অভদ্রতাকে সাপোর্ট করবেন না।আসি

কথাগুলো বলেই হাসান মাহমুদ চলে যেতে নিলে ইন্তিহাজ এর কথায় দাঁড়িয়ে গেলো,ঘুরে তাকালো ইন্তিহাজ এর দিকে।ইন্তিহাজ এগিয়ে এসে বললো,

–তুই কি আমাকে চিনতে পারছিসনা?হাসান আমি ইন্তিহাজ,তোর বেস্টফ্রেন্ড’কে ভুলে গেছিস তুই?
এখানে লেকচারার হয়ে জইন করছিস সেটাও জানাসনি,কি হয়েছে তোর?

–আমি কোনোকিছুই ভুলিনি মিঃ ইন্তিহাজ জামান,আমার সবকিছু মনে আছে।আপনাকেও ভুলিনি,হাসান মাহমুদ সেলফিশ বেঈমান দেরকে কখনো ভুলেনা

কথাগুলো শেষ করে একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলো হাসান মাহমুদ,ইন্তিহাজ তাকিয়ে রইলো হাসানে’র যাওয়ার পানে।এই ভুল বোঝাবুঝির জের ধরেই ওদের ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে আজ এত দূরত্ব।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাইকে এসে বসলো ইন্তিহাজ,

–ভাইয়া,হাসান স্যার কি বললো তোমাকে?
এখনও ভুল বুঝছে তোমায় তাইনা,এই স্যার টা না কেমন জানি।আজ কি করেছে জানো,আমাকে ক্লাসরুম থেকে বের করে দিছে।আমি তো সেরকম কোনো…

–বাইকে ওঠ,আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।

–তাহলে আসলে কেন এখানে,আমি কি আসতে বলেছিলাম নাকি তোমাকে,অসহ্য,সবসময়ই তোমার তাড়া লেগেই থাকে,জাস্ট ডিসকাস্টিং

–এসেছিলাম বাজারে,একটা কাজ ছিল।যাওয়ার সময় ভাবলাম তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই কিন্তু তুইতো…থাক বাদ দে।রিকশা করে বাড়ি যাস,আমি যাই (কথা শেষ করেই বাইক স্টার্ট দিলো ইন্তিহাজ)

–আরে ভাইয়া,আমি কি বলেছি নাকি যে আমি যাব না।দাঁড়াও,আমি আমার বান্ধবীদের’কে বলে আসি আগে।

–শোন,তোর মতো আমার এভেইলএভেইল টাইম নেই ওয়েস্ট করার মতো,আমার সঙ্গে যেতে চাইলে চুপচাপ বাইকে বস নয়তো আমি গেলাম

ইয়ানা আর কোনো কথা না বলে কিছু একটা ভেবে ইন্তিহাজ এর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বাইকে উঠে বসলো,বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে দেখে রাজিয়া আর বৃষ্টি এখনো ফুসকা খেতে ব্যস্ত।মিথিলা এদিকে তাকিয়ে আছে।ইয়ানা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঘার কাৎ করে বিদায় জানাতেই ইন্তিহাজ বাইক স্টার্ট দিলো।
ইন্তিহাজ বারবার করে স্পিড বাড়াচ্ছে,এতে সামনের দিকে ঝুঁকে পরছে ইয়ানা।অকারণে এমনটা করার কোনো মানে হয়,রেগে গিয়ে ইয়ানা ইন্তিহাজ এর উদ্দেশ্যে বললো,

–ভাইয়া,আস্তে চালাওনা প্লিজ।এমন করে বাইক চালালে পরে যাব তো।স্পিড কমাও

–কেন,আমাকে ধরে বসতে কি হচ্ছে তোর,আমাকে ধরে বসলে তো এই প্রবলেম টা হয়না তাইনা?

–তোমাকে ধরে বসবো মানে,কি বলো এসব?আমি পারবো না তোমাকে ধরে বসতে (ঘাবড়ানো স্বরে)

–কেন আবির না করেছে নাকি,আজ সকালেও ভালোই আলাপচারিতা করলি দেখলাম।আমার সামনে আসলেই তোর ন্যাকামি শুরু।
একরক্তি মেয়ে,এখনও নাক টিপলে দু’ধ বের হবে,আর উনি প্রেম করতে শিখে গেছেন (শেষের লাইন টা দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)

–আবারও বাজে কথা,তোমাকে কে বলে এসব আজেবাজে কথাবার্তা,বলোতো।আম…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই ঝাঁকিতে হুমড়ি খেয়ে এসে পরলো ইন্তিহাজ এর পিঠে,ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইন্তিহাজ কে।ইন্তিহাজ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে বললো,

–গুড,এভাবেই ধরে বসে থাক,ছেড়ে দিলে বাইকের স্পিড আরও বেড়ে যাবে,এটা আমার লাস্ট ওয়ার্নিং তোর জন্য

–তুমি এটা বলো আমাকে,আমার নামে আজেবাজে কথা তোমাকে কে বলে?
আমি মোটেও আলাপচারিতা করিনি

–মিথ্যা কথা বলা আমার পছন্দ নয় ইয়ানা,আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু মিথ্যা কথা একদম সহ্য করতে পারি না

–ভাইয়া,বিশ্বাস করো,আমি সত্যিই বলছি আমি এমনটা করিনি।কেউ ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে তোমাকে

–তুই সকালে আবিরের সঙ্গে কথা বলেছিস হ্যাঁ নাকি না?
–কিন্তু আমিতো এ..
–হ্যাঁ নাকি না,এককথায় উত্তর দে
–হ্যাঁ কিন্তু….

ইয়ানা হ্যাঁ উত্তর দিতেই বাইক জোরে ব্রেক করলো ইন্তিহাজ,হঠাৎ করে এভাবে ব্রেক করায় পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ইয়ানা।ও কিছু বলার আগেই ইন্তিহাজ বলে উঠলো,

–বাইক থেকে নাম
–কিহ্,কিন্তু আমরাতো এখনও বাড়ি পৌছইনি।এখানে নামবো কেন
–বাইক থেকে নেমে যেতে বলেছি (দাঁতে দাঁত চেপে)
–ভাইয়া তুমি কি…
–কথা কি কানে যায়না (ধমক দিয়ে)

ইন্তিহাজ এর ধমকে ইয়ানা কেঁপে উঠলো ভয়ে,ইন্তিহাজ নিজেই ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে বাইক থেকে নামিয়ে দিয়ে একজন রিকশাওয়ালা কে ডেকে ১০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো,

–মামা,এই মেয়েটিকে **** জায়গায় নামিয়ে দিবেন

রিকশাওয়ালা কে টাকা দিয়ে ইয়ানা’র দিকে একনজর তাকিয়ে ইন্তিহাজ বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।ইয়ানা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ইন্তিহাজ এর যাওয়ার পানে,হঠাৎ করে কি হলো কিছুই বোধগম্য হলোনা ওর।

–এই-যে আপু,বসেন।কতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবেন,আমার আরও ভাড়া আছে,বসেন আপনাকে নামিয়ে দিয়াসি

–অ্যাঁ

–কি হলো,বসেন

ইয়ানা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রিকশায় উঠে বসতেই রিকশাওয়ালা রিকশা চালানো শুরু করলো।কিছুক্ষণ পরে ইয়ানা’দের বাড়ির সামনে রিকশা দাঁড়ালে ইয়ানা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার জন্য রিকশাওয়ালা কে টাকা দিতে লাগলে রিকশাওয়ালা বললো,

–দরকার নেই আপু,আপনার ভাড়া দিয়ে দিয়েছে

–আমি কারোর দয়ার পাত্রী নই,নিজের ভাড়া নিজেই টানতে পারি।নিন আপনার টাকা

ইয়ানা রিকশাওয়ালা কে টাকা ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে বাড়ির গেইটে এসে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপলো, কিছুক্ষণ পরে ইয়ানা’র মা এসে দরজা খুলে দিতেই ইয়ানা কোনো কথা না বলে গটগট করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।
ভেতরে গিয়ে দেখে ইন্তিহাজ সোফায় বসে চা খাচ্ছে আর টিভিতে নিউজ দেখছে।ইয়ানা তার দিকে একনজর রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গটগট করে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ইয়ানা’কে এমন বিহেভিয়ার করতে দেখে নাহিদ এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো,

–আপুই,দরজা খোলো,আপু কি হয়েছে তোমার
–নাহিদ,আপুই তো মাত্র কলেজ থেকে আসলো,অনেক টায়ার্ড তাইনা,এখন ডিস্টার্ব করোনা (ইন্তিহাজ)

–আপু কি রাগ করছে আমার ওপর,আমার সাথে কথা কেন বললোনা।
আপু সরি,আর কখনও তোমার ব্যাগ থেকে চকোলেট নিয়ে খাবোনা,আপু দরজা খোলো আপু

–নাহিদ,আমি তোমার জন্য চকোলেট এনেছি,এখানে আসো।আপুই ফ্রেশ হয়ে তোমার সঙ্গে ঠিক কথা বলবে।

ইন্তিহাজ এর কথায় নাহিদ ছুটে এসে ইন্তিহাজ এর পাশে বসলে ইন্তিহাজ পকেট থেকে চকোলেট বের করে নাহিদ কে দিলো।

–কিরে,ইয়ানা’র কি হয়েছে বলতো।মেয়েটা এতো রেগে আছে কেন,ও তো কখনো এমন করেনা (বললো ইয়ানা’র মা আমেনা খাতুন)

–মাঝেমধ্যে রাগ করা ভালো কাকিয়া,এতে ব্রেনের কার্যক্রম ঠিক থাকে।
রাগ,হাসি,কান্না সবকিছুরই দরকার আছে

–ইয়ানা’র রাগ হলে,ও কান্না করলে সবচেয়ে বেশি টেন্স তো তুই হোস,আজকে তুই এতো নরমাল বিহেভিয়ার করছিস কি ব্যাপার বলতো,তোর সঙ্গে কি কিছু হয়েছে?

–সেরকম কিছুইনা কাকিয়া,ওসব বাদ দাও।
পায়েস রান্না হলো?

–হুম,আর একটু পর চুলা থেকে নামিয়ে নিব।
তোর কথামতো চিনির বদলে সুগার ফ্রী দিয়েছি।

–ভালো করেছো,চিনি শরীরের জন্য ভালো নয়।
–ভাই-ভাবি কতদূর আসলো?
–এইতো আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই চলে আসবে,তুমি রান্না শেষ করো আমি রুমে যাচ্ছি।


কানে হেডফোন গুঁজে ফুল স্পিড সাউন্ড দিয়ে ফোনে ফানি ভিডিও দেখছে ইয়ানা,মন ভালো করার একটা কৌশল মাত্র।হঠাৎই ইন্তিহাজ দরজার লক ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলো,সঙ্গে বহ্নি,তৃষা,ইয়াকুব জামান (ইন্তিহাজে’র বাবা),খাদিজাতুলনেসা (ইন্তিহাজে’র মা),আয়ুব জামান,আমিনা খাতুন (ইয়ানা’র মা)।
সবাই রুমে ঢুকে দেখে ইয়ানা চোখ বুজে আরামচে শুয়ে থেকে গান শুনছে,আমিনা খাতুন ছুটে গিয়ে ইয়ানা’কে টেনে বসিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলেন ওর গালে,কান থেকে হেডফোন খুলে নিয়ে ছুড়ে মারলেন ফ্লোরে।ইয়ানা কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি,আমেনা খাতুন অশ্রুসিক্ত ধরা গলায় বললেন,

–পেয়েছিস টা কি তুই,কিছু বলিনা বলে মাথা কিনে নিয়েছিস তাইনা।কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি,দরজা খোলার নামগন্ধও নেই,আমাদের টেনশনে রাখতে ভালো লাগে তাইনারে।

নাহিদ দৌড়ে এসে ইয়ানা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–আপুই,তুমি কি আমার ওপর রাগ করে এরকম করছো?
আপু,আমি আর কখন তোমাকে না বলে তোমার চকোলেট খাবনা প্রমিজ।তুমি এভাবে দরজা বন্ধ করে কেন ছিলে হুম।বহ্নি আপু বলছিলো ওর এক বান্ধবী নাকি এভাবে রাগ করে দরজা আটকে দিয়ে মারা গেছিলো।আপু তুমি এরকম করলে আমার কি হবে,তুমি কি আমাকে ভালোবাসোনা বলো।
দেখো আম্মুও কতো কান্না করছে তোমার জন্য

নাহিদের কথা শুনে ইয়ানা ফ্যালফ্যাল করে তাকালো সবার দিকে,সকলের চোখে অশ্রু,সকলের মুখেচোখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট,শুধু ইন্তিহাজের চোখে অশ্রু,চিন্তার পাশাপাশি রাগ টাও লক্ষনীয়।
ইয়ানা’র ভাবনার মাঝেই ওর মা মেয়ের কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন,

–বেঁচে আছিস কেন,ম’রতে পারিসনা?
জন্মের পর থেকে জ্বালিয়ে মা’রছিস,এখনও জ্বালাচ্ছিস,শান্তি দিবি কবে বল (চেচিয়ে বললেন আমিনা খাতুন)

আমিনা খাতুন কে এরকম রিয়াকশন করতে দেখে এবার খাদিজাতুলনেসা এগিয়ে এসে ইয়ানা’কে জড়িয়ে বসে আমেনা খাতুনের উদ্দেশ্য বললেন,

–আহ্,কি শুরু করলি তুই আমেনা।
মেয়েটাকে এভাবে বকিসনা তো,বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারেনি,তাই বলে এভাবে এতবড় মেয়ের গায়ে হাত তুলবি?দেখতো মেয়েটা ঘাবড়ে গেছে কিভাবে

–ভাবি,ওকে আর আশকারা দিওনা,কিছু বলা হয়না বলে যা-খুশি করে বেড়াচ্ছে।এইযে আমরা এতগুলো মানুষকে এভাবে চিন্তায় ফেলে ও কি করছে,গান শুনছে।বিয়াদপ মেয়ে কোথাকার,ওর জন্য আমি অফিস থেকে ছুটি না নিয়েই বাড়ি চলে আসছি,ভয়ে আমার হাত-পা কাঁ’পছিলো,ওর ফোনেরই ব্যবস্থা করছি আমি,এই ফোনই যত নষ্টের গোড়া (আয়ুব জামান)

–সবাই যান,কিছু হয়নি তো।মেয়েটাকে বকাবকি করে কি হবে,আমি দেখছি ওকে।আমেনা যাও নিজের কাজে যাও,আমি ইয়ানা’কে নিয়ে আসছি।ইন্তিহাজ তুই ফ্রেশ হয়ে নে বাবা,এতো চিন্তার কিছু হয়নি,জানিসই তো ইয়ানা কতটা ছেলেমানুষী করে।

খাদিজাতুলনেসার কথায় সবাই ইয়ানা’র দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো,নাহিদ ইয়ানা’র গালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।ইয়ানা এখনো ঘাবড়ে আছে,ও আসলে বুঝতেই পারছেনা কি হচ্ছে এখানে।খাদিজাতুলনেসা ইয়ানা’র মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,

–এরকমটা কি কেউ করে বলতো,সবাই কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম আমরা
–তোমরা কখন এসেছো মামনী?

–এসেছি ঘন্টাখানেক হবে,তুই নাকি কলেজ থেকে এসে সেই যে রুমে ঢুকে দরজা আটকে করছিস আর বের হসনি,তুই নাকি রেগেও ছিলি।
আমরা কতবার তোকে ডাকলাম,দরজা ধাক্কালাম কিন্তু তোর কোনো সাড়াশব্দ ছিলোনা,অজানা আতঙ্কে সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম আমরা,কিছু হলো না তো তোর।তোর আব্বুও অফিস থেকে ছুটে চলে আসছে,ইন্তিহাজ তো পাগলের মতো করছিলো জানিস….

To be continue…..