তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-১৪ + সারপ্রাইজ পর্ব

0
599

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৪

-কবুল বলতে এতো সময় লাগাচ্ছিস?আবার এতো কাপাকাপি?তোকে তো তারমানে তুলেই নিয়ে যেতে হবে দেখছি!

বড়বড় চোখ করে শুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।সে শব্দ করে হেসে দিলো।আমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,

-ওভাবে তাকাস না ইয়ার!মজা করছিলাম তো জাস্ট!বাদবাকি বিয়েটা,ইনফ্যাক্ট সবটাই শুরু থেকে সবার সামনেই হবে।ডোন্ট ওয়ারি!বাট ইউ নো হোয়াট?আমি সব বিষয়ে সাথে আপোষ করতে পারবো,তোর বিষয়ে না।আমার লাগবে তোকে।তুই ছাড়া আমারও কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।হ্যাঁ,হয়তো মুখে বলতে পারছিস না,তবে আমি জানি,তুইও ভালোবাসিস আমাকে।নইলে দুবছর দেখা না করায় এতোটা অভিমান হতো না তোর,তাহমিনা বা আমার বলা হাজারটা নামের মেয়েটাকে নিয়ে এতোটা জেলাসি থাকতো না তোর।আচ্ছা সিয়া?এসব কবে বুঝবি তুই?কবে সবটা বুঝে স্বীকার করবি বলতো?

মাথা নিচু করে রইলাম।তার কথা শুনে কি আমার এই‌ অচেনা অনুভুতিগুলোকে ভালোবাসা বলা উচিত?ভালোবাসা তো আরো বিস্তৃত,আরো অসাধারন।তার মতোই।আমি একটা সাধারন মেয়ে হয়ে এই ছোটছোট,সাধারন অনুভুতিগুলোকে ভালোবাসা বলে দেবো?এতে অপমান করা হবে না?তাকে?তার অনুভুতিগুলোকে?

-সামনে দেখ সিয়া!রাতের আধারেও নদীর আশপাশ জুড়ে কতো রকমের আলো!

করলাম তাই।শো শো শব্দে বাতাস বইছে।শরীর ছুইয়ে মনপ্রান শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে একদম।ঘাটে ভিড়ানো এক বেদেনৌকোর দিকে চোখ পরলো।ভেতরে তিনটে বাচ্চাকে জরিয়ে এক মহিলা শুয়ে,বাইরে নৌকার আগায় বসে এক লোক বেতের কিছু একটা বুনছে মনে হলো।ছোট্ট একটা দুনিয়া,কিন্তু কতো ভালোবাসায় মোড়ানো।ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো আমার।শুদ্ধ ভাইয়া থুতনি ধরে তার দিকে ফেরালেন আমাকে।বললেন,

-দেখেছিস সিয়া?এই এতো রাতেও,আলোর উৎসগুলো কতো দুরে,তবুও মনে হচ্ছে যেনো কতো আলো চারপাশে!আলোয় ভরে উঠেছে আমাদের দুজনের ছোট পৃথিবী তাইনা?এর কারন জানিস?

চুপ রইলাম।উনি হেসে সামনে তাকিয়ে বললেন,

-ওই যে চাঁদহীন আকাশের জ্বলতে থাকা তারাগুলোর মিটমিটে আলো,দুর ওপারের বাড়িঘরের আলো,নদীর লঞ্চ,স্টিমারের আলো,ছোট ছোট জেলেদের ডিঙি নৌকোর কুপির আলো,পাশের রাস্তার দু একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো,ল্যাম্পোস্টের আলো,আর তোকে ঘিরে উড়তে থাকা জোনাকির আলো,সবটাই আবছা লাগছে আমার সিয়া!আমি তো অন্য কোথাও আটকে!

বিস্ময় নিয়ে কাপাকাপা বললাম,

-ক্ কোথায়?

উনি আবারো আমার দিক ফিরলেন।টিকলিটা ঠিকমতো বসিয়ে দিলেন আমার কপালে,কানের কাছে ঝুলে থাকা নথটাও পরিয়ে দিলেন আলতোভাবে,আমার পিছনে দাড়িয়ে ঘাড়ের সবগুলো চুল সামনে দিয়ে দিলেন উনি।চোখ বন্ধ করে নিলাম।গলায় কিছুর উপস্থিতি টের পেতেই চোখ খুলে হাত লাগালাম গলায়।একদম চিকন একটা চেইন,তাতে রিংয়ের মতো ছোট্ট একটা পেন্ডেন্ট,সেই রিংয়ের ভেতর আবার আরো ছোট করে এস লেখা,অক্ষরটায় একদম ছোট ছোট পাথর বসানো।হীরের ওটা।তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শুদ্ধ ভাইয়া আমার সামনে দাড়ালেন আবারো।লেহেঙ্গার ওড়নাটা পেছন থেকে গুছিয়ে মাথায় তুলে দিলেন।বা হাতে ধরিয়ে দিলেন ওটা।অবাক হয়ে বললাম,

-এসব…এসব কেনো শুদ্ধ ভ্…

উনি একটু পিছিয়ে ভ্রুকুচকে তাকালেন।আমিও কিছু না বুঝে হতবাক হয়ে একবার নিজের দিকে,একবার তার দিকে তাকাচ্ছি।বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-এখনো ভাইয়া?

থতমত খেয়ে গেলাম।উনি আবারো বললেন,

-হিসাব কর সিয়া!দু বছর আগে তোকে একবার আংটি পরিয়েছি,এবার এসে আরো দু বার পরালাম,একবার তোর অজান্তেই রেজেস্ট্রি হলো,আবার সবার সামনে গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে রেজেস্ট্রি,কবুল পরিয়ে বিয়ে করবো।কেসটা কি দাড়ালো?তিন তিনবার আংটি পরানো,দু দু বার রেজেস্ট্রি,তিনবার কবুল বলে বিয়ে করা বউ হবি তুই আমার।আর তুই এখনো আমাকে ভাইয়া বলে ডাকছিস?ধর্মে সইবে না সিয়া!পাপ লাগবে তোর!পাপ!যাকে বলে মহাপাপ!

ওনার কথা বলার ভঙিমায় হাসবো না কাদবো বুঝে উঠলাম না।সে উত্তরের আশায় আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে।নিজেকে সামলে বললাম,

-আ্ আসলে,অ্ অভ্যাস তো…তাই…

-আদর করলেই সব অভ্যাস একদম জানালা‌ দিয়ে পালাবে।এবার সুন্দরমতো শুদ্ধ বলে ডাক,নইলে…

কথা শেষ না করেই বাকা হাসলেন উনি।গলা শুকিয়ে গেলো আমার।একটা শুকনো ঢোক গিললাম।উনি এগোতে গেলেই লাফিয়ে উঠে বললাম,

-বলছি বলছি,শুদ্ধ!বলেছি।বলেছি তো।শুদ্ধ।শুদ্ধ!

-ওয়াহ্!খুব বেশি আর তাড়াতাড়িই কাজে দিলো ডোজটা!তিনবার?ওগো শুনছো ডাকটাও আদায় করিয়ে নিতে পারতাম মনে হচ্ছে!

আমি ওভাবেই তাকিয়ে।উনি আবারো আরেকটু পিছিয়ে দাড়িয়ে বড়সড় করে হেসে বললেন,

-পারফেক্ট!

নিজের দিকে তাকালাম।উনি হাসতে হাসতেই এগিয়ে এসে কিছুটা ফিসফিসিয়ে বললেন,

-একদম বউ বউ লাগছে!

চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।কান,গাল অসম্ভব গরম হয়ে গেছে আমার।উনি একবার আংটি,একবার গলার পেন্ডেন্ট, একবার নথ,তো একবার টিকলিটা ছুইয়ে দিয়ে বললেন,

-পৃথিবীর সমস্ত আলো এগুলোতে উপচে পরছে জানিস সিয়া?আমার পৃথিবীকে আরো ঝলমলে করে দিচ্ছে এরা।তুই সামনে থাকলে,কোনো অন্ধকার,কোনোদিনও গ্রাস করতে পারবে না আমাকে।কোনোদিনও না!

মুগ্ধতার বহর ধীরে ধীরে হৃদয়সিন্ধু দখল করে নিচ্ছে আমার।তারদিকে তাকালাম।আমার তো মনে হচ্ছে,তার বলা প্রতিটি আলোর প্রতিফলন তার সেই উজ্জ্বল চেহারাতেই নিমীলিতভাবে সমর্পিত।উনি একটু ঝুকে বললেন,

-যাওয়া যাক?

এতোক্ষনে যেনো হুশ ফিরলো আমার।মনে পরলো কোনো এক স্বাপ্নিক দুনিয়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন উনি আমাকে।কিন্তু বাস্তবে তো পিছনে ফেলে এসেছি শেহনাজ মন্জিল।ভয় দানা বাধতে লাগলো মনে।

-ভয় পাচ্ছিস?

….

শুদ্ধ আমার দুগাল ধরে বললেন,

-আমি আছি তো!ভরসা নেই আমার উপর?

চেচিয়ে বলতে ইচ্ছে করলো-নিজের চেয়েও বেশি।কিন্তু বলতে পারি নি।গলাতেই আটকে ছিলো কথাটা।শুদ্ধ হাত ধরেই নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন আমাকে।তারপর ঘুরে এসে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।ততক্ষনে আমি সিটের উপর দু পা তুলে হাটু জরিয়ে বসেছি।বাকা হয়ে শুদ্ধর দিক হয়ে বসে তার দিকেই তাকিয়ে‌ আছি একধ্যানে।উনি স্টেয়ারিং ধরে সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

-এভাবে তাকিয়ে থাকলে এক্সিডেন্ট হওয়ার আগেই তোর নজরে ঘায়েল হয়ে মারা পরবো আমি।

ধ্যান ভাঙলো।পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসলাম আমি।অন্যসময় হলে হয়তো লজ্জা পেতাম।কিন্তু এখন রাগটা জেগে উঠেছে।একনজর আবারো তারদিকে তাকালাম।কল্পনায় তার পান্জাবিটার কলার ধরে,চোখে চোখ রেখে,দাতে দাত চেপে বলে দিয়ে আসলাম,
-আর কোনোদিন মরার কথা বললে মেরে ফেলে মরে যাবো!

সেটা কল্পনাতেই ছিলো।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।শুদ্ধ আচমকাই আমার মাথা চেপে ধরলেন তার বুকে।শান্তভাবে বললেন,

-তোর কি মনে হয়?তোকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো আমি?শুনতে পাচ্ছিস এদের লাবডাব?এর মানে বুঝতে পারছিস?সিয়ার সাথেই এরা জুড়ে আছে,আর এদের সাথে সিয়া।কোনোভাবে দুরে রাখতে পারবো না তোকে,থাকতে পারবো না আমিও।যেখানেই থাকবি,মনে রাখিস,শুদ্ধ কখনো তোর পিছু ছাড়বে না।তাই কখনো লুকোচুরি খেলার কথা চিন্তাও করিস না আমার সাথে।কখ্খনো আলাদা হতে দেবো না তোকে আমার থেকে।কোনোদিন না!বলেছি তো!শুদ্ধর সিয়া শুদ্ধরই!ওর হয়েই থাকবে।সবসময়!

কপালে ঠোট ছুইয়ে আমার সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিলেন উনি।হাসি ফুটলো মুখে।মাথা নিচু রেখেই মুচকি হাসলাম।টের পেলাম কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও খানিকটা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন শুদ্ধ।

___________

শেহনাজ মন্জিল পৌছালাম আমরা।গাড়ি থেকে নামলাম।গুটিগুটি পায়ে এগোলাম বাসার দিকে।গেইট খোলা।ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই পরিবারের প্রতিটা সদস্যের উপস্থিতিতে গায়ে কাটা দিলো আমার।শুদ্ধ পাশে দাড়িয়ে হাত ধরলেন আমার।একপলক তারদিকে তাকালাম।পরমুহুর্তেই চোখ সোজা সিঙ্গেল সোফায় বসা আব্বুর দিকে চলে গেলো।সে শক্তভাবে বসে।চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।দীদুন বললো,

-যীনাত?ইনসুকে নিয়ে ভিতরে যা!

শুদ্ধ আমার হাত ধরে রেখেই বললেন,

-দীদুন,সবটা…

-যা বলার আমি বলে দিয়েছি দাদুভাই।আর হ্যাঁ।তোমরা সবাই আর কিছুদিন থাকছো শেহনাজ মন্জিল।সবাই মানে সবাই।চারদিন পর যে ওনার মৃত্যুবার্ষিকী সেটা নিশ্চয়ই তুমি ভুলে যাওনি আসাদ?ইয়াদ?তুমি?

সেজোকাকু,আব্বু দুজনেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালেন।মানে ওনারা থাকবেন।এখানে ঠিক কি ঘটেছে কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।কেনো যেনো মনের ভিতরটায় ভয় হচ্ছে প্রচন্ড।আব্বুর গম্ভীরতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে সে ভয়টা।অস্থির লাগছে আমার।শুদ্ধর দিকে তাকাতেই সে মাথা নেড়ে বুঝালো শান্ত হতে।হাতটা ছেড়ে দিলেন উনি।যীনাত আপু এগিয়ে এসে বললো,

-চল ইনসু,রুমে চল!

নিচদিক তাকিয়ে পা বাড়ালাম রুমের দিকে।তবে হাত পা কাপছে আমার।যীনাত আপু তো এখানেই ছিলো,কি হয়েছে সবটাই জানে ও।আমাকেও বলবে সবটা।কিন্তু তা ঠিক কি?

#চলবে…

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
🎁সারপ্রাইজ পর্ব🎁

শ্বাস আটকে দাড়িয়ে আছি।শুদ্ধ ভাইয়ার বলতে চাওয়া কথাগুলো শোনার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছে।তবে ভয়ও হচ্ছে কেমন যেনো।এক অদ্ভুত ভয়!উনি যা বলতে চলেছেন তা আমি সহ্য করতে পারবো তো?কিছুক্ষন আগে বলা ওনার কথা আর সম্বোধনগুলোতে এলোমেলো লাগছে নিজেকে।বাকিটুক শোনার সাহস হচ্ছেই না।শুদ্ধ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,

-শেহনাজ মন্জিল!বরাবরই আমার আনন্দভুমি।সব কাজিনরা মিলে কতো মজা করেছি ওখানে,হিসেব নেই।পড়াশোনার ফাকফোকরেই আসতাম,লুফে নিতাম সবার সবটুকো আদর,ভাইবোনদের আড্ডামাস্তির সুখ।ছোটবেলা থেকেই ওরা আমাকে এটিচিউড বয় বলে ক্ষেপাতো।আমিও আরো বেশি ভাব নিয়ে খেতাবের পুর্ন প্রতিফলন ঘটাতাম আমার কাজে।তবুও,সবাই আমাকে নিয়েই মাতামাতি করতো।সবটা ভালোই ছিলো।

কিন্তু প্রতিবার,প্রতিবার একজোড়া ভ্রু কুচকানো চোখের দিকে তাকাতেই মজাগুলো কিছুটা কমে যেতো আমার।বুঝতাম সে মানুষটা কখনোই পছন্দ করে নি আমাকে।সবাই তাকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে পরতো বলে জেলাস হতো সে।নাকমুখ কুচকে সব আড্ডার আসর ছেড়ে উঠে যেতো,রাগ দেখাতো এর ওর উপর।কথা বলতো না আমার সাথে।একসময় আমার বেশ মজাই লাগতে শুরু করলো তার এই রাগ আর জেলাসিগুলো।বললাম না,এটিচিউড বয় ছিলাম,ইগ্নোর করে আরো ভাব দেখিয়ে আরো সবাইকে নিয়ে মেতে উঠতাম,তাকে রাগাতেই।

পাঁচবছর আগে তাপসী আপুর বিয়ের চারদিন আগেই আম্মু আব্বু চলে আসে শেহনাজ মন্জিল।আমি ইচ্ছে করেই আসি নি তাদের সাথে।চেয়েছিলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো।কে জানতো,সে বারের শেহনাজ মন্জিলে আগমন আমার জীবনকে পুরোপুরিভাবে উলোটপালোট করে দিয়ে আমাকেই সারপ্রাইজ দেবে!

গাড়ি থেকে নামতেই কারো হাসির শব্দ।কোনো মেয়ের গলা।পা আটকে গেলো আমার।এমন হাসি কোনোদিন শুনেছি বলে মনে পরছিলো না।ভেতরটায় আচমকাই‌ ধুকধাক শব্দ শুনতে পেলাম।মনে হলো এই হাসি আমাকে‌ বিলিন করার ক্ষমতা রাখে।হারিয়ে যাবো আমি এতে।যা প্রথমবারের মতো নতুন এক অনুভুতির জন্ম দিয়েছিলো আমার ভেতরে।হাসির আওয়াজ থামলো।নিজেকে সামলে সবেমাত্র গেইটের ভেতরে পা ফেলেছি,কেউ একজন পাশ থেকে একগাদা রঙ ছুড়ে মারলো চোখেমুখে আমার।খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বললো,

-আজ তো রঙ ছাড়া একটাকেও বাসায় ঢুকতে দেবো না!তাপসী আপুর বিয়ে বলে কথা!রাঙিয়েই ছাড়বো!

চোখটা ডলে তারদিক মাথা তুলে তাকালাম আমি।তেরো চৌদ্দর কাছাকাছি বয়সের একটা মেয়ে,চোখমুখসহ সারা গায়ে আবির মাখা,ঘাড়ের নিচের ছাড়া চুলগুলো নড়ছে বাতাসে,গায়ের সাদা গাউনটা সাতরঙা রংধনুর মতো দেখাচ্ছে।তার পিছন থেকে খুব জোরেসোরে আধরঙা চেহারা নিয়ে রিফাত ডাক লাগালো,

-ইনসু…..!

-ইনসু?আবিররাঙা ইনসিয়া।শ্যামবর্নের,পাখির মতো মিষ্টি সুরে হাসতে থাকা শ্যামাপাখি,সিয়া!চট করে মাথায় বসে গেলো নামগুলো।ফাকা মাথা নিয়ে দাড়িয়েছিলাম।কিন্তু মনটা রঙিন হয়ে উঠেছিলো আমার।সে সত্যিই তার রঙে রাঙিয়েছিলো সেদিন আমাকে।আজীবনের তরে।

আমি জমে দাড়িয়ে রইলাম।কর্নগোচর হওয়া শব্দরাশি সামনে অশান্ত জলরাশির মতোই হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।শুদ্ধ ভাইয়া আমার হাত মুঠো করে ধরে বললো,

-শুধুমাত্র সেটুকোতে থেমে ছিলো না সে জানিস সিয়া!ডাক শুনে ধরফরিয়ে উঠে‌ আমার হাত ধরে পিছনে গিয়ে দাড়ালো।লুকালো বলা চলে।পিঠের শার্ট খামচে ধরে দাড়িয়ে ছিলো সে।আর সে ছোয়াতে স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিলাম আমি।তার পরিবর্তে সামনে থেকে ছুড়ে মারা কয়েক বালতি ভর্তি গোলানো রঙ সবটা গায়ে এসে পরলো আমার।রঙিন বর্ষন!

মুখ থেকে আবির ধুয়ে যেতেই আমাকে দেখে একপ্রকার ছুটে পালালো রিফাত,সাথে আরো দু,তিনটে মেয়ে।রিফাত জানতো,শুদ্ধ ছাড়তো না ওকে।তা দু সেকেন্ড আগে আসলেও বা দুদিন আগে আসলেও।সত্যিই তাই।ওই‌ রঙের বালতিতেই ওকে চুবানোর হিসাবটা আগে কষতাম আমি।কিন্তু তা হলো কই।বাস্তবে ফিরে পিছনে লুকানো সেই‌ শ্যামাপাখির হাত ধরে একটানে সামনে দাড় করালাম।আমি মানুষটাকে না দেখেই চঞ্চল হরিণীর মতো বন্ধ করে‌ নিলো সে তার চোখজোড়া।

ছিটেফোটা আবির লেগে থাকা সেই মায়াবী মুখ,কপালের ভাজ,সর্বশক্তিতে খিচে বন্ধ করে নেওয়া চোখ,সে চোখের ঘন পাপড়ির কম্পন,কামড়ে ধরা রাখা ঠোট,ঠোটের নিচে কালো ডট চিহ্ন,কানের কাছে আধভেজা চুলগুলো থেকে গলা ছুয়ে গরিয়ে পরা পানি,সে গলায়,ঠিক বিউটি বোনের কাছে মধ্যবেলার গলানো রোদ্দুরে জ্বলজ্বল করতে থাকা আরেকটা তিল।দুনিয়া থেমে গিয়েছিলো আমার সিয়া!অজান্তেই কখন তার ঘাড়ের চুলগুলো মুঠো করে ধরেছিলাম,জানিনা।সে কেপে উঠে একহাতে তার চুলে থাকা আমার হাত ধরলো।আরেকহাতে থাকা আবির আবারো ছুড়ে মারলো আমার মুখে।অস্ফুট স্বরে শুধু বললো-ছ্ ছাড়ুন!
হাত আলগা হয়ে গেলো আমার।চোখ মেলেই একছুটে পালালো সে।হতভম্ব হয়ে ঠিক কতোক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে ছিলাম জানিনা।ভেতর থেকে সিফাত ভাইয়ারা এসে বাসায় নিয়ে যায় আমাকে।

এতোক্ষনে শ্বাস বেরোলো ভেতর থেকে আমার।সেদিন মানুষটা কে ছিলো তা দেখিনি আমি,কিন্তু সে মানুষটা এভাবে দেখেছিলো আমাকে?শুদ্ধ ভাইয়া ছিলেন না বলেই হয়তো অতোটা খুশিতে মেতেছিলাম।কিন্তু যে হাতজোড়া আমার চুল মুঠো করে রেখেছিলো,তার উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করেছিলাম আমি।ক্ষনিকের মধ্যে মনের মধ্যে দিয়ে ঝড় তুলে দিয়ে যাওয়া কিছু অজানা অনুভুতিতে শিউরে উঠেছিলাম।একছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে বসে কাপছিলাম শুধু।কিন্তু সে কম্পন কেনো ছিলো তা তো আজোবদি অজানা আমার!শুদ্ধ ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

-সে সময়টা তারপর প্রতিটা মুহুর্তে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছি।পারিনি।তুই যতোবার সামনে আসতি,ততবার ইচ্ছা করতো তোর সামনে দাড়িয়ে বলতে,আরেকবার আমাকে তোর রঙে রাঙাবি সিয়া?কিন্তু পরপরই নিজেকে সামলে নিতে হতো আমাকে।তোর চাওনি,আমার সামনে থাকলে ক্ষীন কন্ঠস্বর,কখনো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ভেজা চুলের ঘ্রান,কখনো বা হঠাৎই কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ছোয়া!পাগল পাগল লাগতো আমার।কেনো তা বুঝে উঠতে পারি নি তখন।ভাবতাম,বয়সের দোষ ছিলো আমার।তাছাড়া সম্পর্কগুলোও এমন,যা ভাবছিলাম আমি তা অসম্ভব।তাই কোনোমতে নিজেকে গুটিয়ে রেখে তাপসী আপুর বিয়েটা পার করি।

ফিরে আসি ঢাকাতে।বিশ্বাস কর,কিচ্ছু ভাবতে পারিনি ওই তিনবছর তোকে ছাড়া।বুঝতে পারলাম,আমি ওই শ্যামাপাখিতে আসক্ত হয়ে গেছি।ভালোবাসি তাকে।ছটফট করতাম শুধু আজাদ ম্যানশনে।মনটা কিছুতেই সামলাতে পারিনি।কতোবার লুকিয়ে চুড়িয়ে শেহনাজ মন্জিল এসে তোকে দেখে গেছি,তোর হাসিতে নিজেকে ভিজিয়ে শান্ত করেছি হিসেব নেই।

তারপর হসপিটালে আংটিবদল!সেদিনও মুখোমুখি হতাম না তোর,দুর্বল হওয়ার ভয়ে।কিন্তু দাদুভাইয়ের জন্য সবটা পাল্টে গেলো।আংটিবদলের পর যখন তোকে নিয়ে ভাবার পুরোপুরি অধিকার ছিলো আমার,আব্বু বললেন না ভাবতে।কি করে থেকেছি আমি সেটা আমিই জানি সিয়া!আসি নি আর তোর সামনে,কিন্তু জ্বলেছি।পুড়েছি।সিয়া নামের রোদ্দুরে!তোর নামের রোদ্দুরে!এজন্যই তুই‌ আমার রোদ্রময়ী!আমার!

উনি আবারো আমার দিকে ফিরলেন।ধুপ করে দু হাটুতে বাধানো ঘাটে বসে পরলেন আমার সামনে।অসহায়ভাবে বললেন,

-তোকে ভালোবাসি সিয়া!খুব ভালোবাসি!যেদিন বুঝিনি,সেদিন থেকেই ভালোবাসি!নিজের চেয়েও বেশি,সবকিছুর চেয়েও বেশি।যে ভালোবাসা এক কারনে তিনবছর,আরেক কারনে আরো দু বছর,পাঁচ পাঁচটে বছরের অপেক্ষার রোদ্দুরে পুড়ে অসম্ভব খাটি হয়ে উঠেছে বিশ্বাস কর।তৃষ্ণার্ত মন এখন সবটা ভুলে শুধু তোকেই চায়!আর কিচ্ছু চাই‌না আ‌মার।শুধু তোকে চাই।শুধুই তুই।আর পারছি না এই আড়ালে আবডালে থাকতে সিয়া।জাস্ট পারছি না!এবার তো তৃপ্ত হোক এই উত্তপ্ত হৃদয়।তোর ভালোবাসার বর্ষনে!

তার কথাগুলো শেষ করে উনি আমার দিকে তাকিয়েই কিছু দিয়ে পানিতে ঢিল ছুড়লেন উনি।দুরে চলা লঞ্চের শব্দটাকে পেরিয়ে সেই ঢিলের শব্দ কানে বাজলো আমার।সাথেসাথে তার পিছন থেকে একসাথে অনেকগুলো ফানুস উড়তে লাগলো।কোথাও থেকে “baby won’t you tell me” গানটা বাজতে শুরু করলো।শুদ্ধ ভাইয়ার ঠিক পিছনে কয়েকটা জুটি একসাথে দাড়িয়ে উড়তে থাকা ফানুসগুলোর দিকে তাকিয়ে।চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকালাম আবারো।সন্ধ্যাতারার পাশে ওড়া ফানুসগুলোর মোহনীয় আলোতে,এক চিলতে হাসি নিয়ে থাকা,সেই মোহনীয় মুখ!

চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো আমার।এভাবেও ভালোবাসার সঙ্গা হয়?আমার জন্য হয়?কিভাবে সম্ভব?এই পাগলামী ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা রাখি আমি?তার এই পাগলামির তুলনায় কি দিয়েছি তাকে?কিই বা দিতে পারবো?শুদ্ধ ভাইয়া উঠে দাড়ালেন।চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।কিছুটা নিরবতা।আমি নিশব্দে কাদছি তার বুকে মুখ গুজে।পাখিরা ঘরে ফিরছে দলবেধে অনেক আগেই।একেরপর এক জ্বলে উঠতে লাগলো দুরের আলোর উৎসগুলো।শুদ্ধ ভাইয়া আমাকে ছাড়িয়ে চোখ মুছে দিলেন।এলোমেলো চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে বললেন,

-এটুকো শুনে এভাবে কাদছিস,বাকিটুকো কে শুনবে তবে?

বিস্ময়ে তাকালাম।আজ এই‌ লোকটা তার পাগলামিতে আমাকেও পাগল করে দেবে।একটার পর একটা কথায় ইতিমধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছি।আর কি বলবেন উনি? আরো এলোমেলো হয়ে যাবো আমি।শুদ্ধ ভাইয়া বাকা হেসে বললেন,

-তুই যে মিস থেকে মিসেস ডট ডট ডট হয়েছিস,সেটা শুনবি না?

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।উনি আমাকে ছেড়ে মুচকি হেসে পান্জাবির হাতাটা টেনে গুটিয়ে নিলেন কিছুটা।আমারদিক তাকিয়েই পেছোলেন কয়েকপা।তারপর ঘুরে গিয়ে গাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসলেন।উনি বুকে একহাত গুজে একহাতে নিজের থুতনি ধরে হেসে আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন।আগ্রহ নিয়ে চোখ বুলালাম কাগজটাতে।ওটা দেখে শরীরটা নিজের ভর ছেড়ে দিচ্ছিলো যেনো।দু পা পিছিয়ে গেলাম।শুদ্ধ ভাইয়া কোমড় জরিয়ে ধরে সামলে নিলেন আমাকে।হাত থেকে কাগজটা নিয়ে মাথা নিচু করে বললেন,

-এজন্য আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবো।

ভাষাহীনভাবে ওই নতমস্তকের মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সোজা হয়ে দাড়ালাম কোনোমতে।উনি আমাকে ছেড়ে মাথা নিচু রেখেই বললেন,

-তোর আঠারোর পরই আমাদের বিয়ের কথা ছিলো।তোর আঠারোতম জন্মদিন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হতো সিয়া।কিন্তু আব্বু,ছোটকাকু কেউ মনে রাখেনি কথাটা।সবাই সবটা ভুললেও আমি পারি নি।কিভাবে ভুলতাম?তোকে নিজের করে পাওয়ার কথা?নিজেকে ভুললেও সেটা অসম্ভব ছিলো আমার জন্য।তাই নিজের মতো করেই….

-এসব…এটা কিভাবে সম্ভব?

উনি আবারো মুচকি হাসলেন।একপা আমার দিকে এগিয়ে বললেন,

-দু মাস আগে উনিশে পা দিলি তুই।জন্মদিনটা ভুলিস নি নিশ্চয়ই?

রোবটের মতো মাথা নেড়ে না বোঝালাম।জন্মদিন পালন করা হয়না আমার।কিন্তু সেদিন!দীদুনের কথায় অনেকগুলো পথশিশু এসেছিলো ওই সন্ধ্যায়।আম্মু খাইয়েছিলো সবাইকে।ওভাবে জন্মদিন পালন!হয়তো জীবনের সুন্দরতম মুহুর্তগুলোর একটি।শুদ্ধ ভাইয়া হেসে দিয়ে বললেন,

-ক্যাবলাকান্ত সিয়া!আসলে কি বলতো?শেহনাজ মন্জিলে তো আর আমার গিয়ে তোর বার্থডে সেলিব্রেশন পসিবল না।যেহেতু দীদুন তো সবটাই জানতো,তাই তাকেই ম্যানেজ করেছিলাম।বাসায় সে সন্ধ্যায় যে বাচ্চাকাচ্চাগুলো গিয়েছিলো,সবাইকে আমিই পাঠিয়েছিলাম,ছোটমা খাওয়ালো সবাইকে।আর খাওয়া শেষে সবাই গেলো বার্থডে গার্লের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে!

আমি জানতাম,আমার সিয়া এরকম একটা এক্সপেরিয়েন্স চেয়েছিলো জীবনে,একটু হাটকে টাইপ‌ কিনা!আড্ডামহলে একবার শুনেছিলাম,তার নাকি লাইফে একবার হলেও সেলিব্রিটি ওয়ালা ফিল চাই!তাই বাচ্চাগুলোকে পাঠালাম।ওদের সবারই বার্থডে কার্ডে এতো এতো অটোগ্রাফ দিয়ে দিলি তুই।এন্ড দ্যা স্পেশাল ওয়ান!ওটা দীদুনের কাছে ছিলো।উপরে থাকা কার্ড দেখে সেটাতেও এক্সাইটমেন্টে সাইন করে দিলি তুই!এন্ড গেইস হোয়াট?সেটা ছিলো এই কাগজটা!আমাদের রেজিস্ট্রি পেপার!আমি তো আগেই সাইন করে রেখেছিলাম।তোরটাও ঠিক আঠারো শেষে আদায় করিয়ে নিয়েছিলাম।নাও মরাল অফ দ্যা স্টোরি ইজ,অফিসিয়ালি,লিগালি,গত দুই মাস আট দিন চার ঘন্টা হলো তুই আমার বউ!মিসেস ইরহাম আজাদ শুদ্ধ!

তব্দা ‌মেরে ওভাবেই দাড়িয়ে আমি।মাথা কাজ করছে না আমার।শুদ্ধ ভাইয়ার হাতের কাগজটায় পাশের কোনো এক ল্যাম্পোস্টের আলো পরে লেখাগুলো স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।চোখ পলক ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে যেনো।যথেষ্ট বাতাস চারপাশে,তবুও শরীর ঘেমে উঠতে লাগলো।উনি এগিয়ে এসে আমার গলায় লেপ্টে থাকা চুলগুলো পিছনে দিয়ে গলায় ছুইয়ে দিলেন।শিউরে উঠলাম আমি।কোমড় জরানো হাতটা আরো চেপে ধরে বললেন,

-একটা কথা বলবো?এই ডট চিহ্নগুলো!এগুলো আমার শ্যামাপাখির মোহে ফেলে দেয় আমাকে।ঠোটের নিচের,বিউটি বোনের কাছে,আর সেদিন সিফাত ভাইয়ার বিয়েতে দেখা এইখানটার ডট চিহ্ন…নেশায় পরে যাই আমি সিয়া!আপনার আসক্তি যে আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে আমাকে মিসেস ডট ডট ডট!

খামচে ধরলাম তার পান্জাবিটা।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন,

-ওমন করে না বউ!পাগলামীটা এখানে নাই বা দেখালাম!

আমি তাড়াহুড়ো করে সরে দাড়ালাম।আড়চোখে চারপাশটা দেখলাম আবারো।কেউই নেই।শুধু কিছুটা দুরে একটা টঙের দোকানের ঝাপ খোলা।নিচদিক তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছি।শুদ্ধ ভাইয়া দুহাত তার পিছনে দিয়ে আমার দিকে কিছুটা ঝুকে বললেন,

-সো?আইনিভাবে তো বিয়েটা হয়ে গেছে।এবার এক কাজ কর সিয়া!একদম অতিভদ্র ভদ্র মেয়ের মতো এখনই তিনবার কবুল বলে দে,আজই আজাদ ম্যানশন নিয়ে যাবো তোকে।নিজের করে নেবো একদম!

কাপতে লাগলাম আমি।শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুততর হলো।ভিতরটাতে ধুপধাপ শব্দে ভাঙচুর হচ্ছে যেনো।ফাকা নদীপাড়ের দমকা কোনো এক শীতল হাওয়া কানে প্রতিধ্বনি করে বারবার বলতে লাগলো,
“সে সত্যিই তার অস্তিত্বকে জানান দিলো আজ।তোকে বুঝিয়েও দিলো,তুই শুধুই তার!শুদ্ধর সিয়া শুধুই শুদ্ধর!শুধুই তার!”

#চলবে…