প্রিয় শ্রাবণী পর্ব-১+২

0
850

প্রিয় শ্রাবণী পর্ব-১+২
ইসরাত জাহান তানজিলা
_____________________
কাল শ্রাবণীর বিয়ে। একদম সাদামাটা ভাবে বিয়ে। এ বাসার সবচে অপ্রিয়, অনাদৃত প্রাণীটি হলো শ্রাবণী। শ্রাবণীর বয়স যখন সাড়ে তিন বছর তখন শ্রাবণীর মা শ্রাবণীর বাবাকে ফেলে অন্য আরেক জনের হাত ধরে চলে যায়। শ্রাবণীর দুর্দশার শুরু তখন থেকেই। শ্রাবণীর মা চলে যাওয়ার ছয় মাসের মাথায়ই শ্রাবণীর বাবা সেলিম হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেলিম হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম পারভীন বেগম। পারভীন বেগমের গলায় বিষাক্ত কাঁটার ন্যায় বিঁধে আছে শ্রাবণী। অন্যদিকে সেলিম হোসেনও পুরোপুরি উদাসীন শ্রাবণীর ব্যাপারে।

দেখতে অসম্ভব সুন্দরী শ্রাবণী। ভীষণ ফর্সা, গোলগাল স্নিগ্ধ মুখ তার। মাথা ভরতি কোঁকড়ানো লম্বা চুল।‌ সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় শ্রাবণীর রূপের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেনি। শ্রাবণীর বয়স ষোলো ছুঁয়েছে। এসএসসি দিয়েছে এবার। মানুষের নিজের অসুন্দর চেহারা নিয়ে দুঃখ থাকে। কিন্তু শ্রাবণীর দুঃখ তার সুন্দর চেহারা নিয়ে। মাঝে মাঝে নিজের চেহারাটাকে এসিড মেরে পুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে শ্রাবণীর। এই সুন্দর চেহারাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রাবণীর জন্য। এলাকার বখাটে গুলোর নজর সবার আগে শ্রাবণীর দিকে। স্কুলের দুই-চারটা বিবাহিত শিক্ষকেরও কু নজর ছিলো শ্রাবণীর দিকে। বাসে, অটোতে বয়স্ক লোক গুলোও চোখ দিয়ে গিলে খায় শ্রাবণীকে। সুযোগ হলে কেউ কেউ গায়ে নোংরা স্পর্শও করে। দেখতে সুন্দরী হওয়ার দরুন ক্লাস সিক্স-সেভেন থেকেই শ্রাবণীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করেছে। শ্রাবণীর বয়সটা সংখ্যায় ষোলো হলেও সৎ মায়ের সংসারে অভাব অনটনে বেড়ে ওঠার বিচিত্র অভিজ্ঞতা শ্রাবণীর বয়সটা দ্বিগুণ করে তুলেছে।

সেলিম হোসেনের সাথে শ্রাবণীকে নিয়ে রোজ রোজই ঝগড়া হয় পারভীন বেগমের। ঝগড়াঝাঁটি এ বাসায় রোজকার নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারভীন বেগম বলেছে শ্রাবণীর পেছনে আর এক পয়সাও খরচা করতে পারবেন না। শ্রাবণীর জন্য দিন দিন সংসারে অভাব বাড়ছে। তাঁর ছেলে-মেয়ে গুলো ভালো ভাবে খেতে, পরতে পারছে না। কেন সেলিম হোসেন এখনো বিদায় করছে না শ্রাবণীকে এই সংসার থেকে? শ্রাবণী এই সংসারে উটকো যন্ত্রণা। বয়স তো কম হয়নি শ্রাবণীর। এসএসসি দিয়েছে। মেয়ে মানুষ এরচে বেশি লেখাপড়া করে কি হবে? এখনো কেন বিয়ে দিচ্ছে না শ্রাবণীকে? কলেজে ভর্তি করানোর টাকা কোথায় পাবে? এবার যদি শ্রাবণীকে বিয়ে না দিয়ে কলেজে ভর্তি করায় তাহলে পারভীন বেগম এ সংসার ছেড়ে চলে যাবেন। নিত্য নিত্য পারভীন বেগমের এমন হুমকি চলাকালীন সময়েই হঠাৎ শ্রাবণীর জন্য একটা ভালো প্রস্তাব পেয়ে গেল সেলিম হোসেন। তাই ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। সংসারে শ্রাবণীকে নিয়ে তৈরি হওয়া এই অশান্তি থেকে রেহাই চান তিনি। তাছাড়া সুন্দরী মেয়ে ঘরে রাখা বিপদের। এ বয়সে মেয়েদের চোখ ঘোলা হয়ে যায়। সবকিছু রঙিন, চকচকে দেখে। মেয়ে যদি কোনো বখাটের পাল্লায় পড়ে রাতের আঁধারে মায়ের মত পালিয়ে যায়? তখন মানসম্মান যাবে। মেয়ে দেখতে তো হুবহু মায়ের মত হয়েছে। চরিত্রটাও যদি সেরকম হয়? সুন্দরী মেয়ে নিয়ে অত শঙ্কার ভিতরে সেলিম হোসেন থাকতে চায় না। তাছাড়া শ্রাবণীকে কলেজে ভর্তি করানোর ইচ্ছে তারও নেই। বিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যায়। সেলিম হোসেনের আরো দুইটা সন্তান আছে। শ্রাবণীর সৎ ভাই-বোন। নীলা আর তুহিন। পারভীন বেগম আর সেলিম হোসেন তাদের লেখাপড়া আর ভবিষ্যতের চিন্তায় উদ্বিগ্ন। সেলিম হোসেনের ইনকাম অতি সামান্য। সে ইনকাম দিয়ে সংসার চালানো, তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া মুশকিলের। পারভীন বেগমের ধারণা শ্রাবণীকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পারলেই সংসারের সকল ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট, অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। মেয়ে সুন্দরী হওয়ার দরুন পাত্রপক্ষকে কোনো রকম যৌতুক দিতে হবে না। যৌতুক না দিতে হলেও মেয়ের বিয়েতে আরো কত খরচ আছে। বরপক্ষকে খাওয়ার জন্য বিশাল আয়োজন করতে হবে। কত ভালো ঘরে বিয়ে হবে মেয়ের।

যে লোকটার সাথে শ্রাবণীর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে লোকটার বয়স চৌত্রিশ। নাম পাবেল আহমেদ। লোকটার সাথে শ্রাবণীর বয়সের ব্যবধান আঠারো। পাবেল আহমেদ লেখাপড়া শেষ করেছেন অনেক আছে। চাকরিবাকরি কিছুই করছেন না, বেকার। তবে পুরোপুরি বেকার বলা যাচ্ছে না। রাজনীতি করে নাকি। বড় বড় নেতাদের সাথে ঘোরাফেরা করেন। তবে পাবেল আহমেদের বাবার বিশাল ব্যবসা আছে। আর পাবেল আহমেদ বাবার একমাত্র সন্তান। ভবিষ্যতে এই বিশাল ব্যবসা‌ কিংবা বাপের সমস্ত সম্পত্তির মালিক পাবেল আহমেদই। পাবেল আহমেদের মানেই হলো শ্রাবণীর, এই হিসেবেই বেকার ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দিতে কোনো রকম আপত্তি করছেন না সেলিম হোসেন। সেলিম হোসেন শুনেছেন ছেলের একটু বাজে স্বভাব আছে। মদ, গাঁজা, সিগারেট খায় নাকি। সে নিয়েও তেমন কোনো আপত্তি নেই সেলিম হোসেনের। আজকালকার ছেলে একটু এমন হবেই। বিয়ের পর শ্রাবণী সব ছাড়িয়ে একদম সাংসারিক করে ফেলবে। আশেপাশের লোকজন বলছে ছেলের বয়সটা একটু বেশি। ছেলে আগে বিয়েসাদি করেনি তো? সেলিম হোসেন সেসব কথাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। চৌত্রিশ বছর বয়স। কত আর বেশি? ছেলের বাবাকে বয়স নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন,
–‘ছেলে লেখাপড়া করেছে, রাজনীতি করছে এসবে বয়স কেটে গেছে। তাছাড়া আজকালকার ছেলেরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিজের স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায় না।’
____________
অনেকক্ষণ ধরে নিঃশব্দে কাঁদছে শ্রাবণী। ফর্সা গাল দুটো লালচে হয়ে গেছে। চোখ গুলোও ফুলে গেছে। মাথার দুই পাশের রগ গুলো দপদপ করছে। দুই দিন ধরে কিছু খাচ্ছে না। সেদিকে কারো খেয়াল নেই। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে ক্রমশ। এ বাসার কারো মুখের উপর কিছু বলার সাহস শ্রাবণীর নেই। সবার সব সিদ্ধান্ত মুখ বুজে মেনে নিয়েছে সারাজীবন। শ্রাবণীর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীটা বড্ড বিষাদময় লাগছে। এ বাসা ছেড়ে পালিয়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায় যাবে? নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে। একাকীত্ব, অসহায়ত্ব গ্রাস করে ফেলছে শ্রাবণী। নিজের যন্ত্রণার, একাকীত্বের গল্প গুলো বলার মত কেউ নেই। নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা, অভিমান, অভিযোগ কখনো মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারেনি। আজও পারছে না। সেলিম হোসেনের মুখের উপর বলতে পারছে না, বাবা এ বিয়েটা ভেঙে দেও। আমি কলেজে ভর্তি হবো। লেখাপড়া করবো। শ্রাবণীর এই কথা গুলো শোনার মত কেউ নেই। হাত ধরে একটু প্রবোধ দেওয়ার মতও কেউ নেই। শ্রাবণী হঠাৎ গলা ছেড়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠল। শ্রাবণীর চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে পারভীন বেগম ছুটে আসেন। কাল বিয়ে। বাসায় ঢের কাজ। সবকিছু গোছগাছ করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পারভীন বেগম। পারভীন বেগমকে দেখে শ্রাবণী কান্না থামানোর চেষ্টা করে। এরকম পাষণ্ড মানুষকে কান্না দেখিয়ে লাভ নেই। এরা কখনো শ্রাবণীর কান্নার গুরুত্ব দেয়নি। শ্রাবণী কান্না চাপিয়ে থমথমে মুখে বসে রইল। দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে নিবদ্ধ। পারভীন বেগম শ্রাবণীর দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
–‘কি হয়েছে তোর? অযথা চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন? মরছে কেউ? সকাল থেকে ফোঁস ফোঁস করে কাঁদতেছিস। দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ের বিয়ে হয় না নাকি? তোকে ঘরে রেখে খুঁটি দিবো? এসব ন্যাকামি বাদ দিয়ে কাজ কর। একদম হাত-পা তুলে সকাল থেকে বসে আছিস। মা তো অন্য লোকের হাত ধরে ভাগাইছে। আপদ আমার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে গেছে।’
শ্রাবণী নীরব হয়ে রইল। কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। পারভীন বেগম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুম থেকে চলে গেলেন। শ্রাবণীর চোখ থেকে নিভৃতে আবার জল গড়াচ্ছে। বুকের ভিতর উথালপাথাল কষ্ট ঢেউ খেলছে! সমস্ত দুঃখ নিজের মনেই চাপিয়ে রাখলো।

কাল বিয়ে। অথচ বাড়িতে কোনো শোরগোল নেই। আত্মীয় স্বজনের হৈহুল্লোড়, হৈচৈ নেই। কেবল ছোট একটা সাউন্ড বক্সে পুরানো হিন্দি গান গুলো বাজছে একের পর এক। শ্রাবণীর ছোট ভাই তুহিন পাশের বাসার নীতুলের কাছ থেকে চেয়ে এনেছে বক্সটি। পুরানো সাউন্ড বক্স। শব্দ এবাসা থেকে ওবাসা অবধিও পৌঁছায় না। তবুও তুহিন সকাল থেকে সেটাই বাজাচ্ছে মহা উৎসাহে। দুপুর গড়ালেও তার উৎসাহে এখনো ভাটা পড়েনি। আত্মীয় স্বজন এখনো কেউ আসেনি। সেলিম হোসেন সবাইকে বিয়ের দিন সকালে আসতে বলেছে। আর আত্মীয় স্বজন বলতেও তেমন কেউই না। শ্রাবণীর তিন ফুফু আর দুই চাচা। এর বাইরে সেলিম হোসেনের পরিচিতি দুই চার জন লোক ছাড়া আর কাউকেই বলা হয়নি। আত্মীয় স্বজন আগে আগে আসলে বাড়তি খাওয়া-দাওয়ার খরচ। তাছাড়া শ্রাবণীদের দুই রুমের বাসা। রুম গুলোও ছোট ছোট একদম। থাকার জায়গা নিয়েও সমস্যা।

সারারাত শ্রাবণীর ঘুম হলো না। রাত পোহালেই বিয়ে- এই ভাবনাটা শ্রাবণীকে ঘুমাতে দিলো না। সকাল হতেই ভীষণ মাথা ব্যথা শুরু হলো। শ্রাবণী মাথার উপর বালিশ চেপে শুয়ে রইল। রুমের বাইরে শ্রাবণীর বড় ফুফুর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। বড় ফুফু এসে গেছে বোধ হয়। শ্রাবণী বিছানা ছেড়ে ওঠল না। ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ পরই শ্রাবণীর দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে দরজা খুলতেই শ্রাবণী দেখল অজ্ঞাত এক যুকব দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কাঁধে বড়সড় সাইজের একটা ব্যাগ। শ্রাবণী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল চমকে গিয়ে। চেনা চেনা লাগছে যুবককে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না। শ্রাবণী কিছু বলার আগেই যুবকটি বলে ওঠল,
–‘এত বড়ো হয়ে গেছিস শ্রাবণী! কত ছোট দেখেছিলাম তোকে। তখন বোধ হয় তুই ফাইভে পড়তিস। আমায় চিনতে পারছিস না?’
–‘যাইফ ভাই আপনি?’
–‘হ্যাঁ। তুই নাকি ছাত্রী হিসেবে খুব ভালো। কিন্তু তোর স্মৃতিশক্তি এতো খারাপ কেন?’
কথাটা বলতে বলতে শ্রাবণীকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকলো যাইফ। কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের উপর রাখলো। তারপর শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন তোর? বিয়েতে রাজি না না-কি?’
শ্রাবণী সন্তপর্ণে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করে দরজার সামনে থেকে খাটের দিকে এগিয়ে গেল। যাইফের কথার উত্তর দিলো না। যাইফকে শ্রাবণী অনেক আগে দেখেছে। চেহারাও পরিষ্কার মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে যে তখন যাইফের মুখে এমন চাপদাঁড়ি ছিলো না। যাইফের মা বছরান্তে একবার আসলেও যাইফ তেমন আসে না। পাঁচ বছর পর এসেছে এবার।
–‘রাতে বাসে ঘুম হয়নি। বাসে ঘুমাতে পারিনা আমি। ঘুমে চোখ জ্বলে যাচ্ছে। তোদের দুই রুমের মুরগির খোপের মত একটা বাসা। তোর বাবা এত কিপ্টামি করে কেন? বাসা বড় করে না কেন? মেয়ের জামাই এসে ঘুমাবে কোথায়? ওই রুম ভরতি মানুষ, হাউকাউ, চেঁচামেচি। আমি এখানে একটু ঘুমাবো। এই রুমে কাউকে আসতে দিস না।’
শ্রাবণী হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো কেবল। যাইফ খাটে শুয়ে পড়েছে। শ্রাবণী খাট থেকে উঠে চেয়ারে বসল। এর ভিতর যাইফ বলল,
–‘তুই কিসে পড়িস? এসএসসি দিয়েছিস?’
–‘হ্যাঁ।’
–‘এত অল্প বয়সে তোর বিয়ে দিচ্ছে কেন? প্রেম ট্রেম করে ধরা খেয়েছিস নাকি?’
শ্রাবণী নিতান্তই স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
–‘না।’
–‘তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই দুই-তিন দিনের না খাওয়া। তুই কি বিয়েতে রাজি না?’
শ্রাবণী এবারও স্বাভাবিক গলায় বলল,
–‘না রাজি না। যে লোকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমার থেকে আঠারো বছরের বড়।’
যাইফ এবার চমকে গেল। এতক্ষণ যে হাসিঠাট্টার ভঙ্গিতে কথা বলছিল সেই ভঙ্গিটাও বদলে গেল মুহুর্তে। উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
–‘দুপুরে বরযাত্রী এসে পড়বে। বিয়ে হয়ে যাবে। রাজি না তো সেটা সবাইকে বলছিস না কেন? এভাবে বসে আছিস কেন? আঠারো বছরের বড় একটা লোকের সাথে কেন বিয়ে দিচ্ছে তোকে? কি অদ্ভুত!’
শ্রাবণীর গলা ধরে আসলো। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। বলল,
–‘আমার কথা শোনার কেউ নেই যাইফ ভাই।’
–‘তুই একটা কাজ কর। তুই পালিয়ে যা।’
শ্রাবণী আঁতকে ওঠে বলল,
–‘কি বলছেন? আমি কোথায় পালিয়ে যাবো?’
–‘তুই পালিয়ে যেতে চাইলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তোর থাকা-খাওয়া, এভরিথিং।’
–‘না, না আমায় দিয়ে এসব হবে না। বাবা আমায় খুন করে ফেলবে।’
–‘তো তুই ওই বুড়ো লোকের সংসার করবি? বিয়ে, সংসার এসবের বয়স হয়েছে তোর?’
শ্রাবণীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কোনো কথা বলছে না। যাইফ বলল,
–‘আচ্ছা তোর বয়স আঠারো হয়েছে?’
–‘না।’
এর ভিতর পারভীন বেগম আসলো হুট করে। যাইফের সাথে শ্রাবণীর কথা আর এগোয়নি। গোসল দিয়ে দ্রুত রেডি হতে বললো শ্রাবণীকে। অগত্যা শ্রাবণী কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। বরযাত্রী আসার সময় হয়ে গেছে। বউ সাজানো হলো শ্রাবণীকে। অসম্ভব মিষ্টি লাগছে শ্রাবণীকে দেখতে। এই সংসারের সবার অপ্রিয় শ্রাবণী চলে যাবে। নিত্য আর ঝগড়া হবে না শ্রাবণীকে নিয়ে। নিজের চিরপরিচিত রুমটা, রুমের সামনে বারান্দাটা, বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছটা সবকিছুর জন্য মায়া হচ্ছে শ্রাবণীর। মনের ভিতর অন্য আরেক ভয়ও উঁকি দিচ্ছে শ্রাবণীর। স্বামী নামক মানুষটা কেমন হবে? শ্রাবণী কি হতে পারবে আদৌ কারো প্রিয়?
(চলবে)

প্রিয় শ্রাবণী (পর্ব-২)
ইসরাত জাহান তানজিলা
_____________________
দুপুরের দিকেই বরযাত্রী চলে আসলো। পনেরো জন আসার কথা থাকলেও ত্রিশ জন এসেছে। পনেরো জনের জায়গায় বিশ জন আসতে পারে বড়জোর। কিন্তু পনেরো জনের কথা বলে ত্রিশ জন আসার মত অভদ্রতা তাদের কাছ থেকে সেলিম হোসেন আশা করেননি। শুনেছিল তারা সামাজিক মানুষ, ভালো বংশের লোক। নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে চুপ থাকলেন সেলিম হোসেন। কিন্তু মনে মনে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করলেন। খাবারে অনেক টান পড়বে। আত্মীয়-স্বজন যাদের দাওয়াত করেছে তাদের কপালে ডাল ছাড়া কিছু জুটবে না‌ বোধ হয়।

পাত্রের বাবা জয়নাল সাহেব তাড়া দিচ্ছেন বিয়ে পড়ানোর পর্ব দ্রুত সারতে। তারা সন্ধ্যার আগে বউ নিয়ে বাসায় ফিরতে চায়। শ্রাবণী বউ সাজে রুমের এক কোণে বিষণ্ণ মুখে বসে আছে। রুম ভরতি মানুষ। চিৎকার, চেঁচামেচি আর কোলাহল। সবার কৌতূহলী দৃষ্টি শ্রাবণীর দিকে। শ্রাবণী ভীষণ কষ্টে কান্না চেপে আছে। বড় ফুফু তিন বার এসে ধমক দিয়ে গেছে শ্রাবণীকে। কেঁদে যেন মেকাপ নষ্ট না করে। কাঁদলে চোখের কাজল লেপ্টে সাজগোজ সব নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রাবণীও না কাঁদার চেষ্টা করছে। কিন্তু বুকের ভিতরটা ভার হয়ে আসছে ক্রমশ। শ্রাবণীর এই মুহুর্তে ওর মা’কে মনে পড়ছে। মায়ের সাথে তেমন কোনো স্মৃতি নেই শ্রাবণীর।‌ স্মৃতি বলতে ফ্রেমে বন্দী দুইখানা ছবিই আছে শুধু। মা যেমনই হোক সন্তানরা বোধ হয় কখনো‌ মা’কে ঘৃণা করতে পারে না। যে মা শ্রাবণীকে ফেলে চলে গেছে সে মা’কে শ্রাবণী ঘৃণা করতে পারেনি কখনো। মায়ের কথা মনে পড়লেই বুকের ভিতর রাশি রাশি অভিমান আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা গুলো উঁকি দেয়। মায়ের প্রতি শ্রাবণীর হাজার হাজার অভিযোগ, অভিমান রয়েছে। কোথায়ও ঘৃণা নেই। মা থাকলে শ্রাবণীর জীবনের গল্পটা হয়ত অন্যরকম হতো।

একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে। কিন্তু এর ভিতর হঠাৎ ভয়ঙ্কর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। বাড়িতে দল বেঁধে পুলিশ আসলো। সবার চোখ কপালে। মুখ থমথমে হয়ে গেল। বিয়ে বাড়িতে পুলিশ কেন? নাম পরিচয় গোপন করে এক ব্যক্তি নাকি ফোন করে পুলিশকে জানিয়েছে‌ এখানে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। সে কারণেই পুলিশ এসেছে। শ্রাবণী হতভম্ব হয়ে গেল। কে ফোন করেছে পুলিশকে? সবার আগে শ্রাবণীর মাথায় যাইফের নামটা আসলো। বিয়েটা কি ভেঙে যাবে? এই বয়সে সংসার নামক বেড়াজালে আবদ্ধ হওয়া থেকে রেহাই পাবে শ্রাবণী? শ্রাবণীর মনের কোণে গোপনে থাকা বিয়ে ভাঙার ক্ষীণ আসাটা ক্রমশ প্রখর হতে লাগল। শ্রাবণী ছাড়া বাকী সবার মুখে দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা। এভাবে বিয়ে ভেঙে গেলে মানসম্মান থাকবে না। শ্রাবণী আশেপাশে তাকিয়ে যাইফকে খুঁজতে লাগলো। কোথায়ও দেখছে না যাইফকে। যাইফ বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে বিয়ে ভাঙার প্রহর গুনছে। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল। কোলাহল পূর্ণ বাসাটা একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। ফুল স্পীডে চলা ফ্যানের নিচে বসেও ঘামছে শ্রাবণী। উত্তেজনায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ওর। পু্লিশ এখনো বিয়ে ভাঙছে না কেন? জয়নাল সাহেব নাকি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছে পুলিশের সাথে। কি কথা বলছে? হাজারটা প্রশ্ন শ্রাবণীর মনে। আচ্ছা বিয়েটা ভেঙে গেলেও বা কি হবে? আবার নতুন‌ করে প্রস্তাব আসতে শুরু করবে। সাথে বিয়ে ভাঙা নিয়ে নানান খোঁটা শুনতে হবে। তবুও কেন এত খুশি হচ্ছে শ্রাবণী তা নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না।

বিয়ে ভাঙলো না। কিন্তু পুলিশ চলে গেল। কি হলো শ্রাবণী বুঝতে পারছে না। সেলিম হোসেন চাপা উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটে আসলেন। চেহারা থেকে দুশ্চিন্তা উবে গেছে। স্বস্তি ভরা গলায় বলল,
–‘শালা আমার মেয়ে আমি বিয়ে দিবো পুলিশের বাপের কি? বড় বড় নেতাদের সাথে ওঠাবসা পাবেলের। পুলিশ ওর হাতের মোয়া।’
শ্রাবণীর মনের আশা টুকুন ধুপ করে নিভে গেল। মনটা আগের ন্যায় গাঢ় বেদনায় ছেয়ে গেল। তাড়াহুড়ো করে বিয়ে পড়ানো হলো। লম্বা ঘোমটার আড়াল থেকে শ্রাবণী জলপূর্ণ চোখে একবার তাকালো পাবেলের দিকে। শ্যাম বর্ণের হাস্যোজ্বল চেহারা লোকটার। চৌত্রিশ বছর বয়সের কথা শুনে শ্রাবণী মনে মনে ভেবে নিয়েছিল লোকটার মাথায় হয়ত টাক থাকবে। কিন্তু না, মাথা ভরা চুল লোকটার। বয়সটাও কম বুঝাচ্ছে। সাতাশ-আটাশ এমন। শ্রাবণীর সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে গেল। শ্রাবণী তীব্র অস্বস্তি নিয়ে দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলল। লোকটা কি আড়চোখে তাকিয়ে আছে শ্রাবণীর দিকে? শ্রাবণীর অস্বস্তি বাড়ে। বরযাত্রীর খাবার সময় হয়ে গেছে। হঠাৎ শ্রাবণীর পিছনে এসে কেউ একজন দাঁড়ালো। ফিসফিস করে বলল,
–‘আমি তো ভেবেছিলাম মাথায় টাকওয়ালা বর তোর। কিন্তু না, দারুণ হ্যান্ডসেম দেখতে। বিয়েটা না ভেঙে ভালো হয়েছে না?’
যাইফের কথার প্রত্যুত্তর করার মত পরিস্থিতি নেই। পরিস্থিতি থাকলে শ্রাবণী বলত,
–‘দেখতে দারুণ হ্যান্ডসেম। কিন্তু মানুষ হিসেবে কেমন তা তো জানি না যাইফ ভাই। আমার জীবনে খুব কম ভালো মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। জীবনে ভরসা করার মত কোনো হাত পাইনি। ভালোবাসার উষ্ণ ওম পাইনি।’
এসব কথা আর বলা হলো না। যাইফ আবার চাপা গলায় বলল,
–‘তোর হাজবেন্ডের অনেক পাওয়ার। পুলিশ হাত করে ফেলল। তোর তো রাজ কপাল শ্রাবণী। ভালো থাকার চেষ্টা করিস। অনেক ছোট তুই।’
–‘আমি একদমই ছোট না যাইফ ভাই। চার বছর বয়স থেকে একা ঘুমাতে হতো। অন্ধকারে ভীষণ ভয় পেতাম। সেই ভয় পাওয়া অন্ধকার রাত গুলোতেই বড় হয়ে গিয়েছি আমি। পাঁচ বছর থেকে রোজ ভোর সকালে ওঠে থালা বাসন মাজতে হত। তখনই বড় হয়ে গিয়েছিলাম আমি।’
কথা গুলো কেবল মনে মনেই আওড়াল শ্রাবণী। মুখ ফুটে আর বলা হলো না। কনে বিদায়ের সময় হয়ে গেল। মেয়েকে বিদায় দিতে গিয়ে পারভীন বেগম গলা ছেড়ে কান্না শুরু করলেন। শ্রাবণী ভীষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল পারভীন বেগমের দিকে। মানুষকে দেখাতে কাঁদছে এই পারভীন বেগম? নাকি শ্রাবণী নামক আপদ বিদায় হয়ে যাচ্ছে সেই আনন্দে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিদায়ের সময় শ্রাবণী একটুও কাঁদলো না। একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ছিলো পুরোটা সময়।
______________
রক্তিম বর্ণ নিয়ে সূর্যটা ক্রমশ হেলে পড়ছে দিগন্তের শেষ প্রান্তে। গৌধূলী লগ্ন। অস্তমান সূর্যের লালচে আভা ধরণীর বুকে ছড়িয়ে পড়ছে। শ্রাবণী অবসন্ন শরীরটা নিয়ে বসে আছে গাড়িতে ওর বরের পাশে। মলিন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে ডুবতে থাকা সূর্যটার দিকে। গাড়ি প্রায় আধাঘন্টা ধরে চলছে। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই শ্রাবণী লক্ষ্য করছে পাবেল ওর দিকে একবারের জন্যও তাকায়নি। একটা কথাও বলেনি শ্রাবণীর সাথে। বিষয়টা শ্রাবণীকে ভাবাচ্ছে। লোকটা কি পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করেছে? নতুন আরেক দুশ্চিন্তা তৈরি হলো শ্রাবণীর মনে। শ্রাবণী অনেক চেষ্টা করেও চিন্তাটা থেকে বের হতে পারলো না। আড়চোখে একবার তাকালো পাবেলের দিকে। লোকটা মোবাইলের দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণীর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠছে। নতুন কোনো দুঃখ কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য? পাবেলের ফোন বেজে ওঠল। পাবেল বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে। এক পর্যায়ে ফোন তুলল। ফোন তুলে শুধু বলল,
–‘গাড়িতে আমি। পরে ফোন দিচ্ছি। তোমার মোবাইলে মেসেজ করেছি দেখো।’
গাড়ি চলছে রাস্তার বুক চিরে। শ্রাবণীর দিকে পাবেলের কোনো মনোযোগ নেই। পাবেলের পাশে যে নতুন বউ বসে আছে সেটা যেন পাবেল ভুলে গেছে। শ্রাবণীর কান্না পাচ্ছে। অজ্ঞাত এক শঙ্কা শ্রাবণীর দুশ্চিন্তা বাড়ায়। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে শ্রাবণী। বুকের ভিতরটা নতুন করে আবার ভারী হয়ে আসছে।

জয়নাল সাহেব বউ নিয়ে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরতে চাইলেও বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল। সারা রাস্তা দুইজনের ভিতর কোনো কথা হয়নি।‌ বউ বরণ, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি নানান আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে করতে রাত বারোটা পার হলো। বাসায় আসার পর পাবেলকে আশেপাশে কোথায়ও দেখলো না শ্রাবণী। গাড়ি থেকে নামার পর থেকে একদম উধাও পাবেল। রাত বারোটার পর শ্রাবণীকে রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। চমৎকার করে সাজানো একটা রুম। পুরো রুমে ফুলের আচ্ছাদন! খাটে ছড়ানো গোলাপের পাপড়ি। ক্লান্তিতে হাত-পা ভেঙে আসছে শ্রাবণীর। গায়ে হালকা জ্বরও এসেছে। মাথাটাও ব্যথা করছে। শ্রাবণীকে খাটের ওপর বসানো হলো। শ্রাবণীর চারদিকে জটলা পাকিয়ে আছে পাবেলের ভাবী আর বোনেরা। হাসিঠাট্টা করে তারা নানান রকমের অশ্লীল কথাবার্তা বলছে বাসর রাত নিয়ে। শ্রাবণীর গা গুলিয়ে আসছে। সবাই হঠাৎ হাসিঠাট্টা বন্ধ করে বলল,
–‘অনেক রাত হয়েছে। এখন আমাদের চলে যাওয়া উচিত। পাবেল কোথায়? ওকে ধরে নিয়ে আয়।’
পাবেলের দুই ভাবী পাবেলকে আনতে গেল। পুরো বাড়ি কোথায়ও পেল না। পাবেলের নম্বরে কল করে দেখল ফোনও বন্ধ। বাড়ির সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। কোথায় গেল পাবেল? শ্রাবণীর রুমে যারা ছিলো সবাই একে একে চিন্তিত মুখে রুম থেকে বের হয়ে গেল। শ্রাবণী এখনো বুঝতে পারছে না কি হয়েছে। বিষয়টা এখন পর্যন্ত শ্রাবণীর কান অবধি পৌঁছায়নি। তবে বুঝতে পেরেছে গুরুত্বর কিছু একটা হয়েছে। সবাই হঠাৎ এভাবে চলে গেল কেন? শ্রাবণী চিন্তান্বিত চিত্তে খাটেই বসে থাকলো। আধা ঘন্টা হয়ে গেছে ওভাবেই বসে আছে শ্রাবণী। এর ভিতর কেউ আসলো না শ্রাবণীর রুমে। দুই-তিন জন এসেছিল যারা রুমের দরজার সামনে থেকে উঁকি দিয়ে চলে গেছে। রুমের বাইরে হঠাৎ চিৎকার শোনা গেল। শ্রাবণী এবার খাট ছেড়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এ বাসায় আসার পর সবাই যে মানুষটিকে পাবেলের মা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সে মানুষটা চেঁচিয়ে বলছে,
–‘আমি হাজার বার বারণ করেছি দিও না এ বিয়ে। কেউ শুনেনি আমার কথা। ছেলে এখন বউ ফেলে চলে গেছে। এখন ভালো হয়েছে?’
জয়নাল সাহেব চাপা গলায় ক্রোধ নিয়ে বলল,
–‘চুপ একদম চুপ। নতুন বউ বাসায়। একদম চেঁচামেচি করবে না।’
–‘নতুন বউ এখন সারারাত একা রুমে বসে থাকুক। যাও এখন নতুন বউকে গিয়ে বলো, আমার ছেলে পালিয়ে গেছে তোমায় ফেলে। তুমি ওর জন্য অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়ো।’
শ্রাবণীর মাথায় যেন বাজ পড়লো। সবকিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। পুরো শরীর কাঁপছে ওর।‌ কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো শ্রাবণী।
(চলবে)