বাড়িয়ে দাও তোমার হাত পর্ব-০৬

0
188

#বাড়িয়ে_দাও_তোমার_হাত
#ষষ্ঠ_পর্ব
#হুমাইরা_হাসান
________________________

– আপনাকে আমি বলেছিলাম আমার জন্য চা বানাতে? বলুন, বলেছিলাম?

মিহির ডায়ে বাঁয়ে ঘনঘন মাথা ঘোরালো। মাসনুন হাতের ছুড়িটা মিহিরের মুখের কাছাকাছি ধরে বলল,

– তাহলে আপনার দাদী কেনো আমাকে খোটা দিচ্ছে হু? আমি কী বলেছি তার গুনধর নাতিকে চা বানাতে নাকি বলেছি চিনি দিয়ে গোসল করতে?

– কোনোটাই না..

মিহির প্রচণ্ড আতঙ্কিত মুখাবয়বে ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে বলল। আজ অব্দি কোনো বউকে ছুড়ি হাতে নিয়ে এভাবে স্বামীর সামনে দাঁড়িয়ে শাসাতে দেখেছে বলে মনে হয়না। সিনেমাতে একবার দেখেছিল মিহির। মনে হয়েছিলো এমন দস্যি মেয়ে সত্যিই হয় নাকি! কিন্তু বাস্তব দস্যিটার উদাহরণ দেখাতে খোদা যে ওর কপালে একটা দস্যিই পাঠাবেন তা কস্মিনকালেও ভাবেনি। মাসনুন ছুড়িটা নামিয়ে পিছিয়ে গেলো। মিহির হাতের গ্লাসটা ধপ করে বেসিনের ওপর রেখে সরে যেতে নিলে মাসনুন রূঢ় স্বরে বলল,

– এক পা যদি নড়েছেন।

বলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। মিহির স্তম্ভিত নজরে চেয়ে রইলো। এ কোন জ্বালায় পড়লো ও! এসে তো ছিলো রান্নাঘরের পানির গ্লাসটা রাখতে। এসেই এক হা-মলার শিকার হয়েছে,এখন আবার ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে কী করবে মেয়েটা! মিহিরের আগেই ভাবা উচিত ছিলো সারাটা দুপুর থেকে বিকাল সিমি আর শিহাবের সামনে দাদী যতবার খোঁচা দিয়ে কথাগুলো বলেছে মেয়েটা ততবারই শান্ত নজরে ওর দিকে তাকিয়েছে। সে চাহনির অর্থোদ্ধার তখন হয়তো করতে পারেনি তবে এখন বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। মাসনুন ছুড়িটা হাত থেকে নামিয়ে একটা প্লেট আর ফর্ক এনে মিহিরের সামনে ধরে বলল,

– হু ধরুন।

মিহির বাধ্য ছেলেটির মতো থালটা হাতে নিলে মাসনুন আবারও শাসানির ভঙ্গিতে বলল,

– একটা টুকরো যদি অবশিষ্ট থাকে মি.মিহির আবসার। আপনাকে আমি অবশিষ্ট রাখবো না।

মিহির বিবশ চোখে তাকালো হাতের প্লেটের মধ্যে রাখা কতগুলো ফলের টুকরো গুলোর দিকে। যেটা এক কথায় ওর অপছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখা যায়। কিন্তু মাসনুনের চোখের দিকে তাকিয়ে সে কথাটা বলার উত্তম সময় একেবারেই মনে হচ্ছে না। তবুও কেশেকুশে খানিক গাম্ভীর্য এঁটে তথা ভঙ্গিমায় বলল,

– আম..আমি ফল খেতে পছন্দ করিন্..

– আমি একবারও জিগ্যেস করেছি আপনি ফল খান কী না? খেতে বলেছি খাবেন না তো খবর করে রেখে দেবো।

বলে চা-নাস্তার ট্রে আর ফলের টুকরো রাখা প্লেট হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং স্পেসে এলো। মিহিরও কেমন যান্ত্রিক ভঙ্গিমাতে প্লেট টা নিয়ে ওর পিছু পিছু এলো। সোফাতে রোকেয়া বেগম, আছিয়া খাতুন, রোহান-রুহি বসে। মাসনুন সেখানে এক এক করে সবার হাতে নাস্তা আর চায়ের কাপ দিয়ে বসলো। কিন্তু আছিয়া বেগম হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিতে গেলে মাসনুন কাপটা নিয়ে অন্যখানে বসলো। প্রসারিত নয়নে তাকালেন আছিয়া খাতুন। মেয়েটা তার জন্য চা আনলো না! সবার জন্য আনলো অথচ তার জন্য আনলো না? মাথাটা দপদপ করে উঠলো বৃদ্ধার। মাসনুন চায়ের কাপের বদলে প্লেট ভরা ফলগুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

– সবগুলো শেষ হওয়া চাই।

আছিয়া খাতুন আড়চোখে তাকালেন পায়ের ওপর পা তুলে বসে চা খেতে থাকা মেয়েটার দিকে। বিকেলে সবাই যখন বসে গল্প করছিলো সিমি বলেছিল, ‘তোমাকে এতো শুকনো লাগছে কেনো দাদী? তুমি কী ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করো না?’ বৃদ্ধা বেশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় বিলাপ করে বলেছিলেন, ‘আমার আর শরীর। হাড়গুলোতে ক্ষয় ধরেছে। শরীরে রক্ত নেই। ডাক্তার বলেছে ফলমূল বেশি করে খেতে।কিন্তু আমায় ফল এনে দেবে কে! আমিতো নিজেই নড়তে পারিনা। আমায় আর দরদ করে কে’। কথার ভাঁজে যে মাসনুনকে খোটা দেওয়ার সূক্ষ্ম ইঙ্গিত ছিলো তা বুঝতে উপস্থিত কারোর অসুবিধে হয়নি। সে কথার রেশ ধরে যে মাসনুন চায়ের বদলে থালভর্তি ফল এনেছে এটা উপলব্ধি করে মুখ জুড়ে কালো মেঘ নামলো আছিয়া খাতুনের। ফলের থালের দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ চোখে তাকালো চায়ের কাপের দিকে। দিনে তিনবেলা কড়া লিকার আর চিনি দিয়ে চা না খেলে মাথায় আগুন ধরে তার। এখন তাকে কী না চা দিলো না?

– কী হলো খাচ্ছেন না যে! আপনার মাজায় ব্যথা, হাড়গুলো ক্ষয় হচ্ছে। চোখের জ্যোতি কমে গেছে, রক্তশূন্যতা। এখন থেকে চা সহ মিষ্টি জিনিস খাওয়া বন্ধ। শুধু ফল শাক সবজি আর অল্প মসলার রান্না খাবেন।

– এ্যাঁ !

– জ্বি। এখন যেটা দিয়েছি শেষ করুন।

আছিয়া খাতুন কড়া চোখে মিহিরের দিকে তাকালো। মিহির কাটাচামচের আগা মুখে পুড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে ওদের৷ বৃদ্ধা মাসনুনের রাগটা মিহিরের ওপর ঝেরে বলল,

– এই ঢেমনা! তোর বউ কী বলছে এসব? চা ছাড়া আমার চলেনা জানিস না? আমি কী না সেই চা আর মিষ্টি বাদ দেবো? ওর কথায় নাকি? তোর বউকে বল এই অখাদ্য সরিয়ে আমার চা এনে দিতে।

– এই যে ওল্ড উইমেন! আমার দিকে তাকিয়ে আমায় বলুন। ওকে বলছেন কেনো?

মিহিরের বদলে মাসনুনের প্রত্যুত্তরে আছিয়া খাতুনের মেজাজের কাটাটা তরতর করে তুঙ্গে চড়ে গেলো। খিটমিটে বলল,

– দ্যাখ মাস্টারনি আমি আমার নাতিকে বলছি। বিয়ে করে নিজে তো বউ পাগলা হয়েছেই তা বলে আমিও কী ওর বউয়ের কথায় চলবো!

রোকেয়া বেগমের চায়ের কাপের চা সব পানিতে পরিনত হয়ে গেছে। অথচ মুখে নিতে পারেনি। বিস্মিত নয়নে দেখছে নিজের শ্বাশুড়ি আর ছেলেবউয়ের কাণ্ড। মিহির শঙ্কিত মনে ভাবছে দুটো দস্যি মিলে কী এবার ঝগড়া শুরু করবে!

– বিয়ে করেছে যখন অবশ্যই বউ পাগলা হবে। নাকি চাচ্ছেন পরনারীর পাগলা হবে হ্যাঁ? আমার স্বামীর তো আমার প্রতিই পাগলা হতে হবে কেনো আপনার স্বামী কী অন্য নারীর পাগলা ছিলো নাকি?

– নাউজুবিল্লাহ্ . . আস্তাগফিরুল্লাহ্! এই মেয়ে কী বলছে খোদা খোদা! আমার স্বামী কেনো অন্য মেয়ের পাগলা হবে বেয়াদব মেয়ে।

– তাহলে আমার স্বামী আমার পাগলা হলে অসুবিধে টা কোথায়। এভাবে কথায় কথায় খোটা দিচ্ছেন কেনো? অন্যের সামনে ভালোই তো ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন কেউ আপনার যত্ন করে না। এখন যখন যত্ন করে ফল কেটে দিয়েছি তাহলে ক্ষেপছেন কেনো। চুপচাপ ফলগুলো শেষ করুন। না তো মাস্টারনি আজকে আপনার ক্লাস নিয়ে রাখবে বলে দিচ্ছি।

আছিয়া খাতুন মনে মনে বেশ দমে গেলেন। কিন্তু বাইরে কপট জেদ দেখিয়ে স্থিরমূর্তি হয়ে গাঁট হয়ে রইলেন৷ খানিক ওভাবেই বসে থেকে একটা একটা করে ফল চিবোতে লাগলেন। মিহির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি আঁটকে রেখেছে। কিন্তু তা প্রকাশ করার মতো দুঃসাহসিক কাজটা করার সাহস দেখালো না। রোকেয়া বেগমও হাসি চেপে উঠে গেলেন। রুহি চুপ করে থাকলেও রোহান বিস্কুটে কামড় বসিয়ে বলল,

– মা ঠিক বলেছে। ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। এখন থেকে রোজ খাবে।

– চুপ কর। দূর হ আমার সামনে থেকে সব।

ক্ষ্যাপাটে গলায় খেঁকিয়ে উঠলেন বৃদ্ধা। মিহির রোহান আর রুহিকে নিয়ে নিঃশব্দে চলে গেলো উপরের ঘরে৷ বৃদ্ধা কর্কশ মুখাবয়বে তীব্র বিষাদ নিয়ে ফলগুলো চিবোচ্ছেন আর আড়চোখে মাসনুনের দিকে তাকাচ্ছেন৷ মাসনুন ততক্ষণ অব্দি গাঁট হয়ে বসে রইলো যতক্ষণ না শেষ হয়। অবশেষে থালটা হাতে নিয়ে বলল,

– এখন থেকে ঠিক দুই ঘন্টা পর ভাত খাবেন। আর কী খাবেন সেটা আমি..

– কোনো দরকার নেই। আমার পেট ভরে গেছে।

বলে উঠে কোনো রকমে গজরাতে গজরাতে ঘরে ঢুকলো। এ বেলায় আর এ তল্লাটে পা মাড়াবেন না সেটা মাসনুনের ও বুঝতে অসুবিধে হলোনা। ক্ষীণ হেসে নিজের কাজ সেরে ঘরে গেলো।

……..

রাতের বারোটা৷ মাসনুন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ফোনে গল্প করছে আর হাসছে। প্রায় দশ মিনিট ধরে কথা বলছে তবুও ছাড়ার নাম নেই। পেছনে মিহির এসে দাঁড়িয়েছে। বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে এ ঘরে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ অথচ মেয়েটা এই যে ফোনে কথা শুরু করেছে আর ছাড়ার নাম নেই। এত কথা কার সাথে? তাও আবার এত রাত করে। মিহিরের মনে মনে কেমন একটা অস্বস্তি আর অসন্তুষ্টি কাজ করলো। ড্রয়ার থেকে একটা টি-শার্ট বের করে পাঞ্জাবী চেঞ্জ করে টি-শার্ট পরে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো। সাড়ে বারোটা বেজে গেলো অথচ মাসনুন এখনো কথা বলেই যাচ্ছে। এবার রাগ ও হলো খানিক মিহিরের। এত রাতে মাসনুন কার সাথে এত সুন্দর করে কথা বলছে তা জানার তীব্র ইচ্ছে হলো। একটু এগিয়ে গেলে কানে এলো মাসনুনের কণ্ঠ,

– আরে যাহ্! ওসব কিছুই না। তার সাথে আমার সম্পর্কটা একেবারে ফরমাল। ঐ টাইপ কিছুনা।

এটুকু শুনে ভ্রুদ্বয়ে ব্যাপক কুঞ্চন ঘটলো। এরকম ব্যক্তিগত ব্যাপার গুলোও ওদের আলোচনার বিষয়বস্তু ভাবতেই কেমন একটা রুষ্টতা কাজ করলো। সাথে আগ্রহ ও। খানিক পরে আবারও কানে এলো মাসনুনের তাচ্ছিল্য ভরা স্বর,

– রোমান্টিক আর এই লোক! ধ্যাত্। ছাড়ো তো আজাইরা টপিক। তোমার অবস্থা বলো, অনেকদিন দেখা হয়না।

মিহিরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। দ্রুতপায়ে সরে এসে বিছানায় বসলো। এ ধরণের কথাও মেয়েটা বলছে? কার সাথে বলছে এসব? কথার ধাঁচ শুনে তো মনে হলো নিশ্চয়ই কোনো ছেলে! ক্ষুব্ধ মেজাজে বিছানায় আধশোয়া চশমাটা খুলে হয়ে বাঁ হাতখানা চোখের ওপর রেখে চুপ করে পড়ে রইলো। মাসনুন এলো আরও পাঁচ মিনিট পরে। শোবার প্রস্তুতি নিয়ে বিছানাতে বসে মিহিরের দিকে এক পলক তাকালো। খানিক পরে বলল,

– আপনার ওষুধ গুলো খেয়েছেন?

মিহির জবাব দিলোনা। মাসনুন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ললাটে ভাঁজ পড়লো৷ মিহিরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না আদৌ ঘুমাচ্ছে কী না। কিন্তু কথার জবাব না দেওয়াতে বেশ অবাক হলো। কিন্তু নিজেও আর কোনো আগ্রহ না দেখিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই কানে এলো থমথমে গলা,

– খাওয়ার সময় নিচে গেলেন না কেনো?

মাসনুন ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পেছনে তাকালো। মিহিরের অবস্থানের পরিবর্তন একই দেখে আবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

– ঘুমাননি যখন আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না কেনো?

– আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন?

মিহিরের কণ্ঠস্বর বেশ শক্ত ঠেকলো। মাসনুন অবাক হয়ে বলল,

– আপনি রেগে আছেন?

– একদমই না। এতরাতে কার সাথে এত কথা আপনার?

মাসনুন আড়চোখে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে হেয়ালি করে বলল,

– ফ্রেন্ড।

– ফ্রেন্ড, এত রাতে? তাও আবার হাসব্যান্ড ওয়াইফের পারসোনাল বিষয় নিয়ে কথা?

মাসনুন উঠে বসলো। এক হাত বাড়িয়ে ঘরের লাইট জ্বেলে বলল,

– আপনি কান পেতেছিলেন?

মিহির এই পর্যায়ে চোখ থেকে হাত নামালো। মাসনুনের চোখে তাকিয়ে বলল,

– ঘরটা আমারও। তাই আমি যখন তখন আসতে পারি। আপনি যখন আমার ঘরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন তাহলে আমার কানে আসা অস্বাভাবিক কিছু তো নয়!

মাসনুন বেশ অনেকটা হতবাক হলো মিহিরের কড়া গলায়। এরকম ভাবে হয়তো আজই প্রথম কথা বলল ওর সাথে। কিন্তু তার কারণ শুধুই কী ব্যক্তিগত বিষয় অন্যকে বলা?

– আপনার ঘরে থাকি বলে খোটা দিচ্ছেন? আমি আগেই তো বলেছিলাম অসুবিধে হলে অন্য ঘর দেখিয়ে দিন। নিজে আমাকে এখানে রেখে এখন খোটা দিচ্ছেন আমায়?

– অন্য ঘরে থাকলে ফোনে কথা বলতে সুবিধা হবে তাই?

মাসনুনের বিস্ময় যেনো মাত্রা ছাড়ালো। মিহিরকে এ পর্যায়ে ভীষণ গুরুগম্ভীর হিংসুটে মনে হলো। এক হাতের কনুই এ ভর দিয়ে উঠে বসলো মিহির। কৈফিয়ত চেয়ে জিগ্যেস করলো,

– বলুন? এত রাতে কারো সাথে কেনো কথা বলেবন? সেই বা আপনাকে কেনো ফোন দেবে। এটা কোনো ম্যানারস এর মধ্যে পড়ে না?

মাসনুন বিব্রত স্বরে বলল,

– ও যাস্ট আমার ফ্রেন্ড আর কিছুনা। অনেকদিন দেখা হয়নি তাই কল করেছিলো।এতে এতো রিয়্যাক্ট করার কী আছে?

– অবশ্যই আছে। ফ্রেন্ড কী অন্যকিছু সেসব আমার দেখার ইচ্ছে নেই। কিন্তু আমার বউ এত রাত করে কারো সাথে কথা বলবে তা আমি মোটেও পছন্দ করবো না। কথা শুনে তো মনে হলো অবশ্যই ছেলে।

মাসনুন নিরুত্তর চেয়ে রইলো মিহিরের মুখের দিকে। মিহিরের গম্ভীর চেহারাটা ভীষণ দারুণ লাগলো ওর। মনে মনে হাসিও পেলো। কিন্তু সেটা দমিয়ে রাখলো মিহিরকে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার মনোবাসনাতে। কপালে ভাঁজ ফেলে কড়া গলায় বলল,

– দেখুন আমার বন্ধু আমাকে ফোন দিতেই পারে। এতে এতো রেগে যাওয়ার কী আছে? আপনি কী আমার সবকিছুতে কন্ট্রোল করতে চান যে ফোনে কথা বলতেও পারমিশন লাগবে?

– আমি কিচ্ছু কন্ট্রোল করতে চাইনা মাসনুন। কিন্তু একটা কথা শুনে রাখুন আপনার আমাকে পছন্দ নাই হতে পারে। কিন্তু তা বলে আমার বউ হয়ে থেকে অন্য ছেলের সাথে এত কথা বললে আমার একেবারেই ভালো লাগবে না।

– তাহলে কী বলতে চাচ্ছেন আপনার বউয়ের ট্যাগ সরিয়ে অন্যদের সাথে কথা বলতে হবে?

মিহির কিয়ৎকাল নির্বিকার চেয়ে রইলো মাসনুনের মুখের দিকে। অতঃপর মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

– হয়তো।

এবার মাসনুনের ভীষণ রাগ হলো। মিহিরের এহেন প্রত্যুত্তরে তেঁতে উঠলো। অকস্মাৎ মিহিরের টি-শার্ট দু-হাতে খামচে ধরে টেনে বলল,

– কী বললেন? আপনি ইন্ডাইরেক্টলি ডিভোর্সের কথা বললেন আমায়? বিয়ে কী ছেলেখেলা মনে হয় যে সেদিন করলাম আর আজ ভেঙে দিলাম? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন আমিও মাসনুন কবির। আমার সাথে বেশি মক্কর ছক্কর করলে একদম খবর করে রেখে দেবো।

আচমকাই মাসনুনের রক্তিম চোখ আর উচ্চরবে মিহির বিব্রত হলো। এতটা রেগে গেলো মেয়েটা! তবুও নির্লিপ্ত ভাব বজায় রেখে বলল,

– শার্ট ছাড়ুন।

মাসনুন মাঝামাঝি দূরত্বকেও একেবারে কমিয়ে এগিয়ে এলো। আরও দ্বিগুণ শক্ত করে চেপে ধরলো জেদ দেখিয়ে। থমথমে গলায় বলল,

– ছাড়বো না।

– ছাড়ুন।

– না ছাড়লে কী করবেন?

মিহির প্রসারিত নয়নে তাকালো মাসনুনের দিকে। রাগে কম্পিত মাসনুনের ফর্সা মুখটার নাকের ডগা, ঠোঁট লালাভ হয়ে গেছে। চাহনির থাকে ঠোঁট দুটোও সমানতালে কাঁপছে। অকস্মাৎ কোন বেপরোয়া জোয়ার এলো তার ব্যাখ্যা হয়তো ওর জানা নেই,কিন্তু সেই জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে চূড়ান্ত ভয়ংকর কাণ্ডটা করে বসলো। বাঁ হাতটা মাসনুনের ঘাড়ের পেছনে দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলিতে চেপে ধরলো চোয়াল। টকটকে ঠোঁট দুটোয় ভীষণ অপ্রত্যাশিতভাবে কামড় বসিয়ে দিলো। মুহুর্তের মাঝেই মাসনুনের হাতের দৃঢ়তা আলগা করে নেতিয়ে গেলো যেনো। স্বামী নামক মানুষটার আড়ষ্ট, জড়ত্বভরা যে রূপটায় এতদিনে অভ্যস্ত হয়েছে তার ঠিক বিপরীত রূপটা সামাল দেওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই এহেন স্পর্শ সর্বাঙ্গে শিউলি ফুটিয়ে দিলো৷ দুহাতে খামচে ধরলো বুকের কাছে সজোরে। মিহির যেনো আজ অন্যরূপী। মাথাভর্তি জেদ আর বুকভর্তি তৃষ্ণা। মাসনুনের অধরে ক্রমাগত দংশনের প্রখরতা হুট করে নরম ছোঁয়াতে পরিণত হলো। ঘাড়ের চাপটা আরও দ্বিগুণ করে মাসনুনকে নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে শুষে নিলো সমস্ত অধরামৃত। মাসনুন-মিহির দুটো মানুষের সত্তাটা যেন আচমকা একই উন্মাদনায় আছড়ে পড়লো। চোখ বুজে মিশে রইলো, লেপ্টে রইলো দুটো অধর আর হৃদবক্ষে তোলপাড় তোলা অনুভূতি।

.
.
.
চলমান।

#Humu_❤️