প্রেমদ্বন্দ্ব পর্ব-০৭

0
83

#প্রেমদ্বন্দ্ব_৭
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

মেমোরি কার্ডটাতে আর্ভিনের দেখানো প্রমাণ, দলিলপত্র, স্বাক্ষর, যাদের নাম উল্লেখ ছিল তাদের কাউকেই অনন্যা এর আগে চিনতো না। যাদের দিকে সন্দেহের তীর ছুঁড়েছে তারাও অস্পষ্ট ছিল তার কাছে। এবং পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে সে জানতে পারে এরা একেকটা বিখ্যাত শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ী। আইনকে কিনে নিয়ে পায়ের তলায় পিষে ফেলার মতো ক্ষমতা তাদের আছে।
বুদ্ধিমান মেজর মেহযেব আর্ভিন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়াও চারজন পুলিশ অফিসারের নাম এবং তিনজন ঔষধ কোম্পানির ফাউন্ডারের নাম উল্লেখ করেছিলেন । উনার পাওয়া তথ্যমতে এরাও যুক্ত আছে এই অপকর্মের সাথে। তাদের সবকটার ব্যবসা এবং কাজ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এবং অবৈধভাবে তারা অন্যদেশ হতে তা নিয়ে এসে তাদের ব্যবসায়ে লাভবান হচ্ছিলো দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে। এমনকি সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চার জন্য বিক্রি করা দুধের মধ্যেও তারা মেশাচ্ছিলো ক্ষতিকর রাসায়ানিক।
নিত্যনতুন রোগ আবিষ্কার আর সেই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিত্যনতুন অবৈধ মেডিসিনের আবিষ্কারের দরুন হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছিলো।
হাসপাতালের মর্গে থেকে লাশ চুরির ঘটনা বহুদিন পর জনসাধারণের সামনে এলেও এমন অসংখ্য ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে চলেছে জনসাধারণের আড়ালে। মানব কিডনির অবৈধ পাচারে যুক্ত হসপিটাল অথরিটি থেকে শুরু করে আইনের লোক অব্দি জড়িত থাকায় দিনকে দিন অবিশ্বাস্যভাবে বিস্তার লাভ করেছে এই কুখ্যাত ব্যবসায়ীগুলো। এদের সাথে লড়তে গেলে অনেক পরিকল্পনার সাথে এগোতে হতো। তার আগেই সে জানতে চেয়েছিলো ওই আসল খুনীদের সাথে কোন পুলিশ অফিসারেরা যুক্ত ছিল। এবং সে সাজিদ আর এসএসপি কামরুল হাসান ছাড়া বাকি সবাইকে সন্দেহের তালিকায় এনেও স্বস্তি পায়নি। এবং ভয় পেয়েছিলো যদি এসএসপি কামরুল হাসানও এই দলের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে আহাদের জীবন মরণ সংকটে।

তাছাড়া আর্ভিনের সমস্ত তথ্যাদি ভালো করে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখলে সন্দেহের তীরটা আনোয়ার মীর্জার দিকেও আসে। তিনি বাদে সবকটা মেডিসিন কোম্পানির মালিকদের নাম ওই দলিলে উল্লেখ করা ছিল। ডিএসপি সাজিদের সাথে কাকার একটা মজবুত সম্পর্ক ছিল যার কারণে সন্দেহটা আনোয়ার মীর্জার দিকে গিয়েছিলো।
মীর্জা বাড়িতে আসার পর সবার ইশারা ইঙ্গিতে সে বুঝেছিল জিহার জন্য সাজিদকে পছন্দ করে রেখেছেন আনোয়ার মীর্জা। এইসব কিছু ভাবতে গিয়ে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তার মানসিক ব্যাধি আরও বেড়ে গিয়েছিলো। আহাদের চারপাশে একটা ষড়যন্ত্রের জাল যে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে ভেবেই সে অশান্তিতে ভুগছিলো এবং তারমধ্যে আর্ভিনস্বত্বার কথা ভেবে একেবারেই চুপসে গিয়েছিলো সে।

মেজর মেহযেব আর্ভিনের খুনীদের ধরার জন্য তদন্ত থামিয়ে দিলে হয়ত আহাদের প্রাণসংশয় কেটে যাবে, মেহযেব আর্ভিনকে খুন করার পর যেভাবে তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে আরও একবার আহাদ আলভীকে খুন করে নিজেদের দিকে সন্দেহ সৃষ্টি করতে নিশ্চয়ই চাইবে না তারা। এই কেসটা চাপা পড়ে গেলে আহাদ ষড়যন্ত্র মুক্ত হবে এবং আর্ভিনস্বত্বা তার কাছে থেকে যাবে। মেমোরি কার্ডটা আহাদের হাতে তুলে দেয়া মানেই যে তার পরিবার এবং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া তা ভেবে অনন্যা চুপচাপ লক্ষ করছিলো ডিএসপি সাজিদ এবং আনোয়ার মীর্জাকে। তার কাছে মেমোরি কার্ডটা আছে জানার পর তাদের চোখেমুখে যে ত্রাস দেখা গিয়েছিলো তা দেখে মানসিক ব্যাধিতে ধীরেধীরে ঢলে পড়া অনন্যা ইয়াসমিন ভারী মজা পেয়েছিলো। অপরাধীদের ছাড় দেয়ার পক্ষে সে না থাকলেও আহাদের জীবন সংশয় নিয়ে সে যথেষ্ট চিন্তিত ছিল। আপাতদৃষ্টিতে তাদের চোখে ধূলো দিয়ে তান্ডব থামিয়ে এনে তারপর একে একে সবকটার মুখোশ খুলে আইনের হাতে তুলে দিত সে। যদি সেই আইনের রক্ষক এসএসপি কামরুল হাসানও যুক্ত থাকে তাহলে আইন নিজের হাতে নেয়া ছাড়া আহাদের সামনে আর কোনো পথ থাকবে না আত্মরক্ষার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে নিজের ভেতর পুষে রাখা ক্ষোভ সে নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও মিটিয়ে নেবে একথা অনন্যা ছাড়া আর কে জানতো? জেনেশুনে এমন ঝুঁকি সে কখনোই নিতে চায়নি। একজন স্বামীপাগল স্ত্রী নিশ্চয়ই চাইবে না তার কারণেই তার স্বামীর জীবনটা জড়িয়ে যাক ষড়যন্ত্রের নির্মম বেড়াজালে যেখানে মৃত্যু অথবা আইন হাতে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

কিন্তু অপরদিকে মেমোরি কার্ডটা হাতে পাওয়ার পর আহাদের কাছে শুরু থেকেই সবটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর্ভিনের উল্লেখ করা সমস্ত ষড়যন্ত্রকারীদের সে চেনে এবং তাদের সাথে আগেও এখনো দ্বন্দ্ব লেগে আছে আহাদের সাথে। এবং যাদের নাম সন্দেহের তালিকায় আছে সেখানে নিজের জন্মদাতা পিতার নামও চলে আসে এমএ ঔষধ কোম্পানির মালিকের নাম হিসেবে। সেই হিসেবে গত বছর দুই যাবত আনোয়ার মীর্জাই এমএ ঔষধ কোম্পানির মালিকের জায়গায় রাজত্ব করছে।
ভাইয়ের খুনীর কেস তদন্ত করতে গিয়ে কাকার কাছে বারংবার বাঁধা পাওয়া, এবং সাজিদের সাথে কাকার একমতাবলম্বী সম্পর্ক চোখের সামনে ভেসে উঠার পর এসপি আহাদ আলভীর কাছে সবটা ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো কোনো দ্বিধা ছাড়াই। কাকা বরাবরের মতোই তাদের দুই ভাইয়ের পেশা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। অন্যদিকে ডিএসপি সাজিদ তাকে হিংসে করতো সবকিছু দিয়ে সে এগিয়ে থাকতো বলে। একইসাথে পড়াশোনা, একই সাথে বেড়ে উঠার পরেও কর্মস্থলে অল্পদিনেই দায়িত্ববান, নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া আহাদ আলভীকে হিংসা করার যথেষ্ট কারণ ছিল সাজিদের কাছে। তারমধ্যে ডক্টর অনন্যা ইয়াসমিনের পরিবার থেকে প্রত্যাহার পাওয়াটা গায়ে গরম তেল পড়ার মতো যন্ত্রণার ছিল তার জন্য। যদিও আহাদ বিয়ের আগে একথা জানতো না, এসএসপি কামরুল হাসান ঠাট্টা করে একথা না বললে জীবনেও একথা সে জানতে পারতো না। এমনকি অনন্যাও তা সম্পর্কে বিদিত নয়। কিন্তু পরে জিহার সাথে সাজিদের বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাওয়ায় আহাদ সেকথা ভুলে গিয়েছিলো। এছাড়াও আনোয়ার মীর্জা আর সাজিদের আরও অনেক কারণ আছে মেজর মেহযেব আর্ভিনকে খুন করার পেছনে। আইনের অপব্যবহার করে তাদের অবৈধভাবে উপার্জনের পথে বিষকাঁটার মতো উপদ্রব ঘটিয়েছিলো মেজর মেহযেব আর্ভিন। দুই ভাই একত্রে তাদের ধ্বংস করার মিশনে নামলে যে তাদের সবারই পতন নিশ্চিত সেটা ভেবেই মূলত এতবড় হত্যাকান্ডটা ঘটিয়েছিল তারা নির্ভুলভাবে।
কিন্তু এমন সংকটের দিনে এসএসপি কামরুল হাসানই ছিল আহাদের ভরসা। অনন্যাকে পাঁচদিন যাবত তন্নতন্ন করে খোঁজার পর কোনো খোঁজ পায়নি আহাদ। এই পাঁচদিন যাবত আনোয়ার মীর্জা রাজধানীর একটা বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। তিনি সন্দেহ করছিলেন আহাদের হাতে মেমোরি কার্ডটা যদি পড়ে থাকে তাহলে সবটা শেষের পথে। এদিকে ভাড়াটে গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া অনন্যা কোথায় অবস্থান করছে তারা সে ব্যাপারেও কিছু জানেনা। আহাদের কাছেও তারা স্পষ্ট করেছে অনন্যা তাদের কাছে নেই। তারা চাইলেও অনন্যার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর আহাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসএসপি কামরুল হাসানকে সব সত্যি বলে দেবে। কিন্তু তারমতো দুরন্ধর শয়তানের হাত বহুদূর অব্দি বিস্তৃত থাকায় মেজর মেহযেব আর্ভিনের সন্দেহের তালিকায়ও জায়গা হয়নি তার। আর এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে সবচাইতে অসহায় লাগছিলো তার। নিজেকে এতটা অসহায় আজ অব্দি কখনো মনে হয়নি তার।

আনোয়ার মীর্জার দিকে ক্ষোভসমেত তাকিয়ে, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক বলতেই তিনি হেসে কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললেন,
– শেষ ইচ্ছেটা বলে ফেল। তোকেও মরতে হবে তোর ভাইয়ের মতো।
আহাদ কাঁধ থেকে হাতটা ঝেড়ে মুখ বরাবর ঘুষি বসিয়ে দিল তৎক্ষনাৎ।
– তোরা মরবি। তোরা সবকটা মরবি।
বলেই আনোয়ার মীর্জার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল ঘুষি দিতেই সাজিদ তাকে আটকে ফেললো। দুহাত পেছনে চেপে ধরতেই আনোয়ার মীর্জা উঠে এসে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে অনবরত ঘুষি মেরে গলা চেপে ধরে বলল,
– তোকে অনেকবার সতর্ক করেছি। পিছু লাগিস না। কিন্তু তুই শুনিসনি। তোর ভাই মরেছে, বউ মরেছে। এবার তোর পালা।
আহাদ ধস্তাধস্তি করতে করতে হাঁটু দিয়ে জোরে আনোয়ার মীর্জার বুকে লাথি মারলো। তিনি দূরে ছিটকে পড়লেন। সাজিদকে ঘুরিয়ে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে পিস্তল বের করে কামরুল হাসানের দিকে তাক করে বলল,
– আমি তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। এইসব জানোয়ারের কাছে তুইও বিক্রি হয়ে গিয়েছিস। তোর জঘন্য মৃত্যু হওয়া দরকার।
সাজিদ বলল
– গুলি নামা। তুই একটা ছুঁড়লে তোর বুকে দশটা গিয়ে বিঁধবে।
আহাদ চুপ করে থাকেনি। কামরুল হাসানের দিকে পিস্তল তাক করে ট্রিগারে চাপ দিতেই রক্ত ছিটকে এল তার মুখে। হাত চেপে ধরে বসে পড়লেন কামরুল হাসান। টেবিলের উপর রাখা সাদা কাচের গ্লাস ভেঙে সাজিদের দিকে ছুঁড়ে মারলো আহাদ। আনোয়ার মীর্জার হাতটা পা দিয়ে চেপে চেয়ার টেনে এনে মাথায় বসিয়ে দিল জোরে। ভাঙা গ্লাসটা সাজিদের বুকে রক্তের ঢল নেমেছে। লোহার ভারী চেয়ারের আঘাতে আনোয়ার মীর্জা মেঝেতে ঢলে পড়লেও কামরুল হাসানের অক্ষত হাতটা একটা গুলি ছুঁড়ে দিল আহাদের হাতে। আরও একটা গ্লাস তুলে কামরুল হাসানের মুখ বরাবর ছুঁড়ে দিয়ে গুলি বিদ্ধ হাতটা নিয়ে কোনোমতেই বেরিয়ে এসেছিলো সে। কামরুল হাসানের বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত থেকে ছোঁড়া আরেকটা গুলি তার কাঁধে লেগেছিলো। ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে সে আড়াল হয়ে গেল নিরাপত্তা রক্ষীদের দৃষ্টি সীমানার বাইরে। তারপরের দিন খবরের পাতায় বড়সড় শিরোনামটি তাকে ঘিরে লেখা হয়েছে। এসএসপি কামরুল হাসানের বাসভবনে আকস্মিক হামলাকারী এসপি আহাদ আলভী পলাতক।
আহাদ আলভীর মতো মানসিক বিকারগস্ত এসপি দেশের জন্য, দশের জন্য ভয়ানক। সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হলে কখনোই উনার সিনিয়র অফিসার এবং বন্ধু ডিএসপি সাজিদকে এমনভাবে আহত করে পালিয়ে যেতে পারতেন না। পুলিশ উনাকে খুঁজে চলেছে। দেখা যাক কি হয়।
সাংবাদিকদের জেরার মুখে কামরুল হাসান এরূপ মন্তব্য পেশ করেন হাসপাতালের বেডে থাকাকালীন। এও বলা হয় তাকে আটকাতে আপন চাচা আনোয়ার মীর্জা ছুটে গিয়েছিলেন এসএসপি সাহেবের বাসভবনে। সেখানে তিনিও আহত হন এসপি আহাদ আলভীর হাতে। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে তিনি শয্যাশায়ী।

বাবার কাছে ছুটে এসেছিলো জিহা। আর্ভিনরূপী আহাদ আলভীর হাতে বাবা আহত বললে সে নির্ধিদ্বায় বিশ্বাস করে নিত, কিন্তু সুস্থ সবল আহাদ আলভীর গায়ে এমন তকমা সে কিছুতেই মানতে পারছিলো না। যাদের দোকানে সিল মেরেছিলো আহাদ তারা সকলেই বিক্ষোভ সৃষ্টি করলো তার জন্য। চারিদিকে এসপি আহাদ আলভী নামটা শোনা যাচ্ছিলো। সবাই বলাবলি করছিলো আইনের রক্ষক একজন সাইকো হয়ে গেলে আপামজনতার জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে?
অসুস্থ জানার পরও তাকে কাজে এলাউ করার বিষয়টাই কামরুল হাসানকে বাঁচিয়েছিলো সন্দেহের হাত থেকে। যার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা জানার পর কাজের সুযোগ দেয়া হলো সে কিনা এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করলো তার সিনিয়র অফিসারের সাথে? ভাইয়ের খুনের বদলা নিতে গিয়ে বহুদিন ধরে মানসিক রোগে আকান্ত আহাদ আলভী এখন সবার জন্য আতঙ্ক এবং ঝুঁকির।

নিজের জন্মদাতা, হবু স্বামীর মুখ থেকে ভাইকে নিয়ে শোনা কথাগুলো জিহার অবিশ্বাস্য লাগছিলো। আর্ভিন রূপে ফিরে আসার পর ভাইয়া খুব হাইপার থাকতো ঠিক, কিন্তু আগের মতো জিনিস ভাংচুর, গায়ে হাত তুলতো না যদি না তাকে কেউ উশকে দিত। কিন্তু ঘটনাস্থলে ভাঙা গ্লাসের টুকরোগুলো প্রমাণসরূপ কথা বলছিলো। তারপরও কোথাও একটা খটকা রয়ে গেল জিহার মনে। জেম্মা আর বড়আব্বাকে সে একাই দেখভাল করে। এখন তাদেরকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি ভুল করে হলেও ভাবি চলে আসতো! ভাইয়াও কোথায় গা ঢাকা দিয়ে রেখেছে কে জানে? সে সুস্থ হওয়ার পথে হাঁটছিলো। এতবড় ঘটনার পর নিজেকে সামলাতে না পেরে সে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়বে তা সম্পর্কে জিহা নিশ্চিত। কিন্তু কোথায় সে? এসপি আহাদ আলভী নিজেকে সামলাতে জানলেও আর্ভিনরূপী আহাদ আলভী নিজেকে সামলাতে পারেনা। সেই ক্ষমতা তার নেই। জিহা খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমানের বাড়ি অব্দি পৌঁছে গিয়েছিলো। জিহা স্বস্তি পেল এই ভেবে তৌহিদুর রহমানও এসপি আহাদ আলভীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের একটাও বিশ্বাস করেনি। এমনকি এসপি আহাদ আলভী ও ডক্টর অনন্যা ইয়াসমিনকে তিনি যে করেই হোক খুঁজে বের করে আসল সত্যিটা সবার সামনে আনবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।

সাতদিনের মাথায় অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা ঘটে গেল। ভিকে মেডিসিন কোম্পানির ফাউন্ডার বখতিয়ার সাঈদির লাশ পাওয়া গেল উনারই বাসভবনে ওয়াশরুমের ভেতর। তাও জঘন্যভাবে কো**পানো হয়েছে উনার দে**হ*টাকে। এমনকি মাথার খু**লি পর্যন্ত বের করে ফেলা হয়েছে। গোপনসূত্রে তৌহিদ জানতে পারলো
এই বখতিয়ার সাঈদিই এসপি আহাদ আলভীর শাস্তি চেয়ে রাস্তায় মানুষ নামিয়ে দিয়েছিলো বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য।
কিন্তু সেদিন উনার মতোই একজন ব্যবসায়ীর সাথে উনার দ্বন্দ্ব লেগেছিলো। দুই পক্ষের লোকের মধ্যে হাতাহাতিও লেগেছিল।
আপাতদৃষ্টিতে খুনের পেছনে সেই ব্যবসায়ীর হাত আছে বলে সন্দেহ করছে সবাই। কিন্তু এসএসপি কামরুল হাসান আর সাজিদ জানে মেজর মেহযেব আর্ভিনের হত্যাকান্ডের পেছনে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল বখতিয়ার সাঈদী। যথোপযুক্ত প্রমাণ না থাকায়, সন্দেহের কারণ ঘাটতে গিয়ে তাদের নামও বেরিয়ে আসবে ভেবে তারা চুপ করে ছিল। কিন্তু তারা ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল, খুনটা এসপি আহাদ আলভিই করেছে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জানতে পারেনি ঠিক একই দিনে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আফসার উদ্দিনকেও কোপানো হয়েছে জঘন্যভাবে। উনার প্রাইভেট কারের ভেতর না*ড়ি*ভুঁ*ড়ি বের করা র**ক্তাক্ত লাশটা উদ্ধার করেছিল গোয়েন্দা সংস্থা। আর অভিযোগ উঠেছিলো তার গাড়ির ড্রাইভারের উপর। কারণ সে পলাতক। ঠিক এই জায়গায় এসে কোনো হিসেব মিলাতে পারেনি এসএসপি কামরুল হাসান।

চলমান…