নোলক পর্ব-০৫

0
110

#নোলক
পর্ব ৫
#তানিয়া_মেধা

সাবানা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে পড়েছে। আজ তার জন্য খুবই বিশেষ দিন। কারণ আজ তো শুভ্রর জন্মদিন এই দিনটা উনি কও করে ভুলে যায়৷ তখন পিছন থেকে পদ্ম এসে বলে, ‘ শুভ্র আপনার ছেলে তাই তো?’

সাবানা চমকায় তার কাজ থেমে যায়। বড় বড় চোখ করে সে পদ্মর দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ কি বলছো এসব।’

পদ্ম এগিয়ে এসে বলে, ‘ মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন নাহ আমি জানি সব।’.

সাবানা এবার হাসফাস করতে লাগে। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে পরবে চিন্তাও করতে পারে নি। সাবানা কিছু বলতে নিবে তখন সেখানে মুনিরা চলে আসে। মুনিরা কর্কশ গলায় সাবানাকে বলেন, ‘ কিরে কালনাগিনী কাজ শেষ করবি কখন সবাইকে না খাইয়ে মারাবি নাকি।’

সাবানা চোখ নিচু করে বলে, ‘ শেষ আপা।’

মুনিরা পদ্মর দিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়। পদ্মও কম কিসে ভেংচি দিয়ে চলে যায়। পদ্ম চলে যেতেই সাবানা হাফ বাঁচে।

****
মুনিরা ছটফট করছে আর এদিক ওদিক পায়চারি। যেই সত্যিটা উনি ২৪ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন সেই সত্যিটা বাহিরে আসতে দেওয়া যাবে নাহ। পদ্ম বড্ড উড়ছে। মুনিরা ছটফট করতে করতে আয়নার দিকে চোখ যেতেই ওর মনে হচ্ছে অবয়বটা তাকে দেখে হাসছে আর বলেছে,’ তোর পর্দা ফাঁস হতে বেশি দূর নয়। তোর জীবনের সুখের দিন শেষ হয়ে আসছে খুব শীঘ্রই।’

মুনিরা নিজের কান চেপে ধরে। পাশে থাকা ফুলদানিটা আয়নায় ছুড়ে মেরে বলে,’ কখনোই নাহ আমি এ সত্যি বাহিরে আসতে দিবো নাহ।’

মুনিরা পাগলের মতো করতে থাকে।

*****
পদ্ম আর সাবিনা সামনা সামনি বসে আছে। এতোক্ষণ ছাড় পেয়ে গেলেও এখন সাবিনা ছাড় পাবে নাহ। পদ্ম এক প্রকার জিদ নিয়ে বসেছে। সে জেনেই ছাড়বে।

সাবিনা একবার পদ্মর দিকে অসহায় মুখ করে বলে, ‘ আমি আজ সত্যি বললে শুভ্রর ক্ষতি করে দিবে ওরা।’

পদ্ম হাসে। সাবিনার দিকে তাকিয়ে কপাল চুলকিয়ে বলে,’ আপনি আমাকে সত্যিটা বলে দিয়েছেন অলরেডি শুধু কেন লুকাচ্ছেন ঐটা জানা বাকি। আর চিন্তা করবেন না আমি থাকতে আমার স্বামীর গায়ে কেউ একটা আচও ফেলতে পারবে নাহ।’

সাবিনা চমকায় ও কখন আবার সত্যটা বলল। পদ্ম সাবিনার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে যায় সাবিনা সেখানেই বসে থাকে। তবে এতটুকু ভেবে শস্তি পায় যে শুভ্র নিরাপদ।

***
মুনিরা পদ্মকে টেনে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। পদ্ম বিরক্তির গলায় বলে,’ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?’

মুনিরা টেনে ওকে নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। পদ্ম চারদিকে তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো বাক্স। মুনিরা এগিয়ে এসে বলে, ‘ মেয়ে বেশি উড়ো নাহ তোমারই বিপদ।’

পদ্ম হেসে বলে, ‘ সে আমার স্বামীকে আপনার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শত বিপদ পাড় করতে রাজি।’

মুনিরা ভ্রু কুচকায় শুভ্রর বিপদ মানে। মুনিরা তেজি গলায় বলে, ‘ মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে।’

পদ্ম এবার জোরেই হাসে। মুনিরার দিকে তাকিয়ে তেজি স্বরে বলে, ‘ আপনিও সামলে চলবেন আমি নিজের স্বামীকে বাঁচাতে যে কোন কিছু করতে পারি এমন কি।’

আর বলে নাহ পদ্ম থেমে যায় সে। মুনিরা ভ্রু কুচকে বলে, ‘কি করবে হ্যা?’

পদ্ম এগিয়ে এসে শয়তানি হেসে বলে, ‘ আপনার বুকে ছুরি চালাতেও দুইবার ভাববো নাহ।’

পদ্মর কথায় মুনিরা দুই পা পিছিয়ে যায়। শুকনো ঢুক গিলে তাকায় পদ্মর দিকে। পদ্ম সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে নাহ। সে চলে আসে নিচে।

নিচে এসে দেখে নয়না ও তার মা বাবা চ চলে যাচ্ছে। পদ্ম এগিয়ে এসে নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কি ব্যাপার এতো তারাতারি হার মেনে গেলে!’

নয়না পদ্মর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। পদ্ম তার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসে। এবার সে শুভ্রকে খুজতে থাকে। তার চোখ দুটো তাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে।

রুমে এসে শুভ্রকে পায় না পদ্ম। কোথায় গেল লোকটা? ব্যাকুল হয়ে পড়ছে পদ্ম। নিজের এমন পরিস্থিতি দেখে পদ্ম বেশ অবাক হলো। আজ হঠাৎ করে কেন লোকটার জন্য এত ব্যাকুল হচ্ছে তবে কি সে ভালোবেসে ফেলেছে লোকটাকে। অবশ্য ভালোবাসারই কথা এমন স্বামী কয়জনই বা পায়!

পদ্ম নিজে নিজে হাসে এগুলো ভেবে।

*****
সারাদিন পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরে শুভ্র। সারাদিন খুব কাজ করেছে। শখের নারীকে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল। শুভ্র রুমে এসেই দেখে পদ্ম ঘুমিয়ে গেছে। জ্বালায় না তাকে চুপচাপ গিয়ে বসে পদ্মর পাশে। কি মায়া এই মুখে। শুভ্র পদ্মর কপালে চুমু খেয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

শুভ্র ওয়াশরুমে যেতেই পদ্ম উঠে বসে। উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে শুভ্রর জন্য। শুভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে পদ্ম বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে হাসে বিনিময়ে সেও হাসে। পদ্ম জিজ্ঞেস করে, ‘ এতো দেরি হলো যে?’

শুভ্র এক লোকমা খাবার নিজের মুখে দিয়ে বলে,’ আজ কাজ ছিল অনেক।’

পদ্ম আর কিছু বলে নাহ। এর মাঝে শুভ্র দ্বিতীয়বার লোকমা মুখে দিতে গিয়ে মনে পড়ে পদ্ম খেয়েছে তো। শুভ্র লোকমাটা পদ্মর মুখের সামনে ধরতেই পদ্ম চমকে তাকায় শুভ্রর দিকে। শুভ্র বলে, ‘ এভাবে তাকিয়ে না থেকে মুখে নাও।’

পদ্ম হা করে। মনে মনে অবশ্য বেশ খুশি হয় যে তার স্বামী তাকে খাইয়ে দিয়েছে। শুভ্র আর পদ্ম একসাথে খেয়ে নেই। শুভ্র এঁটো প্লেইট বেসিনে রেখে চলে আসে।

*****
সকাল সকাল জমিদার বাড়ি পুলিশ দেখে অবাক উঠেন দিলোয়ার। থানার ওসি রমজানকে দেখে জিজ্ঞেস করেন,’ কি হয়েছে আপনারা আমার বাড়ি কেন?’

রমজান দিলোয়ারের তাচ্ছিল্য হেসে পায়ের উপর পা তুলে বসে বলে,’ কি করবো জমিদার বাবু বলেন আপনার ছেলে এমন কান্ড করেছে যে না এসে পারলাম না।’

দিলোয়ার কপাল ভাজ করে জিজ্ঞেস করে, ‘ কি করেছে?’

রমজান উচ্চস্বরে হেসে বলে, ‘ কি করেন নি বলেন শিশু পাচার করে।’

দিলোয়ার রাগি গলায় বলেন, ‘ মুখ সামলে কথা বলুন।’

রমজান ঠাট্টা করে বলে, ‘ বাহ রে ছেলে করলে দোষ নাই আমরা বললেই দোষ। তা কোথায় সে ডেকে আনুন।’

দিলোয়ার ডাক দেন শুভ্রকে। বাবার ডাকে শুভ্র নিচে নেমে আসে সাথে পদ্মও নেমে আসে নিচে। শুভ্র ওসিকে এই সকাল সকাল নিজের বাড়ি দেখে কাপলে ভাজ পড়ে। রমজান শুভ্রকে দেখে মহা অপ্যায়নের সহিত বলে, ‘ আসুন জনাব আপনারই তো অপেক্ষা আপনার জন্য একটা দুঃখের সংবাদ আছে। আপনি যেই শিশুদের পাচার করতে চাইছিলেন তাদের বাচিয়ে নিয়েছি।’

শুভ্র ভ্রু কুচকে বলে, ‘ মানে।’

রমজান হাসে উঠে গিয়ে শুভ্রকে এরেস্ট করে। পদ্ন এগিয়ে এসে বলে, ‘ কি ব্যাপার ওকে এরেস্ট কেন করছেন?’

রমজান পদ্মর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আপনি কে?’

পদ্ম বিচলিত গলায় বলে, ‘ উনার স্ত্রী এরেস্ট কেন করলেন বললেন নাহ তো।’

রমজান বলে,’ আপনার স্বামী শিশু পাচারকারী। ‘

চমকে উঠে পদ্ম। শুভ্র পদ্মর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ বিশ্বাস করো আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি নাহ।’

রমজান বলেন, ‘ সে থানায় গিয়ে কয়েক ঘা পিঠে পড়লে বোঝা যাবে।’

পদ্ম গর্জে উঠে। রমজানের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ সাবধান আমার স্বামীর গায়ে একটা আচও যেন নাহ লাগে দু ঘন্টার ভিতরে আমি নির্দোষ প্রমাণ করে ছাড়িয়ে আনবো।’

পদ্ম দৌড়ে চলে যায় সাবিনার কাছে। সাবিনার কাছে গিয়ে বলে, ‘ মা শুভ্রর বিপদ প্লিজ বলুন কারা আছে এর পিছনে?’

সাবিনা তাকায় পদ্মর দিকে। উত্তেজিত গলায় বলেন, ‘ আমি বলতে পারবো নাহ নয়তো শুভ্রর অনেক বড় বিপদ হবে।’

পদ্ম হাজার রিকুয়েষ্ট করা সত্ত্বেও সাবিনা বলে নি। পদ্ম হার মেনে নিচে নামার সময় দেখা হয় মুনিরার সাথে। পদ্ম ঘৃণায় মুখ সড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে নিলে মুনিরা গম্ভীর গলায় বলে,’ তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার সাথে এসো। ‘

চলবে