প্রণয়লীলা পর্ব-০৫

0
280

#প্রণয়লীলা–[৫]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

___________________________

-‘ আরো ভালো করে যদি জানতে চাও তাহলে বলবো এই মানুষটা আমার স্বামী হয় বুঝলে? সেদিন বাবার অপারেশনের টাকা দিয়েছিলে বলে বাবা এখনো অব্দি একটু ভালো আছে। সেজন্যই তোমার কথা পাত্তা দিতাম না বেশি কিন্তু এখন দেখছি তুমি মা’থায় ওঠে গেছো! এসব বাদ দাও। তুমি যে টাকা দিয়েছিলে সে টাকা অতি শ্রীঘই ফেরত পেয়ে যাবে আর আমাকে কোনো রূপ বাজে কথার সাহসও দেখাবে না দিত্বীয়বার!’

-‘ শুনেছেন তো তানভীর? এবার ঝা’মেলা না করে বিদায় হোন তো। আর যেনো পূর্নিমার আশেপাশে ও না দেখি। আর যে আমাকে বলতেন পূর্নিমা আপনার গার্লফ্রেন্ড এবার তো জবাবা দিয়ে দিয়েছে তাই না? তাহলে দিত্বীয় বার আর পূর্নিমার সামনে আসার চেষ্টা তো দূর মা’থায় যেনো এরকম কোনো চিন্তা ভাবনাও না আসে। কোথায় একটু ঘুরবো তা না আপনার মতন পা’গ’ল মাঝখান থেকে এসে কি করলেন!’

নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা না করেই পূর্নিমা হেঁটে চলে গেলো ওখান থেকে। নিবিড়ও পূর্নিমার পিছু পিছু হেঁটে যাচ্ছে। পূর্নিমাকে ডাকা সত্বেও পূর্নিমা নিবিড়ের ডাক শুনছে না।

-‘ শুনবে তো আমার কথা? এভাবে চলে যাচ্ছো যে?’

-‘ দেখুন আমার এখন ভালো লাগছে না কোনোকিছু সুতরাং এখন বিরক্ত করবেন না তো আমাকে।’

নিবিড় কিছু বলতে চেয়েও বললো না। আসলেই পূর্নিমা এখন বেশ রে’গে আছে। নিবিড় চুপচাপ ভাবে হেঁটে গেছে সারা রাস্তা কোনো কথা না বলে। পূর্নিমা বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে রান্না বান্না টুকটাক কাজ করেছে। ততক্ষণ নিবিড় তূর্য মানে পূর্নিমার ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে আর বাকি সময় ফোনেই মনোনিবেশ করেছে। নিবিড় অপেক্ষা করছে কখন পূর্নিমা আসবে। বাড়িতে আসার পর থেকে নিবিড় পূর্নিমার সঙ্গে কথা বলেনি। এখন তো অপেক্ষা করছে পূর্নিমার জন্য।

-‘ খেতে আসুন।’

-‘ যাবো না।’

-‘ পা’গ’লামি করছেন কেনো? কি হয়েছে হুট করে?’

-‘ সে তো তুমি করছো! তুমি এরকম টা করছো কেনো পূর্নিমা? আমি কি করেছি? আমি তো কিছুই করিনি অযথা আমার উপর রা’গ দেখাচ্ছো!’

-‘ অযথা নয়! আজকে তানভীর এই কথাগুলো বলেছে কালকে যে অন্য কেউ বলবে না এটার কি মানে বলুন?’

-‘ দেখো পূর্নিমা তানভীর অফিসে এসে নিজে আমাকে বলেছে যে তোমার সঙ্গে ওর নাকি সম্পর্ক আছে আর আমিও তাই ভেবেছি যে ও সত্যিই বলছে! তাই তো তোমাকে ওসব বলি কারন আমি যদি সোজাসুজি তোমাকে বিয়ের কথা বলতাম তুমি না করে দিতে কারন তখনকার ভাবনা অনুযায়ী আমার মনে হয়েছিলো তুমি তানভীরকে ভালোবাসো তাই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না সেজন্যই আমি তোমাকে ফেক পিকচার দিয়ে বিয়েতে বাধ্য করি। তারপর তুমি যখন কোনো রেন্সপন্স করোনি তাই বাধ্য হয়ে আমি তোমার বাড়িতে চলে যাই কারন আমি জানতাম তুমি চুপচাপ থাকবে না নিশ্চয়ই কিছু এটা করবে! এটা একটা ভূল বুঝাবুঝি পূর্নিমা তানভীর যদি আমাকে ওসব না বলতো আমি কখনোই তোমাকে এভাবে বলতাম না।’

-‘ তার মানে আপনি এরকম ভেবেছেন আমার সম্পর্কে! তাহলে বিয়ে কেনো করলেন? থাকতেন আপনার ভূল ধারনা নিয়ে আমি কি বলেছি কোনো কিছু? না আপনার ভূল ধারনা ভাঙাতে গেছি কেনো বিয়ে করলেন আমাকে হ্যাঁ?’

-‘ বলেছিতো উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে একদিন না একদিন আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে। আর সে উত্তর যদি খুঁজে পাবে যেদিন তোমার মনে আমি আমার জন্য জায়গা তৈরী করে নিতে পারবো! আপাততো এসব বাদ দাও।’

নিবিড়ের কথার কোনো প্রতিত্তোর করলো না পূর্নিমা! চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে। নিবিড়কে পূর্নিমার বাবা খেতে যাবার জন্য ডাকতেই নিবিড় সেটা উপেক্ষা করতে না পেরে একটু পরিমানে খেয়ে রুমে চলে আসে। পূর্নিমা আগ থেকেই বিছানা করে শুয়ে আছে। নিবিড় ফোনে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিলো তারপর দেখলো পূর্নিমার চোখ বন্ধ মানে ঘুমিয়ে গেছে! পূর্নিমার রুমের বারান্দায় গেলো নিবিড় সেখানে গিয়ে পকোট থেকে সি ‘গা ‘রেট বের করে তাতে আ’গু’ন ধরালো! ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারের ভেতর নিবিড়ের সি’গা’রে’টের লাল আ’গু’ন জ্বলে ওঠছে! নাক মুখ দিযে সি’গা’রেটের কালো ধোয়া ওঠছে। সঙ্গে নিবিড়ের অব্যক্ত কষ্টগুলোও ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে!

অফিসে চুপচাপ গম্ভীর থাকতো নিবিড়। প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে সেরকম করে কোনো রূপ কথা বলতো না কখনো। তারপর পূর্নিমা যখন অফিসে আসে তখন পূর্নিমার হাসি খুশি স্বভাব নিবিড়কে দিনের পর দিন আকৃষ্ট করে এভাবেই পূর্নিমার প্রতি তার একটু একটু করে প্রণয়ের রূপ নেয় কিন্তু সেটা অপ্রকাশিতো। নিবিড় কখনোই সেটা পূর্নিমাকে প্রকাশ করেনি কারন এর আগেই তানভীর নিবিড়কে বলেছে পূর্নিমার সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। নিবিড় ভেবেওছিলো সে পূর্নিমাকে ভূলে যাবে কিন্তু পারেনি তানভীর পূর্নিমার সম্পর্কে তাদের ভালবাসার কথা তো বলেছে কিন্তু নিবিড় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তানভীরের আরো অন্য মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে! এরকম একটা লোকের কাছে পূর্নিমাকে কখনো থাকতে দিতে যাবে না সেটা ভেভেই পূর্নিমাকে ওরকম ভাবে বলে নিবিড়। কারন তখন নিবিড় জানতো না যে তানভীর সবটা মিথ্যা বলছিলো তাই নিবিড় বাধ্য হয়েই ওরকম প্রস্তাব দিয়েছিলো! এখন যখন জানে তখন কিছু করার নেই। সবকিছু ভেবে আফসোস হচ্ছে যদি তখন পূর্নিমার সম্পর্কে সবটা জানতো তাহলে পূর্নিমার কাছে ঘৃ’নার দৃষ্টিতে পরিনত হতে হতো না নিবিড়কে কখনো। এসব কথা ভাবছে আর সি’গা’রে’টের কালো ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে হঠাৎ করেই নিবিড়ের ঠোঁট থেকে সি’গা’রেটটি কেউ ফেলে দিলো! পেছন ফিরে তাকাতেই পূর্নিমাকে দেখতে পায় নিবিড়।

-‘ তুমি না ঘুমিয়েছিলে? তাহলে এখন কি করছো এখানে?’

-‘ আমি কি করবো আর? ঘুম আসছিলো না আর ঘুমেরই বা কি দোষ? পাশের জন্য যদি না ঘুমায় তাহলে আমি ঘুমাবো কি করে?’

-‘ কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ো যাও রাত অনেক হয়েছে।’

-‘ হু সেটা কি আপনার জন্য থমকে আছে নাকি হ্যাঁ? আপনি এসব সি’গা’রে’টে খাচ্ছেন কেনো? ক্ষিদে পেয়েছে আমাকে বললেই হতো আমি খাবার এনে দিতাম খামোখা এসবের কি মানে হ্যাঁ? এই সি’গা’রে’টে আমি সহ্য করতে পারি না।’

নিবিড় পূর্নিমার কথা শুনে স্মিত আসলো! এক পলক তাকিয়ে থেকে বললো,

-‘ তোমার তো আমাকেই সহ্য হয়না তাহলে আমার কর্মকান্ড কি করে সহ্য হবে?’

-‘ শতো হলেও আপনার সঙ্গেই থাকতে হবে আমাকে বুঝেছেন? তাই এসব দিত্বীয় বার করবেন না। আপাততো ঘুমাতে চলুন তো নইলে সি’গা’রে’টে দিন আমিও দেখি ট্রাই করে!’

-‘ বুঝেছি তোমার সঙ্গে কথায় পারা যাবে না। চলো।’

নিবিড় পূর্নিমার সঙ্গে বেডে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়ার কথা মনে হতেই স্মিত হাসলো। একটু একটু করে অনুভুতি তৈরী হচ্ছে তাহলে পূর্নিমার মনে নিবিড়ের জন্য! সেটা ভাবতেই নিবিড়ের মনে এক রাশ ভালো লাগা ছুঁয়ে গেলো।
——————

দু’দিন পূর্নিমা নিজের বাপের বাড়িতে থেকে আজকে পালা এসেছে নিবিড়দের বাড়িতে ফিরে আসার জন্য। বাড়িতে এসেই পূর্নিমা আবারো লিলিকে দেখতে পেলো! লিলিকে পূর্নিমার মোটেও ভালো লাগে না। বাপের বাড়ি থেকে এসে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখে নিবিড়ের সঙ্গে লেপ্টে বসে আছে সোফায় ওই লিলি। নিবিড়ের চোখ পড়লো পূর্নিমার উপর সে সঙ্গে সঙ্গে লিলির কাছ থেকে দূরে সরে ওঠে দাঁড়ালো। পূর্নিমা রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে আর লিলি তাকিয়ে আছে পূর্নিমার দিকে!

#চলবে?