প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-১৯+২০

0
430

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃতাসনিম

“ফারাহ দেখো সেদিন তোমাদের সাথে এমন ব্যবহারের পর আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম,আমি অনেকবার তোমার সাথে কনটাক্ট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি কোনো উপায় রাখোনি,তাই আমি ক্ষমা চাইতে পারিনি সেদিনের রাগের মাথায় বলা কথাগুলো ভোলার জন্য ফারিহা আমাকে প্রপোজ করলে আমি আর ওকে ফিরিয়ে দেয় না,আমি ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে থাকবো সারাজীবন কিন্তু তোমার দেয়া অভিশাপ হয়তো আমার লেগে গিয়েছিল তাই তিনবছরের রিলেশনশিপের বিচ্ছেদ হয়ে আমি এখন দেবদাস হয়ে বসে আছি”

“আমি তোমাকে কখনোই অভিশাপ দেয়নি,আমাকে নিয়ে তোমার যত ভুল ধারণা আছে সেগুলো তুমি আমাকে বলো আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলবো, এখন কথা হলো তুমি পরে কি রিয়েলাইজ করেছো সেটা আমার জানার বিষয় না,আমি আমার লাইফে অনেক ভালো আছি,অনেক ভালো একজন লাইফ পার্টনার পেয়েছি যে আমাকে অনেক ভালোবাসে,সম্মান করে। তুমি আমার পেশেন্ট ছাড়া আর কিছুই না,তুমি সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে গেলে আমি আশা করবো তুমি আর আমার সামনে আসবে না কারণ সিরিয়াসলি আমি তোমাকে দেখতে চায় না”

“ঘৃণা করো আমাকে এখন,আগে তো পাগল ছিলে ছোট্ট একটা মেয়ে ছিলে কিন্তু সাহস ছিল অনেক একটা ছেলের বাসার নিচে এসে দাড়িয়ে থাকতে তাকে এক পলক দেখার জন্য, ছেলেটার জন্য গোলাপ নিয়ে আসতে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে তাকে,কত পাগলামি করতে তুমি,আসলেই আমি আমার জীবনে ভুল করে ফেলেছি”

“এসব কিছু আমার অতীত ছিল যা ভোলার জন্য আমি অনেকদূরে চলে গিয়েছিলাম”

“কিন্তু এখন যে আমি আবার তোমার পিছুটান হয়ে গেছি,আমাকে কি একবার সুযোগ দিবে”

“মানে,তোমার মাথা ঠিক আছে, আমি বিবাহিত এখন”

“ওয়াট এভার, তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে,আমার প্রয়োজন তোমাকে এখন”

“যখন আমি তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম,তখন তোমার আমাকে প্রয়োজন ছিল না,এখন তোমাকে আমি সুযোগ দিব,কীভাবে ভাবো তুমি এটা,শুনে রাখো শাহিন আমার হ্যাপি লাইফে তুমি কাটা হয়ে যেও না,প্লিজ”

“তুমি কি চাও আমি সারাজীবন এরকমই থাকি ডিপ্রেসড্,পাগল, এলোমেলো”

“কেন এরকম থাকবে,তুমি সুস্থ হয়ে যাবে তারপর তোমার যা স্বপ্ন ছিল তা পূরণ করবে,তোমার ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে তুমি এটাই তো চেয়েছিলে তুমি,কেন তোমার জীবনের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে আসছো”

“ম্যাম,জাবির স্যার অনেকক্ষণ নিচে ওয়েট করছে”

“আপনি ওকে দুমিনিট দাঁড়াতে বলুন আমি আসছি”

“ওকে ম্যাম”

“দেখো আজ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি আগের মতো হীনমন্যতা নিয়ে আছো,তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাবে বলেই আমি আশা করি,মেডিসিন গুলো ঠিক ভাবে খেও,আর নিজের যত্ন নিও আসছি”

“আমার আগের মতো হতে হলে তোমাকে প্রয়োজন”

“এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে শাহিন,অনেক দেরি হয়ে গেছে”

ফারাহ চেম্বার থেকে বেরিয়ে জাবিরের কাছে চলে এলো,শাহিনও তার পিছু পিছু এলো, জাবির ফারাহকে বললো

“অনেক দাঁড়িয়ে আছি ম্যাডাম”

“সরি,আচ্ছা চলো এখন”

“ফারাহ এটাই কি তোমার লাস্ট ডিসিশন”

শাহিনের কথা শুনে জাবির পিছনে ঘুরে তাকালো আর ফারাহ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো,এখন জাবিরকে কি বলবে কিসের ডিসিশনের কথা বলবে।জাবির সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“কিসের ডিসিশনের কথা বলছেন আপনি”

“সেটা আমি আপনাকে বলবো না নিশ্চয়”

“আপনি আমার ওয়াইফের কথা বলেছেন, আমার অধিকার আছে আপনাকে জিজ্ঞেস করার কিসের কথা বলছেন আপনি”

“আপনার এই ওয়াইফ একসময় আমাকে ভালোবাসতো সেটা জানেন আপনি”

“হ্যা জানি,তো কি বলতে চান আপনি”

“জাবির প্লিজ চলো ওর মাথা ঠিক নেই,তাই উল্টা পাল্টা কথা বলছে,আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো যায়”

“দাঁড়াও ফারাহ উনি কি বলতে চায় আমি শুনতে চায় বলুন আপনি”

“আপনাকে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না, ফারাহ আ’ম সরি এগেইন,আমি আবার তোমার লাইফে প্রবলেম ক্রিয়েট করতে চায় না,ভালো থেকো”

শাহিন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল,জাবির ফারাহর দিকে তাকালো, ফারাহ জাবিরের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বললো,

“চলো,বাসায় যায় জাহরা একা আছে তো”

জাবির কিছু না বলে ফারাহর হাত ধরে চুপ করে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল, পুরো রাস্তা সে একটা কথা বলেনি,বড় ঝড় আসার আগে আবহাওয়া এমন ঠান্ডায় থাকে ফারাহ মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছিল,আর শাহিনকে মন চাচ্ছিল দুই তিনটা চড় লাগিয়ে আসি এভাবে আমার সুখের সংসারে ঝামেলা না বাঁধালে কি হচ্ছিল না ওর।

বাসায় এসে দেখলো,ফারাহর বাবা মা এসেছেন তাদের দেখে ফারাহ একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিল,জাবির তাদের কে সালাম নিয়ে রুমে চলে গেল। ফারাহ তাদের সাথে বসে পড়লো কথা বলার জন্য আজ আর রুমে যাওয়া যাবে না।

“আম্মু ভাইয়ার জন্য যে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলে কি হলো”

“আরে তোর ভাইয়ের তোর মেয়ে পছন্দই হয় না,বলে ওর থেকে মেয়ে গুলো বেশি সুন্দর পরে বাচ্চা ওর মতো হলে ওকে কথা শুনাবে,তাই ওর কম সুন্দরী মেয়ে লাগবে,কি যে বলে এমন মেয়ে কোথায় খুঁজে পাবো বল দেখি,এখন ওর কথা বাদ দিয়ে ঠিক করেছি আমাদের যাকে ভালো লাগবে তাকেই ঘরের বউ করে নিয়ে যাবো”

“হুমম তাই করো,তা নতুন কাউকে দেখেছো”

“সে ব্যাপারেই তো কথা বলতে এসেছি,জাবির বাবা যে রুমে গেল আর যে আসছে না”

“ওকে দিয়ে কি করবে,এ ব্যাপারে ওর কি বলার আছে”

“আমরা জাহরার কথা বলতে চাই আর কি”

“জাহরা,ও তো এখনো ছোটো আম্মু, আর তাও যদি কথা বলতে চাও তাহলে আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলো”

“জাবির এখানে আছে ওর সাথেই আগে কথা বলে দেখি,যা তুই ডেকে নিয়ে আয় ওকে”

“হ্যা,আমি ”

“হ্যা, মা যাও জাবিরকে নিয়ে আসো একটু”

“আব্বু….”

“কি হলো ফারাহ যেতে বললাম তো”

আব্বু আম্মুও কি বোঝে না আজ জাবির আগুন হয়ে আছে,এখন রুমে গেলে না কিয়ামত ঘটিয়ে ফেলে,হুংকার তো দিবে একটা জোরে সেটা তো জানা কথা।ফারাহ রুমে ঢুকে দেখে জাবির কোথাও নেই,বারান্দায় গিয়েও দেখে সেখানেও নেই,তারপর পিছনে ঘুরতেই জাবিরের সাথে ধাক্কা খায়,জাবিরকে দেখে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে বলে

“আব্বু আম্মু একটু তোমার সাথে কথা বলতে চাই”

জাবির কিছু না বলে রুম থেকে ড্রইয়িংরুমে চলে যায়,সেখানে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে কথা বলতে থাকে।

“বাবা তোমাদের যদি মত থাকে তবে আমরা জাহরা মা কে নিজেদের ঘরের মেয়ে করে নিয়ে যেতাম”

“আসলে মা,জাহরা কে ছোট থেকেই অনেক আদর করে বড় করেছি,অনেক ডিসিশনই আমি ওর জীবনের নিলেও এই ডিসিশন টা টোটালি আব্বু আম্মু আর জাহরা নিবে,আমার এখানে কিছু বলার নেই,যদি তারা রাজি থাকে তাহলে ভাই হিসেবে আমার যে দায়িত্ব আমি তা পালন করবো”

“ঠিক আছে, তাহলে আমরা ভাইয়ের সাথে কথা বলবো”

“হ্যা অবশ্যই”

“আজ আসি তবে,তোমরা এসো”

“ডিনার করে যান”

“হ্যা,আম্মু আব্বু খেয়ে যাও”

“নাহ অন্যদিন আসবো”

লতিফ চৌধুরী আর মিনারা চৌধুরী চলে গেলেন নিজের বাসায়, জাবির দরজাটা আটকিয়ে রুমে যাচ্ছিল,ফারাহ বললো

“তুমি ডিনারটা করে ফেলো,জাহরা তো নিজের রুমে পড়ছে,আমিও ফ্রেশ হয়নি”

জাবির কিছু বললো না, ফারাহ ওর পিছনে গেল,রুমে গিয়ে জাবির লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ফারাহ লাইটটা ওন করলো,জাবির ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো, কিছু বললো না।

“তুমি এমন কেন করছো,তুমি কিন্তু আমাকে প্রমিজ করেছিলে কখনো আমাকে ভুল বুঝবে না তাহলে আজ এমন করছো কেন”

“তোমাকে আমি কিছু বলেছি”

“কেন বলছো না, জিজ্ঞেস করো আমাকে কিছু, এমন চুপ হয়ে গেলে কেন,রাগ করো আমার উপর, তাও প্লিজ এমন কথা বলা অফ করে দিও না, এ ব্যবহারটা আমাকে বেশি কষ্ট দেয় জাবির”

“কষ্ট কি তুমি একলাই পাও,কষ্টের অনুভূতি শুধু তোমারি আছে আমার নেই,তোমার সামনে আজ তোমার হাসবেন্ড কে একজন এভাবে অপমান করে গেল,তুমি তাকে কিছু বললে না,তার কথা শুনে আমার মনে হলো তোমার উপর আমার কোনো অধিকারই নেই”

“তোমার যদি আমার উপর অধিকার না থাকে তবে কার থাকবে বলতে পারো আমাকে,শাহিন শুধুমাত্রই আমার একটা দুঃস্বপ্ন ছিল,যা আমি ভুলে গেছি তোমার ভালোবাসা আমাকে এসব ভুলিয়ে দিয়েছে, এখন আবার শাহিন এসে আমাকে কিছু বলবে আর আমি সেটা মেনে নিবো তা তুমি ভেবো না,আমি শুধু তোমার ”

“লাইট অফ করে দাও”

“খাবে না”

“ইচ্ছে করছে না”

ফারাহ লাইটা অফ করে দিল,তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও শুয়ে পড়লো,কেউ কোনো কথা বললো না।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃতাসনিম

ফারাহ এখন নিজের রুমে বসে আছে, তাকে আজকে বিশেষ কাজের জন্য তার ভাই গিয়ে নিয়ে এসেছে সকাল সকাল, এখন তার সামনে ফাহিম বসে নাস্তা করছে আর কথা বলছে,

“শোন,আম্মু আব্বু কি ভাবছে তুই তো মনে হয় জানিস,দেখ জাহরা আমার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে ওকে আমি কিভাবে বিয়ে করবো এটা কি হয়”

“ভাইয়া আব্বু আম্মু ভাবলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না, জাহরা আব্বু আম্মু কি বলে তারপর না ডিসিশন হবে,তুই এতো প্যারা নিস কেন,আর যদি হয়ও তাহলে সমস্যা কি জাহরা অনেক ভালো একটা মেয়ে”

“এই এই ফারাহ,তোর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে আসলাম মাত্র তারা তো রাজি আলহামদুলিল্লাহ ”

“আম্মু জাহরাকেও তো একবার জিজ্ঞেস করতে হবে তাই না,আর এক সপ্তাহ পর কিন্তু জাহরা এক্সাম শুরু হয়ে যাবে,এখন যদি এই আয়োজন করো তোমরা তাহলে কিন্তু ওর পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে”

“ওর পরীক্ষার পরেই না হয় আমরা এগোবো”

“নিজের ভাইকে একবার জিজ্ঞেস করতে বললি না”

“তোকে কি জিজ্ঞেস করতে বলবে,এতোদিন তো সময় দিলাম তোকে”

“আচ্ছা আম্মু তাহলে আমি যায় এখন জাবির হয়তো আমার অপেক্ষা করছে”

“আচ্ছা”

ফারাহ উঠে দাঁড়ালো বাসায় যাওয়ার জন্য, হঠাৎ করে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিনারা বেগম আর ফাহিম ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

“কি হয়েছে মা”

“কিছু না,হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠলো”

“আয় এখানে এসে বস”

“না না আমি ঠিক আছি,আমি যেতে পারবো”

“ফাহিম যা ওকে দিয়ে আয় তাহলে”

“হ্যা চল”

ফাহিম ফারাহকে নিয়ে আসলো ওর বাসায়,জাহরা দরজা খুলে দিল, ফারাহকে ধরে নিয়ে আসায় জাহরা বললো,

“কি হয়েছে ভাবি তোমার”

“কিছু না জাহরা,তোমার ভাইয়া কোথায় চলে গেছে”

“নাহ রুমেই আছে”

“আচ্ছা ভাইয়া তুই বোস,আমি আসছি একটু”

ফারাহ রুমের দিকে চলে গেল। ফাহিম জাহরাকে বললো,

“আসি তবে এখন”

“বসুন,নাস্তা করে যান”

“নাহ আমি নাস্তা করে এসেছি”

“তাহলে চা খেয়ে যান”

“আপনি বানিয়ে খাওয়াবেন”

“হুমম খাবেন”

“ঠিক আছে,তাহলে খাওয়ায় যায়”

“আচ্ছা বসুন আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি”

“শুনন একটু”

“হ্যা বলুন,আপনার আমাকে কেমন লাগে”

“আপনাকে আমার কেমন লাগে”

“হ্যা,আমাকে”

“ভালো”

“আচ্ছা আসি আজকে চা অন্যদিন খাবো”

ফাহিম তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল, জাহরা বোকার মতো তাকিয়ে রইল ওর যাওয়ার দিকে।

“জাবির,তোমার কি মত জাহরা আর ফাহিম ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে”

“যারা বিয়ে করবে তাদের মত থাকলে আমি কি বলবো,তুমি কি আজ যাবে আমার সাথে হসপিটালে”

“তোমার সাথে যাবো না তো আর কার সাথে যাবো”

“নাহ একলাও তো যেতো পারো,তাই বললাম”

ফারাহর আবার মাথা ঘুরাতে লাগলো,ও মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়লো,জাবির ওর দিকে তাকিয়ে বললো

“কি হলো”

“মাথাটা ঘুরাচ্ছে কয়েকদিন ধরে, আজকে বেশি ঘুরাচ্ছে তুমি অফিস চলে যাও আমি যাবো না আজকে”

“ঠিক আছে রেস্ট নেও”

“হুমম”

জাবির অফিসে চলে যেতেই জাহরা ফারাহর রুমে আসলো ওকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো আর বললো,

“ভাবি,কালকে ভাইয়ার জন্মদিন এবার আম্মু আমাদের সাথে নেই গ্রামে আছে,এখন তোমাকে আর আমাকেই সব অ্যারেঞ্জ করতে হবে”

“কাল জাবিরের বার্থডে ও তো আমাকে কিছু বললো না”

“ভাইয়ার জীবনে তার বার্থডে মনে থাকে না ভাবি,আমরা অলওয়েজ সারপ্রাইজ দেয়”

“ওকে ডান,এবারও তাই হবে রাত বারোটায় তো কেক কাটবে তাই না”

“হুমম একেবারে”

“আচ্ছা তাহলে আম্মু কে কল করে জিজ্ঞেস করে নেয় উনি কি কি করতেন ওর বার্থডে তে”

“আচ্ছা”

জাহরা উঠে চলে যেতেই ফারাহ তার শাশুড়ী মাকে কল দিলেন,ওনার থেকে সব জেনে নিয়ে ফারাহ সব জোগাড় করতে লেগে পড়লো,কিছুক্ষণ পরে মিনারা বেগম আসলেন ফারাহকে বললেন,

“শোন তুই একবার ডাক্তার দেখিয়ে নে”

“ডাক্তার কেন দেখাবো”

“আজকে না তোর মাথা ঘুরে উঠলো”

“আম্মু এটা দুর্বলতার থেকেও হয়,এর জন্য ডাক্তার দেখানোর কিছু নেই”

“আমি জানতাম তুই এ কথা বলবি তাই এখনি যাবি আমার সাথে ডাক্তার দেখাতে”

“এখন কিভাবে যাবো আজ রাত বারোটায় জাবিরের বার্থডে,সবকিছু দেখতে হচ্ছে আমাকে”

“আরে বেশি সময় লাগবে না,আমি তোকে সাহায্য করে দেব,চল এখন আমার সাথে”

“কিন্তু আম্মু”

“কোনো কিন্তু না রেডি হয়ে আয়”

মিনারা বেগম ফারাহকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন, ডাক্তার কিছু টেস্ট করতে দিলেন,দু ঘন্টা পরে রিপোর্ট দিবে বললেন,তাই ফারাহ বাসায় চলে আসতে চাইলো কিন্তু মিনারা বেগম রিপোর্ট নিয়েই যাবেন তাই ওকে যেতে দিলো না,তারা পাশের একটা শপিংমলে গেল,সেখানে জাবিরের জন্য গিফট কিনবে বলে ভাবছিল ফারাহ।দু’ঘন্টা পরে রিপোর্ট নেয়ার জন্য তারা আবার হসপিটালে গেল।ডাক্তার বললেন

“ঠিমত নিজের খেয়াল রাখবেন,কারণ আপনি সুস্থ থাকলেই তো বেবি সুস্থ থাকবে”

“বেবি মানে”

“আপনি প্রেগন্যান্ট”

“আলহামদুলিল্লাহ, ঠিক আছে ম্যাম,আমি ওর খেয়াল রাখবো”

“আপনি কি ওনার মা”

“হ্যা”

“উনি কিন্তু অনেক উইক,খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার, ইচ্ছে না করলেও অল্প অল্প করে খেতে হবে,আর নিয়মিত চেকআপ করাতে আসতে হবে”

“ঠিক আছে”

ফারাহ আর তার মা ডাক্তারের কাছ থেকে চলে আসলেন,মিনারা বেগমের আনন্দ কে দেখে, উনি একে একে সবাই কে জানালেন,ফারাহকে জাবিরকে জানাতে বললে,সে বলে জাবিরকে রাতে জানাবে,তাই আর মিনারা বেগম জোর করেনি।উনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন জাবিরের বার্থডের।

প্রতিদিন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলেও আজ জাবিরও বেশ দেরি করে আসলো,বাসায় এসে দেখে পুরো বাসা অন্ধকার, জাহরার রুমে লাইন ওন থাকার কথা, ড্রইয়িং-ডাইনিং এ লাইট থাকার কথা সব অফ কেন,সে ফোনের ফ্লাশ ওন করে সামনের দিকে গেল। ডাইনিং এ পা রাখতেই দেখতে পেল,মোমবাতি হাতে ফারাহ সামনে দাঁড়ানো।

“হ্যাপি বার্থডে জাবির”

চারদিকে লাইট জ্বলে উঠলো, সবাই হ্যাপি বার্থডে বলে উঠলো। জাবির সবাইকে থ্যাংক ইউ বললো,জাহরা গিয়ে কেক নিয়ে আসলো,তারপর জাবির কেক কাটলো,ভিডিও কলে তার বাবা মা ও ছিলেন,জাবির সবাইকে কেক খাইয়ে দিল,তারপর সবাই চলে গেল, জাবিরও রুমে চলে আসলো,জাহরা ফারাহকে বললো রুমে যেতে সে সব গুছিয়ে নেবে,ফারাহ রাজি না হলে ওকে জোর করে জাহরা পাঠিয়ে দিল।

“আমি কি হেল্প করে দিব”

“আপনি যান নি”

“নাহ মানে আমার ফোন টা ফেলে গিয়েছিলাম সেটায় নিতে এসেছি”

“ওহহ নিয়ে যান”

“হুমম,তাহলে হেল্প লাগবে না আপনার”

“না ভাইয়া আপনি এখন বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারেন”

“ভাইয়া!!! তুমি কি জানো…না মানে আপনি কি জানেন”

“কি জানবো আমি”

“নাহ কিছু না আসি”

ফাহিম চলে গেল, জাহরা বিরবির করতে লাগল ফাহিম কে নিয়ে।

ফারাহ রুমে এসে দেখলো জাবির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,ফারাহ পিছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরলো। জাবির পিছনে তাকিয়ে বললো

“কি হয়েছে,আর এসবের কোনো দরকার ছিল না ”

“দরকার ছিল,আচ্ছা শুনো তোমাকে তো গিফট দেয়া হয়নি এখনো”

“লাগবে না”

ফারাহকে সরিয়ে রুমে চলে আসলো জাবির,ফারাহ সেখানে দাঁড়িয়েই বললো

“সত্যিই লাগবে না”

“না বললাম তো”

ফারাহ রুমে গিয়ে রিপোর্ট টা জাবিরের পাশে রেখে জাহরার কাছে যাচ্ছল,জাবির পিছন থেকে ডাক দিল।

“কিসের রিপোর্ট এটা”

“ইচ্ছে হলে খুলে দেখো,না হয় ফেলো দেও”

জাবির রিপোর্ট টা হাতে নিল, খুলে দেখতে লাগলো।কিছুক্ষণ সে চুপ করে বসে রইলো,তারপর ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললো

“আর ইউ সিরিয়াস”

“তোমার গিফট পছন্দ হয়নি”

“তুমি কি বলছো,সত্যি আমি বাবা হতে চলেছি”

“হুমম সত্যি”

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, চিমটি কাটো একটা আমাকে”

ফারাহ বেশ জোরে একটা চিমটি কাটলো জাবিরের হাতে।

“আরে এতো জোরে কাটতে বলি নাই”

“তুমি খুশি হয়েছো”

“আমি অনেক খুশি হয়েছি”

“আর রাগ করবে না তো”

“ঠিক আছে যাও আর রাগ করবো না, এতো বড় একটা গিফট তুমি আমাকে দিয়েছো,আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে”

ফারাহ জাবিরের কাঁধে মাথা রেখে বললো,

“তোমার খুশিতেই আমার খুশি,সবকিছু ভালোভাবে হলেই এখন হয়”

“ইনশাআল্লাহ সব ভালো হবে”

#চলবে