পুষ্পের নিদ্র পর্ব-০৪

0
332

#পুষ্পের_নিদ্র
#আনআমতা_হাসান
পর্ব : ৪

– এই যে মিষ্টার হিমরাজ। এই মিষ্টার হিমরাজ।

কোন মেয়ের কন্ঠ কানের কাছে বারবার এভাবে বেজে উঠাতেই ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকায় পল্লব। তার পাশে ফর্সা গায়ে গোলাপি রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে গোলগাল চেহারার মিষ্টি একটা মেয়ে। পল্লব মেয়েটার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল
– আপনি কি আমাকে বলছেন?

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল
– আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি আপনাকেই ডাকছি মশাই।

– কিন্তু আমার নাম তো হিমরাজ না। আমার নাম তো ,,,,

পল্লবকে আর বলতে না দিয়ে মেয়েটি বলল
– আমি জানি আপনার নাম হিমরাজ না। আমি আপনার নাম জানি না। আর আপনাকে দেখে আমার মনে হলো হিমরাজ নামটা আপনার জন্য পার্ফেক্ট তাই এটা বলেই ডাকলাম আর কি।

পল্লব কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করল
– কেন? হিমরাজ আমার জন্য পার্ফেকট নেম কেন?

– কারণ আপনি অনেক লম্বা প্লাস ফর্সা। আপনাকে দেখলেই হিমালয়ের কথা মনে পড়ে যায়। তাই হিমালয়ের হিম। আর আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি অনেক গম্ভীর টাইপের মানুষ। আমার মতে রাজারা অনেক গম্ভীর টাইপের হয়। সেই রাজা থেকে রাজ। দুটো মিলে হিমরাজ। নামটা সুন্দর না।

কথাটা বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিল মেয়েটা। পল্লব সেই হাসির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আনমনে বলল
– হ্যাঁ অনেক সুন্দর।

মেয়েটা গর্বের সঙ্গে বলল
– দেখতে হবে না কে দিয়েছে।

– তা আপনি আমাকে ডাকছিলেন কেন?

– ওহ কথায় কথায় তো আমি ভুলেই গিয়েছি।

কথাটা বলে হাতে থাকা কাগজটা পল্লবের সামনে ধরে মেয়েটি বলল
– এই নিন এটা আপনার ফাইল থেকে পরে গিয়েছিল।

পল্লব কাগজটা নিয়ে দেখলো এটা তার। হাতের কালো ফাইটার মধ্যে ছিল। কখন ফাইল থেকে পড়ে গিয়েছে সে খেয়ালই করেনি। মেয়েটা দিকে তাকিয়ে বলল
– থ্যাংকস। আপনার নামটা কি জানতে পারি?

– রিমঝিম।

– রিমঝিম ব্যাস সুন্দর নাম তো। তা আপনিও কি রুয়েটে পড়েন? কোন ইয়ারে? কোন ডিপার্টমেন্টে? আগে তো দেখিনি? ফ্রেশাস?

– কুশ্চেনে ব্রেক লাগান। আমি ফ্রেশাস। ফাস্ট ইয়ার।

– কোন ডিপার্টমেন্ট?

– সাইস।

পল্লব কিছু বুঝতে না পেরে বলল
– হে?

রিমঝিম মিষ্টি হেসে বলল
– আমি অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি।

পল্লব অবাক হয়ে বলল
– হ্যাঁ! তুমি তো পিচ্চি মেয়ে।

রিমঝিম কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল
– পিচ্ছি মেয়ে? আপনি জানেন আমার বয়স ষোল বছর।

পল্লব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
– তো?

– তো মানে! আপনি জানেন, গ্রামের মেয়েদের ষোল বছর বয়সী মেয়েদের নাতি-পুতি থাকে। আর আপনি বলছেন আমি ছোট।

– হ্যাঁ! ষোল বছরের মেয়ের বিয়ে হতে পারে বাট নাতি-পুতি? কিভাবে সম্ভব?

– সম্ভব। ডিজিটাল হিসেবে সম্ভব আপনি বুঝবেন না।

পল্লব হেসে বলল
– ওহ আচ্ছা তাই।

রিমঝিমও হেসে বলল
– আজ্ঞে তাই।

—————————–

– ম্যাম এসে পরেছি।

গাড়ির ড্রাইভারের ডাকে বর্তমানে ফিরে আসে রিমঝিম। গাড়ির স্বচ্ছ কাচের মধ্যে দিয়ে বাহিরে তাকাতেই তাদের একতালা বাড়িটা চোখে পরে। খুব গোপনে একটা চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে পরে সে।

🌺

রাত ১১:০০ টা বাজে। বিছানার মাঝখানে পা গুটিয়ে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে পুষ্প। কিছুক্ষণ পর পর ফোনের সাইটের ছোট বাটনটা টিপে লক খুলে স্লাইড করে নিদ্রের নাম্বারটা বের করে স্কিনের নিদ্রের নাম্বারের উপরে ডানহাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ক্লিক করে নিচে আসা কল চিহ্নের উপর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল নিয়ে আবার সরিয়ে সাইডের বাটন টেপে ফোনের স্কিন অন্ধকার করে ফেলছে। কালকে রাতে হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পর থেকে আর কথা হয়নি নিদ্রের সাথে। এখন কেমন আছে তাও জানে না। খুব টেনশন হচ্ছে পুষ্পের। নিদ্রের নাম মা-বাবার সামনে বলতে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে পুষ্পের। তাই সে তাদের জিজ্ঞেস করতেও পারছে না। নিদ্রের মাকে ফোন করে নিদ্রের খবর নেওয়া তাতো আরও অসম্ভব। সেজন্যই ফোন করার জন্য বারবার নিদ্রের নাম্বার বের করছে। কিন্তু নিদ্র যদি ঘুমিয়ে থাকে। এমনি অসুস্থ শরীর এখন ফোন করে ঘুম ভাংগানোটা ঠিক হবে না। কিন্তু টেনশনও হচ্ছে খুব। তাই ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে নিদ্রকে ফোন দিবে কিনা। কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক করলো মেসেজ দিবে। আবার ফোনের সাইটের ছোট বাটনটা টিপে লক খুলে স্লাইড করে নিদ্রের নাম্বারটা বের করে। স্কিনের নিদ্রের নাম্বারের উপরে ডানহাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ক্লিক করে নিচে আসা মেসেজ চিহ্নের উপর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মেসেজ অপশন ওপেন করে। ডান ও বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে বাংলা ফন্টে লিখে,

” আসসালামু আলাইকুম নিদ্র ভাইয়া এখন কেমন আছেন? জর কমেছে? মাথায় ব্যাথা আছে?”

এই দুই লাইন মেসেজ লিখে তিন-চারবার লাইন দুটো পড়ে। ভাবতে থাকে আরও কিছু কি লিখবে? নিদ্রের বাবা-মা কেমন আছে তা কি জিজ্ঞেস করবে? না থাক অসুস্থ মানুষকে এতো কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। তাই আরও একবার লাইন দুটো পড়ে মনে কিছুটা দ্বিধাদন্ধ নিয়েই মেসেজ করে দেয়।

এদিকে,

খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে লেপটপে অফিসের ফাইল চেক করছে নিদ্র। আর একটা ফাইল চেক করা বাকি আছে। এটা চেক করেই পুষ্পকে ফোন দিবে বলে ঠিক করে নিদ্র। দুইদিন অফিস যেতে পারেনি। পরশুদিন হসপিটালে ছিল আর আজকে মা যেতে দেয়নি। কাজও করতে দিতে রাজি হয়নি। কত বলে-টলে রাজি করেছে। সামনে আবার বিয়ের জন্য সপ্তাহক্ষানেক দরে যেতে পারবেনা। ঘুমের ওষুধের প্রভাবে দিনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়েই কেটেছে। তাই সারাদিনে পুষ্পের কোন খোঁজ নেওয়া হয়নি। তাই ভেবেছে এই ফাইল গুলো দেখা শেষ হলে পুষ্পকে একটা ফোন দিবে। শেষ ফাইলটা অর্ধেক দেখা শেষ হলেই বেট সাইড টেবিলে রাখা ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়। নিদ্র ফাইল দেখতে দেখতেই বাম হাত দিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে বেখেয়ালি ভাবেই বাম হাত দিয়ে ফোনের লক খুলে মেসেজ অপশনে গিয়ে পুষ্পের মেসেজ দেখেই নিদ্র অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পুষ্প কখনো নিজে থেকে নিদ্রকে কল বা মেসেজ দেয়নি। এই প্রথম পুষ্প তাকে মেসেজ দিয়েছে। নিদ্র মেসেজটা ওপেন করে পড়ে ঠোঁট জোড়া হালকা প্রশারিত করে একটা হাসি দেয়। তার পুষ্পও তার জন্য চিন্তা করছে এর থেকে খুশির খবর আর কি হয়ে পারে। নিদ্র পুষ্পকে ফোন করে।

পুষ্পও নিদ্রকে মেসেজ সেন্ট করে ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল। তাই নিদ্র ফোন করতেই পুষ্প ফোনটা রিসিভ করে তার নম্র সরে বলল
– আসসালামু আলাইকুম নিদ্র ভাইয়া।

পুষ্পের মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনেই নিদ্র ভ্রু কুচকে ফেললো। বিয়ের একবছর পর পুষ্প ফোন কিনে। তার কয়েকমাস পর থেকেই তাদের মধ্যে ফোনে কথা বলা শুরু হয়। প্রথমদিন ফোন আলাপের সময়ই নিদ্র পুষ্পকে ভাইয়া ডাকতে না করেছিল। তখন পুষ্প নিদ্রকে বলেছে এখনো কেউ তাদের বিয়ের কথাটা জানে না। এখন যদি সবার সামনে ভুল বসতো তাকে নাম দরে ডেকে ফেলে তাহলে সবাই সন্দেহ করবে। তার সেই কথার প্রেক্ষিতে তখন ভাইয়া ডাকার পারমিশনটা দিয়েছিল সে। কিন্তু এখন তো সবাই তাদের বিয়ের কথাটা জানে। তাহলে এখন কেন তাকে ভাইয়া ডাকবে? নিদ্র রাগী কন্ঠে বলল
– এই শেষবার আর কোনদিন যদি ভাইয়া বলে ডেকেছ তাহলে খবর আছে।

পুষ্প ভয়ে একটা ছোট ডোক গিলে আমতা আমতা করে বলল
– না মানে হঠাৎ করে কি আর ডাকা যায়। এতো দিনের অভ্যাস।

নিদ্র একটু ভেবে বলল
– আচ্ছা যাও বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত সময় দিলাম। বিয়ের দিন থেকে যেন আমি তোমার মুখে আর ভাইয়া ডাক না শুনি।

– আচ্ছা, ঔষুধ খেয়েছেন?

– হুম্ম মা খায়িয়ে দিয়ে গেছে।

– আর জর এসেছিল?

– নাহ

– মাথা ব্যাথা আছে?

– মাথাতে ব্যাথা নেই কিন্তু অন্য কোথাও ব্যাথা আছে।

পুষ্প চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
– আপনি অন্য যায়গায়ও ব্যাথা পেয়েছেন। ডাক্তারকে বলেননি কেন? কোথায় ব্যাথা আছে?

নিদ্র ছোট করে উত্তর দিল
– বুকে।

– পরে গিয়ে বুকেও ব্যাথা পেয়েছেন। কেটেছে? এখন ফোন দিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

– উহু। পরে গিয়ে ব্যাথা পাইনি। আর কাটেওনি। ব্যাথাটা বুকের বাহিরে না ভিতরে।

– ওহ। তাহলে মনে হয় গ্যাস্টিকের ব্যাথা। একটা সারজেল খেয়ে ফেলুন ঠিক হয়ে যাবে।

– উহু এটা গ্যাস্টিকের ব্যাথাও না।

– এই অসুস্থ নিয়ে হেয়ালি করতে নেই। আপনি এখন ডাক্তারকে ফোন করে ব্যাথার কথা ডিটেইলসে বলুন।

– তাতে কোন লাভ হবে না। এই ব্যাথার ঔষুধ ডাক্তার এর কাছে নেই।

– মানে?

নিদ্র মুচকি হেসে বলল
– এটা বউ ব্যাথা। আর এর ঔষুধটা একমাত্র বউের কাছে আছে।

পুষ্প এবার বুঝতে পারলো নিদ্র এতক্ষণ দরে তার সাথে দুষ্টমি করছে। আস্তে করে বলল
– পঁচা লোক।

নিদ্র হেসে দিল।

🌺

চলবে………..