বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১৭

0
445

#বৃষ্টিবিলাস
১৭.
#writer_Mousumi_Akter

–ভ্যাপসা গরমে উত্তপ্ত সূর্যের প্রচন্ড তাপ মাথায় নিয়ে ঘেমে নেয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো রোজা রাজ আর শুভ।পুরাটা রাস্তা রোজা আর শুভ একে অপরের দিকে মনের অজান্তেই তাকিয়েছে কয়েকলক্ষ বার।বাড়িতে এসেই তারা দেখলো ড্রায়িং রুমে নোমান, সোহানা, রাজের আম্মা সাথে একজন দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক বসে আছেন সোফায়। তার সামনে টি-টেবিলে আপেল,কমলা,আঙুর, আর চা রাখা।তারা চারজন চা খাচ্ছে আর কথা বলছে।হঠাত রোজার কানে এলো দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক বলছেন আমি ভেবেছি কোথাও মেয়ে দেখতে যাবা তাই তড়িঘড়ি করে বাইক চালিয়ে এসেছি আপা আর তুমি বলছো মেয়ে এ বাড়িতেই আছে।ভদ্রলোকটির বাইক কথাটা শুনে রোজা আর শুভ বাইরে তাকিয়ে দেখলো একটা বাই সাইকেল এর ন্যায় মোটরসাইকেল।রাজ বিশাল হাসি চেপে গিয়ে বললো শুভ দেখ ভাই এই হলো সিটি হান্ড্রেড তাও ভাঙ্গারী এর থেকে একটা বাই সাইকেল চালালেও মান ইজ্জত বাঁচে।মামা একজন ব্যাংকার টাকার তো আর অভাব নেই।একটা ভালো গাড়ি কিনতে পারে তা না করে বিগত ২০ বছর ধরে এই ভাঙ্গারী চালাচ্ছে।আমার মাঝে মধ্য মন চায় এটা কেজিতে বিক্রি করে বাদাম রেখে খায়।এই গাড়িকে আমার মামা বাইক বলে দাবি করে।যেখানে যাবে খুব প্রাউড ফিল করে বলবে,আমি বাইক ছাড়া পথ চলতে পারিনা।আমার বাইকের মতো বাইক এখন হয় না।ভাই তোর বাইকের মতো বাইক মামার থাকলে মামা কি বলতো কে জানে।এমনি চাটামে টিকতে পারিনা বলেই রাজ হো হো করে হাসতে গিয়ে মুখ চেপে ধরলো।শুভ নিঃশব্দে হেসে দিলো এই মুহুর্তে রাজের কথা শুনে শুভর প্রচন্ড হাসি পেয়েছে, প্রচন্ড জোরে হাসতে পারলে শান্তি পেতো কিন্ত ভেতরে রাজের মামা আছে।সে কি ভাববে তাই শুভ হেসেই যাচ্ছে কিন্তু শব্দ করছে না।রোজা ও হাসছে মুখে হাত চেপে ধরে।রাজের কথাবার্তায় এমন হাসি আসবেই।রোজা বলে উঠলো রাজ ভাইয়া আপনি না অহনার মতোই। অহনা আপনার মতোই প্রচন্ড হাসায়।রাজ বললো,আমি জীবনে যতবার অহনার নাম শুনেছি রোজা বিলিভ মি আমার সুইজারল্যান্ড দেখার শখের থেকেও অহনা কে দেখার শখ বেশী।
আমার একটায় কাজ এইবার ঢাকা ফিরে আগে অহনার পা হতে মাথা পর্যন্ত অহনাকে দেখবো।কই আছে ওই মেয়ের মাঝে যে রোজা সারাদিন অহনা অহনা করে।রোজা বললো,করবোনা কেনো বলুন তো।অহনা আমার পাক্কা ফ্রেন্ড জীবনের সব থেকে বিশ্বস্ত ফ্রেন্ড অহনা, আমার আপন কাকার মেয়ে, সে আমার আপন বোন ই।জীবনে যা বলেছি অহনা রিস্ক নিয়ে সেটায় করেছে আমার জন্য।

–শুভ রাজ কে চাপা কন্ঠে বললো তোর কপাল খুলছে ভাই ভেতরে তোর মামা মনে হয় তোর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসছে।

–যাক এতদিনে তাদের চোখে পড়েছে তাদের ছেলে বড় হয়েছে।

–হ উইকেট পতনের জন্য রেডি হয়ে যা।

–এ ভাই আমার লজ্জা করছে।

–শুভ বিরাট আকারে যেনো অবাক বনে গেলো।শুভর চোখে পৃথিবীর সব থেকে নির্লজ্জ মানুষের মুখে লজ্জা কথা শুনে শুভ ভীষণ আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো তোর লজ্জার বিশেষ কারণ টা কী?

–ওইযে বিয়ের কথা ভেবে,বউ আমাকে আদর করবে ভেবে,মানে ফুলসজ্জার কথা ভেবে।

–রোজা আবার ও হেসে দিলো।ভীষণ হাসি পাচ্ছে রোজার।রোজা হাসছে টোল পাড়া গালের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ।চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে না।তাই রোজার হাসি আটকাতে রাজ কে বললো,

— আর একটা কথা ও বলবি না।তুই কথা বললে হাসি পাচ্ছে,আর এই মুহুর্তে হাসিতে খুব অসুবিধা হচ্ছে আমার।ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে আমার।

–রাজ দুই ভ্রু উঁচিয়ে বললো,আসলেই সমস্যা হচ্ছে তোর তাও আবার হাসিতে ভাবা যায় এগুলা রোজা।

রোজা এবার আরো হাসছে।হেসেই যাচ্ছে,যে হাসিতে শুভ আকৃষ্ট হচ্ছে আরো তীব্র ভাবে।ঘরের মাঝে বিভিন্ন কথাবার্তা হচ্ছে রাজের বিয়ে নিয়ে।

–রাজের আম্মা বলছেন,বৌমা রোজাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।মেয়েটা খুব ভালো তাইনা।কত সহজে আমাদের সাথে মিশে গিয়েছে।

–সোহানা বলছে,হুম মা রোজা খুব ই ভালো মেয়ে।

–রোজাকে দেখেই আমি একটা জিনিস ভেবেছি বৌমা।

–কি ভেবেছেন মা।

–আমার রাজের সাথে রোজাকে বেশ মানাবে।আমরাও তো রাজের জন্য মেয়ে খুজছি।মেয়ে যখন ঘরেই এসে পড়েছে তো আর মেয়ে খুজে লাভ কি? কি বলিস নোমান তুই।

–মা রোজা মেয়ে হিসাবে ভীষণ ভালো,দেখতে খুব সুন্দরী। কিন্তু রোজাকে কথাটা কিভাবে বলবো।ভাববে দু’দিনের জন্য বেড়াতে আর আমরা ওর বিয়ে দিতে চাইছি।আমাদের খারাপ ভাববে মা।

–বিয়ের কথা বলাতে ও খারাপ ভাববে কেনো?

–মা তার একটায় কারণ রোজা বিয়ে করতে চাইনা।ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে বলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।এখন বলো যে বিয়ের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার বিয়ের প্রস্তাব দিলে কি সে মানবে।উলটা ভুল বুঝবে আমাদের।

–বিয়ে করতে চাইছে না কেনো?

–ওর বাবা অনেক টাকা ওয়ালা ফ্যামিলি পেয়ে এক বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।যেটা ওর পছন্দ নয়।

–আমার রাজ তো আর বুড়ো না।রোজা নিশ্চয়ই রাজ কে পছন্দ করবে।

–সোহানা বললো,কিন্তু মা রাজ কি রোজাকে পছন্দ করে?ওরা দুজন দুজন কে পছন্দ করে কিনা সেটা না জেনে কিভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারি

–রাজ রোজাকে পছন্দ করে।এটা আমি সিওর।

–মা আপনার ভুল ও হতে পারে।

–ভুল হলেও আমি রাজ আর রোজার বিয়ে দিতে চাই।মেয়েটাকে আমার রাজের সাথে মানাবে খুব।

–আচ্ছা মা আমরা পরে এ ব্যাপারে কথা বলবো।

রাজ হা করে তাকিয়ে আছে শুভ আর রোজার দিকে কেননা নিজের বিয়ের কথা যার সাথে হচ্ছে সে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।লজ্জায় মরি মরি অবস্থা রাজের।রোজার দিকে তাকাতে পারছে না সে।রোজা বা কি ভাবছে রাজ কে নিয়ে।পরিস্হিতি টা খুব বাজে ভাবে সৃষ্টি হলো।রোজার মুখের হাসি বিলীন, মুখ পুড়িয়ে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।রোজার মনে রাজের প্রতি বন্ধুত্ব ছাড়া কোনো ফিলিংস নেই তাই বন্ধুসুলভ একজন মানুষের সাথে বিয়ের কথা ওঠাতেই রোজার ভীষণ মন খারাপ হলো। আর রাজ কে কিভাবে ফেস করবে বুঝতে পারছে না।শুভ তাকিয়ে আছে রোজার দিকে।নিজের একমাত্র প্রেমিকা আর নিজের একমাত্র বন্ধুকে খুব বাজে একটা ঘটনার সৃষ্টি হলো।শুভ রোজাকে চোখের ইশারা করলো যার মানে শান্ত হও কিছু ভেবোনা আমি আছি। রাজ একবার শুভর দিকে তাকাচ্ছে তো এবার রোজার দিকে।রাজ বুঝতে পারলো রোজার ব্যাপার টা খুব একটা ভালো লাগছে না।রাজ দ্রুত বললো,রোজা সো সরি,রিয়েলি সরি।আমি জানিনা এসব প্লিজ ভুল বুঝোনা, প্লিজ সরি রোজা।শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,ভাই রোজাকে বোঝা প্লিজ আমি এসব কিছুই জানিনা।শুভ রাজের পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,আরে ইয়ার বিয়ের কথা হতেই পারে এতে এত সিরিয়াস হওয়ার কিছুই নেই।এই বয়সে এসেও এত ষ্টুপিড এর মতো ঘাবড়ে যাস কেনো তুই।রোজা কিছুই মনে করেনি।কি মনে করবে।এখানে মনে করার কি আছে।জাস্ট বিয়ের কথা হচ্ছে তোদের।তুই অবিবাহিত বিয়ের কথা হবে এটাই স্বাভাবিক তাইনা?কি রোজা বলো কিছু মাইন্ড করেছো।রোজা মাথা নাড়িয়ে বললো না।শুভ বুঝতে পারছে রাজ ভীষণ ভাবে গিলটি ফিল করছে রোজার সামনে রাজ কে অসহায় মনে হচ্ছে।

চলবে,,