বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১১

0
460

#বৃষ্টিবিলাস
১১.
#writer_Mousumi_Akter

কমলা রঙের কৃত্তিম আলো জ্বলছে রুমে। কৃত্তিম আলোতে রুমের সব কিছুই ক্লিয়ার দেখা যাচ্ছে।বিশাল বড় এই রুম।রুমের মাঝ খানে বিশাল বড় একটা খাট রাখা।রুমের মাঝে ফোমের সিঙেল দুইটা সোফা ও আছে।একটা ড্রেসিন টেবিল আর একটা আলমারি ও আছে।রাজের রুম টা বেশ ভালোই লাগলো রোজার।গরমে রাজ প্রায় হাফপ্যান্ট পরে ঘুমিয়েছে একবার তাকিয়েই রোজা ভীষণ লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো।আসলে এইভাবে মধ্যরাতে কোনো ছেলের রুমে প্রবেশ করা ঠিক নয়।কিন্তু বাধ্য হয়েই রোজাকে আসতে হয়েছে। আর শুভর পরনে থ্রী কোয়ার্টার, খালি গায়ে সুয়ে আছে ডান দিকে কাত হয়ে।রোজা চুপি চুপি পা টিপে টিপে এগোচ্ছে। শুভর বালিশের এদিক ওদিক হাতড়াচ্ছে।কোনভাবে ফোনটা খুজে পেলেই সে ভিডিও ডিলিট করে দিয়ে চলে যাবে।।শুভর হাতের নিচেই ফোন ছিলো।ফোন খোজার সময়েই হাত যখন বালিশের সাইড দিয়ে খোজাখুজি করছিলো ঠিক তখন ই শুভ রোজার হাত টেনে ধরে।রোজা ভীষণ ভাবে চমকে গিয়ে ভয় পেয়ে যায়।এখন যদি শুভ এইবাসার সব মানুষ জড় করে তাহলে ব্যাপার টা কি ভালো দেখাবে।মান সম্মান যা আছে সব যাবে।মানুষ কি ভাববে তাকে নিয়ে।রোজা নিজের হাত ছুটানোর চেষ্টা করছে প্রাণপণ, সে কোনো ভাবে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে।রোজার সকল চেষ্টা ব্যার্থ হলো।একজন শক্তপক্ত মানুষের হাতের বাঁধন ছোটানো কি এতই সোজা।শুভ এবার নড়ে চড়ে সোজা হয়ে সুয়ে রোজাকে এমন ভাবে নিজের দিকে টান দিলো রোজা অনায়াসে শুভর বুকের উপর ঝুঁকে পড়লো।শুভর চোখ বন্ধ আছে এখনো।রোজা প্রাণপণ চেষ্টা করছে নিজেকে ছড়ানোর।এখন কি করবে রোজা হার্টবিট বেড়ে চলেছে ক্রমশ। মধ্যরাতে একটা ছেলে তার টেনে ধরে বুকের উপর ঝুঁকিয়ে রেখেছে ব্যাপার টা মোটেও সুহজ নয়।

শুভ একদম ঘুম ঘুম নেশাক্ত কন্ঠে বলছে,

‘পালানোর চেষ্টা করছো কেনো মিস ইরহাম আহমেদ রোজা?’

রোজা এবার আরো ভয় পেয়ে গেলো।শুভ কি জেগে ছিলো নাকি রোজা আসলে সে জেগেছে।রোজা রাতের নিরবতার মতোই নিরব কন্ঠে বললো,

‘আপনি জেগে ছিলেন।সো সরি প্লিজ ভুল বুঝবেন না।আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়।

‘নাতো,ঘুমিয়ে ছিলাম না।’

‘তাহলে বুঝলেন কিভাবে আমি এসছি।’

‘আমি জেগে থাকি আর ঘুমিয়ে থাকি তোমার উপস্হিতি আমি বুঝতে পারি রোজা।’

‘সো সরি প্লিজ,আমাকে ছেড়ে দিন শুভ।’

‘তুমি বারবার আমার এত কাছে চলে আসো কেনো রোজা?কখনো জড়িয়ে ধরো, তো কখনো,একদম ভূ*তের ভয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে যাও,কখনো কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোও,আবার চুমু দাও, এখন আবার মধ্যরাতে আমার বেডরুমে আমার নিঃশ্বাসের একদম কাছাকাছি এসবের মানে কি রোজা।’

লজ্জায় রোজার ম*রে যেতে মন চাচ্ছে কি বিশ্রি কথা গুলো শুনতে হলো তাকে।ছিঃএসব ই ছিলো তার কপালে।মধ্যরাতে যে ছেলের প্রতি ক্রাশ খেয়ে আহত রোজা আবার সেই কথা গুলো বলছে।শুভর এই ঘুম ঘুম কন্ঠে কথা গুলোর মাঝে রোজা যেনো অন্য কিছু খুজে পাচ্ছে।

‘রোজা জড়ানো কন্ঠে বললো,আমাকে তুমি করে বলছেন যে।’

‘তুমি আমার অনেক জুনিয়র, তুমি বললে তো দোষের কিছু নেই।’

‘শুভর এই ঘুম ঘুম কন্ঠ রোজাকে আরো উইক করে ফেলছে।রোজা বললো আমার হাত ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।’

‘এতই যদি ভয় এখানে এসেছো কেনো মিস ইরহাম আহমেদ রোজা এত রাতে আমার রুমে।আমায় মিস করছিলে বুঝি।কি হলো সত্যিটা বলোনা প্লিজ।’

শুভর মুখে প্লিজ শব্দটা প্রথম শুনলো রোজা।তাছাড়া রোজাকে শুধু রোজা বলেও ডাকছে।ব্যাপার টাতে অন্য কিছু সন্দেহ হচ্ছে রোজার।ভীষণ ভাল লাগা কাজ করছে রোজার।

‘না আমি আসলে এখানে ভুলে চলে এসছিলাম।’

‘বারবার ভুলে কি তুমি আমার বাহুডোরেই এসে পড়ো।ইস এই ভুল সারাদিন সারাক্ষণ করতে পারোনা।আমি জাস্ট ফিদা তোমার প্রতি রোজা।’

ইরহাম আহমেদ রোজা বাদে শুধু রোজা শুনে রোজার আরো বেশী ভালো লাগছে।ঘুম ঘুম কন্ঠে মাতাল করে তুলছিলো রোজাকে।প্রেমের তুফান বয়ে যাচ্ছিলো ভেতরে।প্রিয় মানুষ টা হৃদয়ের কাছাকাছি এলে বুঝি এতটায় ভালো লাগে।

‘রোজা বললো,দেখুন আমি সত্যি ভুলে চলে এসছি এখানে কিন্তু। হঠাত আপনার ভ্রুর দিকে খেয়াল গেলো।তাই দেখছিলাম এত সময়।আর আপনি অন্য কিছু ভাবছেন।’

‘আমার ভ্রুর প্রতি ক্রাশড তুমি তাহলে আমার প্রতি কেনো নও।’

‘এসব কি বলছেন আপনি।আমি আসলে বুঝতে পারছি না।’

‘কি আছে এই কাটা ভ্রুতে যা দেখতে তুমি এত মরিয়া হয়ে ভয়,ডর, কলঙ্ক রেখে এখানে চলে এসছো।কোনো মেমরি আছে বুঝি। কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো এমন কাটা ভ্রুর কোনো ছেলে।’

‘দেখুন ঘুমের ঘোরে আপনি কেমন যেনো করে কথা বলছেন, এখন আসি আমি।’

শুভ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।দ্রুত শার্ট টা গায়ে দিলো রোজা দরজা পর্যন্ত চলে গিয়েছে।শুভ রোজাকে ডাকলো,

‘রোজা?’

‘হুম।’

‘আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবো মন থেকে বলবে।’

‘হঠাত এমন প্রশ্ন।’

‘কিছুক্ষণ আগে যেভাবে অন্য ছেলেরা কথা বলে আমিও বলছিলাম।আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম আমাকে আসলে তুমি কেমন চরিত্রের ভাবো।এখন নিশ্চয়ই ভাবছো আমি ন্যারো মাইন্ডের।’

‘নাতো,এমন ভাববো কেনো?আপনি তো তেমন কিছুই বলেন নি।’

‘তুমি আমার অনেক ছোট রোজা,তাই তুমি বলছি মাইন্ড করোনা ওকে।’

‘আপনি কি ভালো হয়ে গিয়েছেন?’

‘খারাপ ছিলাম কবে?’

‘সব সময় ই তো অশুভ ছিলেন।আমার সাথে কেমন বিরক্তিকর ভাবে কথা বলতেন।’

‘সব সময় যদি বিরক্তি নিয়েই থাকি, প্রেমিকা কাছে আসবে কিভাবে।তেতো ভেবে পালাবে।’

‘রোজা?’

‘হু।’

‘ট্রাস্ট করতে পারবে আমায়।’

‘কেনো?’

‘একচুয়ালি ছাদে যেতাম একটু।অপরিচিত জায়গা ঘুম আসছে না আমার।অস্হিরতা কাজ করছে।একা গেলে ভালো লাগবে না।তুমি গেলে ভালোই লাগতো।
আমার সাথে ছাদে যেতে পারবে রোজা।’

‘চলুন রাজ ভাইয়াকেও ডাকুন এক সাথেই যায়।’

‘ও ঘুমোলে আর হুঁশ থাকেনা।’

‘তাহলে সোহানা আপুকে ডাকি।’

‘সে তার জামাই নিয়ে ঘুমোচ্ছে।এখন তাকে ডাকাটা কতটা শোভনীয় হবে।’

‘তাহলে আন্টিকে ডাকি।’

‘তোমাকে যেতে হবেনা প্লিজ।তোমার রুমে যাও আমি একাই যাচ্ছি।’

‘রাগ করলেন মনে হচ্ছে।’

‘নো।’

‘আচ্ছা চলুন।’

‘না আমি ঘুমোবো এখন, কোথাও যাবো না।’

‘এক্ষুণি বললেন যে ঘুম পাচ্ছেনা।’

‘সেটা দুমিনিট আগের কথা,দু’মিনিটে অনেক কিছু চেঞ্জ হতে পারে।’

রোজা বুঝতে পারলো শুভ একটু রাগ করেছে। এই প্রথমবার শুভ রোজার সাথে ভালো ব্যাবহার করেছে তার মনটা ভাঙা যাবে না।রোজা চট করেই শুভর হাত ধরে টেনে বললো চলুন আগে আমার ঘুম পাচ্ছেনা।আপনাকে যেতেই হবে।রোজা হাত ধরাতে শুভ শিউরে উঠলো।এই ছোঁয়া টা এত সুন্দর অনুভূতি দেয় কেনো তার শরীর আর মনে।বেশ বড় একটা ছাদ রাজদের।তবে ছাদ টা খুব অপরিষ্কার ইট আর বালুর ছড়াছড়ি।এখানে তিনতলার কাজ চলছে।চাঁদের নরম আলো এসে পড়ে চারদিকে।সোনালি আলোতে সব কিছু চিকচিক করছে।চাঁদের নরম আলো গায়ে মেখে রোজা বলছে,

‘আজকের চাঁদ টা সুন্দর তাইনা?’

‘শুভ রোজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,চাঁদের সৌন্দর্য কি তোমার থেকেও বেশী রোজা।’

‘রোজা শুভকে একটা ঝাঁকি দিয়ে বললো অশুভভভভ চাঁদটা সুন্দর না।অশুভটা মনে করেন বলতে ভালো লাগে তাই বলেছি আবার রাগ করছেন নাতো।’

‘শুভ হাসলো আর বললো,চাঁদ তুমি সত্যি সুন্দর। সুন্দর মানবী তোমার প্রশংসা করছে তুমি কত লাকি।কেউতো আর আমার প্রশংসা করেনা।’

‘আপনিও সুন্দর, ভীষণ সুন্দর। ‘

‘আমাকে বলছো?’

‘জ্বী অশুভ। ‘

শুভ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোজার দিকে।’

‘রোজা আবার বললো,আপনার অস্হির লাগছিলো কেনো?কাউকে মিস করছিলেন।’

‘হুম। ‘

‘কাকে।’

‘আমাকে যে মিস করছিলো তাকে।’

রোজার হঠাত হেচকি উঠে গেলো।শুভ কে বুঝে গেলো আমি তাকে ভয়ানক রকমের মিস করছি।আমার চোখে মুখে কি কিছু বোঝা যাচ্ছে।শুভ রোজার হেচকি দেওয়া চোখে মুখে তাকিয়ে আছে।হেচকি কমছেই না।শুভ শুনেছে যখন কারো হেচকি ওঠে তখন অবাক করা কিছু করতে হয় যেমন আজগুবি কোনো কথা বলতে হয় যেটা শুনে তার মন সেদিকে চলে যায় বা আশ্চর্য করা কিছু করতে হয় যাতে হেচকির থেকে মন সেদিকে ঘুরে যায়।খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে শুভর চোখে অসম্ভব মায়াবতী নারী চাঁদের আলোতে দাঁড়িয়ে সেকেন্ডে সেকেন্ডে হেচকি তুলে যাচ্ছে।রোজার সামনের কাটা চুল গুলো মুখের উপর পড়ে আছে।শুভ খানিক টা দূরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে সেই ভয়ানক সৌন্দর্য।এক্ষুণি ছুটে গিয়ে বলতে মন চাইছে ভালবাসি রোজা কিন্তু জড়তা,লজ্জা, ভয় আটকে দিচ্ছে শুভকে।শুভ রোজার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো।আর রোজা হেচকি তুলেই যাচ্ছে।হঠাত ই শুভ রোজার দুইহাত নিজের হাতের মধ্য নিলো।রোজার ছাদের সদ্যতোলা ওয়ালে পিটঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।দুজনের হার্টবিট দুজন কে ভালবাসি বলতে চাইছে।শুভর এইভাবে হাত ধরাতে রোজার বুকে দুরুম দুরুম বাড়ি দিচ্ছে। শুভ কি তাকে কিছু বলতে চাইছে।হেচকি দিতে দিতে ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে রোজা।শুভ রোজার সামনে আসা চুল গুলো কানের নিচে গুজে দিতে দিতে বললো,

চলবে,,

(রি-চেইক নেই।)