বাড়িয়ে দাও তোমার হাত পর্ব-০৩

0
194

#বাড়িয়ে_দাও_তোমার_হাত
#তৃতীয়_পর্ব
#হুমাইরা_হাসান
____________________

– বিয়ে করেছো শুনলাম? বউ কী দেখতে আমার থেকেও সুন্দর?

মেয়েলী গলার স্বরে মিহির এক হাতে রুহির হাতটা চেপে হাঁটা থামিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। কৌতূহলী একটা চেহারায় মৃদু হাসির রেশ। গোলাপি লিপস্টিকে মাখা ঠোঁট দুটোর বাঁকা হাসি হেসে মেয়েটা এগিয়ে এসে বলল,

– আমিতো ভেবেছিলাম তুমি বিয়েই করবেনা। শেষে করেই নিলে তাহলে! দেখা যাক বউ কতদিন টিকে থাকে।

নিহার কণ্ঠে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য আর অপমানসূচক বাক্য। মিহির প্রত্যুত্তর করতে চাইলেও করলো না। ও আসলে নিহা নামক মেয়েটার মুখ টাও দর্শনের কিঞ্চিৎ আশা রাখেনা। যে মেয়েটা কতগুলো দিন ওকে বিয়ে করবে বলে সাথে থেকে অবশেষে ওর হাতটা অকেজো হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নেয় তার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখার ন্যূনতম ইচ্ছে পোষণ করেনা মিহির। তন্মধ্যে স্কুল ব্যাগটা কাঁধে চেপে রোহান ছুটে এসে বলল,

– চলো বাবা বাসায় যাই। মা একা আছে আমায় তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে।

রোহানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে এলো নিহার। এগিয়ে এসে রোহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,

– মা কে রোহান?

– মাসনুন মা। আমাদের নতুন মা। বাবার সাথে এসেছে, খুব ভালো আমার মা।

নিহার মুখটা কালচে ছাপে ঢাকা পড়লো। রোহানের মুখে এমন কথা ওর মোটেও ভালো লাগেনি। কিন্তু কিছু বলার পূর্বেই স্কুলের পিওন এসে বলল,

– ম্যাডাম আপনাকে প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছেন।

নিহা এক পলক মিহিরের পানে চেয়ে নিজের কাজে ফিরে গেলো। মিহির রুহির হাতটা চেপে ধরে এগিয়ে এলো। পকেটে গুঁজে রাখা হাতটায় রোহান ওর ছোট ছোট দুটো হাত সানন্দে গুঁজে রাস্তা পার হলে একটা অটো করে দুজনে এসে নামলো বাড়ির সামনে। মিহির অটোর ভাড়া দেওয়ার সময় রোহান অপেক্ষা না করেই ছুটে এলো ঘরের ভেতর। দৌড়ে মিহিরের ঘরে ঢুকে ডাকলো,

– মা!

মাসনুন হাতের ওড়নাটা রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। দরজায় দাঁড়িয়ে আট বছরের একটা বাচ্চা ছেলে। গৌড়বর্ণের শরীর, গোলগাল চেহারা বড় বড় চোখ মুখটা ভীষণ মায়াবী। তবে এ চেহারার সাথে মিহিরের চেহারায় মিল নেই। রোহান মৃদুপায়ে এগিয়ে এসে আদুরে গলায় বলল,

– আজকে স্কুলে গিয়ে আমার একটুও মন বসেনি জানো মা। মনে হচ্ছিলো কখন বাড়িতে আসবো আর তোমার সাথে দেখা হবে।

মাসনুনের অধর কোণে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে ওঠে। রোহানের মায়াভরা মুখ আর ওর প্রাণভরা ডাক ‘মা’ দুটোই ওকে ভীষণ দূর্বল করে দেয় রোহানের প্রতি। হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে রোহানের কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে নিয়ে বলে,

– তাই! আমিও তোমাকে খুব মিস করছিলাম।

– সত্যি?

রোহানের কণ্ঠে উচ্ছ্বাসের জোয়ার। মাসনুন আবারও হাসে।ছেলেটার সাথে দিন তিনেকের পরিচয় অথচ এইটুকু সময়েই কেমন একটা বন্ধন সৃষ্টি হয়ে গেছে। বাচ্চাটা মাসনুনকে নিজের মায়ের স্থান দিয়ে বসেছে।

– তিন সত্যি। তবে কী বলোতো, মা তো বাড়িতেই আছে তোমার অপেক্ষায়। তুমি ফিরলেই দেখতে পাবে। কিন্তু তা বলে স্কুলে একদম অমনোযোগী হওয়া যাবেনা কেমন?

রোহান ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলো বাধ্য বাচ্চার মতো। মাসনুন উঠে দাঁড়িয়ে রোহানের হাত ধরে বলল,

– তাহলে ফ্রেশ হয়ে খাবে চলো। রুহি কোথায়?

– ও বাবার সাথে আসছে।

মাসনুন রোহানকে সাথে করে নিজে হাত মুখ ধুইয়ে দিয়ে প্লেটে করে খাবার আনলো। রুহি মেয়েটা টেবিলে একা বসে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে মাসনুনের কৌতূহলী চোখ জোড়া একজনকে নিঃশব্দে খুঁজলেও দেখা পেলো না। অগত্যা চুপচাপ খাবার নিয়ে রোহানের সামনে রেখে নিজেও বসলো। রুহি নাজুক চোখে তাকায় মাসনুনের দিকে, মেয়েটা খুবই চুপচাপ। মিহির বাদে অন্য কারো সাথে কথা খুব কমই বলে, মাসনুন কে দেখলেই নিজেকে ভয়ে সিটিয়ে নেয় এক প্রকার। এই তিনদিনে মাসনুন অনেকবার চেষ্টা করেছে রুহির সাথে সহজতর সম্পর্ক গড়ে তোলার কিন্তু মেয়েটা এভাবে মাসনুনের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে যে মাসনুনের ইচ্ছেটা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়।

মুখের সামনে খাবারের লোকমা দেখে অবাক চোখে তাকায় রুহি। মাসনুন খুব নরম স্বরে বলে,

– খাও

রুহির অস্বস্তি যেনো তবুও কাটে না। মাসনুন বিব্রত হলো না বরং রোহানের মুখে খাবার দিয়ে আবারও রুহির মুখে খাবার ধরে বলল,

– পান্তা বুড়ির গল্প শুনবে?

রুহি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলে মাসনুন নিজ থেকেই বলতে শুরু করলো,

– এক সময় একটা গ্রামে একটা পান্তা বুড়ি ছিলো। বুড়ি পান্তাভাত খেতে এতো পছন্দ করতো যে রোজ রাতে ভাতে পানি দিয়ে পরের দিন পান্তা খেতো। আর পান্তা এতটা পছন্দ করায় সবাই বুড়িকে পান্তা বুড়ি বলেই ডাকতো। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই বুড়ি বেশ চিন্তিত ছিলো কারণ বুড়ির পান্তা রোজ কেউ চুরি করে খেয়ে যেতো। ফলস্বরূপ বুড়ির ও পান্তা খাওয়া হতো না। এভাবেই বেশ কিছুদিন চলার পর বুড়ি চোরের জন্য অতিষ্ট হয়ে বেরোলো রাজার কাছে নালিশ করার জন্য। চলার পথেই বুড়ির নদীর ধারে শিং মাছের সাথে দেখা হলো শিং মাছ জিগ্যেস করলো বুড়ি তুমি কোথায় যাও বুড়ি তার পান্তা চুরি আর রাজামশাইয়ের কাছে নালিশ করার কথা বললে শিং মাছ বলল, যদি রাজা কোনো সমাধান দিতে না পারে তাহলে ফেরার পথে আমায় সাথে করে নিও,তোমার কাজে দেবে। বুড়ি আচ্ছা বলে আবারও চলা শুরু করলো কিছুপথ এগিয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকা একটা বেল বুড়িকে ডেকে বলল, বুড়ি তুমি কোথায় যাও! বুড়ি আবারও পান্তা চুরি আর রাজামশাইয়ের কাছে নালিশ করার কথা বলল। বেল সবটা শুনে বলল, রাজামশাইয় যদি সমাধান দিতে না পারে তাহলে ফেরার পথে আমায় সাথে করে নিও তোমার কাজে দেবে। বুড়ি আবারও আচ্ছা বলে চলা শুরু করলো। শিং মাছ আর বেলের মতই পথে গোবর আর ক্ষুরের সাথে দেখা হলে তারাও একই কথা বলে। শেষমেশ বুড়ি রাজার প্রাসাদে পৌঁছালেও সেখানে রাজা না থাকায় খুব কষ্ট পেলো। আবারও ফিরলো বাড়ির পথে। তবে এবার ফেরার সময় শিং মাছ, বেল, গোবর, ক্ষুর সবাইকে নিজের পুটলিতে করে সাথে আনলো। ক্ষুর বলল আমায় বাড়ির উঠোনে ঘাসের ওপর রাখো, গোবর বলল আমায় তোমার ঘরের দরজার সামনে রাখো, বেল বলল আমায় চুলোর মাঝে রাখো আর শিং মাছ বলল আমায় পান্তা ভাতের মাঝে রাখো। সকলের কথামতো বুড়ি যথাযথ জাগায় রেখে রাতে শুয়ে পড়লো। রাত যখন গভীর চোর চুপিচুপি ঢুকলো বুড়ির ঘরে। পান্তা খাওয়ার জন্য যেই না পাতিলে হাত ঢুকিয়েছে ওমনিই শিং মাছ তার কাটা বিঁধিয়ে দিলো চোরের হাতে। চোর তীক্ষ্ণ ব্যথায় চুলোর দিকে ছুটলো আঁচ নিতে সেখানে যেতেই বেল টা ফেটে চোরের চোখে মুখে ছিটে পড়লো। চোর সারা গায়ে বেল মাখা অবস্থায় বেরিয়ে আসলে দরজার সামনে রাখা গোবরে পা পিছলে পড়লো লুটিয়ে। সারা গায়ে গোবরে মাখামাখি হয়ে যখন অবশেষে জান বাঁচিয়ে পালানোর জন্য পা বাড়ালো তখন ঘাসের মাঝে রাখা ক্ষুরে পা কেটে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো চোরটা। তখনই আশেপাশের লোকজন এসে চোরকে ধরে পি’টিয়ে দূর করলো। তারপর থেকে আর কখনো বুড়ির পান্তা চুরি হয়নি।

গল্পটার সাথে দুজনের খাওয়াও শেষ হয়ে গেলো। রুহির চোখ জুড়ে আনন্দ চিকচিক করে উঠলো। প্রাণোচ্ছল কণ্ঠে বলল,

– আমি আরও গল্প শুনতে চাই।

– অবশ্যই শোনাবো। তবে আবার খাওয়ার সময়। কিন্তু শর্ত আছে, রোহানের মতো তুমিও আমায় মা বলে ডাকবে কেমন?

রুহি যেনো বিব্রত হলো। তবুও গল্প শোনার লোভে মাথা নাড়ালো। মাসনুন ওদেরকে ঘরে রেখে নিজের ঘরে এলো। বিছানায় চিত হয়ে এক হাত চোখের ওপর রেখে শুয়ে আছে মিহির। মাসনুন শান্ত নজর বুলাই মিহিরের পানে। এ বাড়িতে আসা তিনদিন পার হলো তবুও লোকটা কেমন এড়িয়ে চলে ওকে। মাসনুনের সকল প্রয়োজনের খোঁজ রাখলেও কাছাকাছি ঘেঁষে না নাইবা সহজ সরল দুটো কথা বলে। যেনো অদৃশ্য কোনো দেওয়ালের দুইপাশে দুজন। মিহির ওর কথায় আচরণে এটায় বোঝায় যে মাসনুন কোনো ভাবে দায়বদ্ধ নয়, সে চাইলেই এখান থেকে চলে গিয়ে নিজের জীবনকে আরও সুন্দর গড়ে তুলতে পারে।

– ঘুমিয়েছেন?

মিহির চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে তাকালো মাসনুনের দিকে। সবুজ রঙের একটা সুতি সালোয়ার কামিজ পরনে লম্বা, সুগঠিত শরীরের মেয়েটা অত্যাধিক সুন্দরী। পড়াশোনা, চেহারা কোনো দিকেই তাকে কমা বলা যায়না। মিহিরের কুণ্ঠাবোধ হয় মাসনুনের সামনে। বেশি কথা বলতেও জড়তা কাজ করে।

– না। কোনো দরকার?

– কেনো দরকার ছাড়া আপনাকে ডাকা যাবে না?

শান্ত জবাবের প্রত্যুত্তরে এমন রূঢ় কথা হয়তো আশা করেনি মিহির। তবে কোনো সাড়া দিলো না। মাসনুন এগিয়ে এসে বসলো মাঝামাঝি কিঞ্চিৎ দূরত্ব রেখে। কোনো প্রকার ভনিতা ছাড়াই জিগ্যেস করলো,

– আপনাকে কী জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে? প্রেমিকা ছিলো কোনো নাকি আগের বউ?

মিহির হতবিহবলিত হলো আচমকা এহেন প্রশ্ন শুনে। শোয়া থেকে উঠে বসলো। নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,

– এমনটা নয়

– তাহলে কেমনটা? সবসময়ই এমন চোরের মতো পালায় পালায় করে বেড়ান কেনো। নাকি মেয়েদের মতো আপনার ও নার্ভাসনেস হচ্ছে নতুন বউ দেখে?

মিহির জবাবের ভাষা খুঁজে পায়না। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই চোখ নামিয়ে নেয়। ক্ষীণ স্বরে বলে,

– আমার মনে হয় আপনি বিরক্ত হবেন

– হবো না হচ্ছি। আপনার হাবভাবে মনে হচ্ছে আমি জোর করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছি নয় জোর করে বিয়ে করেছি আপনাকে আর আপনি প্রাক্তনের শোক সামলাতে ব্যস্ত।

এই কয়দিনে মাসনুনের ব্যবহার, আচরণ আর কথা বলার ধরনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে মিহির। তাই খুব একটা বিস্মিত হলো না৷ মাসনুনের অভিযোগ করাটা ভুলের নয় তবে মিহিরের বিব্রতবোধ হয়, জড়তা কাজ করে। কোথায় মাসনুনের মত অল্পবয়সী সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ে আর কোথায় ওর মতো পঙ্গু! ভারী দীর্ঘশ্বাস নিঃসৃত হলো শ্বাসযন্ত্র হতে। নরম গলায় বলতে শুরু করলো,

– আমার বাবা আমি অনেক ছোট থাকতেই মারা যায়। বাড়িতে তখন অভিভাবক হয়ে রয়ে যায় আমার বড় ভাই। নিজের ক্যারিয়ার গড়ার হাজারো স্বপ্ন থাকলেও তা বিসর্জন দিয়ে অল্প বয়সে আমার মায়ের আর দাদীর হাল ধরে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার টাকে ভাঙতে না দিয়ে বাবার মতোয় আগলে রাখে। আমার পড়াশোনার সব খরচ আমার সব স্বপ্ন ভাইয়ের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের পরিবার খুব ভালো চলছিলো। মা দাদী আমি ভাইয়া আর ভাবী। ভাইয়ের বিয়ের দু বছরের মাথায় রোহানের জন্ম আর তার দু বছর পর রুহি। রোহানের বয়স যখন তিন বছর তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। ভাইয়া নিজের টাকায় একটা গাড়ি কিনে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ভাবীর সাথে আমায় নিতে এসেছিলো ঈদের ছুটিতে। সেদিন আমার এত আনন্দ হচ্ছিলো বলার মতো না, তিনজন মিলে ঘুরাঘুরি করে ফিরতে বেশ রাত হচ্ছিলো। আর ওই রাতটাই ছিলো আমাদের জীবনের কালো রাত। ভাগ্যের নিষ্ঠুরতম পরিহাস করে আমার মাথার ওপর থেকে ছাদটায় সরিয়ে দেয়। কীভাবে কী হলো কেও বুঝতে পারিনি হুট করেই গাড়িটা মোড় ঘোরাতে গিয়ে ভীষণ ভাবে ধাক্কা লেগে উলটে গেলো। আর সেই দূর্ঘটনায় একমাত্র আমার প্রাণ টা আল্লাহ্ ভিক্ষা দিলেও ভাই আর ভাবীকে দেননি। আজীবনের মতো সমাপ্ত হয় আমার ভাইয়ের নিঃশ্বাস। ওই অ্যাক্সিডেন্টে আমার হাতটা বাজেভাবে আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য অকেজো হয়ে যায়। তারপর থেকে এই এক হাতেই সংসার সামলাচ্ছি। ভাইয়ের মতো না পারলেও চেষ্টা করি সবটা সুন্দর ভাবে পরিচালনা করার। রোহান আর রুহিকে আমার সন্তানের মতো রেখেছি আমি। আমাকে মানুষ করা ভাইয়ের সন্তান এখন আমার সন্তান। আমাকে গ্রহণ করতে হলে ওদেরকেও নিজ সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাই আমার বিয়ের ইচ্ছে ছিলো না। একে তো বয়স বেশি,আবার পঙ্গু। সাথে দুটো সন্তানের বোঝা কোনো মেয়েই নিতে চাইবে না। আর তাদের চাওয়াটা ভুল নয়। সবাই নিজেদের সুখী রাখতে চাই।

– স্বামীর ঘরে দুটো সন্তান থাকলে সুখী হওয়া যায়না এমনটা আপনাকে কে বলল?

মাসনুনের কণ্ঠে তীব্র প্রতিবাদ প্রবণতা। মিহির আগের মতোই নরম গলায় বলল,

– একজন মেয়ে তার সমস্তটা ফেলে আমার হাত ধরে আসবে। নতুন সংসার, সেখানে সুখ শান্তি ভালোবাসা আর নতুনত্ব চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের চাওয়াতে ভুল নেই। আমি নিজেই অসম্পূর্ণ। খুব টাকা পয়সার মালিক ও নোই। কেনো কাওকে এতগুলো অসুবিধা নিয়ে থাকতে হবে। তাই আমি চাইনি কাওকে নিজের জীবনে জুড়তে। কারণ বাচ্চা দুটোই আমার সব ওদেরকে কেও বোঝা মনে করলে আমি তাকে ভালোবাসতে পারবো না। আর ভালোবাসা, মহব্বত না থাকলে দ্বায়িত্ববোধ আর টান ও আসেনা। ঠিকানাহীন সম্পর্কের কী দরকার।

– কেও যদি আপনাকে ভালোবাসে তবে আপনার সাথে জড়িত সকল অসুবিধা গুলোকেও ভালোবাসবে। আমরা কেউ ই পারফেক্ট নোই। সকলেরই কোনো না কোনো দোষ আছে। একসাথে চলতে গেলে সেগুলোকে মানিয়ে নিলে একসময় সেটাকে আর সমস্যা বলে মনে হয় না। বাচ্চারা রহমত স্বরূপ, ওদেরকে সবাই বোঝা মনে করেনা। সংসার হলো একটু যত্ন,মায়া,দ্বায়িত্ব আর অনেকখানি ভালোবাসার বাগান। এই মায়ায় জড়িয়ে গেলে এক আকাশ সমান অসুবিধাকেও তুচ্ছ মনে হয়। আর পঙ্গুত্বের সঙ্গাটা বোধহয় আপনি জানেন না মিহির আবসার৷ শুধুমাত্র একটা হাত না চললে কেও পঙ্গু হয়ে যায়না৷ আল্লাহ্ আপনাকে এখনো চলাফেরা করা রোজগার সহ সবটাই নিজে করার সামর্থ্য দিয়েছেন। একে বারবার পঙ্গু নাম দিয়ে অবহেলা করবেন না।

মিহিরের নিরুত্তর প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্ব না দিয়ে মাসনুন আবারও বলল,

– আমি ছোট বাচ্চা নোই আর নাইবা আমায় জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি তাই বারবার আমায় আরও ভালো কাউকে খুঁজে নেওয়ার কথা বলে অপমান করার দুঃসাহস টা করবেন না। মানুষ আমি, তিনবেলা দু মুঠো খাবার আর মাথার ওপর ছাদ পেলেই চলে। রাক্ষসী নোই যে আমায় চালাতে পারবেন না।

বলে আচমকাই উঠে দাঁড়ালো, আর কোনো প্রশ বা উত্তরের অবকাশ না দিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। মিহির স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মাসনুনের দিকে। কী চমৎকার কথাগুলোও কেমন রাগান্বিত গলায় বলে গেলো মেয়েটা। সত্যিই কী সংসারের মায়ায় জড়িয়ে গেলে সব অসুবিধাকে তুচ্ছ মনে হয়? তাহলে কী মাসনুন ও মিহিরের সকল অপারগতাকে তুচ্ছ মনে করে ওকে ভালোবাসবে? বুকের ভেতর শিরশির করে উঠলো। শক্তপোক্ত খোলসে আবৃত মনের সুপ্ত জায়গা টায় আজ কেমন নরম পালকের ছোঁয়া মিললো যেনো কথাগুলোয়। মিহিরের অনেক বছর পরে মনে হলো সত্যিই ওউ ভালোবাসতে পারবে

.
.
.
চলমান

#Humu_❤️