প্রিয়া তুমি পর্ব-০৭

0
95

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ৭
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়া বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হয়ে গেল। হুট করে রাফসানের এমন পরিবর্তনের কারণ ধরতে পারল না। বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। রাফসান রইল দৃঢ়, শীতল। তানিয়ার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রু’ক্ষেপ না করে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। তানিয়া অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওয়াশরুমের দিকে।

তানিয়া থপ করে বিছানায় বসে পড়ল। কি এমন হলো উনার? হঠাৎ করে এমন পরিবর্তনের কারণ কি? তানিয়া আকাশ পাতাল খুঁজে ও রাফসানের এমন পরিবর্তনের কারণ ধরতে পারল না। ব্য’র্থ সৈনিকের মতো হেরে গেল। রাফসান কি কারণে এমন করছে জানার জন্য বুকের ভেতর ছটফট শুরু করল।

রাফসান ওয়াশরুম থেকে বেরোলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই তানিয়া রাফসানের দিকে তাকাল। চোখাচোখি হতেই রাফসান চোখ ফিরিয়ে নিল। তানিয়া অবাক হলো। যে মানুষটা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো তার এমন পরিবর্তন মানতে ক্ষানি’কটা ক’ষ্ট হলো।

তবু নিজেকে ধা’তস্থ করল। রাফসানের দিকে পূর্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রশ্না’তক ক’ন্ঠে বলল,
“আপনি এমন করছেন কেন? কি হয়েছে আপনার? আমি কি করেছি?

তানিয়ার প্রশ্নে রাফসান তানিয়ার দিকে তাকাল। কৌতুক করে বলল,
“কি করছি আমি? তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে তো যাইনি। আমাকে ছেড়ে যেতে বলছি। এটাই তো চেয়েছিলে তুমি, তাই না?

তানিয়া আরেক দফা অবাক হলো। মানুষটা এভাবে কথা বলছে। এতোটা কঠোর ভাবে? কেন বলছে এমন কথা? তানিয়া রাফসানের দিকে তাকিয়ে আবারো বলল,
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?

তানিয়ার প্রশ্নে রাফসান যেন ক্রু’দ্ধ হলো। বুকের মধ্যে জ্ব’লতে থাকা আ’গুনটা তড়তড় করে বেড়ে গেল। অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকাল তানিয়ার দিকে। যেন চোখ দিয়েই ভ’স্ম করে দিবে। তানিয়া চমকে উঠল। রাফসানের চোখের দৃষ্টি দেখে হৃৎ’পিণ্ডটা তড়িৎ গতিতে লাফাতে লাগলো। রাফসান ধ’মকে উঠে বসল,
“কীভাবে কথা বলবো? তোমার সাথে আমার কীভাবে কথা বলা উচিত? প্রেম প্রেম কথা বলবো? তখন তো স’হ্য হবে না। আমাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেহায়া প্রানী বলে মনে হবে। স’হ্য করতে পারবে না। এভাবে কথা বলতে পারবো না, ওভাবে কথা বলতে পারবো না তাহলে করবো টা কি? আমাকে নিয়ে এতোই যখন সমস্যা তাহলে আমার সাথে আর কথাই বলো না।

তানিয়া রাফসানের ব্যবহারে ভড়কে গেল। বুকের ভেতর ভীষণ য’ন্ত্রণা অনুভব করল। দুচোখে অশ্রুকণা এসে ভীড় জমালো। টলমল চাহনিতে রাফসানের দিকে তাকাল। কিন্তু রাফসান দেখেও দেখল না। তানিয়া চাহনি উপেক্ষা করে তানিয়ার দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ল।

তানিয়ার চোখ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। ইচ্ছে করল চিৎকার দিয়ে কান্না করতে। কিন্তু পারল না। চিৎকার দিয়ে কাঁদার ইচ্ছেটাকে দমন করে রাফসানের পাশে শুয়ে পড়ল। হাত দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে ফেলল।
_______________

তানিয়া সকাল বেলায় নিজেকে শূ’ন্য বিছানাতে আবিষ্কার করল। চোখ ঘুরিয়ে রাফসানকে দেখতে পেল না। গত রাতের কথা মনে পড়তেই তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে সর্বপ্রথম রান্নাঘরে গেল। শাশুড়ির জন্য আগে চুলায় চা বসিয়ে দিল। এরপর সকালের নাস্তার আয়োজন করতে লাগলো।

তানিয়া রান্নাঘরে আসার মিনিট পাঁচেক পরই সালমা বেগম রান্নাঘরে এলেন। তানিয়াকে সকালের নাস্তা করতে দেখে খুশি হলেন। তবে সেটা মুখে প্রকাশ করলেন না। মুখটাকে গম্ভীর করে রাখল। তানিয়া সবটা নি’শ্চুপে দেখল।

আমেনা বেগম ক্ষানিক’ক্ষন পর রান্নাঘরে এসেই তানিয়াকে বলল,
“তানিয়া একটু রাফসানকে ডেকে আনো তো। রাফসানের সাথে আমার কথা আছে।

তানিয়া নিজের কাজ করতে করতেই বলল,
“উনি রুমে নেই আম্মু।

আমেনা বেগম অবাক হলেন। ছেলেটা এতো সকাল বেলা কোথায় গেলো? প্রশ্না’তক ক’ন্ঠে বলল,
“রুমে নেই মানে? কোথায় গেছে এতো সকালে?

তানিয়া মুখটা মলিন করে উত্তর দিল,
“আমি জানিনা আম্মু।

তানিয়া কথাটা বলার সাথে সাথে সালমা বেগম মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলেন,
“তা জানবে কি করে? ছেলেটার দিকে খেয়াল থাকলে তো জানবে। বউ যে হয়েছে বউয়ের কোন দায়িত্বটা পালন করেছে ও।

তানিয়া চুপ রইল। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। আমেনা বেগম সালমা বেগমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলল,
“আহ। এসব বাদ দে তো। ছেলেটা এতো সকাল বেলা কোথায় গেলো সেই চিন্তায় বাঁচি না। এখন আবার এসব শুরু করিস না তো।

সালমা বেগম আমেনা বেগমের কথায় দমে গেলেন। আমেনা বেগম তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“রাফসানকে একটা কল দাও তো। দেখি কোথায় আছে ছেলেটা।

তানিয়া হাত ধুয়ে নিল। মোবাইলটা নিয়ে প্রথম বারের মতো নিজ থেকে রাফসানের মোবাইলে কল দিল। কলটা রিং হতে হতে কেটে গেল। তানিয়া আশা’হত হয়ে শাশুড়ির দিকে তাকাল। আমেনা বেগম অধৈর্য হয়ে বললেন,
“দেখি আরেকবার কল দাও তো।

তানিয়া তাই করল। দ্বিতীয় বারের মতো রাফসানের নাম্বারে কল দিল। এবারো আগের বারের মতোই কলটা কেটে গেল। আমেনা বেগম অ’স্থির হয়ে পড়লেন। ছেলেটা কলটা কেন রিসিভ করছে না? এতো সকালে কোথায় গিয়েছে জানিয়ে যায়নি তার উপর আবার কল ও রিসিভ করছে না।

আমেনা বেগম এবার নিজের রুম থেকে মোবাইল আনলেন। তানিয়ার দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“দেখি আমার ফোনটা দিয়ে কল দাও তো। দেখো ধরে কি-না।

তানিয়া মাথা নাড়িয়ে শাশুড়ির হাত থেকে মোবাইল নিল। রাফসানের নাম্বারে আবারো কল দিল। তবে এবার আশ্চর্য’জনক ভাবে কলটা রিসিভ হয়ে গেল। তানিয়া শাশুড়ির দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিলে আমেনা বেগম মোবাইলটা কানে দিয়ে বলে উঠলেন,
“রাফসান কোথায় তুই? এতো সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিস?

রাফসান মায়ের প্রশ্নের উত্তরে বলল,
“আমি একটু কাজে আসছি আম্মু। তুমি চিন্তা করো না। আমি ঠিক মতো বাসায় চলে আসবো।

“কল রিসিভ করে বললে তো হয়। তানিয়া কখন থেকে কল করে যাচ্ছে। কলটা রিসিভ করছিস না কেন? কল রিসিভ না করলে চিন্তা বাড়ে না?

রাফসান কি বললে ভেবে পেল না। কলটা যে ইচ্ছে করেনি ধরেনি সেটা কি আম্মুকে বলা যাবে? রাফসান কথা এড়িয়ে যেতে বলল,
“আম্মু আমি একটু কাজে আছি। পরে কথা বলবো।

রাফসান কলটা কেটে দিল। আমেনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সালমা বেগম এবার তানিয়াকে খোঁচা মেরে বলে উঠল,
“ছেলেটাকে একটু দেখে শুনে রাখতে পারো না। রাফসান যেভাবে কথা এড়িয়ে গেল শুনে তো মনে হলো তোমার কলটা ইচ্ছে করেই ধরেনি। বলি ছেলেটাকে একটু শান্তি দিও। এতোদিন পর দেশে ফিরে দুদিনেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

তানিয়া সবগুলো কথা শুনলো। কোনো প্রতিবাদ করল না। নিজ মনে প্রশ্ন করল,
“উনি কি সত্যিই আমার জন্য সকাল সকাল বেরিয়ে গেল? ইচ্ছে করেই আমার কলটা রিসিভ করল না?
_____________

তানিয়ার গোটা দিন কাটল রাফসানের অপেক্ষায়। প্রথম প্রথম চিন্তা না হলেও যখন দেখল রাফসান বাসায় ফিরছে না তখন আমেনা বেগমের সাথে তারও চিন্তা হতে লাগলো। সেই সাথে সারাদিনে কয়েকবার সালমা বেগমের কটা’ক্ষ কথা স’হ্য করে গেছে। সালমা বেগম বারবার রাফসানের বাসায় না ফেরার কারণে তানিয়াকে দো’ষী করে যাচ্ছে।

আমেনা বেগম প্রথমে সালমা বেগমকে দমিয়ে দিলেও যখন দেখল ছেলেটা ঘরে ফিরছে না এমনকি কলটা ও রিসিভ করছে না তখন চুপ হয়ে গেলেন। সালমা বেগমকে দমানোর চেষ্টা করলেন না। এদিকে আমেনা বেগমের প্র’শ্রয় পেয়ে সালমা বেগম ইচ্ছা মতো তানিয়াকে কথা শুনাতে লাগলো।

তানিয়া নিজেও বুঝে গেল চাচী শাশুড়ির সাথে সাথে শাশুড়িও তাকেই দো’ষী ভাবছে। তবে মুখ ফুটে কিছু বলছে না। তানিয়াকে এড়িয়ে চলছে। গ’ম্ভীর মুখ করে বসে আছে।

রাত যখন বাড়তে লাগলো তানিয়া আমেনা বেগমকে বলল,
“আম্মু আপনি চলে যান। আপনার ছেলে এলে আমি দরজা খুলে দিব।

সারাদিন ছেলেটার জন্য চিন্তা করে, ছেলেটা কল রিসিভ না করায় অ’স্থির হয়ে শেষমেষ আমেনা বেগম সালমা বেগমের কথাটাই মেনে নিলেন। তানিয়ার জন্য রাফসান বেরিয়ে গেছে মেনে নিয়ে তানিয়ার প্রতি ক্রু’দ্ধ হলেন। এখন তানিয়ার কথায় রাগী স্বরে বলে উঠলেন,
“কেন? আমি কেন চলে যাবো? আমার সামনে আমার ছেলেকে অপমান করতে পারবে না বলে চলে যেতে বলছো? আমি থাকলে তোমার খুব অসুবিধা হয়ে যাবে তাই না?

#চলবে