বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১৪+১৫

0
466

#বৃষ্টিবিলাস
১৪+১৫
#writer_Mousumi_Akter

–স্নিগ্ধ সকালে মাত্রই উঁকি দিয়েছে সূর্য। শুষতে শুরু করেছে ভোরের শিশির।ঘুমিয়ে থাকা সবুজ প্রকৃতি সূর্যের জেগে উঠাতে তারাও যেনো ঘুম ভেঙে মাথা নেড়ে উঠে প্রকৃতিতে সজীবরা বেলাতে শুরু করলো।বাসার সামনের ছোট্ট নারকেল গাছটার ফাঁতার ফাঁকা জায়গা ভেদ করে সূর্যর আলো কেমন যেনো সারিবদ্ধভাবে ওয়ালে এসে পড়েছে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো শিল্পির হাতের নিঁখুত আলপনা।আজকের মতো এত সুন্দর সকাল রোজার জীবনে আগে কখনো আসে নি।রোজা খোলা চুলে ডালিয়া ফুলটা কানে গুজে শুভর রুমে প্রবেশ করলো।শুভ বিছানায় উপুড় হয়ে সুয়ে আছে।মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে মগ্ন।রুমের লাইট বন্ধ থাকায় দিনের বেলা ও ঘন কালো আঁধার মনে হচ্ছে।বিদঘুটে অন্ধকার এ রুম।কেননা এ বাসার সব থেকে লাস্ট রুম এটায়।রোজা কিভাবে তাকে ডাকবে।খুব জোরে নুপুর বাজাচ্ছে তবুও শুভর কানে যাচ্ছে না নূপুরের রিনিঝিনি ধ্বনি।শুভর সোজাসুজি জানালা রয়েছে একটা।রোজা গোলাপি রঙের মসৃণ পর্দাটা সরিয়ে জানালা খুলে দিলো।সাথে সাথে পুরা রুম ঝলমল করে উঠলো।শুভর মুখের উপর সূর্যের আলো পড়তেই চোখ মুখ কুচকালো শুভ।চোখের সামনে হাত দিয়ে আলো থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু রোজা কি আর সফল হতে দিবে।রোজা একটু দুষ্টুমি করে শুভর কানের কাছে গিয়ে জোরে ফু দিলো।শুভ লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে দেখলো রোজা তার সামনে দাঁড়িয়ে সামনে হাত বেঁধে দুলছে আর মিটিমিটি হাসছে।শুভর ঘুমে ভরা চোখ দুটোর ঘুম যেনো পালালো।সাজ সকালে এটা ভীষণ সারপ্রাইজ ছিলো শুভর জন্য।প্রথম সে রোজাকে এতটা সাজগোজ এ দেখলো।সিম্পল সাজে টোল পড়া গালে কি মিষ্টি লাগছে রোজাকে।হঠাত চোখ গেলো রোজার কানে গোজা ডলিয়া ফুলটার দিকে।শুভ নিমিষেই হেসে দিলো।দুই ঠোঁটের মৃদু হাসির ছড়াছড়ি।এই ফুলটার জন্য কাল রাতবোধ হয় বেশী স্পেশাল ছিলো রোজার জন্য।শুভ তাকিয়ে আছে রোজার দিকে।এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি রোজা নির্লজ্জ বলবেনা।শুভ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো।মেয়েটা বারবার তাকে বেসামাল করে তুলছে।কি যাদুতে ভরপুর মেয়েটার চাহনি।প্রতিটা ছেলের কাছেই কি তার প্রেমিকার চাহনি এতটা যাদুকরী লাগে।নিজেকে সংযত করতে শুভ আড়মোড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,

‘শুভ সকাল রোজা।’

শুভ বিছানা হাতড়ে তার চশমা টা খুজে চোখে দিলো।চশমা চোখে সদ্য ঘুম ভেঙে ওঠা প্রেমিক কে দেখে ভয়ানক লজ্জা চেপে রাখার চেষ্টা করলো রোজা।এর আগে কখনো কাউকে দেখে এতটা লজ্জা লাগেনি রোজার।এর কি একটায় মানে ভালবাসা।ভালবাসার শুরুতে যে অনুভূতি গুলো সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীর সব অনুভূতিকে হার মানায়।অহেতুক একা একা থাকলেও লজ্জা লাগে অকারণ হাসতে ভালো লাগে,সাজতে ভালো লাগে,তার চিন্তায় ঘুম হারায় দু’চোখের, তাকে দেখার আকুতি বারবার বেহায়ার মতো ছুটে যেতে ইচ্ছা করে।বেহায়া।সাথে সাথে রোজার ধুকপুকুনি বেড়ে গেলো আরো বহুগুন।এই বেহায়া কথাটা নিয়ে শুভ তাকে বলেছিলো মানুষ কোন টাইমে বেহায়া হয় জানেন।তার মানে শুভ আমাকে তার ভালবাসার ইঙ্গিত দিয়েছিলো।শুভ আমাকে বলেছিলো মানুষ কোন টাইমে বেহায়া হয় জানেন।এর উত্তর আমি খুজে পেয়েছি।ভালবাসা একমাত্র ভালবাসলেই মানুষ বেহায়া হয়ে যায়।তার মানে কি এটা শুভ ও আমাকে ভালবাসে।আমি কি বলবো শুভ আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর খুজে পেয়েছি।অঅদ্ভুত এক ভাললাগায় শিউরে উঠলো রোজা।লজ্জায় মিহিয়ে যাচ্ছে রোজা।কতক্ষণ আগে শুভ তাকে শুভ সকাল জানিয়েছে।রোজা অনেক্ষণ চুপ আছে ভাবনার অতলে তলিয়ে গিয়েছে।

‘শুভ আবার বললো,রোজা কোথায় হারিয়ে গেলে।’

‘শুভ সকাল বলবো নাকি অশুভ সকাল বলবো শুভ ভাইয়ায়ায়ায়া।’

‘নো প্লিজ ডোন্ট কল মি ভাইয়া।তুমি শুভ সকাল বলো আর অশুভ সকাল বলো দুইটায় শুভ আমার জন্য।আর থ্যাংক্স ঘুম ভাঙানোর জন্য।’

‘আমি আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য আসিনি কিন্তু।ওই সোহানা আপু বললো যে এ ঘরটা অন্ধকার লাগছে আমি যেনো জানালা গুলো খুলে দেই।আসলেই ঘরটা কেমন যেনো ঘুমট অন্ধকার লাগছে দেখুন। সোহানা আপু ঠিক ই বলেছে।’

‘ওহ তাই বুঝি।সোহানা ভাবি বলে দিয়েছে বুঝি।তাও ভালো তাকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়।তার জন্যই আজকের সকালের সব থেকে সুন্দর মুহূর্ত ছিলো।’

‘কি ছিলো সেটা।’

‘সব কিছু বলে দিলে কি আর সুন্দর থাকে। কিছু জিনিস কাউকে না বলে একাই উপভোগ করতে হয়।’

রোজা শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলতে চাইছে শুভ।শুভ রোজাকে বললো,

‘রোজা আমার গুড মর্ণিং টা আরো গুড করতে তোমার হাতের এক কাপ কড়া ব্ল্যাক কফি খাওয়াবে প্লিজ।’

“ঠিক আছে যাচ্ছি।’

‘দাঁড়াও এক মিনিট।তুমি পারোতো বানাতে।না মানে আগে কখনো বানিয়েছো।’

‘পারি মানে খুব ভালো পারি।’

‘সাবধান যেনো হাত পুড়িয়ে ফেলো না যেনো।’

‘রোজা হেসে বললো,আপনি রেডি হয়ে নিন।আজ ঘুরতে যাবো আমরা।’

–রোজা খুব একটা চা কফি আগে কখনো বানায় নি।তবে কিভাবে বানায় এটা সে জানে।শুভর প্রশংস পেতেই রোজা খুব আগ্রহ নিয়ে কফি বানাতে গেলো।
কিচেনে সোহানা রান্নার জিনিস রেডি করছে।

–রোজা চুপিসারে গিয়ে বললো আপু আমি কফি বানায় দাও।

–তুই কফি খাবি,ওয়েট আমি বানিয়ে দেই।

–না না আপু তুমি জাস্ট দেখো,তোমার বোন কিভাবে কফি বানায়।

–আমার বাসায় দুইদিন এসে মাছ কাটছিস আবার কফি বানাবি আমাকে খুব লজ্জা দিচ্ছিস তুই।

–এটা কোনো কথা বললে আপু তুমি।আমি এক্ষুণি কফি বানিয়ে খাওয়াবো তোমায়।

–আচ্ছা রোজা তোর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার কি খুব বেশী বয়স।কত হবে বয়স অনুমান তোর নোমান ভাইয়ার মতো।

–আরে ধূর নোমান ভাইয়া একজন হ্যান্ডসাম মানুষ। কার সাথে কার তুলনা দিচ্ছো তুমি।

–তাহলে তার বয়স ঠিক কতটা বেশী হবে।

–বেশী কি একদম বাবার বয়সী।

–না রোজা আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।আঙ্কেল তোকে ভীষণ ভালবাসে সে কিভাবে আধাবয়সী একটা লোকের সাথে তোর বিয়ে দিবে।কিছু গড়মিল হয়নিতো।

–না আপু আমি নিজে সে ছবি দেখেছি।

–দেখি আঙ্কেল এর সাথে কথা বলে বুঝাবানি।বুঝালে নিশ্চয়ই বুঝবে।আমার বাসায় যতদিন ইচ্ছা থাক কোনো সমস্যা নেই কিন্তু আঙ্কেল এর সাথে মবোমালিন্য থাকাটা ঠিক হবেনা।

–নাহ আপু এটা তোমার শ্বশুরবাড়ি।এখানে বেশীদিন থাকা যাবেনা।আমি এক সপ্তাহের মাঝেই চলে যাবো বুঝেছো আপু।

–কোথায় যাবি তুই।তোকে আমি আঙ্কেল ছাড়া আর কোথাও যেতে দিবোনা।

–একটা ছোটখাটো জব খুজছি,ফ্রেন্ডদের বলেছি ম্যানেজ হলেই চলে যাবো আপু।

রোজা কফি বানানোতে মন দিয়েছে।কিভাবে কফি বানাবে ভাবছে।কিভাবে বানালে কফি বেশী ভালো হবে রোজা ইউটিউব এর হেল্প নিলো।এটা তো আর সাধারণ কফি না রোজা কাছে।এটা বিশেষ এক কফি হবে তার হাতের।পানি গরম করে ভেবে যাচ্ছে কড়া কফি চেয়েছে।কয়েক চামচ কফি দিলে নিশ্চয়ই অনেক কড়া হবে।চিনি না দিলে বোধহয় আরো বেশী কড়া হবে কফি।মানুষ অনেক সময় বেশী ভালো করতে গিয়ে খুব খারাপ করে ফেলে।রোজা এক কাপ কফি বানিয়ে রওনা হয়েছে।শুভ ড্রয়িং রুমে বসে নিউজ দেখছে।রাজ ওয়াশ রুমেই আছে।

–রোজা শুভর হাতে কফির কাপ টা দিয়ে বললো আপনার জন্য কড়া কফি।

–শুভ রোজার দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিলো।মুখের ভাবখানা এমন যেনো জীবনে এর থেকে সুন্দর কফি সে কখনো খায়নি।শুভর মুখের এমন আয়েষী ভাব দেখে রোজা ভীষণ খুশী।শুভ মুখে কিছু বলছে না দেখে রোজা নিজে বললো,

‘কেমন হয়েছে কফি।’

‘তুমি বানিয়েছো কফি সেটার নিঃসন্দেহে ভালো হয়েছে।’

‘আপনার পছন্দ হলে রেগুলার এমন কফি বানাবো আমি।’

‘লাইফে এমন কফি আগে খায়নি।অনেক সুন্দর ছিলো টেস্ট টা।থ্যাংক ইউ সো মাচ মিস ইরহাম আহমেদ রোজা।’

‘এই প্রশংসা টুকু পাওয়ার জন্যই তো রোজার এত কষ্ট করা।’

–শুভর ফোন বাজতেই শুভ ফোন নিয়ে বাইরে গেলো আর বললো একটা ইমারজেন্সি কল আসছি।শুভ বাইরে যেতেই রোজা শুভর কাপের অবশিষ্ট কফিটুকু খাওয়ার উদ্দেশ্য মুখে দিলো।রোজা কফিতে চুমুক দিয়েই বুঝলো পৃথিবীতে এমন অখাদ্য বস্তু আর দ্বিতীয়টি নেই।এত তিতো আর জঘন্য সে টেস্ট।রোজা কিচেনে গিয়ে সোহানার থেকে দ্রুত একটু চিনি নিয়ে মুখ দিলো।রোজার উপর দিয়ে মনে হচ্ছে বিরাট কোনো তুফান বয়ে গেলো এতটুকু কফি মুখে দিয়ে।চিনি গালে দিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে শুভ বাকি কফিটুকু খাচ্ছে।রোজা ছুটে এসে শুভর মুখ থেকে কফির কাপ কেড়ে নিয়ে বললো,

–আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন এই জঘন্য কফি খেলে।মিথ্যা বললেন কেনো আমাকে খুশি করতে।

—-শুভ বেশ সন্দিহান ভাবে রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,এটা জঘন্য তুমি বুঝলে কিভাবে?

–বিকজ আমি এখান থেকে খেয়ে দেখছিলাম আপনি বাইরে গেলে।

–শুভ কপাল টান টান করে তাকালো রোজার দিকে সে তার কাপের কফি খেয়েছে।তোমার এত কষ্ট করে বানানো কফি, এত যত্নে করে এনেছো আমার জন্য। আমার কাছে সিরিয়াসলি অনেকটায় অমৃত এর মতো ছিলো।

রোজা লজ্জা পেয়ে জায়গা পরিবর্তন করলো।

–সকাল দশটায় সকালের নাস্তা খেয়ে রোজা,শুভ,রাজ,নোমান,আর সোহানা ঘুরতে বের হলো।রোজার খুব শখ হয়েছে সে মাশরাফির বাড়ি দেখবে।তাছাড়া নিজ চোখে সে মাশরাফিকে দেখবে।সব সময় তো টিভিতে দেখেছে।তার সাথে একটা সেল্ফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করবে।রোজা অনেক বকবক করছে।রোজার বকবক শুনে মুখরিত সবাই।বাড়ি থেকে একমিনিটের রাস্তা ইটের সেলিং তার পর পিজ ঢালা রাস্তা তবে এটা মেইন রোড না।মেইন রোড এ যেতে এই ছোট্ট রাস্তা থেকে আরো তিন চার মিনিট লাগবে।তবে মেইন রোড দিয়ে গেলে অনেক কিছুই দেখা যাবেনা বা হেঁটে গল্প করতেও আনন্দ পাবেনা।বিকজ চারদিকে গাড়ির শব্দ।শহরের ভেতর দিয়ে পিজ ঢালা ছোট্ট রোড দিয়ে তারা হেঁটে যাচ্ছে।শহরের অলি দিয়ে গলি দিয়ে তারা হাঁটছে আর গল্প করছে।রাজ মাঝে মধ্য রোজার সাথে সেল্ফি নিচ্ছে তো কখনো সবার সাথে তো কখনো শুভর সাথে।সেটেলমেন্ট অফিসের সামনে দিয়ে এসে তারা বয়েজ স্কুলের মাঠে এসে বসলো।মাঠের সাথেই রাস্তা তার সাথে মিশে আছে বস মাশরাফির বাড়ি।রোজা বলছে আমি খুব অবাক হচ্ছি এত সাধারণ একটা বাড়ি আমাদের ক্যাপ্টেন মাশরাফির। আমি ভেবেছিলাম এই শহরের সব থেকে বিলাসবহুল বাড়ি বোধহয় তার।শুভ বললো তোমার এমন ভাবাটায় স্বাভাবিক। কিন্তু বস তো বস ই তার জীবন এমন ই সাধারণ। দো’তলা বিশিষ্ট সুন্দর বাড়িটা তারা ঘুরে দেখলো।সোহানার রান্নার টাইম হয়ে গেলো তাই নোমান সোহানাকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেলো।রোজা আর শুভ কে রাজ জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করাতে নিয়ে গেলো।রোজা জমিদার দের নিয়ে অনেক গল্প শুনে এসেছে ভাড়াটিয়ার থেকে।অথচ জমিদার বাড়ি গিয়ে দেখলো সেখানে একটা বাঁধানো ঘাটের পুকুর ছাড়া আর কিছু নেই আর আছে বিশাল দুইটা ফিলার।রোজা পুকুর পাড়ে বসে পানিতে ইটের টুকরো ফেলছে আর বলছে রাজ ভাইয়া নাহ ঘুরে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই কিন্তু এ শহরে।

–রাজ বললো,আমার মতো একটা সুন্দর ছেলের জন্ম এ শহরেই রোজা।

–শুভ রোজার দিকে তাকিয়ে বললো,এই শহরের পুরটায় সুন্দরে ভরপুর।সেই সুন্দরের বর্ণনা এভাবে করা যাবেনা।এই নড়াইল না আসলে জীবনের শ্রেষ্ঠ সুন্দর মুহুর্ত গুলো পেতাম না।

–রোজা বললো কি এমন দেখলেন আপনি।

–যা দেখেছি তার থেকে বেশী অনুভব করেছি।টোটাল ই সুন্দর।

–রাজ বললো,সে মিথ্যা বলেনা রোজা।শুভ বলেছে তার মানে সুন্দর ভীষণ সুন্দর। ওয়েট করো দুদিন পরে এখানে সুলতান মেলা হবে বিশাল নৌকা বাইচ হবে দেখো কি সুন্দর রোজা।

–মেলা দেখে লাভ কি আমি তো আর টাকা আনিনি।

–তুমি চিন্তা করোনা আমরা আছিনা।তোমার মেলার সব খরচ আমি বহন করবো।

জমিদার বাড়ি ঘুরে তারা বেরিয়ে এলো।রাস্তায় ফুসকাওয়ালা তাদের দেখে বললো খাবেন।রাজ বললো দু-প্লেট দিন।শুভ তো ফুচকা খুব হেট করে।ও কখনোই খায় না।
রোজা ফুচকা খাচ্ছে শুভ কয়েকটা পিক তুলে নিলো।এ কদিনে গ্যালারি ভরে গিয়েছে রোজার পিক তুলতে তুলতে।শুভ ফুসকা পছন্দ করেনা।রোজা তাও শুভর গালে একটা ফুসকা দিয়ে দিলো।তার হাতের দেওয়া শুভ কি ফেলে দিবে।রাজ অবাক হয়ে দেখলো শুভ ফুচকা টা খেয়ে নিলো।রাজের কাছে ব্যাপার টা বেশ আশ্চর্য লাগলো।প্রচন্ড ঝালে ফুচকা খেয়ে রোজার গাল মুখ লাল হয়ে গেলো।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।যদিও সে রাজের সাথে বেড ধরেই খেয়েছে।শুভ রাজ কে একটু চোখ রাঙিয়ে বললো কি প্রয়োজন ছিলো মেয়েটাকে এত ঝাল খাওয়ানোর।

–রাজ বললো,কি ভাই হঠাত এত মায়াদয়া দেখছি।কাহিনী কী?

–কাহিনী না খুজে আইসক্রিম নিয়ে আয় এক্ষুণি।

–রাজ আইসক্রিম আনতে গেলো।রোজা রাজ কে বলছে, আচ্ছা অশুভ আপনি খুব বড়লোক তাইনা।

–শুভ ঠোঁটের কোনে মৃদু হেসে বললো,কেনো?

–এইযে আইফোন,আই ওয়াচ,দামি ল্যাপটপ, দামি শার্ট এগুলা তো বড়লোকের নিশানা।

শুভ হেসে বললো,এগুলা শখ থেকেই কিনেছি দীর্ঘদিন টাকা জমিয়ে।
আমি অত্যান্ত দরিদ্র ফ্যামিলির একটা ছেলে।অনেক কষ্টে বড় হয়েছি।ছোট বেলা এক প্রকার আশ্রমে বড় হয়েছি।অনেক স্ট্রাগল করে এ পর্যন্ত এসেছি।আমার আপণ বলতে কেউ নেই মা বাবা ছাড়া।এখনো অনেক অভাবের জীবন।নিজের কোনো বাড়ি ঘর ও নেই।আমাকে ফিটফাট দেখে বড়লোক মনে হোক এজন্য আমি ফিটফাট থাকিনা।কদিন বা বাঁচবো।একটু না হয় বাঁচার মতোই বাঁচি।জীবনের কষ্টের মুহুর্ত মনে পড়লে ভাবি জীবন এত কঠিন কেনো।অনেক কষ্টের পরে একটা জব পেয়েছি।আমি জানি কোনো মেয়ে আমার মতো দরিদ্র ছেলেকে ভালোবাসবেনা।তোমার মতো কোনো সুন্দরী মেয়েকে ভালবাসার যোগ্যতা আমার নেই।

চলবে,,