পুষ্পের নিদ্র পর্ব-০২

0
444

#পুষ্পের_নিদ্র
#আনআমতা_হাসান
পর্ব : ২

রাত ২:২৫ মিনিট নিদ্র আস্তে আস্তে চোখ দুটো খুলতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে সে। আশেপাশে চোখ ঘুরাতেই তার মাকে দেখতে পায় সে। তার বেডের পাশে একটা টুলে বসে তার বাম হাত দরে কপালে ঠেকিয়ে আছে। তার থেকে একটু দূরেই সোফাতে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে তার বাবা। মাথায় ব্যাথা অনুভব করতেই মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। চিন্তা করতে লাগলো হাসপাতালে কখন আর কিভাবে এসেছে সে? আর মাথায় বা ব্যান্ডেজ করা কেন? হয়েছিলো বা কি? যতটুকু মনে আছে আজকে সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল। আর বিকেল এর দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। রাত ৭টার দিকে অফিস থেকে বাসায় চলে আসছিল সে। গাড়ি থেকে নামতেই ওর ফোনে শিমুলের ফোন আসে। শিমুল ওকে ফোন করে পুষ্পের বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা জানায়। বাসায় না এসে গাড়ি ঘুড়িয়ে এক লেকেরপাড়ে চলে যায় সে। রাগে কষ্টে টানা দুই ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে সে। বাসায় ডুকতেই তার অবস্থা দেখে তার মা তাকে বকাজকা করা শুরু করে দেয়। মাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গোসল করে কোন রকম খেয়েদেয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে। তখন থেকেই ওর মাথাটা কেমন জানি ভারি ভারি লাগছিল। একটু ঠান্ডা ঠান্ডাও লাগছিল। বুঝতে পারে অবেলায় বৃষ্টিতে ভেজার ফলে জর এসেছে। কিন্তু এখন তার জর নিয়ে পরে থাকলে চলবে না। তাকে পুষ্পকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন সে তাকে রেখে তপুকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে? কি দোষ তার? পুষ্পকে ফোন করে ওর সাথে কথা বলছিল। কথার মাঝেই ওর শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। তারপর ,,,,,,,,,, তারপর কি হয়েছে ওর মনে নেই। হঠাৎ মাথায় একটু ব্যাথা অনুভুত হওয়ায় নিদ্রের বাম হাত সমেত সারা শরীর নড়ে উঠে।

নিদ্র নরে উঠলেই জাহানারা মাথা তুলে নিদ্রের মুখের দিকে তাকায়। তারপর আতিকুরকে উদ্দেশ্য করে বলল
– নিদ্রের বাবা ডক্টরকে ডাক নিদ্রের জ্ঞেন ফিরেছে।

আতিকুর সোফা থেকে এক প্রকার দৌড়ে ছেলের কাছে এসে ছলছল চোখে ছেলেকে একনজর দেখেই ডক্টর ডাকতে চলে যায়।

জাহানারা উঠে নিদ্রের কাছে এসে তার গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল
– কষ্ট হচ্ছে বাবা?

নিদ্র কিছু বলার আগেই আতিকুর ডাক্তার নিয়ে আসে।নিদ্রকে চেকআপ করে ডাক্তার বলে টেনসনের কিছু নেই।কিছুদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর আজকে বিকেলের দিকেই নিদ্রকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হবে। ডাক্তার বের হয়ে গেলেই জাহানারা আতাউরকে উদ্দেশ্য করে বলল
– তোমার ছেলেকি কখনো এই বুড়ো বাবা-মার কথা চিন্তা করবে না? যখন যা করতে ইচ্ছা করবে তাই করে বেড়ায়।

নিদ্র চুপচাপ তার মায়ের কান্ড দেখছিল। এতোক্ষণ কান্নাকাটি করছিলো। জ্ঞান ফিরতেই কি সুন্দর আদর করে তাকে জিজ্ঞেস করল কষ্ট হচ্ছে কিনা? আর এখন যখন ডাক্তার বলে গেছে ছেলে ভালো আছে ওমনি শুরু হয়ে গেল ছেলেকে বকাজকা করা। এটা নতুন না। ছোটবেলা থেকেই তার মা এমন করে। সে নিজের দোষে অসুস্থ হলে কান্না করে। সেবা যত্ন করে। তারপর সুস্থ হলে অভিমান করে।

আতিকুর স্ত্রীর অভিমান বুঝতে পেরে বলল
– আহা ছেলেটার মাএ জ্ঞেন ফিরেছে এখন এসব মান-আভিমানের কথা থাকতো।

জাহানারা জল ভর্তি ছলছল রাগী চোখে আতিকুরের দিকে তাকিয়ে বলল
– থাকবে মানে। তুমি ভাবতে পারছো যদি পুষ্প ফোন করে না বলত তাহলে কি হতো?

নিদ্র অবাক হয়ে তার মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
– পুষ্প! পুষ্প তোমাকে ফোন করেছিল?

জাহানারা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল
– তা নয়তো কি? পুষ্পই তো আমাকে ফোন করে বলেছিল যে একটা শব্দ হয়ে তোর ফোন কেটে যায়। তারপর আর তোকে ফোনে পায়নি। তারপরই তোও আমরা তোর রুমে গিয়ে দেখি তুই জরে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে আছিস। আর তোর মাথা কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। নিজের খেয়াল একটু রাখিস না। তোর কিছু হলে আমাদের কি হতো একবারও ভাবিস না।

নিদ্র তার মার হাত দরে বলে
– সরি মা আর কখনো এমন অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজবো না প্রমিজ। প্লিজ রাগ করনা আমার লক্ষি মা।

জাহানারা মনে মনে খুব খুশি হয়। কিন্তু তা প্রকাশ না করে নকল অভিমান ভাব দরে বলল
– হয়েছে আর ঢং করতে হবে না ছাড় এবার।

নিদ্রও নাছড় বান্ধা। মার হাত দুই হাতে দরে বলল
– না আগে একটু হাস তুমি তারপর ছাড়ব।

জাহানারা হেসে নিদ্রের কপালে চুমু দিয়ে বলে
– অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে। আল্লাহ’র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। যদি পুষ্প ফোন না করতো তাহলে কি হতো ভাবতেই আমার বুকটা কেপে উঠছে রে। আরে এতো টেনশনে ভুলেই গিয়েছিলাম পুষ্পকে ফোন করার কথা। মেয়েটা অনেক কান্নাকাটি করছিল। এখনও মনে হয় কান্নাকাটি করছে রে। আমার ফোনটাও বাসায় ফেলে রেখে এসেছি মেয়েটাকে এখন ফোন দিবো কিভাবে?

মার কথা শুনে নিদ্র কিছুটা অবাক হলো পুষ্প তোও ওকে ভালোবাসে না।অনেক ভয় পায় তাহলে কেন ,,,,,,,

জাহানারা নিদ্রের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– তোমার ফোন দিয়ে ভাইয়াকে একটা ফোন দেও না।মেয়েটার সাথে একটু কথা বলি।

আতিকুর পকেটে হাত দিয়ে ফোন খুঁজে বলল
– তাড়াহুড়োতে তো আমিও ফোন নিয়ে আসি নি।

জাহানারা চিন্তিত কন্ঠে বলল
– ড্রাইভার কে কি নিচে গিয়ে বলবে ফোন গুলো নিয়ে আসতে। মেয়েটা না ঘুমিয়ে হয়তো এখনো কান্নাকাটি করছে।

নিদ্র তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলল
– মা আমার পুষ্পের নাম্বার মনে আছে।

জাহানারা স্বাভাবিক ভাবেই বলল
– তাহলে ফোন নাম্বারটা আমাকে বল আমি রিসিভশনে গিয়ে ওকে ফোন দিয়ে কথা বলে আসি।

এদিকে,,,,,,,,,

আধাঘন্টা দরে চেস্টা করেও পুষ্পের জ্ঞেন ফেরাতে পারছে না তার বাবা-মা। সাহানা কান্না করতে লাগলো।তারপর আতাউরকে জিজ্ঞেস করল
– কি হয়েছে আমার মেয়েটার জ্ঞেন ফিরছেনা কেন?

আতাউর হাতের পানির গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলল
– ওকে হসপিটালের নিয়ে যেতে হবে। চলো আর দেরি করা ঠিক হবে না।

সাহানা আর আতিউর মেয়েকে দরাদরি কতে গাড়িতে তুলে। আতিউর গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে যায়।

নিদ্রর মা ফোন নাম্বার নিয়ে রিসিভশনে গিয়ে পুষ্পের ফোনে ফোন করে কিন্তু কেউ রিসিভ করে না। ২-৩ বার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করে না। নিদ্রের মার এবার চিন্তা হতে লাগলো ঠিক আছে তোও মেয়েটা? চিন্তিত হয়ে আরো ২ বার ফোন করলো কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। তাই নিদ্রের মা ঠিক করে পুষ্পদের বাসায় যাবে। গেটের দিকে যেতে নিলেই দেখে নাস সেন্সলেস পুষ্পকে হসপিটালের হুয়িল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে আসছে আর তার পিছনেই তার মা-বাবা আসছে। জাহানারা তাড়াতাড়ি পুষ্পদের কাছে গিয়ে চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
– ভাই ভাবি কি হয়েছে পুষ্পের?

পুষ্পের বাবা-মা পরিচিত কন্ঠ শুনে সেদিকে তাকাতেই দেখে জাহানারাকে।

🌺

প্রিয় রিমিঝিমি,

জানো একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন কিসের? বিশ্বাসের। কিন্তু আপসোস সেই বিশ্বাসটাই আমাদের সম্পর্কে নেই। হয়তো আমারই দোষ। আমিই ব্যর্থ হয়েছি তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে। তাই এতো বলার পরও সেদিন তুমি আমার কথা বিশ্বাস করনি। আমাকে সময়ও দেওনি সত্যটা প্রমাণ করার। এখন তোমার হাতে সব প্রমাণ আছে। এখন তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমি তোমাকে ধোঁকা দেইনি। যদি ধোঁকা দেওয়ারই হতো তাহলে তিন কবুল বলে বিয়ে করতাম না। সে যাই হোক। যেই সম্পর্কে বিশ্বাস নেই সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। যেহেতু আমাদের কাগজে-কলমে কোন সম্পর্ক নেই। তাই আমি মুখে বলে তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে চলে যাচ্ছি। চলে যাচ্ছি তোমার থেকে তোমার শহর থেকে তোমার দেশ থেকে অনেক অনেক দূরে। ভালো থেকো। সুখে থেকো।

ইতি
তোমার হিমরাজ

চিঠিটা বুকে নিয়ে বারান্দার ফ্লোরে বসে আরো একটা নির্ঘুম রাত কাটালো রিমঝিম। তার একটা ভুলের জন্য আজকে সাড়ে সাতটা বছর দরে সে শাস্তি পাচ্ছে। নিজের উপরই নিজের রাগ হয়। যে মানুষটাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে সেই মানুষটাকে উপর কেন সে সেদিন বিশ্বাস রাখতে পারলো না? কেন তাকে অপমান করলো? কষ্ট দিল? আর হারিয়ে ফেললো তার ভালোবাসা তার হিমরাজ কে। ফজরের আজানের শব্দ কানে আসতেই বসা থেকে উঠে পরে রিমঝিম। রুমের ভিতরে ডুকে চিঠিটাকে খুব যত্ন করে কাঠের পড়ার টেবিলের ড্রয়েরের মধ্যে থাকা নীল রঙের ডায়রির ভিতরে রেখে ওয়াসরুমে চলে যায়। ওযু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়।

🌺

চলবে………..