বৃষ্টিবিলাস পর্ব-০১

0
1163

#বৃষ্টিবিলাস
১.
#WriterঃMousumi_Akter

“নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে আপনার কি একটাবার ও বিবেক ও বাঁধলো না।আপনাদের টাকা আছে বলে কি মেয়েদের কিনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে আপনাদের।ছিঃআমি ভাবতেও পারছি না এই বয়সে দাঁড়িয়ে আপনি আপনার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন।আপনার সঠিক বয়সে বিয়ে হলে আমার মতোই হয়তো একটা মেয়ে থাকতো আপনার।কে জানে আপনার বউ বাচ্চা আছে কিনা।আপনাদের মতো বড়লোকদের জন্য দুই চারটা বিয়ে খুব ই সামান্য ব্যাপার।আমার বাবাকে কত টাকা দিয়ে কিনেছেন বলুন আপনি।আমার বাবা তার প্রাণের থেকে প্রিয় মেয়েকে আপনার মতো একটা মানুষের সাথে বিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে।জীবনে সব থেকে বেশী আমাকে আমার বাবা ভালবাসতো।আজ আপনার জন্য বাবার আমার প্রতি কোনো ভালবাসা নেই।”

এতক্ষণ এক নিঃশ্বাসে গড় গড় করে হাপিয়ে গেলো রোজা।ফোনের ওপাশে থাকা মানুষ টা একটা কথা ও বললো না।চুপচাপ রোজার কথা শুনলো।শুধু মাত্র ফোনের ওপাশ থেকে একটা শুকনো কাশি ভেষে এলো।রোজা আবার ও দম নিয়ে বললো,

”দেখুন আঙ্কেল আপনাকে ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি আমি এই বিয়ে করবো না।না মানে না।আপনাকে আঙ্কেল বলে ডেকেছি সো বুঝতেই পারছেন আপনাকে আমি কিছুতেই এক্সেপ্ট করতে পারবো না।”

এতক্ষণ পরে ফোনের ওপাস থেকে গুরুগম্ভীর মুডের একটা ভয়েস বলে উঠলো,

‘আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।’

রোজার সব আশা হতাসায় পরিণত হলো।সে ভেবেছিলো যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে ডিরেক্ট না করে দিলে সে হয়তো লজ্জা আর অপমানে এই বিয়ে করতে রাজি হবেনা।কিন্তু সে স্ট্রেইট বলে দিলো আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ।রোজা প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো,

”গো টু হেল ইওর ম্যারি।”

রোজা ফোনটা ফ্লোরে খুব জোরে আছাড় মারলো।সাথে সাথে ফোনের ডিসপ্লে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।রাগে দুঃখে কাঁন্না পাচ্ছে রোজার। স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁশছে আর ভাবছে মানুষ কতটা জঘন্য হতে পারে।এইভাবে তার জীবন টা সে নষ্ট হতে দিবেনা।কিছুতেই মেনে নিবে না সে এমন ভয়ানক অভিশাপের জীবন।রোজাকে সাপের মতো ফুঁশতে দেখে অহনা বেশ মজা করেই রোজাকে আরেকটু রাগাতেই বলে উঠলো,

“কি ব্যাপার রোজা আনন্দে বুঝি তোর মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছেনা।ওয়াও রোমান্টিক মুডে আছিস বুঝি।তোর হিরোর সাথে কথা বলে বুঝি এখন প্রেমের অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিস।কি ঠিক কি মনে চাচ্ছে বলনা রোজা প্লিজ বলনা।অহনা খুব ভাবুক ভাবে গালে আঙুল ঠেকিয়ে বলছে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে এক্ষুণি উনাকে বুকে গিয়ে হামাগুড়ি দিতে।”

রোজা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাঘিনীর মতো তাকালো অহনার দিকে।এই মুহুর্তে রোজার মনে হচ্ছে অহনা কে চিবিয়ে খে*য়ে ফেলতে।কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে অহনা বেশ মজা পাচ্ছে ওইদিকে রোজা রাগে ফুঁশছে।ঘন ঘন গরম নিঃশ্বাস ফেলে অহনার দিকে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,

“খুব আনন্দ পাচ্ছিস তাইনা অহনা।দিন আমার ও আসবে।এক মাঘে শীত যায় না।যেদিন তোর দিন আসবে না এমন কাঁদা কাঁদবি সেদিন বুঝবি।কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। আমার সর্বনাশে দেখছি তোর পৌষ মাস শুরু হয়েছে অহনা।কোথায় আমাকে ভালো বুদ্ধি দিবি তা ন তুই মজা নিচ্ছিস।”

”অহনা রোজার দুই বাহুতে হাত রেখে বললো,রোজা রোজা রোজা।তিনবার উচ্চারণ করলো।কুল বেবি কুল।আমি মজা করছিলাম ইয়ার।আমি কি সত্যি চাই নাকি অমন বুইড়া খাটাস এর সাথে তোর বিয়ে হোক।বেটারে দেখে তো আমি নিজেই কোমায় আছি তোকে আর কি বলবো।এই বয়সে কি ওই বেটার বিয়ের বয়স। কোথায় এখন তজবীহ হাতে থাকবে আল্লাহ আল্লাহ করবে উনার এখন প্রচুর ইবাদত বন্দেগীর প্রয়োজন। সেটা না করে উনি কিনা এখন কচি কচি মেয়েদের বিবাহের প্রস্তাব দিচ্ছে।আচ্ছা বুঝলাম না কাকুর হঠাত কি হলো রোজা।তোর যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তার বাবা নাকি কাকুর পূর্ব পরিচিত।সে কাকুকে বলেছে রোজাকে আমার প্রায় বৃদ্ধ ছেলেটার সাথে বিয়ে দিতে।আমার বিশাল বড় ব্যাবসা বিশাল বাড়ি গাড়ি সব ই রোজার হবে।”

“রোজা ছলছল চোখে বললো,ভাবতাম আমার বাবা পৃথিবীর বেষ্ট বাবা।কিন্তু আজ সেটা ভুল প্রমাণিত হলো।বাবা আমার মন বুঝলো না অহনা।টাকার জন্য আমাকে কু*রবানি করে দিলো।আমি তো এত টাকা চাই নি। চেয়েছি মধ্যবিত্ত স্বাভাবিক জীবন।যেখানে একজন রাজপুত্র থাকবে আমাকে ভীষণ ভালবাসবে।টাকার অভাব থাকলেও ভালবাসার অভাব থাকবে না।কিন্তু বাবা আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো অহনা।”

কথা গুলো বলার সময় রোজা কেঁদে দিলো।আসলেই প্রতিটা মেয়ের কাছেই বিয়ে নিয়ে মনের মানুষ নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে।কোনো মেয়েই চাইবে না মধ্যবয়স্ক একটা মানুষকে টাকার জন্য জীবনসঙ্গী হিসাবে গ্রহন করতে।মেয়েরা ভীষণ ইমোশনাল হয়।তারা ভালবাসার জন্য পাগল থাকে।রোজা খুব অসহায় ভাবে অহনা কে বললো,

”আমি এখন কি করবো অহন।”

“কি আর করবি সোজা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবি।”

“কিন্তু কোথায় যাবো?”

“পোড়া কপাল তোর রোজা।এই বয়সে একটা বয়ফ্রেন্ড ও জোটাতে পারিস নি।দেখলি তো সময়ের কাজ সময়ে না করলে কি হয়।এখন একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে তার হাত ধরে পালিয়ে যেতে পারতি।”

“মনের মতো কাউকেই তো পেলাম না। তো কি ভাবে প্রেম হবে।”

“তাহলে আর কি ওই দাদুর গলায় ঝুলে পড়।”

“আমাকে আগে বুদ্ধি দে কোথায় যাবো।
শোন আমার খালাতো বোনের বিয়ে হয়েছে নড়াইল।।ওর ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে বিয়ে হয়েছে। এখন আর পড়াশুনা করেনা।তুই ওখানে চলে যা।”

“সোহানা আপুর বাসা। এইভাবে চিনিনা, জানিনা অচেনা জায়গা বিপদ ও তো হতে পারে।কিভাবে যাবো বল।”

“তোর কি মনে হয় রোজা তোর বিপদ হবে এমন জায়গা পাঠাবো আমি তোকে।আমি ওর বাসায় একবার বেড়াতে গিয়েছি ইয়ার।অনেক ভালো মেয়ে।আমি ফোনে বলে দিবো তোকে মাথায় করে রাখবে বুঝলি।সোহানা আপু তোকে পেয়ে মারাত্মক খুশি হবে।”

“ওকে রাতেই বেরিয়ে পড়ি অহনা।আমাকে একটা বোরকা ম্যানেজ করে দে প্লিজ।”

“আমার নানী এসছে। দাঁড়া নানীর বোরকা এনে দিচ্ছি।”

“তোর নানীর বোরকা ওই আদিম যুগের বোরকা আমি নিবো না।আমাকে কেমন দেখাবে অহনা ওই বোরকা পরে।”

“বুইড়ার বউ বুড়ি লাগবে হিহিহি।শোন নানীর বোরকা পরলে এই পৃথিবীর কারোর বোঝার উপায় নেই বোরকার ভেতর কে আছে।আর তার বয়স ও বোঝা যাবে না।শোন রাস্তা ঘাটে মুরব্বী দাদী দেখে মানুষ তোকে রেসপেক্ট করবে।”

“তুই কি জানিস ৬০ বছরের বৃদ্ধা ও আজকাল ধ★র্ষণ হয়।”

“দেখা গেলো তোর সাথে এমন কিছু হওয়ার আগেই তোর স্বপ্নের রাজপুত্রর সাথে তোর বৃষ্টিবিলাস হয়ে গেলো।”

“দেখ অহনা আমার কাটা গায়ে আর লবন দিস না।আমার খুব ইচ্ছা স্বপ্নে দেখার মতো বাস্তবে কারো সাথে বৃষ্টিবিলাস করতে।এই পোড়া কপালে কি আছে জানিনা।”

সেদিন রাতেই রোজা বাড়ি ছেড়ে পালালো।অনেকটা বাধ্য হয়েই অজানা পথে পাড়ি জমালো।

ইরহাম আহমেদ রোজা। ইকবল আহমেদ এর একমাত্র আদরের মেয়ে।রোজার মায়ের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছিলো।মেয়েকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন ইকবল আহমেদ। জীবনে দ্বীতীয় বার আর বিয়ে করেন নি।রোজা বি.বি.এ দ্বীতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট।অহনা রোজার চাচাতো বোন।মাত্র দুই মাসের ছোটবড় ছোটবেলা থেকে এক বাড়িতে বেষ্ট ফ্রেন্ডের মতো বড় হয়েছে দুজনে।অহনা ও বি.বি.এ পড়ছে।অহনার বড় একটা ভাই ও আছে।হঠাত করে রোজার বাবা তার নিজের বয়সী একটা লোকের সাথে রোজার বিয়ে ঠিক করেছে।রোজার বাবার একটায় কথা এই ছেলের সাথেই তিনি মেয়ের বিয়ে দিবেন।এটা নিয়ে রোজার গায়ে ও হাত তুলেছেন।মেয়ের কাঁন্নার কোনো দাম দেন নি।নিজের সিদ্ধান্তে অটুট সে।তিনি বলেছেন পুরুষ মানুষের একটু বয়স বেশী হওয়া ভালো।

————————————————————রাতের শেষ বাস ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।রোজা তখন দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠলো।বাসে একটা সিট ও খালি নেই।বোরকার আড়ালে রোজাকে দেখে বোঝায় যাচ্ছে না তার বয়স।বোরকার মতোই কনকনে বুড়ি লাগছে তাকে দেখতে।দরজা থেকে উঠেই দুই সিট এগিয়ে তৃতীয় সিট টা ধরে দাঁড়ালো রোজা।সেই তৃতীয় সিটে বসে ছিলো সুদর্শন দুজন যুবক।জানালার সাইডে বসা ছেলেটি ফোনে কথা বলছে কারো সাথে।তার পাশে যে আরেকটি ছেলে বসে আছে গাড়ি হঠাত ব্রেক চাপতেই বড়সড় ঝাঁকি লাগতেই রোজা গিয়ে তার গায়ের উপর পড়লো।রোজার সমস্ত শরীরের ভর গিয়ে পড়লো ছেলেটির উপর।রোজার গায়ে বৃদ্ধার কালো বোরকা,হাতে পায়ে কালো মোজা পৃথিবীর কারো বোঝার উপায় নেই।ছেলেটি সাথে সাথেই রোজা কে ধরে ফেললো।পৃথিবীর দুই প্রান্তে থাকা দুজন মানুষের এইভাবেই হঠাত দেখা হলো এটা কি নিয়তির খেলা ছিলো।

ছেলেটি সাথে সাথে উচ্চারণ করলো,

” আউচ।আপনার লাগেনিতো আন্টি।”

অনেক সুন্দর ছিলো ছেলেটির কথাবলার ধরণ। অসম্ভব সুন্দর ভঙ্গিতে কথাটা বললো।পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের মাঝে বোধহয় বিশেষ কিছু থাকে।ছেলেটির দিকে একবার তাকিয়ে রোজা যে মুগ্ধ হয়নি এটা মিথ্যা নয়।ছেলেটি অসুন্দর এটা বললে ভায়ানক একটা মিথ্যা বলা হবে।এরই মাঝে রোজার মস্তিষ্ক নাড়া দেয় আন্টি সূচক শব্দটি।রোজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।জীবনে প্রথমবার তাকে কেউ আন্টি বলে ডকলো এই বয়সী কোনো ছেলে।তাকে কি সত্যি আন্টিদের মতো লাগছে।রোজা তাৎক্ষনিক রেগে গিয়ে মনে মনে ভেবে নিলো এক্ষুণি সে বলবে, নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কখনো।নিজেকে কি কচি খোকা ভাবেন আমাকে আন্টি ডাকছেন।রোজার আবার ঝগড়া করার ভীষণ অভ্যাস আছে।কিন্তু তখন ই রোজার মনে পড়লো সেতো নানীর বোরকা পরে আছে।ছেলেটির আর দোষ কোথায়।রোজার শুকনো কাশি হলো দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।রোজা বোরকার ভেতর থেকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটি বেশ সুদর্শন দেখতে।বেশ ফর্সা, চোখে খয়েরী ফ্রেমের সিম্পল চশমা,গায়ে কালো শার্ট, হাতা গোটানো,পরনে কালো জিন্স,পায়ে জুতা।বেশ পরিপাটি দেখতে একটা ছেলে, ছেলেটি যে বেশ শিক্ষিত,সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,নিঃসন্দেহে একজন হ্যান্ডসাম পুরুষ রোজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটির বাম ভ্রু একটু কাটা।রোজার খেয়াল হলো কাটা দাগের দিকে।ছোট বেলার কারো কথা মনে পড়লো রোজা কাউকে ধাক্কা মেরেছিলো আর পড়ে গিয়ে তার ভ্রু কেটে গেছিলো।

রোজাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটি আবার ও বললো,

“আন্টি লাগেনিতো।”

“রোজা নিচু হয়ে ছেলেটির ফোন তুলে হাতে দিলো।আর মাথা নাড়িয়ে না সূচক শব্দ বোঝালো।”

“ছেলেটি অমায়িক হাসি দিয়ে বললো,ওহ আমার ফোন।পড়ে গেছিলো।আমিই তুলে নিতাম।আপনি কষ্ট করে তুলতে গেলেন কেনো।”

“রোজা চুপ আছে।….”

“পাশের ছেলেটি ফোন কেটে বললো,কি হয়েছে শুভ?”

“রোজা বুঝতে পারলো ছেলেটির নাম তাহলে শুভ।”

শুভ নামের সুদর্শণ ছেলেটি বললো,

“আরে ভাই রাজ আন্টি বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আর আমরা বসে আছি।খুব ই বেয়দবি ব্যাপার হলো এটা।আমি পেছনে গিয়ে দেখি সিট পায় কিনা।আন্টি এখানেই বসুন।”

রাজ নামের ছেলেটি মারাত্মক ফাজিল।ফিসফিসিয়ে বললো,

“ভাই কোনো মেয়ে হলে সিওর আজ আমার জার্নি বাই প্রেম হয়ে যেতো।আমি সারারাস্তা তার পাশে বসে কাটিয়ে দিতাম।কিন্তু আন্টি টান্টির পাশে বসতে খুব আনইজি ফিল হবে।আমি ফোনে বকবক করলে উনার বিরক্তি ফিল হবে।আমি পেছনে যাচ্ছি তুই এখানে থাক।রাজ উঠে যাবার সময় বললো,আন্টি বসুন প্লিজ।”

রোজা মনে মনে বললো ইয়াহু একটা আরামের সিট পেয়ে গেলাম।অহনাকে একটা থ্যাংকু দিতেই হবে।এই বোরকার জন্য একটা সিট পেলাম।এই শুভ ছেলেটা আসলেই আমার জন্য শুভ।মনে মনে শুভকে শুভ কামনা জানালো রোজা।রোজার খুব ইচ্ছা হলো ছেলেটাকে থ্যাংক ইউ দিতে।কিন্তু না এখন দিলে যদি রাজ তার সিট কেড়ে নেয়।তার থেকে যেমন আছি তেমন ই বেটার হবে।

পূর্ণিমা রাত বাস চলছে নিরিবিলি তার আপণগতিতে।রোজা জানালার দিকে মুখ দিয়ে বসে আছে।মাঝে মধ্য উঁকি দিয়ে দেখছে ছেলেটি তার দিকে তাকাচ্ছে না।নিচু হয়ে একভাবে ফোন স্ক্রল করেই যাচ্ছে।নিউজফিড দেখে যাচ্ছে।শুভর কানে হেডফোন।ফোন স্ক্রল করছে আর গান শুনছে।রোজা ফোনের দিকে খেয়াল করে দেখলো শুভর হাতে আইফোন ইলেভেন প্রো ম্যাক্স।হঠাত শুভ খেয়াল করলো বোরকার নিচে ব্লু জিন্স দেখা যাচ্ছে।বেশ খানিক টা হোচট খেলো দেখে।আবার ভাবছে বয়সের সাথে পোশাকের কোনো সম্পর্ক নেই।এটা মানুষের রুচির ব্যাপার।শুভ ব্যাপার টা ছেড়ে দিলো।চলন্ত বাসে রোজা কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লো।বাসের ঝাঁকিতে রোজার মাথা গিয়ে পড়লো শুভর কাঁধে।শুভ একবার মাথা টা আস্তে করে সিটের সাথে সোজা করে দিলো।কিছুক্ষণ পরে আবার ও রোজা এসে শুভর কাঁধে পড়লো।এভাবে তিনবার করার পর শুভ আর সরালো না।শুভর কাঁধেই মাথা রেখে নিরিবিলি ঘুমোচ্ছে রোজা।বাসে উঠার কিছুক্ষণ পরেই রোজা বোরকার মুখ খুলে দিছিলো গরমে।ডাবল নেকাপের নিচের টা খুলে দিছিলো।জাস্ট নেকাপ টা দেওয়া ছিলো। গরমে শুভ অতিষ্ট প্রায়,ব্যাগ থেকে ছোট হ্যান্ড চার্যার ফ্যান টা চালিয়ে দিলো।ফ্যানের বাতাসে নেকাপ উড়ে উপরের দিকে যেতেই শুভ ভীষণ অবাক হয়ে রোজার দিকে তাকালো।শুভর দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাফাঁ হয়ে আছে।জানালা দিয়ে পূর্ণিমার আলো রোজার মুখে পড়েছে, রোজার নাকের সাদা নকফুল চিকচিক করছে মুক্তার মতো।হৃদয়ে ভীষণ ভালো লাগার দোলা দিলো।মুগ্ধ হলো হৃদয়।রোজার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে মন হারালো শুভর।এই জ্যোৎস্না বিলাসের জন্যই কি তার মন ছুটছিলো এই বাস জার্নির জন্য।শুভ চশমা টা খুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোজার মুখপানে।এই রাতের পরী এত রাতে কোথায় ছুটেছে, সারারাস্তা যাবে নাকি পথে কোথাও নেমে যাবে।ইস তার জার্ণিটা যেনো আজ দীর্ঘ হয়।মন হারানোর এই রাতটা মনে রাখার মতো শুভর জীবনে।শুভ অনুমতি ছাড়ায় বেশ কয়েক টা ছবি নিলো রোজার।চাইলেই চোখে ফেরাতে পারছে না শুভ রোজার মায়াবী চেহারা থেকে।শুভ নিজেই মায়ায় আটকে গেলো।শুভর তখন মনে পড়লো,

“যদি হুট করে কারো প্রেমে পড়ো তবে সেটা তোমার ভালোলাগা।যখন সেই ভালোলাগাটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছায় তখন সেটা হয়ে যায় ভালোবাসা।যখন দীর্ঘ সময় ধরে সেই ভালোবাসার সম্পর্কটা চলতে থাকে তখন তা হয়ে যায় অভ্যাস।আর যখন সম্পর্কটা একেবারেই শেষ হয়ে যায় তখনও সেখানে রয়ে যায় কিছু রেশ।তার নাম মায়া।সবচেয়ে সুন্দর অনূভুতির নাম হচ্ছে মায়া।হুট করে যে কেউ কারো মায়ায় পড়ে যেতে পারে।সবকিছু থেকে বের হওয়া যায়।কিন্তু মায়ার জাল থেকে এতো সহজে বের হওয়া যায় না।আর এজন্যেই মানুষ বুকের মাঝে মায়াটাকে এতো গভীর করে পুষে রাখে।”

(অন্তরগঙ্গা ~ গোলাম রব্বানী)

চলবে,,,,,