বৃষ্টিবিলাস পর্ব-১৯

0
445

#বৃষ্টিবিলাস
১৯.
#writer_Mousumi_Akter
সন্ধ্যার পরে সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরে মাগরিবের নামাজ পড়ে নোমান,রাজ,শুভ মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলো।হাতে একগাঁদা চিপস আর চানাচুরের প্যাকেট একটা পলিথিন এ মুড়িয়ে নিয়ে আসছে শুভ।বাসায় ঢুকে সোহানার হাতে দিয়ে বললো,
‘ভাবি আপনার জন্য।’

‘সোহানা প্যাকেট টা হাতে নিয়ে বললো তোমরা বসো আমি চা নিয়ে আসি।’

‘নোমান রোজাকে ডাকলো মিস শালিকা কোথায় আপনি এদিকে আসুন।’

‘রোজা এসে নোমানের পাশে বসলো আর বললো কি ব্যাপার দুলাভাই আপনি আমাকে খুজছেন।’

‘নোমান বললো আমরা এদিকে আছি আর তুমি কোথায় বলোতো শালিকা খুজে পাচ্ছি না।’

‘আমি আন্টির রুমেই ছিলাম দুলাভাই।’

‘ভাবছি রোজা নড়াইল তোমার বিয়ে দিয়ে রেখে দেই।তোমার আর ফিরে যাবার দরকার নেই।’

‘রাজ বললো কি ব্যাপার ভাইয়া সবাই রোজার বিয়ে নিয়ে পড়েছো কেনো?বাচ্চা মেয়ে ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি।’

‘নোমান বললো,বিয়ের বয়স হয়নি তোকে কে বললো।রোজা কি তোর মতো আদুভাই হবে নাকি।সোহানার খুব শখ ছিলো অহনার সাথে রাজের বিয়ে দিবে কিন্তু শালিকার নাকি আবার ওদিকে বিয়ে শাদী ঠিক হয়েছে।’

‘রোজা বললো,ভীষণ মানাতো কিন্তু দুলাভাই।রাজ ভাইয়া আর অহনা দুজন ই মারাত্মক রকমের কিউট।আমি কিন্তু অহনাকে বলে দিবো তোর বিয়ে ভেঙে দিয়ে রাজ ভাইয়াকে বিয়ে কর।কি রাজ ভাইয়া আপনি রাজি তো।’

‘রাজ বললো,এই অহনার সামনে যেতেই আমার ভীষণ লজ্জা করবে।যতবার অহনার নাম শুনেছি কি জানি কি পরিমান সুন্দরী সে মহিলা।’

‘রোজা বললো,চোখ ফেরাতে পারবেন না।’

এরই মাঝে সোহানা চা এর ট্রে হাতে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।শুভ এতক্ষণ চুপচাপ আছে। সবার কথা শুনছে কোনো কথা বলছেনা।তবে দৃষ্টি সব সময় রোজার দিকেই আছে।শুভর ও ইচ্ছা করছেনা চোখের দৃষ্টি সরাতে।প্রেম ভালবাসা কি অদ্ভুত তাইনা?যার উপর মায়া পড়ে যায় তার থেকে আর চোখ ই সরানো যায়না।এইদিকে রোজা ভীষণ ছটফট করছে রাত হবার।শুভ তাকে কি সারপ্রাইজ দিবে সেটায় দেখার জন্য অপেক্ষা করছে রোজা।

‘সোহানা ভেতরে প্রবেশ করেই বললো,সবাই কথা বলছে শুভর কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা যে।কি ব্যাপার শুভ ভাই চুপ আছো যে।’

‘রাজ বললো,আসলে ও ভদ্র সাজার অভিনয় করছে শুভ কিন্তু এতটাও ভদ্র নয়।’

‘শুভ এতক্ষণ পরে বললো, রাজকে উদ্দেশ্য করে সেম টু ইউ ব্রো।’

সবাই চা এ চুমুক দিয়ে বিভিন্ন গল্প করছে।সোহানা আবার ও বেশী করে কাঁচা মরিচ পেয়াজ আর টমেটো কেটে চানাচুর আর মুড়ি দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে এসছে।চা রেখে সবাই মুড়ি খেতে ব্যাস্ত।নোমান বললো সোহানা তোমার হাতে যাদু আছে যা রান্না করো যে খাবার রেডি করো সেটা যেনো অমৃত।রাজ বললো,ভাবির হাতে যাদু আছে এটা সত্য তবে খুব খারাপ কিছু রান্না করলেও ভাইয়া তার প্রশংসা করতে ভুলবে না।ভাবি স্পর্শ করলেই ভাইয়ার কাছে অমৃত হয়ে যায়।শুভ রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,তোর মতো ফ্লার্টবাজ ছেলে কিভাবে বুঝবে ভালবাসার অনুভূতি। ইটস কলড লাভ ইয়ার।সোহানা বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।রোজা একটা বাটিতে করে রাজের আম্মার জন্য মুড়ি নিয়ে গেলো।রাজের আম্মা বললো,

‘কি ব্যাপার রোজা মা তুমি মুড়ি নিয়ে এসছো কেনো?’
‘আন্টি অনেক মজা হয়েছে খেয়ে দেখুন না।’
‘এসো খেতে খেতে গল্প করি রোজা মা।’
‘জ্বী আন্টি বলুন।’
‘তোমার তো গ্রামে থাকার অভ্যাস নেই তাইনা মা।’
‘না মানে বড় হয়েছি ঢাকায় এইজন্য অভ্যাস নেই।’
“নড়াইল অসুবিধা হচ্ছে না।’
‘নাতো আন্টি প্রথমবার ঢাকার বাইরে এসে আমার খুব ভালো লাগছে আন্টি.আপনাদের সাথে ভীষণ আনন্দে আছি আমি।’
‘তারমানে আমাদের সাথে থাকতে পারবে তুমি।’
‘হুম পারবো আন্টি খুব পারবো।’

‘এরই মাঝে রাজ এসে বললো,রোজা তোমার ফোন এসছে।’

‘কে?’

‘অহনা মেবি! ভাবি বললো।’

রোজা ফোন কানে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

‘আরে অহনা তোর উনি কেমন আছে?’

‘শুনেছি ভালো আছে?’

‘ক্যানো তুই জানিস না।”

‘নারে,আম্মুর সাথে কথা হয় শুধু উনার।’

‘সে কি শুধু তার শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে।এমন কিউট বউটার মুখ দেখে নি।’

‘হ্যাঁ দেখেছে কিন্তু সে নাকি বলেছে তার লজ্জা লাগে কথা বলতে।আম্মুর কাছে ফোন দিয়ে শুধু আমার কথা জিজ্ঞেস করে।সারাদিন ফোন করে সে।’

‘তুই ফোন দিতে পারিস না।’

‘আমার কাছে নাম্বার নেই।আর সে বলেছে একবারে সব কথা বাসর ঘরে বলবে।’

‘বাসর ঘরে রোমান্স করবে নাকি দেখবে।তুই যা কিউট দুলাভাইজান দেখে জ্ঞান হারাবে।”

‘হুঁস জ্ঞান না ঘোড়ারডিম হারাবে।সে কেমন লোক বলতো বিয়ে ঠিক হয়েছে হবু বউ এর সাথে একটা বার কথা বলছে না।এ কেমন পুরুষ বলতো।আমার তার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছে।সে গম্ভীর নাকি খোলা মনের। সে রোমান্টিক নাকি আনরোমান্টিক কিছুই বুঝতেছিনা।বিয়ের আগে একবার কথা বলে নিলে ব্যাপার টা ভঝা যেতো।এই রোজা তুই এইবার ফিরে আয়তো।তুই থাকলে তোকে দিয়ে কথা বলাতে পারতাম আমার তো খুব লজ্জা লাগছে।’

‘তোর কি সেই বেটার ফটোক দেখে পছন্দ হয়েছে।’

‘মিথ্যা বলবোনা আমি ক্রাশ খেয়েছি দেখে।’

‘আহারে! বেচারি।”

‘রোজা মজা নিস না ইয়ার।”

‘দেখ অহনা ওই বেটা যতই সুন্দর হোক আমাদের রাজ ভাইয়ার থেকে সুন্দর না কিন্তু।রাজ ভাইয়াকে দেখেই ভেবেছিলাম তোর সাথে বিয়ে দিবো।এমন কি সোহানা আপুর ও সেই ইচ্ছা ছিলো।বাট এর ই মাঝে তোর বিয়ে ঠিক হলো।’

‘রাজ কি খুব কিউট নাকি রে রোজা।’

‘মারাত্মক সুন্দর! তুই দেখলেই জাস্ট ফিদা হবি।’

‘আহা রোজা তোর হাব ভাব ভালো মনে হচ্ছে না।ওই রাজের উপর ক্রাশ খাস নিতো আবার।”

‘রাজ ভাইয়ার উপর ক্রাশ খাওয়া দোষের কিছু নয়।তুই ক্রাশ খাবি পাক্কা।’

‘রাজের সাথে কি চলে রোজা তোর।নড়াইল গিয়ে প্রেমে পড়িস নিতো।’

‘রোজা শুভর মুখখান ভেবে হেসে দিলো আর বললো অহনা আমি তোকে সব বলবো।এখানে এসে আমার রাজপুত্র কে খুজে পেয়েছি।আই রিয়েলি লাভ হার।’

রোজার পেছনে রাজ দাঁড়িয়ে ছিলো।ফোনের ভলিয়ম বেশ বেশী থাকায় রাজ কথা গুলো শুনলো।কেমন যেনো অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো রাজের ভেতরে।রাজের কাছে মনে হলো রোজা তাকেই ইঙ্গিত করেছে।রাজের চোখ মুখে হঠাত এক ভালো লাগার সৃষ্টি হলো।রাজ দ্রুত জায়গা ত্যাগ করলো।

হঠাত রাজের ফোন বেজে উঠলো।ফোনের ওপাস থেকে একজন নারী কন্ঠ বলে উঠলো,

‘ হ্যালো হ্যান্ডসাম।’

“রাজ বেশ আশ্চর্য হয়েই বললো,কে আপনি?’

‘তোমার জানেমান হ্যান্ডসাম।’

‘মানে?’

‘আকাশে বাতাসে শুধু তোমার রুপের প্রশংসা শুনছি।আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে গেছি জানেমান।আই লাভ ইউ।’

‘আরে আপু আস্তে বলুন।বুকে ব্যাথা করছে খুব।ইয়ে বলছি কি আপু আপনার জামাই ভেবে কি আমাকে জানেমান বলছেন।ভুলে যেনো কিস করে দিয়েন না।”

‘আরে জানু প্রয়োজনে একটা কেনো হাজার টা কিস দিবো তোমায়। ”

‘ওহ মাই গড!কোন মহিলার পাল্লায় পড়লাম মাফ করেদিন খালাম্মা।আমি একটা নিরীহ ছেলে।কি ক্ষতি করেছি আপনার।’

‘এইভাবে ভয় পাইতাছেন ক্যা হবু জামাই।’

‘ভয় পামু নাহ ক্যান।এই ধরনের মহিলা আমি ভয় পায় খুব।হবু জামাই কেডা।’

‘আমার না রোজার।’

‘মানে।’

‘হ আমার বোন রোজা আপনারে দেখে ক্রাশ খেয়ে আহত হয়ে আমাকে জানিয়েছে।তাকে দ্রুত প্রপোজ টা করে দিন।আমি অহনা ইয়ার।’

‘আরে সুন্দরী! কি কপাল আমার।তুমি আমাকে ফোন দিয়েছো আগে বলবা না। ‘

‘আমি কিন্তু ভয়ানক মহিলা রাজ হ্যান্ডসাম।’

‘প্রব্লেম নেই সুন্দরী বিয়াইন।তোমার প্রশংসা শুনতে শুনতে খাওয়া লাগেনা আমার।’

‘তাইনা জানেমান।’

‘ইয়েস জানেমান।’

দুজনে বেশ অনেক্ষণ আড্ড দিলো ফোনে।রাজ ফোনে কথা শেষ করে দেখলো রোজার কানে ডালিয়া ফুল গুজে রাখা।রাজ খানিক টা মুগ্ধ হয়েই তাকালো।শুভ তাকিয়ে দেখছে তার দেওয়া ডালিয়া ফুলটা রোজা কানে গুজেছে।শুভর মন চাইছে একটা ডালিয়া ফুলের ক্ষেত বানাতে।পৃথিবীতে মনে হয় ডালিয়া ফুল ই সব থেকে বেশী সুন্দর।রাজ রোজার কান থেকে ফুল টা কেড়ে নিয়ে বললো কি ব্যাপার রোজা এই ফুলে কি আছে।খুব যত্ন করে নিয়ে বেড়াচ্ছো।বলেই রাজ ফুলটা নিয়ে দৌড় দিলো।

চলবে,,