তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-১১+১২+১৩

0
221

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১১

পোস্ট আপলোড করা শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ইয়ানা,পোস্ট আপলোড করার কিছুক্ষণ পরেই ডাক পরলো ইন্তিহাজের,দরজা ভিড়ানো না থাকায় স্পষ্ট ভাবেই সাউন্ড রুম অবধি এসেছে,হঠাৎ ইন্তিহাজের এরকম ডাকাডাকি শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো ইয়ানা,তাড়াতাড়ি করে ওড়না গায়ের সাথে জড়িয়ে ছুটে আসলো ইন্তিহাজের রুমের সামনে,দরজায় টোকা দিতেই ইন্তিহাজ দরজা খুলে ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে ইয়ানা’র মুখের সামনে নিজের ফোনটা ধরে কড়া কণ্ঠে বললো,

–হোয়াট ইজ দিস ইয়ানা,লোকে খুব ভালো বলছে তাইনা বল,এসব কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ের কাজ

ফোনের ডিসপ্লে অফ হয়ে যাওয়ায় ইয়ানা বুঝতে পারলোনা একচুয়ালি ইন্তিহাজ কিসের কথা বলছে,কিন্তু অজানা ভয়ে গা শিউড়ে উঠছে ওর,ইয়ানা’র ধ্যান ভাঙলো ইন্তিহাজের ধমকে,

–কি হলো জবাব দে,এসবের মানে কি বল,সাহস কি করে হয় এগুলো করার

–কিন্তু কি করেছি আমি,সেইটাতো বলবে?
–কি করছিস দেখতে পাচ্ছিসনা,নাকি নাটক করছিস,কানের নিচে লাগিয়ে দিব বেয়া*দব মেয়ে একটা

–ফোনের ডিসপ্লে অফ হয়ে গেছে,দেখতে পাচ্ছি না তো

ইন্তিহাজ ফোনটা নিজের দিকে করে লক খুলে আবারও ইয়ানা’র সামনে ধরলো,এটা একটা টিকটিক ভিডিও।হিজাব পরিহিতা মুখে মাস্ক পরা একটা মেয়ে নিজের কাজলটানা হরিণী চোখ দুটো মিউজিকের তালেতালে নাচাচ্ছে,মেয়েটি আর কেউ নয়,এটা ইয়ানা।ভিডিও টা দেখে ভয়েভয়ে ইন্তিহাজের দিকে তাকালো ইয়ানা,ইন্তিহাজ চোখমুখ লাল হয়ে আছে রাগে।ইন্তিহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–কলেজে পড়ার নামে এসব করতে যাস তাইনা,তোকে ফোন কিনে দেওয়া হয়েছে অনলাইন ক্লাস করার জন্য আর তুই এগুলো করে বেড়াচ্ছিস।ছেলেপেলের কমেন্ট দেখছিস একেকটা,এসব নোংরা নোংরা কমেন্ট আর কিছু রিয়াক্ট পাওয়ার লোভে নিজেকে বিকিয়ে দিতে বসেছিস দেখছি,আর কতো নিচে নামবি তুই ইয়ানা

–এটাতো সামান্য একটা ভিডিও,আমি তো মুখ দেখাইনি ভাইয়া,শুধু চোখ দিয়ে ভিডিও বানিয়েছি,এই সামান্য বিষয়ে এতো হাইপার হওয়ার কি আছে আজব

–তোর কাছে সামান্য বিষয় হলেও আমার কাছে অসামান্য, তুই বুঝবিনা সমস্যা টা কোথায়,বুঝেও বুঝবি না তুই।,আজ চোখ দিয়ে ভিডিও বানিয়েছিস,কাল আর একটু নিচে নামাবি এভাবে একসময় পুরো ফেইসটাই দেখিয়ে দিবি।তারপর ধীরেধীরে দেখব ফুল বডি দেখাচ্ছিস,টিকটকের নেশায় একবার ডুবলে ভাইরাল হওয়ার জন্য ছেলেমেয়েরা সব করতে পারে,টিকটক কি ভালো নাকি রে,প্রতিবন্ধী দের রাজত্ব

–আচ্ছা সমস্যা টা কি বলোতো,সবসময় আমার দোষ না ধরলে হয়না তাইনা,খুঁটে খুঁটে দোষ বের করে কথা না শুনালে তোমার পেটের ভাত হজম হয়না দে…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ না করতেই থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠিয়েও নামিয়ে নিলো ইন্তিহাজ,আকস্মিকতায় তৎক্ষনাৎ চোখ বুজে নিলো ইয়ানা।
ইন্তিহাজ হাত নামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–চোখের ভিডিও কেন বানাবি তুই,ছেলেদের পেছনে লাগাতে ভালো লাগে তাইনা?ভিডিও ক্যাপসন কি দিয়েছিস ❝My beautiful eyes❞
কেন ভাই,তই জানিস তোর চোখ সুন্দর,সেটা আবার সবাইকে অ্যানাউন্সড করে বলতে হবে?এরপর ছেলেরা পেছনে লাগলে তো প্যানপ্যান করবি,ওমুক ডিস্টার্ব করছে তমুক ডিস্টার্ব করছে,নয়তো রিলেশন নামক পাপিষ্ঠা কাজে জড়িয়ে পরবি। এখনকার বয়সটাই এমন,ঠিকভুল কোনোটাই সঠিকভাবে বিচার করার ক্ষমতা তোর হয়নি,স্কুল-কলেজ লাইফের এসব আবেগ গুলো স্কিপ করতে পারলেই লাইফে সাকসেস হবি,নয়তো ধ্বংস নিশ্চিত।
অবশ্য তোকে আর কি বলবো,এখনকার জেনারেশনটাই নষ্ট হয়ে গেছে এই মোবাইল ফোন নামক যন্ত্রটার জন্য,আগে যখন এসব ছিলোনা,তখনকার লোকজনই ভালো ছিল,আর এখনকার অবস্থা কি বলবো।দেশগুলোর এডুকেশন সিস্টেম পর্যন্ত অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে,ফলস্বরূপ ছোটছোট ছেলেমেয়েরা আজ মোবাইল,কম্পিউটারসহ নানান প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে আগামীর ভবিষ্যতের অন্তরায় হয়ে পরছে।

–মোবাইল থাকা মানেই কি সবাই খারাপ হয়ে যায় নাকি,তুমিও তো ফোন ইউজ করো,নিজের বেলায় আঁটিসাঁটি আর আমার বেলায় দাঁতকপাটি তাইনা (বিরক্ত হয়ে বললো ইয়ানা)

–আমি ফোন কিনেছি কবে জানিস?মেডিকেল অ্যাডমিশনের পরে,তার আগে ফোন ইউজ করতামনা আমি।যদিও লাস্টের দিকে একটা বাটন ফোন কিনেছিলাম,সেটাও প্রয়োজনের খাতিরে,মডেল টাও শোন,নোকেয়া..

–হয়েছে,সবারই কমন ডায়লগ।তলেতলে সবাই জলঘোলা করে ওপর ওপরে সাধু সাজে

–ইয়ানা (ধমক দিয়ে)
আমাকে কখনো দেখছিস প্রয়োজন ছাড়া ফোন টিপতে,ঘন্টার পর ঘন্টা অনলাইনে পরে থাকতে?

–অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস অফ রাখলে বুঝবো কি করে (বিরবির করে বললো ইয়ানা)

–তুই যেটা করেছিস এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে,কি করা যায় বলতো,আইডিয়া
১মিনিট দাঁড়া আসছি (কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ইন্তিহাজ)

ইয়ানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি করতে চলেছে ইন্তিহাজ,এই ছেলে মোটেও সুবিধার নয়।ইয়ানা’র ভাবনার মাঝেই ইন্তিহাজ ইয়ানা’র মেক-আপ বক্স সহ সাজসরঞ্জাম রাখার বক্সটা নিয়ে আসলো,এগুলো ইন্তিহাজের হাতে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকালো ইয়ানা,ইন্তিহাজ বক্সগুলো খুলে আইরেস,কাজল,আইলানার,মাসকারা সহ চোখ সাজানোর যা-কিছু ছিলো সবগুলো জিনিস নিয়ে বাথরুমে থাকা পানি ভরতি বালতির মধ্যে ছেড়ে দিলো,ব্যপার টা এতটাই দ্রুত হলো যে ইয়ানা কিছু বুঝে ওঠার সময়টাও পায়নি,ইন্তিহাজের এহেন কাজে এবার কেঁদেই দিলো ইয়ানা,

–আমার এতো দামিদামি এক্সক্লুসিভ আই প্রোডাক্টস গুলো এভাবে নষ্ট করে দিলে,মামনি কতো ভালোবেসে এগুলো এনে দিয়েছিলো আমাকে,আমার বার্থডে গিফট ছিল এগুলো

–এসব ফালতু জিনিসের জন্য একদম চোখের পানি নষ্ট করবিনা ইয়ানা,চোখের পানি এতোটাই সস্তা নাকি রে।
ফোনটা দে…

ফোনের কথা শুনে ইয়ানা ছলছল চোখে ইন্তিহাজের দিকে তাকালো,ইন্তিহাজ হাত বাড়িয়ে বললো,

–কিরে,ফোনটা চাইলাম না,লক খুলে দিবি।ওফস সরি,এই বয়সে তোর আবার পারসোনাল কি রে,লক দিয়েছিস কেন ফোনে,এতবড় হয়েছি এখন অবধি আমিই ফোনে লক দিইনা আর তুই?

কথা বলতে বলতেই ইয়ানা’র হাত থেকে ওর ফোনটা নিয়ে নিলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা’র হাত ধরে আঙুল দ্বারা ফিঙ্গার লক খুলে টিকটকে ঢুকে অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে টিকটক অ্যাপসসহ ভিডিও এডিটর অ্যাপসগুলো আনস্টল করে দিলো ইন্তিহাজ,

–ফারদার কখনো যদি তোর ফোনে এসব দেখেছি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।যা এখানে থেকে।


পরদিন সকাল ১১টা…
ঘুরতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে বহ্নি ও ইয়ানা,দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠায় ইয়ানা গিয়ে দরজা খুলে দেখে কালো পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি পরিহিত ইন্তিহাজ হাতে পলিব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ইন্তুহাজ সকালে লাচ্ছা পরোটা খেয়ে ঈদগাহে গিয়েছিলো ঈদের নামাজ নামাজ আদায় করতে।ইন্তিহাজ হাতে থাকা পলিব্যাগ টি ইয়ানা’র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

–গরুর মাংস আছে,রান্না কর দুজন।আমি শফি চাচাকে বলে রেখেছি,পোলাও এর চাউল,মশলাপাতি যা-কিছু লাগে দিয়ে যাবে।
এখন সামনে থেকে সরে যা,চেঞ্জ করে গরুর কাছে যেতে হবে।

ইন্তিহাজের কথাগুলো শুনে ইয়ানা যেন হতবাক হয়ে গেলো,কিসের গরু,এখানে তো ওদের কোনো কুরবানী হচ্ছে না।ঈদ করার কথা ছিলো গ্রামে,সেখানেই সব আয়োজন করা হয়েছে,হুট করে শহরে চলে আসতে হবে এটা কে জানতো।ইন্তিহাজের কথাবার্তার ইঙ্গিতে মনে হচ্ছে কুরবানী ওরাও দিচ্ছে,একরাতের মধ্যে সব ঠিক হলো কি করে আশ্চর্য।
ইয়ানা মেইন গেট লাগিয়ে দিয়ে ইন্তিহাজের পিছুপিছু ওর রুমে চলে আসলো,

–ভাইয়া,ওই ভাইয়া,কিসের মাংস এগুলা?
–স্ট্রেঞ্জ,চোখে কি দেখিসনা নাকি কানেও আজকাল কম শুনছিস,বললাম তো তখন গরুর মাংস এগুলো

–কিন্তু কোথায় পেলে এগুলো,কে দিলো তোমাকে?

–কে দিবে,আমাদের ভাগের মাংস এটা।রান্না করার জন্য এতটুকু করে-করে সবাইকেই দেওয়া হয়েছে,পুরো মাংস আসতে বিকেল হবে।৫জনের ভাগ,মামুষ কম,আমাকেও হাত লাগাতে হবে নাহলে আরও দেরি হবে,যা নিজের কাজ কর।

–ইয়ানা,কিরে কোই গেলি?আমার মেকআপ করা কমপ্লিট,এবার তোরটা হয়ে গেলেই বের হবো।ইন্তিহাজ ভাইয়া কোই,শোনো ভাইয়া তুমি বাসায় থাকো আমরা দু’জন ঘুরতে ব…

বলতে বলতে ইন্তিহাজের রুমে এসে ইয়ানা’র হাতে মাংসের প্যাকেট দেখে থেমে গেলো বহ্নি,ভ্রু-কুচকে তাকালো ইন্তিহাজের দিকে,

–মাংস কোথায় পেলে ভাইয়া,কে দিলো?

–আমাদের ভাগের মাংস,আমরাও গরু কুরবানী দিচ্ছি এখানে।

–কিন্তু আমাদের তো এখানে থাকার কথা ছিলোনা,একরাতের মধ্যে ভাগ নিলে কিভাবে

–পাশের বিল্ডিংয়ের সাজ্জাদ আঙ্কেল আছেনা?ওরা ৪ভাই মিলে গরু কুরবানী দিচ্ছে,আব্বু ওনাকে কল করে আমাদেরকেও একভাগ দিতে বলেছে।রাতে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশ করে আঙ্কেলকে ভাগের টাকা দিয়ে আমরাও ভাগ নিয়েছি।দুপুরতো হয়ে এলো,যা রান্না চাপা,বাকি যা কিছু লাগবে শফি চাচা দিয়ে যাবে,উনি বাজার করতে গেছেন

ইন্তিহাজের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো বহ্নি,হাতের আঙুল দিয়ে ওড়না পেঁচাতে লাগলো,ইয়ানা আর বহ্নি কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইন্তিহাজ ভ্রুকুটি করে তাকালো,ভালোভাবে খেয়াল করতেই দু’জনে সাজগোজ নজরে আসলো ইন্তিহাজের,

–কিরে,বাসার মধ্যে এভাবে সং সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেনো,এভাবে রান্না করতে গেলে দেখা যাবে তোদের এসব আটা ময়দা খাবারের সঙ্গেও মিক্সড হয়ে যাবে

–ভাইয়া একদম বাজে কথা বলবেনা,কিসের ময়দা হ্যাঁ,তুমি জানো এগুলোর দাম কতো?আর আমরা মোটেও সং সেজে বসে নেই,আমরা দুজন রে…

ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই বহ্নি ইয়ানা’র হাত চেপে ধরে ইশারায় থামতে বললো,

–কিছুনা ভাইয়া,আমরা ওই পিক ওঠার জন্য রেডি হচ্ছিলাম (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো বহ্নি)

–এখন এসব ধুয়ে কাজে লেগে পর,আমিও চেঞ্জ করে গরুর কাছে যাব

কথাটা বলেই ওয়াসরুমে চলে গেলো ইন্তিহাজ,বহ্নি ইয়ানা’র হাত ধরে বাইরে নিয়ে এসে ওর হাত ছেড়ে দিলো,ইয়ানা একটু রাগি কণ্ঠে বললো,

–এটা কি হলো আপু,আমাকে বলতে দিলেনা কেন?
ব্যাটা খা’টাস,আমাদপর ঘুরাঘুরির প্ল্যানিং সব নষ্ট করে দিলো,ভাবলাম কুরবানী নেই,কাজকর্ম নেই,চিল করে ঘুরে বেড়াবো।কিন্তু তলেতলে এতকিছু করেও আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি

–রিল্যাক্স,শান্ত হ তুই।এখন ভাইয়ার সঙ্গে সিনক্রিয়েট করলে আমাদের ঘুরাঘুরির প্ল্যানিং সত্যি সত্যিই নষ্ট হয়ে যাবে,তার চেয়ে ভালো এটাই হবে যেটা বলছে সব শোন।
বিকেলে তো আর কোনো কাজ থাকবে না,তখন ভাইয়াকে পটিয়ে ঘুরতে বের হবো বুঝলি

–এভাবে তো ভেবে দেখিনি,তুমি একদম ঠিক ভেবেছো (খুশি হয়ে বললো ইয়ানা)
কিন্তু আপু,মাংস রান্না করবো কি করে,আমিতো আলুভাজি আর রুটি,পরোটা বানানো ছাড়া আর কিছুই পারিনা (মন খারাপ করে)

–আমিতো পারি সমস্যা নেই,আমি মোটামুটি সব রান্নাই জানি,কিন্তু আজ যেহেতু বাড়িতে কেউ নেই,রান্নায় একটু ভিন্নতা নিয়াসাই যায়,ইউটিউব থেকে নিউ নিউ রেসিপি দেখে অন্যরকমভাবে আজ মাংস রান্না করবো কেমন।

–শুধু মাংস নয়,পোলাও ও করতে হবে,আরও কিকি করতে হবে জানিনা

–ওও আচ্ছা,তাহলে আজকে মাটন বিরিয়ানি করবো,চাউল নিয়াসুক।

দুপুর আড়াইটার দিকে রান্নাবান্না শেষ করে খাওয়াদাওয়া করে রেডি হয়ে নিলো ইয়ানা ও বহ্নি,ইন্তিহাজ এখনো আসেনি।টেবিলের ওপর খাবার গুছিয়ে রেখে দুজন ৩টার দিকে ঘুরতে বের হলো,৫টা কি সাড়ে ৫টার দিকে আবার আসবে,মাংস,ভুড়ি নিয়ে কাজ আছে অনেক।


সন্ধ্যা ৬টা…
একটা কফিশপে বসে কফি ও ফুচকা খাচ্ছে বহ্নি,ইয়ানা ও মিথিলা।ফুচকা খাওয়ার নেশায় কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরই পায়নি ওরা।হঠাৎ ইয়ানা’র মুখের সামনে কেউ একটা দইফুচকা ধরলো,ইয়ানা হাসিমুখে সেটা মুখে নিতেই কি মনে করে উঁচু হয়ে তাকাতেই দেখে ইন্তিহাজ রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,ইন্তিহাজ কে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলো ইয়ানা,মুখের ভেতরে আস্ত একটা ফুচকা থাকায় না পারছে চিবিয়ে খেতে,না পারছে ফেলতে।
একহাত দিয়ে বহ্নির হাত ধরে ওকে টানতে শুরু করলো ইয়ানা,বহ্নি মুখে থাকা ফুচকা শেষ করে বিরক্ত হয়ে বললো,

–আরে এগুলো আগে শেষ কর না,তারপর ঝাল ফুচকা অর্ডার করবে।এখানে যতরকমের ফুচকা পাওয়া যায়,সব টেস্ট করবো আজ,টাকার কথা ভাবতে হবে না,আব্বু বিকাশ করে ঈদবোনাস পাঠিয়েছে আমাকে।তুই শুধু রিল্যাক্সে খেতে থাক

–উম উম উম

–কিরে উমউম করছিস কেন,খাইতে বল….ভাইয়া তুততুমি এখানে? (ভয়ে ঢক গিলে বললো বহ্নি)

ইয়ানাও কোনোমতে নিজের মুখে থাকা ফুচকা টা শেষ করে ভীতু দৃষ্টিতে ইন্তিহাজের দিকে তাকালো,

–কিরে থামলি কেন,আরও খাবি?
অর্ডার করবো?বল (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)

–ভাভাভাইয়া আআসলে আমরা তো এখুনি বাড়ি যেতাম,আজ ঈদের দিন তাই একটু ঘুরতে বের হয়েছি (বহ্নি)

–তো কখন বাড়ি ফিরতি শুনি,রাত ১০টায়?যা অবস্থা দেখছি,মনে তো হয়না রাত ১০টার আগে বাড়ি ফিরবি বলে

–ভাইয়া,আমরাতো ওই…

–বেস,অনেক হয়েছে,আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।কার অনুমতি তে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস,একবারও আমাকে জানিয়েছিস তোরা?ফোন পর্যন্ত তুলছিসনা,কি পেয়েছিসটা কি আমাকে

–তোমরা জানো,এই ২ঘন্টায় কি অবস্থা হয়েছিল আমাদের।এত কল করলাম দু’জনের একজনও ফোন তুলছোনা,শেষে ফোন লোকেশন ট্র্যাক করে এখানে এসেছি আমরা (শুভ)

শুভ’র কণ্ঠস্বর পেয়ে সেদিকে তাকালো বহ্নি,মিথিলা ও ইয়ানা।শুভ হলো ইন্তিহাজের ফ্রেন্ড,একসঙ্গেই মেডিকেল পরছে,একই রুমে থাকে দু’জন।পড়াশোনার প্রেশার থাকায় বাড়ি যায়নি শুভ,এখানেই আছে,কিছুক্ষণ থেমে থেকে শুভ আবারও বললো,

–সাড়ে ৪টার দিকে মাংস নিয়ে বাড়ি গিয়ে দেখি তোমরা কেউ নেই,ডুপ্লেক্স চাবি দিয়ে লক খুলে বাসায় ঢুকেছি আমরা।কতোগুলো কল করেছি,কেউ কল ধরোনি।সন্ধ্যা হয়ে গেছে,তবুও খোঁজ নেই।আশেপাশের সব জায়গায় খোজাখুজি শেষ,কতো চিন্তা হচ্ছিলো জানো,এলাকাতো ভালো না।হঠাৎ মনে হলো লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা যাক,যদি ফোনের লোকেশন অন করে রাখো তাহলে হয়তো খোঁজ পেতে পারি,এটলাস্ট এইটার মাধ্যমেই তোমাদের কাছে পৌঁছাতে পারলাম।

–কিহ্,সন্ধ্যা হয়ে গেছে (অবাক হয়ে বললো বহ্নি)

–সাড়ে ৬টা বেজে গেছে দেখো।


বাড়ি আসতেই বহ্নি বলতে লাগলো,

–ভাইয়া বিশ্বাস করো,ফোন সাইলেন্ট ছিল,বুঝতে পারিনি আমরা,প্লিজ ক্ষমা করে দাও,আর কখনও এমন হবে না।

ইন্তিহাজ সোফার ওপর চুপচাপ গম্ভীর ভাবে বসে আছে,ইয়ানা এখন অবধি কোনে কথা বলেনি,ভয়ে গুটিয়ে গেছে মেয়েটা,ওর কপালে যে আজ শনি দশা আছে বুঝতে বাকি নেই,ইন্তিহাজের চোখমুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।বহ্নি কান্নাকাটি করে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে…..

To be continue…….

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১২

ইন্তিহাজের চোখমুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।বহ্নি কান্নাকাটি করে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে,শুভ ইন্তিহাজ কে বললো,

–ভাই রাগারাগি করিস না,বাচ্চা মেয়েরা,বুঝতে পারেনি,ভুল করে ফেলেছে

–ওরা বাচ্চা?একজনের বয়স ১৮,আরেকজন ২০,ওরা কিভাবে বাচ্চা হয়,ওদেরকে সিমপ্যাথি দেখিয়ে এসবে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা,আজকে যে কাজ করেছে এর ক্ষমা হয়না,অন্তত আমি এটা করবো না (গম্ভীর ভাবে বললো ইন্তিহাজ)

–ভাইয়া,আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছিলো,আমি বুঝতে পারিনি (মাথানিচু করে বললো ইয়ানা)

–নো এক্সকিউজ,ফোনে চার্জ নেই,ফোন সাইলেন্ট ছিল এসব লেইম এক্সকিউজ আমাকে অন্তত দিস না,অপরাধ করার পর সবাই এটাই বলে,এন্ড ইউ নৌ হোয়াট এই ডায়লগ গুলো পুরোনো হয়ে গেছে,একজন বাচ্চাও এগুলো এখন বিশ্বাস করবেনা।
আব্বুআম্মু কে কল করে বলি,বাড়ির দুটো মেয়ে কতবড় কাহিনি ঘটিয়েছে,ডানা গজিয়েছে দুজনের।

–ভাইয়া প্লিজ আম্মুকে বলোনা,মে*রে ফেলবে আমাকে (কান্না করতে করতে বললো বহ্নি)

–কফি হাউজে ঢুকে ফুসকা খাওয়ার সময় ভেতরে থেকে বুঝতে পারিনি কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে,ভেতরে থেকে বুঝবো কি করে (বললো ইয়ানা)

–হ্যাঁ,ফুসকা খাওয়াবোতো তোকে।সেদিন বলেছিলাম না,সুস্থ হওয়ার পর আবারও বাইরের ফুসকা খেতে দেখলে তোকে আয়েশ করে ফুসকা খাওয়াবো আমি,ইন্তিহাজ জামান কথার খেলাপ করতে শেখেনি,তৈরি থাকিস


রাত সাড়ে ৯টা ছুঁইছুঁই,,
ইন্তিহাজের অপেক্ষায় ড্রয়িংরুমে বসে আছে বহ্নি ও ইয়ানা।কিছুক্ষণ পরে ইন্তিহাজ বস্তাসমান পলিব্যাগ ভর্তি ফুচকার পাপড় নিয়ে হাজির হলো,ওর সঙ্গে শুভও রয়েছে,শুভর হাতে বড়বড় ৪টা ব্যাগ।
ইন্তিহাজ ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে সব জিনিসপত্র গুলো রেখে কিচেন থেকে ৩টা মাঝারি আকৃতির বড় সাইজের গামলা নিয়াসলো।প্যাকেট গুলো খুলে ফুসকার পুর-মশলা,তেঁতুলের টক আর ডিম শশার সালাদ আলাদাআলাদাভাবে গামলা গুলোতে রাখলো,ইন্তিহাজের মুখে কোনো কথা নেই,চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছে
শুভও চুপচাপ,তবে ওকেও ঘাবড়ান্তর দেখাচ্ছে।ইয়ানা,বহ্নি ইকজেকলি বুঝতে পারছে না এতগুলো ফুসকা দিয়ে ইন্তিহাজ কি করতে চলেছে,বায় এনি চান্স আজকে ফুসকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করাবে নাকি,কিছু একটা ভেবে ইয়ানা বলে উঠলো,

–ভাইয়া এতগুলো ফুসকা দিয়ে কি করবে,তুমিও খাবে নাকি প্রতিযোগিতা করবে ফুসকা খাওয়ার??যাক এটলাস্ট তোমার সুবুদ্ধি হলো,সত্যিই অনেক টেস্টি,থেঙ্কস ভাইয়া,আজকে এতবড় একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য,আমি আজ অনেক খুশি হয়েছি।

ইয়ানা’র কথা শুনে ইন্তিহাজ ইয়ানা’র হাস্যজ্বল মুখের দিকে তাকালো,কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে নিলো,এই চোখের মায়ায় পরে একদম দূর্বল হওয়া যাবে না,বড্ড সাহস বেড়ে গেছে ওদের,শুরু থেকেই শাসন না করলে প্রশ্রয় পেয়ে যাবে।হাত মুঠোবন্দি করে চোখ বন্ধ করে জোরেজোরে দু’বার নিঃশ্বাস ছাড়লো ইন্তিহাজ,এরপর আবারও আগের মতো কাজ করা শুরু করলো।
সব রেডি হলে এবার ইন্তিহাজ,ইয়ানা ও বহ্নির উদ্দেশ্যে বললো,

–নে খাওয়া শুরু কর,আজকে দেখবো তোরা ঠিক কতগুলো ফুসকা খেতে পারিস।প্রবলেম নেই,এগুলো ফুরিয়ে গেলে আমি আবার নিয়াসবো তোদের জন্য,এবার শুরু কর ফাস্ট

–কিহ্,এতগুলো ফুসকা আমরা দুজন খাব? (অবাক হয়ে বললো বহ্নি)

–বেশি কথা বলা আমার পছন্দ নয়,খাওয়া শুরু কর ফাস্ট।
তানাহলে আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম (রাগিস্বরে বললো ইন্তিহাজ)

ভয় পেয়ে ইয়ানা ও বহ্নি ফুসকা খাওয়া শুরু করে দিলো,ইয়ানা’র ২২টা ফুসকা খেতেই ঝালে নাজেহাল অবস্থা,চোখের জল নাকের জল হয়ে গেছে,অসহায় দৃষ্টিতে ইন্তিহাজের দিকে তাকালো ইয়ানা,ইন্তিহাজ সেটাকে অগ্রাহ্য করে রাগী চাহনি নিক্ষেপ করে খাওয়ার জন্য ইশারা করতেই ইয়ানা আবার খেতে শুরু করলো।
এদিকে বহ্নি’র অবস্থাও খারাপ,ঝালে চোখের পানি নাকের পানি মিলেমিশে একাকার,১৯টা খেয়েই অবস্থা খারাপ,আর খাওয়া সম্ভব না।বহ্নি নাক টানতে টানতে বললো,

–ভাইয়া,আর পারছিনা বিশ্বাস করো,এবার সত্যি সত্যিই মরে যাব

–নাটক করিসনা,খাওয়া শুরু করো,এখানে থাকা সবগুলো ফুসকা আজ তোদের দু’জনকে শেষ করতে হবে।কতো ফুসকা খেতে পারিস আমি আজ সেটাই দেখবো।

–ইন্তিহাজ,অনেক তো হলো,এবার ছেড়ে দে না ইয়ার (শুভ)

–তুই চুপ কর শুভ,এদেরকে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে।বাইরের রাস্তায় বসা আনহাইজিন ফুসকা খেয়ে এসে বাড়ির হেলদি খাবার গুলো একদম খেতে চায়না,দু’দিন পরপরই পেটের ব্যথায় চেচামেচি করে।
শরীরের অবস্থা দেখছিস,দিনদিন পাটকাঠি হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু ওয়েট ৫০+,এসবের কারণ কি জানিস,এসব ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফল এগুলো।

—ভাইয়া,আই এম সরি,আর কখনো এমন করবো না,প্লিজ,তিন বেলাই নিয়ম করে খাবার খাব সত্যিই। (নাক টেনে বললো ইয়ানা)

—একদম ন্যাকা কান্না করবি না,আজ সবগুলো ফুসকা শেষ করতে হবে,সো টাইমওয়েস্ট না করে খাইতে থাক

—আমি আর পারছি না,মরে যাব।
৩৩টা খেয়েছি,আর সম্ভব না আমার পক্ষে,আমি উঠলাম

কথাটা বলেই বহ্নি শোষাতে শোষাতে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো,

—ইন্তিহাজ,আমি বরং চিনি নিয়ে যাই,মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে

–মেডিসিন টা দিয়ে দিস,নাহলে শরীর খারাপ করবে।

—ওকে,কিন্তু ইয়ানা…

—ওকে আমি দেখছি,তুই যা

ইয়ানা অসহায় দৃষ্টিতে ইন্তিহাজের দিকে তাকিয়ে আছে,শুভ চলে গেলে ইন্তিহাজ আবারও ইয়ানা’র দিকে তাকালো কড়া দৃষ্টিতে,ইয়ানা’কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বললো,

—কিরে কি হলো,বসে আছিস যে?খাবিনা?

—আর পারছি না ভাইয়া,বিশ্বাস করো (ছলছল চোখে)

—এই নাকি দোকানের সব রকমের আইটেমের ফুসকা খাবি,খাওয়া শুরু করলে প্লেটের পর প্লেট খেতেই থাকিস,খাওয়া ছাড়িস না,খুব টেস্টি,অনেক মজার,আমাকেও রিকুয়েষ্ট করলি খাওয়ার জন্য,একটা খেলে নাকি শুধু খাইতেই ইচ্ছে হবে,তাহলে এখন নিজে না খেয়ে ন্যাকামি করছিস কেন?

—ভাইয়া,তুমিইতো বলেছিলে বেশি খেতে হয়না

—আজ আর কিছু বলবো না,এই ফুসকা গুলো আজ তোর জন্য উন্মুক্ত,স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো,সো কোনো ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া নেই।তাড়াতাড়ি শেষ কর,এগুলো শেষ হলে তো আরেক বস্তা নিয়াসতে হবে

—এ্যাঁহ্,আবারও আরেক বস্তা (চোখ বড়বড় করে বললো ইয়ানা)

অতিরিক্ত ঝাল,ভয়,আর আরেক বস্তা ফুসকার কথা শুনে ইয়ানা’র মস্তিষ্কের ইন্দ্রিয়গুলো যেন সব পেচিয়ে যাচ্ছে,হঠাৎই ধপ করে শুয়ে পরলো ইয়ানা,সেন্সলেস হয়ে গেছে সে,এতটা প্রেশার ওর ব্রেইন নিতে পারেনি।ইন্তিহাজ দ্রুত এসে ইয়ানা’র পাল্স চেক করে ওকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হলো।


পিটপিট করে চোখ খুললো ইয়ানা,কেমন দূর্বল লাগছে নিজেকে।ইয়ানা আস্তেধীরে উঠে বসলো,বড্ড পানি তৃষ্ণা পেয়েছে,তৃষ্ণায় গলা যেন শুকিয়ে কাঠ,মুখের মধ্যে কেমন যেন একটা ফিল হচ্ছে,পানসে পানসে টাইপের।ঝাল খাওয়ার পর দীর্ঘসময় মুখ বন্ধ রাখার কারণে এমন হচ্ছে,সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে ইয়ানা।তখনকার মতো এখন ঝাল না লাগলেও ঠোঁটে হাল্কা চিনচিনে জ্বালা করছে।
পানি খাওয়ার জন্য উঠতে গিয়ে খেয়াল করলো ইন্তিহাজ চেয়ার পেতে বসে আছে,ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছে সে।ইন্তিহাজ কে দেখেই রাগ উঠে গেলো ইয়ানা’র,ওর সাইড কেটে আস্তেধীরে বিছানা ছেড়ে নামতে গিয়েও অসাবধানতায় খাটের সঙ্গে পা লেগে শব্দ হতেই ধরফর করে নড়ে উঠলো ইন্তিহাজ।তাকিয়ে দেখে ইয়ানা বিছানা ছেড়ে নামার চেষ্টা করছে,মূহুর্তেই রাগ উঠে গেলো ইন্তিহাজের।ইয়ানা কে ধরে আবারও বিছানায় শুয়ে দিয়ে বললো,

—কার অনুমতি নিয়ে বিছানা থেকে নামছিস,আর এক পা বাড়ালে পা কে’টে রেখে দিবো।বেয়াদব কোথাকার,একটু স্থির হতে পারিস না,কোথায় যাচ্ছিলি তুই

—পানি খাব
—বস,নিয়াসছি

ইন্তিহাজ নিজেই কিচেন থেকে বোতলে করে পানি এনে ইয়ানা’কে দিলো,ইয়ানা ঢকঢক করে পানি খাওয়া শুরু করলো,

—আস্তে,এভাবে পানি খেলে গলায় বেঁধে যাবে,ধীরেধীরে…

ইন্তিহাজ পুরো কথা শেষ করার আগেই বিষম লাগলো ইয়ানা’র,কাশতে শুরু করলো সে।ইন্তিহাজ দ্রুত ইয়ানা’র পাশে বসে ওর মাথায় থাবা দিতে দিতে ধমক দিয়ে বললো,একটা কাজ ঠিক করে করতে পারিস না তুই,আর কতো টেনশন দিবি আমাকে বলতে পারিস,তোকে ছেড়ে আমি বাহিরে গিয়ে থাকবো কি করে সেটাই বুঝতে পারছি না,মনটা তো এখানেই পরে থাকবে,কবে বড় হবি বলতো।

—আমি এখানে আসলাম কখন?
—আমি নিয়েসেছি,সেন্সলেস হয়ে গেছিলি তুই,কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস।এখন কেমন লাগছে তোর,ঠিক আছিস? (চিন্তিত হয়ে বললো ইন্তিহাজ)

ইয়ানা ইন্তিহাজের কোনো কথার জবাব না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো,ইয়ানা’র অভিমান বুঝতে পেরে ইন্তিহাজ আর কথা বাড়ালোনা,বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে,ইয়ানা’কে কিছুক্ষণ একা ছেড়ে দেওয়া দরকার।
ইন্তিহাজ কিচেনে এসে ফ্রীজ থেকে দই বের করে ২চামচ দই খেয়ে নিলো,ওরও এবার ঘুমের প্রয়োজন,রাত অনেক হয়েছে।

ইয়ানা একটু বাথরুমে যাওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামলো,মাথাটা কেমন ঘুরছে।দেওয়াল ধরে ধরে বাথরুমে গিয়ে বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে চোখেমুখে পানির ছেটা দিয়ে আয়নার দিকে তাকালো।ওর চোখগুলো কেমন ফুলে আছে,ঠোঁটগুলিও ফোলা,সবই ঝাল খাওয়ার রিয়াকশন।একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেই দৃষ্টিগোচর হলো ঠোঁটের অনেক জায়গায় কাটা,রক্তজমাট বেঁধে আছে।
কিন্তু এটা কখন হলো,কিভাবে হলো আজবতো।আপাতত সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে মাথায় প্রেশার না দিয়ে ইয়ানা মূত্র ত্যাগ করে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলো,ঘুমের রেশ কাটছে না।


পরদিন দুপুরের আগে সবাই চলে আসলো গ্রাম থেকে,ইয়ানা,বহ্নি কেউই নিজেদের রুম থেকে বের হয়নি।জার্নি আর বমি করে তৃষা ক্লান্ত,তাই রুমে চলে আসলো,বিছানায় ইয়ানা শুয়ে আছে,এই অসময়ে এভাবে শুয়ে থাকার কারণ টা মাথায় ঢুকলো না তৃষা’র,ইয়ানা তো এমন করার মেয়ে নয়,ও কখনও এরকম অসময়ে পরেপরে ঘুমায় না।আপাতত সেটা নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তা না করে ইয়ানা’র পাশে শুয়ে পরলো তৃষা,ঘুম পাচ্ছে খুব।


বিকেল ৪টা…
আমেনা খাতুনের চেচামেচি তে ইয়ানা,বহ্নি দু’জনেই রুম থেকে চোখ ডলতে ডলতে বেড়িয়ে আসলো,এরকমভাবে চেঁচামেচির কারণ দু’জনের কেউই বুঝতে পারছে না,তবে সবাই যে ওদের দু’জনকে নিয়েই ডিসকাস করছে সেটা ওরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছে,বহ্নি বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো,

—তোমরা বাড়ি এসেছো সেটা সবাইকে জানানোর জন্য এরকম চেচামেচি করার কি দরকার,মাইক এনে দিব নাকি?ধুরর,একটু শান্তি করে ঘুমাইতে চাইলাম,সব শেষ করে দিলো

—কিসের ঘুম রে,বাজে কতো দেখছিস,সেই আসার পর থেকে দেখছি,দু’জনে পরেপরে ঘুমচ্ছিস।কি হয়েছে দুজনের বলতো, শরীর খারাপ নাকি,ডেকেও তুলতে পারিনি তোদের (আমেনা খাতুন)

—আসলে হয়েছে কি আম্মু,আমরা মানে আসলে ওই আরকি..

—আন্টি,আমি বলছি।কাল রাতে আমরা সবাই মিলে নাইট শো দেখেছি তো,তাই কারোরই ঘুম ছারছে না (বললো শুভ)

—কিন্তু তুইতো সকালসকালই উঠেছিস বাবা,তোরা দুজনেই তো আমাদের এগিয়ে নিয়ে আসলি (খাদিজাতুলনেসা)

—আমার আর ইন্তিহাজের রাতজেগে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আছে,তাই আমাদের কোনো প্রবলেম হয়না।


৩দিন পর…
কাঁধে ব্যাগ,ও ল্যাপটপ নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো ইন্তিহাজ। খাদিজাতুলনেসার চোখে পানি,প্রতিবারই ইন্তিহাজ হোস্টেলে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করেন তিনি,ইন্তিহাজ নিজের মা’কে হালকা করে বাহুডোরে জড়িয়ে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিলো,তারপর শান্তভাবে বললো,

—এভাবে কান্নাকাটি করলে কি ভালোলাগে বলোতো,ফাইনাল এক্সামের আর বেশি দেরি নেই,আমাকে তো যেতেই হবে আম্মু,তুমি কি চাওনা আমি ডক্টর হই বলোতো,লাইফে সাকসেস হতে হলে এই ছোটছোট স্যাক্রিফাইস গুলো করতেই হবে,প্লিজ কান্না বন্ধ করো,আমারও তো খারাপ লাগছে বলো

সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইন্তিহাজ জোরপূর্বক মুচকি হাসি দিয়ে বের হলো,গাড়িতে ওঠার পরেও সে একদৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটিকে একনজর দেখার আসায়,কিন্তু না,সে আসলোনা।গাড়ি ছুটে চললো আপন গতি
তে,ছেলেকে বিদায় দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাড়িতে ঢুকলেন খাদিজাতুলনেসা,সবারই মন খারাপ।

ইয়ানা নিজের রুমের দরজা লক করে ইন্তিহাজের দেওয়া রুমাল নিয়ে চাপা কান্না করছে,কয়েকমাস পরপর ইন্তিহাজ বাড়িতে এসে ইয়ানা’র সঙ্গে যতোই রুডবিহেভিয়ার করুকনা কেন,তবুও দিনগুলো ভালোই লাগে,ইন্তিহাজ বাড়িতে থাকলে বাড়িটা যেন প্রাণ ফিরে পায়,প্রতিবারের মতো ইন্তিজাজের চলে যাওয়ায় আনন্দ হওয়ার বদলে আজকেও অনেক কান্না পাচ্ছে ইয়ানা’র,অথচ ওরই সবথেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা। তাহলে এতো কান্না কেন পাচ্ছে,মনখারাপ কেন হচ্ছে,ওকে তো এখন আর কেউ কথায়কথায় শাস্তি দিতে আসবে না, বকবে না,মেজাজ দেখাবে না,খিটখিট করবে না।

বহ্নি এসে দরজা ধাক্কানোয় চোখমুখ মুছে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে দরজা খুলে দিলো ইয়ানা,বহ্নি হাসিমুখে ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

—বোনু সুখবর,ভাইয়া কিন্তু ঢাকা যাচ্ছে,এক্সাম শেষে আসবে,তার আগে আর এমুখো হচ্ছেনা,দ্যাট মিনস আমাদের মাসে মাসে আর ঝারিও দিতে পারবে না,তবে একটু মনখারাপ লাগছে,অনেকদিন ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হবে না (মনখারাপ করে)

–মানে ভাইয়া এই বছরে আর বাড়িতে আসবেনা,তুই সত্যি বলছিস এটা??

–হ্যাঁ রে,একদম সত্যি।আম্মুতো অনেক কান্নাকাটি করছে

–কোই ভাইয়াতো গতরাতে এবিষয়ে আমাকে কিছু বললো না….

To be continue……

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১৩

—কোই ভাইয়াতো গতরাতে এবিষয়ে আমাকে কিছু বললো না,
ইভেন একদম নরমাল বিহেভিয়ার করছিলো আমার সাথে।

—ওও,তবে আমাদের জন্য ভালোই হলো বল,এবার অন্তত রিল্যাক্সে লাইফলিড করতে পারবো,কোনো টেনশন নেই।
কিরে তোর কি হলো,তোরতো আমার চাইতেও আরও বেশি খুশি হওয়ার কথা,কিন্তু তুই এমন আপসেট হয়ে আছিস কেন? কিছু হয়েছে কি,বল আমায়?কথা শেয়ার করলে মন হাল্কা হয়

ইয়ানা’কে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো বহ্নি,ইয়ানা ফুপিয়ে কান্না করছে,বহ্নি ইয়ানা’র এভাবে কান্নার কারণ না জানলেও ওর বুঝতে বাকি নেই যে ইয়ানা’র এভাবে কান্না করার সঙ্গে ইন্তিহাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

—ভাইয়া তোকে বলে যায়নি বলে মন খারাপ? আরে পা”গলি এতে মনখারাপের কি আছে,ভাইয়াতো একেবারে আমাদের ছেড়ে চলে যায়নি তাইনা।আমি এটা বুঝতে পারছি না যেখানে তোর খুশি হওয়ার কথা সেখানে তুই এভাবে কান্না করছিস কেন,ভাইয়া বাসায় আসলে তো তুই বিরক্তবোধ করিস,কারণ ভাইয়া অলওয়েজ তোর সাথে রুড বিহেভিয়ার করে,তাহলে আজ ভাইয়া চলে যাওয়ায় তুই এরকম কেন করছিস আজব।

—আপু,আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ।তুমি যাও,আমার কিছু ভালো লাগছেনা,আমাকে একা ছেড়ে দাও প্লিজ…

—ওকে,তোর যেটা ভালো লাগে সেটাই কর,মনখারাপ করিস না কেমন,বিকেলে আমরা তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো,আজ কেউ আর বারণ করবে না,অনেক অনেক ঘুরবো কেমন,থাক আমি এখন আসি,তুই রেডি থাকিস (বলেই চলে গেলো বহ্নি)


ইন্তিহাজ গাড়ির সিটে মাথা হ্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে,বারবার মনে হচ্ছে ইয়ানা’কে না বলে আসাটা হয়তো অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে,মেয়েটা যা অভিমানী,রাগ-অভিমানে আবারও খারাপ কিছু না করে বসে।ওই আবির তো অনেক ক্ষেপে আছে,যদি কোনো ক্ষতি করে দেয় ইয়ানা’র। আবিরের কথা মনে হতেই চমকে উঠলো ইন্তিহাজ,পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে একটা কল করলো সে, কিছুক্ষণ রিং হতেই ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি কল রিসিভ করলো,সে কিছু বলার আগেই ইন্তিহাজ বলে উঠলো…

—হ্যাঁ হ্যালো,শোন।
ইয়ানা’কে চিনিস,ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার??

————

—হুম,আমার কাজিন।আবির নামের যে ছেলেটা আছে না?কলেজে গুন্ডামী করে বেড়ায়,ওকে একটু চোখেচোখে রাখিস তো,ছেলেটাকে আমার সুবিধার মনে হয়না,আই থিঙ্ক আমার অনুপস্থিতিতে ইয়ানা’র কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে,তোকে ভরসা করে দ্বায়িত্ব দিলাম,ইয়ানা’র যেন কোনোরকম ক্ষতি না হয়,খেয়াল রাখিস,টাকা লাগলে আমায় বলিস,আমি বিকাশ করে দিবো,কিন্তু আমার ইয়ানা’র ফুল সেফটি চাই গটগট।
————
—ওকে,পেয়ে যাবি,যা-কিছু বললাম মনে থাকে যেন,রাখলাম

কল কেটে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ইন্তিহাজ,ফোনের ওয়ালপেপারে ইয়ানা’র হাস্যজ্জ্বল ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ বুজে নিলো ইন্তিহাজ,অনেকটা জার্নি করতে হবে,রাতে ভালো ঘুম হয়নি,একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।


পরদিন সকালে বহ্নি আর তৃষা ইয়ানা’কে টেনে ঘুম থেকে তুললো,গতকাল এতো চেষ্টা করেও ইয়ানা’কে কিছুতেই ওরা ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেনি,ইয়ানা গাট ধরে ছিল ও যাবে না তাই

—কি হয়েছে,এভাবে টেনে তুললে কেন,আরেকটু ঘুমাবো

—কিসের ঘুম রে,কি সমস্যা টা কি তোর,খাওয়াদাওয়া নেই কিছু নেই,ঘর থেকেও বের হচ্ছিসনা,অনশন শুরু করছিস নাকি

—এরকম কিছুই না,একটু শরীর খারাপ লাগছে তাই কিছু ভালো লাগছে না,তোমরা যেমন ভাবছো এমন কিছুই নয় আপু

—ওকে,এখন বাইরে আয়,তোর জন্য চাউমিন বানিয়েছে আম্মু
অনেক টেস্ট হয়েছে,স্পেশালি তোর জন্য বানিয়েছে বলে কথা,টেস্ট তো হতেই হবে,তাড়াতাড়ি আয়,সব শেষ হয়ে যাবে।


কিছুদিন পর…
সকালে কলেজ ক্যান্টিনে বসে ফ্রেঞ্চ-ফ্রাই খাচ্ছে ইয়ানা, মিথিলা,রাজিয়া ও বৃষ্টি।রাজিয়া খেতে-খেতে বললো,

—কাজটা ভালো করলিনা ইয়ানা,তোদের বাসায় যেতে চাইছিলাম বলে আমাদের নম্বর এভাবে ব্লাকলিস্ট করে রেখে দিলি?

—ছিহ্ বান্ধবী,এটা কেমন হলো,তোর কাছে এটা আশা করিনি রে,আমরা তোদের বাসায় গেলে কি এমন ক্ষতি হতো শুনি,যে আমাদের ভয়ে আমাদের দু’জনের নম্বরই ব্লক করে দিলি (বৃষ্টি)

—হ্যাঁ,তোদের নিয়ে যাই আর তোরা দুজন আমার গুণধর হিটলার ভাইয়ের পিছনে লেগে আমার লাইফটা তামাতামা করে দে তাইনা,আমার ভাই কেমন ড্যান্জারাস জানিস না তোরা,জানলে জীবনেও যেতে চাইতি না,কখনোই নাহ্

—জানিনা,জানার জন্যইতো যেতে চাইছিলাম,কিন্তু তুই (বৃষ্টি)

—নো প্রবলেম,আজকে যাব আমরা,আজকে গিয়ে দেখে নিব কেমন হিটলার তোর ভাই,আমরাও কম যাইনা ওকে (রাজিয়া)

—লাভ নেই জানস্,ভাইয়া বাসায় নেই,উনি ঢাকা চলে গেছেন।

—কিহ্,কবে কখন?কোই আমাকে তো বলিসনি একবারও

—তোকে কেন বলবো রে,তুই আমার ভাইয়ের যাওয়া আটকে দিতি নাকি রে (হেসে দিয়ে বললো ইয়ানা)

—আটকাতাম মানে,আরে ইয়ার ডিরেক্ট কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিতাম আমি,তোর ভাবি হয়ে যেতাম ইয়ার, আর তুই আমাদের ফটো তুলে দিতি (হাসতে হাসতে বললো রাজিয়া)

রাজিয়া’র কথা শুনে রাগ উঠে গেলো ইয়ানা’র,হাতে থাকা প্লাস্টিকের সসের বাটিটা চাপ দিয়ে বিকৃত করে ফেললো, মিথিলা বিষয়টা বুঝতে পেরে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো,

—আরে ফান কম করে কর ইয়ার,সব বিষয় নিয়ে ফান করা ঠিক না,অনেকেরই প্রবলেম হয় (ইয়ানা’কে ইশারা করে বৃষ্টি ও রাজিয়ার উদ্দেশ্যে বললো মিথিলা)

রাজিয়া ইয়ানা’র দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়ানা রাগে ফুঁসছে,এর কারণটা বোধগম্য হলো না ওর,তাই বলেই ফেললো,

—জানস্,আমায় কি তোর ভাবি হিসেবে ভালো লাগবে না বল, এরকম রেগে যাচ্ছিস কেন,আমি কি দেখতে-শুনতে খারাপ?

—জাস্ট ডিসকাস্টিং,পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব পরছে নাকি বলতো,আমার ইন্তিহাজ ভাইয়া ছাড়া আর কাউকে কি চোখে পরেনা তোদের,যেখানে যাচ্ছি সেখানেই সব আমার ভাইকে নিয়ে পরছে,হুয়াই ইয়ার,এক ছেলেকে নিয়ে এতো টানাটানি কিসের,পৃথিবীতে তো আরও অনেক ছেলে আছে নাকি (ইয়ানা)

—মানে,আমার হিরো’র দিকে আবার কে তাকালো,তাকে তো আমি খু-ন করে ফেলবো,নাম বল একবার,জাস্ট নামটা বল

—রাজিয়া,চুপ কর।এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করিসনা প্লিজ,
দেখছিস তো ইয়ানা রেগে যাচ্ছে,তারপরেও এরকম করছিস কেন,ওকে আর রাগাসনাতো,চুপ কর এবার (মিথিলা)

—আমি ওকে রাগাতে যাব কেন,কিরে ইয়ানা,তুইকি আমার কথায় রাগ করছিস নাকি রে?আমাকে কি তোর পছন্দ নয় বল

—তোরা খাইতে থাক,আমি আসছি।ক্লাসে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে আমার (উঠে দাঁড়িয়ে বললো ইয়ানা)

—কেন রে,কি হয়েছে,আমরাও যাবো নাকি (বললো বৃষ্টি)

ইয়ানা কোনো কথার জবাব না দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেলো,বান্ধবীদের এসব কথাবার্তা একদম সহ্য হচ্ছিলো না ইয়ানা’র,ইন্তিহাজকে নিয়ে কেউ ভালোবাসার কথা বললে ভীষণ হিংসা হয় ইয়ানা’র,কিন্তু এর কারণটা ওর অজানা। রাগে ফুঁসতে থাকা ইয়ানা ক্লাসরুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কোথা থেকে আবির এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। আবিরে’র এভাবে এখানে উপস্থিত হওয়ার কারণটা বোধগম্য হলো না ইয়ানা’র,ওর ভাবনার মাঝেই আবির বলে উঠলো…

—হাই ইয়ানা,কেমন আছো,কি খবর,এখনো রেগে আছো কি?

আবিরে’র কথায় ওর দিকে ভ্রু-কুচকে তাকালো ইয়ানা,

—আই এম সরি ইয়ানা,ওইদিনের জন্য আই এম এক্সট্রিমলি সরি,প্লিজ মাফ করে দাও,একচুয়ালি তোমার ইগনোর্ড গুলো আমি সহ্য করতে পারিনি,তাই রিয়াক্ট করে ফেলেছি,সরি

—সামনে থেকে যাও,সিনক্রিয়েট করোনা প্লিজ,আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইন্টারেস্টেড নই,ক্লাসরুমে যাব,সরে যাও

—ইয়ানা,তোমার সঙ্গে আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে,প্লিজ
একটু সাইডে চলোনা,একটু নিরিবিলি কোথাও বসে কথা বলি।

—তোমার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই,যা ছিল সেইদিনই শেষ হয়ে গেছে,নতুন করে কোনো কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই
আর তোমার সাথে নিরিবিলি তে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠেনা

—ইয়ানা,প্লিজ,আমাকে বিশ্বাস করতে পারো,আমি খারাপ নই

—দেখো,যা বলার এখানেই বলো,আমি কোথাও যাবো না

—আচ্ছা,শোনো না।আমরা কি নিজেদের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারিনা,আই মিন আমরা প্যাচাপ করতে পারিনা?

—সরি,আই এম নট ইন্টারেস্টেড।কথা শেষ হলে এবার আসতে পারো,আমার লেট হয়ে যাচ্ছে,ক্লাসে যাব,সরে দাঁড়াও

কথাগুলো বলতে বলতে ইয়ানা চলে যেতে লাগলে আবির ওর হাত চেপে ধরলো,শক্ত করে ধরার কারণে ইয়ানা মোচড়ামুচড়ি করেও নিজের হাত কিছুতেই ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা,এমনি তেও মেয়েদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে ছেলেদের বলশক্তি বেশি হয়,ইয়ানা’র ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে,নিজের হাত মোচড়াতে মোচড়াতে ইয়ানা রাগিস্বরে বলতে শুরু করলো,

—হোয়াট দ্য হেল অল অফ ইউ আবির,হাত ছাড়ো আমার

—তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে ইয়ানা,তুমি এভাবে আমার সঙ্গে ব্রেকআপ করতে পারো না,একটা রিলেশন গড়ে ওঠা অনেক কঠিন কিন্তু সেটা ভাঙা অনেক সহজ তাইনা, লিসেন,আই লাভ ইউ,আই সত্যি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি, তুমি এভাবে উইথআউট রিজন আমার সঙ্গে ব্রেকআপ করতে করতে পারো না,যৌক্তিক কারণ তোমাকে দেখাতেই হবে বুঝেছো,বলো কেন তুমি এই ডিসিশন নিয়েছো,কি কারণ বলো

—দেখো,আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে ইচ্ছুক নই,আমার ভালো লাগছিলোনা তাই ব্রেকাপ করছি,এছাড়া কোনো কারণ নেই,এখন দয়া করে আমার হাতটা ছাড়ো,সবাই দেখছে প্লিজ

আবির ইয়ানা’র কথার তোয়াক্কা না করে ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো,হঠাৎ কোথা থেকে দুজন সুঠামদেহি ছেলে এসে ওদের সামনে বুকে দু’হাত গুজে দাঁড়ালো,

—হেই ব্রো,মেয়েটাকে এভাবে কোই নিয়ে যাস,ও-তো যেতে চা..

—ও আমার গার্লফ্রেন্ড,একটু ঝগড়া হয়েছে তাই এমন করছে, আমাদের মাঝে নাক না গলিয়ে নিজের চর্কায় তেল দে,সর সামনে থেকে,হিরো সাজার চেষ্টা করিস না,মে*রে এমন হাল করবো না,যে চেহারা’র নকশা বদলে যাবে,নিজেই নিজেকে চিনতে পারবি না,হিরোগীরি বাদ দিয়ে সামনে থেকে সরে যা

—কার চেহারা’র নকশা পাল্টাবে সেটা সময় বলে দেবে,এইযে হাতের মাসল দেখছিস,জিম করে বানানো,এটার প্রেশার না সবাই সহ্য করতে পারেনা,সো গলা নামিয়ে কথা বল।এনিওয়ে,
এইযে আপু,আপনি সাফ সাফ বলুনতো,আপনি নিজের ইচ্ছেতে ওনার সাথে যাচ্ছেন নাকি উনি আপনাকে ফোর্স করছে??

—উনি আমাকে জবরদস্তি তে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভাইয়া,ওনার সাথে জাস্ট কিছুদিন ভালো করে কথা বলেছিলাম কিন্তু উনি সেটাকে রিলেশনশিপ ভেবে আমাকে মেন্টালি টর্চার করছে, বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি সরে আসলেও এই ছেলেটা আমার পিছু কিছুতেই ছারছেনা,এভরিডে হ্যারাস করে যাচ্ছে আমাকে,আজকে না জানি কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলো,কলেজের সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে,কারণ এই ছেলেটাকে সবাই ভয় পায়,কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি বলে কথা।

—কি ব্রাদার,এবার চেহারা’র নকশা কার বদলাবে বল,হাতের কাজটা শুরু করে দি কি বলিস (হাতের আঙুল ফুটাতেফুটাতে)

—দেখ,তোদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই,এই একটা মেয়ের জন্য আমার সঙ্গে তোরা এরকম করতে পারিস না

—কেন,সব হাওয়া ফুস,টায়ার পানচার হয়ে গেলো নাকি রে

কথা শেষ করেই ছেলেগুলো আবির’কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে লাথি দিতে শুরু করলো,আজকে আবিরের দলের কেউ না আসায় আবির চাইলেও কিছু করে উঠতে পারছেনা,এই অপরিচিত ছেলেদুটো সত্যিই অনেক পাওয়ারফুল,ওদেরকে মোকাবিলা করা আবিরে’র একার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।ইয়ানা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করলে বৃষ্টি এসে ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে ভীড় থেকে বের করে নিয়াসলো, অলরেডি এইখানে ভালো ভীড় জমে গেছে,বাইরে আসতেই রাজিয়া ইয়ানা’কে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

—কিরে,সব ঠিকই তো ছিল,হঠাৎ করে কি হলো বলতো??

—সব পরে শুনবো,এখন ইয়ানা’র বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন,যা পরিস্থিতি দেখছি,কোনো গন্ডগোল হয়ে যেতে পারে,ইয়ানা বইন তুই এখন বাড়ি যা,আজ আর কোনো ক্লাস হবে না শিওর
এইকয়দিন আর কলেজে আসিস না বুঝলি (বললো মিথিলা)


বিকেলে সোফার ওপর আপসেট হয়ে শুয়ে আছে ইয়ানা,হঠাৎ ওর আম্মু ড্রয়িং রুমে এসে ইয়ানা’র উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,

—তোকে আমরা এসব করতে কলেজে পাঠাই ইয়ানা,বান্ধবী দের থেকে এসব শিখছিস তাইনা, ছিছিছি
পড়াশোনা না করে তুই এসব করে বেড়াচ্ছিস,আমরা ভাবতেও পারিনি তুই এতো নিচে নেমে গেছিস,আজ থেকে তোর ফোন চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই,এই ফোনটাই যত নষ্টের গোরা
আজ থেকে তোর পড়াশোনাও বন্ধ,তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া

—কি করেছি আমি,এমন করছো কেন,কি হয়েছে সেটাতো বলো,সবটা না বলে এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন,কি করেছি আমি

—এতবড় অপরাধ করা স্বত্তেও তোর মধ্যে কোনোরকম অপরাধবোধ নেই দেখছি,এতোটা নির্লজ্জ হয়ে গেছিস,তোকে আমার নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতেই লজ্জা লাগছে।

—কিন্তু কি করেছিটা কি আমি,সেটা বলো প্লিজ,আমি কিছু বুঝতে পারছি না (চেচিয়ে বললো ইয়ানা)

—সিনহা কে কি বলেছিস তুই,ওকে কল করে নাকি বলেছিস ইন্তিহাজের সাথে তোর প্রেমের সম্পর্ক আছে,ছিছিছি ইয়ানা…

—সিনহা,সিনহা টা আবার কে,সিনহা কে আম্মু,চিনলামনাতো?

—তোকে আমি নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম, তার এই প্রতিদান দিলি তুই,আমার ভাবতেও ঘিন্না করছে।তুই ভাবলি কি করে একই বাড়িতে নিজেদের ছেলেমেয়ের মধ্যে আমরা বিয়ে দিবো,আমাদের কি মানসম্মান নেই নাকি রে, তোর থেকে আমি এটা আশা করিনি ইয়ানা (খাদিজাতুলনেসা)

—কেউ ক্লিয়ার করে বলবে আমাকে,কি বলছো তোমরা???
কিসের বিয়ে,কে এই সিনথিয়া,আমি আবার তাকে কখন কি বললাম,কিছুই মাথায় ঢুকছেনা আমার,পাগল হয়ে যাব আমি

—নাটক করিসনা ইয়ানা,আজ বুঝতে পারলাম,ভাইয়া কে নিয়ে কারোর মুখে ভালোবাসার কথা শুনলে তুই কেন সিনক্রিয়েট করতিস,তুই মনে মনে পছন্দ করতিস ভাইয়াকে তাইনা?আজ একারণেই তুই ভাইয়ার বিয়ে ভাঙার জন্য সিনহা আপুকে কল করে আজেবাজে কথা বলছিস,যাতে বিয়ে ভেঙে যায় রাইট?

—কিহ্,ইন্তিহাজ ভাইয়ার বিয়ে মানে?কবে কার সাথে?

—জানিসইনা মনে হচ্ছে,সিনহা আপুর সাথে সামনে মাসে ইন্তিহাজ ভাইয়ার বিয়ে জানিস না নাকি,তাইতো তুই আজ এই কাজ করেছিস,কিন্তু আফসোস তোর প্ল্যানিং ফল্প করেছে রে ইয়ানা,ভাইয়া ও সিনহা আপু অনেক আগে থেকেই একে-অপরকে ভালোবাসে,একে-অপরকে চিনে-জানে,তাই তোর এসব কথা সে একবিন্দুও বিশ্বাস করেনি,এই বিয়ে হবেই।ওহ্ হ্যাঁ তোকে থ্যাঙ্কস,বিয়ের ডেট টা এভাবে এগিয়ে দেওয়ার জন্য

—মানে,কি বলছিস তুই,ভাইয়ার বিয়ে অথচ আমিই জানিনা

—কালকেই ভাইয়ার বিয়ে,রেডি থাকিস বিয়ে দেখার জন্য

—নাহ্,এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না,তোমরা মিথ্যা বলছো আমাকে তাইনা,মজা করছো আমার সাথে,বলো,বলো না

—যেটা সত্যি সেটাই বললাম,বিয়ে হচ্ছে আর সেটা কালকেই

বহ্নি’র কাছে ইন্তিহাজের বিয়ের কথা শুনে “না” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো ইয়ানা……..

To be continue……