নীল কণ্ঠ পর্ব-০৫

0
292

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-০৫
#সাদিয়া

–তা শৈবাল, নীরা ম্যাডামের সো কলড প্রেমিকের খোঁজ পেলে?

শৈবাল ঠোঁট টিপে হেঁসে বললো,
–জ্বী ম্যাম। নীরা আপার সো কলড প্রেমিক তাররর (একটু টেনে) সো কলড প্রেমিকার সাথে সাজেক ট্যুরে গিয়েছে।

নীরা যেন আরো অবাক হলো। তাহলে কি রাফাত তাকে ঠকা’লো? না না রাফাত এমন করতে পারে না। রাফাত তাকে কেন ঠকাবে? রাফাত তো তাকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। চার বছরের সম্পর্ক তাদের। তাহলে রাফাতের অন্য প্রেমিকা কোথা থেকে আসলো? ওরা হয়তো ভুল বলছে। হুম ভুলই বলছে। রাফাত মোটেও এমন নয়। সে খুব ভালো ছেলে।
নীরা বিভিন্ন কথায় নিজের মনকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত।
–আরে নীরা ম্যাডাম আপনার সো কলড প্রেমিকের সো কলড প্রেমিকারও রয়েছে। বাই দ্যা ওয়ে রাফাত যদি নিজের প্রেমিকার সাথে সাজেকে থাকে তবে তুমি কে?

–তুরুপের তাস!
বললো রিশা।

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কণ্ঠ বললো,
–ঠকই বলেছো। আর শৈবাল রাফাত শিকদারের যদি সাজেক ঘুরা শেষ হয়ে থাকে তবে তাকে একটু আমার দর্শন করিয়ো তো। ব্যা’টার কর্মফল দেওয়া বাকি।

–জ্বী ম্যাম।

কণ্ঠ এক নজর নিজের হাতে থাকা ঘড়িটা দেখলো।
–আচ্ছা শৈবাল আমাকে যেতে হবে। রিসেশনের সময় হয়ে এসেছে। আমার সোয়ামী হয়তো আমার অপেক্ষায় আছে।

–কণ্ঠ আপু তুমি বিয়ে করেছো?

–হ্যাঁ। কেন? তুমি কি ভেবেছিলে আমি চিরকুমারী থাকবো?

–না ঠিক তা না। কিন্তু তোমাকে কে বিয়ে করে অকালে শ’হিদ হতে চাইলো।

কণ্ঠ চোখ ছোট করে তাকালো নীরার দিকে। নীরা একটা মেকি হাসি দিলো। কণ্ঠ এবার দাঁত কেলিয়ে বললো,
–ওই তোমার না হওয়া বরকে নিজের না হওয়া বাচ্চার বাবা বানিয়ে দিয়েছি।

–মানে?

কণ্ঠ কোনোরূপ ভনিতা ছাড়াই বলে দিলো,
–নীলকে বিয়ে করেছি।

–কিহ্! কেন?

–ভালোবাসি তাই।
নির্লিপ্ত কণ্ঠে কথাটা বললো কণ্ঠ।

নীরা ভীষণ অবাক হলো। কণ্ঠ কাউকে ভালোবাসে এটা ভাবতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে তার চাইতেও হাজার গুন বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা মানতে যে কণ্ঠ নীলকে ভালোবাসে। এটাও সম্ভব? নীরা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কণ্ঠর দিকে। কণ্ঠ তার এমন দৃষ্টির মানেটা বুঝলো।
–অবাক হচ্ছো তাই না? আমিও অবাক হয়েছিলাম যখন বুঝতে পারলাম আমি একজনকে ভালোবাসি। তাও কাকে? নীলের মতন একটা ছেলেকে যে আমার বিপরীত মেরুর মানুষ। ওর সাথে আমার কোনো দিক দিয়ে মিলে না। আমরা সম্পূর্ণ আলাদা স্বভাব চরিত্রের মানুষ। কিন্তু ভালোবাসাটা না কিভাবে যেন হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। আর তুমি কিন্তু একটা বিগ থ্যাংক্স ডিজার্ভ করো।
নীরা এবার ভ্রু কুঁচকালো।
–তোমার জন্যই তো বুঝতে পেরেছিলাম আমি নীলকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। জানো তুমি যখন হেঁসে হেঁসে নীলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো তোমার মুখটা ভে’ঙে দিতে। রাতের বেলায় যখন নীলকে ফোন করলে ওর ফোন বিজি পেতাম তখন সব ধ্বং’স করে দিতে ইচ্ছে করতো। যখন তুমি নীলের হাত ধরে হাঁটতে মন চাইতো তোমার হাতটা সুন্দর করে তোমার শরীর থেকে আলাদা করে দেই। অনেক কষ্টে তোমাদের বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি জানো। দিন যেন কাট’ছিলে না। তুমি হয়তো ভাবছো যখন আমি নীলকে এতটাই ভালোবাসি তখন তোমাদের বিয়ে পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করলাম? আসলে কি বলো তো আমি নিজে ড্রামাকুইন না হলেও আই লাভ ড্রামা! আমার বিয়েতে ড্রামা হবে না তা হয় নাকি? কেমন বিধ’বা মার্কা লাগবে না? আর তোমাকে নিজের কব’জায় পেতাম কি করে বলো। জানো খুব ভেবে চিন্তে প্ল্যান বানিয়েছি। তোমাকে আর তোমার ওই লুজ কারে’ক্টার প্রেমিককে তো আমি ছাড়বো না। খুব শখ না আমার নীলকে ইউজ করার? করাচ্ছি তোমাদের। আমার নীলের দিকে চোখ তুলে তাকালে আমি তাকে দিনের বেলায় তারা দেখিয়ে দেবো। চিনো না আমাকে।

নীরা একটু ভয় পেলো। কারণ সে জানে কণ্ঠ ঠিক কতটা ভয়ংক’র।

–শৈবাল, রিশা নজর রেখো ওর দিকে।
বলে দরজার দিকে চললো। দরজার কাজে গিয়ে সে শৈবালকে কিছু একটা ইশারা করলো। অতঃপর সে চলে গেলো।

🍁
রিসিপশনের সময় হয়ে গেছে। মেহমানরা আসতে শুরু করে দিয়েছে। অথচ কণ্ঠের দেখা নেই। সকলে চিন্তায় শেষ। নীল শত বিরক্তি নিয়ে কণ্ঠের ফোনে একের পর এক ফোন করেই চলেছে। কণ্ঠ ফোনও তুলছে না।
–ইডিয়েট মেয়ে। সবসময় তো খুব ইন্টেলিজেন্ট গিরি দেখায় আর এখন দেখো ফোনটাও তুলছে না। আরে ভাই ফোন যখন ধরবিই না তখন ফোন সাথে কেন রাখিস। যত্তসব পাগলের দল। নিজে এক পাগল আমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে।

সবাই যখন কণ্ঠের চিন্তায় ব্যস্ত তখন দরজা দিয়ে হাসি মুখে নিজের বাবার হাত ধরে হেঁটে হেঁটে আসছে। কণ্ঠকে দেখে সকলের জানে যেন পানি এলো। অপরদিকে নীলের প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে।
কণ্ঠ গিয়ে নীলের পাশে দাঁড়ালো। নীল ফিসফিস করে কণ্ঠকে জিজ্ঞেস করলো,
–কোথায় ছিলিস তুই এতক্ষণ?

–ফুটবল মাঠে হাডুডু খেলতে গিয়েছিলাম।

–মানে?

–আরে ব’লদ দেখতেই তো পাচ্ছিস আইটেম বল সেজে এসেছি। তার মনে তো পার্লারেই ছিলাম।

নীল আর কোনো কথা বললো না। এই মেয়ের সাথে কথা বলা মানে নিজের মাথায় নিজে নারিকেল ফাটানো। রিসেপশনের অনুষ্ঠান খুব ভালো ভাবেই শেষ হলো। কণ্ঠের বাবা কণ্ঠ আর নীলকে তাদের বাসায় নিয়ে গেলো। যেহেতু কণ্ঠের মা নেই তাই কণ্ঠের বাবা আর কণ্ঠের ফুফু-ই সকল নিয়মকানুন পালন করেছে। কণ্ঠদের বাড়িতে দুদিন থেকে তারা আবারো নীলদের বাড়িতে আসলো।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো এক সপ্তাহ। কণ্ঠ আর নীলের মধ্যে টম এন্ড জেরি টাইপ সম্পর্ক এখনো চলমান। কণ্ঠ নীলকে ভালোবাসলেও তার কর্মকান্ডে তা প্রকাশ পায় না। সে নীলকে হে’নস্তা করার একটা সুযোগও হাত ছাড়া করে না। অপর দিকে বেচারা নীল বউয়ের অত্যাচারে অত্যাচারিত।

সকাল বেলা…
নীলদের বাড়ির সবাই নাস্তা করছে। এমন সময় কণ্ঠ ফরমাল ড্রেসে নিচে নামলো। কণ্ঠকে ফরমাল ড্রেসে দেখে নীলের বাবা প্রশ্ন করলো,
–কণ্ঠ মা তুমি এই ভাবে?

–আসলে বিয়ের চক্করে এতোদিন অফিস যাওয়া হয়নি। অনেক কাজ জমে গেছে। আব্বু একা হাতে আর সামলাতে পারছে না।

–তুমি চাইলে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে পারো।

–সরি বাবা। আব্বুর কাছে আমি তার শক্তি। আমি চাই না আমার আব্বু কমজোর হোক। যতদিন না কাব্য দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য হচ্ছে ততদিন আমি আব্বুর সাথেই থাকবো। আর আপনার জন্য তো আপনার ব’লদ মার্কা ছেলে আছেই।
নীল কিঞ্চিত রেগে কণ্ঠর দিকে তাকালো। কণ্ঠ সে দিকে পাত্তা না দিয়ে নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেলো।

কণ্ঠ অফিসে আসতেই সকল স্টাফ তাকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানালো। কণ্ঠ সকলের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো। একটু পর তার আব্বু আসলো তার কেবিনে।

–অফিসে না আসলেও পারতে।

–কেন? খুশি হওনি আমাকে দেখে?

–তা নয়। এখন তুমি বিবাহিত। এভাবে অফিসে আসাটা ওরা কিভাবে দেখবে?

–আব্বু রিল্যাক্স। আমি ওদের বলেই এসেছি। ওরা কিছু বলেনি। আর বললেও আমি কি আসতাম না নাকি? এটা আমার অফিস। হক আছে আমার। নাকি পর করে দিচ্ছো?

কণ্ঠের আব্বু আলতো হেসে বললো,
–তোমাকে পর করি কি করে বলো তো। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?

–কেন তোমার একটা পোষ্য ছাগ’ল আছে না সে কোথায়?

–ও বাসায়।

–বাসায় কি করছে? অফিসে আসবে না নাকি?

কণ্ঠের বাবা আমতা আমতা করে বললে,
–ও ঘুমচ্ছে।

কণ্ঠ এবার রেগে তার বাবার দিকে তাকালো।

–সকাল দশটা বাজে বাবা। আর ও এখনো ঘুমাচ্ছে? ও কি জীবনেও মানুষ হবে না। সারাজীবন ছাগল থেকে যাবে। কোথায় ভাবলাম ওর হাতে এবার সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু মনে হয় না এটা আর সম্ভব।

–আসতে পারি?

পরিচিত কণ্ঠ পেয়ে কণ্ঠ দিকে দরজার দিকে তাকালো। কাব্য দরজার সামনে ভদ্র ছেলের মতন দাঁড়িয়ে আছে।
–আসুন মহারাজ আসুন। আপনার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম।
কাব্য আমতা আমতা করে ভেতরে প্রবেশ করলো।

–এটা তোমার বাবার অফিস তার মনে এই না তুমি যখন খুশি তখন আসবে আর যখন খুশি তখন যাবে।
বেশ রেগে কথাটা বললো কণ্ঠ।

–এমন রাগ কেন করছো? আমি কি ইচ্ছে করে দেরি করি নাকি? দেরি হয়ে যায়।

–আচ্ছা। তা কেন দেরি হয়?

কাব্য কিছু না বলে আমতা আমতা করতে লাগলো।

–কি হলো বল?

–রাগছো কেন? তুমি তো জানোই আমার ঘুম একটু বেশি।

কণ্ঠ আর কিছু না বলে কাব্যকে নিজের কেবিনে যেতে বললো। কাব্যও বিনা বাক্য ব্যয়ে চলে গেলো। বাঘের সামনে কে বেশিক্ষণ থাকতে চায়?

–তোমার ছেলেটা দিন দিন কুম্ভকর্ণে পরিণত হচ্ছে। এর একটা বিয়ে দিতে হবে। বউ ঘরে আসলেই ঠিক হয়ে যাবে।

–কাব্যর তো পড়াশোনা শেষ হয়নি।

–তো কি হয়েছে? ওর বউ আসলে কি সে না খেয়ে ম’রবে? আর কাব্য তো ভালোই ইনকাম করে। তাছাড়া এতো বড় কোম্পানির মালিক ও।

–তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো। কাব্যর উপর যদি সবচেয়ে বেশি কারো অধিকার থেকে থাকে তা তোমার। আমি জানি তুমি ওর জন্য তাই করবে যা ওর জন্য উত্তম।
বলে তিনিও চললেন নিজের কাজে।

কাব্যের জন্মের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে তাদের মা মা’রা যায়। তখন কণ্ঠের বয়স দশ। কণ্ঠ ছোট বেলা থেকেই ম্যাচিয়ুর আর দস্যি টাইপের মেয়ে। অন্য মেয়েদের মতো আবদার ছিলো না তার। যা চাই তা সে আদায় করে নিতো। মা মা-রা যাওয়ার পর কাব্যকে সে বড় করেছে। নিজে ছোট ছিলো তবুও কি সুন্দর ভাইকে সামলেছে!

অফিসে আজ প্রথম দিন ছিলো বলে কণ্ঠ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেলো।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ
(গঠনমূলক মন্তব্য করিয়েন😒)