বাবুই পাখি পর্ব-০৫

0
789

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৫
Writer-Afnan Lara
.
আরিয়ান চিপস রেখে পকেট থেকে ললিপপ নিয়ে মুখে পুরে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইমাদ একবার রাখাল আঙ্কেলের দিকে তাকাচ্ছে আবার জাকিয়া আন্টির দিকে তাকাচ্ছে
.
-“হুম!তো এটার কারণে তোমায় যদি বাড়ি ছাড়া করি কলোনিতে একটা বদনাম হবে বৈকি!কি করা যায় তাহলে?একটা তো শাস্তি দেবোই।আমাদের কলিজাকে টুকরো করে রেঁধে ফেললে।এটা মারাত্মক অপরাধ”
.
-“ওগো তুমি ঠিক বলেছো।এরে কও আমার বাচ্চারমতন আরেকটা বাচ্চা এনে দিতে তাহলে ক্ষমা করবো হুম!”
.
-“ঢাকায় আমি এমনটা কই খুঁজবো?বাজারে তো তেমন পাবো না মনে হয়”
.
রাখাল আঙ্কেল ব্রু কুঁচকে বললেন,”আমাদের বাসার মতন মেবি অন্য বাসাতেও পাবে।বাট পেতে তোমায় হবে।ওকে বাই।
এক দিনের মধ্যে কাঁঠাল এনে বাসার দরজার সামনে রেখে যাবা তা নাহলে!!…”
.
আরিয়ান ললিপপ মুখ থেকে বের করে বললো,”বের করে দেবে তাই না?”
.
-“না!বের করলে আমার সম্মান কলোনিতে থাকবে না।তাহলে তোমায় গ্রামে পাঠাবো আনার জন্য।আমায় চেনো না চান্দু!”
.
কথা শেষ করে দুজনে ক্ষেপে চলে গেলো এবার।আরিয়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে সেও চলে গেছে।ইমাদ দরজা লাগিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো,”শান্তি?”
.
-“সরি।আমি জানতাম না।
আমাদের বাসায় তো সচরাচর এগুলো হয়।গাছ থেকে পেড়ে রাঁধা হয় বাট এখানে পরিস্থিতি অন্যরকম হবে ভাবিনি আসলে।”
.
-“আপনাদের বাসায় আছে কাঁঠাল গাছ আছে?”
.
-“আছে মানে!আমাদের বাসার সামনে ইয়া বড় একটা কাঁঠাল গাছ আছে।
নিচ থেকে উপর পর্যন্ত কাঁঠাল ধরে”
.
-“ইউরেকা।তাহলে আমি গিয়ে ওখান থেকে একটা নিয়ে আনবো।”
.
পুুতুল ব্রু কুঁচকে বললো,”ওতো সোজা না।আমাদের বাসায় পাহারাদার আছে।ঢুকা সহজ হলেও ওখান থেকে বের হওয়া অনেক টাফ”
.
-“আপনি বের হয়েছিলেন কি করে?”
.
পুতুল মুখ বাঁকিয়ে বললো,”ওটা আপনার কাম্য নয়।বাদ দিন”
.
-“ওয়ে টা বললেই হয়।কাঁঠালটা অনেক জরুরি।বাজারে পাবো কিনা জানি না।
তা নাহলে আঙ্কেল আমায় সত্যি সত্যি গ্রামে পাঠাবে।”
.
-“আমি বোরকা পরে বের হয়েছিলাম।কিছু পথ আসার পর ওরা আমায় চিনে ফেলেছে বলে দৌড়ানোর সময় বোরকা খুলতে হলো যাতে দূর থেকে জামা পরা দেখলে চিনতে না পারে।”
.
-“বোরকা পাবো কই!আচ্ছা ম্যানেজ করবো সমস্যা নেই।দেখি কি হয়।আগে বাজারে যেতে হবে।ওখানে পেয়ে গেলে আর আপনার বাড়িতে ধরা খেতে যাব না”
—–
-“শুনছিস রিজবি?”
.
-“কিরে তুই এসময়ে কল করলি?কোনো বিপদ হয়েছে কি?”
.
-“বিপদ বলতে তোর লম্বু ছোট বোনের কালো বোরকাটা লাগবে আমার”
.
-“কিহ!কেন?”
.
-“দরকার আছে।প্লিস বন্দবস্ত করে দে।”
.
-“আগে বলবি তো বোরকা দিয়ে কি করবি?”
.
-“পরে পরে!আগে ব্যবস্থা করে দে।আর্জেন্ট!”
.
ইমাদের কথামতন রিজবি তার ছোট বোনের বোরকা হাইজ্যাক করে এনে দিলো ইমাদকে।ইমাদ ওকে জানালো সে কেন নিয়েছে বোরকাটা।তো রাত আটটার দিকে তথাকথিত সময়ে বোরকা পরে সে বেরিয়ে পড়েছে পুতুলদের বাড়ির উদ্দেশ্য। পুতুলের থেকে ঠিকানাটা নিয়ে অবশেষে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো সে।গেট দিয়ে আটকানো সব।বিশাল বড় গেট।তাতে যদিও দারোয়ান নেই।তবে পুতুলের কথামতন ভেতরে দারোয়ান থাকতে পারে।গেটে কয়েকটা টোকা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো সে
ভেতর থেকে একটা লোক গেট খুলে চোখ বড় করে বললো,”কি চাই?”
.
ইমাদ ইশারা ইঙ্গিত করে বুঝালো সে কথা বলতে পারে না।বোবা।
লোকটা মাথা চুলকে ভেতরের দিকে চলে গেলো বাকিদের বলতে
এই সুযোগে ইমাদ বাসার ভেতরে ঢুকে বাগানের দিকে চলে গেছে।সব গাছ নজরে পড়লেও কাঁঠালগাছটা পড়ছে না।ঐ লোকটা বাকি দুজন নিয়ে এসে দেখলো বোরকা পরা মেয়েটি নেই তাই সে গেট লাগিয়ে আবার বসে থাকলো।সারা বাগান খুঁজে অবশেষে ইমাদের চোখে পড়লো গেটের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কাঁঠাল গাছটা
টর্চ মারতে হয়নি।গেটে থাকা বাতির আলোয় স্পষ্ট দেখা যায়।
অথচ সে কিনা এই গাছটা পেরিয়ে এতক্ষণ হুদাই সময় নষ্ট করলো।এবার সেখানে যাবে কি করে?অলরেডি তিনজন এসে দাঁড়িয়ে আছে।ইমাদ নিচের থেকে একটা ইটের কণা হাতে নিয়ে আরেকদিকে ছুঁড়ে মারলো।আওয়াজ পেয়ে ওরা সবাই ওদিকে ছুটে গেলো দেখার জন্য।এই সুযোগো ইমাদ গাছটার কাছে এসে নিচ থেকে কাঁচা কাঁঠাল একটা কেটে দিলো দৌড়।তবে ইমাদকে দেখে ফেললো পুতুলের বাবা।কোমড়ে হাত দিয়ে বাগানে নেমে চেঁচিয়ে বললেন,”আমার গাছের কাঁঠাল চুরি করে ফেললো একটা মেয়ে।আজাইরাগুলান কই ছিলি?”
.
-“সাহেব আমরা তো আওয়াজ পেয়ে ওদিকে দেখতে গেলাম”

ইমাদ হাঁপাতে হাঁপাতে শেষ।পথ দিয়ে আসতে আসতে বোরকা খুলে হাতে নিলো।পুতুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।ইমাদ বাসায় ঢুকে পানি চাইলো।পুতুল ছুটে গিয়ে পানি এনে দিলো ওকে।
.
-“বুঝলেন!!আপনার বাসা অনেকটা জেলখানার মতো।চারিদিকে বাউন্ডারি।আমার যা কষ্ট পোহাতে হলো!!শেষে দৌড়ানি খেয়ে আসলাম।”
.
কলিংবেল বাজছে।আবার কে এলো।ইমাদ সোফা থেকে উঠে দরজার ফুটো দিয়ে চেক করেই চোখ কপালে তুলে ফেললো।পিছনে তাকিয়ে বললো,”আমার বাবা এসে পড়েছে”
.
পুতুল মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় করে ফেললো।ইমাদ ওর হাতটা ধরে নিজের রুমে এনে বললো,”বাবা এখন আমার রুমে আসবে না।আপনি এখানে থাকুন”
.
পুতুল মাথা নাড়ালো।ইমাদ নিশ্বাস ফেলে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।বাবা হাতের ব্যাগটা ওর হাতে ধরিয়ে বললেন,”এত দেরি হলো কেন?”
.
-“ঐ আসলে ওয়াসরুমে ছিলাম।”
.
-“একি কাঁচা কাঠাল পেলি কই?”
.
-“ইয়ে মানে ওটা রাখাল আঙ্কেলের জন্য”
.
-“কেন?”
.
-“তার কাঁঠাল ভুলে কেটে রেঁধে ফেলেছি।”
.
বাবা ডাইনিং থেকে গ্লাসটা নিয়ে আবার রেখে দিলেন ইমাদের কথা শুনে।কপাল কুঁচকে বললেন,”সেকি!তুই তো ওমন ছেলে না।ভুলে করলি? কি হয়েছে বল তো”
.
-“না মানে ঐ ভুলেই কেটে ফেললাম।”
.
-“তো ঐ কাপল কুরুক্ষেত্র করে ফেলেনি?আমার কেমন যেন লাগছে”
.
-“হ্যাঁ করেছিল তো।তাই তো আনলাম আরেকটা।”
.
-“ভালো।চা বানা।মাথা ধরেছে অনেক।”
.
কথা বলতে বলতে বাবা তার রুমে চলে গেছেন।ইমাদ গেস্ট রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমে এসে ফিসফিস করে বললো,”আপাতত আমার রুমে থাকুন।আমি জানি না কি হবে।”
——
বাবার জন্য চা বসিয়ে ইমাদ গেলো কাঁঠাল দিয়ে আসতে।পুতুল ইমাদের রুমের আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে কিসব ভাবছিল।তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে একটা ভয়
আর সেটা হলো আজ তাকে ইমাদের সাথে এক রুমে থাকতে হবে না তো?
.
ইমাদ ফিরে এসে চা রেডি করে বাবার রুমে দিয়ে আসলো।নিজের রুমে ফেরত এসে দেখলো পুতুল বিছানায় বসে আছে চুপ করে।ইমাদ দরজাটা লাগিয়ে বললো,”আমি বাবার সাথে ঘুমাবো।আপনি এখানেই থাকিয়েন”
.
-“ঠিক আছে।”
.
-“ডিনারটা ও এখানেই করিয়েন।জানি না কতদিন আপনাকে বাবার থেকে লুকাতে পারবো তবে সব চেষ্টা আমি করবো।আপনি টেনসন নিয়েন না।”
.
-“ইমাদ এদিকে আয়!”
.
ইমাদ দরজা খুলে ছুটে গেলো আবার।বাবা ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করতে করতে বললেন,”তোর মা তোকে ডেকেছিল?”
.
-“নাহ।কেন?”
.
-“না তার তো স্বভাব।আমি না থাকলে ছেলেকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসা”
.
-“এভাবে বলছো কেন?আমি যাবোই বা কেন?এখন তো তোমার সাথে থাকার কথা”
.
-“তোর মা না ঐ সিনথিয়ার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছে? ওকে আমার একটুও পছন্দ না।এবার তো বলবি তোর মায়ের পছন্দই তোর পছন্দ।বাবার পছন্দ কিছু না”
.
-“তোমার ও পছন্দ করে রাখা কেউ আছে নাকি?তাহলে নাহয় দুটো বিয়েই করবো।বাবা মায়ের পছন্দে”
.
-“মশকরা করছিস?যাই হোক।তুই যেটাতে খুশি আমিও তাতেই খুশি।তবে আজ তোর চোখমুখ অন্যরকম লাগছে।কিছু হয়েছে?আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস নাকি?”
.
-“নাহ তো।কি লুকাবো।?”
.
-“না লুকালেই ভালো।আমার থেকে লুকিয়ে বেশিদিন থাকতে পারবি না।ধরা খাবিই।সেটা আবার ভুলবশত।”
.
ইমাদ জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো,”আচ্ছা আমি ডিনার রেডি করছি”
.
ইমাদ রান্নাঘরে এসে দেখলো পুতুল তরকারি গরম করছে।
চোখ কপালে তুলে ইমাদ ওকে এক কোণায় নিয়ে এসে বললো,”পাগল হয়ে গেছেন আপনি??বাবা দেখলে কি হবে জানেন?”
.
-“সব কাজ আপনি কেন করবেন।আর আপনার বাবা এখন এদিকে আসবেনা”
.
-“আপনি জানেন মনে হয়”
.
-“হ্যাঁ খুব জানি”
.
-“ইমাদ কোথায় তুই?আমার ঘড়িটা ঠিক করে দে তো”
.
বাবা কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছেন।ইমাদের কলিজা কাঁপছে।পুতুলকে নিজের পেছনে লুকিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে সে।
.
বাবা অর্ধেক পথ এসে থেমে গেলেন একটা কল আসায়।তাই ওদিকেই চলে গেলেন আপাতত।ইমাদ কপালের ঘাম মুছে পুতুলের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো তার রুমে।
.
-“একদম বের হবেন না বলে দিচ্ছি।এখানেই থাকুন”
.
পুতুল মুচকি হাসছে।ইমাদ গলার আর মুখের ঘাম মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে।পুতুল হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।একটা ছেলে তার জন্য বাসায় তার বাবার সাথে যুদ্ধ করছে।লুকোচুরি যুদ্ধ!
.
রাতে খাওয়া শেষ হওয়ার পর ইমাদ তার বালিশ নিয়ে বাবার কাছে গিয়ে বললো সে তার সাথে ঘুমাবে
বাবা অবাক চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,”ঠিক ধরেছিলাম যে তোর কিছু একটা হয়েছে।যাই হোক জানি এসব বলবি না।কিন্তু আমার সাথে ঘুমাতে পারবি না এখন।একা শোয়া অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।এখন কেউ পাশে শুইলে বেশ বিরক্তি এসে যায়।রাঙামাটিতে আমার কলিগ আমার সাথে ঘুমিয়েছিল।
সারারাত জেগে ছিলাম।দুচোখের পাতা এক করতে ভোর হয়ে গিয়েছিল।তাহলে ভাব তোর মা আমাকে দুনিয়ায় কতবড় শাস্তি দিলো”
.
ইমাদ মন খারাপ করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।বেশি থাকা যাবে না।নাহলে বাবা মায়ের নামে আরও একশো লাইন বলবে যা শুনতে একদম ভাল্লাগবে না।
পুতুল দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইমাদ বললো,”চিন্তার কিছু নেই।আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি ওখানে ঘুমাবো।আর আপনি আমার রুমে থাকুন।ভেতর থেকে লক করে রাখবেন।”
.
পুতুল মাথা নাড়ালো
.
ইমাদ পেছন ফিরতেই দেখলো বাবা আসছে।পুতুল চলে গেছে ততক্ষণে।বাবা টেবিল থেকে পানির বোতলটা নিয়ে বললেন,”এখানে কি করিস??যা ঘুমা।কত লেট হয়ে গেলো।সকালে অফিসে যাবি না?কাল তো তোর ফার্স্ট ডে”
.
-“হ্যাঁ মানে…”
.
-“তো যা।আমি লাইট অফ করবো”
.
ইমাদ বাধ্য হয়ে বালিশ নিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়লো
পুতুল তখন ওড়না রেখে চুলে খোঁপা করছিল।ভেবেছিল ওয়াসরুম থেকে এসে দরজা আটকাবে।
ইমাদকে হঠাৎ দেখে ওড়না পরে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো সে।
ইমাদ বালিশটা বিছানার উপর রেখে বললো,”বাবার জন্য যেতে পারছি না”
.
পুতুল উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”আমি নিচে শুতে পারবো।আমার কোনো সমস্যা নেই”
.
-“একটা রুমে একসাথে থাকা অনেক খারাপ একটা ব্যাপার”
.
-“আমরা তো!”
.
-“জানি আমরা ভালো।কিন্তু বিষয়টা খারাপ শুনাচ্ছে এবং দেখাচ্ছে”
.
ইমাদ রুমে কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার দরজা খুললো বের হবে বলে।ওমা বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছেন।মাথায় হাত দিয়ে ইমাদ বিছানায় এসে বসলো।পুতুল নিচে বালিশ নিয়ে বসতে যেতেই ইমাদ ওর হাত ধরে আটকালো ওকে।কপাল কুঁচকে বললো,”বিছানায় এসে শোন।এত দয়া দেখাতে হবে না।আমার মা আমাকে মেয়েদের সম্মান করতে শিখিয়েছে ভালোমতন।সুতরাং বিছানায় গিয়ে শোন।আমার বাসা আমি যেখানেই শুই সমস্যা নেই”
চলবে””