নোলক পর্ব-০৪

0
95

#নোলক
পর্ব৪
#তানিয়া_মেধা

সকাল থেকে সাবানা কেটে যাচ্ছে। কাজ আজ ফুরাচ্ছে না। ফুরাবে কি করে একটার পর একটা অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে নয়না, জোছনা সজল। উপর থেকে এসব কিছু লক্ষ্য করছে পদ্ম। এবার যেন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সে নিচে নেমে আসে। পদ্ম নিচে নামতেই জোছনার শরীরে ভুলবশত চা পড়ে যায়। জোছনা রেগে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকে সাবানাকে। তখনই পদ্ম গিয়ে আরেক কাপ চা জোছনার গায়ে ঢেলে দিয়ে বলে, ‘ ছিহঃ কি মুখের ভাষা।’

জোছনা রাগী গলায় বলেন, ‘ এই মেয়ে সর আমার সামনে থাইলা নয়তো একটা আছাড় দিমু।’

পদ্ম ত্যাড়া গলায় বলে, ‘ ঐ শক্তি আছে তো আপনার শরীরে। ‘

জোছনা হায় হায় করে সজলকে বলে, ‘ কি বেয়াদব মেয়েকে বিয়ে করছে শুভ্র!’

পদ্ম হেসে বলে, ‘ আপনার মেয়ের মতো ভদ্র হওয়ার থেকে অভদ্রই ভালো কারণ আমি বসে বসে মায়ের সমান ব্যক্তিকে অর্ডার করি নাহ।’

পদ্মর কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে নয়না। নয়না অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে পদ্মর দিকে তাকায়। পদ্ম সেটা পাত্তা না দিয়ে চোখ টিপ মেরে সাবানাকে নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।

*****
শুভ্র শার্ট পড়ে রেডি হচ্ছিল বাহিরে যাবে তখনই নয়না রুমে ঢুকে। পদ্ম বিছানায় বসে ছিল। নয়নাকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকায়। নয়না একবার পদ্মর দিকে তাকিয়ে শুভ্রর কাছে গিয়ে বলে, ‘ শুভ্র আমাকে একটু বাহিরে নিয়ে যাবে।’

পদ্ম রাগ হয় নয়নার উপর। কত বড় সাহস তার সামনে তার স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছে। শুভ্র চুল গুছিয়ে বলে, ‘ কোথায় যাবি?’

শুভ্রর কথায় পদ্ম অবাক হলো৷ লোকটা এই গায়ে পড়া মেয়েটাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। পদ্ম কিছু বলতে নিবে তখন নয়না বলে, ‘ চল না পার্কে যাই।’

শুভ্র বলে, ‘ আচ্ছা যা রেডি হয়ে নে। ‘

পদ্ম এবার আর সহ্য করতে পারলো নাহ নয়না রেডি হতে যেতে নিলে পদ্ম চেচিয়ে বলে, ‘ নাহ ওর সাথে আপনি কোথাও যাবেন নাহ।’

শুভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, ‘ কেন।’

পদ্ম আমতা আমতা করে। কি কারণ দেখাবে। পদ্ম কিছু খোজে নাহ পেয়ে বলে, ‘ আমি বলছি যাবেন না মানে যাবেন না।’

শুভ্র এবার এগিয়ে এসে দুষ্ট হেসে বলে, ‘ আর ইউ জেলাস।’

পদ্ম দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,’ নাহ আমি কেন জেলাস হবো।’

শুভ্র হাসে আর পদ্মর দিকে এগিয়ে বলে, ‘ ওকে তাহলে তো আর কোন সমস্যা নাই নয়না যা তুই রেডি হ গিয়ে। ‘

নয়না মাথা নাড়িয়ে চলে যায় রেডি হতে। পদ্ম আহত দৃষ্টিতে তাকায়। শুভ্র সেটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান ধরে চলে যায়। পদ্ম শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আমি পদ্ম শপৎ করছি আমার স্বামী আমি বাদে অন্য নারীকে ছোঁয়ে দেখবে সেদিন আমার জীবনের শেষদিন হবে।’

********
অন্ধকার রুমে পদ্ম বসে আছে। তার হাতে একটা দাঁড়ালো ছুরি। চোখে পানি টলমল। শুভ্র বাসায় নেই সে নয়নাকে নিয়ে বাহিরে গেছে। পদ্ম চোখটা বন্ধ করে তখনই চোখের সামনে ভেসে উঠে নয়নার সাথে শুভ্রর বাহিরে যাওয়ার দৃশ্য তাও হাত ধরে। পদ্ম চোখ খুলে পেলে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে তার। পদ্ম না করার পরও শুভ্র পদ্মকে নিয়ে গেছে। পদ্ম হাতের দিকে তাকিয়ে হাতে চুরি চালাতে নিবে তখন সেখানে দৌড়ে সাবানা চলে আসে। ছুরিটা পদ্মর হাত থেকে সরিয়ে সজোরে থাপ্পড় মেরে বলে, ‘ কি করছিলে মেয়ে?’

পদ্ম কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ কি করবো আমি? আমার স্বামী আমার সামনে দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে বাহিরে গেছে। ‘

সাবানা পদ্মকে বুকে ধরে বলে, ‘ শুভ্র তোকে অনেক ভালোবাসে বিশ্বাস না হলে ভেবে দেখ।’

পদ্ম ঠান্ডা হয়। শান্ত দৃষ্টিতে সাবানার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তাহলে এমন কেন করলো।’

সাবানা কিছু একটা চিন্তা করে কিছুক্ষণ বলেন, ‘ ছেলেটা আমার বুঝলে অন্যরকম সে কেউ যদি তাকে ভালোবেসেও প্রকাশ নাহ করে তাহলে তার কাছ থেকে যেকোনো মূল্যে প্রকাশ করিয়ে ছাড়ে।’

সাবানা এই বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়। পদ্ম সেখানেই বসে থাকে। কিছু একটা ভেবে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে, ‘ এই খেল খেলা হচ্ছে আমার সাথে ওকে দেখা যাক।’

*****
নয়না গাল ফুলিয়ে রাস্তায় হাঁটছে একা। শুভ্রর সাথে আসলেও শুভ্র তাকে এই মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। রাগে তার শরীর জ্বলছে। হাটতে হাটতে সে পৌঁছে যায় বাড়ির কাছে। বাড়িতে ঢুকতেই পদ্মর সামনে পড়ে।। পদ্ম তার দিকে তাকিয়ে জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে বলে, ‘ কী ব্যাপার একা যে?’

নয়না একবার চোখ পাকিয়ে পদ্মর দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নেয় তখনই পদ্ম পথ আটকিয়ে বলে৷ ‘ অন্যের স্বমীর দিকে নজর দিয়েছো। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি হাজার নারী তাদের রূপ দিয়ে তাকে আকৃষ্ট করতে চাইলেও আমার স্বামী আমাকে ছাড়া আর কারো প্রতি আকৃষ্ট হবে না। ‘

নয়না পদ্মর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, ‘ এত অহংকার করো নাহ ঝড়ে যাবে।’

পদ্ম নয়নার দিকে ঝুকে এগিয়ে এসে বলে, ‘ গেলে যাবো।’

নয়না বিরক্ত হয়ে চলে যায়। পদ্ম নয়নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। এই মেয়েটাকে শায়েস্তা করে বেশ লাগছে তার।

******
নিজের রুমে বসে আছে শুভ্র অনেক ক্ষণ যাবৎ সে পদ্মর জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু পদ্ম আসার নাম নিচ্ছে নাহ। তাই শুভ্র বাধ্য হয়ে উঠে হল রুমে এসে দেখে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে পদ্ম। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নেয় পদ্মকে। পদ্মকে নিয়ে রুমে চলে যায়।

এদিকে পদ্ম চোখ বন্ধ করে বরের কোলে উঠার আনন্দ উপভোগ করছে। সে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে ছিল শুধু শুভ্রর কোলে উঠার জন্য।

শুভ্র পদ্মকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে কানের কাছে গিয়ে বলে, ‘ বললেই হতো কোলে উঠতে চাও ঘুমের অভিনয় করার প্রয়োজন ছিল নাহ বউ।’

শুভ্রর এ কথার সাথে সাথে পদ্মর চোখ খুলে যায়। সে বড় বড় চোখ করে শুভ্রর দিকে তাকায়। শুভ্র পদ্মর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে তার অধরে চুমু খায়।

*****
সাবানা দরজা লাগিয়ে কাঁদছে। নিজ সন্তানকে সামনে থেকেও নিজের মতো করে আদর করতে পারে নাহ কি করে নিজেকে সামলাবে। এমন সময় পদ্ম তার রুমে আসছিল। দরজায় টুকা দিতে গিয়ে এমন কিছু শুনে সে কল্পনাও করতে পারছে নাহ।

পদ্মর আর সাহস হলো নাহ দরজায় টুকা দেওয়া সে সোজা নিজের রুমে চলে আসে। শুভ্র বাড়ি নেয় সে কাজে গেছে। ফিরবে অনেক রাতে পদ্ম বুঝতে পারছে নাহ সে কি করে শুভ্রকে বলবে এসব।

চলবে