প্রণয়লীলা পর্ব-০১

0
644

#প্রণয়লীলা — [১]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

-‘ এই মুহুর্তে তোমার কাছে দু’টো পথ খোলা আছে হয়তো আমাকে বিয়ে করো নতুবা তোমার এই অপ্রীতিকর ছবি গুলো ভাইরাল হতে দেখা। সে তোমার বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্বেও এবার তুমি কি করবে? সিদ্ধান্ত তোমার কোন পদ্ধতি তুমি বেছে নেবে!’

উপরোক্ত কথাগুলো আমার উদ্দেশ্য বলে দিয়ে আমার সামনে ছবিগুলো ছুঁ’ড়ে দিলো নিবিড় মাহমুদ! আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখনো উনার সামনে। একটু আগে উনি আমাকে নিজের অফিসে ডেকে এনে এরকম প্রস্তাব দেন! আমি মাটি থেকে ছবিগুলো তুলে নিয়ে নিজের হাতে নিলাম। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটি মেয়ে আর একটি ছেলে একে অপরের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে আবদ্ধ হয়ে আছে আর সেই মেয়েটি অন্য কেউ নয় সেই মেয়েটির ছবিতে আমি নিজের মুখ দেখতে পেলাম। বেশ করে বুঝতে পারছি এটা কোনোভাবে এডিট করা হয়েছে নতুবা আমি এইরকম আপত্তিকর ভাবে কোনো সময়ই ছিলাম না! নিবিড় আমাকে বাধ্য করছে উনাকে বিয়ে করতে সেজন্যই আমাকে এই রকম অপশন দিয়েছেন এগুলো ভাবতেই সাড়া শরীর জুড়ে উনার জন্য ঘৃ নার পরিমান বেড়ে গেলো। অফিসে কা’না’ঘুষা শুনতাম উনার নামে কিন্তু উনি যে এইরকম করবেন সেটা ঘুনাক্ষরেও টে’র পায়নি যদি পেতাম উনার এই অফিসে চাকরির জন্য আসা তোর দূর আমি পা-ও রাখতাম না।

-‘ পূর্নিমা আমার মনে হচ্ছে তোমার একটু ভাবার প্রয়োজন। তুমি বরং আজকে অফিস থেকে চলে যাও। বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নাও। কালকে এসে আমাকে তোমার সঠিক সিদ্ধান্ত জানিও।’

-‘ আপনার প্রতি যা সম্মান ছিলো তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে! ঘৃ’নার পরিমান শুধু বেড়েই যাচ্ছে আপনার প্রতি। ইচ্ছে করছে ঠা’ঠি’য়ে দু’টো চ’ড় মা’রি। কিন্তু আমার শিক্ষা সেসব করা থেকে আটকাচ্ছে আমাকে নতুবা আপনার আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকবে না।’

কথাগুলো বলে উনার প্রতিত্তোরের জন্য এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে চলে এলাম অফিস থেকে। বাড়ির পথে রওনা দিলাম। খালি কোনো গাড়ি তো দূর রিক্সাও খুঁজে পাচ্ছি না। রাস্তায় খটখটে রৌদ্র! এর ভেতর দিয়েই হাঁটা শুরু করলাম যেনো রা’গের মাত্র আরো তীব্র হচ্ছে ক্রমশ! এরই ভেতর ব্যাগে থাকা মুঠোফোনটি বেজে ওঠছে হাতে নিতেই স্ক্রিনে তানভীরের নাম ভেসে ওঠলো! এখন যেনো সবকিছু বি’ষা’ক্ত লাগছে তাই বাধ্য হয়ে তানভীরের কল কে’টে দিয়ে ফোন বন্ধ করে হাঁটা শুরু করলাম। মধ্যেবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি কোনো মতে পড়ালেখা শেষ করে নিবিড় মাহমুদের অফিসে চাকরিটা জোগার করেছিলাম। খুব বেশি দিন হয়নি মাস তিনেক হয়েছে কেবল জয়েন করেছে। আমি অফিসে জয়েন করার আগেই আব্বুর অসুস্থতার কারনে চাকরি চলে গেছে। যেটুকু পুঁজি ছিলো সে দিয়েই সংসার চলেছে এতোদিন পরে আমি চাকরিটা জোগার করেছিলাম যেনো অন্ধকারে একটু আলোর রেখা দিয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটুকু থাকবে কি-না সন্দেহ আছে! অফিসে জয়েন হবার পর থেকে নিবিড় মাহমুদ আমার সঙ্গে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে সেটা নিছকই কাজের সূত্রে। তবে তার জন্য যে উনি আমাকে এসব প্রস্তাব দেবেন সেটা কখনোই ভাবিনি। হয়তো বড়োলোক ছেলের খেয়াল হয়েছে সেজন্যেই এখন এসব। উনি বেশ ভালো করেই জানেন আমি তানভীর আমাকে ভালোবাসে সেজন্য উনি এটাও জানতেন উনি বিয়ের কথা বললে আমি উনাকে না করে দিবো ঠিক সেই কারনেই এই রকম একটা প্রস্তাব দিলেন তিনি, এগুলো বুঝতে আমার কোনো অসুবিধেই হলো না। বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম। ক্লান্ত শরীর আর বাঁধ মানলো না!
———————–

বিকেলের সুন্দর সময়। প্রায় সূর্য ডুবো ডুবো অবস্থা। এরকমই একটি সময়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো সুর্দশন একটি যুবক! মুঠোফোনটিতে ডায়াল করতেই অপর পাশের বিরক্তিকর কন্ঠ বলে দিলো ফোন বন্ধ! পরপর ঘন্টাখানেক এরকম হওয়ায় রে’গে গিয়ে সি’গা’রেটে আ’গু’ন ধরালো সেই যুবক!

-‘ এতো সাধনার পর তোমাকে পেয়ে এতো সহজে হারিয়ে ফেলবো না-কি প্রেয়সী? ফোন বন্ধ করে রেখেছো তো? আমার থেকে দূরে সরতে চাইছো, নো প্রবলেম আমিই তোমার কাছে ছুটে আসছি! সকাল অব্দি মন মানছে না আজকেই আমাকে যা করার করতে হবে।’
——————–

ঘড়ির কা’টা’য় ক’টা বেজেছে তা বলতে পারবো না তবে চোখ খুলেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই বুঝতে পারলাম এখনি সন্ধ্যা হয়ে আসবে। আমরা এখন মধ্যেবিত্ত হলেও বাড়িটা বাবা তৈরী করেছিলেন বেশ সুন্দর করেই। তখন আমাদের পরিবার বেশ সচ্ছল ছিলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায় আবার মৃদুমন্দ বাতাস এসে গায়ে দোলা দিয়ে যায়। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বাহিরে যাবো তখুনি দেখছি দরজায় ছিটকিনি এটে দেওয়া। বুঝতে পারলাম না হঠাৎ করে আমার রুমের দরজা বন্ধ হলো কি করে। একটু পরেই হুরমুর করে মা দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো হাতে একটা বেনারসি শাড়ি নিয়ে!

-‘ একি মা! তুমি এসব শাড়ি নিয়ে এসেছো? আর আমার রুমের দরজা বন্ধ করেছো কেনো? কি হয়েছে খুলে বলো?’

-‘ আরেহ্ পূর্নিমা এতো কথা বলিস না। তোর বাবার পছন্দসই পাত্র আমাদের বাড়িতে এসেছে আজকে তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে শুধু তা-ই নয় আজকেই ঘরোয়াভাবে বিয়েটা সমপন্ন হবে বুঝেছিস?’

একে তো সকালের ঘটনার রেশ এখনো কা’টেনি মন থেকে তার উপর মায়ের এই আদেশ! এখন আমি কি করবো? পাত্র আব্বুর পছন্দসই? মানে আগে থেকেই চেনা পরিচিতো হবে হয়তো। তাহলে কি পাত্রকে আমিও চিনি?

-‘ এতো জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে দে তো। শোন মা, তুই তো জানিসই আমাদের পরিবারের অবস্থা ঠিক কিরকম। এখন আর আগেরমতন করে অতো বড়ো ভাবে বিয়ে দেবার মতন সামর্থ্য নেই আমাদের তার উপর উনারা ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সারতে চাইছে যা আমাদের জন্য ভালো শুধু তাইই নয় বললাম তো পাত্র তোর আব্বুর চেনা তুই তো আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসিস তোর আব্বুকে তাহলে উনার কথা শুনবি না? উনি তো সবকিছু তোর ভালোর জন্যই করে তাই না বল? তাহলে এতো সুবিধা থাকা সত্বেও তুই রাজি হবি না?’

-‘ কিন্তু মা হুট করে বিয়ে? আমি তো এখনই এসবের জন্য প্রস্তত ছিলাম না। তার উপর চাকরি টা না করলে কি হবে? সেগুলোও একটু ভেবে দেখো? আর সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে ছেলেকে তো আমি চিনিই নাহ্!’

-‘ চাকরির কথা বলছিস তো? বললাম না ছেলে তোর আব্বুর পছন্দসই। উনারা তোকে চাকরি করতে দিবে, আর ছেলেকে তো তুই বিয়ের পরেও চিনে নিতে পারবি তাই নাহ্? ভেবে দেখ চাকরি করতে পারবি, তোর আব্বুর পছন্দসই পাত্র, সবকিছুই ঠিকঠাক এবার আর কোনো না শুনতে চাই না। তুই এই শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নিচে আয় সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে!’

মা চলে গেলো আমার হাতে শাড়ি দিয়ে। আমি এখনো বুঝে ওঠতে পারছি না আমি ঠিক কি করবো? সকালের সেই ঘটনা আমার মা’থায় ঘুরছে এখনো তার উপর করে এখন এই বিয়ে! সত্যি বলতে আমি নিবিড় মাহমুদকে অতোটাও অপছন্দ করতাম না যতোটা না আজকে উনার কথা শুনে করেছি। উনার কথা শুনে রাজি হই বিয়ে করতে নির্ঘাত আমার জীবনটাই নষ্ট হবে! না উনি আমাকে চাকরি করতে দিবে আর না সম্মান করবে! উনার সঙ্গে বিয়ে করে থাকার চেয়ে আব্বুর পছন্দসই পাত্রের সঙ্গেই বিয়ে করা অতি উত্তম! উনার মতন মানুষের হাত থেকেও বাঁচতে পারবো এই বিয়েটা করে আবার চাকরিও করতে পারবো সেটা নিবিড় মাহমুদের অফিসে না হলেও অন্য অফিসে করবো যতোদিন না অব্দি ভাইটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে! ফোনটা এখনো বন্ধই রেখেছি নতুবা তানভীর ফোন করতো একশো একবার! এ সবার কাছে বলে বেড়ায় ওর সঙ্গে আমার রিলেশন আছে কিন্তু ওকে আমি বন্ধুর চোখেই দেখি। ওর কাছ থেকে অনেক রকম ভাবে ঋনী আছি তাই সেরকম ভাবে কিছু বলতেও পারি না। আপাততো সবরকম চিন্তা বাদ দিয়ে বিয়ের সাজের জন্য রেডি হতে গেলাম। একটু পরেই শাড়িটা পড়ে চুলগুলো খোঁপা করে সিম্পল সাজে সেজে নিলাম। মা’থায় ঘোমটাখানি বড়ো করে টে’নে নিচে গেলাম মা আর কাকীর সঙ্গে, নিচে নিশ্চয়ই পাত্র বসে আছে। বিয়েটা হয়ে গেলই উনাকে নিবিড় মাহমুদের সম্পর্কে সবটা বুঝিয়ে বলবো উনাকে, আমার আব্বু আমাকে অনেকটা বুঝে ওনি নিশ্চয়ই আমার জন্য ঠিকঠাক মতন পাত্রই আনবে!

অবশেষে সোফায় বসানো হলো আমাকে পাত্রের সঙ্গে। ঘোমটাখানি খুলে পাত্রের মুখ দেখে আমি হতভম্ব! শেষেমশ কি-না এই ছিলো আমার কপালে? এখন কি করবো আমি? এই বিয়ে তো কিছুতেই সম্ভব না। পাত্রের দিকে তাকাতেই পাত্র আমাকে চোখ মা’র’লো হাসি মুখে! যেনো কিছুই হয়নি এরকম ভাব!

#চলবে?