#প্রেম_থেকে_অপ্রেম
#পর্ব৪
#রাউফুন
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একজন কে কল দিলাম। তিনি রিসিভ করলেন দুবার রিং হওয়ার পর। আমি ভনিতা না করে সরাসরি তাকে বললাম,
‘ক্যান ইউ গিভ মী টেন লাখস্ ইমিডিয়েটলি?’
‘ইয়েস, হোয়াট ডু ইউ হ্যাভ ট্যাল মী? দিস ইজ ইউর মানি!’
তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রুপাত্মক হাসলাম। জিজ্ঞেস না করে কিভাবে নিই। আমি শান্ত কন্ঠে বললাম, ‘আই নো দিস ইস মাই রাইটফুল মানি।’
‘ইয়াহ! ইউ আর রাইট মাই!’
‘উম উম স্টপ। আ’ম নাথিং টু ইউ।’
‘ওকে ওকে! আ’ম সেন্ডিং মানি টু ইউর একাউন্ট।’
‘নো ইট’স নট পসিবল টু উইড্রো মানি বাই চেক ওর একাউন্ট। আই উইল ট্যাক ক্যাশ! আ’ম কামিং টু ইউর হাউস!
‘হোয়াই সুড ইউ কাম? আ’ম সেন্ডিং পিপল্!’
‘নো আ’ম কামিং ইউর হাউস! আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনিওয়ান টু উইটনেস দিস!’
‘দ্যাট’স হোয়াট ইউ এয়ান্ট?’
‘ ইয়াহ!’
‘ওকে কাম!’
•
সকাল আটটাই আমি ফিরে এলাম হসপিটালে। হসপিটালে যাওয়ার আগে কিছু খাবার কিনে নিয়ে এলাম।
আমি যেতেই আম্মু ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন,’ টাকা জোগাড় করতে পারোনি নিশ্চয়ই? এখানে এক, দুই টাকার প্রশ্ন নয় মালা! যে গেলে আর পেয়ে যাবে। হসপিটালের বিল সহ না হলেও ছয় থেকে সাত লাখ টাকার প্রয়োজন!’
‘আম্মু টাকা জোগাড় হয়েছে। আমি ডক্টর কে আজকেই অপারেশন করার ব্যবস্থা করতে বলছি!’
‘কত টাকা জোগাড় করতে পেরেছো তুমি?’
‘দশ লাখ!’
আম্মুর হাতে খাবারের প্যাকেট টা দিলাম। পুতুলের চোখ যেনো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম টাকার অংক শুনে। কিন্তু আম্মু স্বাভাবিক ছিলো। আম্মু খাবার হাত থেকে রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। আম্মুর চোখ অস্বাভাবিক ভাবে লাল ছিলো। ঘুমোইনি সারারাত বুঝা যাচ্ছে। আম্মুর চোখে মুখে অবিশ্বাসের ছোঁয়া নাকি অন্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমি ফাঁকা ঢোক গিলে সন্তপর্ণে বললাম,
‘আম্মু আপনি এটা ভাবছেন না তো যে, আমি কোনো অসৎ উপায় অবলম্বন করে এই টাকা গুলো জোগাড় করেছি? শুধু এটুকু জেনে রাখুন আপনার মেয়ে আমি, আমি হালাল টাকায় আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করাচ্ছি।’
আম্মু আমার চিবুক ছুঁয়ে আদর করে বললেন, ‘আমাকে তুমি ব্যাঙেরছাতা আর বটবৃক্ষের পার্থক্য বোঝাতে এসেছো? শুধু একটু ভড়কে গেছিলাম যে এক রাতের মধ্যে এতো গুলো টাকা জোগাড় হলো কিভাবে? আমি তোমাকে বিশ্বাস করি মালা! কোথায়,কিভাবে, কে দিয়েছে এসব কোনো প্রশ্নই আমি তোমাকে করবো না। তবে এটুকু জেনে রাখো, আমি জীবনের শেষ দিন অব্দি তোমার পাশে আছি। তোমার কেন মনে হলো আমি তোমাকে অবিশ্বাস করবো? আমি আমার ছেলে-মেয়েকে কেমন শিক্ষা দিয়েছি তা আমি জানি। আমার শিক্ষার উপর আমার সন্দেহ হবে বলছো? তোমাকে সন্দেহ করা মানে কি জানো? আমার তোমাকে দেওয়া শিক্ষাকে সন্দেহ করা। যাও রিসিপশনে গিয়ে টাকা সাবমিট করো খাবার নিয়ে আমি অপেক্ষা করছি!’
আম্মুর অনেক প্রশ্ন আছে জানি আমি কিন্তু এই মুহুর্তে আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়৷ টাকা জমা দেওয়া শেষে, ডক্টর কে বলে আজকের মধ্যেই অপারেশন করানোর ব্যবস্থা করতে বললাম। ডক্টর বললেন, ভাইয়ের ঘুম ভেঙেছে আমরা দেখা করতে পারি অপারেশন এর আগে। আমরা সবাই গেলাম গহীনের সঙ্গে দেখা করতে। আম্মু আর পুতুল কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। গহীন আম্মুর দিকে তাকিয়ে হাসলো। আহ! কি মিষ্টি আমার ভাইয়ের হাসি। এতো সুন্দর কেন ওর হাসি? আল্লাহ কি অপরুপ ভাবে সৃষ্টি করেছেন ওঁকে। মা-শাহ-আল্লাহ!
‘আম্মু, তোমার সাথে কি পুতুল ও কাঁদছে? এই যে পুতুল কাঁদলেও তোমাকে আমার কোনো খেলনা দেবো না।’
পুতুল মিথ্যা মিথ্যা কান্না লুকিয়ে বলে, ‘উহ বয়েই গেছে তোমার জন্য কাঁদতে। আর তোমার খেলনাও চাই না আমার হুহ্।তোমার কোনো খেলনা আমি নেবোনা শুধু তুমি সুস্থ হয়ে যাও ভাইয়া!’
আমি হেসে দিলাম ওর কথায়। গহীন আমাকে হাত দিয়ে ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি ওর কাছে গিয়ে কপালে চু’মু দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলাম। ও আরও কাছে মুখ এনে কানে কানে বললো,
‘আপু আমার যত টয়েস আছে সব গুলো আমি খাটের নিচে একটা সিক্রেট বক্সে লুকিয়ে রেখেছি। তুমি দেখে রেখো৷ পুতুল যেনো ওগুলো না নিয়ে নেই। এখন পুতুল এমনি বলছে নেবে না। ওকে বিশ্বাস নেই।”
আমি ওর মতোই ফিসফিস করে বললাম, ‘পুতুল ওগুলো পাবে না। তোমার টয়েস গুলো আমি লুকিয়ে রাখবো!’
পুতুল গাল ফুলিয়ে বললো, ‘তোমরা দুজন কি কথা বলছো ফিসফিস করে?’
‘এহ তোমাকে কেন বলবো!আপু আর আমার মধ্যে এসো না তো! সিক্রেট কথা হচ্ছে!’
গহীন আম্মু কে বললো, ‘আম্মু আমাকে বাড়ি কখন নিয়ে যাবে?’
আম্মু কান্না আড়াল করে হাসার চেষ্টা করলেন। গহীন কে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলেন।
‘আমার নারী ছেড়া ধন৷ তুমি তারাতাড়ি ভালো হয়ে যাও বাবা। আমরা তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবো শীঘ্র!’
অনেক্ষন কথা বললাম তিন ভাই বোন, সাথে খুনসুটি তো আছে তিন ভাই বোন এর। আম্মু আমাদের তিন ভাই বোন কে খাইয়ে দিলেন। গহীনকে হাসি খুশি রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালাম।
গহীন বললো, ‘আম্মু অসুস্থ হলে কি বেশি আদর পাওয়া যায়? এই যে কত্তো আদর করছো। পুতুল ও আদর করছে আমাকে। তাহলে তো আমি রোজ অসুস্থ হবো আদর পাওয়ার জন্য! ‘
‘এসব পঁচা কথা বলো না বাবা। আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসি।’ বললেন আম্মু! আমি, পুতুল, আম্মু এক সাথে গহীনকে জড়িয়ে ধরলাম।
•
গহীনের সঙ্গে কথা বলে এসে বসে ছিলাম সেই সময় কোথা থেকে যেনো মিষ্টার প্রিহান আসলেন। আমার পাশে বসলেন। আমি কিছু টা ভড়কালাম। বললাম,
‘আপনি এখনো যান নি?’
‘নাহ কেন যাবো?’
‘কেন যাবেন না?’
‘আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছি না আমি!’
‘সারারাত আপনি এখানে থেকেছেন নাকি?’
‘হ্যাঁ আপনার আসার অপেক্ষা করেছি!’
‘কেন অপেক্ষা করেছেন? বাই এনি চান্স এসব করে আপনি আমাকে পটানোর চেষ্টা করছেন না তো?’
‘পটছেন আর কই?’
‘তাহলে চেষ্টা করছেন কেন?’
‘পটবেন না জন্য কি চেষ্টা করবো না। সহজে পেলে মানুষ হীরেকেও কাচ ভাবে। আমি আপনাকে কষ্ট করে পেতে চাই।’
আমি নিভে গেলাম। এই লোকের সঙ্গে কথা বলাটাই বেকার। এর সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই৷
‘কি হলো চুপচাপ কেন?’
‘এখান থেকে চলে যান। আপনার বাড়ির লোক চিন্তা করবে।’
‘বাড়ির লোক জানে!’
‘মানে কি জানে?’
‘এই যে তাদের ছেলে তার হবু বউয়ের পাশে আছে!’
‘মানে কি আপনি আপনার বাড়িতেও বলেছেন?’
‘হ্যাঁ কেন বলবো না!’
গা জ্বলে যাচ্ছে লোকটার কথা শুনে। আমি ঝাঝালো কন্ঠে বললাম,
‘এসব ভুলভাল কথা কিভাবে বলেন হ্যাঁ? কিসের হবু বউ হ্যাঁ! মজা পেয়েছেন নাকি!’
‘আরে আরে রেগে যাচ্ছেন কেন? শান্ত হোন। এখন রাগে না। একদম রাগ নয়।’
‘যান এখান থেকে ভালোই ভালোই।’
‘অন্য কোনো সাহায্য না নেন অন্তত আপনার পাশে তো থাকতেই পারি তাই না?’
‘আমার কাউকে প্রয়োজন নেই। চলে যান’
‘কিন্তু আমার প্রয়োজন আছে। আচ্ছা আপনি আপনার স্বামী কে কেন ছাড়লেন?’
এই সময়ে এরকম একটা প্রশ্ন আমার কাছে অবান্তর লাগছে। বিরক্তিকর লোকটা। টেনশনে মাথা ফে’টে যাচ্ছে আর এদিকে এই লোকটার এরকম কথা! নুন্যতম সেন্স নেই লোকটার?
‘আরে বলুন না কেন ছাড়লেন?’
আমি রেগে বললাম,’আপনাকে সুজানা আপু কেন ছাড়লো?’
‘সুজানাকে রিজেক্ট করেছি আমি, ওঁ নয়৷ ওঁ আমার জন্য নয়। সুজানা আপনার প্রাক্তন স্বামীর মতোই কাউকে ডিজার্ভ করে আমাকে নয়। সুজানা আমার ছোট বেলার বন্ধু। ওর বুদ্ধিমত্তা দেখে আমার পরিবার খুবই গুরুত্ব দিতো ওঁকে । ওর উদ্দীপ্ততা ছিলো উচ্চ শিখরে। আমি ওঁকে উষ্ণ চোখে দেখলেও কখনোই ওঁকে প্রেমিকার চোখে দেখিনি। ওঁ নিজেই আমার প্রেমিকা বলে নিজেকে পরিচয় দিতো। তাই আমিও ক্যাজুয়ালি ওঁকে গার্লফ্রেন্ড বলতাম। এরপর ওর চরিত্রহীনতার জন্য ওঁকে আমি রিজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছি।’
আমি উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করলাম না এরপর। চুপ করে রইলাম। আব্বু এসে আমার পাশে প্রিহানকে বসে থাকতে দেখলেও কিছুই বললো না। অন্য সময় হলে বোধহয় একটা কুরুক্ষেত্র হয়ে যেতো। কি জানি সারারাত কোথায় ছিলেন আব্বু? নিশ্চয়ই আম্মু ফোন করে জানিয়েছেন টাকার জোগাড় হয়ে গেছে। তাই এখন এসেছেন।
‘আমার মতো এরকম হাম্বল,গুড লুকিং,ডিসেন্ট একজন মানুষের সঙ্গে এরকম বিহেভিয়ার কিভাবে করতে পারেন? আপনার কি হৃদয় পু’ড়ে না?’
‘দেখুন আমি বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে বকবক করার মুডে নেই৷ এখান থেকে সটকে পরুন তো! ভালো লাগছে না একদম।’
‘আমারও কি ভালো লাগছে আপনার এরকম ব্যবহার! করুণা করেও তো ভালো ব্যবহার করা যায় নাকি। ‘
‘আমার মধ্যে করুণা, দয়া, মায়া এখন আর একটুও অবশিষ্ট নেই৷ যান এবার। আমাকে একটু রেহাই দিন।’
‘মাই কারেন্ট সিচুয়েশন ইজ আপনার সঙ্গে ঝুলে থাকা। লটকে থাকবো প্রয়োজন পরলে কিন্তু আপনার পিছু কোনো ভাবেই ছাড়ছি না। দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও না। পারলে আপনি আপনার পিছু আমাকে ছাড়িয়ে দেখান!’
‘অসহ্যকর লোক তো!’
‘খুব শীঘ্রই অসহ্যকর থেকে সহ্যকরণ হয়ে যাবো। আই প্রমিস!’
বিরবির করে বললেন প্রিহান। বিরবির করে বললেও আমার কানে এসেছে কথাটা। আমি দাঁতে দাঁত চে’পে বললাম, ‘কি বললেন?’
‘কই কিছু না তো! হেহেহেহে আপনি থাকুন এখানে বসে আমি,আমি ওই ব্রেঞ্চে বসছি।’
ক্যাবলার মতো হাসলেন উনি৷ আমি চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলাম,
‘তাও আপনি যাবেন না এখান থেকে?’
উনি কাটকাট ভাবে উত্তর দিলেন, ‘একদমই ন- আকার- হ!’
‘মহা ধ্যাটা লোক তো! কোনো কথায় গায়ে মাখছেন না।’
#চলবে