তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১১

0
623

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১১তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

তমা নিজেকে সামলাতে পারছে না।
আশে পাশের সব কিছু তচনচ করে দিতে মন চাইছে তার।
তমা চুপচাপ বসে ভাবতে থাকে অতীত এর কথা,
তমা তখন ছোট কিন্তু বুঝতে শিখেছে।
ছায়া ছিল এতিম।
তাদের চাচা চাচির এক মাত্র ১ বছরের সন্তান ছায়া।
ছায়ার মা বাবা হটাৎ একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।
সে দিন ছায়া কে ছায়ার মা বাবা তমার মা বাবার কাছে দিয়ে গেছিল।
কারন তাদের কোন কাজ ছিল ইম্পর্টেন্ট।
তমা যেহেতু বড়ো আর ছায়া তখন কথাও বলতে পারে না ১ বছর ২ মাস বয়স বাচ্চা টার।
তাই তমার মা ছায়াকে রেখে দেয় নিজের কাছে।
ছায়াকে রেখে দিয়ে অনেক বড়ো বিপদ থেকে ছায়াকে রক্ষা করে তারা।
তমার মা ভাইয়া ভাবির মৃত্যু তে ভিশন কষ্ট পায়।
সে ছায়াকে নিজের মেয়ের সাথে বড়ো করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এতে অবশ্য তমার বাবার কোন আপত্তি ছিল না।
তমা তখন বেশ বড়ো সবি বুঝে
তাই ছায়াকে সে আপন করে নিতে চাইত না।
কিন্তু তমার মায়ের একটাই কথা ছিল ছায়া যে আমাদের পরিবারের না এটা যেন কেউ কখনো জানতে না পরে।
এভাবে ছায়া বড়ো হয় তমার মা বাবার কাছে তমার বোন হিসাবে।
ছায়া আজও এক কথা জানে না।
ছোট থেকে তমা মনে করত ছায়া তমার ভাগে ভাগ বসিয়েছে
শুধুমাত্র ছায়ার জন্য তমার মা বাবা দ্বিতীয় কোন সন্তায় নেন নি।
ছায়াকে সময় দেবার জন্য।
এ সব কিছু তমার ভিশন খারাপ লাগত।
তমা ছোট থেকেই ছায়াকে সহ্য করতে পারত না।
এভাবে ছায়া তমা বড়ো হতে থাকে।
আর তমার মধ্যে এই কথাটা আরও বড়ো জায়গা করতে থাকে।
এভাবে চলতে থাকে দিন।
ছায়ার ছোট থেকে স্বপ্ন ছিল ও ডক্টর হবে।। পড়ালেখায় ও ভালো ছিল সে
সব সময় ছায়া বড়ো বড়ে ডক্টর দের দেখতো।
তাদের বলা কথা মোটিভেশন সে ফলো করতো।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় ছায়া একটা মেগাজিন এ নির্ঝর কে দেখতে পায়।।
নির্ঝর সম্পর্কে পড়ে ছায়ার ভিশন ভালো লাগে নির্ঝর কে।
তাই সে নির্ঝর কে সার্চ করা শুরু করে।
নির্ঝরের ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক, সব একাউন্ট চেক করে ছায়া।
ছায়ার নির্ঝর কে বেশ ভালোই লাগে।
তাই সে তমাকে নির্ঝর সম্পর্কে বলে।
এবং তমাকে নির্ঝরকে দেখায়।
তমা নির্ঝর কে তখনি প্রথম দেখে।
ছায়ার প্রসঙ্গে।
তমার কখনো ডক্টর দের প্রতি কোন ইচ্ছে ছিল না।
কিন্তু নির্ঝর কে দেখে ওর ভালো লেগে যায়।
তমা ছায়াকে না জানিয়ে নির্ঝরের ভার্চুয়াল লাইফে এড হতে চেষ্টা করে।
কিন্তু সেখানে নির্ঝর তমাকে ফলোয়ার বানিয়ে রাখে।
এটা দেখে তমা আরও বেশি আকৃষ্ট হয় নির্ঝর এর দিকে।
তমা বরাবর কখনোই ছায়াকে নিজের জীবনের কিছু সেয়ার করত না।
কিন্তু ছায়া বোনকে প্রায় সবি বলত।
তাই ছায়ার ও জানা ছিল না তমা নির্ঝর এর দিকে আকৃষ্ট।
সেদিন ছিল শীতের শেষ বসন্তের শুরু।
ছায়ার কলেজে অনুষ্ঠান।
আর অতিথি ছিল নির্ঝর।।
তমা তখন ইন্জিনিয়ারিং পড়ে।

ছায়া ভিশন উৎসহ নিয়ে তমাকে বলে,।
–আপু জানিস আমাদের কলেজে ডক্টর নির্ঝর আসছে।
তমার ছায়ার কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে পরে।
–কি!সত্যি!
–হ্যা আমি শুনলাম। উনি নাকি প্রধান অতিথি।
–ওহ আচ্ছা ছায়া তুই ত কাল জাবি তাই না।
–হ্যা।
–শাড়ি পরবি?
–হুমম
–আমিও যাই তোর সাথে।
–হ্যাঁ অবশ্যই।
–আচ্ছা কাল তবে আমাকে ডেকে নিয়ে যাস হুম৷
–আচ্ছা আপু।
ছায়া খুশি খুশি নিজের রুমে চলে আসে।
পরের দিন,
ছায়া একটা নীল শাড়ি পরে। হালকা সেজে বেরিয়ে আসে তমাকে ডাকতে।
ছায়া তমার রুমে এসে অবাক।
তমা পুরাই বিয়ের সাজে সেজেছে।
ব্রাইডাল লুক।
ছায়া রুমে এসে নিজেকে আর তমাকে দেখছে
ছায়া শুধু একটু লিপস্টিক আর আইলাইনার দিয়েছে।
আর কিছু চুড়ি একটা চেইন এক জোড়া ঝুমকো।
আর তমা পুরাই ব্রাইডাল।
–আপু এতো সেজেছিস কেন।
–কেন ভালো দেখাচ্ছে না।
–হ্যাঁ কিন্তু একটু বেশি সুন্দর দেখচ্ছে।
–সেটাইত চাইছি।
–মানে।
–চল ত যাই।
–হুমম।
তমা আর ছায়া বেরিয়ে পরে।
কলেজে পৌঁছে ছায়া দেখে তমা তার বন্ধুদের ডেকেছে।
তাই তমা সেখানে চলে যায়।
এদিকে ছায়া তার এক মাত্র কাছের বান্ধবী কে বলেছে আমার আপু আসবে তোর সাথে যেতে পারব না।
ছায়া তমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ভেতরে চলে আসে।
আসতেই ওর দেখা হয় রুহির সাথে।
রুহিও ছায়ার মতো হালকা সেজেছে।
–এই মেরি জান।
–ছায়া কখন এলি।
–মাত্র।
–ওহ আপু কই।।
–ও ওর বন্ধুদের সাথে।
রুহি বুঝতে পারে ছায়ার কষ্টটা।
তাই রুহি বলে,
–ওরে মেরি জান তোর ক্রাশ আজ কলেজে আসবে একটু হাস না৷
আমার শন্টুমন্টু।
রুহির মুখে শন্টুমন্টু শুনে ছায়া হেঁসে দেয়।
-চল ওদিকে যাই কলেজ টা আগে ঘুরে দেখি।
–আচ্ছা চল।
রুহি আর ছায়া চলে যায়।
এদিকে,
কলেজে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এবং নির্ঝর ওর পৌঁছে যায়।
তমা নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে পুরাই অবাক।
এ ত ছবির থেকেও সুন্দর ছেলেটা।
–তমা তোর জীবন মরন এই নির্ঝর ই।
তমা নির্ঝর এর দিকে খেয়াল করতে থাকে।
ওদিকে ছায়া রুহি কলেজ ঘুরতে থাকে।
নির্ঝর তার বক্তব্য দেবার আগে এক বার নিজেকে রিচেক দিতে চাই।
তাই নির্ঝর ওয়াসরুমে চলে আসে।
তার পাশেই তার জন্য একটা রুম সেট করে রাখা ছিল।
তমা নির্ঝর কে ফলো করতে করতে সেই রুমে চলে যায়।
এদিকে,
–রুহি আমার না কুচি খুলে যাচ্ছে চল ওয়াশরুমের।
–হুম চল যাচ্ছি।
রুহি আর ছায়া ওয়াশরুমের দিকে চলে আসতে থাকে।
যেহেতু এটা গার্লস কলেজ তাই আলাদা কোন ওয়াশরুম নাই।
ছায়া আর রুহি ওয়াশরুমের সামনে চলে আসে
নির্ঝর এর গার্ড রা তাদের খেয়াল করে নি কারন তারা কিছুটা দুরে ছিল।
–রুহি।
–হুম।
–আমি না আমার ব্যাগ টা ওই গাড়িতে রেখে এসেছি আমার কিছু চিপটিপিন লাগত একটু এনে দিবি।
–হুম ওকে।
রুহি চলে যায়।
ছায়া ওয়াসরুমের দরজা খুলে।
ভেতরে ৫-৬ টা ওয়াশরুম আর তার বাইরে বেসিং।
ছায়া ভেতরে কাউকে না পেয়ে ভাবলো কেউ নেই।
তাই নিজের কুচি ঠিক করতে লাগলো।
কিন্তু ঠিক করতে গিয়ে আরও বেঠিক হয়ে যাচ্ছে।
–ধুর এটা কি করে আল্লাহ মা তুমি কই।
–তুমি কে!
ছায়া কুচি ধরে ছিল হটাৎ একটা ছেলে কন্ঠ শুনতে পেয়ে হাত থেকে সব কুঁচি মাটিয়ে পরে গেল।
আর আয়নার দিকে চোখ গেল।
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ছায়ার দিকে।
নিজের এই অবস্থায় নির্ঝর এর সামনে পরে ছায়া পুরাই বিভ্রান্তি তে পরে গেল।
কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
–কি সমস্যা তোমার ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন।
–ইয়ে মানে আমি সরি আমি জানতাম না কেউ আছে।
নির্ঝর ছায়ার দিকে এগোতে গেলে
–কাছে,
ছায়া চিৎকার করে কথাটা বলতে গেল।
কিন্তু অর্ধেক বলার সঙ্গে সঙ্গে নির্ঝর ছায়ার মুখ চেপে ধরলো।
–কি সমস্যা (চোখ রাঙিয়ে)
–ম ম৷
নির্ঝর ছায়ার দিকে তাকিয়ে ছায়ার মুখের শব্দ ভুলে যায়।
মায়াবী কোন পরি তার সামনে নেমে এসেছে
চোখের উপরের লাইনারের কলো লাইন টার জন্য চোখ দুটো তার বড়ো দেখাচ্ছে।
ছায়া বেশ কিছু সময় পর নির্ঝর এর রেসপন্স না পেয়ে নির্ঝর এর পেটে গুতা দেয়।
নির্ঝর ব্যাথা পেয়ে সরে আসে।
–হাট মেয়ে বেয়াদপ নাকি।
— ধরেই রেখেছেন ছাড়ছেন ই না কি করব তা (দম নিয়ে নিয়ে)
–তোমাকে আমি।
হটাৎ নির্ঝর এর ডাক আসে,
–পরে দেখে নিবো।
কথাটা বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়।
চলবে,