বাড়িয়ে দাও তোমার হাত পর্ব-০৪

0
176

#বাড়িয়ে_দাও_তোমার_হাত
#চতুর্থ_পর্ব
#হুমাইরা_হাসান
_____________________

– এতক্ষণে ফেরার সময় হলো মেয়ে! বিয়ে করেছ কোই ঘর সংসার নিয়ে থাকবে তা না পড়াশোনার ভূত ই নামে না মাথা থেকে।

ঘরের চৌকাঠ মাড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই এমন কথা কানে এসে বিঁধলো মাসনুনের। কণ্ঠের মালিকের দিকে খুব শান্ত নজরে তাকালেও জবাব দিলো না৷ আসলে প্রত্যুত্তরের প্রয়োজন টাই মনে করলো না।
মাসনুন সিড়ির দিকে এগোতে নিলে রোকেয়া বেগমের মুখোমুখি হলে মাসনুন সবিনয়ে প্রশ্ন করলো,

– রোহান আর রুহি খেয়েছে?

– হ্যাঁ ওদের ঘুম পাড়িয়ে এলাম।তুমি গোসল করে খেয়ে নাও।

বলে নেমে সামনের দিকে এগোতে থাকলেন। মিহিরের দাদী খুব রুষ্ট স্বরে বললেন,

– বাড়ির বউকে এতো লাঁই দেওয়া উচিত না রোকেয়া। সেই সকালে বেরিয়েছে এখন ফিরলো। রোহানটা তো ওই ছুরি বলে পাগল, কতবার খুঁজলো ওকে। পড়াশোনা নিয়েই যদি থাকবে তাহলে বিয়ে করার কী দরকার ছিলো?

এটুকুই কান অব্দি পৌঁছালো মাসনুনের। কারণ ও আর থামেনি সেখানে। হাঁটতে হাঁটতে এইটুকু কানে এলেও বাকিটা শোনার ইচ্ছে ওর নেই। ঘরে ঢুকেই ব্যাগটা রেখে গোসলে ঢুকলো। বেরিয়ে এসে চুল মুছতে মুছতে দাঁড়ালো আয়নার সামনে, পেছনের টেবিলে রাখা কালো রঙের অফিস ব্যাগটা দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মিহিরকে খুঁজলো। বেলা তিনটা, আজ লোকটা একটু বেশিই তাড়াতাড়ি এসেছে মনে হলো। ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরটায় গেলো। রোহান রুহি দুজনেই ঘুমিয়ে৷ মাসনুন ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে আবারও বেরিয়ে এলো। নেমে এসে ডাইনিং এ এসে নিজের জন্য খাবার বেড়ে খেতে বসলেও মিহিরের দেখা না পাওয়ায় নিজের খাওয়া শেষ করে একটা প্লেটে ভাত বেড়ে ঘরের দিকে গেলো। মিহির সবে গোসল সেরে বেরিয়েছে। মাসনুন ঘরে থাকলে লোকটাকে দেখা যায় না কিন্তু ও বেরোলেই ভূতের মতো এসে জুড়ে বসে লোকটা। বিরক্ত হয় মাসনুন, ছেলে মানুষের আবার এত জড়তা থাকতে আছে! কিন্তু মুখে কিছু না বলে প্লেটটা টেবিলের ওপরে রেখে নিজের জামা কাপড় ভাঁজ করতে লাগলো। মিহির আড়চোখে তাকালো মাসনুনের দিকে। অবিলম্বেই চোখটা সরিয়ে নিলেও মনের ভেতর মাসনুনকে বারংবার দেখবার আকুলিবিকুলি করছে। ফর্সা মেয়েটাকে কমলা রঙের জামায় একটু বেশিই সুন্দরী লাগছে! মিহির চোরা নজরে বারবার তাকালো মাসনুনের দিকে। কিন্তু ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। চুপচাপ নিজের কাজ করে যাচ্ছে। সেদিন বিকেলে কথায় মাসনুনের বলা শেষ কথা ছিলো মিহিরকে। তারপর থেকে এড়িয়েই চলছে মেয়েটা ওকে, মিহির হয়তো বুঝতে পারছে মাসনুন ওর ওপর রেগে কিন্তু ওর রাগ কীভাবে ভাঙাতে হয় তা ওর জানা নেই। এই দুদিন মাসনুন ওর পড়াশোনা আর বাচ্চাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলো৷ বাড়ির কাজেও সমানভাবে হাত লাগায় মেয়েটা। শুধু মিহিরের সাথেই ওর সম্পর্কটা একেবারেই শিথিল। উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। মিহিরের মনে হয় ওরই প্রথম পদক্ষেপটা নেওয়া উচিত কিন্তু সেখানেও একরাশ জড়তা ওর। তার ওপর মেয়েটা যে ভীষণ রাগী। মিহির কী না কী বলবে আর ওমনিই রেগেমেগে মুখ ফোলাবে।
খানিক এদিক ওদিক করেও মিহির কথা বলার মানসিকতা জোগাতে পারলো না। ঘর থেকে বেরোবে বলে এগোলে ওর বহুকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠে প্রশ্ন এলো,

– কোথায় যাচ্ছেন?

– নিচে।

মাসনুন হাতের কাপড়টা ফেলে খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,

– আমি যে খাবারটা এনে রেখেছি চোখে পড়ছেনা?

মিহির শান্তচোখে তাকালো খাবারের প্লেটের দিকে। কিন্তু যেটা ওর দরকার সে জিনিসটা মাসনুন আনেনি। সেটা ছাড়া খাওয়ার সাধ্য তো ওর নেই। তাই আবারও নিঃশব্দে বের হতে নিলে মাসনুন বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

– আবারও কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

– আপনি তো চামচ টা আনেননি। আমি তো চামচ ছাড়া খেতে পারবোনা।

বলে বেরিয়ে গেলো। মিনিট খানেকের মাথায় একটা চামচ এনে বসলো। খাটের ওপর খাবারের প্লেট টা রেখে বা হাতে চামচ দিয়ে খাবার তুলে মুখে দিয়ে নিঃশব্দে খেতে থাকলো। মাসনুন অপলক তাকিয়ে রইলো পকেটে গুঁজে রাখা মিহিরের নির্জীব হাতটার দিকে। রাগে-আফসোসে চোখ ভরে এলো ওর। রাগটা ঠিক কার ওপর হলো ও বুঝছে না। কিন্তু ওর কান্না আসছে এবার। মিহিরের মুখখানা অত্যাধিক মায়াভরা ঠেকলো যেনো। পা চালিয়ে এগিয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে হাত ধুয়ে মিহিরের সামনে এসে বসলো। ওর থেকে খাবারের প্লেট আর চামচ টা ছিনিয়ে নিলে মিহির হতবিহ্বলিত চোখে তাকালো৷ তার চেয়েও শতগুণ হতবাক হলো যখন মুখের সামনে মাসনুন খাবারের লোকমাটা তুলে ধরলো। বিস্মিত নয়নে হাজারো প্রশ্নের ভীড় ঠেলে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ নিঃসৃত হওয়ার আগেই মাসনুন বলল,

– এখন কী ছোট বাচ্চার মতো হা করিয়ে নিতে হবে?

মিহির শুকনো মুখেই বাধ্য ছেলেটার মতো হা করলে মাসনুন সযত্নে খাবার তুলে দিলো ওর মুখে। পুরুষালী ঠোঁটের স্পর্শ হাতের আঙুল গুলোয় লাগলে কেঁপে কেঁপে উঠলো ভেতরটা। কিন্তু লজ্জায় নেতিয়ে না পড়ে সগৌরবে বসেই রইলো স্থিরচিত্তে। পুরো খাবারটা মাসনুন যতটা শান্তস্থির ভাবে খাইয়ে দিলো মিহির ঠিক ততটাই হতবিহ্বলতা নিয়ে গিললো। রাগচটা মেয়েটার কী মায়া হলো! মাসনুন কী মায়া দেখিয়ে ওকে খাইয়ে দিলো? এই মায়ার সংজ্ঞা টা আদৌ কেমন! সহানুভূতি নাকি অনুভূতি তা মিহিরের মনে দোটানার সৃষ্টি করলো। মাসনুন খাওয়া শেষ করিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো থাল নিয়ে। নাক টেনে হাতের উল্টো পাশে চোখের কোণা মুছে নিলো। ওর বাবা ঠিকই বলেছিলো, ও যাকে বিয়ে করেছে সে আর পাঁচটা স্বামীর মতো না। বোকাসোকা লোকটা বোঝেও না মাসনুন লোকটাকে নিজের স্বামী ভেবেই সম্মান করে, দরদ করে, অধিকার দেখায়। অথচ লোকটার মাথায় শুধু নিজের দোষ ত্রুটি গুলোই ঘুরপাক খায় সবসময়৷ নিজের বউকে কেও এতটা দূরে রাখে? এতটা আড়ষ্টতা পুষে রাখে? এই যে মাসনুন রাগ করে দুদিন কথা বলছে না অথচ লোকটা একবার এসে বললোও না, ‘আমার ভুল হয়েছে ওমন কথা আর কক্ষনো বলবো না। চলোনা আমরা নিজেদের সম্পর্কটাকে এগিয়ে নেই’। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে মাসনুনের।

•••

রাত পৌনে নয়টা। রোহান আর রুহির হাত ধরে মাসনুন বাড়িতে ঢুকলো। পেছন পেছন মিহির। বিকেলে ঘুম থেকে উঠেই বায়না ধরেছিলো দুজন ঘুরতে যাবে বলে। তাই মিহির মাসনুন দুজনেই বেরিয়েছিলো ওদের নিয়ে। পার্কে ঘুরে কিছু কেনাকাটা করে ফিরতে এতটা সময় লেগে যায়। রোহান ঘরে ঢুকেই ছুটে গিয়ে রোকেয়া বেগমের হাত ধরে বলে,

– আজ কত্ত মজা হয়েছে জানো! মা আমায় অনেক গুলো লাইট লাগানো বেলুন দিয়েছে। আমার প্রিয় গাড়িটাও দিয়েছে। আর রুহিকে ওর পছন্দের বার্বি ডলটাও।

রোকেয়া বেগম হেসে চুমু খেলেন রোহানের কপালে। একদম ধরাবাঁধা রোমান । রোহান ঠিক ওর বাবার চেহারাটায় পেয়েছে। ওমন চোখ, নাক, গায়ের রঙ। নাতির মাঝে নিজের সন্তানের প্রতিচ্ছবি পেয়ে বুকটা শীতল হয় রোকেয়া বেগমের। রুহি সদা সর্বদার ন্যায় ছোট ছোট পা ফেলে শান্ত মুখে এগিয়ে এলো। বাচ্চা দুটোর চেহারায় হাসি হাসি ছাপটা কতই না শান্তি দেন রোকেয়া বেগমকে। রুহিকে কোলে তুলে রোকেয়া বেগম বললেন,

– তোমরা দুজন হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নিও। ওদের আজ আমার সাথেই রাখবো।

মাসনুন দ্বিরুক্তি করলোনা নাইবা মিহির। স্মিত হেসে ওরা উপরে উঠে গেলে এতক্ষণ নীরব থাকা বৃদ্ধা বললেন,

– মেয়েটা এমনিতে বেয়াক্কল হলেও বাচ্চা দুটোকে অবহেলা করেনা। রোহানটাও একেবারে গা ঘেঁষা হয়ে গেছে এই ক’দিনে।

রোকেয়া বেগম রুহির গালে মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

– বেয়াক্কল না মা। মাসনুন যথেষ্ট ভালো মানসিকতার মেয়ে। নাহলে কোনো অবিবাহিত এমন শিক্ষিত মেয়ে কোটিপতি ছেলে বিয়ে করার সুযোগ ছেড়ে এমন দু বাচ্চার বাপকে বিয়ে করবেনা। তাও খুঁত সহ যে। ওকে আমি মাথায় তুলছিনা। বরং ওর যোগ্য প্রাপ্য টুকুও দিতে পারছিনা।

সোফাতে বসে আবারও বললেন,

– আমি অবাক হোই মেয়েটার এত সুন্দর মানসিকতা দেখে৷ মাঝে মধ্যে নাটকীয় ও মনে হয়। নিহার সাথে দু বছর সম্পর্ক আমাদের পরিবারের, অথচ মিহিরের ওই অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে কীভাবে নিজের স্বার্থটা বুঝে নিয়ে বড়লোক ছেলে দেখে বিয়ে করে নিলো। অথচ যাকে কোনোদিন দেখেনি জানেনি সেই মেয়েটা কীভাবে অল্প কয়েকদিনেই সবটা নিজের দ্বায়িত্বে সপে নিয়েছে। চেহারা বা গুনে কোনো দিকেই তো মাসনুন কমা নয় নিহার থেকে।

কথাগুলো বলে ক্ষান্ত হলেন। বৃদ্ধাও নিরুত্তর। রোকেয়া যে ভুলকিছু বলেননি তা সে জানে। তবুও ভয় হয় মাসনুনের এত সুন্দর চেহারা, যোগ্যতা দেখে। যদি মেয়েটা ছেড়ে যায় নিহার মতো! যদি নিজের স্বার্থের লোভে বাচ্চাগুলোকে দূরে ঠেলে দেয়!

……

মাসনুন গায়ের জামা পালটে একবার ওপর থেকে উঁকি দিলো ডাইনিং রুমে। লাইট নেভানো, তার মানে রোকেয়া বেগম বাচ্চা দুটোকে নিয়ে শুয়ে পড়েছেন। এ বাড়িতে এই একটা অসুবিধা। সকলেই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে অথচ মাসনুন ওর বাবা মায়ের সাথে কত রাত অব্দি গল্পগুজব করে পড়াশোনা করে ঘুমুতে প্রায় একটা বেজে যেত রোজ দিনই। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘরে এলো, বাচ্চা দুটোর সাথে বেশ সময় কাটে কিন্তু এখন তো ওরাও নেই। অগত্যা খাটের ওপর বসে ফোনটা হাতে নিলো। কিছুক্ষণ ফোনে মুখ গুঁজে রইলে আচানক নাকে একটা খুব সুন্দর সুবাস এসে ঠেকলো। নড়েচড়ে ওঠার আগেই নিজের সামনে পুরুষালী অবয়ব দেখে ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো। মিহিরকে নিজের সামনে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেও কিছু বলল না। সবসময়ই ও নিজেই কেনো বলবে! মাসনুনকে চুপ দেখে মিহির কী বলবে কী না ভেবে সরে গেলো৷ টেবিলের কাছটায় বসে কীসব কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মাসনুন কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইলো, আশ্চর্য লোক তো! এভাবে সামনে এসে সরে গেলো কেনো! হাত থেকে ফোনটা রেখে দিলো ধপ করে। উঠে দাঁড়িয়ে আলমারি থেকে নিজের ব্যাগটা বের করে দুপুরে গুছিয়ে রাখা কাপড় গুলো একে একে ব্যাগে ঢোকাতে লাগলো। মিহির নিজের কাজ ছেড়ে স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখলো মাসনুনের কাজ। এক সময় না পেরে মুখ ফুটে বলল,

– ব্যাগ গোছাচ্ছেন কেনো আপনি? কোথায় যাবেন?

– বাড়ি।

এটুকু বলে আরও দ্বিগুণ শব্দ করে জামাকাপড় গোছাতে থাকলো। মিহির উঠে এসে বলল,

– হঠাৎ! কখন যাবেন?

রাগে জেদে মাসনুনের হাত পা গরম হয়ে এলো। দাঁত খিঁচিয়ে বলল,

– আজ, এক্ষুনি যাবো।

– এখন! কী হয়েছে? কিছু লাগবে? আমায় বলুন!

মিহিরের কিঞ্চিৎ উচ্চরব, আর উদ্বিগ্ন গলাটা মাসনুনের অভিমান মিশ্রিত রাগটা আরও বাড়িয়ে দিলো। তীক্ষ্ণ গলায় বলল,

– কেনো বলবো? কে আপনি যে আপনাকে বলতে হবে! আমি তো এ বাড়িতেই আর থাকতে চাইনা। ভূতের সাথে সংসার করলেও মানুষ দুটো কথা বলতে পারে। আমায় আগে বললেই হতো একটা বোবার সাথে সংসার করতে হবে!

জামা কাপড় ঢুকিয়ে ব্যাগের চেইন লাগিয়ে হাতে তুলে নিতে গেলেই চাপ পড়লো হাতে। পুরুষালী হাতটা মাসনুনের হাতটা ব্যাগ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরিয়ে আনলো নিজের কাছে। মন্থর গলায় বলল,

– রাগ করেছেন? স্যরি! আসলে আমি কীভাবে কী বলবো অত বুঝিনা।

মিহিরের কথায় মাসনুন কড়া চোখে তাকালো। আজ প্রথম বারের মতো যেনো মিহির ওর অভিযোগ নিঃশব্দেই বুঝে নিলো। মাসনুনকে আরেকটু সরিয়ে এনে বলল,

– সত্যি স্যরি। আসলে আমি আপনাকে একটা জিনিস দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কী বলে দেবো সেটা বুঝতে পারিনি বলে সরে এসেছি।

মাসনুন গাল ফুলিয়েই দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ মুখ অতীব শান্ত। যেনো মিহিরের কথা গুলো ওর কানে যায়নি। মিহির ওর এমন নিস্ক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখে সরে গেলো৷ টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা ফুলের ছোট্ট মালা নিজের হাতের মুঠোয় এনে মাসনুনের সামনে ধরে বলল,

– আপনি যেই গাড়িটার দিকে তাকিয়েছিলেন ওটা কেনার সামর্থ্য আপাতত আমার নেই তবে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলের দোকান থেকে মালাটা কেনার সামর্থ্যটা আছে, তাই এটাই এনেছি। কিন্তু কোথায় গাড়ি আর কোথায় ফুলের মালা। তাই এই তুচ্ছ জিনিসটা দিতে চেয়েও পারিনি।

– সত্যি করে বলুন তো অ্যাক্সিডেন্টে শুধু হাতেই লেগেছিলো নাকি মাথা, চোখ এ দুটোও গ্যাছে?

মিহির প্রচণ্ড হতবাক হলো এরূপ প্রশ্নে। বিস্মিত রূপে জিগ্যেস করলো,

– মানে!

– সব মেয়েকেই গাড়ি আর টাকার লোভী ভাবেন? নাকি অন্ধ আপনি! আমি কোনো গাড়ির দিকে নয় এই ফুলের দিকেই তাকিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আহাম্মক স্বামী এটুকুও বোঝেনি। এনেছে তো এনেছে তার সাথে ফালতু সব ধারণা মাথায় গুঁজে বসেছেন। যত্তসব।

মিহির নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলো ধুপধাপ পায়ে হেঁটে গিয়ে খাটে বসা মাসনুন কে। ভাইয়া ঠিকই বলতো, ও আসলেই বোকা। ওর দ্বারা প্রেম সম্ভব না। না তো এমন বোকা বোকা কাজ কে করে! হাতের মালাটার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে এগিয়ে মাসনুনের পাশে বসে বলল,

– নিজেই তো বললেন আপনার স্বামী আহাম্মক। একটু মানিয়ে নিতে পারবেন না?

মাসনুন অগ্নিচোখে তাকায়৷ ক্ষ্যাপাটে গলায় বলে,

– সবই আমি করবো। আপনার দ্বারা তো এই মালাটুকুও নিজের বউকে দেওয়া সম্ভব না। কবুল টাও কী অন্যকেউ বলে দিয়েছিলো? আমিতো ওটা নিয়েও ডাউটে আছি।

বলে আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মিহির মুচকি হাসলো। হাতের মালাটা তুলে মাসনুনের খোঁপায় পড়িয়ে দিতে দিতে বলল,

– না এ বিষয়ে ডাউট রাখার দরকার নেই।আপনি বউটা আমারই।

.
.
.
চলমান