প্রেম তরঙ্গ পর্ব-০৪

0
231

#প্রেম_তরঙ্গ
#আলিশা
#পর্ব_৪

তিতাস চোখ মুখ শক্ত করেই মিষ্টি খেলো। আমি আহত নয়নে দেখে গেলাম। মিষ্টি খাওয়ানোর পর্ব শেষে সকলে বিদায় হলো গেট থেকে। একে একে ভীর কমলো। ক্যারেন আলতো করে আমার আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল রেখে আহ্বান করে বলল

— চলো

আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। বড্ড উৎফুল্লমনা সে। আমার রাগ হলো। আমি এক ঝাড়িতে তার থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলে উঠলাম

— একদম আমায় টাচ করবেন না। আর একবার যদি আপনি আমায় টাচ করেন না তাহলে আমি এই বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দেবো। মরেই যাবো।

হঠাৎ আমার উত্তেজিত হওয়ায় ক্যারেন হতভম্ব হয়ে গেলো। আমি আবারও বলে উঠলাম

— নিয়েই তো যাচ্ছে আপনার বোনকে। ইচ্ছে তো পূরণ হয়েছে আপনাদের ভাই বোনের। এবার আমাকে মুক্তি দিন। আমি চলে যাবো এখান থেকে। আপনাকে দেখলেই আমার গা জ্বালা করে। আই হেইট হউ।

ক্যারেন কিছু বলছে না। সে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি চোখের পানি মুছে নিয়ে তাকে উপেক্ষা করে পা বাড়ালাম সামনের দিকে। ঠিক তখনই আবারও এক বিরক্ত এসে জেঁকে বসলো। ক্যারেনের চিরচেনা আক্রমণ। সে তার পা দিয়ে চাপ দিলো আমার পায়ে। আমার পায়ের ওপর তার জুতো পরিধানের পা রেখে থমকে দিলো আমায়। তার এই কাজটা আমার কাছে চরম অসভ্য আর অভদ্র লাগে। আমি ফিরেও চাইলাম না। নিজের অবস্থার এতোটুকু পরিবর্তন না করে পা উন্মুক্ত করতে চাইলাম। সেদিন ছাদে ইচ্ছে করে তিতাসকে ডেকে এনে আমার অজান্তে আমার ঠোঁ*ট স্পর্শ করে তিতাসের চোখে আমায় খারাপ করে দেয়। আমি ছিলাম ক্যারেনের মুখোমুখি। তিতাস ছিল আমার পেছনে। পরনে শাড়ি থাকায় ক্যারেনের হাত ছিল আমার কোমড় পেচিয়ে পেটে। আর তার অপর শক্ত হাতে বন্দী ছিল আমার দু’হাত। ঠিক সেই মুহূর্তে আবার কানে আসে ক্যারেনের ছোট মায়ের কন্ঠ। তারপরই তড়িৎ গতিতে ক্যারেন আমায় ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়। আমি ছিটকে পরতে পরতে বাঁচি। তিতাসের সাথে ধাক্কা খাই। ক্যারেনের সতমা জানায় কণা সুইসাইডের উদ্দেশ্যে ঘুমের ওষুধ খেয়েছে পাঁচ সাতটা। ক্যারেন দৌড়ে চলে যায়। তিতাস অনুভূতি শূন্য হয়ে দাড়িয়ে ছিল আমার সামনে। আমি ভয়ে, লজ্জায় আর শঙ্কায় মুখে বুলি আনতে পারিনি। সবশেষে তিতাস ছলছল আঁখি নিয়ে প্রস্থান করে আমার সম্মুখ হতে।

— টিটি আই ওন্না লাভ হউ

ক্যারেনের কথায় ভাবনা ছেড়ে বর্তমানে প্রবেশ করলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে ফিরে বললাম

— ডু ইউ নো? হোয়াট মিনস লাভ?

— আই নো। লাভ ইজ অ্যা ফিলিং।

ক্যারের এহেন কথার পিঠে আমি নীরব রইলাম। বলতে ইচ্ছে করলো অনেক কিছুই। কিন্তু শুধুই ঝাঁক ঝাঁক অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই প্রকাশ করতে পারলাম না। সে যদি ভালোবাসার মানে বুঝতে তাহলে অন্যের ভালোবাসা এভাবে ছিনিয়ে নিতো না।

.
তিতাস আর কণার আবার বিয়ে হলো। কণা সুইসাইড করলে তাকে হসপিটালে নিয়ে গেলে সেখানে তিতাস কণাকে বিয়ে করে। কণা তিতাসের জন্যই সুইসাইড করতে চেয়েছিল। তিতাস যখন ছাঁদে আমায় প্রপোজ করে তখন নাকি কণা সবটা দেখেছিল। অতঃপর আমি বুঝেছি কণা ক্যারেনকে এসব বলে। ক্যারেন তাই সস্তা এক ফন্দি করে আমায় তিতাসের চোখে হীন করে তোলে। আরো শুনেছি ক্যারেন তিতাসকে বলেছে তার সাথে আমার দুই মাসের গোপন রিলেশন চলছে। একথা তিতাস স্বচ্ছ পানির মতো ভেবে বিশ্বাস করে নিয়েছে! আজব! বড্ড আজব! বিশ্বাস বুঝি তার এতোটুকুও নেই আমার প্রতি। আমি তিতাস কে বোঝাতে চাইলে সে বলেছিল

” ছাঁদে যেটা নিজ চোখে দেখলাম তা নিশ্চয়ই কোনো সিনেমার শুটিং ছিল না বা তোমার প্রেতাত্মা ছিল না। ”

তার এই কথাতেই আমি স্তব্ধ ছিলাম। আর কি বেঝাতাম তাকে? সে বড্ড বাঁকা স্বভাবের। নিজে যা একবার ভেবে নেবে তাই যেন সত্য, সঠিক। বাকিসব ধুলোয় মলিন।

.
ক্যারেনের সাথে বাধ্য হয়ে আমার বাড়ি ফিরতে হলো। আমি তাকে মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম আমি চলে যেতে চাই তাকে ছেড়ে। কিন্তু সে আমায় পাত্তা না দিয়ে আমার ফোন পার্স নিয়ে রেখে দিলো নিজের কাছে। তিতাস বিদায় নিয়েছে আমার সামনে দিয়েই। কণার আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল রেখে। আমি পুরোটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিলাম। ক্যারেন বোনকে চেখের জলে বিদায় দেয়। কণা যেন মুখ তুলে তাকানোর সাহস পায়নি। আমার দিকে একবারও তাকায়নি।

— টিটি… সরি।

বেলকনিতে দাড়িয়ে বলতে গেলে আমি দুঃখ বিলাশ করছিলাম। এমন সময় ক্যারেনের কন্ঠ। আমি পাশ ফিরে চাইলাম। রুমের মৃদু আলোয় ক্যারেনকে দেখতে আমার বেগ পেতে হলো। ধবধবে শরীরে কালো টিশার্ট জড়ানো ক্যারেন আমার পাশে দাড়িয়ে আমার চোখে চোখ রেখেছে। আমি ফিরিয়ে নিলাম দৃষ্টি। কেটে গেলো প্রায় মিনিট তিনেক। তারপর হুট করে অনুভব করলাম আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে ক্যারেন। আমি রাগে তড়িৎ গতিতে দূরে সড়তে চাইলাম। ক্যারেন এবার হাতের বন্ধন শক্ত করে আরো কাছে নিলো আমায়। আমি ডুকরে কেদে দিলাম। ভয় পেলাম তার আচরণে। সে বলে উঠলো

— আমআর বাংলার টিচার হলে কি অনএক খতি হবে? আমার সাথে ঘড় বাডলে কিই…. অন্যায় হবে?

আমি ক্যারেনের প্রশ্নের প্রত্তুরে কেবলই কান্নারত কন্ঠে বললাম

— আমি আপনাকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলেছি।

ক্যারেন শুনলো কি শুনলো না আমার কথা আমি জানি না। তবে সে ওভাবে থেকেই মলিন আলোয় কিছুসময় দেখে গেলো আমাকে। তারপর হাতের বন্ধন খুলে চলে গেলো রুমে। একটুপর ঘরজুড়ে নেমে পরলো গাঢ় অন্ধকার। সে আলো নিভিয়ে শুয়ে পরলো। আমি ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম বেলকনিতে।

.
পরদিন সকালে নিজেকে ঠিকই বেডে আবিষ্কার করলাম। কিন্তু আমি ঘরে এসে শুয়েছিলাম সোফায়। বুঝতে অসুবিধা হলো না ক্যারেন এনেছে এখানে। পাশ ফিরে চাইতেই দেখি সে ঘুমোনো। কপাল কুঁচকে রাখা। আমার মুহূর্তেই মনে পরে গেলো তিতাসের কথা। ভেতরটা হুহু করে উঠলো আমার। তিতাসও বুঝি এভাবে ঘুমাচ্ছে আর কণা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তাকে। ভাবনার মাঝে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে এখন তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গোছাতে ব্যাস্ত আমি। আমি চাইছি ক্যারেন ঘুম থেকে ওঠার পূর্বেই আমি নাই হয়ে যাবো। আশাকরি ক্যারেন খুঁজতে যাবে না। সে আমায় ভালোবাসে না। শুধু দয়া দেখিয়ে বাসতে চায়। তারপর আমি তো জানি! দু একদিন সংসার করে সে পারি জমাবে আমেরিকায়। আমি যে শূন্য শূন্যই রবো। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি তো ঘৃণা করি। ঘর বাঁধার প্রশ্নই ওঠে না!

নিজের সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিতে চাইলে আমার মোট তিনটে ব্যাগ লাগবে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু নিয়ে শুধু একটা ব্যাগ পূর্ণ করলাম। কাজ তাড়াতাড়ি সারতে ঝটপট বোরখা পরপ নিয়ে ছুটে গেলাম আলমারির কাছে। ক্যারেনের শার্ট প্যান্ট হাতাতে হবে। আমার ফোন, পার্স! আলমারির সমস্ত কাপড়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন পার্স খুঁজলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত পেলাম না। ফোনও নেই পার্সও নেই। তবে একটা ওয়ালেট পেয়েছি। সেখানে আছে বেশ কিছু টাকা। নেওয়া কি ঠিক হবে? আমার ঢাকা থেকে রংপুর যেতে মোটামুটি আপদবিপদ মিলিয়ে এক হাজার টাকা নেওয়া বাঞ্ছনীয়। ভাবনার মাঝে বিছানার দিকে দৃষ্টি রাখলাম। ক্যারেন নড়েচড়ে উঠলো। আমি সব ভাবনা ফেলে ঝটপট ওয়ালেট থেকে এক হাজার টাকার একটা নেট বের করে নিলাম। অতঃপর আবার ছুটে গেলাম বিছানার কাছে রাখা ল্যাম্পের টেবিলের নিকট। ওখানে কাগজ কলম ছিল। তড়িঘড়ি করে ইংলিশে তাকে জানিয়ে দিলাম আমি তার থেকে একহাজার টাকা নিয়েছি। সাথে বলে দিলাম। আমি চির বিদায় নিলাম তার থেকে। সে যেন নিজের পথ দেখে নেয়। আমি ভুলে গেলাম ক্যারেন নামের কেউ জোর করে আমার জীবনে প্রবেশ করেছিল। ক্যারেন নামের কেউ অনিচ্ছায় তিথি নামের কাউকে বিয়ে করেছিল।

চলবে….