প্রণয়লীলা পর্ব-০২

0
414

#প্রণয়লীলা –[২]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

_____________________________

আপাততো চুপচাপ রইলাম কোনো সিনক্রিয়েট তৈরী না করে। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হলেও এলাকার কিছু গন্য মান্য ব্যাক্তি সহ নিবিড়ের পরিবারের লোকজনও রয়েছে কিছু কিছু। সবার সামনে চুপচাপ রইলাম। একটু পরেই বিয়ে শুরু হলো। না চাইতেও নিজেকে উনার স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে হলো। এখন থেকে উনি আমার স্বামী! বিয়ের পালা শেষ হতেই মিষ্টি খাবার ধুম লেগে গেলো সবার মধ্যে। বাবার মুখ জুড়ে রয়েছে আনন্দের হাসি যে প্রানখোলা হাসি আমি এতোদিন দেখিনি। বাবা সবার সঙ্গে বেশ হাসিমুখে কথা বলছে কেউ বলবেই না বাবা অসুস্থ এতোটা খুশি হয়েছেন তিনি। নিবিড়ের কর্মকান্ডের কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলাম বাবার ওই হাসি মুখটা দেখে। ইচ্ছে ছিলো এখুনি গিয়ে বাবাকে সবটা বলি কিন্তু তাহলে তো বাবার এই হাসিমুখ টা দেখতে পাবো না আর? কি সুন্দর হাসি বাবার। এইভাবেই কিছুক্ষণ পর বিদায়ের পালা এলো। এতোক্ষণ সবাই হাসিমুখে থাকলেও এবার যেনো বিষাদে ভর করলো পুরো ঘরজুড়ে প্রত্যেকটি মানুষের মুখে! আমারও ভেতরটা ফে’টে কান্না আসছে! কতোগুলো বছর দিন, সময় এই বাড়িতে কাটিয়েছে আর আজকে চলে যেতে হচ্ছে? নিয়তি তো এরকমই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি ওঠে বসলাম। আমার পাশেই বসে আছে নিবিড় মাহমুদ।

-‘ এতো কান্না করো না পূর্নিমা পরে তো চোখের পানি শুকিয়ে যাবে। তখন কি হবে?’

এতোক্ষণ উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে কতো সুন্দর করে কথা বলতো আর এই নিবিড় আমাকে বলছে ভবিষ্যতে কাঁদার জন্য চোখের পানি বাঁচিয়ে রাখতাম? আমি বেশ বুঝতে পারছি আমার সংসার জীবন ঠিক কি রকম হবে এই মানুষটার সঙ্গে! প্রতিত্তোর না করে চুপচাপ ভাবেই সাড়া রাস্তা বসে ছিলাম কোনো কথা না বলে। অতঃপর গাড়ি এসে থামলো উনার বাড়ির সামনে। আরো দু এক বার অফিসের কাজে উনার বাড়িতে এসেছিলাম আমি তাই বাড়ির টুকটাক সবকিছুই চেনা আছে আমার। গাড়ি থেকে নামতেই সবার ভীড় জমে গেলো আমাকে দেখার জন্য! সমস্ত নিয়ম কানুন সব কিছু শেষ করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করানো হলো আমাকে। নিবিড়ের বাড়িতে শুধু উনার মা, ছোট্ট বোন আর বাড়িতে এক কাজের বুয়া আছে। উনার বাবা না-কি মারা গেছে বছর খানেক আগে।

-‘ তোমাকে বরাবরই আমার পছন্দ ছিলো। যখুনি এই বাড়িতে আসতে তোমার আচার ব্যাবহার দেখে মুগ্ধ হতাম। মনে মনে তোমার মতনই একটা মেয়েকে নিজের ছেলের বউ হিসাবে আনতে চাইতাম আর দেখো? আমার এই পা’গ’ল ছেলেটা আজকে হুট করে আমার সেই ইচ্ছে পূরন করে দিলো। তোমার মকন মিষ্টি একটা মেয়ে এই বাড়িতে এসেছে এবার থেকে সবটা ভালো হবে দেখো। নিজের মনে করে থাকবে সবকিছুই তো তোমারই।’

আমি নিবিড়ের মায়ের কথায় হ্যাঁ বলে ভেতরে কিছুক্ষণ বসলাম। বউ দেখবার পালা শেষ হতেই আমাকে নিবিড়ের রুমে দিয়ে আসা হলো। আমি রুমে খাটের উপর চুপটি করে বসে আছি নিবিড়ের অপেক্ষায়। উনার আসতে দেরি হওয়ার কারনে আমি শাড়ি গয়না খুলে ফ্রেশ হয়ে থ্রি পিস পড়ে যেই না রুমে এসেছি ওমনি উনার আগমন ঘটলো।

-‘ বউকে বউ বেশে দু চোখ ভরে দেখবার আগেই বউ সাজ খুলে বসে রইলো! আসলেই আমার বউটা বেশ অন্যরকম দেখছি।’

-‘ তো কি করবো? আপনার জন্য বসে থেকে থেকে কি আমি আর রাত্রে ঘুমাবো না?’

-‘ তাহলে তুমি আমা জন্য অপেক্ষা করছিলে? ওরিম্মা কি দিনকাল আসা শুরু করছে হ্যাঁ? বিয়ের এক রাত্তিরেই বউ আমার জন্য অপেক্ষা করে দিশেহারা একেবারে!’

আমি বেশ বুঝতে পারছি নিবিড় এখন আমার সঙ্গে মজা করার মুডে আছে কিন্তু আমি সেরকম কোনো মুডে নেই। আমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

-‘ দেখুন আমি ভনিতা না করে সরাসরিই প্রশ্ন করছি আপনি আজকে অফিসে আমাকে বাধ্য করছিলেন কেনো আপনাকে বিয়ে করতে? আমি জানি ওসব ছবি ফেক কিন্তু আপনি এরকমটা কেনো করলেন? আর তারপরই আজকে বিয়ে করতে চলে এলেন এতো তাড়াতাড়ি?’

-‘ তো তুমি কি বলছো? আর একটু দেরি করে বিয়ে করতে আসলে বুঝি ভালো হতো?’

-‘ দেখুন মজা বন্ধ করে সোজাসুজি বলুন?’

শেষোক্ত কথাটি পূর্নিমা নিবিড়ের দিক পানে চেয়ে বেশ উচ্চস্বরেই বললো যার দরুন নিবিড় এবার মজা সেড়ে সিরিয়াস হলো।

-‘ দেখো পূর্নিমা তুমি যা জানতে চাইছো আমি সেটুকুই বলছি। প্রথমতো হ্যাঁ ওই ছবি ফেক ওগুলা আমি তোমাকে দেখিয়েছি যাতে বিয়েতে রাজি হও। দ্বিতীয়ত আজকেই বিয়ে করার কারন হচ্ছে আমার সন্দেহ হয়েছিলো তুমি অন্যকিছু করবে আমার প্রস্তাবে তাই ডিরেক্ট বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই।’

-‘ বুঝলাম কিন্তু আপনার আমাকে বিয়ে করার কারন কি বলুন তো?’

-‘ সে তুমি একদিন না একদিন ঠিক বুঝতে পারবে আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে। আপাততো এসব টপিক অফ করো।’

-‘ ঠিকআছে তবে অতো ভালো মেয়ে আমাকে ভাববেন না বলে দিলাম।’

নিবিড়ের ঠোঁটে এবার মুচকি হাসি। এবার দাঁড়ানো থেকে পূর্নিমার কাছে এসে বসলো। পূর্নিমা কি করবে বুঝতে না পেরে চুপচাপ বসে রয়েছে। নিবিড় কিচ্ছু না বলে মৌনতা পালন করছে হঠাৎ বলে ওঠলো,

-‘ হু তাহলে খারাপ করা যাক বলো? আজকে তো আমার বাসর রাত সেটা পূরন করতে হবে না?’

পূর্নিমার মনে এবার বেশ ভয় ঢুকে গেলো। সেই আগের জায়গায় বসা থেকে পিছিয়ে গেলো। ওমনি নিবিড় পূর্নিমার আরো নিকটে গিয়ে বসলো। এক সময় পূর্নিমার পিছনে যাবার জায়গাও ফুরিয়ে গেলো। নিবিড় আর পূর্নিমান মধ্যে খানে অল্পএকটু ফারাক আছে মাত্র। নিবিড় খুব সন্তপর্ণে পূর্নিমান দু গালে হাত দিয়ে স্পর্শ করলো! পূর্নিমা চেয়েও কিচ্ছু বলতে পারছে না। হালকা করে গাল দু’টো টে’নে দিয়ে বললো,

-‘ আপাততো রোমান্টিক মুডে নেই, যখন হবে তখন আর মানা করতে পারবে না। ঘুম পাচ্ছে ভীষন তুমিও শুয়ে পড়ো আমিও শুয়ে পড়ছি। সিনেমার মতন যে খাটে শোবে না সোফায় শোবে ওসব হবে না। বেডরুমে কোনো সোফা টোফা নেই তাই চুপচাপ পাশের দিকটায় শুয়ে পড়ো। সকালবেলা আবার অফিসে যেতে হবে।’

পূর্নিমাকে কোনো প্রতিত্তোর করতে না দিয়ে নিবিড় শুয়ে পড়লো। পূর্নিমাও আর কিচ্ছু বললো না সেও নিবিড়ের উল্টো দিক ফিরে শুয়ে রইলো। এভাবেই রাত্রি পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো। জানলা ভেদ ককরে সূর্যেন কিরন চোখেমুখে পড়তেই পূর্নিমান ঘুম ভেঙে যায়! দেয়ালে থাকা ঘড়ির কা’টা জানান দিচ্ছে সকাল সাতটা বেজে গেছে! তড়িঘড়ি করে ওঠতে যাবে ঠিক তখুনি পূর্নিমার চুল নিবিড়ের শার্টের বোতামে গিয়ে ঠেকলো। মা’থায় হালকা ব্যাথা পেতেই পূর্নিমা নিবিড়ের কাছে ঝুঁকলো! পূর্নিমা বুঝে ওঠতে পারছে না সে নিবিড়ের এতো কাছে কখন গেলো যে চুল গিয়ে নিবিগের শার্টের বোতামে ঠেকলো? পূর্নিমা চুল ঠিক করছিলো ঠিক তখুনি চোখ খুলে যায় নিবিড়ের! পূর্নিমাকে এতো কাছে দেখে সে-ও নিজের দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো পূর্নিমাকে! পূর্নিমা চুল ঠিক করছিলো তখুনি নিবিড়ের এব কান্ডে হতভম্ব!

-‘ আরে এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো? ছেড়ে দিন?’

-‘ তুমি আমার এতো কাছে এসেছো আর আমি একটু জড়িয়ে ধরলেই দোষ? অন্য মেয়েকে তো ধরিনি বলো? তুমি তো আমার নিজেন বিয়ে করা বউই তো। বললেই পারতে তোমার আমার কাছে আসতে ইচ্ছে করছে তাহলে আমি আর ঘুমাতামই না। কিন্তু এভাবে চুপিচুপি আসার কি মানে বলোতো?

লজ্জায় পূর্নিমার মা’থা কা’টা যাচ্ছে একেবারে! কিছু না করেই কিসব কথা বার্তা শুনতে হচ্ছে!

-‘ মোটেও ওসবের জন্য না। আপনার শার্টের বোতামে আমার চুল আটকে গেছিলো। আপনি কি এসবই ভাবেন? আপনি অফিসে থাকতে কেমন গম্ভীর থাকতেন দেখতাম অথচ এখন এই এতো কথা কীভাবে বলেন?’

-‘ অফিসে থাকতে তো আর তুমি আমার বউ ছিলে না? আর তুমি আমার দূরে থাকলে শার্টের বোতামে চুল আটকে কি করে বলো?’

-‘ আপনার সঙ্গে কথা বলাই দুষ্কর! আপনিই থাকুন তো আমি ওঠছি এতো বেলা অব্দি ঘুমালে মানুষ কি বলবে?’

-‘ মানুষ কি তোমার মতন না-কি মা’থা’মো’টা? আমাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে তাই একটু আধটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ওসব ব্যাপার নাহ্ বুঝলে?’

-‘ আপনি যে আস্ত একটা নির্লজ্জ সেটা এই দু’দিনেই বুঝে গেছি!’

পূর্নিমা আর দেরি না করে ওঠে চলে গেলো। নিবিড় হাসছে পূর্নিমান কথা বার্তা শুনে। এই একটি মেয়ের জন্যই তো এতোকিছু।

ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসতেই ফোনটা বেজে ওঠলো আবার! পূর্বের ন্যায় আবাো স্ক্রিনে তানভীরের নামটি ভেসে ওঠছে, এবার কি বলবে আমি? আমার বিয়ের কথা শুনলে তানভীর যে স্বাভাবিক থাকবে না এটা আমি বেশ ভালো করেই জানি।

-‘ কার ফোন? তোমার বয়ফ্রেন্ড তানভীর ফোন করেছে বুঝি?’

পূর্নিমার তানভীরের চিন্তার মধ্যে নিবিড়ের এরকম প্রশ্নে এবার বেশ ভ’য় হলো! শতো হলেও নিবিড় তার স্বামী এখন কি করবে পূর্নিমা? ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছে না!

#চলবে?