নেশাময় ভালোবাসার আসক্তি পর্ব-১৫+১৬

0
108

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -১৫
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। যদিও পোস্ট করেন লেখিকার নাম দিয়ে পোস্ট করবেন)

সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণ সময়ে দখিনা হাওয়া বইছে বাতাসের তালে। তারই বহমান স্রোতের মতোই কেউ একজন কারো অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে শুভ্র মেঘ বৃস্থিত্ব গগনে। সবাই অপেক্ষার অবসান খিন্য হলো তাই যার যার নিড়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু অবুঝ মনের কিশোরীর অপেক্ষার অবসান যে ঘটছে না। কিছুক্ষন বেলকনিতে কাটিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। এরপর অজু করে নামাজ আদায় করে নিলো। জায়নামাজ ঘুচিয়ে রেখে টেবিলে পড়তে বসলো। সামনেই পরীক্ষা, আদ্রিয়ান আসাফ কে বলে গত কালকেই বই গুলো এনে রেখেছিল। আগামীকাল থেকে নাকি হোম টিউটর আসবে। লোকটি সব কিছুই দেখভাল রাখছে তার। কিন্তু সব যে বাহ্যিক ভাবেই হচ্ছে , তার ছোট্ট মন কুঠিরের যে সুপ্ত ইচ্ছে গুলো জাগছে সে গুলো কি দেখেছে? দেখেনি তো! দেখলে কি এই মেয়েটা কে কষ্ট দিতে পারতো।

সেই ঘটনার পর আজ প্রায় সাত দিন হয়ে গেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান একটি বারও তার সাথে দেখা করেনি। কিন্তু তার যখন সেই ঘটনার পর তিন দিন জ্বর ছিলো তখন ডক্টর হতে শুরু করে খাবার পর্যন্ত সব কিছুই করেছে। আগে সকালের নাস্তা আর রাতের খাবার এক সাথে খেত। কিন্তু এখন তো খাবার টেবিলেই দেখা তো দূর লোকটাকেই দেখছে না। মেঘার সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগেই চলে যায় আবার রাতে ঘুমিয়ে পড়লে বাড়িতে ফিরে। এইসব সে রেনু খালা থেকে শুনেছে।

কিন্তু আদ্র এমন কেনো করছে ওর সাথে? এসব ভাবছিল আর পড়ার টেবিলে বসে কলম দিয়ে খাতায় আঁকিবুকি করছিলো। আজ কাল মন টা বড্ড উদাসীন থাকে। এই উদাসীন মন নিয়ে সে কিভাবে পড়াশুনা করবে।

“আদ্র আপনি কোথায়? জানি না কেনো আপনাকে বড্ড মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে আপনাকে সামনে বসিয়ে রেখে বেঁধে রাখি আর আপনার সাথে অনেক কথা বলি। কিন্তু পুরো আপনিটাই তো নেই! কিভাবে পূরণ করবো আমার মনের এই অজাজিত ইচ্ছেগুলো!”

_____________________

আদ্রিয়ান অফিসে বসে বসে মেঘার উদাসীন মুখ দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। যায় হোক এই দূরত্ব টা ভালই কাজে লেগেছে। তার স্নিগ্ধ পরী তাকে না দেখতে পেয়ে তাকে নিয়ে কেমন উদ্ভট চিন্তা করছে। ভেবেই মনের ভেতর প্রশান্তির একটা নিশ্বাস নিলো।

আসলে এতদিন নিজেকে মেঘার সামনে অপরাধী মনে হয়েছিল। ও যেরকম অমানুষের মত আচরণ করেছে এতে হয়তো ভেবেছিল মেঘা তাকে আরো বেশি ঘৃণা করবে। কিন্তু সেটি হয়তো নিয়তি চাইনি। তাই দূরত্ব টা রাখা ভালো মনে করেছিল তার অব্যাক্ত মন। কিন্তু দূরত্ব থাকলেও মেঘার ঘুমের ঘোরেই তাকে দেখে আসতো। আর মেঘার রুমে যেহেতু আগে থেকে সিসি ক্যামেরা আছে তাই তাকে সব সময় খেয়াল রেখেছে। আর মেঘার অব্যাক্ত কথা গুলো শুনার জন্য মাইক্রোসফটের চিপ টেবিলের নিচে লাগিয়ে রেখেছিল। যার জন্য মেঘার কথা স্পষ্ট শুনতে পারে।

” আরেকটু দূরত্ব সহ্য করো জান। এরপর আর কখনো তোমাকে আমার পিঞ্জর থেকে বের করবো না। এখন শক্ত করে আটকে রাখবো যে কখনো আমাকে ছেড়ে যেতেই পারবে না। এক ধাপ আমি এগিয়েছি তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য যা তোমার অগোচরেই হয়েছে। এখন শুধু তোমার মনের জায়গা করাটা বাকি। তারপর সব কিছুর খোলাসা হবে স্নিগ্ধ পরী।

বলেই আদ্রিয়ান মোবাইলে মেঘাকে দেখতে লাগলো।

_______________________

আজকাল আসাফ তন্বীর কলেজের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। কারণ তার মনের মধ্যে কারো জন্য সুপ্ত অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে। যাকে তার এই সাতাশ বছরের জীবনে প্রথম বসন্তের ছোঁয়ার আবির্ভাব ঘটেছে। হ্যা আসাফ তন্বীকে পছন্দ করে। রাতে যখন ঘুমোতে যাই তখন সেই ঝগড়ুটে মুখশ্রী ভেসে উঠে সায়াহ্নে। কি এক নিদারুণ অনুভূতি। হঠাৎ করেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি কে দেখতে পেয়ে হালকা সরে গেলো। কারণ তন্বী একটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। যা দেখে আসাফ এর মনে ক্রোধ সৃষ্টি হলো। জানে না কেনো কিন্তু ইচ্ছে করছে তন্বী হাসির অভ্যন্তরের দাঁত গুলো ভেঙ্গে দেই। যাতে সে আর হাসতে না পারে অন্য কোনো পুরুষের সামনে। কিন্তু আবার ভাবছে যদি তার দাঁত ভেঙ্গে দেই তাহলেতো তাকে বুড়ির সাথে সংসার করতে হবে। না না আপাতত সেই প্ল্যান ক্যান্সেল। অন্য কিছু করতে হবে।

এইসব ভাবতে ভাবতেই সামনে তাকিয়ে দেখে তন্বী তো দূরের কথা তার কোনো ছায়াও নেই। চারপাশে খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা আর পেলো না। তাই সেও মন উদাসীন করে অফিসে যাওয়ার জন্য উদ্দেত্ত হলো।

_________________________

আজ মেঘা না ঘুমিয়ে আদ্রিয়ান এর জন্য ড্রইং রুমে অপেক্ষা করতে লাগলো। বোর হচ্ছিলো তাই টিভি ছেড়ে মার্শা-বিয়ারের কার্টুন দেখতে লাগলো। আর সামনে চকলেট রেখে খেতে লাগলো। ঘড়িতে দেখলো প্রায় বারোটা। এখনও আদ্র আসছে না। এইদিকে তার খুব ঘুম পাচ্ছে। এতক্ষন বাইরে কি করে কে জানে? মাফিয়া গিরি করে হয়তো। ওহ হ্যা আমি তো ভুলেই গেছিলাম এই লোক একজন মাফিয়া। শুধু মাফিয়া না গন্ডার মাফিয়া। শেষ পর্যন্ত এই মাফিয়ার জন্য আমি বসে বসে অপেক্ষা করছি। কি দিন এলোরে। এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় কলিং বেলের শব্দ হলো। একজন সার্ভেন্ট তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলো। মেঘাও সামনে তাকালো কে এসেছে দেখার জন্য। কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি কে দেখতে পেয়ে মুখে সামান্য হাসি ফোটে উঠলো।

প্রায় অনেক দিন পর কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখতে পেলো। আগে থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে। আর সে এই ব্যাক্তির চিন্তা করতে করতে রুগী হয়ে গেছে। অসভ্য লোক একটা। আচ্ছা উনি যে এত সুন্দর তাহলেতো উনাকে দেখে মেয়েরা হয়তো গিলে খায়। আর সে তো ঐসব মেয়ের মতো না যে কারো রূপ দেখে তার প্রেমে হাবডুবু খাবে। কিন্তু এখন সে কি করছে। সেই কখন থেকে আদ্রিয়ান কে দেখেই যাচ্ছে।

আদ্রিয়ান ফোনে কথা বলছিল প্রায় দশ মিনিটের উপরে আর মেঘা তার পাশে দাড়িয়ে তাকে দেখছে আর এসব উদ্ভট ভাবনা গুলো ভাবছে। আদ্রিয়ান এর যখন কথা বলা শেষ হলো তখন সামনে ফিরতে গেলেই মেঘার সাথে ধাক্কা খায় আর মেঘাও ধাক্কা খেয়ে ভাবনা জগৎ থেকে বের হলেও আদ্রিয়ান এর বাহু বন্ধন থেকে বের হতে পারলো না কারণ ধাক্কা খেতেই আদ্রিয়ান মেঘার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে আটকায়।

আদ্রিয়ান মেঘাকে হঠাৎ এইভাবে এখানে এক্সপেক্ট করেনি। কারণ এত রাত পর্যন্ত তো তার জেগে থাকার কথা না। এই মেয়ে এত রাতে এইখানে দাড়িয়ে কি করছিলো।

আদ্রিয়ান মেঘাকে ঠিক ভাবে দাড় করিয়ে মেঘার দিকে না তাকিয়ে সামনে দিকে তাকালো।

এই খানে কি করছিলে? আর এত রাতে তুমি এখনও জেগে আছো কেনো?

হঠাৎ আদ্রিয়ান এর প্রশ্নে কি উত্তর দিবে? ভেবে পেলো না । তাই যা মুখে আসলো তাই বললো।

ঘুম আসছিলো না। তাই একটু

ঘুম না আসলে রুমে থাকবে। এত রাতে এখানে কেনো?

মেঘা এর উত্তরে কি বলবে আর ভেবে পেলো না। তাই চুপচাপ থাকলো। আদ্রিয়ান মেঘাকে রুমে যেতে বলে সে উপরে চলে গেলো। আর রেখে গেলো অপেক্ষারত এক তৃষ্ণার্ত কিশোরী কে। মেঘা একটা জিনিস খেয়াল করেছে আদ্রিয়ান মেঘার সাথে কথা বললেও তার দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি। কই আগেতো তার দিকে নজর রেখেই কথা বলতো। কিন্তু এখন?

হঠাৎ করেই তার চোখে অশ্রু চলে আসলো। জানে না কেনো কিন্তু আদ্রিয়ান এর এই ব্যাবহারে খুব কষ্ট লাগছে তার। লোকটা তো এটাও জিজ্ঞেস করলো না সে কেমন আছে? তার দিকে ভালো ভাবে তাকালোও না। তাই তাড়াতাড়ি সে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আজকে সে আদ্রিয়ান এর সাথে খাবে বলে ডিনারও করেনি। খিদেও লেগেছিল খুব। কিন্তু চকলেট খেয়ে আপাতত খিদে উধাও হয়ে গেছে। তাই শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়লো।

________________

পরদিন সকালে –

আদ্রিয়ান আজকে ঘুম থেকে উঠতে লেট করাই নাস্তা করতেও লেট করে এসেছে। অনেক দিন পর মেঘাকে সামনাসামনি দেখতে পাবে দেখে খুশিও হলো। মহারানী হয়তো কালকের ব্যাবহারে কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তারও বা কি করার ছোট্ট পরীটাকে কষ্ট না দিলেতো তার মনে জায়গা করতে পারবে না। সম্পর্ক তো আগেই শক্ত হয়েছে কাগজের মাধ্যমে কিন্তু মনের সম্পর্ক টাও যে জরুরি।

কিন্তু টেবিলে মেঘাকে না দেখে ভাবলো হয়তো নাস্তা করা হয়ে গিয়েছে হয়তো। তাই মুখ টা কে গম্ভীর করে নাস্তা করতে শুরু করলো।

স্যার একটা কথা বলার ছিল?

গম্ভীর কণ্ঠে আদ্রিয়ান বলার জন্য ইশারা করলো।

আসলে স্যার, মেম তো কাল সন্ধ্যা থেকে কিছু খাইনি। রাতে খাবারের কথা বললে মেম বললো যে আপনি আসলে নাকি খাবে তার জন্য উনি অনেক্ষন ওয়েট করে ছিলেন।

সার্ভেন্ট এর মুখে এরূপ কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হলো। মেঘার একেক সময় একেক কাজ দেখে অবাক হচ্ছে। কিন্তু পরে আবার সার্ভেন্ট দের উপর তাকিয়ে দাড়িয়ে গেলো

তোমাদের মেম খাইনি আর সেই কথা তোমরা এখন বলছো আমাকে? আর রেনু খালা আপনিতো জানতেন মেঘুর খালি পেটে থাকা বারণ। ডক্টর বার বার নিষেধ করে দিছে। যেহেতু ওর গেস্ট্রিক এর প্রব্লেম আছে প্রচন্ড।

বাবা আমিতো তোমাকে সেটা বলার জন্য কাল রাতে তোমার রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার রুম লক দেখে আর যেতে পারিনি। ভেবেছি হয়তো তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।

আদ্রিয়ান এসব কথা শুনে খালাকে আর কিছু বলতে পারলো না। কারণ সত্যিই সে কাল অনেক ক্লান্ত ছিলো। তাই ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। আদ্রিয়ান খাবার রেখেই উপরে উঠে মেঘার রুমের দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। রুমে গিয়ে প্রথমে দুইবার নক করলেও কোনো আওয়াজ পেল না। মেঘা অবশ্য এত বেলা অব্দি ঘুমায় না। তাই আদ্রিয়ান এর ব্যাপার টা সামান্য খটকা লাগলো। তাই আর নক না করে নড় ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। মেঘা কখনো রুম লক করে ঘুমায় না। ছোটো থেকেই এমন সে।

আদ্রিয়ান রুমে ঢুকে দেখলো মেঘা কম্বল মুড়ি দিয়ে ওইপাশে মুখ করে শুয়ে আছে। তাই আদ্রিয়ান সামনে দিকে গিয়ে অগ্রসর হলো। হঠাৎ করেই খেয়াল করলো মেঘা একটু পর পর কেপে কেপে উঠচে আদ্রিয়ান এর মনে হঠাৎ করেই ভয় চেপে বসলো। তাই তাড়াতাড়ি মেঘাকে ধরে সামনে ফিরালো। দেখলো তার ছোট্ট জানটা চোখ বন্ধ করে কান্না করছে। আর একটু পর পর ফুফাচ্ছে। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান এর কলিজা টা মোচড় দিয়ে উঠলো। এই অল্প সময়ে প্রাণ টার খেয়াল না রাখাতে কি অবস্থা করেছে তার। কি এমন হলো যে কান্না করতে করতে চোখ মুখের অবস্থা এমন হয়েছে। হঠাৎ করেই প্রেয়সীর ব্যার্থনা মূলক কথা শুনে কলিজা কেঁপে উঠলো

“আদ্র, আমার না খুব ব্যাথা করছে। সহ্য করতে পারছি নাতো। আব্বু থাকলেতো ব্যাথা ভালো করে দিতো। এখন তো আব্বুও নেই। আব্বুকে এনে দেন না, আদ্র।”

#চলবে_কি?

#নেশাময়_ভালোবাসার_আসক্তি
#পর্ব -১৬ (সারপ্রাইজ পর্ব)
#নীলাম্বরী_সেন_রাধিকা

প্রভাতের সূর্যের তাপ দৈর্ঘ্য হচ্ছে ধীরে ধীরে। মানুষের কোলাহল বাড়ছে যার যার কর্ম ব্যাস্ততায়। সব কিছুই বহমান স্রোতের মতো পাল্লা দিয়ে ছুটছে। কারো জন্য কারোর সময় থেমে নেই। যার যার নির্ধারিত সময় নিয়েই চলছে ক্ষন চলছে কার্য বেস্থতা।

কিছুক্ষন আগেই মেঘাকে ডক্টর ইনজেক্ট কিরে গেছে। সাথে কিছু ওষুধের সমাবেশ। মেয়েটা অল্প সময়ের মধ্যেই কেমন একটা নেতিয়ে পড়েছে। নরম ফুল যেমন অল্প যত্নের অভাবে নেতিয়ে পড়ে ঠিক তেমনই এই ফুলটিও নেতিয়ে পড়েছে।

মেঘার মেয়েলি সমস্যার কারণে অজস্র ব্যাথার সম্মুখীন হয়েছে। ডক্টর বললো এটা হয়তো প্রায়ই হতো। সঠিক চিকিৎসা হয়তো পড়েনি। যার জন্য ভবিষ্যতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। আর সাথে অনেক্ষন না খেয়ে ছিলো। যার জন্য দুই ব্যাথার জোরালো প্রভাব পড়েছে। মেঘাকে আগেই প্রেসক্রাইবড করা হয়েছিল যাতে সময়ের খাবার সময় করা হয়। এর হেরপের হলে গেষ্ট্রাইক্ট এর সমস্যা হবে। এখন আপাতত কিছু ওষুধ দিয়ে গেছে। সাথে কিছু টেস্ট করতে বলা হয়েছে। এই বলেই ডক্টর রেহানা বিদায় নিল। যেহেতু সে গাইনী বিভাগের না তাই বেশি কিছু বলতে পারেনি। তাই আগে কিছু টেস্ট দিয়েছে। যদি সব নরমাল হয় তাহলেই মঙ্গল। নয়তো আরেকজন তো আছেই তার চিন্তায় বিভোর থাকার। এসে থেকে না পাগলামি করলো। ছেলেটা যে মেয়েটা কে এতটা পাগলের মতো ভালোবাসবে কে জানতো। সে যাই হোক মেয়েটা ভালোবাসার মর্ম বুঝলেই হলো। অবশ্য ব্যাথার দরুন আদ্রিয়ান এর হাত এক মুহুর্তের জন্যও ছাড়ে নি। এতেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটির মনের সূক্ষ্ম কোনের ভরসার জাগরণ। ভেবেই ডক্টর রেহানা মুচকি হেসে তাদের প্রাইভেসি দেওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলো। তার নিজেরও এখন হসপিটালে কাজ আছে।

____________________

আস্তে আস্তে মেঘা চোখ খুললো। এরপর সামনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান তার পাশেই অর্ধ সোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ করে আদ্রিয়ান কে নিজের পাশে দেখে চমকে উঠলো। তাই তাড়াতাড়ি উঠতে গেলে পেটে হালকা চাপ অনুভব করলো। আর সাথে মৃদু চিৎকার করলো। হঠাৎ করেই আওয়াজে আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি মেঘাকে ধরলো।

“কি সমস্যা তোমার? এতো তাড়াহুড়া কিসের?
আস্তে উঠা যাই না অভদ্র মেয়ে!

আদ্রিয়ান এর ধমক শুনে মুখটা কে কান্না কান্না ভাব এনে ফেললো। মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে দেবে। কি লোকরে, দেখছে অসুস্থ তাও তার সাথে কেমন গন্ডারের মত আচরণ করছে। সাদে কি আর গন্ডার বলি। ভেবেই মুখ ফুলিয়ে নামতে গেলে।

“কই যাচ্ছ?

“এখন কি ওয়াশরুমে গেলেও আপনাকে বলে যেতে হবে?

হঠাৎ মেঘার এমন চটাং চটাং কথা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে এলো।

“এই যে মি. গন্ডার আপনি যদি আজ্ঞা দিতেন তাহলে আমি একটু আমার প্রাথমিক কাজে যেতাম।

বলেই আদ্রিয়ান এর উত্তরের অপেক্ষায় থাকলো। এইদিকে আদ্রিয়ান হঠাৎ করে মেঘার এমন আচরণ দেখে হতবাক। যেই মেয়ে কথা বলতো মিনমিন করে সে এখন কেমন চটপটে ভাবে কথা বলছে। ডক্টর কি পেটের চিকিৎসা করতে গিয়ে মাথার চিকিৎসা করলো নাকি?

“উফ কি হলো যাবো কি?

আদ্রিয়ান বোকার মত মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। আর মেঘাও বিরক্তিকর ফেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আদ্রিয়ান এখনও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কি মেয়েরে, যে কাল পর্যন্ত কথা বলতো মাথা নিচু করে আজ সে আদ্রিয়ান এর সাথে এইভাবে কথা বললো।এত সাহস কিভাবে হলো।

__________________

এইদিকে মেঘা ওয়াশরুমে ঢুকেই দরজা লক করে মিররের দিকে তাকালো। কিভাবে সে কথা গুলো বললো সে নিজেই জানে না। এখনও বুক দুকপুক করছে। মনে হচ্ছে এখনই হৃদপিণ্ড তার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেবে। কি এক অবস্থা।

আসলে ব্যাপার টা হলো অতি লজ্জায় মানুষ যখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে তখন কি করে না করে তার কোনো হুস থাকে না। মেঘারও সেই অবস্থা হয়েছে।

ফ্ল্যাশব্যাক –

“আদ্র, আমার না খুব ব্যাথা করছে। সহ্য করতে পারছি নাতো। আব্বু থাকলেতো ব্যাথা ভালো করে দিতো। এখন তো আব্বুও নেই। আব্বুকে এনে দেন না, আদ্র।”

আদ্রিয়ান তখন তাড়াতাড়ি মেঘার পাশে বসে তাকে নিজের বুকের দিকে নিয়ে নিলো। এরপর হাত বুলাতে লাগলো

“কি হয়েছে জান? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে!!

হুমমম,,, মেঘা ব্যাথার জন্য কথা বলতে পারছে না। তবুও খুব কষ্ট করে

“আদ্র,, আমি মনে হয় মরে যাবো। আগেতো এত ব্যাথা করতো না আজকে বেশি ব্যাথা হচ্ছে। আপনি কিছু করুন না। ব্যাথা কমিয়ে দেননা।

“জান একটু সহ্য করো আমি এখনই ডক্টর ডাকছি পরী।

এই বলে আদ্রিয়ান উটতে লাগলে মেঘা আদ্রিয়ান এর বুকের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরলো। মেঘা প্রচন্ড ঘামছে। সাথে কেঁপে কেঁপেও উঠছে।

“প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। কোথাও যাবেন না প্লীজ।

বলেই আবার কান্না করতে লাগলো।

“এইতো আমি যাচ্ছি না তো সোনা। এইতো দেখো আমি তোমার পাশেই আছি। কান্না বন্ধ করো তো দেখি। এখনি ব্যাথা কমে যাবে।

আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে মেঘার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। আর তাড়াতাড়ি গার্ড দের এমার্জেন্সি ডক্টর রেহানা কে খবর দিতে বললো। ডক্টর রেহানা হসপিটাল যাওয়ার জন্য পথেই ছিলো। আর এই পথেই হসপিটাল হওয়ার দরুন ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ান দের বাড়িতে গেলো। এরপর গিয়ে মেঘার অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি চেক করলো। আদ্রিয়ান কে বাইরে যেতে বললে মেঘা তাকে ছাড়লো না। আর আদ্রিয়ানও যেতে নারাজ ছিলো।

“আদ্র তুমি বাইরে না গেলে আমিতো ওর ভালোভাবে চেক আপ করতে পারবো না।

ডক্টর রেহানার কথাই আদ্রিয়ান মেঘার ব্যাথাতুর মুখে তাকিয়েই

“আমার জানার আছে তার সবকিছু জানার। আর এসব বিষয়ে জানারও পুরো রাইট আছে। সেই বিষয়ে কেউ না জানলেও আপনি খুব ভালো করে জানেন

গম্ভীর কণ্ঠে বললো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান এর কথাই আর কোনো দ্বিমত করলো না। তার কাজ শুরু করলো। আর ব্যাথা কমার জন্য আপাতত ঘুমের ইনজেকশন দিলো কারণ ব্যাথার ইনজেকশন দেওয়া ঠিক হবে বলে মনে করছে না। তাই আপাতত নরমালি ব্যাথার ওষুধ দিলো যাতে আপাতত ব্যাথাটা থেকে রিলিভ পাই। কিছুক্ষন পরই সব কিছু শান্ত হয়ে গেলো। এতক্ষন ধরে আর্তনাদ করা শব্দ গুলো নিশ্চুপ হলো। আদ্রিয়ান মেঘার কপালে চুমু দিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো।

বর্তমান –

এসব ভেবেই মেঘা খুবই লজ্জা পেলো। কি পাগলামি টাই না করলো। ইশ,,

কিন্তু আদ্র এই কথা কেনো বললো যে আমার সব কিছু জানার তার অধিকার আছে? হ্যা মানছি সে আমার বাগদত্তা কিন্তু বাগদত্তা হলেই কি এত অধিকার ফলানো যাই?

কিছুক্ষন ভেবেও যখন যথাযথ উত্তর পেলনা তখন নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকালো

“আদ্র আপনি পুরোটাই একটা রহস্য। কিন্তু এই রহস্য টাকি সেটা তো আমাকে জানতেই হবে। সোজা ভাবে না জানতে পারলে, বাকা পথে জানবো। এতদিন হয়তো আপনার নরম স্নিগ্ধ পরিকে দেখেছেন। এখন অন্য মেঘা কে দেখবেন। আপনার স্টাইলে।

বলেই রহস্যময়ী হাসি দিলো

#চলবে_কি?