বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২+৩

0
790

#বৃষ্টিবিলাস
২ + ৩
#Writer_Mousumi_Akter

“কি ব্যাপার মামা শুনলাম পাশে সুন্দরী একটি রমনী বসেছে তোমার।তুমি নাকি অতি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বাসের মধ্য বিশাল এক ডান্স দিয়েছো।সেই ডান্স দেখে নাকি সেই রমনী তোমার কাধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।”

শুভর ফ্রেন্ড প্রান্তর থেকে এমন অদ্ভুত মেসেজ পেয়ে শুভ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে পেছনে বিরক্তি নিয়ে রাজের দিকে তাকালো।বিরক্তিতে শুভর কপালে কয়েকটা ভাজ পড়ে গিয়েছে।হয়তো পাব্লিক বাস না হলে এক্ষুনি রাজের সাথে এক চক্কর মারামারি হয়ে যেতো।রাগে দাঁত কিড়মিড় করে রাগ কন্ট্রোল করতে ঠোঁট চেপে আছে শুভ।

ওইদিকে রাজ শুভর এই রাগ দেখে ভীষণ পৈচাশিক আনন্দ পেয়েছে।রাজ জানে শুভ হুটহাট ই রেগে যায়।তাকে রাগানোর জন্য এই টেকনিক টা বেশ ভালো কাজে দিবে।শুভর এই রাগ দেখার জন্যই রাজ এতক্ষণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো।শুভর রাগী রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে রাজ অসহ্যকর একটা গা জ্বলা হাসি দিলো।নিঃশব্দে ফ্যাকাসে একটা হাসি।যে হাসি দেখে শুভর রাগ আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো।রাগী রাগী মুডেই সামনে তকালো আবার শুভ।রাজ নিশ্চয়ই ওর ফ্রেন্ড সার্কাল এর কাছে নিউজ টা পাচার করে দিয়েছে।যদিও রাজ জানে শুভ একটা বৃদ্ধা মহিলার পাশেই বসেছে তবুও সে শুভ কে রাগাতেই এমন নিউজ প্রচার করেছে।কিন্তু রাজ তো আর জানেনা তার এই নিউজ টা সত্য ছিলো।

শুভ রাজ কে মেসেজ করলো,

“ডাফার!তোর খবর আছে। বাসের ঘটনা ফ্রেন্ডদের মাঝে এক্ষুনি বলতে হলো তোকে।সাথে কতগুলা এংরি রিয়াক্ট।”

রাজ রিপ্লে করলো,

“এমন মারাত্মক নিউজ তাদের না বললে ভারী অন্যায় করা হবে তাইনা ভাই শুভ।কি ভাবছি জানিস ওই আন্টির জায়গা অন্য কোনো মেয়ে হলে তোর ফিলিংস টা ঠিক কেমন হতো। একজন রমনীর স্পর্শে কি তোর শরীরের শিহরণ বয়ে যেতো।”

“আমি কি তোর মতো লুইচ্চা ভাই।তোর তো আন্টিদের স্পর্শতেও শিহরণ বয়ে যায়।”

“বাই দ্যা ওয়ে তোর প্রব্লেম কি।তোর এই সুন্দর শিহরণ কেনো বয় না।আমাদের সব ফ্রেন্ডদের মাঝে একটায় প্রশ্ন মানে বিশাল একটা কৌতুহল।তোর কেনো কোনো নারীর স্পর্শতে শিহরণ বয় না।এনি ওয়ে সময় থাকতে ডাক্তার দেখা যদি কোনো প্রব্লেম থেকে থাকে।”

“না আমার কোনো সমস্যা নেই।যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছি মানে আমার হালাল বউ তাকে দেখলে তার স্পর্শে সব অনুভূতি এমনি জেগে উঠবে।তুই কি জানিস যে কোনো নারীকে দেখে অনুভূতি জেগে উঠলে তাকে কি বলে।”

বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাজ,

“কি বলে ভাই।”

“ক্যারেক্টার লেস।আমাকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে, নিজের চরিত্র আগে ঠিক কর।শালা ডাফার।”

শুভ যে এভাবেই পঁচাবে রাজ সেটা ভালোভাবেই জানে।এটা নতুন কিছুই না।এর আগেও বহুবার পঁচানি খেয়েছে শুভর থেকে।

এরই মাঝে রোজার ঘুম ভেঙে গেলো।রোজা ফোনের মেসেজ গুলা দেখছিলো।হঠাৎ শুভর খেয়াল হলো রোজা তার মেসেঞ্জারে চোখ বুলিয়ে আছে আর মেসেজ গুলা দেখছে।শুভ দ্রুত ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে ফোন পকেটে ঢুকালো।শুভ ভাবছে রোজা কি তাদের সব মেসেজ দেখে ফেললো।দেখে ফেললে কি ভাববে।ওহ নো!শুভর চোখে মুখে বেশ খানিকটা চিন্তার আভাস।

এইদিকে রোজা বেশ লজ্জা পেলো এই শুভ আবার কিছু মনে করেনিতো।ইস কি বিশ্রি লজ্জার কান্ড ঘটলো।শুভর কাঁধে ভর করে তিন ঘন্টা সময় পার করে ফেলেছে সে।ছেলেটা আবার ভাবেনিতো গায়ে পড়া মেয়ে।পাশে হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে ইচ্ছকরে গায়ের উপর নুইয়ে পড়েছে।এক্ষুনি বলতে ইচ্ছা করছে সরি।আপনি আসলে যা ভাবছেন মোটেও তা নয়।আমি ওধরনের মেয়ে নই বুঝেছেন। কিন্ত তার ভয়েজ বুঝে গেলে মারাত্মক সমস্যা।যদি তাকে সিট থেকে উঠে যেতে হয়।

শুভ বেশ ভালো ভাবে পরখ করে দেখছে।মেয়েটি কি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।যদি পালিয়ে ও আসে তাহলে বাসের মধ্য এভাবে ছদ্মবেশে বসে থাকার কারণ কি।মেয়েটিকে এবার এমন বিরক্ত করতে হবে মেয়েটি কথা বলতে বাধ্য হবে।মেয়েটির মুখ থেকে কথা বের করতে শুভ একটু নড়েচড়ে বসে শুকনো কাশি দিয়ে বললো,

“ইয়ে আন্টি ঘুম কেমন হলো?”

“রোজা চুপ আছে।..”

শুভ নিজের ফোন বের করে দিয়ে বললো,

“আমি বুঝতে পারছি পরপুরুষ আপনার কন্ঠ শুনলে ভীষণ পাপ হবে।অনেক পরহেজগার আপনি।আসলেই আন্টি এ যুগে আপনার মতো মহিলা খুজে পাওয়া যায় না।আপনি বরং মেসেজ টাইপ করে আমার কথার উত্তর দিন।এটুকু বলেই শুভ ফোন এগিয়ে দিলো রোজার দিকে।”

এইদিকে রোজার বেশ অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।কোথায় এমন সুন্দর ছেলে তার প্রশংসা করবে তা না করে ঘন ঘন আন্টি ডাকছে।ব্যাপার টা রোজার মোটেও হজম হচ্ছেনা।এক্ষুণি বলে দিতে ইচ্ছা করছে দেখুন আমি কোনো আন্টি টান্টি না বুঝেছেন।মাত্র একুশ বছর বয়সী একটা মেয়ে।কিন্তু দাঁড়িয়ে যাওয়ার ভয় রোজাকে থামিয়ে দিলো।হাতে মোজা পরা কিভাবে ফোন স্ক্রল করবে।মোজা থাকলে তো আর টাচে কাজ করবে না।রোজার ব্যাপার টা একদম ই খেয়াল নেই তার কচি হাত শুভ দেখে ধরে ফেলবে।হাত মোজা খুলতেই ধবধবে ফর্সা হাত বেরিয়ে এলো।হাতে একটা চিকন সোনার রিং আরেক টা সিলভার কালারের ওটা কি রুপার হবে শুভর সে আইডিয়া নেই।সুন্দর পরিপাটি সাজানো নখে মেজেন্টা কালারের নেলপালিস।শুভর কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর হাত বোধহয় তার সামনে এখন। ইচ্ছা করছে হাত টা ছুয়ে দেখতে।হাতের বুড়ি আঙুলে কালো মিচমিচে একটি তিল আরো বেশী নজর কাড়ছিলো হাতের।শুভর দু’চোখ যেনো মুগ্ধ হলো।শুভ আকাশের চাঁদের দিকে ভাবছে চাঁদ তোমার রুপেও কলঙ্ক আছে কিন্তু আমার পাশে বসে থাকা এই ভুবনভোলানো সুন্দর মেয়েটির রুপে কোনো কলঙ্ক নেই।ভাজ্ঞিস মেয়েটি বোরকা পরে এসছিলো না হলে সবাই কি আমার মতোই মুগ্ধ হতো তাকে দেখে।নিশ্চয়ই আমার মতোই সবার বুকের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি জেগে উঠতো।যে অনুভূতিতে একটা ছেলে হাসতে হাসতে খু*ন হয়ে যেতে পারে।এই মেয়েটি যেনো সারাজীবন এইভাবেই বোরকা পরেই থাকে কেউ যেনো তাকে না দেখতে পায়।তাহলে হিংসে হবে আমার, ভীষণ হিংসে হবে,জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে হৃদয়, কেউ খারাপ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে না জানি কতজন খু*ন হয়ে যাবে।কি হয়ে গেলো আমার।মাত্র তিন ঘন্টা একটা মেয়েকে দেখে পৃথিবীর সব এলোমেলো হয়ে গেলো।এই অনুভূতির নাম কি দিবো এটাই কি ভালবাসা নাকি মায়া।

রোজা ফোন টা নিয়ে টাইপ করে শুভর দিকে ধরলো,

” সরি আপনার কাধে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।বুঝতে পারিনি,ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।অন্য কিছু ভাববেন না প্লিজ।”

শুভ দুই ভ্রু উচিয়ে রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,

“বাহ আন্টি!আপনি স্মার্ট ফোনে এই বয়সে টাইপ করতে পারেন। আবার ভালো ইংলিশ ও বলেন।বেশ স্মার্ট কিন্তু আপনি।ভেরি ইন্টারেস্টিং। ”

শুভ মুখে বলছে আর রোজা টাইপ করছে।টাইপ করে শুভর দিকে ফোন ধরছে।রোজা আবার টাইপ করলো,

“ধন্যবাদ।”

এবার শুভ নিচের ঠোঁট কামড়ে বেশ ভাবুক দৃষ্টিতে বুকে হাত বেঁধে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

“কোথায় যাবেন আন্টি?”

“নড়াইল।”

শুভ ব্যাগ থেকে লাল কালারের একটা পানির পট বের করে বোতলের মুখ খুলে পানি খেতে খেতে বললো,

“আমিও নড়াইল যাচ্ছি। বস মাসরাফির সাথে দেখা করতে।তার সাথে কথা বলার খুব শখ আমার।বাই দ্যা ওয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন নড়াইল মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন বুঝি।”

পানি খাওয়ার সময় কয়েক ফোঁটা পানি পড়ে বুকের শার্ট বেশ খানিক টা ভিজে গেলো শুভর।রোজা বেশ খেয়াল করলো ভিজে যাওয়া শার্টের দিকে।রোজা আবার টাইপ করলো,

“না,আপির বাসায়।”

শুভ ভ্র কুচকে বললো,

“আগের কালের মহিলারা বড় বোনদের বু বা আপা বলে ডাকতো।আর আপনি এই বয়সেও আপি ডাকেন।বেশ আপডেট কিন্তু আপনি আন্টি।”

রোজা বেশ বিরক্ত হয়ে টাইপ করলো,

“এমনিতেই ডাকি।”

শুভ রোজার পায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এত উঁচু হাই হিল পরে এই বয়সে কিভাবে হাঁটেন।কষ্ট হয়না।আপনি তো বেশ লম্বা দেখে ৫ ফিট ৪” মনে হয়।”

“এমনিতেই পরি।”

“এই বয়সে জিন্স পরেন কেনো আন্টি?”

“এমনিতেই।”

“দেবের ক্যাপশনের মতোই কি আপনার সব কাজ এমনিতেই আন্টিইইই।বেশ টেনে আন্টি ডাকলো শুভ।”

“বেশ কয়েকটা এংরি রিয়্যাক্ট দিলো রোজা।”

”শুভ এবার বললো,আন্টি আপনার কি গালের দাঁত আছে সব গুলা।পান সুপারি খান না,গুল খান না।লাগলে বলুন।সামনে বাস থামলে আমি নিয়ে দিবো।”

রোজা এবার মারাত্মক বিরক্ত হয়ে শুভর হাতটা ধরে ফোনটা শুভর হাতে দিয়ে বললো,

“হ্যালো লুক এট মি!কি আন্টি আন্টি করে যাচ্ছেন।আমার মাথা খেয়ে দিচ্ছেন আপনি তখন থেকে।আমাকে কি আন্টি লাগে।বলেই রোজা নেকাপ তুললো মুখের।”

শুভ রোজার দিকে খানিক টা এগিয়ে গিয়ে রোজার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

“অপূর্ব। ”

রোজা খানিক টা ভাব নিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললো,

“কী বললেন আপনি?”

“আপনার এক্টিং টা অপূর্ব। সাথে জ্যোৎস্না।”

“ওহ আমি ভাবছি।”

“কি ভেবেছেন আপনাকে বলেছি।ভ্রু উঁচিয়ে বললো শুভ।”

“না মানে।”

শুভ এবার বেশ মুড নিয়ে বললো,

“আমি কখনো কোনো মেয়ের প্রশংসা করিনা।”

“কেনো?”

“বিকজ আয়ান আহমেদ শুভর প্রশংসা সবাই ডিজার্ভ করেনা।”

“কেনো আপনি কি এমন একজন যে এভাবে ভাব নিচ্ছেন।একটু হ্যান্ডসাম বলে খুব অহংকার তাইনা।”

শুভ রোজার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো,

“আমি জাস্ট হ্যান্ডসাম বললে ভুল হবে।স্যান্ডসাম প্রো ম্যাক্স।”

রোজা মুখ বাকিয়ে বললো,

“হ্যাঁ আপনার ফোন ও প্রো ম্যাক্স আপনিও প্রো ম্যাক্স।আপনার ফোন ইলেভেন প্রো ম্যাক্স আর আপনি কতো।”

“সরাসরি বললেই হতো আমার বয়স জানতে ইন্টারেস্টড আপনি।বাট হুয়াই?”

“বাজে কথা।”

“আমি জানি বাজে কথা না।আর বেশ আন্দাজ ও করতে পারছি।বাই দ্যা ওয়ে সাতাস প্রো ম্যাক্স।”

রোজা মনে মনে ভাবছে একটা মানুষ কিভাবে রং বদল করতে পারে তা এই শুভ নামক অশুভ কে না দেখলে সে বুঝতে পারতো না।মুরব্বি দের সাথে অমায়িক ব্যাবহার আর যখনি দেখলো আমার বয়স কম ঠিক তখন ই বিশ্রি ব্যাবহার শুরু করেছে।মানুষ এভাবে রুপ বদলাতে পারে কিভাবে।এখন বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা প্রচন্ড ঘাড়ত্যাড়া টাইপ একটা ছেলে।যেমন ভেবেছিলাম মোটেও তেমন না।

শুভ ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট চিপস বের করে খেতে খেতে রোজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“চিপস খাবেন।”

“ডংডং চিপস হলে ভালো হতো।”

“সেটা আবার কি?”

“চিপস এর নাম।”

“রাস্তায় পেলে কিনে দিবো।এখন এটা খান।”

রোজা একটা চিপস হাতে নিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে ভাবছে ইস ছেলেটা কত্ত কিউট।বাবা কি এমন সুন্দর একটা ছেলে আমার জন্য দেখতে পারতো না।শুভ রোজা কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ হচকচিয়ে গেলো।ভ্র নাচিয়ে ইশারা করলো কি দেখছেন ওভাবে আর খাচ্ছেন না কেনো।কি ভাবছেন।

“কিছু মেশান নিতো আবার।”

“কি মেশাবো।”

“আমাকে অজ্ঞান করার মতো কিছু।”

“মিশিয়ে লাভ কি।”

“আমার মতো সুন্দরী মেয়েক অজ্ঞান করে নিয়ে নিজের অশুভ ইচ্ছা পূরণ করতে চাইছেন হয়তো।আপনাকে প্রথমে শুভ ভেবেছিলাম।এখন দেখছি পুরাই অশুভ।”

শুভ হাতের একটা চিপস হাতের মধ্য গুড়িয়ে ফেলে বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,

“আমাকে ক্যারেক্টরলেস ভাবছেন আপনি?হাউ ডেয়ার ইউ মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

শুভর শক্ত ধমকে রোজা বেশ ভয় পেয়ে গেলো।হৃদপিন্ড কাঁপা শুরু করলো।কি হবে এবার।

চলবে?

(সবাই কষ্ট করে রিয়্যাক্ট দিবেন প্লিজ।আর কেমন লাগলো জানাবেন।)

#বৃষ্টিবিলাস
৩.
#Writer_Mousumi_Akter

“আমাকে ক্যারেক্টরলেস ভাবছেন আপনি?হাউ ডেয়ার ইউ মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

শুভর শক্ত ধমকে রোজা বেশ ভয় পেয়ে গেলো।হৃদপিন্ড কাঁপা শুরু করলো।কি হবে এবার।এরই মাঝে রোজার মস্তিষ্ক নড়ে উঠলো।রোজা খুব সন্দিহান ভাবে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।এই মুহুর্তে রোজার মন ছটফট করছে এই কথাটা জানতে শুভ কিভাবে তার নাম জেনেছে।কিন্তু শুভর রাগী মুড দেখে রোজা কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে।যদি ছেলেটা বকাঝকা দিয়ে তাকে উঠিয়ে দেয়।কিন্তু তবুও জানতেই হবে ব্যাপার টা।

মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে খুব শান্ত কন্ঠে বললো,

“এক্সকিউজ মি মিষ্টার আয়ান আহমেদ শুভ।মনে মনে রোজা উচ্চারণ করলো অশুভ।আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?”

রোজা কে চিন্তিত দেখে শুভর কাছে ব্যাপার টা বেশ ইন্টারেসটিং লাগলো।মনে মনে ভাবছে মেয়েরা কত সহযেই ভয় পেয়ে যায়।পৃথিবীতে মেয়েদের থেকেও যাদুকরী কোনো জিনিস কি আল্লাহ আর তৈরি করেছেন।এই যে এই মেয়েটি নিমিষেই যাদু করার মতো আমাকে আটকে ফেলেছে,মস্তিষ্ক এখন এই মেয়েটির নান ই ঘোরাঘুরি করছি।মেয়েটি বারবার আমাকে সারপ্রাইজড করে দিচ্ছে।নিমিষেই ভয় লঙ্কার মতো মুখ টা এমন অসহায় হয়ে গিয়েছে।পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম দৃশ্য এখন আমার সামনে উপস্হিত।

শুভ একটু ভাব নিয়ে বললো,

“আমি আপনার বিষয়ে সব জানি মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

কথাটা বলেই রোজার দিকে একবার তাকালো। এই তাকানোতে রোজার সন্দেহ আরো প্রবল আর গাঢ় হলো।এইভাবে তাকালো কেনো।রোজা আতকে উঠলো।একজন অচেনা যুবক তার নাম কিভাবে জানলো।তার বাবার পরিচিত কেউ নাতো।ভয়ে রোজার মুখ আরো চুপসে যেতে দেখে শুভ ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“এত ভয়?তাহলে পালিয়েছেন কেনো?”

পালানোর কথাটা শুনে রোজা এবার ১০০% সিওর হয়ে গেলো।এই শুভ তাহলে তার বাবার পরিচিত কেউ।এই শুভ সত্যি অশুভ তার জন্য।

রোজা এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললো,

“প্লিজ আমাকে বাবার হাতে তুলে দিবেন না।”

শুভ রিতীমত অবাক।এত বড় একটা মেয়ে এভাবে হুঁট করে চলন্ত বাসে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আশে পাশের মানুষ অন্য কিছু ভাবতে পারে।ভাববে হয়তো মেয়েটির সাথে সে অশালীন আচরণ করেছে।এক্ষুনি বাসের মানুষ জন তাকে পিটিয়ে নিশ্চিত পুলিশে দিয়ে দিবে।মেয়েটি তো একেবারেই বাচ্চা টাইপ,বয়স যে খুব কম সেটাও তো নয়।শুভ সাথে সাথে রোজার মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে বললো,

“একদম চুপ।এভাবে কাঁদছেন কেনো?এখানে কেউ মারা যায় নি যে আপনি এভাবে মরা কাঁন্না জুড়ে দিবেন।”

শুভ মুখ চেপে ধরাতে রোজা কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু শুধু আউ আউ শব্দ হচ্ছে।ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে না।শুভ রোজার মুখ চেপে ধরেই বললো,

“তো কোথায় আপনার সেই প্রেমিক।যার সাথে পালিয়ে যাবেন সে কোথায়?একা একাই প্রেমিকের দেশে ছুটেছেন।”

রোজা শুভর হাতে খুব জোরে চিমটি দিতেই শুভ রোজার মুখ থেকে হাত সরিয়ে উচ্চারণ করলো,

“আউচ।এটা কি হাত নাকি ডাই*নির নখ। আপনি কি অসুস্থ কোনো রুগি।”

রোজা চোখের পানি মুছে বললো,

“আপনার আমাকে অসুস্থ রুগি মনে হচ্ছে কেনো?”

“বিকজ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এইভাবে জন্তুর রুপ ধারণ করে না।জন্তুরা তো বুঝে না তাই নখ কাটে না।আপনি বুঝে শুনে এইভাবে নখ রেখেছেন ।তাও আবার সেই নখ দিয়ে চিমটি দিয়েছেন দেখুন আমার হাত কেটে গিয়েছে।”

“বেশ হয়েছে।আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছিলেন কেনো?আমি কথা বলবো কিভাবে?”

“মুখ চেপে ধরবো না।যেভাবে ভ্যা ভ্যা করছিলেন মানুষ ভাবতো আমি আপনার সাথে অন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।”

যাক অশুভ টার সম্মানের ভয় আছে, তার মানে চরিত্রে খুব একটা সমস্যা নেই।নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।

“দেখুন আমি আসলে ভয় পেয়ে গেছিলাম।আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।বাবা আমার থেকে অনেক বয়সী বড় একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।তাই আমি পালিয়ে কাজিনের খালাতো বোনের বাসায় যাচ্ছি।”

শুভ চোখের চশমা টা খুলে খালি চোখে রোজার দিকে তাকালো।আর বললো,

“আপনার তাহলে বয়স্ক ছেলে পছন্দ নয়।”

“আপনার বুঝি ভালো লাগবে আন্টি টাইপ কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হলে।”

মেয়েটির কথার মাঝে যেনো এক আকাশ অভিমান।কি বাচ্চামো,আদুরে সুরে কথা বলে,এই রেগে যাচ্ছে তো এই কেঁদে দিচ্ছে।শুভর খুব বলতে ইচ্ছা করলো কোনো আন্টি টাইপ মেয়ে নয় অজন্ম কাল তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করেছি আমি।আমার শুধু তুমি চাই।তোমার কি আমাকে মেনে নিতে খুব অসুবিধা হবে।ইচ্ছা করছে মেয়েটির চোখের পানি মুছে গালে হাত ছুইয়ে দিতে।কিন্তু চাইলেই কি আর সব ইচ্ছা পূরণ হয়।মেয়েটি যেভাবে রেগে যাচ্ছে আমাকে এক্ষুণি বাসের জানালা দিয়ে ফেলে দিবে যদি এমন কিছু করি।

“রোজা আবার ও বললো প্লিজ বলুন না কিভাবে জেনেছেন আমার নাম।”

“লুক এট ইওর হ্যান্ড।”

“কি আছে আমার হাতে।”

“আপনার হাতে ট্যাটু দেখুন ইরহাম আহমেদ রোজা লেখা।”

“ওহ হ্যাঁ তাইতো আমার হাতেই তো লেখা আছে।”

এরই মাঝে রাজ উঠে এলো।রাজ আসতেই শুভ দ্রুত রোজার মুখের নেকাপ লাগিয়ে দিলো।রোজা বেশ হোচট খেয়ে গেলো।হঠাত কেনো রোজার মুখ চোখ ঢেকে দিলো শুভ।

“ভাই তোর পাওয়ার ব্যাংক টা দে না প্লিজ।”

শুভ রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,

“চার্য শেষ?”

“হ্যাঁ। ”

“এত দ্রুত।”

“শেষ হবে না। একটানা অন লাইনে আছি।”

“এত অন লাইনে কি তোর।তোর তো প্রেমিকা নেই কার সাথে এত চ্যাটিং করিস।”

রোজা মনে মনে বলছে,অন্যকে বলছে নিজে যেনো কম কিছু।

“রাজ বললো,কি কপাল ভাই এই আন্টির জায়গা আন্টির মেয়ে বসলে কি খুব অসুবিধা হতো।”

“আন্টির মেয়ে বসলে কি হতো।”

“পাক্কা পটিয়ে ফেলতাম।মিস প্রেমিকাকে নিয়ে এই জ্যোৎস্নায় গান ধরতাম এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো।”

“নে পাওয়ার ব্যাংক আর ফোট শালা।আন্টি বিরক্ট হচ্ছেন।”

রাজ চলে গেলে রোজা বললো,

“উনাকে মিথ্যা বললেন কেনো?..”

“কি মিথ্যা বললাম।”

“আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম এটা বললেন যে।”
আপনি তার মানে বিরক্ত হচ্ছিলেন না।
উনি অনেক কিউট করে কথা বলছিলেন।বিরক্ত হওয়ার কি আছে।

কথাটা শুভর ভালো লাগলো না।কিন্তু অধিকার ফলিয়ে বলতেও পারলো না।আমি ছাড়া তুমি অন্য কারো প্রশংসা করতে পারবে না।শুভ চুপ আছে।রোজা আবার ও বললো,

“আমাকে আন্টি বললেন।”

“তো… কি বউ বলতাম।”

“হুহ খেয়ে কাজ নেই আপনার বউ হতে যাবো।”

“তাহলে কার বউ হবার ইচ্ছা।”

“যার সাথে মহাপ্রলয় বৃষ্টিবিলাস হবে।প্রচন্ড বৃষ্টিতে আমি ভিজে কাঁপবো।আর সে এসে বলবে এই বৃষ্টির আহবান তোমার জন্য ছিলো।বৃষ্টিবিলাসী সারাজীবন তোমার সাথে বৃষ্টিবিলাস করতে চাই।”

“খুব মুভি দেখেন বোঝায় যাচ্ছে।”

“মিথ্যা বলার অভ্যাস আছে তাহলে আপনার সেটাও বোঝায় যাচ্ছে।কিভাবে নিজের বন্ধুকে ডাহা মিথ্যা বললেন।”

“ক্যানো আপনি বলেন না।”

“না।”

“প্রয়োজনে বলতে হয় মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

“এখানে কি প্রয়োজন ছিলো।”

“নিজের সব থেকে দামী জিনিস রক্ষা করতে মাঝে মাঝে মিথ্যা বললে তাতে দোষের কিছু নেই।”

“এখানে কি বাঁচানোর ছিলো।”

“ইটস নান অফ ইওর বিজনেস মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

“আপনার বিজনেস এ নাক গলাতে চাইছি না।আমার বিজনেস নিয়েই জানতে চাইছি।ওই হ্যান্ডসাম ভাইয়া টা এলে আমার মুখ ঢেকে দিলেন কেনো?”

“বিকজ ও এসে আন্টির জায়গা আন্টির মেয়ে টাইপ কাউকে দেখলে এক্ষুণি আপনাকে সিট থেকে উঠিয়ে দিতো।কেমন হতো ব্যাপার টা।ভালো লাগতো।”

“এক্সকিউজ মি!উনি মনে মনে আন্টির মেয়েই খুজছিলেন।যায় বলুন ভাইয়া টা হ্যান্ডসাম খুব।আপনার মতো অশুভ না।”

“একজন হ্যান্ডসাম এর বেষ্ট ফ্রেন্ড তো হ্যান্ডসাম ই হবে। এত অবাক হওয়ার কিছুই নেই।মনে হচ্ছে জীবনে প্রথম কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখছেন।”

“আগে দেখেছি বলে কি আর কোনো হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখলে বলতে পারবো না।আশ্চর্য ব্যাপার তো।”

“আশ্চর্যের কিছুই নেই।”

চলবে?…