তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১২

0
606

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১২তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমন মেঘলা

ছায়া এখনো ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
–এই বেডি এই তুই এখনো কুচি ধরে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছিস।
আর এখানে ডক্টর নির্ঝর ছিল?
–হুম।
–কি বলিস উনি তোকে এভাবে দেখেছে?
–হুম!
–ইয়া আমার আল্লাহ বেআক্কল মেয়ে তুই দেখবি না।
–কি করব বল,
(কাঁদো শুরে)
–কি আর করবি।
রুহি দরজা বন্ধ করে ছায়াকে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগলো।
,
,
ওদিকে,
নির্ঝর তার বক্তব্য শেষ করলো।
–স্যার আপনার বক্তব্য দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। আপনি একটু রেস্ট নিন আপনার জন্য কিছু ছোট্ট ব্যাবস্থা করেছি ওগুলো প্লিজ গ্রহন না করে যাবেন না।
প্রিন্সিপাল স্যার নির্ঝর কে কথা গুলো বলে হাতে হাত মিলালো।
নির্ঝর আর প্রিন্সিপাল কে না করলো না।
তার আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল অবশ্য ছায়ার খোঁজ করা।
নির্ঝর এর জন্য প্রস্তুত করা রুমটিতে নির্ঝর গেল।
সে গিয়ে হটাৎ একটা মেয়েকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো,
–কে আপনি?
–আমি তমা। (খুশি খুশি হয়ে বলল)
–আমাকে দিয়ে কাজ?
–আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি আপনার অনেক বড়ো ফ্যান স্যার।
–ধন্যবাদ।
–স্যার এটা সেলফি তুলতে পারি?
–জি না৷
আমি কোন প্রোফেশনাল একটার না যে সেলফি নিবেন সরি।
নির্ঝর এর না শুনেও তমা চুপচাপ সেখানে নির্ঝর এর দিকে তাকিয়ে আছে।
–আর কিছু বলবেন।
–জি ফেসবুকে ফ্রেন্ড হতে পারি প্লিজ।
নির্ঝর কিছু চিন্তা করে বলল,
–ওকে।
তমা নির্ঝর এর সাথে এড হলো।
–আর কিছু না বললে আপনি আসতে পারেন।
নির্ঝর এর কথায় তমা অপমান বোধ করলো।
এবং সেখান থেকে চলে গেল।
এসেই সোজা ছায়াকে না নিয়ে গাড়িতে করে নিজের বাসায় চলে এলো।
এদিকে,
নির্ঝর কিছুটা শান্ত হয়ে সেখানে বসে রইলো।
কিছু সময় পর সব টিচার রা চলে আসে।
নির্ঝর তাদের সাথে কথার প্রসঙ্গে ছায়ার খবর শুনে নেয়।
,
–তমা আপু ত ফোন ও ধরছে না ছায়া এবার কি করবি?
–তুই চলে যা রুহি রাত হয়েছে।
–ধুর এমন বললে হয় আমি তোকে বাসায় নিয়ে যাই চল।
(রুহির বাসা এক দিকে ছায়ার বাসা অন্য দিকে। ছায়ার বাসার দিকে রাতের সময় একা যাওয়া টা ঠিক নয়।। কিন্তু রুহির বাসা পুরাই একটা নিরাপদ জায়গায়। যার জন্য রুহি চাইছে ছায়াকে নিয়ে যেতে)
–আরে না বাবাকে ফেন করি।
ছায়া তার বাবাকে ফোন করে,
–হ্যালো বাবা।
–হ্যাঁ ছায়া বল মা।
–বাবা আমি না কলেজে ফেঁসে গেছি নিয়ে যাবে আমাকে বাসায়।
–তমা ছিল তোর সাথে মা।
–বাবা আপু মনে হয় বাসায় চলে গেছে আর ফোন তুলছে না৷
–কি বলছিস তোকে একা ফেলে তমা চলে গেছে।
–বাবা তুমি ভুল বুঝো না আমি কি করব সেটা বলো।
–মা তুই বসতে লাগ আমি আসছি আমি আসলে ডিউটি তে আছি।
ছায়ার বাবা এক জন এসআই।
সে এখন ফোর্স নিয়ে একটা ডিউটি তে আছে।
তাও মেয়ের ফোন পেয়েছে এখন তাকে জলদি সব শেষ করতে হবে।
কিন্তু মাঝ থেকে বেঁধেছে আরেক বিপত্তি।
যে ঔষধ এর দোকানে রেড দিয়েছে সেখানের মালিক পগাল পার।।
,
এদিকে,
ছায়া রুহিকে পাঠিয়ে দিলো।
নিজে অপেক্ষা করছে বাবার।
কিন্তু প্রায় ১ ঘন্টা হতে চলল বাবার কোন খোঁজ নাই৷
এবার বাবও ফোন তুলছে না।
ছায়ার এবার একা একা ভয় হতে লাগলো।
–ইয়া আল্লাহ কি করব আমি।
ছায়া ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।
নির্ঝর টিচার দের বিদায় জানিয়ে বেরোতে গেলে ছায়াকে দেখতে পায়।
–এতো রাত করেছে মেয়েটা বাসায় যায় নি কেন।
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ছায়ার দিকে এগিয়ে গেল।
গিয়ে দেখে ছায়া কাঁদছে।
নির্ঝর বিভ্রান্তি তে পরে গেল,
–কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন।
–আপু চলে গেছে ফোন ধরছে না৷ বাবাও আসছে না আমি কি করে যাবো বাসায় ভয় হচ্ছে আমার।
ছায়ার অর্ধেক কথা নির্ঝর বুঝতে না পারলেও এ টুকু বুঝেছে ছায়া বাসায় যেতে পারছে না।
নির্ঝর ছায়াকে টেনে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দেয়,
–পাগল মেয়ে কাঁদছো কেন আমি ত আছি চলো বাসায় দিয়ে আসবো।
–আমি কি আপনাকে চিনি নাকি।
–চেনা লাগবে না চলো।
নির্ঝর ছায়া নিয়ে ওর বাসায় আসলো।
আর ছায়ার মায়ের হাতে ছায়াকে তুলে দিলো,
–আন্টি মেয়েটা কাঁদছিল ভয়ে বাসায় আসতে পারছে না বলে।
একটু খেয়াল রাখবেন।
–আল্লাহ তুই না তমার সাথে গেলি তমা বাসায় আমি ত ভাবছি তুই বাসায় এসে বোধ হয় ঘুমিয়ে গেছিস তমা ত এটাই বলল।
–আসলে,
ছায়া বলতে চাইছিল না তমার ভুলটা কারন মা ওকে বকবে।
–থাক আর বলা লাগবে না আয় ঘরে আয়।
আপনিও আসুন কিছু মুখে দিন।
— না আন্টি এখন না পরে কখনো। আজ আসি।
নির্ঝর চলে এলো।
ছায়া নির্ঝর এর যাওয়ার দিকে তকিয়ে রইলো।
নির্ঝর এর জন্য এক রাস ভালো লাগা কাজ করতে লাগল ছায়ার মনে।
,
,
সে দিন তমা নির্ঝর কে দেখেছিল।
নির্ঝর এর ছায়াকে পৌঁছে দেওয়া টা তমার বিন্দু মাত্র সহ্য হচ্ছিল না।
তাও সহ্য করেছিল কারন তার কাছে কোন উপায় ছিল না।
,
এভাবে কাটতে থাকে দিন।
নির্ঝর ছায়াকে মাঝে মাঝে ফোন করে।
বির্ঝর এর ক্লান্তি দুর হয় ছায়ার সাথে কথা বলে।
ছায়াও কথা বলে।
ছায়া ধিরে ধিরে নির্ঝর কে ভালোবেসে ফেলে।
নির্ঝর এর ক্ষেত্রে ও বেতিক্রম নয়।
কিন্তু নির্ঝর কখনো ছায়াকে বলে নি।
এই না বলা টাই সব থেকে বড়ো ভুল ছিল
(বিয়ের আগে নির্ঝর এর এমন ব্যাবহার এর রহস্য ধিরে ধিরে ফাস হবে)
,
সেদিন ছিল শুক্রবার,
তমা নির্ঝর কে ফেসবুকে প্রপোজ করে কিন্তু নির্ঝর তমাকে ব্লক করে।
যার জন্য তমা আবির কে টার্গেট করে।
,
,
,
–তমা কি ভাবছো।
আবিরের কথায় তমার ধ্যান ফিরে।
–কিছু না তুমি কখন আসলে।
–এই ত মাত্র।
–ওহ আচ্ছা।
,
,।
এদিকে,
–তোমার প্রেশার লো কেন কিসের এতো চিন্তা। আর এতো কম খাবার কেউ খায়?
–আমি কি জানি আমার প্রেশার লো কেন।
নির্ঝর এবার রেগে যায়।
–তুমি এখনি এই দুধ খাবে।
–আরে ভাই আর যা কিছু খেতে বলে খেয়ে নিবে এগুলা খাবো না আমি প্লিজ।
–ছায়া তুমি এতো বাচ্চাদের মতো কেন করো।
রেগে গিয়ে বলল নির্ঝর।
–প্লিজ (ভিশন নরম কন্ঠে)
–না কেন প্লিজ নাই।
–আপনি মহা পাজি ত।। —

–কি আমি পাজি।
–হয়।
–ছায়া।। (শক্ত কন্ঠে);
–দেখুন (নরম কন্ঠে)
— এখন দেখবো না রাতে দেখবো নি এখন খেয়ে নেও নাহলে রাতে কাজ এখনি শেরে নিবো।
নির্ঝর এর কথার মানে বুঝতে পেরে ছায়ার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
–কি ওভবে তাকিয়ে আছো কেন।
–আপনি ভিশন খারাপ।
কথাটা বলে ছায়া গ্লাসটা নিয়ে দুধ টুকু খেয়ে নিলো।
–বাহ বউ লক্ষি তাহলে।
–হুহ,
ছায়া ভেংচি কেটে ওয়াসরুমে চলে গেল
আর নির্ঝর সেখানে বসে হাসতে লাগলো।
–পাগল মেয়ে।
চলবে,