নীল কণ্ঠ পর্ব-০৮

0
334

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-০৮
#সাদিয়া

পরদিন সকাল বেলা….
কণ্ঠ নীলকে তার কফি দিয়ে এসে নাস্তার আয়োজন করছে। বাড়িতে শুধু সে আর নীল। নাস্তা বানিয়ে রেখে কণ্ঠ বের হবে। কালকে যে কাজটা অসম্পূর্ণ রয়ে গিয়েছিলো আজ তা পূর্ণ করতে হবে। হাতে সময় নেই বেশি। কাজ করার মাঝেই কণ্ঠ রান্না ঘরে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি টের পেলো। সে ঘাড় কাত করে দেখলো রান্না ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে নীল দাঁড়িয়ে আছে।
সকালে উঠে কণ্ঠকে পাশে না পেয়ে নীল নিচে আসে। এসে দেখে কণ্ঠ রান্না করছে। এপ্রিল মাসে শেষ দিকে গরম ভালোই পড়েছে। গরম আর গ্যাসের আগুনের তাপে কণ্ঠের নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। কণ্ঠের নাকে জমে থাকা ঘামগুলো নীলের কাছে যথেষ্ট মোহনীয় লাগছে। এটাও কি সম্ভব? হতে পারে। আমরা যদি কারো প্রেমে পড়ি তাহলে তার সব কিছুই আমাদের মুগ্ধ করে। নীলের অবস্থাটাও তেমন। একটা সময় ছিলো যখন সে কণ্ঠকে ভয় পেতো। কণ্ঠের আশেপাশে থাকতে চাইতো না। কিন্তু এখন? এখন সে সবসময় কণ্ঠের কাছাকাছি থাকতে চায়। নীল এক ধ্যানে কণ্ঠকে দেখছে। আজকাল কেন যেন তার তৃষ্ণার্থ চোখদুটো শুধু কণ্ঠকে দেখতে চায়। কণ্ঠকে দেখতে না পেলে মনটা কেমন অস্থির অস্থির লাগে। এই কয়দিনে তাদের সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তবুও কোথাও যেন একটা বাঁধা রয়ে গেছে।
নীলকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কণ্ঠ প্রশ্ন করে,
–এখানে খাম্বার মতন দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আজকে আর নীল মুখ বাঁকালো না। সে হাসি মুখে কণ্ঠের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জবাব দিলো,
–তোকে সাহায্য করতে এসেছি।

কণ্ঠ হাতের ছুঁড়িটা এক পাশে রেখে বললো,
–সাহায্য করতে এসেছিস? তুই আমাকে?

নীল হাসিটা আরেকটু চওড়া করে বললো,
–হুম।

–এর আগে কখনো রান্না ঘরে এসেছিস? কোনটাকে চিনি আর কোনটাকে লবন বলে জানিস?

–জানবো না কেন?

–তা বল শুনি তুই কি জানিস?

–শোন যেটা আমার মতো মিষ্টি সেটা চিনি। আর যেটা তোর মতন তিতা আর নোনতা সেটা হচ্ছে লবণ।

নীলের কথা শুনে কণ্ঠ কটমট দৃষ্টিতে তাকালো নীলের দিকে। কণ্ঠের এমন চাহনিতে নীলের মনের মধ্যে এক প্রকার ভয়ের সুনা’মি বয়ে গেলো। সে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসি দিয়ে বললো,
–আ’ম জাস্ট জোকিং।

–তোকে এখানে কেউ জাঙ্কি পান্ডেকে উপস্থাপন করতে বলে নাই। তাই নিজের ঘাটিয়া জোক নিজের কাছে রাখ।

–আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম। এবার দে আমি সবজি কেটে দিচ্ছি।

–পারবি না তুই। শুধু শুধু হাত টাত কেটে র’ক্তা’রক্তি কান্ড হবে একটা। আর আমি তা চাই না।

কণ্ঠের কথায় নীল একটু ভাব নিয়ে বললো,
–ডোন্ট আন্ডারইস্টিমেট দ্যা পাওয়ার ওফ অ্যা কমন ম্যান। তোর কোনো ধারণা নেই আমি ঠিক কি কি করতে পারি। দে ছুঁ’ড়ি আর গাজর দে আমি কা’টছি।

–দেখ নীল আমার এমনিতেই অনেক কাজ পরে আছে। প্লিজ আমার কাজ আর বাড়াস না। আর বিরক্তও করিস না। যা এখান থেকে। আমাকে কাজ করতে দে।

নীল কোনো কথা না বলে কণ্ঠের হাত থেকে ছুঁড়িটা নিয়ে সবজি কাটতে লাগলো। কণ্ঠ কিয়ৎক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে থেকে রুটির আটা গুলতে লাগলো। মিনিট দুয়েক বাদে নীল আমতা আমতা করে বললো,
–কণ্ঠ আমি যাই বুঝলি। আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তুই কাজ কর। আমি যাই।

কণ্ঠ আটার ডো বানাতে বানাতে বললো, –আচ্ছা যা।
নীল রান্না ঘরের দরজা ক্রস করতেই শোনা গেলো কণ্ঠের চিৎকার।
–নীলললল!!

কণ্ঠের চিৎকারে নীলের পা জোরা থেমে গেলো। কণ্ঠ হন্তদন্ত হয়ে নীলের সামনে আসলো।
–হাত দেখি তোর।

–হ..হাত? হা..হাত কেন দেখবি? কিচ্ছু নেই হাতে।

–কুচি কুচি করে কে’টে বুড়িগঙ্গায় ভাসাবো আমি ইডিয়েট।
কণ্ঠ নীলের হাত টেনে সামনে নিয়ে আসলো। হাত কে’টে গেছে অনেকটুকু। রক্তে নীলের সাদা টি-শার্ট রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। কণ্ঠ নীলের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। নীল মেকি হাসি দিয়ে বললো,
–কিছু হয় নি৷ একটুই কেটে’ছে।
কণ্ঠ কোনো কথা না বলে নীলের হাত স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে ব্যন্ডেজ করে দিলো।

নাস্তা বানানো শেষে কণ্ঠ টেবিলে খাবার সাজিয়ে নীলকে ডেকে দিলো। নীল কোনো কথা না বলে ভদ্র ছেলের মতন রুটি আর সবজি খেয়ে রুমে চলে গেলো। নীল যাওয়ার পর কণ্ঠ সব কিছু গুছিয়ে রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো নীল গভীর ঘুমে। নীলকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে বাঁকা হাসলো কণ্ঠ।
–সরি নীল তোর খাবারে ঘুমের মেডিসিন দিয়েছিলাম। তুই জেগে থাকলে আমি আমার কাজে যেতাম কি করে। তবে প্রমিজ তুই জাগার আগেই চলে আসবো। হ্যাভ অ্যা সুইট ড্রিম হানি।
নীলের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে কণ্ঠ চলে গেলো।

🍁

রাফাতকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। চেয়ারে অনেগুলো তার জুরে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাফাতের কোনো জ্ঞান নেই। কণ্ঠ একটা চেয়ার নিয়ে রাফাতের মুখ বরাবর বসে শৈবালকে বললো রাফাতের জ্ঞান ফেরাতে। শৈবাল এক বলতি পানি এনে রাফাতের মুখের উপর ঢেলে দিলো। রাফাত ধরফরিয়ে উঠলো।

–কি খবর মিষ্টার রাফাত শিকদার? সাজেকে কেমন ঘুরলেন?

–কে আপনি? আর আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে?

–এখানে মূলত মানুষকে তাদের কাজের পুরষ্কার দিতে নিয়ে আসা হয়। আপনাকে যখন আনা হয়েছে তখন আপনাকেও পুরস্কার দেওয়া হবে।

–এটা কেমন পুরস্কার? আর আমাকে এমন করে বেঁধে কেন রেখেছেন?

–আমার কাছে সময় নেই বেশি। তাই সোজাসুজি বলছি নীলের সাথে কি শ’ত্রুতা আপনার?

–নীল? কে নীল? নীল নামের কাউকে আমি চিনি না।

–দেখ আমি এখনই মাথা গরম করতে চাইছি না তাই যা জিজ্ঞেস করছি তার সোজাসাপ্টা উত্তর দে।

–সত্যি বলছি আমি নীল নামের কাউকে চিনি না।

–যদি না চিনিস তাহলে তোর সো কলড প্রেমিকার সাথে মিলিত হয়ে ওর বিরুদ্ধে ষ’ড়য’ন্ত্র কেন করেছিলি?

–প্রেমিকা? কে প্রেমিকা?

–নীরাকে চিনিস? নীরা? নীরা ফারাবী? চিনস?

–না আমি কাউকে চিনি না।

কণ্ঠ এবার কোনো কথা না বলে শৈবালকে কিছু ইশারা করলো। সাথে সাথে শৈবাল গিয়ে দেওয়ালে থাকা একটা সুইচে টিপ দিলো। তৎক্ষনাৎ চেয়ারসহ রাফাত কেঁপে উঠলো। যন্ত্রণায় রাফাত চিৎকার করে উঠলো। কিছুক্ষণ পর শক অফ করা হলো।
–এবার মনে পড়েছে। নীরাকে? আর তার সাথে মিলে কেন নীলের বিরুদ্ধে ষ’ড়য’ন্ত্র করেছিস বল।

হাঁপাতে হাঁপাতে রাফাত উত্তর দেয়,
–টাকার জন্য।

–টাকার জন্য? ন্যাহ্! বিশ্বাস হলো না।

–সত্যি বলছি টাকার জন্যই এমন করেছিলাম। আমার টাকার অনেক দরকার ছিলো। তাই নীরাকে বলেছিলাম নীলাকে ছয় মাসের জন্য বিয়ে করতে। ছয় মাস পর ওদের ডিভোর্স হয়ে গেলে নীরা ওর কাবিনের টাকাসহ আরো একস্ট্রা পনেরো লাখ টাকা পেতো। আর আমরা ওই সকল টাকা নিয়ে ইউএস শিফট করতাম।

–আমাকে কি তোর এতই বোকা বলে মনে হয়। তুই বলবি টাকার জন্য নীলের বিরুদ্ধে ষড়’যন্ত্র করেছিস আর আমি বিশ্বাস করবো? টাকা তো তোর বাপের কম নেই। আর নীরার বাপেরও না। তাহলে অন্যের টাকায় এত লোভ কেন? দেখ এমন কিছু বল যাতে করে আমি তোর কথা বিশ্বাস করতে পারি। বিশ্বাস করতে সহজ হয়। বল বল তাড়াতাড়ি বল।

রাফাত এবার একটু চেচিয়ে বললো,
–বললাম তো সব টাকার জন্য করেছি।

–তুই আসলেই ভালো কথার মানুষ না। শৈবাল অন দ্যা সুইচ।
আবারো রাফাতের পুরো শরীরে করেন্টের ঝটকা লাগলো। রাফাত ব্যথায় চোখমুখ খিঁচিয়ে নিলো।

–আমাকে এর চেয়ে বেশি কঠোর হতে বাধ্য করিস না। আমি কতটা ভয়ংক’র হতে পারি তোর কোনো ধারণা নেই। তাই তোর জন্য ভালো এটাতেই হবে তুই সব সত্যিটা বলে দে।

রাফাত বারবার একই কথা আওড়াচ্ছে সে টাকার জন্য এসব করেছে। এর বেশি এক অক্ষরও এগুচ্ছে না।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ