পুষ্পের নিদ্র পর্ব-০৮

0
290

#পুষ্পের_নিদ্র
#আনআমতা_হাসান
পর্ব : ৮

আজ নিদ্র আর পুষ্পের এংগেজমেন্ট। এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠান বাড়িতে হবে না। নিদ্রদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে তাদের একটা একতালা পুরানো বাড়ি ছিল। সেই বাড়িটা কিছুদিন আগে নিদ্র ভেঙে ফেলে। সেখানে বিল্ডিং তুলবে বলে। তাই সেই জায়গাটা আপাতত খালি পরে আছে। সেখানেই তাদের এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হবে। পল্লব আর নিদ্র দুজন মিলেই সব আয়োজন করছে। তাই তারা সবার আগে এসে পরে। নিদ্র পুষ্পের বাবা মাও কিছুক্ষণ আগে এসে পড়েছেন। হাতে গোনা কিছু গেস্ট ছাড়া বাকি সবাই চলে এসেছে। আসেনি শুধু পুষ্প আর রিমঝিম। তারা দুপুরের দিকে পার্লারে চলে গিয়েছে। তাদের সাজও কমপ্লিট হয়েছে টাইম মতো। কিন্তু রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে লেট হচ্ছে। পুষ্পরা কাছাকাছি এসে পড়েছে বললেই নিদ্র গেইটে গিয়ে দাঁড়ায়। পাঁচ মিনিট ধরে সে গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। পল্লবের চোখ নিদ্রের দিকে পরতেই সে নিদ্রের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
– বনু এখনো আসেনি। কোথায় ও?

পল্লবের কন্ঠে কানে যেতেই নিদ্র পল্লবের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
– বলল আর পাঁচ মিনিট লাগবে। পাঁচ মিনিট তো হ ,,,,,,,

নিদ্র কথাটা শেষ করার আগেই সেখানে এসে পল্লবদের বাড়ির গাড়ি থামে। গাড়ির দরজা খুলে ভিতর থেকে একে একে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে পুষ্প আর রিমঝিম। নিদ্র পুষ্পকে হাত ধরে নিয়ে না গিয়ে হা করে দাঁড়িয়ে পুষ্পকে দেখছে। কি অপূর্ব লাগছে আজ তার পুষ্পকে। সাদা বল গাউন। গলায় কানে ডায়মন্ডের সিম্পল গহনা। চুলগুলো সাইড খোপা করা। পায়ে সাদা হাই হিল। মুখে হালকা মেকাপ।

পল্লবও নিদ্রকে তাড়া দিবে কি সে তো নিজেই স্টেটু হয়ে দাঁড়িয়ে রিমঝিমকে দেখছে। নীল রঙের বল গাউন। গলা কানে নীল পাথরের সিম্পল গহনা। লম্বা চুল গুলো বেনুনি খোপা করা। পায়ে নীল হাই হিল। মুখে হালকা মেকাপ।

এসিকে পুষ্প অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নিদ্রের দিকে। পুষ্পের সাথে ম্যাচ করে সাদা রঙের সুট সেট পড়েছে নিদ্র। হাতে সাদা বেল্টের ঘড়ি। চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা। পুষ্প মনে মনে ভাবছে তার প্রিয় এই সাদা রংটায় তার প্রিয় মানুষটাকে এতো সুন্দর লাগে কেন?

রিমঝিমও অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পল্লবের দিকে। সেট করা চুল। হাতে কালো রঙের ব্যান্ডের গড়ি। আর হিমালয়ের মতো দবদবে সাদা গায়ে কালো রঙের সুট সেটে মারাত্মক সুন্দর লাগছে তাকে।

নিদ্রের খালাতো ভাইয়ের বউ সাদিয়া তখন সেখানে এসে কেশে দেয়। সাদিয়ার কাশির শব্দে তাদের চারজনের ধ্যান ভেঙে যায়। তারা সবাই সাদিয়ার দিকে তাকায়। সাদিয়া নিদ্রকে বলল
– দেবরজি কয়টা দিন ওয়েট করো। কদিন পর নিজের কাছে নিয়ে ইচ্ছে মত সারা দিন-রাত বউকে দেখ। এখন আপাদত এংগেজমেন্টটা শেষ কর।

লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে পুষ্প। নিদ্রও লজ্জা পেয়ে যায়। কিছু না বলে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে তার সামনে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। পুষ্প আস্তে করে তার কোমল হাত নিদ্রের হাতের উপর রাখে। প্রিয় মানুষটির প্রথম স্পর্শে দুজনের শরীরে এক শীতল শিহরণ বয়ে যায়।

পুষ্পের হাত ধরে তাকে লাল কার্পেটের উপর দিয়ে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতে যেতে নিদ্র ফিসফিসে বলল
– ভাবছি বিয়ের দিন সাথে করে একজন ডাক্তার নিয়ে যাবো।

নিদ্রের কথার মানে না বুঝতে পেরে পুষ্প নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল
– কেন?

নিদ্র নিজের মুখটা পুষ্পের কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসেই উত্তর দিল
– তোমাকে আজকে দেখেই আমার ছোট খাটো হার্ড এটাক্ট হয়ে গিয়েছে। বিয়ের দিন যদি বড় সর কিছু হয়ে যায় তাই।

পুষ্প লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। তখনই তাদের উপর গোলাপের পাপড়ি আর আসেপাশে বাবল উড়তে থাকে। পুষ্প মাথা তুলে সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় দুই প্রান্তে লাল শাড়ি পড়া মেয়ে, পরে লাল ড্রেস পড়া ছোট বাচ্চা। আবার লাল শাড়ি পড়া মেয়ে, পরে আবার লাল ড্রেস পড়া ছোট বাচ্চা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েরা গোলাপের পাপড়ি ছিটাচ্ছে আর বাচ্চারা বাবল উড়াচ্ছে। তাদের সামনেই ক্যামেরাম্যান সব ভিডিও করছে।

রাস্তার লাল কার্পের শেষে সাদা রঙের গোল কার্পেট বিছানো। বাকি পুরো যায়গাটাই সবুজ কার্পেট বিছানো।
নিদ্র পুষ্পকে নিয়ে সাদা কার্পেটের উপর দাড় করায়।

সাদা গোল কার্পেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাল গোলাপের পাপড়ি। আর তার মধ্যে সাদা ড্রেসে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্প আর নিদ্র। তারপর পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে তার সামনে হাটু গেরে বসে। রিংটা পুষ্পের সামনে ধরে। অসম্ভব সুন্দর সেই দৃশ্য সবাই অপলক চোখে দেখছে।

রিমঝিমের সেই দৃশ্য দেখে মনে পরে যায় পল্লবও ঠিক এমন ভাবে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে তাকে একগুচ্ছো লাল গোলাপ হাতে তাকে প্রপোজ করেছিল। কতো সুন্দরই না ছিল সেই মূহুর্তেটা। কত আনন্দেই না কেটে ছিল সেই দিন গুলো। কিন্তু নিজের একটা ভুলের জন্য সব শেষ। কথাটা ভাবতেই চোখের কোনে বেয়ে গড়িয়ে পরে এক ফোটা জল। চোখের জল মুছে আড় চোখে পল্লবের দিকে তাকায়। ক্যামেরাম্যানের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বিভিন্ন পোজে ছবি তোলার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। ঠিক তখনি নিদ্রের বন্ধু চন্দন পুষ্পের পাশে দাঁড়িয়ে দুষ্টমি করে বলল
– বেয়াইন সাহেবা আমার বন্ধুর হিল্লে তো আপনার বান্ধবী করে দিল। এখন আমার হিল্লে আপনি কবে করবেন।

রিমঝিম হেসে বলল
– পাএী খোঁজা চলছে বেয়াই সাহেব। একটু ধৈর্য্য দরুন।

চন্দন বুকে হাত দিয়ে বলল
– বন্ধুর এতো রোমান্টিক এংগেজমেন্ট দেখে আর যে পারছিনা। খুব করে মমতাজের গান গাইতে ইচ্ছে করছে। বুকটা ফাইটা যায় ওরে বুকটা ফাইটা যায়।

চন্দনের গান আর তার সাথে কথা বলার অঙ্গভঙ্গি দেখে রিমঝিম হেসে দেয়। চন্দনও হেসে দেয়।

ব্যস্ততার মাঝেও শত নিষেধ অমান্য করে পল্লবের বেহায়া চোখ বারবার চলে যাচ্ছে তার বউয়ের দিকে। আনমনেই আবারও রিমঝিমের দিকে তাকাতেই দেখে রিমঝিম চন্দনের সাথে হাসাহাসি করছে। রাগে হাত মুঠো করে ফেলে সে। এই মেয়ে নাকি তাকে ভালোবাসে। কোথায় তার দিকে তো তাকাচ্ছেও না। কি সুন্দর অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

সাহানা রিমঝিম কাছে এসে একটা ছোট বক্স রিমঝিমমে দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– এটা পুষ্পকে দিয়ে এসো তো মা।

– আচ্ছা আন্টি।
কথাটা বলেই রিমঝিম মিষ্টি হেসে সাহানা থেকে বক্সটা নিয়ে পুষ্পের কাছে যায়।

পুষ্প ভাবছে আজকে কি তার নিদ্রের সাথে এংগেজমেন্ট নাকি নিদ্র তাকে আজকে প্রপোজ করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে? প্রপোজ তো মানুষ লুকিয়ে করে। না হয় ফ্রেন্ডদের নিয়ে করে। এমন একগাদা মানুষের সামনে করে নাকি। আর না বিয়ে করা বউকে করে। নিদ্রের কথায় পুষ্পের ভাবনার সুতো কাটে। নিদ্র পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বলল
– সারাজীবন এই রাগী বদমেজাজি ছেলেটার পাশে থাকবে? প্রমিজ করছি যতদিন বেচে থাকবো ভালোবেসে আগরে রাখবো।

পুষ্প ছলছল চোখে নিদ্রের দিকে হাত বারিয়ে দেয়। নিদ্র মিষ্টি হেসে পুষ্পকে আংটি পড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। রিমঝিম পুষ্পের কাছে গিয়ে তার হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং দিয়ে বলল
– এটা নিদ্র ভাইয়াকে পরিয়ে দে।

পুষ্পের খুব লজ্জা লাগছে। নিদ্রের কথা শুনে আবেগে সে আসেপাশে সব ভুলে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই তখন লজ্জা লাগেনি। কিন্তু এখন যখন রিমঝিমের ডাকে তার ঘোর কেটেছে। তখন কিছুক্ষণ আগে তাদের প্রপোজের দৃশ্য সবাই দেখেছে প্লাস ক্যামেরা বন্ধী করেছে ভেবে তার লজ্জায় মাটিতে মিসে যেতে ইচ্ছে করছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে পুষ্প। রিমঝিম পুষ্পের কানের কাছে এসে বলল
– জানু আগে তাড়াতাড়ি আংটিটা পরা। তারপর যতইচ্ছা লজ্জা পাস। ওকে।

বলেই রিমঝিম পুষ্পের হাতে আংটিটা ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পুষ্প নিদ্রের দিকে আংগটিটা ধরলে নিদ্র নিজের হাত বারিয়ে দেয়। পুষ্প নিদ্রের হাতে আংটিটা পড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আতশবাজি ফাটানো শুরু হয়। কোন ঝামেলা ছাড়া আনন্দের মধ্যে দিয়েই নিদ্র আর পুষ্পের এংগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শেষ হয়।

🌺

চলবে………..