পরকীয়ার শেষ পরিণতি পর্ব-০১

0
756

#পরকীয়ার_শেষ_পরিণতি
#সূচনা_পর্ব
#Shimul

সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি বউ অসময় শুয়ে আছে,,,,,,,

তা দেখে বউকে বললাম,,,,,,,,,

“এ অসময়ে শুয়ে আছো কেনো এক কাপ চা বানিয়ে দাও না”

বউ উত্তরে বলল,,,,,,,,,,

“তুমি কি আমাকে কাজের লোক মনে করো”

“আরে তোমাকে কাজের লোক মনে করব কেন, এক কাপ চা বানিয়ে দিলে তুমি কাজে লোক হয়ে যাবে”

“দেখ অফিস থেকে এসে এত ঘ্যান ঘ্যান করবা না, এগুলা আমার একদম ভালো লাগে না অসহ্য”

“আরে এভাবে কথা বলছো কেন তুমি, এক কাপ চা ঐ তো চেয়েছি”

“তোমার চা তুমি নিজে বানিয়ে খাও”

“আসলে আজকে অফিসে কাজের অনেক চাপ ছিল,এক মিনিটের জন্যও রেস্ট নিতে পারিনি, শরীরটা কেমন জানি বেতাল বেতাল করছে। তাই তোমাকে বলছিলাম এক কাপ চা বানিয়ে দিতে প্লিজ বানিয়ে দাও না”

“তোমাকে বললাম তো আমি চা বানিয়ে দিতে পারব না, ভালো লাগতেছে না আমার”

“আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই, আমি চা বানিয়ে খেয়ে নিব” বউয়ের কথা গুলো শুনে অবাক হচ্ছি!

আমি উঠে কিচেনে চলে গেলাম, আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমার বউ তো আগে এরকম ছিল না?
আগে বাসায় আসলে সর্বপ্রথম আমার ট্রাই কোড খুলে
দিতো, তারপর আমার হাতে তোয়ালা ধরিয়ে দিয়ে বলতো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো! চায়ের কথা কখনো আমাকে বলা লাগত না তার আগেই আমাকে চা বানিয়ে দিত।

কিন্তু ইদানিং কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। কোন কিছুর মাঝেই আমাকে সহ্য করতে পারে না। সারাদিন রুমে শুধু শুয়ে থাকে, ঠিকঠাক রান্নাবান্নাও করে না।
চায়ের কথা বললে আমাকে উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে দেই!

১ বছর আমার পিছনে পাগলের মতো ঘুরে, তার পর আমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে।
আজ আমাদের সংসার জীবন ৬ বছর চলছে। আমাদের একটা 5 বছরের ছেলে আছে নাম রিহান। কিন্টার গার্টেনে লেখাপড়া করায়। এই ছয় বছরে আমি কখনো তার ভালবাসার অমর্যাদা করিনি।
সর্বদা আমি তাকে হাসিখুশি দেখার চেষ্টা করি।
কিন্তু ইদানিং সে কেমন জানি পাল্টে যাচ্ছে, জানিনা তার এই পাল্টে যাওয়ার কারন কি?

৬ বছর আগের কথা এখনো আমার মনে আছে—

______________________________

৬ আগের কথা,,,,,,,,,,,,

বিদেশ থেকে লেখাপড়া শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করি।
জব করার কিছুদিন পরে বস আমার কাজের দক্ষতা এবং পার্সোনালিটি দেখে অনেক খুশি হয়।
তার কিছুদিন পরে বস আমাকে ডেকে নিয়ে বলে আজকে থেকে আমি এ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

তারপর থেকে আমি নিয়মিত অফিস করতে লাগলাম। বস বেশিরভাগ সময় দেশের বাহিরে থাকে, এজন্য অফিসের সব কাজ আমাকে সামলাতে হয়।

একদিন হঠাৎ করে বস একটি মেয়েকে নিয়ে আসে এবং বলে এই হল ইশিতা আক্তার ঝুমুর। আজকে থেকে এই অফিসে কাজ করবে, তুমি ওকে ওর কাজ দেখিয়ে দিবে।

আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উচ্চতা বেশ মোটামুটি ভালো। গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা, জিন্সের প্যান্ট সাদা টি শার্ট, বাঁ হাতে একটা দামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি। ডান হাতে আরো অনেক কিছু আছে।
মাথার চুল গুলো এক মুষ্টি করে রাবার দিয়ে বাঁধা। সবকিছু মিলিয়ে পারফেক্ট, একদম স্টাইলিশ মেয়ে। আমি মেয়েটাকে মেয়ের ডেকস দেখিয়ে দিলাম।।

অফিসে কিছু দিনের ভিতরে মেয়েটা সবার সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। হয়তো মেয়েটার সুন্দর বলে। অফিসের অনেক ছেলে স্টাফের সাথে দেখি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলে।

তার কিছুদিন পর থেকে আমার কিবিনে আসা যাওয়া শুরু করলো। আমার অনুমতি নেই না, এসে নানান কথা বলতে থাকে এবং প্রায়ই বলে অফিস শেষ হলে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে।

কিন্তু আমি তার কোন কথা ঐ শুনি না।

ইদানিং দেখি বাসা থেকে আসার সময় আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে, আমিও তার কথামতো তার রান্না করা খাবার খাই।

একদিন আমার কাছে এসে বলল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে, কিন্তু সে বিয়ে করবে না!
আমি তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে, সে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।

কিন্তু আমি তাকে সাফ সাফ না করে দেই।

কারণ এরকম স্টাইলিশ মেয়ে দিয়ে আর যাই হোক কখনো সংসার হই না।
আমার ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে, গ্রামের কোন সরল সোজা মেয়েকে বিয়ে করবো।
যার সংসারের প্রতি অবজ্ঞা চরম ভক্তি থাকবে, যে নিজের পার্সোনালিটি নিয়ে ভাববে না এবং সংসারের প্রতি সব সময় মনোযোগ থাকবে।

কিন্তু এই মেয়ে হাল ছাড়ার পাত্র না, আমার পিছনে লেগেই আছে।
আমাকে ছাড়া নাকি কাউকে বিয়েই করবে না।

হঠাৎ একদিন বস আর আমি একটা নতুন প্রজেক্ট সাইন করার জন্য এক জায়গায় যাচ্ছিলাম।
গাড়িতে উঠতে যাবো এমন সময় ঈশিতা আমার সামনে এসে দাড়ালো, আমাকে আর স্যার কে অবাক করে দিয়ে হাটু গেড়ে বসে আমাকে প্রপোজ করল।

কিন্তু আমি তার প্রপোজাল রিজেক্ট করে দেই।

তারপরে ঈশিতা কান্না করতে করতে বাসায় চলে যায়।স্যার আমাকে অনেক বুঝিয়েছে, আমি স্যারকে বললাম স্যার এরকম মেয়েরা কখনো পরিপূর্ণভাবে সংসারী মেয়ে হতে পারে না!
স্যার আমাকে বলল দেখো ভেবে তোমাকে ভালোবেসে সংসারী হলেও হতে পারে, মেয়েটা যে একবারে খারাপ তা না।

আমি স্যারকে বুঝিয়ে বললাম স্যার স্বামী স্ত্রী দুজন চাকরি করে, সে চাকরির সুবাদে স্বামী স্ত্রী তাদের কর্মস্থলে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
সংসারের দিকে কারোরই তখন মনোযোগ থাকে না, সারাদিন ডিউটি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দুজনে টায়ার্ড হয়ে পড়ে।
তাদের একজনের মনের কথা আরেকজনের কাছে বলার মত সময় হয় না।
এক সময় তাদের না বলা কথাগুলো জমাট হয়ে বুকে বাসা বাঁধতে থাকে, তারপরেও তাদের ব্যস্ততার কারণে তাদের বুকে জমানো কথাগুলো বলতে পারে না।
এক সময় দেখা যায় তাদের বন্ধন টা হালকা হতে থাকে, হালকা হতে হতে হঠাৎ করে একদিন বন্ধনটা ছিন্ন হয়ে যায়!

তাই আমি বলি কি স্যার গ্রামের কোন সরল সোজা মেয়েকে বিয়ে করবো, যে শুধু আমার সংসারটা কে দেখবে।
আর তার যাবতীয় সব দেখ ভাল আমি করব।

স্যার আর কোন কথা বলল না।

তার কিছুদিন পরে হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনা। ঈশিতা কারো কাছ থেকে জানি খবর পেয়ে আমার বাসায় আসলো এবং আমাকে অনেক যত্ন করে সুস্থ করে তুললো।
তার যত্ন আদি দেখে আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়, এরপর একদিন তাকে রেস্তোরায় ডেকে এনে বললাম যে—

“তোমাকে আমি আমার জীবনের সাথে জড়াতে পারি।কিন্তু একটা শর্তে– তুমি চাকরি করতে পারবে না, তুমি শুধু আমার সংসার দেখবে। আর তোমার যাবতীয় সব দেখা শোনা আমি করব। রাজি থাকলে বল”

সে আমার সব কথা শুনতে রাজি।

এরপর এক সাথে ছয়টা বছরের পথ চলা।
বিয়ের এক বছর পরে আমাদের কোল জুড়ে আমার ছেলে রিহান আসে। আমি আমার বউয়ের কোন কিছুর অপূর্ণতা রাখেনি।চাওয়ার আগেই সবকিছু এনে হাজির করি।
করবই না বা কেন, আমার কম কিসের?
প্রতি মাসে 80 হাজার টাকা বেতন পায়, নিজের ফ্ল্যাট নিজের গাড়ি।

বিয়ের আগে তাকে যেরকম ভেবেছিলাম। বিয়ের পর সে ধারনা আমার ভেঙ্গে গেল।সে পুরোপুরি সংসারী মেয়ে হয়ে গিয়েছে।

আমি তার এই সংসারের প্রতি দায়িত্ব বদ্ধতা দেখে, আমি তাকে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি।
কিন্তু ইদানিং কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, আগের মত সংসারের প্রতি আর দায়িত্ব বোধ করে না।
আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বললে, আমাকে সহ্য করতে পারে না। আমাকে আর আগের মত কিয়ার করে না, সময় অসময় খালি বিছানায় শুয়ে থাকে। জানিনা তার এই পরিবর্তনের কারণ কি?

____________________________

বর্তমান,,,,,,,,,,,,,,,,

এসব কথা ভাবতে ভাবতে এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম।

চা এ চুমুক দিয়ে ছেলের রুমের দিকে খেয়াল করলাম, ছেলের রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আমি চা কাপটা রেখে আমার ছেলের রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি পায়ে হাত দিয়ে কান্না করছে।তা দেখে আমি বললাম—

“কি হয়েছে আব্বু”

ছেলে বললো—

“আমার না পায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে”

“কেন”

“আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে হেঁটে বাসায় আসি, সেজন্য আমার অনেক কষ্ট হয়”

আমি তো ছেলের কথা শুনে অবাক।

“কি বলো তোমার আম্মু তোমাকে নিয়ে আসে না”

“না”

“তোমার আম্মুকে বলোনি নিয়ে আসার জন্য”

“আমি আম্মুকে বলেছিলাম, আম্মু আমায় অনেক বকেছে এবং বলেছে তোর আব্বুকে বলিস নিয়ে আসার জন্য”

ছেলে কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার একমাত্র ছেলে কোন কিছুর অভাব নাই। আর আমার ছেলে প্রতিদিন হেঁটে বাসায় আসে, নাহ ঈশিতাকে কিছু একটা বলতে হবে।

আমি ছেলের রুম থেকে বউ এর রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি খাটের এক পাশ হয়ে শুয়ে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,,,,,,

“তুমি ইদানিং এরকম করছ কেন”

সে উত্তর দিল,,,,,,,

“কিরকম করছি”

“তুমি সারাদিন বাসায় থাকো, আমার ছেলেটা প্রতিদিন হেঁটে স্কুল থেকে বাসায় আসতে হয় কেন”

“তো আমি কি করবো”

“কি করবো মানে? তুমি সারাদিন বাসায় থাকো অথচ ছেলেটাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে পারো না”

“আমার সব সময় ভালো লাগে না। তোমার ছেলেকে তুমি প্রতিদিন স্কুল থেকে নিয়ে আইসো”

“আর তুমি সারাদিন বাসায় কি করবে”

“রান্নাবান্না ধোয়া পালা কে করে”

“ইদানিং তুমি ঠিকঠাক ভাবে রান্না ও তো করো না”

“দেখো তোমার সাথে এত প্যাচাল পারতে পারবো না। তোমার ছেলেকে তুমি নিয়ে আসবে, আমি নিয়ে আসতে পারবো না ব্যাস”

আমি বউকে আর কিছু বললাম না। আর কিছু বললে হয়তো রেগে যাবে!

“আমি আমার ছেলেটার রুমে গেলাম, ইদানিং ছেলেটা প্রতি অযত্ন হয়ে যাচ্ছে।
তারপর ছেলেটার পায়ে মলম দিয়ে মালিশ করে, ঘুম পাড়িয়ে আমার রুমে আসলাম।

বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম নাহ আমার ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেওয়া যায় না, কালকেই গাড়ির ডাইভার এর ব্যবস্থা করবো।

বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি খাটের এক সাইডে শুয়ে আছে। অনেকদিন ধরে রাতে তাকে কাছে টানার চেষ্টা করছি, কিন্তু সে আমার কাছে আসে না। আমিও কিছু মনে করি না, কারণ সব সময় তো মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে না।

আজকেও তাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে, তাই হাতটা ধরে টান দিলাম। কিন্তু সে এক ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিল। তা দেখে আমি বললাম,,,,,,,,,,

“কি হলো এরকম করছ কেন? অনেকদিন ধরে তো তোমাকে কাছে পাই না”

“দেখো আমার এখন এগুলো ভালো লাগেনা”

“কি বলো গত কয়েকদিন ধরে তোমাকে কাছে টানছি, কিন্তু তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ! আজকে আবার কি হলো? শরীর অসুস্থ”

একটু বিরক্তি সুরে বলল,,,,,

“হ্যা”

“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ঘুমিয়ে থাকো”

স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার কামনা বাসনা মনের ভিতর মাটি চাপা দিয়ে, আমিও একপাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধান্ত নিলাম, আজকে আর অফিসে যাব না। তাই সকাল 9 টায় ছেলেকে রেডি করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে।

বাসার দিকে রওনা দিলাম।

বাসার গেটের কাছে এসে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, যে একটা সাইকেল বাসার গেটে রাখা।
আর সাইকেল টা কার সেটা আমিও জানি, সাইকেল টা হল সাব্বিরের।
আমার ছেলের প্রাইভেট মাস্টার, কিন্তু সে এ অসময় আমার বাসায় কেন?

আমি আস্তে আস্তে বাসার ভিতরে ঢুকতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,,,

#চলবে…………………