তোমার চোখের অনন্ত মায়ায় পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
241

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১৪

বহ্নি’র কাছে ইন্তিহাজের বিয়ের কথা শুনে “না” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো ইয়ানা,

—নাহ্,এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না,আমি হতে দিবোনা। হবে না এই বিয়ে,কিছুতেই না (বিড়বিড় করছে ইয়ানা)

ইয়ানা’র চিৎকার শুনে রুমে ছুটে আসলো বহ্নি আর তৃষা,ওরা ড্রয়িংরুমেই ছিল,রুমে এসে দেখে ইয়ানা বিড়বিড় করছে।তৃষা ইয়ানা’কে ধাক্কা দিয়ে বললো,

—আপু,আপু,এই আপু,কার বিয়ে হতে দিবেনা,কিসের বিয়ে?

তৃষার ধাক্কায় হুসে আসলো ইয়ানা,হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন,ইয়ানা এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো।হুঁশে আসতেই ইয়ানা ভ্যাবলাকান্তের মতো চেয়ে রইলো তৃষার দিকে।তৃষা আবারও বলে উঠলো,

—বহ্নি আপু,ইয়ানা আপু মনে হয় স্বপ্নে নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখেছে (হাসতে হাসতে বললো তৃষা)

তৃষা’র কথায় চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালো ইয়ানা,বহ্নি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,

—ওররে বাবা,আমাদের ইয়ানা তাহলে আজকাল নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখছে নাকি,কাকিয়াকে বলতে হবে মনে হচ্ছে

—আপু তুমিও শুরু করলে?
আরে এমন কিছুই নয়,এমনিই একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম জাস্ট,তাছাড়া আর কিছুই নয়।তোমরাও না,অলওয়েজ বেশিবেশি বুঝে বসে থাকো (গাল ফুলিয়ে বললো ইয়ানা)

বহ্নি বিছানায় আরাম করে বসে মুচকি হেসে বললো,

—হয়েছে,এসব কথা রাখ।আগে এটা বল তোর কি শরীর খারাপ নাকি বোন?

—কোই না-তো,কেন বলোতো?

—তুইতো কলেজ ফাঁকি দেওয়ার মেয়ে নস,পড়া নাহলেও রেগুলার ক্লাস করিস।তাহলে আজ কলেজ যেতে না যেতেই বাড়ি চলে আসলি আবার এই অবেলায় পরেপরে ঘুমচ্ছিস,কি ব্যাপার বলতো?

—সেরকম কিছু না আপু,ওই এমন-ই মাথাব্যথা করছিলো একটু তাই

—ওহ্,কিন্তু কলেজ থেকে এভাবে চলে আসলি কোনো ঝামেলা করছিস নাকি,তুই যা দুষ্টু

—না আপু,সত্যিই কিছু হয়নি (ঘাবড়ে গিয়ে)

—আচ্ছা শুয়ে থাক,আমি একটু বান্ধবীর বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।


১৫দিন পর…
একয়দিন বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে না গেলেও আজকে বাধ্য হয়ে কলেজে আসতে হলো ইয়ানা’র,কারণ ইয়ারচেন্জ পরিক্ষার জন্য টাকা দিয়ে এডমিট কার্ড তুলতে হবে।সামনে মাসের ৫তারিখ থেকে পরিক্ষা।
ইয়ানা’র কথায় মিথিলা ইয়ানা’কে নিতে এসেছে,মিথিলা’র সঙ্গেই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো ইয়ানা,বড্ড বেশিই ভয় করছে ওর,যদি আবির ওর কোনো ক্ষতি করে দেয় তখন কি হবে,আবির রাজনীতি করে,ওর যথেষ্ট পাওয়ার রয়েছে।
মিথিলার সঙ্গে কলেজে ঢুকতেই একজায়গায় জটলা দেখতে পেলো ওরা,কৌতুহল বসত ভীড়ের জাছে এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলো,

—এক্সকিউজ মি আপু,এখানে কি হচ্ছে বলবে?

—র‍্যাগিং করার অপরাধে পুলিশ এসেছে,কলেজের ওই বেয়াদব টাকে নিয়ে যেতে এসেছে,ঠিকই আছে,মেয়েদের হ্যারাস করলে এরকমই হয়,বদমাইস টার জেল হবে নিশ্চিত

—কে,কে কি করেছে?

—আবির,ওই বদমাশ টা ছাড়া আর কার এরকম বুকের পাটা আছে বলো।
কলেজে নতুন একটা মেয়ে এসেছে,ফার্স্ট ইয়ারাই পড়ে,কিন্তু কখনো ক্লাস করেনি,পরিক্ষার জন্য এডমিট নিতে এসেছে,এই থানার ওসি’র মেয়ে।নতুন মেয়েকে দেখে আবির আর ওর দলবল র‍্যাগিং করা শুরু করে দিয়েছে,এক পর্যায়ে আবির ওই মেয়েটার ওড়না খুলে নিয়ে সবার সামনে লিপ*কিস করেছে।
মেয়েটা অনেক কান্না করছিলো জানো।মেয়েটা যে পুলিশের মেয়ে এটাতো আর ওরা জানতো না,মেয়েটা ওর বাবাকে কল করার কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটার বাবা পুলিশফোর্স নিয়ে চলে এসেছে,আজকে তো আবির শেষ,জেল-কার্স্টাডিতে ওকে যেতেই হবে,আচ্ছা ফেঁসেছে এবার

মেয়েটার মুখ থেকে সবটা শুনে ইয়ানা ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,গিয়ে দেখে ব্লাক কু্র্তি পরিহিতা এক সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটার চোখেমুখে রাগ-ক্ষোভ স্পষ্ট,চক্ষু তার অশ্রুজলে সিক্ত।মেয়েটিকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে একজন কমবয়সী লেডি কনস্টেবল।
এক সাইডে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির,ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরছে ঠোটের কোণ বেয়ে,আবিরের পেছনে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ওর ফ্রেন্ডরা।আবিরের সামনে একজন মধ্যবয়স্ক পুলিশ অফিসার ডান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে আছে,অফিসার যে কি পরিমাণ ক্ষেপে আছে সেটা ওনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কলেজের প্রফেসর,লেকচারার,বিভিন্ন স্টাফ,স্টুডেন্টস সহ উপস্থিত সকলে নানা ধরনের কথা কানাকানি করছে, অফিসারের এক হুংকারে সবাই থেমে গেলো।কোনোদিকে খেয়াল না করে ইয়ানা কিছুটা জোরেই বলে উঠলো,

—বেশ হয়েছে,বদ*মায়েশ কোথাকার।রাজনীতি করে বলে কেউ ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়না,সেই সুযোগে মেয়েদের সঙ্গে কম খারাপ তো করিসনি,মেয়েদের তো মানুষ মনে করিসনা,এবার কেমন লাগে দেখ,না জেনে সাপের লেজে পা দিয়েছিস,এবার বিহীত কিছু একটা হবেই।অফিসার একদম ছারবেননা একে,শয়তা’নটার জন্য আমি অনেকদিন কলেজ আসতে পারিনি,আমাকেও অনেক হ্যারাস করেছে,ইভেন নানান হুমকিধামকিও দিয়েছে।
এই অসভ্য ছেলের কীর্তির শেষ নেই,এমন অনেকেই আছে যাদের সঙ্গে এরচেয়েও খারাপ করেছে,ভয়ে চুপ করে থাকে সবাই তাই।

এতক্ষণে একদমে কথা গুলো বললো ইয়ানা,কথা বলা শেষ করে খেয়াল করে দেখে সবাই ওর দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে,অফিসার সেটা নিয়ে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আবির আর দলবলকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলো।

—আপু,আপনি যান।আমি এডমিট নিয়ে আসছি (লেডি কনস্টেবল কে বললো মেয়েটি)

কনস্টেবল যেতে নারাজ হলে অফিসার নিজের মেয়েকে বললেন,

—মামনি,তুমি এডমিটকার্ড উঠিয়ে নাও,ও তোমাকে পৌঁছে দেবে।
কলেজের সিকিউরিটি,রুলস দেখলাম তো।আমি আজকেই সবার বিরুদ্ধে স্টেপ নিবো,কলেজে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটার দিকে কোনো খেয়ালই নেই কলেজ কতৃপক্ষের,ম্যানারলেস লোকদের নিয়োগ দিয়েছে কে

—বাবা,এসবের দরকার নেই।
আমি একাই পৌঁছে যাব,তুমি যাও,আর কোনো প্রবলেমস হবে না (মুচকি হেসে)

—ঠিক আছে,তুই যা ভালো বুঝিস।কেউ কিছু বললে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ইনফর্ম করবি কেমন।
আমি এখন আসি,আজ এই জানো’য়ার গুলোকে যদি কোর্টে চালান না করেছি তো আমিও ইন্সপেক্টর হামিদ খান নই।

অফিসার ফোর্সদের নিয়ে চলে গেলে ভীড় কমতে শুরু করলো,প্রিন্সিপাল মেয়েটির সামনে গিয়ে বললো,

—মামনী,নেক্স্ট টাইম তোমার কোনোরকম অসুবিধা হলে আমাকে জানাবে,আজ আমাদের গাফিলতির জন্যই এই অবস্থা,আশা করি ভবিষ্যতে কখনো এরকম হবে না ইনশাআল্লাহ।অফিসে এসো,তোমার কার্ড দিচ্ছি।

সবাই চলে যেতে শুরু করলে ইয়ানা আর মিথিলা গিয়ে মেয়েটির সামনে দাড়ালো,ইয়ানা হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

—হায়,আই এম ইয়ানা জামান
তুমি?

—অথৈ খান (হাত মিলিয়ে)

—তোমাকে থেঙ্কস (মুচকি হেসে বললো ইয়ানা)

—কেন? (ভ্রুকুচকে)

—এই বদ*মাইস টার শাস্তির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
জানো এই বিয়াদপটার জন্য আমি অনেকদিন কলেজে আসতে পারিনি,এরজন্য বাড়িতে অনেক বকাবকিও শুনেছি।এবার থেকে নিশ্চিন্তে কলেজে আসতে পারবো।
আচ্ছা,তুমিতো আমাদের ব্যাচমেট রাইট,তুমি কোন ডিপার্টমেন্ট?

—আর্স,তুমি?

—সেম,কিন্তু তোমাকে তো আগে কখনো দেখিনি

—আমার বাবা এই থানায় ট্রান্সপার হওয়ার কারণে আমাকে এই কলেজেই এডমিট করেছে,কিন্তু আমি আর আম্মু এতদিন যশোরে ছিলাম,আমার ছোট ভাইয়ের জন্য।ওর পরিক্ষা ছিল তাই

—ওহ্,তাহলে আবার চলে যাবে?

—না,এবার এখানেই শিফট করেছি বাবার সাথে,ছোটো ভাইয়ের ফাইনাল এক্সাম শেষ,এবার এখানকার ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি করে দিবে।

—ওহ্,আচ্ছা
চলো,কার্ড তুলে নি,পরে আড্ডা দিব।

—শিওর,চলো

—এই অথৈ শোনোনা,আমি কিন্তু অনেক বেশি কথা বলি,প্লিজ মাইন্ড করোনা হ্যা,আমি এইরকমই (হাসতে হাসতে বললো ইয়ানা)

—ইট’স ওকে,আমিও অনেক কথা বলি (মুচকি হেসে)

সবাই অথৈ নামের মেয়েটার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে,কানাঘুষাও চলছে জোরকদমে,ইয়ানা সবার দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অথৈ এর হাত ধরে অফিসে নিয়ে গেলো।


কিছু মাস পর…
এক কফিশপে নিজের উডবি হাজবেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছে বহ্নি,সঙ্গে ইয়ানা’ও রয়েছে।১০মিনিট হলো কাঙ্খিত ব্যক্তিটির জন্য ওয়েট করছে ওরা।
অবশেষে বহ্নি’র উডবি হাজবেন্ড ইউসুফ হোসেন সেখানে উপস্থিত হলো,টেবিলে বহ্নি’র অপজিটে বসে পরলো সে। লাইফে ফার্স্ট টাইম এভাবে কোনো ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসা,ভীষণ নার্ভাস লাগছে বহ্নি’র।বহ্নি কে এভাবে নার্ভাস হতে দেখে ইয়ানা বহ্নি’র হাতের ওপর হাত রেখে বললো আশ্বাস দিয়ে বললো,

—এরকম নার্ভাস হলে কি করে হবে বলোতো,রিল্যাক্স আপু।
অনেক কষ্টে ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করে বিয়ের আগেই তোমাদের দেখা করাতে নিয়াসছি যাতে আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা ঠিক থাকে,আগে থেকেই সব জড়তা কেটে যায়
এখন সবটা ভেস্তে দিও না (ফিসফিস করে বললো ইয়ানা)

—তুই এখানেই বসে থাকবি কিন্তু,একদম উঠবি না

—পাগল নাকি,তোমাদের দুজনের মাঝে আমি কেন কাবাব মে হাড্ডি হতে যাব হুম।আমি সাইডে আছি,তোমরা কথা বলো।
এইযে দুলাভাই,আপনি কিন্তু জিতছেন।আমার আপুর মতো মেয়ে আর দু’টো পাবেন না।
আপনার ভরসায় ওকে রেখে গেলাম,আপনারা দু’জন কথা বলুন আমি সাইডে আছি (মুচকি হাসি দিয়ে বললো ইয়ানা)


কফিশপের বাইরে একটা চা-স্টলে বসে আছে ইয়ানা,নজর তার সামনে থাকা ফুচকা’র দোকানের দিকে।কিন্তু ইন্তিহাজের এভাবে চলে যাওয়ার পর থেকে ইয়ানা আর একবারও ফুচকা খায়নি,বলতে গেলে কিছুটা রাগ,জিদ ও অভিমানে।
এই কয়েকমাসে ইন্তিহাজ একবারের জন্যও ইয়ানা’র সঙ্গে কথা বলেনি,অথচ ইয়ানা ওকে নিয়ে কতো কিছুই না ভেবে নিয়েছিলো,কতো স্বপ্নই না বুনেছিলো (মনে হতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো ইয়ানা)
আচমকা একটা ছেলে এসে বেঞ্চে ইয়ানা’র পাশে বসতেই ইয়ানা কিছুটা সরে বসলো,রাগি দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটার দিকে।ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম,পরনে জিন্স সাথে সাদা হুডি জ্যাকেট।

—দেখে বসতে পারেন না,এতগুলো বেঞ্চ থাকতে এখানেই বসতে হলো আপনার,মেয়েদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে ভালো লাগে তাইনা (দাঁত কিড়মিড় করে বললো ইয়ানা)

—এক্সকিউজ মি ম্যাডাম,আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।
তাকিয়ে দেখুন,ওই বেঞ্চগুলো ভেজা,তাই এখানে বসেছি,আর সরি আপনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা টা দিইনি

—আপনাদের মতো ছেলেদের কে না আমার ভালো করেই চেনা আছে,আমাকে ভুজুংভাজুং বুঝ দিতে আসবেন না।
দেখে তো এই এলাকার মনে হচ্ছে না,তাই আমাকে চিনেন না। ফার্স্ট টাইম বলে মাফ করে দিলাম,নেক্সট টাইম কখনো এমন হলে এমন হাল করবো না,আমৃত্যু মনে রাখবেন,মাইন্ড ইট

কথাগুলো বলেই আবারও কফিশপে প্রবেশ করলো ইয়ানা,আরও প্রায় ১০ মিনিট পরে ইউসুফ হোসেন কে বিদায় দিয়ে বহ্নি’কে নিয়ে বাসায় আসলো।
বাড়িতে আজ রমরম আয়োজন চলছে,নানারকমের রান্না হচ্ছে।সুস্বাদু খাবারের গন্ধে পুরো বাড়িটা যেন ম ম করছে,
কিন্তু এতো আয়োজন কিসের সেটাই বুঝতে পারছে না ইয়ানা।বাড়ির সবার ওপরে অভিমান হওয়ায় কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করাও হয়নি।
গতকালকেই শিমলা কে নিয়ে আমরূপালি জামান এখানে এসেছে,বাড়ির লোকজনদের কিভাবে ব্রেনওয়াশ হলো সেটাই বুঝতে পারছে না ইয়ানা,ইয়ানা ছাড়া একমাত্র বহ্নি ব্যতীত বাড়ির সকলে শিমলা’র সঙ্গে ইন্তিহাজের বিয়ে টা মেয়ে নিয়েছে,ইন্তিহাজেরও এক্সাম শেষ।সে বাসায় চলে আসলে বহ্নি’র বিয়ের পরপরই শিমলা’র সঙ্গে ইন্তিহাজের বিয়েটা হবে। মূলত এগুলো জানার পর থেকেই সবার প্রতি ইয়ানা’র এক চাপা অভিমান জন্মেছে,কিন্তু সেটা অপ্রকাশিত।

ইয়ানা কারোর সঙ্গে কথা না বলে নিজের রুমে এসে দেখে বিছানার ওপরে তৃষা ও শিমলা বসে থেকে সাপ-লুডু খেলছে। ইয়ানা’কে দেখে শিমলা বললো,

—ইয়ানা,আইসো বসো।
আমরা তিনজনে সাপ খেলি,অনেক মজা লাগবো

ইয়ানা একনজর শিমলা’র দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে ওয়াসরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে,সকাল সাড়ে ১১টা বাজে,গোসলের সময় এখন।
ইয়ানা গোসল শেষে তৃষা’কে বেশকয়েকবার ডাকলেও কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না,বাধ্য হয়ে গায়ে বাথটোব টা পরে নিলো ইয়ানা,তখন কাপড় নিয়াসতে ভুলে গেছে সে।
বাথটোব টা ভালো ভাবে পরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হলো ইয়ানা,তৃষা,শিমলা কেউ নেই রুমে।
ইয়ানা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বেলকনির দিকে যেতে লাগলো, ওখানেই কাপড় মেলে দেওয়া আছে।বেলকনির দিকে এগোতেই পেছন থেকে পরিচিত পুরুষালী কণ্ঠস্বর পেয়ে থেমে গেলো ইয়ানা,চমকে ঘুরে তাকালো পেছনে।তাকিয়ে দেখে ইন্তিহাজ পায়ের ওপর পা তুলে স্টাডি টেবিলের চেয়ারে বসে আছে।আচমকা ইন্তিহাজ কে এখানে দেখে অবাক হওয়ার কথা হলেও মোটেও অবাক হলো না ইয়ানা,শান্তভাবে বললো,

—আবারও তুমি?

—তুই এই অবস্থায় বেলকনিতে যাচ্ছিস কেন,ছেলেদেরকে তোর এই হট রূপ দেখানোর জন্য (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইন্তিহাজ)

—সবসময় আমার স্বপ্নে এভাবে এসে আমাকে বিব্রত কেন করো ভাইয়া,তুমি কি বুঝোনা আমার কষ্ট হয়।
ঘুমের ঘোরেও আসো,আবার জাগরণেও আসো,এমন চলতে থাকলে আমি তো পাগল হয়ে যাব

—একদম উল্টাপাল্টা কথা বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবি না,তুই কোন সাহসে বাথটোব পরে বেলকনিতে যাচ্ছিলি সেটা বল

ইয়ানা ইন্তিহাজের কথার জবাব না দিয়ে আবারও হাঁটা দিতেই ইন্তিহাজ উঠে গিয়ে ইয়ানা’র হাতে ধরে টান দিতেই ইয়ানা হুমড়ি খেয়ে পরলল ইন্তিহাজের বুকে।
কিছুসময় অতিবাহিত হতেই স্পর্শ অনুভব করতে পেরে চমকে উঠলো ইয়ানা,তারমানে সত্যিসত্যিই ইন্তিহাজ এসেছে,এটা ওর ভ্রম নয়।
ইয়ানা ইন্তিহাজের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করলে ইন্তিহাজ ধমক দিয়ে বললো,

—স্টিল দাঁড়িয়ে থাক,নড়াচড়া করলে তুলে আছার মা*রবো।
আমার প্রশ্নের উত্তর দে,কোন সাহসে এই অবস্থায় বেলকনিতে যাচ্ছিলি বল

—আআমি কাপড় নিয়ে যেতে ভুলে গেছিলাম,কাপড়গুলো বেলকনিতে মেলে দেওয়া,তাই নিয়াসতে যাচ্ছি।ছাড়ো তুমি আমাকে,তোমার হবু বউয়ের কাছে যাও,এখানে কেন এসেছো…….

To be continue…..

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১৫

—ছাড়ো তুমি আমাকে,তোমার হবু বউয়ের কাছে যাও,এখানে কেন এসেছো (নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় মোচড়াতে মোচড়াতে বললো ইয়ানা)

—থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিব,দু’দিন পর পর কি ধরনের আচরণ এগুলো,আমার হবু বউ মানে,কিসের হবু বউ

—এমন ভাব করছো,যেন কিছুই জানোনা।
তুমি পারমিশন না দিলে মামনি,চাচ্চু জীবনেও বিয়েতে রাজী হতো না,তুমি পারমিশন দিছো বলেই ওরা রাজি হয়েছে।

—হোয়াট ননসেন্স,কি যা-তা বলছিস?

—নাটক করো না,এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে যেন কিছুই জানো না,তোমার উডবি ওয়াইফ বাড়িতেই আছে,যাও তার কাছে যাও।আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা স্ট্রং করে নাও।আমাকে ছাড়ো,যাকে ধরলে কাজ হবে তাকে ধরো।

ইন্তিহাজ এবার ইয়ানা’কে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো,ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করলো,

—ক্লিয়ার কাট কথা বল ইয়ানা,কিসের বিয়ে,কার সঙ্গে?

ইয়ানা জবাব দেওয়ার আগেই শিমলা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,

—আসবো?

—হ্যাঁ হ্যাঁ আয়,আসবিনা কেন?
কিছুদিন বাদে তুইতো এবাড়ির বউ হবি,তোর আবার পারমিশনের কি দরকার (দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইয়ানা)

—আসলে আমি ওনার কাছে একখান কথা জানতে আইছিলাম

—আচ্ছা বল,আমি বাইরে যাচ্ছি

কথাটা বলেই ইয়ানা ইন্তিহাজের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে লাগলে ইন্তিহাজ চোখ পাকিয়ে তাকালো,ইন্তিহাজ কিছু বলার আগেই শিমলা বললো,

—তুমিও থাকো,পারসোনাল কুনো কথা না।
আমি জানতে আইছিলাম যে আপনের আলমারির ওই সাইডে রাখা শার্টগুলান কি কেচে দিবো?
আর আপনের ঘরের জিনিসপত্তরগুলান কি মুইছা দিবো

—হোয়াট,তুই আমার ঘরে মানে? (উত্তেজিত হয়ে বললো ইন্তিহাজ)

—আজ্ঞে চাচিমা কইছে আপনের ঘর পরিষ্কার করার লাইগা, অনেকদিন নাকি পরিষ্কার করা হয়না,ঝুলময়লা পরছে,সাফ করা লাগবে।আলমারির কাপড়গুলানও তো মনে হয় ময়লা হইছে।

—তুই আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস,উইথআউট পারমিশন তুই আমার রুমে ঢুকেছিস,আবার আমার আলমিরাতেও হাত দিয়েছিস,হাউ ডেয়ার ইউ (চেচিয়ে বললো ইন্তিহাজ)

প্রথমবার ইন্তিহাজের এমন রিয়াকশন দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো শিমলা,ও আগে কখনো ইন্তিহাজ কে এরকম রিয়াকশন করতে দেখেনি।
শিমলা মাথা নিচু করে বললো,

—ওইরকম কইরা চেঁচাচ্ছেন কেন,আমি তো কোনো অন্যায় করিনি,আপনের কোনো জিনিস নষ্টও করিনাই।

ইন্তিহাজ কিছু না বলে বেলকনি থেকে ইয়ানা’র সালোয়ার কামিজ এনে ইয়ানা’র হাতে দিয়ে বললো,

—গো,তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আয়।
আমার শিমলা’র সাথে পারসোনাল কথা আছে

ইন্তিহাজের কথায় ইয়ানা ভ্রু-কুচকে তাকালে ইন্তিহাজ ধমক দিয়ে বললো,

—কি,কথা কানে যায়না?যেতে বলছিতো

ইয়ানা আর একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো,ইন্তিহাজ এবারে শিমলা’র দিকে তাকিয়ে দাঁতে কটমট করে বললো,

—হোয়াট ইজ দিস শিমু,তুই আবারও এগুলো শুরু করেছিস?
আমি কি শুনছি এগুলো,তুই জানিস না আমি ইয়ানা’কে ভালোবাসি,তারপরও তুই…

—কি করমু কন,আমি অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কেউ শুনেনাই,আমার মা আমারে দিব্যি দিছে বিয়া করাই লাগবো।
দাদি আপনের বাপ-মায়েরেও মনে হয় এইভাবেই রাজি করাইচে

—তোর কি কোনো পছন্দের কেউ আছে শিমু? (গম্ভীর ভাবে)


রাতে…
বিছানায় ওপর হয়ে শুয়ে থেকে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করছে ইয়ানা,তৃষা বহ্নি,খাদিজাতুলনেসা বেশকয়েকবার ডিনারের জন্য ডাকতে আসলেও ইয়ানা যায়নি,তারা সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে।অবশেষে শেষ অস্ত্র ইন্তিহাজ হাজির হলো।
ইন্তিহাজ রুমে ঢুকে দেখে ইয়ানা কাঁচা মরিচে একটু পরপর কামড় দিচ্ছে আর মনযোগ দিয়ে ফোন টিপছে,ঝালে ইয়ানার চোখ থেকে পানি পরছে,চোখমুখ ফুলে গেছে।অতিরিক্ত মনোঘাত পেলে,রাগ হলে ইয়ানা এই কাজ করে,ঝাল খাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে আরও শাস্তি দেয়,কেন নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা সেই জিদেই সচরাচর এটা করে থাকে ইয়ানা,পাগ*লিটা বুঝেওনা এতে কারোর কিছু নয় ক্ষতি টা ওর নিজেরই হবে।কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে ইন্তিহাজ রুমে প্রবেশ না করে ডায়নিং টেবিলে গেলো,ইন্তিহাজ কে দেখে খাদিজাতুলনেসা বললেন,

—কোইরে,ইয়ানা কোই?
ওকে নিয়াসতে বললাম না তোকে?মেয়েটা ছোটো থেকেই আমাদের কারোর কথা না শুনলেও তোর কথা ঠিকই শুনে,সেই সকালে ভাত খেয়েছে,তারপর বাইরে থেকে এসেই খাওয়াদাওয়া করেনি।মেয়েটা যা অভিমানি,কি হয়েছে আবার কি জানি

—আহ্ ভাবি,ছেলেটা আজকেই আসলো,ওকে খেতে দাও।আমার মেয়ে কিরকম জানো না,খিদা লাগলে দেখো এমনই ছুটে চলে আসবে,কথায় কথায় এরকম খাওয়াদাওয়া ছেড়ে বসে থাকবে,আর আমরা ওকে বুঝায়-বুঝায় নিয়াসবো,ও কি বাচ্চা নাকি।এরকম করলে ও আরও লাই পেয়ে যাবে, মেয়েতো বড় হচ্ছে,স্বভাব চেন্জ না করলে শশুরবাড়ি গিয়ে কি করবে বলোতো (আমেনা খাতুন)

—আমেনা,বেশি শাসনেও কিন্তু ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়,তাদেরকে ভালোবেসে বুঝাতে হয় বুঝলি।আচ্ছা কারোর কিছু করতে হবে না,আমিই যাচ্ছি ওর কাছে

—আম্মু,সেসবের প্রয়োজন নেই।
পিচ্চিটার সাথে অনেকদিন খাওয়া হয়না,তুমি বেশি করে খাবার সাজিয়ে দাও,ছেলেবেলার মতো একসাথে খাব আজ। না খেলেই পিটুনি হবে (মুচকি হেসে বললো ইন্তিহাজ)

—এতো ব্যতিব্যস্ত হয়োনা তো খাদিজা,ওকে বেশি করে খাবার দাও,ওরা ভাইবোন একসাথেই নাহয় খাক (ইয়াকুব জামান)

—ভাইয়া,তুমি কি ইয়ানা আপুকে মুখে তুলে খাইয়ে দিবে (তৃষা)

—হুম,কেন?

—বাব্বাহ্,শিমলাপু কে তো সেদিন খাইয়ে দিলেনা,তুমি নাকি এসব পারো না।কিছুদিন পরে শিমলা আপু আমাদের ভাবি হবে,তুমি আমাদের হবু ভাবিকওতো খাইয়ে দিতে পারো।এরকম করলে শুনেছি ভালোবাসা বাড়ে।

তৃষা’র কথা শুনে বিষম খেয়ে উঠলো শিমলা, ইয়াকুব জামান ও আয়ুব জামান।আমরূপালি জামান বলে উঠলো,

—আজকালকার সব ছেলেমেয়ে দেখি অল্প বয়সেই পেকে গেছে,বাপ-মা গুরুজনদের সামনে কিসব বলে এরা,ছিছিছি
কোথায় কি বলা লাগে তাও জানে না

—তৃষা,কি ধরনের কথাবার্তা এগুলো,পেকে গেছিস তাইনা (রেগে বললেন আমেনা খাতুন)

বহ্নি ডিনার করতে এসে ডাইনিং টেবিলে শিমলা কে দেখে খাদিজাতুলনেসা কে বললো,

–আম্মু,আমি এই মেয়েটার সঙ্গে খেতে বসতে পারবো না,আমার খাবার রুমে পাঠিয়ে দিও (বলেই চলে গেলো বহ্নি)

ইন্তিহাজ নিজের মায়ের থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ইয়ানা’র রুমে এসে দেখে ইয়ানা ঝালে শোষাচ্ছে,কেমন একটা করছে।
ইন্তিহাজ দরজা লক করে দিয়ে খাবারের ট্রে টা রেখে জুসের গ্লাস টা ইয়ানা’র সামনে ধরলো,ইয়ানা গটগট করে পুরো জুস শেষ করার পরেও শোশাচ্ছে,ওর নাক কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বেরুচ্ছে,ইন্তিহাজ ধমক দিয়ে বললো,

—তোকে কে বলেছে মরিচ চিবাতে,বাড়িতে কি খাবারের অভাব পরছে,বেয়াদব কোথাকার।কয়টা মরিচ খাইছিস

—৫টা (কোনমতে বললো ইয়ানা)

—তুই জানিস ঝাল খেতে পারিস না,তাহলে কেন করিস এসব?
ওহ্ গড আমি পাগল হয়ে যাব এই মেয়েকে নিয়ে

—আমাকে নিয়ে পাগল হতে কে বলেছে,আহ্হহহ যাও না তোমার শিমুর সাথে ইটিসপিটিস উহ্হহ পারসোনাল কথা বলো যাও,উমম্ (ঝালের চোটে কোনোরকমে বললো ইয়ানা)

ইয়ানা’র কথা শুনে এতক্ষণে বুঝতে পারলো ইন্তিহাজ,কি কারণে ইয়ানা রেগে আছে,এই ব্যাপার তাহলে।

ঝাল সহ্য করতে না পেরে ইয়ানা নিজেই নিজের মাথার চুল ধরে টানতে লাগলো,এই মরিচগুলো একটু নাহ না,অনেক বেশিই ঝাল ছিল,জিদে জিদে মরিচ খাওয়ার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে,ইয়ানা জগে থাকা পানিটুকু শেষ করে পুরো রুমে ছুটে চলেছে,কিছুতেই ঝাল কমছে না,মুখের ভেতরটা যেন জ্বলে যাচ্ছে ওর,মাথা ভোভো করছে,গোঙানি শুরু করেছে মেয়েটা।
ইন্তিহাজ ইয়ানা’র হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিলো,ফলশ্রুতিতে আচমকা এমন হওয়ায় ইন্তিহাজের বুকে হুমড়ি খেয়ে পরলো ইয়ানা,মেয়েটার চোখমুখ ফুলে,চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা খারাপ।ইয়ানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইন্তিহাজ ইয়ানা’র ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো,শুষে নিতে শুরু করলো ঝালের মাত্রা।
প্রথমবার এধরনের অনুভুতির সঙ্গে পরিচিত হলো ইয়ানা,শিহরণে খামচে ধরলো ইন্তিহাজের পিঠের শার্ট,হাত-পা কেমন কাঁপা-কাঁপি করছে,পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে,কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি তে ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে,চক্ষুযুগল সেই কখন বন্ধ হয়ে গেছে,সেটা যেন আজ খুলতে নারাজ।
ঝাল কমাতে গিয়ে ইয়ানা’র মাঝে ডুবে গেছে ইন্তিহাজ,হুশে আসতেই তাড়াতাড়ি ইয়ানা’কে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো সে,ইয়ানা এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।
ইন্তিহাজের ধমকে হুঁশে আসলো ইয়ানা,অনুভব করলো মুখের ভেতরের ঝাল টা কমে গেছে, হালকা জ্বলুনি হচ্ছে শুধু।
ইয়ানা ইন্তিহাজের দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্তিহাজ ট্রে থেকে তরকারির বাটি নামাচ্ছে,প্লেটে ভাত তরকারি সাজাচ্ছে,ওর দিকে তাকাতে ভীষণ লজ্জা লাগছে ইয়ানা’র।
একছুটে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোঁটে হাত বুলালো ইয়ানা,ঠিক সেদিনের মতোই ফুলে গেছে,তাহলে কি সেদিনও ইন্তিহাজ…. ইয়ানা’র ভাবনার মাঝেই ইন্তিহাজ ধমক দিয়ে বললো,

—রূপচর্চা পরে করিস,এই বদ্ধঘরে কেউ তোকে দেখতে আসবে না,খেয়ে নিবি আয়

—(নো রেসপন্স)

—কিরে কথা কানে যায়না নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো, আমি কিছু করতে গেলে সেটা তোর জন্য মোটেও সুখকর হবে না বলে দিলাম,সো তাড়াতাড়ি আয়,দেরি হয়ে যাচ্ছে

ইন্তিহাজের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে একটুআগে যেন কিছুই হয়নি,ইয়ানা’র যে লজ্জা লাগছে সেটা কি ইন্তিহাজ বুঝতে পারছে না। ইন্তিহাজ আবারও ধমক দিতেই ইয়ানা আর না দাঁড়িয়ে ইন্তিহাজের সামনে গিয়ে বসলো।ইন্তিহাজ এক-লোকমা ভাত ইয়ানা’র মুখের সামনে ধরলো,চোখ দিয়ে ইশারা করলো ভাত মুখে নেওয়ার জন্য।
ইয়ানা ভাত মুখে নিতেই ইন্তিহাজ ভাত মাখতে মাখতে বললো,

—কখনো নিজের লিমিট ক্রস করা উচিত নয়,আমাদের ধারণক্ষমতা যতটুকু,ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।আই থিঙ্ক আজকের পর থেকে এধরণের কাজ করার সাহস তোর হবে না,যদি শিক্ষা পেয়ে থাকিস।
অতিরিক্ত ঝাল শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর,প্রতিটা জিনিসেরই নির্দিষ্ট গ্রহণমাত্রা রয়েছে।

ইন্তিহাজের কথা শুনে ইয়ানার কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ওর মুখে আরেক লোকমা ভাত ঢুকিয়ে দিলো ইন্তিহাজ,ইয়ানা রেগে ইন্তিহাজের দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্তিহাজের ঠোঁট দুটিও ফুলে রয়েছে,চোখ লালচে হয়ে আছে,এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক,সমস্ত ঝাল শুষে নেওয়ার ফলে এমন হচ্ছে, ইন্তিহাজও যে একদমই বেশি ঝাল সহ্য করতে পারে না।
বিষয়টা মনে হতেই ইয়ানা লাজলজ্জা ছেড়ে দ্রুত উঠে গিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা কিটক্যাট চকলেট বের করে কভার ছিড়ে ইন্তিহাজের সামনে ধরে বললো,

—ভাইয়া,এটা খাও,ভালো লাগবে

—আমি বাচ্চা নই,রাখ এসব।
তাড়াতাড়ি ভাতটা শেষ কর,আমারও ক্ষুধা লাগছে,বাড়িতে আসলেই আমার টাইমিং এলোমেলো হয়ে যায়,আমি সময়ের খাবার সময়ে খাই,কিন্তু তোর জন্য….

–ভাইয়া,তুমিইতো বললে অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর,তোমারতো ঝাল লেগেছে তাইনা,আমার জন্য শুধুশুধু তোমা…

ইন্তিহাজ ভ্রু-কুচকে তাকাতেই ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।


রাত দেড়টা ছুঁইছুঁই,চোখে ঘুম নেই ইয়ানা’র।
ইয়ানা’র রুমে তৃষা’র সঙ্গে আমরূপালি জামান ও শিমলা শুয়েছে।তাই ইয়ানা একয়দিন বহ্নি’র রুমেই থাকবে।
নিজের উডবি হাজবেন্ডের সাথে কথা বলা শেষ করে ঘন্টাখানেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে বহ্নি,কিন্তু ইয়ানা’র চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না,চোখ বুঝলেই বারবার তখনকার সিন ভেষে উঠছে।
আচ্ছা ইন্তিহাজ তো ওকে সেরকম সহ্যই করতে পারে না,তাহলে কিস কেন করলো,আর আজকাল ইন্তিহাজ ভাইয়ার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষনীয়,আগের মতো ওতটাও খিটখিট করেনা,বেশ নরমাল বিহেভিয়ার করে,মাঝেমধ্যে একটুআধটু ধমক দেয়,রাগ দেখায় এটুকুই,তবুও সেটা সাময়িক।
আর আজকের এই কিস,ওইদিনের ঠোঁট ফুলে যাওয়াটা আজকের মতোই হুবহু,কেমন তালগোল পেকে যাচ্ছে সব,তাহলে কি ইয়ানা যেমনটা ভাবছে সেরকম কিছুই কি?
কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব,নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা ইয়ানা।
নিজের ফোন হাতে নিয়ে নোটপ্যাডে নিজের অনুভূতি-ভাবনা গুলো লিখতে শুরু করলো ইয়ানা।


বহ্নি’র গায়ে হলুদ…
সকাল থেকেই ব্যতিব্যস্ত সবাই,গতকালই ইন্তিহাজের কিছু কাছের ফ্রেন্ডরা এসেছে,হাসান মাহমুদ কেও ইনভাইট করা হয়েছে,জানা নেই সে আদোও আসবে কি-না।
শিমলা’র সঙ্গে ইন্তিহাজের বিয়ে নিয়ে ইন্তিহাজের কোনো রিয়াকশন দেখা যাচ্ছে না,কি জানে কি চলছে তার মাথায়।সেটা ইন্তিহাজ আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা,একয়দিন ইয়ানা নানাভাবে ইন্তিহাজের মনের কথা জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে,কোনোভাবেই কোনোকিছুর জট খুলতে পারেনি…

To be continue……

#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_১৬

একয়দিন ইয়ানা নানাভাবে ইন্তিহাজের মনের কথা জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে,কোনোভাবেই কোনোকিছুর জট খুলতে পারেনি।তবে কি ইন্তিহাজ বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে?
শিমলা’কে পরিপাটি ভাবে হলুদ শাড়ি ও ম্যাচিং মেক-আপে তৈরি হতে দেখে ইয়ানা’রও সাধ হলো শাড়ি পরার।গায়ে হলুদের জন্য কেনা গাউন’টা রেখে দিয়ে বহ্নি’র অন্য একটা হলুদ শাড়ি আলমারি থেকে বের করলো ইয়ানা,কিন্তু শাড়ি কে পরিয়ে দেবে?
নিজের রুমে আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ি এপার-ওপার করে পরার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ইয়ানা,উপায় না পেয়ে গায়ের সঙ্গে শাড়ীটা কোনোমতে পেচিয়ে দরজা হালকা খুলে বাইরে উঁকি দিলো,কাউকে যদি পাওয়া যায় হেল্পের জন্য,সেই আশাতেই রয়েছে ইয়ানা।
নাহিদ কে নজরে আসতেই ইয়ানা ওকে ডেকে আনলো,

—কি হয়েছে আপুই,কিছু বলবে?
ওমাআআ,এভাবে শাড়ি পেঁচিয়ে রেখেছো কেন?

—লক্ষি ভাইয়ু আমার,একটু মামনী কে পাঠিয়ে দে-না বাবু,আমি কিছুতেই শাড়ীটা পড়তে পারছিনা (মলিন মুখে বললো ইয়ানা)

—আমি এখুনি ডেকে আনছি আপুই,এই যাব এই আসবো,তুমি একদম চিন্তা করো না

কথাটা ব’লেই দৌড়ে চলে গেলো নাহিদ,ইয়ানা আবারও দরজা লক করে দিয়ে দরজার সঙ্গে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,কিছুক্ষণ পরে খাদিজাতুল নেসা এসে ইয়ানা’র নাম ধরে ডাক দিতেই ইয়ানা তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে খাদিজাতুল নেসা কে ভেতরে নিয়ে আবারও দরজা লক করে দিলো।

—কি হয়েছে মামনি,তুই নাকি আমাকে খুঁজছিলি?
—মামনি,শাড়ি (মলিন মুখে,শাড়ি ধরে)

ইয়ানা’র অবস্থা দেখে খাদিজাতুল নেসা হেসে দিয়ে বললো,

—পাগ*লি,কখনোতো পরিসনি,সামলাতে পারবিনা।তোর জন্য যে গাউনটা কিনেছি,ওইটা পর,আমার মামনী টাকে পরির মতো লাগবে

—(হ্যাঁ,আমি গাউন পরি আর তোমার ছেলে ওই শিমলা কে ধেইধেই করে বিয়ে করে নিক)——বিরবির করে বললো ইয়ানা
না মামনি,আমি আজকে শাড়িই পরবো,সামলে নিবো তুমি শুধু বেশি করে পিন মেরে দিও তাহলেই হবে

—সত্যি করে বল,বুঝেশুনে বলিস পারবিতো?
বাড়িভর্তি লোকজন,লোকজনের সামনে শাড়ি খুলে গেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে

—আরে কিছু হবে না,নিজের প্রতি ফুল কনফিডেন্স আছে আমার
—শিওর তো?
—একদম (মুচকি হেসে)
—আচ্ছা এদিকে আয়,আমি পরিয়ে দিচ্ছি

খাদিজাতুল নেসা সুন্দর ভাবে পারফেক্টলি ইয়ানা’কে শাড়ি পরিয়ে দিলো,কাঁধের কাছে পিন টা লাগিয়ে দিয়ে শাড়ি পরানো শেষ করলেন তিনি।নিজের চোখ থেকে আঙুল দিয়ে কাজল নিয়ে ইয়ানা’র কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বললেন,

—ডান।মাশাল্লাহ্,অনেক সুন্দর লাগছে আমার মামনীটাকে,কারোর নজর না লাগে

—কেউ কিছু না বললেও তোমার হিটলার ছেলে আমাকে অপমান করবে মামনী (গাল ফুলিয়ে বললো ইয়ানা)

—হুম,ছেলেটা তোর সঙ্গে একটু বেশিবেশিই করে,তবে তুই চিন্তামুক্ত থাক,ও আর কিছু বলবে না তোকে,বিয়ের পর বউ পেলে ঠিকই শুধরে যাবে দেখিস

—মানে,ভাইয়া শিমলা’র সঙ্গে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?
—না হয়ে কি উপায় আছে,অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি
—মামনী একটা কথা বলবে?
—কি কথা
—এই বিয়েতে তো তোমাদেরও মত ছিল না,তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে তোমরাও বিয়ের জন্য এতো তাড়া দিচ্ছো?

—আম্মার কথাটা ভেবে দেখলাম,শিমলা রূপেগুণে সবদিক দিয়েই ভালো,পড়াশোনাতেও খুব একটা খারাপ না।মানছি ইন্তিহাজের থেকে বয়েসে অনেকটাই ছোট কিন্তু এটা কোনো ম্যাটার না।
কিছুদিন পর ইন্তিহাজ ডিগ্রীর জন্য বিদেশ যাবে,ততদিনে শিমলাও বড় হয়ে যাবে।বিয়ের পর আমরা শিমলা’কে এখানকার কোনো প্রাইভেট কলেজে এডমিট করিয়ে বাসায় টিচার রেখে টিউশানি পড়াবো,ইন্তিহাজের যোগ্য বউ করে তুলবো ওকে।কাঁচা মাটি,যেভাবে গড়তে চাইবো সেভাবেই গড়ে নিতে পারবো,মেয়েটা শান্তশিষ্ট বাধ্য মেয়ে,আশা করি ওকে নিজের মনের মতো করেই গড়ে নিতে পারবো,তাই সবদিক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া,তোর বড় আব্বুও আর অমত করেননি।ইন্তিহাজ কে নিয়ে একটু ডাউট ছিল,তবে আমার মনে হয়না ও আমাদের কথা রিফিউজড করবে,আজ অবধি আমার কোনো কথায় ও অমত করেনি,আমার বিশ্বাস এবারেও করবে না।

—ভাইয়া তাহলে সম্মতি দেয়নি?
—হ্যাঁ,না,কিছুই বলেনি।নিরবতা সম্মতির লক্ষন বুঝলি।
যাইহোক,পার্লারের মেয়েগুলোর থেকে সেজে নিস,বেশি মেকআপ করিসনা আবার,খারাপ দেখায় তোকে।
আমি আসি,মেয়ের বিয়ে বলে কথা অনেক কাজ আছে।ছেলেপক্ষ চলে এলো বোধ-হয়।

কথাগুলো বলে ইয়ানা’র কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন খাদিজাতুল নেসা,ইয়ানা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।মনের মধ্যে নানান ধরনের খেয়াল,ভাবনাচিন্তার উৎপত্তি হচ্ছে।


গায়ে হলুদের জন্য নির্ধারিত ট্রে-গুলো গায়ে হলুদের স্টেজে সাজিয়ে রাখছে ইন্তিহাজ, ওর বন্ধু শায়ন ও আজিম।
হঠাৎ আজিম বলে উঠলো,

—মেয়েটা কেরে ইন্তিহাজ,চিনিস তুই?
—কোন মেয়ে?
—ওইযে,এদিকেই আসছে।
মেয়েটা তো সেই দেখতে মামা,ছোটখাটো করে ক্রাশ খাইলাম।দু’জেনকেই আসমানের পরীর মতো লাগছে

—আমার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে ভাই,এইজন্যই সবাই বলে বিয়ে বাড়ি মানেই সুন্দরী মেয়েদের ছড়াছড়ি,অন্য দিনগুলোতে এরা কোথায় থাকে ভাই,দিল ধাদকানে লাগা ইয়ার (বুকে হাত দিয়ে বললো শায়ন)

শায়নে’র দৃষ্টি অনুসরণ করে ইন্তিহাজ ছাঁদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন হলুদ শাড়ি পরিহিতা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তাদের মধ্যে একজন শিমলা,অন্যজন ইয়ানা।প্রথমবার ইয়ানা’কে এই লুকে দেখে তার দিকে দৃষ্টি আটকে গেলো ইন্তিহাজের,পরক্ষনেই শায়নে’র কথা খেয়াল হতেই মুগ্ধতায় আটকে যাওয়া দৃষ্টি মূহুর্তেই রাগে পরিণত হলো।হাত মুঠো করে সাইডে তাকিয়ে দেখে শায়ন নেই,শায়ন’কে খুজতে এদিক ওদিক তাকাতেই রাগটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো ইন্তিহাজের।


শিমলা ও ইয়ানা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে,শিমলা ইয়ানা’র হাত চেপে ধরে আছে,এতো অচেনা মানুষের ভীড়ে ভিষণ অস্বস্তি হচ্ছে ওর।

—কি শুরু করলি তুই বলতো,এভাবে হাত চেপে ধরে রাখলে ভালো লাগে,আজিব (বিরক্ত হয়ে বললো ইয়ানা)

—কেমন জানি লাগতেছে,কাউরেইতো চিনিনা ইয়ানা,তাই বুকের মধ্যে কিরকম জানি ভয়ভয় লাগতেছে

—হায় লেডিস,হোয়াটসঅ্যাপ (শায়ন)

পুরুষালি কণ্ঠস্বর পেয়ে শিমলা আরেকটু জোরে চেপে ধরলো ইয়ানা’র হাত,ইয়ানা শায়নে’র দিকে তাকিয়ে বললো,

—হ্যালো
—হাউ আর ইউ
—ফাইন
—নাম কি?
—নাম শুনে কাম কি (বিরক্তির স্বরে)
—হেই,খারাপ ভাবছো নাকি আমাকে,লিসেন যেমন ভাবছো আমি মোটেও সেরকম নই
—আপনার কি কিছু বলার আছে,থাকলে বলেন নয়তো যান,আমাদের কাজ আছে
—নাহ্,ওই তোমাদের সঙ্গে একটু গল্প করতে আসলাম।এনিওয়েস,বিউটিফুল।তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে,গর্জিয়াছ

—এই এই,আপনার ভাবচক্কর তো মোটেও সুবিধার লাগছেনা,ইন্টেনশন কি আপনার
—আই এম শুভ্রত শায়ন,উডবি ডক্টর,লিভার স্পেশালিষ্ট

—সো হোয়াট?
—আমরা কি পরিচিত হতে পারি না?
—আরে ভাই,আচ্ছা ছ্যাচড়া তো আপনি,দেখছেন আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে বিরক্তবোধ করছি তবুও বকবক করে যাচ্ছেন,আজবতো,কোই থেকে আসে এরা,

ইয়ানা’র কথায় ছোটখাটো করে বিষম খেলো শায়ন,ফার্স্ট টাইম কোনো মেয়ে ওর পরিচয় জেনেও এভাবে কথা বললো, টোটালি ইগনোর,ইভেন ইনসাল্ট,বেশ লজ্জিত হলো শায়ন।
শায়ন কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই ইন্তিহাজ শায়নে’র পিঠ চাপড়ে ওর পাশে দাঁড়ালো।ইয়ানা’র দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে শায়ন’কে বললো,

—কিরে,এখানে কেন তুই,আমার কাজিনদের সাথে কি করছিস
—ওরা তোর বোন,সত্যি নাকি,তাহলে তো ভালোই হলো।
একচুয়ালি আমি পরিচিত হতে এসেছিলাম,কিন্তু তোর এই বোনটা যা ধানিলংকা,বাপরে বাপ

—এই কি বললেন আপনি,আমি ধানি লঙ্কা?আপনি ধানি লঙ্কা, আমিকি আপনার সাথে বকরবকর করতে গেছিলাম,নিজেইতো তখন থেকে জেচে বকবক করে চলেছেন। (রেগে বললো ইয়ানা)

—আমিতো তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তুমি তো…
—দেখছিলেনতো আমি ইন্টারেস্টেড নই তবুও…
—হয়েছে হয়েছে,এবার চুপ কর দু’জনেই।
শায়ন,শি ইজ ইয়ানা,তোদেরকে যার কথা বলেছিলাম আমি,আর ও হলো শিমলা,আমার…
—উডবি ওয়াইফ,ঠিক বলিনি ভাইয়া (কথা কেড়ে নিয়ে বললো ইয়ানা)

ইয়ানা’র এমন আচরণে রাগ উঠে গেলো ইন্তিহাজের,তবুও আপাতত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো,শায়ন অবাক হয়ে বললো,

—হোয়াট,ইন্তিহাজ,ইট’স ট্রু?
কি বলছে ও এটা,এই মেয়েটার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে কোই বলিসনি তো,আর ইয়ানা?
তুই যে বলছিলি তুই…

—চল এখানে থেকে,তোকে সবটা ক্লিয়ার করে বলছি

কথাটা বলতে বলতেই ইন্তিহাজ শায়ন’কে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো,ওরা চলে যেতেই শিমলা বললো,

—থেঙ্কস ইয়ানা
—কেন?
—এইযে,ওনার সামনে আমারে এইভাবে প্রেজেন্ট করার জন্য
—ওহ্


সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা…
ইতিমধ্যে ছেলেপক্ষ থেকে লোকজন চলে এসেছে,বলতে গেলে সকলেই ইয়াং ছেলেমেয়ে।হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে সবাই।
কেউকেউ সেলফি,টিকটক করতে ব্যাস্ত,কেউ মিষ্টি খাইতে ব্যস্ত,কেউ বহ্নি’কে ঘিরে ছবি উঠাইতে ব্যস্ত।হলুদে হলুদে বহ্নি’কে যেন হলুদে মুড়িয়েছে ওরা।বহ্নি’র মুখে হাসি,অপূর্ব লাগছে ওকে।ইয়ানা বুকে হাত গুজে স্টেজের নিচে দাড়িয়ে থেকে বহ্নি’কে দেখে যাচ্ছে,বেশি হাঁটাচলা সে করছে না,কারণ শাড়ী খুলে গেলেই বিপদ,রিস্ক নেওয়া যাবে না।

—(আচ্ছা,আমার বিয়েতেও কি আমাকে এমন দেখাবে?আচ্ছা ইন্তিহাজ ভাইয়ার সঙ্গে আমার বিয়ে হলে কেমন হতো,আমাদের জুটি কি সুন্দর হতো না?ধ্যাত,কিসব ভাবছি আমি,ওই হিটলার কে বিয়ে করলেতো লাইফ ত্যানাত্যানা হয়ে যাবে,কিন্তু ভাইয়ার পাশে যে আমার কাউকে সহ্য হয়না,রাগ হয় খুব।আচ্ছা এমন জেলাসি কেন হয়,তবে কি আই লাভ হিম)

ইয়ানা’র ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো শিমলা’র কথায়,শিমলা ইয়ানা’র হাত ধরে বললো,

—ইয়ানা,ওই মেয়েটাকে কি চেনো গো?
—কোন মেয়ে?
—ওইযে,তোমার ভাইয়ার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি কইরা ছবি তুলতেছে

শিমলা’র ইশারা অনুযায়ী ইয়ানা স্টেজের পাশে তাকাতেই রাগ উঠে গেলো,একটা মেয়ে ইন্তিহাজ’কে জড়িয়ে জড়িয়ে সেলফি তুলছে,ইন্তিহাজের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ দেখা গেলেও বেশ হাসি মুখেই ছবি তুলছে সে।
ইয়ানা রেগে ওইদিকে যেতে লাগলে শিমলা হাত টেনে ধরলো,

—কুনঠি যাচ্ছাও,কইলেনা যে,মেয়েটারে চিনো?
—না,চিনতেই যাচ্ছি,হাত ছাড়

ইয়ানা শিমলা’র থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইন্তিহাজের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,

—বাহ্,ভালোইতো,ভালোনা,অসাধারণ
—তুই?
—কেন,ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি?
—কি বলছিস তুই এসব
—কিছুনা,একটা হেল্প চাইতে আসলাম।
আমি ছবি তুলে দেওয়ার মতো কাউকে পাচ্ছি না,তুমিতো অনেক সুন্দর ফটো তুলতে পারো,তাই তোমার কাছেই আসলাম।আমাদের কিছু ফটো তুলে দিবে?

—তোদের মানে?
—ওয়েট এ মিনিটস

অনেক্ষন যাবৎ একটা ছেলে ইয়ানা’কে ফলৌ করছে, বেশকয়েকবার সিগন্যালও দিয়েছে,যেটা ইয়ানা’র দৃষ্টি এড়ায়নি।ছেলেটা ছেলেপক্ষ থেকে এসেছে,দেখতে মোটামুটি ভালোই।
ইয়ানা সেই ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ছেলেটা চমকে উঠলো,ইয়ানা ঠোটের কোণে হাসি টেনে বললো,

—কি মিঃ,ভয় পেলেন নাকি হুম
—ইয়ে মানে আসলে…
—অনেক্ষন যাবৎ নোটিস করছি,আপনি আমাকে ফলৌ করছেন,কি ব্যাপার বলুনতো?
—কোই,নাতো,আমি তো শুধু…
—হয়েছে,ড্রামা করতে হবে না,আমি বুঝি।আমাদের বাসায় এসে আমাকেই ফলৌ করা,বিচার দিবো নাকি? মে*রে এমন হাল করবো না,চেহারার নকশা বদলে যাবে।মেয়ে দেখলেই তাকাইতে ইচ্ছে করে তাইনা,আবার সিগন্যাল মার*ছিস,তুই জানিস আমি কে?

—আই এম সরি,আসলে আ…
—ওইসব শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবেনা ব্রো,আমি যেটা বলবো সেটা না শুনলে অবস্থা খারাপ করে ছেড়ে দিবো,আমাকে চিনিসনা
—প্লিজ,এমন কিছু করবেন না,মানসম্মান থাকবে না আর
—তাহলে আমি যেটা বলবো,শুনবি তো?
—কি?
—ওইযে ছেলেটাকে দেখছিস (ইন্তিহাজ কে ইশারা করে),ওই ছেলেটার সামনে গিয়ে আপনাকে আমার বিএফ সেজে নাটক করতে হবে,রাজি তো?
—হোয়াট?
—ইয়েস
—হু ইজ হি,ইওর বয়ফ্রেন্ড?
—নো,হি ইজ মাই ব্রাদার,কাজিন হয় আমার।এখন চল আমার সাথে নাহলে কিন্তু…
—ওকে ওকে চলুন

ইয়ানা ছেলেটিকে সঙ্গে করে ইন্তিহাজের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,

—আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কিছু ছবি তুলে দাও (মুচকি হেসে)
—কিহ্?ওটা তোর বয়ফ্রেন্ড মানে?তুই আবারও…
—মাই লাইফ মাই রুলস (ভাব নিয়ে)
—মাই হ্যান্ড ইওর চেক,একটা থাপ্পড়ও মাটিতে পরবেনা, বেয়াদব কোথাকার,ফাইজলামি শুরু করছিস তাইনা (রেগে বললো ইন্তিহাজ)
—লিসেন ব্রাদার,আমার গার্লফ্রেন্ড কে একদম ধমকাবেন না।
ভাই ভাইয়ের মতো থাকুন,আপনিতো ওর কাজিন হন রাইট?
অল্পদিনেই আমরা বিয়ে করতে চলেছি,কাল পরশুতেই আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে বিয়ের প্রপোজাল নিয়াসবো,খুব শীঘ্রই আমরা বিয়ে করতে চলেছি,আমার ভালোবাসার মানুষকে কেউ ধমকাবে সেটা আমি বরদাস্ত করবো না,ওর গায়ে আমি ফুলের টোকাও লাগতে দিইনা,আর আপনি ওর সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলছেন,হাউ ডেয়ার ইউ।

ইয়ানা ইশারায় চুপ করতে বললেও ছেলেটা বকবক করেই যাচ্ছে,এই বেশিবেশি বলার জন্যই না ধরা পরতে হয়,এতো বাড়িয়ে বলার কি আছে আজব। ইন্তিহাজ শান্তভাবে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললো,

—বয়স কতো?মনে তো হচ্ছে অনেক জুনিয়র?
কোন ক্লাসে পড়ো?
—এসএসসি দিয়েছি
—হাহাহা,আর এই মেয়েটি কোন ক্লাসে পড়ে জানো?ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার

ইন্তিহাজের কথা শুনে ছেলেটি বোকাবোকা চাহনিতে ইয়ানা’র দিকে তাকালো,ইন্তিহাজ এবারে ইয়ানা’র উদ্দেশ্যে বললো,

—নাটকটাও ঠিক করে করতে পারিস না তুই,কে তোর জুনিয়র,কে সিনিওর সেটাও বুঝতে পারিস না?একটা বাচ্চা ছেলেকে ধরে এনে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে চালিয়ে দিচ্ছিস,স্টুপিড কোথাকার।
আর এই যে ব্রাদার,তোমার স্পিচ টা ভালো ছিল,স্টেজ শো করতে পারবে।বাট বড়দের সম্মান করতে শেখো,সামনে ফুল লাইফ পরে আছে তোমার।

—সরি ভাইয়া

কথাটা ব’লেই ছেলেটি চলে গেলো,ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে বললো,

—জেলাসি ভালো কিন্তু নিজের বোকামির পরিচয় দেওয়াটা খারাপ।বায় দ্য ওয়ে,শি ইজ মাই ফ্রেন্ড সিনহা,আমার ব্যাচমেট।
আর সিনহা,ও হলো ইয়ানা,আমার…

–হুম বুঝেছি,ও-ই তাহলে সে,বিউটিফুল।
হাই ইয়ানা,আই এম সিনহা (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

“সিনহা” নামটা শুনতেই মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো ইয়ানা’র,ওইদিনের স্বপ্নের কথাটা মনে পরে গেলো ওর,চোখ পিটপিট করে তাকালো সিনহা’র দিকে।

—সিনহা,তুই এন্জয় কর,আমি একটু আসছি।
চল ইয়ানা

ইন্তিহাজ ইয়ানা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে নিজের রুমে এসে দরজা লক করে দিলো,ইয়ানা কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না,এখনো সে ঘোরের মধ্যেই আছে।গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেতেই হুঁশে আসলো ইয়ানা,খেয়াল করে দেখে ইন্তিহাজ ওর গালে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে…..

To be continue…..