নীল কণ্ঠ পর্ব-০৬

0
265

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-০৬
#সাদিয়া

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো কণ্ঠ। নীলের বারান্দায় বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ রয়েছে। এগুলো সব নীল লাগিয়েছে। কাউকে ধরতে দেয় না সে এগুলো। কণ্ঠ নীলের কালো গোলাপ গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিঁড়ে কানে গুজে দিলো। কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হলে কণ্ঠ বুঝতে পারলো সে কি করছে। কণ্ঠ নিজের কাজে অবাক হলো। সে আগে কখনো এমন কাজ করেনি। এগুলোতে তার কোনো কালেই কোনো আগ্রহ ছিলো না। সে সাজগোছ একদম পছন্দ করতো না। কিন্তু এখন? এখন কেন যেন সাজতে ভালো লাগে। আয়নায় নিজেকে দেখতে ভালো লাগে। প্রেমে পড়লে শত অপছন্দের জিনিসও পছন্দের হয়ে ওঠে। এই প্রেম শব্দটা কতো অদ্ভুত। কণ্ঠের মতো একজন মেয়েকেও নাড়িয়ে দিলো! কণ্ঠ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললে কফিতে চুমুক দেয়।

রাত আটটা। নীলদের বাসার সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। সকলে বলতে নীলের বাবা মা আর নিতু। তারা নীল-কণ্ঠের জন্য অপেক্ষা করছে।
–নিতু যাও তো তোমার ভাইয়া আর ভাবিকে ডেকে নিয়ে আসো।

–ঠিক আছে যাচ্ছি।

নিতু যেতে নিবে তার আগেই সে দেখতে পেলো সিঁড়ি দিয়ে নীল আর কণ্ঠ নামছে। তবে অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে নয়। তারা ঝগ’ড়া করছে আর নামছে। ঝগ’ড়া করতে করতে দুজনে টেবিলে এসে বসলো।

–নীল এটা কোন ধরনের অস’ভ্যতা?

নীল বাবার কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আমি আবার কি অস’ভ্যতা করলাম?

–কণ্ঠ এখন আর তোমার বেস্টফ্রেন্ড নেই শুধু। সে এখন তোমার বউ। তাই ওকে তুমি করে বলবে। নট তুই।

–আগে এই লেডি ভয়ংকরীকে বলো আমাকে তুমি করে বলতে। পা’পী নারী একটা স্বামীকে তুই করে বলে।

–বেশ করি আরো বলবো। তুই তখন আমার চুল ধরে কেন টানলি?

–ইচ্ছে করে টেনেছি নাকি? ভুলে টান লেগে গেছে। তাই বলে কি তুই আমার মাথায় সুনা’মি আনিয়ে দিবি নাকি।

–চুওওপ!
মায়ের ধমকে দুজনে চুপ করলো।

–তোমাদের দুজনকেই বলছি। একে অপরকে তুমি করে সম্মোধন করবে। আর যেন এমন না দেখি।
নীল কিছু না বলে খাওয়ায় মন দিলো। ডিনার শেষ করে নীল নিজের ঘরে চলে গেলো। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে তাকে অযথা বাবা-মায়ের বকা শুনতে হবে। নীল উপরে চলে যাওয়ার কিয়ৎক্ষণ পর কণ্ঠও নীলিমার হাতে হাতে কিছু কাজ করে দিয়ে রুমে চলে যায়।
নীল আর কণ্ঠ চলে যেতেই নীলিমা গিয়ে কবিরের কাছে বসলো।
–আচ্ছা ওরা কি নরমাল কাপল হবে না কোনোদিন?

–কেন হবে না? অবশ্যই হবে। কিন্তু ওদের একটু সময় দিতে হবে। ওরা যদি একান্তে কিছু সময় কাটায় তাহলে দেখবে ওদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

–আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়।

–কি কাজ?

–ওদের হানিমুনে পাঠালে কেমন হয়?

–খুব একটা মন্দ বলো নি। ওরা নিজেদের সাথে একটু সময় কাটাতে পারবে। সম্পর্কটাও আর শুধু বন্ধুত্বে আটকে থাকবে না। আমি কালকে সকালে ওদের ব্যপারটা বলে দেখবো।

–না না শুধু দেখলে হবে না। যে করেই হোক ওদের দূরে কোথাও পাঠাতে হবে।

–আচ্ছা আমি সকালে দেখছি।

কণ্ঠ রুমে গিয়ে দেখলো নীল সোফায় বসে বসে কপাল ঘসছে। কণ্ঠ বুঝতে পারলো নীলের মাথা ব্যথা করছে। আর করবে না-ই বা কেন? একটু আগে নীলের মাথার উপর দিয়ে যে সুনা’মি বয়ে গিয়েছে। কণ্ঠ কোনো কথা না বলে আবার নিচে গেলো। এক কাপ কড়া লিকার চা করে রুমে গেলো। রুমে এসে চায়ের কাপটা নীলের সামনে ধরলো।
–কি এটা?

–শুদ্ধ বাংলা ভাষায় ইহাকে চা বলিয়া গন্য করা হয়।

–আমার সামনে কি করছে?

–ডিস্কো ডান্স দিচ্ছে।

নীল কণ্ঠের দিকে বিরক্তির চাহনি নিক্ষেপ করলো।
–ইডি’য়েট তোর সামনে ধরেছি মনে এটা তোকে গিলতে দেওয়া হয়েছে।

–আমি চা পান করি না তুই জানিস।

–হ্যাঁ জানি। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা গিললে মাথা ব্যথা গায়েব হয়ে যাবে।

নীল জানে কণ্ঠকে শতবার না বললেও কাজ হবে না তাই সে চুপচাপ চায়ের কাপটা হাতে নিলো।
নীল চায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তা দেখে কণ্ঠ বললো,
–তোকে এটা দেখতে বা বিশ্লেষণ করতে দেওয়া হয় নি। গিলতে দেওয়া হয়েছে। তাই ফটাফট কাপ ফাঁকা চাই।

নীল মুখ গোমড়া করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। চুমুক দিতেই সে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। সে কখনোই চা পান করে না। তার চায়ের স্বাদ ভালো লাগে না। কিন্তু আজকে ভালো লাগছে।
–কিরে কেমন লাগলো?

নীল কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে বললো,
–খুব একটা মন্দ নয়।
কণ্ঠ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–বললেই পারিস ভালো হয়েছে। এত ঢং কেন করিস? আজাইরা পুরুষ মানুষ।
নীলকে কয়েকটা ব’কা দিয়ে কণ্ঠ বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়লো। অপরদিকে নীল সোফায় বসে আরাম করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। আহা অসাধারণ স্বাদ! নীল কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
–মিস ভয়ংক’রী ভালোই চা বানায়। চায়ের দোকান দিলে ভালো প্রফিড পাবে।

পরদিন সকাল বেলা….
সকলে নাস্তার টেবিলে উপস্থিত। নীল মাথা নিচু করে পরোটা খাচ্ছে। কণ্ঠ জুসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর তার পিএ সোনিয়ার সাথে কথা বলছে। কবির সাহেব কণ্ঠের কথা বলা শেষ হবার অপেক্ষা করছে। কণ্ঠ ফোন রাখতেই কবির সাহেব দুয়েকটা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করলো।
–নীল-কণ্ঠ তোমাদের আমার কিছু বলার ছিলো।

–জ্বী বাবা বলো।

–তোমাদের বিয়েটা তো স্বাভাবিক ভাবে হয় নি। আর বিয়ের এতদিন পরেও তোমাদের কোথাও যাওয়া হয় নি। তাই আমি ভাবছিলাম তোমরা যদি কিছু দিনের জন্য কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে।

–আমার সময় নেই।
ফট করে উত্তর দিলো নীল। আসলে সে একা কণ্ঠের সাথে কোথাও যেতে সাহস পায় না। অত্যাধিক ভয় কাজ করে মনের মধ্যে! নীল না বলায় ভ্রু কুঁচকালো কণ্ঠ।

–কি এমন রাজকার্য করিস তুই যে তোর সময় নেই।

–আম্মু অফিসে অনেক কাজ থাকে আমার।

–কাজ তুমি একা না আমিও করি। তাই আমাকে কাজ দেখাতে আসবা না। তোমরা যাচ্ছো মানে যাচ্ছো। এটা আমার অর্ডার।
এবার তিনি কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে বললো,
–কণ্ঠ মা তোমার কোনো অসুবিধা আছে।

–না বাবা।

–তাহলে তো হয়েই গেলো। তা বলো কোথাও যেতে চাও তোমরা।
নীল কিছু একটা ভেবে বললো,
–কক্সবাজার।

–কক্সবাজার?

–সমস্যা নেই বাবা। কক্সবাজার-ই ঠিক আছে।

–আচ্ছা তবে আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি। তোমরা আজ সন্ধ্যায় বের হবে।

নীল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–আজ সন্ধ্যায়?

–কেন কোনো সমস্যা?

নীল মুখ গোমড়া করে বললো,
–না কোনো সমস্যা নেই।

–তোমাদের আজ অফিস যেতে হবে না। কণ্ঠ তুমি কাব্যকে ফোন করে বলে দাও। আর সব গোছগাছ করে নাও।

–ঠিক আছে বাবা।

রুমে এসে নীল বিছানায় টান টান করে শুয়ে পড়লো। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। সে বুঝতে পরে না সে কার কি ক্ষতি করেছে যে তার কপালে কণ্ঠের মতন বউ জুটেছে। সে ভাবলো। গভীর ভাবে ভাবলো। কিন্তু কিছু অনুসন্ধান করতে সক্ষম হলো না।
কণ্ঠ রুমে এসে দেখলো নীল কাঁদো কাঁদো মুখ করে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
–কিরে এভাবে শুয়ে আছিস কেন? গোছগাছ করবি না?
এবার নীল উঠে বসলো।
–তুই রাজি কেন হলি?

–রাজি হবো না কেন?

মুখটা আরেকটু কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বললো নীল,
–রাজি হবি কেন তুই?

–দেখ নীল এমনিতেই কয়দিন ধরে প্রচুর মেন্টাল স্ট্রেস গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে। তাই এটার দরকার আছে। আমি একটু রিফ্রেশমেন্ট চাই ইয়ার। আমি ক্লান্ত। বিশ্বাস কর আমি প্রচন্ড ক্লান্ত। তোর যদি যেতে মন না চায় তুই যাস না। আমি একাই চলে যাবো।

এবার নীল আমতা আমতা করে বললো,
–আমি কখন বললাম যাবো না।

–তাহলে ঠ্যাডার মতন বসে আছিস কেন? গোছগাছ কি তোর নীরা এসে করে দিয়ে যাবে ইডিয়েট।

–কে নীরা?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো নীল। নীলের প্রশ্নে অদ্ভুত এক রিয়েকশন দিলো কণ্ঠ।

–সিরিয়াসলি নীল? তুই নীরা কে চিনিস না?

–চিনলে কি জিজ্ঞেস করতাম নাকি?

–তোর না হওয়া বউয়ের নাম কি ছিলো?

নীল নিজের ভ্রুদ্বয় আরেকটু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলো,
–ওই মেয়ের নাম নীরা ছিলো? আসলে মনে নেই।

–মনে না থাকলেই ভালো। এখন উঠে দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নে।

সন্ধ্যায় নীল আর কণ্ঠ বেরিয়ে পড়লো কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। তারা বাসে করে যাবে। তাই তারা বাসস্ট্যান্ডে গেলো আগে। বাস ছাড়তে আর পাঁচ মিনিট বাকি। কণ্ঠ জানালার পাশের সিটে বসেছে। তার পাশের সিটে নীল। পাঁচ মিনিট পর বাস চলতে শুরু করলো। বাস চলা শুরু করার কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো নীল। ঘুমন্ত নীলের মাথা কণ্ঠের কাঁধে এসে পড়লো। কণ্ঠ চমকে পাশ ফিরে দেখলো নীল ঘুমিয়ে গেছে। কণ্ঠ আলতো হেঁসে নীলের মাথাটা সুন্দর করে নিজের কাঁধে রাখলো। পুরোটা সময় কণ্ঠ নীলকে দেখে দেখে-ই পার করলো।

#চলবে…..ইনশাআল্লাহ