বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১৮

0
409

#বৃষ্টিবিলাস
১৮
#writer_Mousumi_Akter

গলা খ্যাক করে শব্দ করে উঠলো রাজ বাইরে থেকে।ভেতরের মানুষ গুলো কে জানান দিলো বাইরে কারো উপস্হিতি আছে।রাজের শব্দে ভেতর থেকে নোমান, সোহানা,রাজের মামা,রাজের আম্মা সবাই ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখলো রাজ, শুভ আর রোজা ভেতরে প্রবেশ করছে।পরিস্হিতি স্বাভাবিক করতে রাজের আম্মা বলে উঠলো,

‘আরে রোজা মা কেমন ঘোরাঘুরি করলে?’

‘রোজা ও স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললো, জ্বী আন্টি খুব ভালো লেগেছে আপনাদের শহর।এই শহরে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে।’

‘নোমান বললো,কি শালিকা তোমার তাহলে ভালো লেগেছে।’

“রোজা আবার ও স্বভাবসুলভ হেসে বললো,হ্যাঁ দুলাভাই খুব ভালো লেগেছে।আমার তো এখানে থেকে যেতে ইচ্ছা করছে না ‘

এটুকু বলেই শুভর দিকে তাকালো রোজা।শুভ ও চশমার আড়ালে আড়চোখে তাকালো রোজার দিকে।শুভ এক ঠোঁট দিয়ে আরেক ঠোঁট চেপে ধরে তাকিয়ে আছে রোজার দিকে।এই চাহনির মানে শুধু এ দুজন মানুষ ই জানে।

‘সোহানা বললো,শুভ এসো ভাই বসো।ঘেমে কি অবস্থা তোমার।সব গরম দেখছি তোমার উপরেই পড়েছে।’

‘জ্বী ভাবি আজ প্রচন্ড গরম পড়েছে।ঘেমে একবারে নেয়ে গিয়েছি প্রায়।এমনিতেও শীতকালেও প্রায় ঘেমে যায় আমি।’

‘সোহানা আবার বললো,রোজার মুখ দিয়ে মনে হচ্ছে এক্ষুণি র*ক্ত বেরিয়ে আসবে।এত লাল হয়েছে।রোদে গেলে তোর মুখ এমন হয়ে যায় কেনো রোজা।মেকাপ করেছিস মনে হয় তেমন লাগে দেখতে।’

‘শুভ বললো,মুখে আইস দিন ভাবি আপনার বোনকে।মুখ গরমে এমন হয়ে গিয়েছে।’

‘রাজের মামা বললো,বৌমা তোমার বোন হয়।’

‘জ্বী মামা আমার বোন ওর নাম রোজা।’

‘আর এই ছেলেটি।’

‘ও হচ্ছে রাজের বন্ধু মামা ওর নাম শুভ।’

‘শুভ আর রোজা দুজনেই বিনয়ের সাথে সালাম দিলো আসসালামু আলাইকুম মামা।’

‘মামা উত্তর দিলো,ওয়ালাইকুম আসসালাম মামনি আর বাবাজি।তোমরা কেমন আছো?’

‘শুভ আর রোজা দুজনেই একসাথে উত্তর দিলো জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।’

‘রোজা মামনি কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?’

‘বি.বি.এ।’

‘যাক আলহামদুলিল্লাহ ব্যাংকে চাকরি হয়ে যাবে তোমার।চাকরি হলে আমাকে মোটা অংকের একটা লোন দিও একটা গাড়ি কিনবো।রাজ আমার গাড়ি নিয়ে অনেক অপমান করে।ভেবেছি রাজ কে বিয়ে দিবো একটা চাকরি করা মেয়ে দেখে।আর বৌমাকে বলবো মা একটা গাড়ি কিনে দাও।’

রাজের মামা যে ডিরেক্ট রাজের সাথে রোজার বিয়ের ইঙ্গিত দিলো সেটা বুঝতে কারো বাকি রইলো না।রোজার মোটেও ভালো লাগলো না কথাটা।কেননা সে রাজ কে অমন চোখে দেখেই না।শুভ ছাড়া অন্য কারো সাথে এমন কিছু ভাবতেও রোজার অসহ্য লাগে।ভদ্রলোক চা খাচ্ছেন আর গাল চিবিয়ে বিভিন্ন কথা বলেই যাচ্ছেন।
শুভ সাথে সাথেই রাজের দিকে তাকালো।রাজ ও শুভর দিকে তাকালো।রোজার বেশ অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।শুভর কপালে কয়েকটা ভাজ পড়েছে।কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে রাজের মামার দিকে।শুভ প্রচন্ড রাগে ফেটে যাচ্ছে রাজের মামার এমন বিহ্যাভ এ।রোজা শুভর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছে শুভর রাগ হচ্ছে কিন্তু মুখের অদল স্বাভাবিক ই আছে।শুভ কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।নিজের প্রিয়তমার বিয়ের কথা শুনতে কার ই বা ভালো লাগে।

‘রাজ বলে উঠলো,মামা আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো যৌতুক নিবোনা প্র‍য়োজনে শ্বশুর কে দিবো।আপনার শ্বশুর কে বলুন জামাই কে একটা লেটেস্ট হুন্ডা কিনে দিতে।’

‘আমার শ্বশুর কিপ্টা আছে বাবা জীবনেও দিবেনা।’

‘তাহলে মামির নামে যে সম্পত্তি আছে চলুন বিক্রি করে দেই আমরা।আমাদের ও তো হক আছে।’

‘তোমার মামি বলে দিয়েছে তার বাবার বাড়ি থেকে যেনো একটাকার সুতা ও না আনি।আর বলেছে তোমার কি কিছুর অভাব আছে।আমার যা আছে তা আমার ভাই খাবে।’

‘তাহলে আমার বউ ও তাই বলবে যা আছে আমার বাপ ভাই খাবে তাইনা মামা।’

‘আমি একটু মসকরা করছিলাম আরকি বাবা।’

‘রোজা বললো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি প্রচন্ড গরম লাগছে।’

রোজা উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে পানির ট্যাপ ছেড়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর তপ্ত রোদে ভালবাসার প্রহরের কথা ভেবে নিজেই হাসছে।আয়নায় নিজেকে দেখছে আর ভাবছে তাকে বোধহয় আজ একটু বেশী সুন্দর লাগছে।একভাবে আয়নায় তাকিয়ে নিজের চোখ, মুখ, ঠোঁট ভালো ভাবে দেখছে। সব কিছুই যেনো আজ অন্যরকম লাগছে।শুভর সেই প্রপোজ বারবার কানে বাজছে রোজার।মুহুর্ত টা ভীষণ সুন্দর ছিলো।মাথার উপর যে এত উত্তপ্ত সূর্য ছিলো,ভীষণ রোদ ছিলো কোণটায় খেয়াল ছিলোনা দুজনের।রোজার মন আর মুখ থেকে হাসি যাচ্ছেই না।এরই মাঝে ওয়াশরুমের দরজায় বাইরে থেকে টোকা দিচ্ছে শুভ আর রোজার নাম ধরে ডাকছে।শুভর কন্ঠ শুনেই রোজা যেনো লজ্জায় মিহিয়ে গেলো।তবে তার ভালো লাগছে শুভর উপস্হিতি।

‘রোজা দরজায় কান লাগিয়ে পানির ট্যাপ বন্ধ করে বললো,কিছু বলবেন?’

‘হুম দরজা খোলো।’

‘কিন্তু।’

‘সমস্যা নেই আমি ভেতরে আসবো না।’

রোজা দরজা খুলে একটু মুখ বাড়াতেই শুভ রোজার দিকে স্হির নয়নে তাকালো একবার।রোজার চোখে মুখে পানি চিক চিক করছে।চোখের কোয়া আর পাপড়ি পানিতে ভিজে ভারী সুন্দর লাগছে।রোজার দুই গাল রোদের তাপে লালবর্ণ ধারণ করেছে।রোজার এমন রুপ ও শুভ কে ভীষণ আকৃষ্ট করছিলো।

‘রোজা নিচের দিকে তকিয়ে বললো, কিছু বলবেন।লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা।’

‘শুভ বললো, আমি কি তোমায় স্পর্শ করতে পারি মানে তোমার মুখে হাত দিতে পারি।’

সামান্য একটু মুখে হাত দিতেও এ যুগে কেউ পারমিশন নেই সেটা শুভ কে না দেখলে রোজা বুঝতোই না।রোজার ধারনা ছিলো এ যুগের ছেলেরা স্পর্শ করার উদ্দেশ্য হয়তো রিলেশন করে।

‘রোজা চোখ তুলে শুভর দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক বুঝালো।’

–শুভ রোজার লাল হয়ে যাওয়া গালে আলতো ভাবে আইস ঘষে দিচ্ছে। লজ্জা আর ভালোলাগা দুটোই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে রোজার।এই ভাললাগা ভীষণ ভাললাগা,পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর অনুভূতি। শুভর আঙুল গুলো আলতো ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে রোজার গালে।অনুভূতির গভীরে হারিয়ে রোজা চোখ বন্ধ করে আছে।অনুভূতিরা রন্ধে রন্ধে জেগে জেগে উঠছে।এক শীতল অনুভূতি রোজাকে মাতোয়ারা করে তুলছে।মেয়েরা স্বভাবগতই লাজুক প্রকৃতির। রোজার ইচ্ছা করছিলো সেও শুভকে একটু ছুঁয়ে দিক।তার শুভকে আলতে পরশে মুখে হাত বোলাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না।ইচ্ছাটা অপূর্ণ থাকায় ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে রোজা।ভীষণ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার যন্ত্রণা কম পোড়াচ্ছে না রোজাকে কিন্তু লজ্জার শক্তি এতই বেশী রোজা পেরে ওঠেনি।শুভ আস্তে করে রোজার কানে বলে গেলো সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ছাদে এসো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।রোজা লাজুক হাসি দিয়ে ওয়াশরুমের ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে যেনো লজ্জা আর ভালোলাগায় মিশে যাচ্ছে।বুকের মাঝে হাতুড়ির মতো বাড়ি দিচ্ছে তার।শুভ কাছেই এলেই তার এই সমস্যা টা হয়।হৃদপিন্ডের ধুকপুক আওয়াজ যেনো তীব্র গতিতে বেড়ে যায়।রোজার অস্হিরতা বেড়ে গেলো বহুগুন।শুভ তাকে কি বলতে চাইছে সেটা এক্ষুণি জানতে পারলে বোধহয় ভালো হতো তার।কি সারপ্রাইজ দিবে।ভালবাসার মাঝে অপেক্ষা সব থেকে যন্ত্রণার।সে যন্ত্রণায় পোড়াতেই কি শুভ তাকে অপেক্ষায় রেখে চলে গেলো।দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা রোজার মনে হচ্ছে কয়েক জনম কেটে গিয়েছে। তার ইচ্ছা করছে হাতে কোনো যাদু টোনা থাকলে পৃথিবীর সবাইকে নিদ্রায় পাঠিয়ে শুভর সারপ্রাইজ টা দেখতো।

চলবে,,