বিবাহ অভিযান পর্ব-০৩

0
146

#বিবাহ_অভিযান (৩)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

– “ভালো আর থাকতে দিলেন কোথায়?”

সমুদ্র রিতা’র কথার অর্থ ঠিকমতো বুঝল না। তাই ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “মানে?”
– “আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

সমুদ্রে’র মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়ল। অনেক’টা আশা নিয়ে পাত্রী দেখতে এসেছিল, এইরকম হবে সেটা কখনোই আশা করেনি।

হঠাৎ করে সমুদ্রে’র মাথায় রাগ চড়ে বসল। বয়ফ্রেন্ড আছে তো পাত্রপক্ষের সামনে গিয়েছিল কেন? রিতা’র দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
– “বয়ফ্রেন্ড আছে তো অন্য কোথাও বসেছিলেন কেন?”

রিতা সমুদ্র’কে ঝাড়ি দিয়ে বলল,
– “কি করব আমি! আপনার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব দিল আর আমার মা বাবা ইঞ্জিনিয়ার ছেলে দেখে আমার কথা না শুনেই নাচতে নাচতে দেখতে আসতে বলে দিল।আর আপনারও চলে আসলেন।”
– “আরে আপনি আমাকে ঝাড়ি দিচ্ছেন কেন? এখানে আমার বা আমাদের পরিবারের দোষ কোথায়? ঘটক আপনার ছবি দেখিয়েছে আমাদের পছন্দ হয়েছে তাই কথা আগিয়েছি। আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে, তাকে আপনার ফ্যামিলি মানছে না সেইটা আপনার প্রবলেম।অন্যের রাগ আমার উপরে ঝাড়ছেন কেন?”

রিতা কিছুটা শান্ত হলো, সাথে লজ্জিত। রাগের মাথায় সমুদ্রকে অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছে তাই নিম্নস্বরে বলল,
– “সরি আসলে রাগের মাথায় অনেকগুলো কথা বলেছি।আসলে সবকিছু নিয়ে প্রচন্ড চিন্তিত ছিলাম তাই।”

সমুদ্র রিতা’র কথাকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
– “সরি বললেই সবকিছু ঠিক হয়ে যায় না। কাউকে কিছু বলার আগে ভেবে-চিন্তে কথা বলবেন।আর প্লিজ বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা নেয় তখন বেকার পাত্রপক্ষের টাকাগুলো নষ্ট করবেন না। যতসব।”

সমুদ্র কথাগুলো বলে গটগট করে ছাদ থেকে নেমে গেল। রিতা’র মুখটা হাঁ হয়ে যায়, সরি বললে আর উনি উল্টে এতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেল! রিতা বিরবির করে বলল,
– “অসভ্য, বদমাশ ছেলে। তোর জীবনে বউ জুটবে না দেখিস।”

সর্বনাশ! এমনিতেই ছেলেটা’র বউ জুটছে না তারউপর এইরকম অভিশাপ! সমুদ্রে’র বিয়ে কি আদৌও হবে?

সমুদ্র নীচে গিয়ে ওর মায়ের পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,
– “মা এইবার বাড়ি চলো।”

ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সমুদ্রে’র মা বুঝলেন কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে, তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন,
– “ভাই আজ উঠি। বাকি কথা না হয় ফোনে জানাব।”

রিতা’র বাবা-মায়ের মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে যায়।‌ ওনারা আন্দাজ করেন রিতা হয়তো সমুদ্র’কে কিছু বলেছে তাই ওহ এসেই চলে যেতে চাইছে। কিন্তু কিছু কথা বাড়ালেন না, ভদ্রতার খাতিরে ওদের বিদায় জানালেন।

সমুদ্ররা বাড়ির বাইরে যেতেই রিতার বাবা ওনার স্ত্রী’কে বললেন,
– “তোমার মেয়ে নিশ্চয় কিছু গন্ডগোল করেছে। ডাকো তোমার গুনধর মেয়ে’কে।”

রিতার মা মেয়েকে ডেকে পাঠালেন। রিতা মুখটা গোমড়া করে আছে, এমনিতেই সমুদ্রের কথা শুনে মেজাজ গরম হয়ে আছে। তার উপর এখন বাবা মায়ের কাছে ঝাড় খেতে হবে। ভাবতেই রিতা’র মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

– “রিতা তুমি সমুদ্রকে কি বলেছ?”
– “কিছু বলিনি।”
– “সত্যি করে বল, কি বলছিস?” (ধমক দিয়ে)

রিতা’র রাগ উঠে যায়। মেজাজ গরম করে বলল,
– “হ্যাঁ বলেছি, আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আর বয়ফ্রেন্ড না থাকলেও ওইরকম একটা ছেলেকে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।অসভ্য ছেলে একটা।”

রিতা’র বাবা মা মেয়ের কথা শুনে নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন। রিতা’কে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওহ বলল,
– “তোমাদের আমি লাস্ট বারের মতো বলছি আমি অয়ন’কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করব না। পরের বার এইবার কিছু করলে আমি পালিয়ে যাবো বলে দিলাম।”

মেয়ের কথা শুনে রিতা’র বাবা মা কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। মেয়ে’র জেদ সম্পর্কে ওনারা খুব ভালো করেই জানেন তাই মেয়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়াটাই শ্রেয় মনে করলেন।

রিতা’র বাবা বললেন,
– “ঠিকাছে অয়নের পরিবারকে আসতে বলো।”

রিতা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকাল।‌বাবা কি সত্যি বলছে?

– “বাবা তুমি সত্যি বলছ?”
– “হুমম।”

রিতার বাবা চলে গেলেন। রিতা নিজের রুমে গিয়ে ডিজে ডান্স দিতে লাগল, কি যে আনন্দ লাগছে বলে বোঝানো যাবে না। রিতা অয়ন’কে ফোন লাগল,

– “হ্যালো অয়ন জানো আজ কি হয়েছে?”
– “কি হয়েছে!”
– “বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। বলেছে তোমার‌ বাড়ির লোককে আমাদের বাড়িতে আসতে।”
– “সত্যি!!”
– “হুমম।”

রিতা অয়নের সাথে আরো কিছুটা সময় কথা বলে। নিজের বেস্টফ্রেন্ড’কে কল লাগল।

– “জানুউউউউ রে…

ওপাশ থেকে মানুষটা বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আরে শাকচুন্নি আসতে, আমার কান গেল।”
– “তুই আমাকে এইভাবে বলতে পারলি?”
– “নাটক না করে বল‌ কি হয়েছে।”
– “বাবা আমার আর অয়নের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।”
– “সত্যি!”
– “হুমম।”
– “তাহলে তো রিতা বেবী খুব খুশি।”
– “হুমম রে। আমি সত্যি ভাবতে পারিনি এত সহজে মেনে নেবে।”
– “কনগ্রাচুলেশন। ট্রিট দিয়ে দিস।”
– “হ্যাঁ তোর জন্য স্পেশাল ট্রিট আছে। তা তুই কবে বিয়ে করবি?”

ওপাশ থেকে মেয়েটা হেসে বলল,
– “যেদিন মনের মানুষ পাবো, সেইদিন।”
– “আদৌও কি সেইদিন আসবে?”

মেয়েটা হা হা করে হেসে উঠল, সাথে রিতাও।

—-

সমুদ্র সোফায় বসে আছে। পাশে বসে ওর মা বকবক করে চলেছেন,

– “মেয়ের বাবা মায়ের কথা শুনে আমার আগেই সন্দেহ হচ্ছিল কিছু একটা গন্ডগোল আছে।আমার সন্দেহ’টাই ঠিক হলো, যতসব।”

সমুদ্রের‌ বাবা ভাব নিয়ে বললেন,
– “যাবার আগেই বলেছিলাম বেশি আশা করেনা হতাশ হবে। শুনলে না তো আমার কথা।”

সমুদ্রের মা স্বামীর দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে বললেন,
– “তোমার উল্টো পাল্টা কথার জন্যই সব গন্ডগোল হয়েছে।”
– “যা বাবা এইখানে আমরা কি দোষ?”
– “সব দোষ তোমার। এখন যদি আর একটা কথা বলো তাহলে আজ রাতের খাওয়া বন্ধ।”

সমুদ্রের মা গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সমুদ্রের বাবা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে, ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– “বাবা একটা উপদেশ দিই। ব্যাচেলার আছিস ভালো আছিস খবরদার বিয়ে করিস না।”

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বাবার দিকে তাকাল। এমনিতেই বিয়ে হয় না, তার উপর এত ঝামেলা। অসহ্য সবকিছু। সমুদ্র বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। সমুদ্রের বাবা ছেলের যাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– “এখন আমার কথা’কে গুরুত্ব দিচ্ছিস না কিন্তু একদিন বুঝবি বাবা কথাটা কতটা ঠিক বলেছিল।”

কয়েকদিন পরের কথা,
সমুদ্রের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছে কিন্তু মনমতো পাত্রী পাচ্ছে না। আর সেই ঘটনার পর (রিতা’কে দেখতে যাওয়া) সমুদ্র সহজে আর মেয়ে দেখতে যেতে রাজি না। আগে ভালো করে খোঁজ নেবে তারপর বাকি সবকিছু।

আজ অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে সমুদ্র। যদিও আড্ডায় জয়েন করার একটা নির্দিষ্ট কারন আছে।

– “কিরে ভাই তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না।”

বন্ধুর কথা শুনে সমুদ্র হেসে বলল,
– “অফিস থাকে তার মধ্যে সময় হয়ে উঠে না।”

পাশ থেকে আর একটা বন্ধু বলল,
– “ভাই আমাদের অয়নও বিয়ে করে নিচ্ছে তুই কবে করবি?”

আবার বিয়ে! সমুদ্রে’র মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়, সব কথাতেই ওর বিয়ের টপিক ঠিক আসবে কেন ভাই!

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “কেন রে আমার বিয়ের জন্য কি তোদের বাথরুম ক্লিয়ার হয়নি?”

সমুদ্রের কথা শুনে বন্ধু গুলোর মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়। পাশ থেকে সমুদ্রের বন্ধু অয়ন বলল,
– “এই তোরা সমুদ্রের পেছনে লাগা বন্ধ করবি? সময় হোক দেখবি সমুদ্র ঠিক বিয়ে করবে এত টেনশন করছিস কেন তোরা?”

পাশ থেকে আর একটা বন্ধু বলল,
– “আরে বন্ধু হয় তো চিন্তা হয় তো।”

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আমাকে নিয়ে তোদের এত চিন্তা করতে কে বলেছে ভাই? নিজেদের বউ,সংসার নিয়ে চিন্তা কর কাজে লাগবে।”

এক বন্ধু বিরস মুখে বলল,
– “ওই করতে করতেই তো জীবন শেষ।”

অয়ন টপিক’টাকে চেঞ্জ করার জন্য বলল,
– “আজ আমি তোদের সবাইকে ট্রিট দেব চল।”

বন্ধুরা সবাই হইহই করে উঠল। সমুদ্র,অয়ন ও ওদের বন্ধুরা একটা হোটেলে যায়, এর মাঝে সমুদ্রের কল আসাতে ওদের থেকে কিছুটা পেছনে পড়ে যায়। ফোনে কথা বলতে বলতে যাবার সময়ে সমুদ্রের একজনের সাথে ধাক্কা লাগে,

– “এই চোখে দেখেন না? মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায়! অসভ্য ছেলে।

#চলবে….