বৃষ্টিবিলাস পর্ব-৪+৫

0
656

#বৃষ্টিবিলাস
৪+৫
#Writer_Mousumi_Akter

“কোনো সুন্দরী মেয়ের সাথে যে মানুষ এইভাবে কথা বলতে পারে তা এই অশুভ কে না দেখলে বুঝতাম না।বলেই রোজা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।”

শুভ কপাল কুচকে বললো,

“নিজেকে সুন্দরী দাবী করছেন মিস জরিনা।”

“আমার নাম জরিনা না বুঝেছেন।ইরহাম আহমেদ রোজা।খুব ভাব নিয়ে নিজের নাম টা শুভ কে মনে করালো রোজা”

“চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে শুভ বললো,এমন পবিত্র নামটা কে রেখেছে আপনার।নাম টা আর পবিত্র রইলো না।রোজার মতো পবিত্র নাম আদেও যায় আপনার সাথে।”

“আমি কি নামটা অপবিত্র করেছি বেশ বিরক্ত হয়েই কথাটা বললো রোজা।”

“তাই ছাড়া আর কি।রোজা হবে নম্র ভদ্র সভ্য একটা মেয়ের নাম।আপনার নাম তো মিস লঙ্কাবতী হওয়া উচিত ছিলো।”

“কেনো?”

“যে ঝগড়ুটে আপনি।পালিয়ে এসছেন ভালোই হয়েছে।নাহলে ওই বুড়ো অক্কা যেতো অকালেই।”

“বুড়ো অক্কা পেলে সেটা আবার অকাল হয় কিভাবে।”

“পুরুষ মানুষ কখনো বুড়ো হয় না মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।”

“তো সারাজীবন জোয়ান থাকে। ”

“আপনার ছোট মাথায় এটা ঢুকবে না।”

–বুঝলাম না এই ছেলে আশে -পাশের সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করছে কিন্তু আমার সাথে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছে কেনো?সমস্যা কি এর কি মেয়ে মানুষ এ এলার্জি আছে।রোজা রোজা নিজেকে কন্ট্রোল কর।তুই বা কেমন হুট করে এক ছেলেকে দেখে ভালো লেগে গেলো যে কিনা তোকে পাত্তায় দিচ্ছেনা।মনে মনে রোজা বিড়বিড় করলো।

–মিস ইরহাম আহমেদ রোজা আপনাকে আমার ভয়ংকর রকম ভালো লেগেছে।এই ভালো লাগা বহুজন্মের।এখন আর ভালো লাগা বললে ভুল হবে এটা ভালবাসা ভয়ংকর রকমের ভালোবাসা। কিন্তু মেয়েদের সমস্য আছে তারা মুডি আর এটিটিউড ছেলে লাইক করে।আমি যদি এক্ষুনি গড় গড় করে তোমাকে প্রপোজ করে ফেলি তুমি এক্ষুণি আমাকে রিজেক্ট করে দিবে।আর ভীষণ সস্তা ভাববে।সেই অপমান আমি মেনে নিতে পারবো না।এই যে দেখো হুদাই কথা বাড়াতে ঝগড়া করছি আমার খুব ভালো লাগছে।তুমি রেগে যাচ্ছো আর আমার সাথে কথা বলছো ব্যাপার টা কিন্তু ভীষণ উপভোগ করার মতো।তোমার সাথে ঝগড়া করার আসল কারণ তোমার সাথে কথা বাড়ানো।ঠিক এইভাবেই তোমাকে আমি আমার ভালোবাসা বোঝাবো।আর তুমিও ভালবাসতে শুরু করবে আমায় আই প্রমিজ।কথা গুলো শুভ নিজের মনের সাথেই বললো।

–আরিচায় আসার কিছুক্ষণ আগেই গাড়ির টায়ার বাস্ট হয়ে গেলো।তাতে ভীষণ জোরে শব্দ হলো।এমন শব্দ যেনো বোম বিস্ফোরণ হয়েছে।রোজার হার্ট খুব উইক কেউ জোরে কথা বললেও সে এক হাত লাফিয়ে ওঠে।পরাণ অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে আর কমে না।রোজা ভীষণ ভয় পেয়ে শুভ কে জড়িয়ে ধরলো।শক্ত ভাবে শুভর বুকের শার্ট খামচে ধরে শুভর বুকে মাথা গুজলো।এই প্রথমবার কোনো নারীর স্পর্শ শুভর বুকে আর শরীরে এই ভাবে জড়িয়ে আছে।তার পুরুষ জীবন আজ ই স্বার্থক,কেননা সে জীবনে যে নারীকে খুজছিলো তাকে পেয়ে গেছিলো।বহুদিন,বহুকাল প্রতিক্ষা করেছে সে আসবে তার সামনে দাঁড়াবে তার বুকে মাথা গুজবে আজ সেই দিন তার আসার দিন।কিন্তু এইদিকে ভীষণ লজ্জা ও লাগছে শুভর। ছিঃ এটা কি হচ্ছে তার আগে কখনো নারীর স্পর্শ তার শরীরে শিহরণ জাগাতে পারেনি।কিন্তু রোজার স্পর্শ তার শারীরিক আকর্ষন কে জাগিয়ে তুললো।শুভ বুঝলো এই আকর্ষণ ভাললাগার,ভালবাসার অত্যান্ত ভালো অনুভূতি আছে এই স্পর্শে।তাহলে কি সৃষ্টিকর্তা এই নারীকে তার জন্য বিশেষ ভাবে সৃষ্টি করেছে যার স্পর্শতে হৃদয় সিক্ত হয়।শুভ দু’মিনিট চোখ বন্ধ করে উপভোগ করলো তার বাহুতে রোজার উপস্হিতি।রোজার শরীরের ঘ্রাণ শুভর ভীষণ ভালো লাগছিলো।এক্ষুণি ইচ্ছা করছে দুই হাতে রোজাকে জড়িয়ে ধরতে খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ভয় পেও না আমি আছি তো।প্রেম যখন আসে তখন কি এভাবেই আসে তুফানের মতো।সব কিছু লন্ড ভন্ড আর ছারখার করে দেয়।এই মেয়েটা এতকাল তার থেকে দূরে ছিলো এটাই বোধহয় ভালো ছিলো।ক্যানো নড়াইলে আসার জন্য বায়না ধরলাম আর এই মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে গেলো।সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো শুভর।এরই মাঝে রোজা মাথা তুললো।ভয়ে রোজার পরাণ কাঁপছে।শুভ কে বললো,

“ভেরি সরি আমি আসলে ভয় পেয়ে গেছিলাম।ভেবেছিলাম…”

শুভ আবার ও রোজাকে রাগাতে বললো,

“আপনি বাসে উঠে ধরেই ভেবেছিলেন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবেন,আমাকে একটু হাগ দিবেন এইতো।যা ভেবেছেন উদ্দেশ্য তো সফল আপনি।কিন্তু আমার এই দামী শার্টের বোতাম টা ছিড়ে ফেলার কি প্র‍য়োজন ছিলো।”

শুভর বিরক্তির কথায় রোজার শরীর রাগে রিরি করে জ্বলে উঠলো।মানে মানুষ কি অদ্ভুত ধরনের খারপ হতে পারে।এইদিকে শার্টের বোতাম ছিড়ে ফেলায় কিছু বলতেও পারছেনা।কারণ এটা রোজার অন্যায় হয়েছে।

রোজা বেশ ভাব নিয়ে বললো,

“দেখুন মিষ্টার অশুভ সাহেব আপনার শার্টের টাকা আমি দিয়ে দিবো।”

“সিরিয়াসলি।ভ্রু উঁচিয়ে বললো শুভ।”

“তো কি আমি কি মিথ্যা বলছি।”

“ওকে ফাইন এক্ষুণি দেন।”

“রোজা ব্যাগ থেকে ২০০ টাকা বের করে শুভর হাতে দিলো।”

“শুভ বাকা হেসে বললো,বোতামের দাম দিলেন।”

“ক্যানো বোতামের দাম দিবো ক্যানো?এটা শার্টের দাম।”

“এটা ব্রান্ডের শার্ট।কোনো ২০০ টাকার শার্ট না।”

“কত দাম।”

“আট হাজার।”

“হোয়াট এত দামী শার্ট। কি আছে এতে এটা কি সোনা রূপা দিয়ে বানানো।”

শার্ট টা শুভ ১৭০০ টাকা দিয়ে কিনেছে।কিন্তু রোজা কে চিন্তায় ফেলতেই মিথ্যা বললো।এতে শুভর অন্য প্লান আছে।

“শুনুন এত টাকা নেই আমার কাছে।ঢাকা গিয়ে আপনাকে ফেরত দিবো।”

“কিভাবে বিলিভ করি।”

“দেখুন বোতাম টা আমি সেলাই করে দিবো।অত টাকা আমি দিতে পারবো না আপাতত। ”

“আপনি কি আমার বউউউউউ যে শার্ট সেলাই করে দিবেন।”

রোজা রাগী মুডে তাকালো।

রোজার রাগী মুড দেখে শুভ বললো,

“না মানে মানুষ এটাই ভাববে আরকি।এত সিরিয়াস হওয়ার কিচ্ছু নেই।”

চাঁদনি রাত বিশাল এক জঙ্গলের কাছে এসে বাস নষ্ট হলো।যাত্রীরা বাইরে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে।রোজা একা বাসে বসে আছে।শুভ আর রাজ ও বাইরে হাঁটাহাটি করছে।শুভ বাইরে দাঁড়িয়ে হাসছে কিছু নিয়ে রোজা দেখছে। শুভর হাসিটা খুব সুন্দর। শুভকে প্রথম দেখাতেই রোজা মুগ্ধ কেননা রোজার সাথে যায় করুক মুরুব্বি দের সাথে শুভ অত্যান্ত ভালো ব্যাবহার করে।আবার পাশে অচেনা মেয়ে একটা বার ও এডভান্টেজ নেয় নি।শুভ ও বাইরে থেকে বারবার রোজাকে দেখছে।এই বোরকার আড়ালে বসে থাকা পরীটা এত সুন্দর কেনো।একটু বেশী ই সুন্দর মেয়েটা।এই চাঁদনী রাত,পাশে কাক্ষিত নারী প্রেমে পড়ার জন্য এই রাত ই যথেষ্ট।

শুভ বাসের ভেতর উঠে বললো,

–বলছি নেমে আসুন।

–রোজা শুভর দিকে তাকিয়ে বললো কেনো?

–যাত্রীরা কেউ নেই গাড়িতে।বাসের হেল্পার আর ড্রাইভারের সাথে আপনাকে এইভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা।

–আমি কোথাও যাবো না।এক প্রকার জিদ ধরেই বললো।

–মিস ইরহাম আহমেদ রোজা আই সে..শুভ চোয়াল শক্ত করেই বললো।

–কি ব্যাপার এমন দাঁত কিড়মিড় করছেন কেনো?রোজা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো।

–শুভ নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললো,ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড। এসব ড্রাইভার হেলপার এরা খুব একটা ভালো হয়না। তাছাড়া এদিকে এমন জঙ্গল হায়েনার দল আসতে পারে নেমে আসুন প্লিজ।আপনাকে এইভাবে একা রেখে যেতে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।আপনার জন্য আমি বাইরে মন দিয়ে কিছুই করতে পারছি না।

‘–এত বাজে ব্যাবহার করে এখন আবার আমার জন্য চিন্তা দেখানো হচ্ছে।মিথ্যুক ছেলে।এখন যদি বলি আমি কি আপনার বউ এত চিন্তা দেখাচ্ছেন তাতেও দোষ হবে।’

‘–কি বিড়বিড় করছেন?

‘–কিছু নাতো।’

‘যেটা বলছিলেন ওটা হওয়ার খুব শখ বুঝি।এনি ওয়ে আপনি রাজি থাকলে আমার আপত্তি নেই।’

‘–রোজা আবার রাগী মুডে তাকালো।’

‘–শুভ বললো,নেমে আসুন আগে।’

‘–কোথায় যাবো?’

‘–পাশে একটু রেস্টুরেন্ট আছে।রাতেও খোলা থাকে।চলুন কিছু খেয়ে আসি।’

‘–আমি খাবো না।’

‘–আপনার না খেলেও চলবে কিন্তু আমার খুদা লেগেছে।আপনি বসে থাকবেন আমি খাবো।’

‘–একটা হেল্প করবেন প্লিজ।দুঃখী দুঃখী মুখে বললো রোজা।’

‘–কি হেল্প।’

‘–একটা ফোন করতে দিবেন প্লিজ।’

‘–শুভ ফোনের লক খুলে রোজার দিকে এগিয়ে দিলো।আর বললো আপনার ফোন কোথায়?’

‘–রোজা নিজের ডিসপ্লে ভাঙা ফোন বের করে বললো,যে বুড়োর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাকে বলেছিলাম আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।সে বললো আমাকে বিয়ে করবেই।রাগে ফোন আছাড় মেরেছিলাম।’

শুভ দেখলো পেছনে সুন্দর স্টোনের ব্যাকপার্ট দেওয়া একটা ফোন।

‘–শুভ কপাল কুচকে বললো,এত রাগ’

‘–হবেনা বলুন,উনার কি আমাকে বিয়ে করা সাজে।’

‘–ভারী অন্যায়,তাই বলে অন্যর সাথে রাগ করে ফোন ভাঙবেন।’

‘–ওই বেটাকে পেলে ফোনের টাকা চেয়ে নিতাম।’

শুভর হাসি পেলো রোজার কথা শুনে।মেয়েটা কি ইনোসেন্ট।

রোজা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে শুভর একটা ছবি।বেশ সুন্দর লাগছে শুভকে প্রকৃতির মাঝে দেখতে।রোজা কয়েক হাজার ভোল্টেজ এ ক্রাশ খেয়ে ফেললো।ছেলেটা কি একটু বেশী কিউট।আর একটু কম কিউট হলেও তাকে খারাপ লাগতো না।রোজার ঠোঁটে হাসি।এই হাসির কারণ কি শুধুই শুভ।শুভ রোজার এই হাসির কারণ হয়তো বুঝলোনা।কারণ মেয়েদের বোঝা অত সহয নয়।শুভ রোজাকে বললো ফোন করুণ।রোজা অহনার নাম্বার ডায়াল করলো।অহনা ফোন রিসিভ করতেই রোজা বললো,

‘অহনানানানানা আমি। ‘

‘রোজা তুই?কই আছিস এখন বাসে।’

‘হ্যাঁ আমি বাসে আছি।ওদিকের খবর কি?’

‘খবর ভালোনা।কাকু আমাকে সন্দেহ করছে।আমি মুখ খুলিনি।চারদিকে খোজাখুজি চলছে।’

‘ওই বুইড়ারা কি আর ফোন দিয়েছে।’

‘হ্যাঁ দিয়েছে তো।তোকে খুজে পেলে সাথে সাথেই বিয়ে দিয়ে দিবে। তুই আপাতত আসিস না।সোহানা আপুর বাসায় গিয়ে ফোন দিস।আমি এক সপ্তাহ বাদে আসবো বুঝেছিস।’

‘ওকে ইয়ার,লাভ ইউ।’

‘লাভ ইউ ঠুউউউউউউউউ।’

রোজা ফোন কেটে শুভর হাতে দিয়ে বাস থেকে নিচে নেমে গেলো।

রাজ শুভ আর রোজা তিনজনে হাঁটছে।রাজ ছেলেটা বেশ ছটফটে আর শুভ একটু গম্ভীর টাইপের।রাজ শুভকে ফিসফিস করে বলছে,

— এই আন্টিকে নিয়ে আসছিস কেনো ভাই।আমার ইয়ে পেয়েছে কিভাবে করবো।

–অন্যদিন যেভাবে করিস ওইভাবে করবি।

–তো উনার সামনে করবো নাকি।উনাকে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যা আমি কাজ টা সেরে আসি।

–তুই ঢাকা ফিরে এবার ডায়বেটিকস চেক করাবি।

–ভাজ্ঞিস আশে পাশে কোনো মেয়ে নেই, তাহলে তোর এই কথা শুনে জীবনে আর সে মেয়ে আমার সাথে প্রেম করতো না।

–তোর প্রেম কি আর এমনি এমনি হয়নি।পরীক্ষার হলে ঘন্টায় দু’চার বার করে বাইরে যেতি।স্যার কি বলতো তোর ডায়বেটিকস এর সমস্যা আছে।

–আরে ভাই টয়লেট ইয়ে করতে যেতাম না।বই রেখে আসতাম ভেন্টিলেটর এর মাঝে।আর প্রশ্ন ভুলে যেতাম সেটাই দেখে আসতাম।

–সারাবছর বই খুলে না দেখে মেয়েদের পিছে ঘুরলে যা হয় আরকি।

–তুই এত পড়তিস কিভাবে ভাই।আমার আম্মা তোর পা ধোয়া পানি খাইতে বলতো।না নিজে প্রেম করছোস না আমারে করায় দিছোস।

–প্রেম প্রেম করে দেবদাস হয়ে যাবি তবুও প্রেম হবেনা।

–আন্টিকে সামলা প্লিজ।আমার খুব ইয়ে পেয়েছে ভাই।

শুভ হুট করেই রোজার চোখ বন্ধ করলো এক হাত দিয়ে।রোজা বেশ সন্দিহান ভাবেই বললো,

–কি ব্যাপার আমার চোখে হাত দিলেন কেনো?

–সামনে তাকানো যাবেনা।

–কেনো?

–সেটা বলা যাবেনা।

–চোখ ছাড়ুন বলছি।

–ওকে বলছি।শুভ ফিসফিস করে রোজার কানে কিছু বললো।

–ছিঃএত অসভ্য কথা কিভাবে বললেন।
রাস্তাঘাটের পরিবেশ নষ্ট করছে আপনার বন্ধু।উনাকে পুলিশে দেওয়া উচিত।

–এটা সিম্পল কথা অসভ্য কোথায় পেলেন।

হটাৎ চাঁদ মেঘে ঢেকে গেলো।আকাশে গুড়িগুড়ি মেঘের ছড়াছড়ি।শুভ আর রোজা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।এ অসময়ে কি বৃষ্টি হবে।যদিও রোজা খুব বৃষ্টি পছন্দ করে,বৃষ্টি হলে আরামে একটা উপন্যাস পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়।এখন বৃষ্টি হলে সে ঘুমোবে কোথায় আর উপন্যাসের বই পাবে কোথায়।এসব ভেএ ভেবে রোজার মন ভীষণ খারাপ হলো।আস্তে আস্তে মেঘ আরো গাড় কালো রুপ ধারন করলো।আকাশ এখন থমথমে কিছুক্ষণ আগে একটু বাতাস ছেড়েছিলো কিন্তু এখন আর সেটাও নেই।আশে পাশে গাড়ির যাত্রীরা এদিক ওদিক যাচ্ছে।কারো কাছে কোনো ছাতা নেই।রাজ রাস্তার পাশে কয়েকটা বড় কচুর গাছ দেখতে পেলো।কিন্তু কচু পাতা কাটার মতো কিছু এখানে নেই।কচুর রস লাগলে আবার চুলকাবে।রাজ কচু গাছের পাতা মুড়িয়ে ছেড়ার চেষ্টা করছে।এতে একটা পাতা নষ্ট হয়ে গেলো ছিড়ে।রোজা শুভ কে বলছে উনি কাজ করছে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো মিষ্টার অশুভ যান না দেখুন কিছু করা যায় কিনা।শুভ রোজার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো, যেনো তার বউ তাকে অর্ডার করছে।এই সুন্দর মুহুর্তে শুভ রোজাকে দু’চোখ ভরে দেখছিলো আপণমনে।তার দেখার মাঝে বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ নেই,চোখের সামনে শুধু রোজা রোজা আর রোজা।রোজার কথাতেই ধ্যানমগ্ন হলো শুভর।এদিক ওদিক খুজে একটা ধারালো তক্তা পেলো,সেটা দিয়ে চেষ্টা করে তিনটা বড় কচুর পাতা কাটলো।কচুর ডাল কেমন থেতলে গিয়েছে।কচুপাতা মাথায় দিয়ে তিনজনে সামনে রওনা হলো।ঝপ ঝপ করে এক পশলা বৃষ্টি শুরু হলো।কচু পাতায় তাদের মাথা রক্ষা হলেও জামা কাপড় প্রায় ভিজে গেলো।শুভ রাজ আর রোজা দ্রুত গিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করলো।শুভ নিজের আধভেজা কাপড় ঝাড়ছে সে পানির ফোঁটা গিয়ে রোজার গায়ে লাগছে।রোজা মুগ্ধ হয়ে শুভর কাপড় ঝাড়া দেখছে।রোজার বোরকা ভিজে যাওয়াতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বোরকা খুলে ফেললো।বোরকা খুলে হাত মোজা পা মোজা সব খুলে একটা চেয়ারে রাখলো।

রোজার চোখে মুখে হাসি কেনো হয়তো সে নিজেই জানে না।পাঁচ ফিট চার হাইট হবে,ফর্সা গায়ের রং।পরণে ব্লু জিন্স, গায়ে কালো কামিজ,কালো ওড়না সাথে।কামিজে সাদা স্টোন আর আয়না বসানো। পায়ে লেডিস কালো জুতা।রোজা দাঁড়িয়ে ভেজা চুল ঝাড়ছে হালকা পানি লেগেছিলো।রোজার জামার আয়নায় শুভ আর রাজের মুখ দেখা যাচ্ছিলো।রাজ রোজাকে প্রথম বার দেখেই ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।এক্ষুণি হয়তো পড়ে যাবে মাথা ঘুরে।বোরকার আড়ালে এমন সুন্দর একটা মেয়ে লুকিয়ে ছিলো।রাজ এর চোখের পলক যেনো ঘনঘন পড়ছে।দুই ঠোঁটের মাঝে খানিক টা ফাঁকা হা করে দেখছে সে রোজাকে।শুভ আরো মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোজা কে।রাজ আর শুভ দুজনের চোখের তারায় রোজার ছবি চিকচিক করছিলো।দুজন সুদর্শন যুবক যার যার মতো মন হারিয়েছিলো মধ্যরাতে অচেনা এক তরুনি কে দেখে।

এখান থেকেই শুরু হলো ত্রিকোন প্রেমের সূচনা।

চলবে?…