প্রিয়া তুমি পর্ব-০৬

0
83

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়া রিতার আক’স্মিক আগমনে কথা থামিয়ে দিল। জেগে উঠা রাগটাকে সংবরন করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পিছন ফিরে এক পলক রাফসানের দিকে তাকাল। রাফসান তানিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। রাফসান তানিয়ার চোখে ঘৃ’না দেখতে পেল। ব’ড্ড অসহায় চোখে তাকাল রাফসান। তানিয়ার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেলল। মেয়েটার সাথে স’ত্যিই সেদিন একটু বেশি বেশি করে ফেলেছিল।

তানিয়া নিচে নেমে দেখল নিলুফা বেগম আর তামান্না এসেছে। তামান্নার কোলে ছোট্ট ফারিন। তানিয়াকে দেখা মাত্রই ফারিন তানিয়ার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিল। আধো আধো ক’ন্ঠে বলল,
“খালামনি কোলে।

তানিয়ার মুখে হাসি ফুটল। হাত বাড়িয়ে ফারিনকে কোলে নিল। তানিয়ার কোলে চড়ে ফারিনের সে-কি খুশি। তানিয়া ফারিনের গালে টুপ করে একটা চুমু খেলো। বাসা থেকে আসার পর মায়ের সাথে, বোনের সাথে এখনো কথা বলা হয়নি। তানিয়া নিলুফার দিকে তাকাতেই নিলুফা হেসে বলল,
“জামাই কোথায়?

তানিয়া “ডাকছি” বলে আবারো রুমের দিকে পা বাড়ালো। তানিয়া নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করল। বিছানায় রাফসানকে দেখে ফারিন তানিয়ার দিকে তাকাল। আবারো রাফসানের দিকে তাকিয়ে আঙুল তাক করে বলল,
“এটা কে?

রাফসানের চোখ দুটো মোবাইলের দিকে আ’বদ্ধ ছিল। হুট করে এমন প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে তাকাল। তানিয়ার কোলে ছোট্ট মেয়েটাকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। প্রশ্না’তক ক’ন্ঠে বলল,
“তোমার আপুর মেয়ে না?

তানিয়া মাথা উপর নিচ করল। যার অর্থ হ্যাঁ। ফারিন গোল গোল চোখে রাফসানের দিকে তাকিয়ে রইল। মানুষটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট মস্তি’ষ্কের মেয়েটা কিছুতেই মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। আচমকা মনে হতেই উৎ’ফুল্ল হয়ে বলল,
“আমি ওকে দেখেছি। মোবাইলে দেখেছি।

ফারিনের কথার ভ’ঙ্গি দেখে রাফসান হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল। ফারিনের গালে টেনে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“তাই? মোবাইলে দেখেছো? দেখি কোলে আসো তো।

ফারিন সাথে সাথে তানিয়ার গলাটা আরেকটু জোরে, শক্ত করে চেপে ধরল। ভয়া’র্ত দৃষ্টিতে তাকাল রাফসানের দিকে। যেন লোকটা তাকে নিয়ে চলে যাবে। ফারিন তানিয়ার গলায় মুখ লুকিয়ে বলল,
“আমি যাব না।

ফারিনের কর্মকান্ডে রাফসান আবারো হেসে ফেললো। মেয়েটা ভারী মিষ্টি। ফারিন তানিয়ার গলার কাছ থেকে মাথা উঁচিয়ে একটু রাফসানকে দেখল। রাফসানের সাথে চোখাচোখি হতেই আবারো তানিয়ার গলার কাছে মুখ নিয়ে লুকিয়ে পড়ল। রাফসান ফারিনের দিকে তাকিয়েই তানিয়াকে বলল,
“আমাদের এমন একটা মেয়ে হলে খুব ভালো হবে, না?

রাফসানের কথায় তানিয়া চোখ তুলে রাফসানের দিকে তাকাল। কথাটা বেশি এড়িয়ে যেতে বলল,
“আম্মু, আপু এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।

রাফসান হতা’শ হলো। মেয়েটাকে বলে লাভ নেই। কেমন কৌশলে কথাটা এড়িয়ে গেল। তানিয়া ফারিনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানিয়ার পিছু পিছু চলতে লাগল।
_____________

তানিয়া রান্নাঘরে রাতের জন্য রান্না করছে। সন্ধ্যার আগেই নিলুফা বেগম, তামান্না চলে গেছে। তবে যাওয়ার আগে বারবার রাফসানকে নিয়ে বাড়িতে যেতে বলেছে। রিমা রান্নাঘরে ঢুকে তানিয়াকে রান্না করতে দেখল। তানিয়ার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
“ইশ, কতো ক’ষ্ট। কোথায় এই বয়সে মজা করবে তা না হাত পুড়িয়ে রান্না করছো। তা বিয়ের আগে কোনো আকাম-কুকাম করেছিলে যে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিল।

তানিয়া রিমার কথায় আড়চোখে তাকাল। রিমার খোঁচা দেওয়া কথাটা হজম করে বলল,
“শুধু কি আকাম-কুকাম করলেই বিয়ে দেয়? আমি তো জানি ভালো মেয়ে পেলে সকলেই বিয়ের দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। যেমন এই পরিবারটা। আমি বিয়ে করবো না বলে কতো কি করলাম। কেউ শুনলো?

তানিয়ার কথায় রিমার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে গেল। তানিয়া যে এমন জবাব দিবে কল্পনাও করেনি। রিমা ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তানিয়া সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

ঠিক তখনই রুমে রিতার আগমন হলো। তানিয়ার মুখে হাসি দেখে প্রশ্ন করল,
“কি ব্যাপার ভাবী? আপুকে দেখলাম মুখ কালো করে বেরিয়ে যেতে এখন আবার তুমি হাসছো, কেন? কি হয়েছে?

তানিয়ার মুখ থেকে হাসিটা চলে গেল। রিতার কাছে রিমার কথাটা বলতে চাইল না। কথাটা গোপন করতে বলল,
“কই আমি তো আপুকে দেখিনি। আমাদের মাঝে কোনো কথাও হয়নি। আমি তো পুরনো কথা মনে করে একা একাই হাসছিলাম।

রিতা ঠোঁট উল্টে তানিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কি যেন ভেবে বলল,
“জানো কয়েক বছর আগে তানিয়া নামটাকে আমি বড্ড ঘৃ’ণা করতাম। কিন্তু তোমাকে দেখার পর তোমার সাথে কথা বলার পর আমার নামটা ঘৃ’ণা থেকে ভালোবাসার তালিকায় পৌঁছে গেছে।

তানিয়া রিতার কথায় ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। রিতার কথার মানেটা বুঝার জন্য প্রশ্ন করল,
“ঘৃ’ণা করতে? কিন্তু কেন? তানিয়া নামের কে তোমার সাথে কি করেছিল?

রিতার হাস্যে’জ্জল মুখটা মুহুর্তের মধ্যেই মলিনতায় ছেয়ে গেল। তানিয়ার দিকে তাকিয়েই বড্ড আফসোস নিয়ে বলল,
“এই তানিয়া নামের মেয়েটার জন্যেই তো আমি এই খানে থেকে পড়তে পারলাম না।

তানিয়ার হাতটা থেমে গেল। বি’স্মিত হয়ে চোখ বড়বড় করে রিতার দিকে তাকাল। অবাক কন্ঠে বলল,
“তুমি এখানে থেকে পড়বে বলেছিলে?

রিতা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বুঝালো। তানিয়া রিতার দিকে তাকিয়ে আচমকাই প্রশ্ন করল,
“আমি তোমায় কি করেছিলাম রিতা? ঠিক কোন ভুলের শা’স্তি দিতে তোমার ভাইয়াকে সেদিন ভার্সিটিতে পাঠিয়েছিলে?

তানিয়ার প্রশ্নে রিতা হত’ভম্ব হয়ে গেল। তানিয়ার কথার মানে কিছুতেই বুঝতে পারল না। অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“কি বলছো ভাবী? তুমি আমার কি ক্ষ’তি করবে? তোমার জন্য কেন আমি ভাইয়াকে ভার্সিটিতে পাঠাবো? তোমাদের বিয়ের আগে তো আমি তোমায় চিনতাম না।

তানিয়া রিতার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“তুমি আমার জন্য তোমার ভাইয়াকে পাঠাও নি?

রিতা ‘না’ বলল। তানিয়ার পুরো দুনিয়া যেন ঘুরতে লাগলো। এতোদিন পর, এতোদিন পর জানতে পারল রিতার এখানে থেকে পড়ার কথা ছিল। তারমানে রাফসান সেদিন রিতার কথাই বলেছিল। তবে রিতা যে বলছে রিতা তানিয়ার কথা বলেনি। কি কারণে সকলের সামনে তাকে অপ’দস্থ করল সেদিন? তানিয়া চোখ বন্ধ করল। না, হিসাব মিলছে না। কিছুতেই মিলছে না। সব গড়বড় করে ফেলছে। এতো সব প্রশ্নের উত্তর কেবল রাফসানই দিতে পারে।
___________

তানিয়া রাফসানের জন্য অপেক্ষা করছে। তবে আজ যেন অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাফসান আসছে না। সন্ধ্যার পর রাফসান বেরিয়ে ছিল। কিন্তু এখনো ফেরার নাম নেই। তানিয়া অপেক্ষা করতে করতে অ’ধৈর্য হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ধৈ’র্য্য ধরতে না পেরে আশ্চর্য এক কা’ন্ড করল।

তিন বছর আগে ব্লক লিস্টে ফেলা রাফসানের নাম্বারটা আনব্লক করে ফেলল। কিন্তু যেই মুহুর্তে কল দিতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেল বেজে উঠল। তানিয়া উঠে দাঁড়াল। তড়িগড়ি করে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে রাফসানকে দেখে যতটা খুশি হয়েছে তারচেয়ে বেশি অপ্র’স্তুত হয়েছে রনিতকে দেখে।

রাফসানের পাশেই রনিত দাঁড়িয়ে আছে। তবে রাফসানের মুখটা গ’ম্ভীর। প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই গ’ম্ভীর। তানিয়া রাফসানের মুখ ভ’ঙ্গি দেখে অবাক হলো। হুট করে এমন গম্ভী’রতার কারণ ধরতে পারল না। কিছু কি হয়েছে? মানুষটাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

তানিয়া রনিতের মুখের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা অবাক হলো। রনিতের সারা মুখে কেমন খুশির ঝলক। দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক অজানা কারণে তার মুখে হাসি ফুটেছে। কিন্তু কারণটা কি?

তানিয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে দুজনকে ভেতরে আসতে দিল। দুজনকে খাবার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রুমে যাওয়ার জন্য। রাফসানকে একা পাওয়ার জন্য। রনিতের সামনে সে কিছু বলতে চাইল না।

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। রাফসান তার রুমে গেল। তানিয়া হাতের কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব রুমে গেল। রাফসানকে যেই না কিছু বলতে যাবে তখনই থমকে গেল তানিয়া। রাফসান কঠোর গলায় বলে উঠল,
“তোমার যদি আমায় ভালো না লাগে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো। আমি তোমায় বাধা দিব না।

#চলবে