প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-৫+৬

0
516

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃতাসনিম

জাবির ফারাহর কথা মতো সকালে ঘুম থেকে উঠে আগের কিছু ভাবলো না,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেল।

“কিরে ভাইয়া তুই নিজে থেকে আজকে নাস্তা করতে চলে আসলি,সূর্য কি পশ্চিম দিকে উঠেছে নাকি”

“ফালতু কথা কম বল,আম্মু কোথায়”

“রান্নাঘরে আর কোথায় থাকবে,ওটাই তো আম্মুর জনজীবন,সারাদিনই কিছু না কিছু বানাতেই থাকে”

“তোর কলেজ নেই আজকে,এখন যাস নি কেন”

“খেয়ে নেয় একটু যাবোই তো”

“খেয়ে খেয়েই তো ফুটবল হচ্ছিস কমিয়ে খা একটু”

“কি বললি,আম্মু দেখো না ভাইয়া আমাকে কি বলে”

“কি হয়েছে তোদের সকাল সকাল ঝগড়া শুরু করেছিস কেন”

“আম্মু ভাজি টা অনেক মজা হয়েছে,কিরে জাহরা বসে আছিস কেন রান্না কত মজা হয়েছে তুই না খেয়ে বসে আছিস,আচ্ছা আম্মু আমি আসছি এখন”

“ভাইয়া তুই রুমের দিকে কোথায় যাস,অফিস না বাসার বাইরে”

“বেশি বুঝিস না চুপচাপ খাওয়া শেষ কর”

জাবিরের একমাত্র বোন জাহরা,ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।ওদের বাবা বেশিরভাগ গ্রামের বাসায় থাকে ওখানে কেউ থাকে না তাই উনি দেখাশোনা করেন,জাবিরের দাদা যতদিন জীবিত ছিলেন বাড়িটা কে ভীষণ গুছিয়ে রাখতেন, তার মৃত্যুর পর থেকেই জাবিরের বাবা সেখানেই বেশি থাকেন,জাবিরের চাকরি, জাহরার পড়ালেখার জন্য তারা ঢাকায় থাকে।

“এই যে আমার পেশেন্ট এতো দেরি করলেন কেন, আমি কখন থেকে এখানে বসে আছি”

“বসেই তো আছেন কোনো কাজ তো করেন নাই,এখন বলুন আমাকে কেন দেখা করতে বলেছেন”

“আপনি এখন কোথায় যাবেন”

“অফিসে যাবো এখন”

“বাসায় কখন আসবেন”

“রাতে,এগুলো কি ধরনের প্রশ্ন সকালে অফিসে গেলে মানুষ রাতেই আসে”

“ফোন টা কি ওন করেছিলেন”

ফোনের কথা জাবিরের মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল।পকেট থেকে ফোন টা বের করে ওন করতে না করতেই বাজতে শুরু করল, জাবির অসহায় চোখে ফারাহর দিকে তাকালো।

“এখন আমাকে জিজ্ঞেস করবে কাল রাত থেকে ফোন অফ কেন,কি বলবো এখন আমি উফ আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেও”

“ফোন টা রিসিভ করুন”

“রিসিভ করে কি বলবো শুনি”

“আপনি কিছু বলবেন না চুপ করে থাকবেন ”

“হ্যা তা তো আমি চুপই থাকবো কারণ প্রথমে কতক্ষণ ঝড় যাবে ফোনের ভিতর”

“ধরুন ফোন টা”

“এই তুই কই,সমস্যা কি হ্যা পুরোনো হয়ে গেছি বলে আর মনে ধরে না,আমার পিছনে আরো কত ছেলেরা ঘুরে তাদের বাদ দিয়ে আমি তোর সাথে থাকি আর তুই কিনা আমাকে ইগনোর করস,সাহস কত তোর”

“আসসালামু আলাইকুম, আপনি কে বলছেন কোথায় ফোন করেছেন,মনে হয় ভুলে চলে এসেছে”

“এই আপনি কে,মজা নেন আমার সাথে আমি দিনরাতে হাজার বার এই নাম্বারে কল দেয় আর আপনি কি বলেন”

“দেখুন আপনার হয়তো ভুল হচ্ছে কোথাও আপনি যাকে খুজতেসেন এই নাম্বার তার না,এটা আমার স্বামীর নাম্বার”

“কিহহ,জাবির বিয়ে কবে করেছে, এই ফোন জাবির কে দেন,ফাইজলামি করবেন না একদম”

“দুঃখিত ফোন কাউকে দেয়া যাবে না,আপনি ভুল মানুষকে কল করেছেন, আর এভাবে কাউকে কল করে ডিস্টার্ব করবে না”

ফারাহ কল টা কেটে দিতে বললো।জাবির কলটা কেটে ফারাহ কে বললো

“এটা কি করলেন,আপনি জানেন এই মেয়ে কতটা ডেঞ্জারাস আমার আগে এখন অফিসে গিয়ে বসে থাকবে আমাকে ধরার জন্য, তখন আমি কি বলবো”

“বলবেন কাল রাতে আপনার বিয়ে হয়ে গেছে, আপনার পরিবার আপনাকে বিয়ে করার জন্য ব্ল্যাকমেইল করেছে”

“আপনি যে পাগলের ডাক্তার আমার এখন বিশ্বাস হয়েছে, কারণ আপনি নিজেও পাগল।আমি ওকে এটা বলবো আর ও এটা বিশ্বাস করবে আপনি ভাবলেন কি করে”

“বিশ্বাস না করার কোনো কারণ আছে, দেখুন আপনাকে নরমাল হওয়ার জন্য প্রথমে এই মেয়ের থেকে দূরে সরে আসতে হবে তাহলে আপনি যে মানষিক শান্তি চান সেটা নিজে নিজেই পেয়ে যাবেন,আর যদি তা না হয় তাহলে যেমন আছেন তেমনি থাকুন,ওনার ফোন নাম্বার টা দিন আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি”

ফারাহ রাগ করেছে ভেবে জাবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“ওকে সরি,আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে,কিন্তু অফিসে আমি ওকে একা সামলাতে পারবো না,আপনিও আমার সাথে আসুন”

“আমি আপনার সাথে”

“হ্যা আপনাকে যেতে হবে”

“আচ্ছা দশ মিনিট দেন আমি রেডি হয়ে আসছি”

ফারাহ তারাতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরোতে যাচ্ছিল,তখনই পিছন থেকে ফাহিম ডাক দিল।

“কোথায় যাচ্ছিস তুই নাস্তা ও তো করিস নি”

“দরকার আছে একটু তাই বাইরে যাচ্ছি”

“খেয়ে তারপর যা”

“নাহ খেতে ইচ্ছে করছে না”

“দেখ বনু আম্মুর উপর রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করিস না আম্মু রাগের মাথায় কালকে তোকে এভাবে বলে ফেলেছে”

“আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আসছি আমি”

ফারাহ বাসা থেকে বেরিয়ে দেখলো জাবির কপাল কুচকে দাঁড়িয়ে আছে ওদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে।

“চলুন চলুন একটু দেরি হয়ে গেছে আমার সরি”

“আর একটু দেরি করে আসতেন”

“চলুম তো আপনি সুযোগ পেলেই শুধু কথা শুনিয়ে দেন,এখন তো আমার মনে হচ্ছে আপনার চেয়ে বেশি আপনার গার্লফ্রেন্ডই বেশি ডিপ্রেসড্ আপনার সাথে থেকে,বাই দ্য ওয়ে তার নাম কি”

“রেণু, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন সমস্যা আমার মধ্যে, মানে রেণু আমাকে সত্যি ভালোবাসে”

“দেখি ওনাকে আগে তারপর না বুঝতে পারবো সমস্যা কার,উনি যেভাবে চিৎকার করে উঠেছিলেন আমি প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম”

“এমন ভয় আমি বহুবার পেয়েছি,দেখুন যূি ও আমাকে সত্যিই লাভ করে তাহলে আমি ওকে ছাড়বো না কারণ আমি এমন কাউকেই চাই যে আমাকে ভালোবাসবে,আমার কেয়ার করবে,একজন ছেলে মানুষ সারাদিন অফিস করে আসে,তারা চায় তাদের ওয়াইফ হোক আর গার্লফ্রেন্ড তারা একটু ভালো করে কথা বলুক,ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করুক,কিন্তু রেণু আমার সাথে কখনোই ভালো করে বলে না তাই আমি কনফিউজড, আপনি একটু আমাকে বলবেন ও আমাকে ভালোবাসে কিনা”

“আমার কাজ এটা না যে আমি আপনাকে বলবো,রেণু আপনাকে ভালোবাসে কিনা”

অফিসের সামনে রিকশা থামলো।দুজন নামার পর রেণু কোথা থেকে আসলো এতো জোরেই সে দৌড়ে এসেছে ফারাহকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে,জাবিরের সামনে দাঁড়িয়ে রেণু ওকে ধমকানো শুরু করল, রেণুর কথার উত্তর না দিয়ে ও ফারাহর কাছে গেল, ফারাহর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ওঠার জন্য, রেণু সামনে ছিল বলে ফারাহ জাবিরের হাড ধরেই উঠে দাঁড়ালো।

“বেশি ব্যাথা পেয়েছেন”

“নাহ,এটা মানুষ নাকি ভাল্লুক এভাবে কেউ দৌড় দেয়”

“এই তুই ওই মেয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এদিকে আয় আমার সাথে কথা বল”

“শুনন ওনার সামনে আপনি বলবেন না তুমি করে বলবেন,চলুন এখন ওনার কাছে”

“আপনার কি মিনিমাম কমন সেন্স নেই,আপনার জন্য আমি হাতে পায়ে ব্যাথা পেয়েছি দেখতে পাচ্ছেন”

“আপনি ব্যাথা পেয়েছেন ভালো হয়েছে ডাক্তার দেখান,জাবিরের হাত ছাড়ুন”

“কেন আমি ওর হাত ছাড়বো,ও আমার স্বামী আমার অধিকার আছে ওর হাত ধরে রাখার, তাই না জাবির”

“হুমম তাই,দেখো রেণু তোমাকে আমি আগেও বলেছি আম্মু তোমাকে পছন্দ করেনি, এ কয়েকদিন ধরে আমাকে বিয়ের জন্য অনেক প্রশার দিচ্ছিল,তাই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে চাইছিলাম”

“এতো তারাতাড়ি মেয়ে পেয়ে গেলে বিয়ের জন্য”

“আমি ওর মামাতো বোন আপু,মেয়ে খোঁজা কি দরকার পরিবারেই মেয়ে থাকতে”

জাবির বোকার মতো ফারাহর দিকে তাকিয়ে রইল।

“জাবির এসব কি সত্যি, তুমি আসলেই বিয়ে করেছো”

“হ্যা আমি বাধ্য হয়েছি,প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও,নতুন করে জীবন শুরু করো,এতো দিন আমার অনেক কেয়ার করেছো তার জন্য অনেক ধন্যবাদ”

রেণু কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল। জাবির ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললো

“আমার কোনো মামাতো বোন নেই”

“আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছি, জ্বলছে অনেক,আপনার এই রেণু অনেক জোরে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে”

“আচ্ছা আসুন কাছেই একটা ফার্মেসি আছে”

জাবির ফারাহ কে নিয়ে ফার্মেসিতে গেল।সেখানে গিয়ে দেখা গেল পা কেটে গেছে একদিকে।ব্যান্ডেজ করার সময় ফারাহ জাবিরের হাত খামচে ধরে রেখেছিল।

“আপনার ব্যান্ডেজের পর মনে হয় আমাকে ব্যান্ডেজ করতে হবে”

“কেন আপনাকে কেন করতে হবে”

“আপনি যেভাবে আমার হাতটা ধরে রেখেছেন তা দেখে মনে হচ্ছে”

জাবিরের কথা শুনে ফারাহ হাত টা সরিয়ে নিল,জাবিরের হাত থেকে। তারপর জাবির ফারাহ কে রিকশা ঠিক করে দিল বাসায় যাওয়ার জন্য। আর সে মনের আনন্দে অফিসের দিকে চলে গেল,এখন থেকে আর কেউ ফোন দিয়ে জ্বালাবেনা তাকে,ভাবতেই আনন্দ লাগছে।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃতাসনিম

ফারাহ বাসায় আসার পর নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল,দুপুরে তার মা তার জন্য খাবার নিয়ে এলো।

“খেয়ে নেও,সকালে নাস্তা করে যাও নি কেন”

“খেতে ইচ্ছে করে নি”

“এখন খেয়ে নেও”

“ভালো লাগছে না, পরে খাবো”

“এখনি খাবে,ক’টা বাজে দেখেছো”

মিনারা বেগম নিজেই খাইয়ে দিলেন ফারাহকে।খাওয়া শেষে বললেন,

“বাবা মা রাগ করে সন্তান কে কিছু বললেও সন্তানের এভাবে রাগ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করা ঠিক না,এতে কি আমার ক্ষতি হয়েছে তুমি খাও নি তোমার কষ্ট হয়েছে, শুধু শুধু খাবারের উপর রাগ দেখাবে না”

মিনারা বেগম খাবারের প্লেট নিয়ে চলে গেলেন, ফারাহ শুয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়লো।বিকেলের দিকে ঘুৃম ভাঙে তার কলেজের ফ্রেন্ডস দের ডাকে।পুরো বিকেল সন্ধ্যা তাদের সাথে গল্প করে কেটে যায়, রাতে ডিনার শেষ করে রুমে আসতেই জাবিরের গলার স্বর শুনতে পায় ফারাহ,বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই জাবির বলে উঠলো

“জানেন কি হয়েছে রেণু কি করেছে, আমি জানতাম এমন কিছু হবে,আল্লাহ এখন আমি কি করবো”

“কি হয়েছে সেটা তো বলবেন”

“রেণু আমার ভার্সিটির বন্ধু ছিল,তাই আমার সব বন্ধুদের চিনে,আমার এই বিয়ের খবর ও সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে,এখন ওরা একজনের পর একজন ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে সত্যি কিনা এখন আমি কি করবো, সকালে যদি বাসায় চলে আসে তখন তো আরেক ঝামেলা”

“আসলেই তো বড় সমস্যা এটা,এখন কি হবে”

“আপনার জন্য সব হয়েছে, এখন আমাকে আমার সমস্যার সমাধান দেন”

“হুমম ঠিকই বলেছেন, আমার জন্য সব হয়েছে আমি সব আগের মতো করে দিচ্ছি,আপনি শুধু রেণুর নাম্বার টা দিন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে”

“মানে কি আপনি বলে দিবেন আমাদের বিয়ে হয়নি আর রেণু আবার আমার জীবনকে কষ্টকর করে তুলবে না না এটা হবে না এভাবে আমার হাত ছেড়ে দিবেন না, একবার যখন ধরেছেন সহজে ছাড়া যাবে না,সমস্যার সমাধান দিতে হবে”

“আমি কি করবো”

“চলুন সত্যিকারের বিয়ে করে ফেলি”

“কিহ মাথা ঠিক আছে আপনার জাবির,এটা কিভাবে সম্ভব”

“কেন সম্ভব না, আমি ভালো একটা জব করি,এই ফ্ল্যাট টা আমাদের, গ্রামেও জায়গা সম্পদ আছে তাও আপনার বাবা রাজি হবে না ”

“এভাবে হুট করে কিভাবে সম্ভব, বিয়ে তো মুখের কথা না”

“হ্যা ঠিক আছে আমরা ছোট আয়োজনে বিয়েটা করে ফেলি, সমস্যা কোথায়”

“অনেক জায়গায় সমস্যা, আপনি কিছুই জানেন না আমার সম্পর্কে, আমি কিছুই জানি না আপনার সম্পর্কে দুজন অচেনা অজানা মানুষের কিভাবে বিয়ে হতে পারে, আর আমাদের পরিবারকে কি বলবো”

“আমাদের বাবা মার যখন বিয়ে হয়েছিল তারাও কি তাদের চিনতো, বিয়ের একজন আরেকজন সম্পর্কে জেনেছে,চিনেছে আমার তো মনে হয় এটাই ভালো, নাকি আমার একটা রিলেশন ছিল বলে আপনি রাজি হতে চাইছেন না,কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বা রেণু কেউই কখনোই এই রিলেশন নিয়ে এতোটা সিরিয়াস ছিল না,কিন্তু রেণুর অন্য রকম একটা রাগ আমার উপর তাই সে এমন আমার পিছনে পড়ে থাকে সমস্যা সৃষ্টির জন্য”

ফারাহ চুপ করে দোলনায় বসে পড়লো,বাসায় কি বলবে সেটা বুঝতে পারছিল না।ওকে চুপ করে থাকতে দেখে জাবির বললো,

“দেখুন আপনি টেনশন করবেন না, আমি দেখবো সবকিছু শুধু আপনি বলুন আমাকে বিয়ে করবেন তাহলে আমি আমার বন্ধু দের বোঝাতে পারবো যে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে কিন্তু রেণুর জ্বালার থেকে বাঁচার জন্য বলেছি বিয়ে হয়ে গেছে”

“দেখুন আপনি আমাকে ভেবে চিন্তে বিয়ে করার কথা বলছেন তো কখনো বলবেন না তো তাড়াহুড়োয় আমাকে বিয়ে করাটা আপনার জীবনের বড় ভুল ছিল,কখনো আমাকে একলা ছেড়ে দিবেন না তো”

“আপনি কি বলছেন ফারাহ আমি আপনাকে যতদিন দেখেছি আমার আপনাকে খারাপ মনে হয়নি আপনি একজন শিক্ষিত, ম্যাচিউরড্ মানুষ, হ্যা হয়তো খুব বেশি দিন আমি আপনাকে চিনি না,তাও আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনাকে আমি কখনো একলা ছাড়ার তো প্রশ্নই উঠে না কারণ বিয়ের পর আমি আপনার স্বামী হয়ে যাবো আর একজন স্বামী তার স্ত্রী কে কখনো একলা ছাড়ে না আমি তো কখনো দেখি নি আর যদি ভুল বোঝার কথা কখনো আসে তাহলেও আমি আপনাকে কিছু বলবো না তাও এখন আমাকে বাঁচান,প্লিজ”

“আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন আমি কিছু বলবো না”

“ঠিক আছে থ্যাংক ইউ”

জাবির জানালা থেকে দূরে সরে গিয়ে কি যেন করতে লাগলো।ফারাহ চুপ করে বসে রইলো।বিয়ের মতো এতো বড় একটা ব্যাপার তার জীবনে এভাবে হুট করে চলে আসবে সে কখনো ভাবতেই পারেনি,তার বাবা মা কি রাজি হবে কি বলবে সে তাদের সত্যিটা তো জানানো যাবে না,কেন সে বিয়ের কথা রেণুকে বলতে গেল,অন্য কিছু বললেও তো আজ এই সমস্যার মুখে পড়তে হতো না,এতোকিছু ভেবে তার মাথা কেমন ভনভন করতে লাগল, ফারাহ দোলনা থেকে উঠে রুমের ভিতর গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম ভাঙলো ফাহিমের ডাকে,ফারাহ ঘুম ঘুম চোখে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো

“কি হয়েছে চিল্লাচ্ছিস কেন ভাই,একটু ঘুমাতে দে”

“আরে মিয়া রাখো তোমার ঘুম,তুমি কি জিনিস রে বাবা আচ্ছা আমাকে আজ-অব্দি কেন কেউ এভাবে দুদিনের দেখায় ভালোবাসলো না”

“ভাইয়া কি বলছিস খুলে বল না হলে যা ঘুমাতে দে আমাকে”

“আরে আমাদের পাশের ফ্ল্যাট টা আছে না ওই বাড়ির মালিকের ছেলের নাকি তোকে দেখেই পছন্দ হয়েছে, তোর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে তাদের বাড়ি থেকে, বিকেলে ছেলের মা আর বোন আসবে দেখতে”

ফারাহ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“আম্মু আব্বু কি বললো”

“তারা দেখতে আসতে চায় শুনে আব্বু আম্মু কিছু বলেনি,তাছাড়া এই ফ্ল্যাটের যিনি মালিক তার সাথে তো আব্বুর অনেক দিন ধরেই ভালো বন্ধুত্ব,তার ছেলেও ভালো,তাই আব্বু আম্মু কিছু বলে নাই”

“মানে আব্বু আম্মু রাজি এ বিয়েতে”

“হ্যা মোটামুটি বলতে পারিস কেন তোর আপত্তি আছে”

“আমার নাহ আমি কি বলেছি আমার আপত্তি আছে, আমার তো নীল কে বিয়ে করতে ও আপত্তি ছিল না কিন্তু নীলও চাই নি বলে আমি না করেছি”

“আচ্ছা তাহলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আম্মুর সাথে কথা বল”

“হুমম”

ফাহিম ফারাহর রুম থেকে চলে গেল। ফারাহ বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেল, কিন্তু জাবিরের রুমের জানালা বন্ধ করা।জাবির বললো আর ওর বাবা মা রাজি হয়ে গেল ও কি এমন বললো।

বিকেলে….

মিনারা বেগম ফারাহ কে একটা ফিরোজা কালার শাড়ি পরিয়ে নিজে রেডি করলেন,বাসার পাশে এত ভালো একটা ছেলে পাওয়া গেছে বলে তারা আপত্তি করলেন না।

জাবিরের মা আর জাহরা আসলেন ফারাহকে দেখতে। ফারাহ তাদের সালাম দিয়ে সামনে বসলেন।

“বাহ আপা মেয়ে তো মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর, এতো সুন্দর, লক্ষ্মী একটা মেয়ে সহজেই পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি,এমন একটা মেয়েই তো আমার ছেলের জন্য খুজতেছিলাম”

“হ্যা আমরাও তো একটা ভালো ছেলেই আমাদের মেয়ের জন্য খুজছিলাম,জাবিরের কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আপা সত্যি বলতে গেলে,ভালোই হয়েছে যে বিয়ে করবে তারই যখন ফারাহকে পছন্দ হয়ে গেছে এখন আর আমরা কি বলবো”

“হ্যা আপা আমি তো ভেবেছিলাম এ ছেলে জীবনে বিয়েই করবে না,ওর যে ফারাহকে পছন্দ হয়েছে শুনে আমার যে কি আনন্দ লেগেছে”

“ভাবি তুমি লন্ডন থেকে কবে এসেছো”

“এক সপ্তাহ হবে”

“লন্ডন অনেক সুন্দর তাই না”

“হুমম”

“হয়েছে জাহরা থামো এখন,আপা ভাই যে বাইরে গেল আসছে না যে আজকে আংটি টা পড়িয়ে যেতে চায়, তারপর ভালো দিন দেখে বিয়েটা দিয়ে চারহাত এক করবো ইনশাআল্লাহ”

তখনই লতিফ চৌধুরী বাসায় চলে আসলেন,উনি আসার পর জাবিরের মা ফারাহকে আংটি টা পড়িয়ে দিলেন।আর বলে গেলেন জাবিরের বাবা আসলে তারা সবাই একসাথে বসে বিয়ের ডেইট ঠিক করবেন।

তারা চলে যাওয়ার পর ফারাহ রুমে চলে আসলো, আংটি টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবলো,খুব কি ক্ষতি হতো যদি আজ এই আংটি টা শাহিনের মা তাকে পড়িয়ে যেত।তারপর আবার নিজেকে শক্ত করে নিল ফারাহ শাহিনকে নিয়ে সে ভাববে না,জাবিরের সাথে শাহিনের কোনো তুলনায় হয় না,জাবির অন্তত ফারাহ কে সম্মান তো করে,ভালো না বাসলেও।

#চলবে