বাবুই পাখি পর্ব-০৬

0
810

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৬
Writer-Afnan Lara
.
ইমাদ বেশ শান্তভাবে শুয়ে পড়েছে নিচে।পুতুল গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে বিছানার এক কোণায় বসে।রুমে আপাতত ড্রিম লাইট জ্বলছে।যার কারণে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় না
ইমাদ আস্তে করে বললো,”আমার দিকে না তাকিয়ে ঘুমানোতে মন দিন”
.
পুতুল দুম করে শুয়ে পড়ে বললো,”জানলেন কি করে যে আমি তাকিয়ে ছিলাম?”
.
-“আন্দাজ করলাম।সেটা সঠিক হয়ে গেলো।”
.
পুতুল নিজের মাথায় নিজে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে নিজের বেকুবির জন্য।ইমাদ উঠে বসে পড়লো।পিঠ ব্যাথা করছে তার।পিঠে হাত দিয়ে চাপতে চাপতে দরজা খুলে উঁকি মারলো বাহিরে।
বাবা এখনও টিভি দেখেই চলেছেন।ইমাদ ঘাঁড়ে হাত দিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেললো আবার।ঘুম আসছে না তার।এরকম নিচে শোয়নি কখনও।পুতুল উঠে ইমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ড্রিম লাইটের আলোয় দেখা যায় সে পিঠ চাপছে।
.
-“পিঠে ব্যাথা করছে তাই না?আসুন এখানে শুয়ে পড়ুন।আমি নিচে শুতে পারবো”
.
ইমাদ ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,”এক কথা দুবার বলতে ভাল্লাগে না”
.
-“ঘাঁড়ে ব্যাথা হচ্ছে আপনার তাই বললাম।”
.
-“এত কেয়ারের দরকার নাই।চুপচাপ ঘুমান তো!”
.
পুতুল বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইট জ্বালিয়ে বললো,”আমি যাচ্ছি।থাকছি না এখানে।বাই”
.
কথাটা বলে পুতুল দরজা অবধি যেতেই ইমাদ ওর হাতটা ধরে আটকালো।মুখটা ফুলিয়ে বললো,”এসব কি?এত রাতে কই যাচ্ছেন আপনি?”
.
-“আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব।আপনার কি তাতে?আপনি বলার কে?”
.
ইমাদ হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বললো,”না যাবেন না।এখানে এসেছেন নিজের ইচ্ছাতে।যাবেন আমার ইচ্ছাতে।”
.
পুতুল চোখটা বড় করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে এখন।ইমাদ এখনও ধরে রেখেছে।পুতুল ব্যর্থ হয়ে বললো,”আপনি এখন জোর করছেন আমার সাথে।আমি থাকতে চাই না”
.
-“আপনার ইচ্ছা জানতে চাই না আমি।চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসেন নাহলে হাত বেঁধে বসিয়ে রাখবো।”
.
-“আপনি সাইকো টাইপ হয়ে যাচ্ছেন কেন?”
.
-“মা সম্মান করতে শিখিয়েছিল সেটা রাইট তবে আমার বাবার সাথেও কিছু মিল আছে। জোর খাটানো তার থেকে পেয়েছি।”
.
পুতুল ব্রু কুঁচকে বললো,”আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?”
.
ইমাদ ওকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,”চুপচাপ ঘুমান।মেজাজ খারাপ করবেন না।ভালোই ভালোই বিছানায় শুতে দিয়েছি আর উনি চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে আমায়”
.
-“আমি নিচে শুবো নাহয় এখন এই মূহুর্তে চলে যেতে চাই”
.
-“না আপনি নিচে শুবেন না।”
.
কথাটা বলে ইমাদ নিচে বসে গেলো।পুতুল চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে দিয়ে দু মিনিট তাকিয়ে থেকে উঠে দৌড় দিলো দরজার দিকে।বাবা তখন তার রুমে চলে গেছিলেন।পুতুল দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে মেইন দরজা পর্যন্ত এসে আর যেতে পারলো না কারণ ইমাদ আটকে ফেলেছে ওকে।তাও মুখে হাত দিয়ে।ইমাদ ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,”বাবা জেগে আছে এখনও।কোনো শব্দ না”
.
পুতুল ইমাদের হাতটাকে নখ দিয়ে খাঁমছে রক্ত বের করে ফেলেছে
তাতে ইমাদ টু শব্দ ও করেনি
ওকে চুপচাপ নিজের রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগালো সে।পুতুলকে ছেড়ে হাতের দিকে তাকিয়ে একটু ঝেড়ে নিলো হাতটা তারপর ওয়ারড্রব থেকে একটা ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ নিয়ে হাতে লাগিয়ে নিয়ে বললো,”আপনি এরকম নাছোড়বান্দা তা জানতাম না আমি”
.
-“আপনি এরকম জোর করতে পারেন সেটাও জানতাম না আমি।আমাকে রেখে কি লাভ হচ্ছে আপনার?”
.
-“রাতে এসময়ে আপনাকে ঢাকার রাস্তা সালাম করবে?ঢাকার মেয়ে হয়ে এটা জানার কথা আপনার”
.
পুতুল মাথা নিচু করে পা ভাঁজ করে বসলো বিছানায়।ইমাদ নিচ থেকে বালিশ নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে চলে গেছে।পুতুল নিজের আঙুলে রক্ত দেখে ঢোক গিলে ভাবলো ইমাদকে সে আঘাত করেছে।
-“একেবারে রক্তই বের হলো।ইশ!উনি তো আমার ভালোর জন্যই করলেন।ধুর আমিও না!পরিস্থিতি বুঝে রিয়েক্ট করতে পারি না।”
.
ইমাদ গেস্ট রুমে এসে শুয়েছে।পুতুল পা টিপে টিপে গেস্ট রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ইমাদকে দেখলো কিছুক্ষণ।ইমাদ হাতটা সোজা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।পুতুল একটু এগিয়ে এসে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে মুখটা আরও ছোট করে ফেললো।ইমাদ চোখ খুলে বললো,”বাবাকে জানিয়ে ছাড়বেন তাই না?”
.
-“না আসলে সরি বলতে এলাম।আপনাকে ব্যাথা দিয়েছি তাই।আমার আসলে তেমন ইনটেনশন ছিল না।জোর করলেন তাই রাগের মাথায় খাঁমছি দিয়েছি।সরি”
.
-“সমস্যা নাই।এখন যান।বাবা এসে যেতে পারে।”
.
পুতুল মাথা নাড়িয়ে ফেরত চলে আসলো।
সকাল সকাল ইমাদই আগে উঠেছে।পুতুল দেরি করে উঠে।
নাস্তা বানাতে রান্নাঘরে হাজির ইমাদ।বাবা পেপার পড়ছেন সোফার রুমে।পুতুল ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে ল্যাম্পশ্যাডের সাথে এক ধাক্কা খেলো।বাবা চশমা ঠিক করে বললেন,”ইমাদ তোর রুম থেকে কেমন একটা শব্দ এলো।”
কথাটা বলে তিনি সেদিকে গেলেন দেখতে।ইমাদ তখন আটা মাখছিল।ছুটে এসে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,”শুনলাম খবরে নাকি স্পেশাল নিউজ বেরিয়েছে।ওটা দেখো।আমি দেখছি আমার রুমে কিসের আওয়াজ এলো”
কথাটা বলে ইমাদ রুমে ঢুকলো দরজা একটু ফাঁক করে।পুতুল পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।ইমাদকে দেখে বের হলো সঙ্গে সঙ্গে।ইমাদের কপালে আটা মাখামাখি সাথে শার্টেও
পুতুল ফিক করে হেসে ফেললো এমন দৃশ্য দেখে।ইমাদ ছুটে এসে ওর মুখে হাত দিয়ে বললো,”আস্তে।”
.
-“কিরে ইমাদ তোর হাসির আওয়াজ মেয়েদের মতন শুনালো কেন?”
.
ইমাদ পুতুলকে নিয়ে পর্দার আড়ালে চলে গেছে।বাবা রুমে উঁকি মেরে বললেন,”ওমা গেলো কই?আচ্ছা ওয়াসরুমে মেবি”
.
বাবা চলে গেলেন তাই।
পুতুল এক দৃষ্টিতে ইমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইমাদের চোখ দরজার দিকে।পুতুল হাতটা বাড়িয়ে মুখ থেকে ইমাদের হাত সরিয়ে বললো,”সরি”
.
ইমাদ সরে দাঁড়িয়ে ইতস্তত ফিল করে চলে গেলো ওখান থেকে।পুতুল মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমের দিকে গেছে।ইমাদ পুতুলের প্লেট সুন্দর করে সাজিয়ে এক সাইডে রেখে বাবাকে নিয়ে খেতে বসেছে।পুতুল উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।পেটে প্রচুর খিধে।মুখটা একটুখানি করে ইমাদের দিকে চেয়ে আছে সে।ইমাদ ওর চাহনির কারনে ঠিকমত খেতে পারছে না।বাবা ফোন দেখতে দেখতে খেয়ে যাচ্ছেন।ইমাদ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”আমার ব্যাগ গুছাতে হবে।”
.
-“চা বসিয়েছিস?”
.
-“হ্যাঁ”
.
-“ঠিক আছে যা”
.
ইমাদ রান্নাঘরে এসে প্লেটটা নিচে পেছনে লুকিয়ে বাবার পিছন দিয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমে ঢুকে পরে দম ফেললো।পুতুল ওর হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে বললো,”খুব খিধে পেয়েছিল”
.
-“আমি আর বাবা এখন বেরিয়ে পড়বো।আজ আমার আসতে দেরি হবে।বাবা তো একবার বের হলে রাত একটায় ফিরে।বাবা সারাদিন বাহিরে থাকে”
.
পুতুল খাওয়া বন্ধ করে বললো,”কেন?দুপুরের খাবার খান না?”
.
-“বাহিরে খায়।মা নেই তো।তাই বাসায় আসার টান নাই।যাই হোক আমার আসতে বিকাল হবে।আপনি রেঁধে খেয়ে নিয়েন কেমন?”
.
-“ঠিক আছে।”
.
ইমাদ তার ব্যাগটা গুছিয়ে সোফার রুমের দিকে চলে গেলো
পুতুল খাবারটা খেয়ে পা টিপে টিপে রান্নাঘরে আসলো চায়ের কাপ নেবে বলে।তখনি ইমাদের বাবার গলার আওয়াজ শুনে ভয়ে এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে।ইমাদ পানির বোতলে পানি ভরছিল।বাবাকে সেদিকে যেতে দেখে ছুটে তার আগেই সে রান্নাঘরে ঢুকে পুতু্লের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো পুতুলকে ঢেকে।বাবা খেয়াল করেনি।রান্নাঘর থেকে লবঙ্গের বোয়ামটা নিয়ে চলে গেছেন।পুতুল মাথা লুকিয়ে রেখেছে।ইমাদ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,”রান্নাঘরে আসা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই আপনার?”
.
-“সরি”
.
-“আর কত লুকাবো?”
.
পুতুল জিভে কামড় দিয়ে চলে গেলো এক ছুটে।ইমাদ হেসে ফেললো
কেন হাসলো তার কারণ হয়ত পুতুলের জিভে কামড় দেওয়ার দৃশ্যটা।এই প্রথম একটা মেয়ের কাজে ইমাদের মুখে হাসি ফুটলো
সিনথিয়ার সাথে আলাপ দু মাসের।অথচ একবারও সে ইমাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি।
-“এর কারণও জানা।আর তা হলো তাকে আমি কখন মন দিয়ে দেখি না দেখার চেষ্টাও করি না।”
—-
ইমাদ বাবার সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।পুতুল রান্নাটা সেরে ভুলে গোসল করে ফেললো।গোসলের পর ওর মাথায় আসলো তার তো পরার কিছু নাই।ইমাদ আনবে বলেছিল কিন্তু হয়ত সে ভুলে গেছে
ভেজা শরীরে রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে ভীষণ করে ভাবছে সে।ভেবে কূল পাচ্ছে না।কি পরবে সে?
ইমাদের আলমারি খুলতে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো তাও আলমারি খুললো না।ইমাদ লক করে গেছে মনে হয়।
-“এবার কি পরি?যদি এই ভেজা জামা না পাল্টাই তাহলে নিশ্চিত জ্বর এসে যাবে।আর তখন উনি আমার সেবা করবেন নাকি বাবার থেকে আমায় লুকিয়ে রাখবেন।
কি করি!!!!”
——-
ইমাদের আসতে আসতে রাত আটটা বেজে গেছে।পুরো বাসার লাইট অফ।প্রথমে ড্রয়িং রুমের আলো জ্বালিয়ে ইমাদ ব্যাগটা সোফায় রেখে নিজের রুমে ঢুকলো পুতুলকে ডাকবে বলে। ওমা তার রুমের ও আলো নেভানো।সুইচ টিপ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেখলো পুতুল শুয়ে আছে।মনে হয় ঘুমাচ্ছে।ইমাদ চোখ সরাতে গিয়ে থেমে গেছে।পুতুলের গায়ে তার রুমের পর্দাটা
শাড়ীর মতন গায়ে জড়িয়ে বেশ সুন্দর করে পরেছে সে।ইমাদ কপাল কুঁচকে চোখটা নামিয়ে ফেললো।পুতুল এমনটা কেন করেছে মাথায় ঢুকছে না।পরে বারান্দায় ওর জামা ঝুলানো দেখে বুঝতে পারলো পুতুল গোসল করেছে।পুতুলকে না জাগিয়েই আবারও দরজা লক করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো সে ওর জন্য জামা কিনবে বলে।পুতুল জেগে গেছে।চোখ ডলে বাসায় আলো জ্বলতে দেখে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বারান্দা থেকে জামা নিয়ে আসলো।ইমাদ ওকে এই অবস্থায় দেখার আগেই জামা পরে ফেলতে হবে।
-“ইশ!!কাজ করে টায়ার্ড হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি এত সময় হয়ে গেলো ধুর!”
ইমাদ জামা নিয়ে বাসায় এসে দেখলো পুতুল মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে।ওর হাতে প্যাকেটটা দিয়ে ইমাদ গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলো।
বিছানায় বসে পায়ের জুতো খুলছে এখন।পুতুল দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,”আপনি কি অফিস থেকে এখন আসলেন?নাকি আরও আগে?”
.
ইমাদ জুতো খুলে এবার হাতের ঘড়ি খুলছে।পুতুল হালকা কেশে নড়েচড়ে দাঁড়ালো
.
ইমাদ ঘড়িটা খুলে বললো,”লাইট অফ রেখেছিলেন।এখন অন।তো বুঝে নেন আমি এসেছিলাম কিনা”
.
পুতুল মুখ লুকিয়ে রুমে চলে আসলো এক দৌড়ে।কি লজ্জা ইশ!
ইমাদ আবারও হাসছে।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং অবধি ও আসলো হাসতে হাসতে।পুতুল ঢোক গিলে কাছে এসে ওকে খাবারটা সার্ভ করে দিয়ে বললো,”আমাকে ওভাবে…..”
.
-“২সেকেন্ডের বেশি দেখিনি।দেখলেও ভু্লে গেছি।এত লজ্জা পেতে হবে না।আর আপনার পোশাকে খারাপ কিছু ছিল না।চাকমা মেয়েদের মতন লাগছিল।বেশ দারুন।পারলে ছবি তুলতে পারতেন”
.
পুতুল ডালের বাটি এগিয়ে দিয়ে বললো,”সত্যি?”
.
-“হুম।”
চলবে””””