ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-০৭

0
255

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৭

তখন সাব্বির সাহেব এসে ইমানের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
– “কি ব্যাপার ইমান স্যার? এদিকে হঠাৎ কি ভেবে?” ইমান তার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
– “ওই তেমন কিছু না, একটু আপনাদের আইন বিভাগে বেড়াতে আসলাম।
আপনাদের আইন বিভাগের অনেক সুনাম শুনেছি আমি আইমান স্যারের মুখে।” সাব্বির সাহেব তখন ইমানকে শ্রেণির কক্ষে নিয়ে এলেন। মিমরা সেখানে বসে পিঠা উৎসবের প্ল্যানিং করছে।
তবে ইমানকে দেখা মাঐ তারা থেমে গেলো। ইমান মিমকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। মিম কালার পেপার গুলো লুকিয়ে ফেললো, সা’দ ফিসফিস করে বললো
– “স্যার, আর নিয়ে আসার সময় পেলেন না ইমান স্যার কে?” মিম তাকে চুপ করিয়ে দিলো, ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “আচ্ছা স্যার আজ আসি? পরে কোনো একদিন এসে না হয় গল্প করবো আপনার সাথে।” তার এমন
এমন কাণ্ডে কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সাব্বির সাহেব……। ইমান নিজের ডিপার্টমেন্টে এসে স্টুডেন্ট
দে’রকে বললো,
– “কি অবস্থা তোমাদের? আইন বিভাগে অলরেডি পিঠা উৎসবের আয়োজন করা শুরু হয়ে গেছে আর তোমরা সকলে বসেবসে আঙুল চিবোচ্ছ ডিপার্টমেন্ট বসে?”
– “দেখুন স্যার, আমরা মিম আপুর মতোন জিনিয়াস নই। যে রাতারাতি প্লানিং প্লটিং করে ফেলবো চোখের পলকে….।
আইন বিভাগে মিম আপু একাই একশো। ও নিজেই প্রতি বছর ছয় থেকে সাত পদের পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসে আর বাকিদের কথা কি বলবো? মিম আপুর কথা ছাড়া একচুল ও নড়ে না আপু যা বলবে তাই হবে। আর ওদের স্যারেরা খুবই ফ্রেন্ডলি স্পেশাললি চেয়ারম্যান স্যার তিনি খুব প্রাধান্য দেয় নস্টুডেন্টদের কে আর মিম আপু তার ভীষণ ফেভারিট। স্যার পিঠা বানানোর সকল উপকরণ নিজে কিনে দেয় আপুদের সাথে থেকে। বাড়তি টাকা দিয়ে দেয়,
আর পিঠা বিক্রির সকল টাকা সমান ভাগে ভাগ করে দেয় যারা এই সকল খাটাখাটুনি করে তাদের মধ্যে। আর আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যারেরা একদম উল্টো, ওনারা ছেঁচড়ার মতোন গিয়ে পিঠে কিনে খায় আইনবিভাগের স্টল থেকে। মিম আপুও অনেক চালাক, কি জানি? তার কস্টিং প্লানিং টা কেমন? ওদের সব পিঠা সেল হয়ে যায় বিক্রি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণে’র মধ্যে।” ইমান মিটিমিটি হেসে নিজের চশমা ঠিক করতে করতে বললো,
– “কিন্তু এবার তেমন কিছুই হবে না আমি কাল পিঠা উৎসবের আয়োজন নিয়ে আলাপআলোচনায় বসতে চাই তোমাদের সাথে।
কাজেই যারা যারা ভালো পিঠা বানায় তাদের আমার সাথে দেখা করতে বলবে, প্রয়োজনে পিঠা কিনে নিয়ে আসবে বাহির থেকে।
এবার আমার আইন বিভাগের রেকর্ড ব্রেক করবো। দেখিয়ে দেবো তোমাদের মিম আপুকে।” ইমানে’র কথা শুনে সকলে চমকে তাকিয়ে রইলো। সে মুচকি হেসে বললো,
– “আমরা দেখিয়ে দেবো সবাইকে। এখানে ‘মিম’ কোনো আতংকের নাম না আর তাছাড়া একবার চেষ্টা করে দেখায় কি ক্ষতি আছে?”
ওরা সকলে ইমানের সাথে সম্মত হলো। পরেরদিন,
ইমান তার ডিপার্টমেন্টর সকল স্টুডেন্ট’সদের নিয়ে আলোচনায় বসেছে।
ও তাদের পিঠা উৎসব সাকসেসফুল করার জন্য বিভিন্ন উপায় বাতলে দিলো আর এয়ো বলে দিলো – “প্রয়োজনে বাহির থেকে পিঠে কিনে নিয়ে আসবে।
কস্টিং সব আমার। যা খরচ হবে। সাথে একটা ক্যাশ ম্যামো রাখবে।”
তখন মানাফ খুব এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার, আর ডেকোরেশন?”
– “কেন ডেকোরেশনের লোকেরা এসে সাজিয়ে দিয়ে যাবে?” ওরা ইমানে’র কথা শুনে খুবই এক্সাইটেড হয়ে পরলো, জিনা বললো,
– “স্যার, মিম আপুকে দেখলাম ইয়া বড় বড় বিশাল বিশাল ককশিট কিনে এনেছে বাজার থেকে? ইমান বিরক্ত হয়ে বললো,
– “তো আমি কি করতাম? বলো? এতো পছন্দ যখন তখন তোমরা এক একজন গিয়ে বিয়ে করে নিলে পারো তোমাদের মিম আপুকে।”জিনা হাসতে হাসতে বললো,
– “আমরা কেন মিম আপুকে বিয়ে করতে যাবো স্যার? আমাদের সিনিয়র রব ভাইয়া আছেনা। তিনি দিন রাত৷ বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছেন মিম আপুকে।”
কথাটা শুনে ইমান তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রব আমতা আমতা করে বললো,
– “তেমন কিছুই না স্যার, আমি জাস্ট পছন্দ করি মিম কে….।” সে একটু রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– “কখনো নিজের মনের কথা বলার চেষ্টা করেছ তাকে?”
– “না স্যার, মাথা খারাপ না কি? তাহলে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টা আছে সেটিও শেষ হয়ে যাবে।” ইমান তার কথা শুনে হাসতে লাগলো, বললো,
– “ভালো করেছ, মেয়ে টা সোজা কথা গুলো বুঝতে চায় না সোজা ভাবে।” ইমানের কথা শুনে রব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো, সে বললো,
– “একবার সাহস করে তাকে প্রেমপত্র লিখেছিলাম, স্যার। সেটা নিয়ে ওর বড় বোন একটা বিশাল বড় রকমের সিনক্রিয়েট করেছিল বাড়িতে।
আমি শুনেছি, আঙ্কেল ওকে ভীষণ ভালোবাসেন।
জীবনে কখনো মেয়ের গায়ে হাত তোলেনি সে তবে হয়তোবা সেদিন আমার জন্য ওকে বাবার হাতে মা’র খেতে হয়েছিল? মেয়ে টা এখনো জানেনা, স্যার। ওই চিঠি টা আমি লিখে ছিলাম ওকে।”
– “এখনো তুমি তাকে ভালোবাসো? রব?”
– “না স্যার, তবে খুব সমীহ করে চলি তাতে। আমি তার জীবনে আর কোনো কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাই না।
এখন আমার একটা পরিবার আছে, বাচ্চা আছে।” ইমান চমকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি বিবাহিত?” রব হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– “জ্বি স্যার,আমার একটা দু’ই বছরের বাচ্চা আছে”
কথাটা শুনেই ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, সে মৃদু হেসে বললো,
– “তাহলে আজ আসি? কাল না হ’য় বাকি কথা হবে?” ইমানের কথা শুনে তারা সকলে সম্মতি জানা
-লো। ইমান বেড়িয়ে গেলো ইউনিভার্সিটি থেকে। তবে, সে কিছু এক টা ভেবে মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলো। পরক্ষনেই,
সে ভাবতে লাগলো মিমের কেমন প্রতিক্রিয়া হবে বিকেলে তাকে নিজের বাড়িতে দেখে?
এইসব ভাবতে ভাবতে ইমান মিটিমিটি হাসতে লাগল
তারপর সে কিছু জিনিসপত্র কিনে নিয়ে চলে এলো বাড়িতে। বিকেলে, ইমান আজমির সাহেবকে নিয়ে
মিমদের বাসায় পৌঁছে গেলো।
তারা হলে বসে বিজনেসের বিষয় গুলো নিয়ে আলো
-চনা করছে। মিম ইমানকে হলে দেখে একটু অবাক হ’য়নি সে খাবার নিয়ে এসে আপ্যায়ন করতে লাগল সবাইকে………..
ইমান মিমে’র সাথে সেধে সেধে কথা বলতে লাগলো। ফাইজান সাহেব মেয়েকে বললেন,
– “আম্মু, তোমরা চাইলে ছাঁদে গিয়ে কথা বলতে পারো আলাদা ভাবে।” মিম তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
– “আলাদাভাবে কথা বলবো মানে? এখানে কোনো পাএ পাত্রী দেখা হচ্ছ না ঠিক আছে?
আর উনি হলেন, আমার শিক্ষক, আমার গুরুজন এছাড়া আমি আর কোনো নতুন সম্পর্কে জড়াতে চাই না ওনার সাথে।”
মেয়ের কথা শুনে চুপ করে গেলেন ফাইজান সাহেব। ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন আমাকে এ বাড়িতে দেখে?”
– “দেখুন স্যার,
বিরক্ত হওয়ার মতো কিছু হয়নি জেনে ভালো লাগল
যে আমার ভাইয়ের একজন নতুন বন্ধু হয়েছে।” দীপ্ত বোনকে এতো টা রেগে যেতে দেখে মন খারাপ করে ফেললো। হালিমা হাসিমুখে বললেন,
– “আপনারা কিছু মনে করবেন না। মেয়ে টা কোনো কারণে একটু ডিস্টার্ব হয়ে আছে।”
– “বাবা মা হিসেবে আপনাদের তাকে একটু বোঝার চেষ্টা করা উচিত না?
আপনারা যদি তাকে না বোঝেন তাহলে কে বুঝবে?” ইমানে’র কথা শুনে সকলে হালিমা, মেয়ের ঘরে চলে গেলেন মিম তখন ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছে বাকি সকলে তাদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত ইমান মালাই পাউরুটির চপ খেয়ে বললো,
– “ইট’স ইয়াম্মি, এটা কে বানিয়েছে?” নয়ন পাশ থেকে মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– “আপনার বউ৷ ইয়ে মানে, আমার মেঝো আপু’ই বানিয়েছে।” ওর কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকিয়ে পরলো, সে আমতা আমতা করে বললো,
– “সরি বাবা ভুল করে আমার মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে।” ইমান তার কথায় মিটিমিটি হাসতে লাগলো। সে নয়নকে বললো,
– “নয়ন, আমাকে তোমাদের পুরো বাড়ি টা ঘুরে দেখাবে?” সে হাসিমুখে ফাইজান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “বাবা যাই?”
– “হ্যাঁ, যাও। আমাকে জিজ্ঞেস করার আছে?” নয়ন ইমানকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাতে লাগলো। মিমের ঘরের সামনে এসে বললো,
– “শুনুন ভাইয়া, আপনার জাদরেল বউ কিন্তু এ ঘরে থাকে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “ওমা তাই?”
– “জ্বি, সে তার কক্ষটা কে অন্য আরেক টি দুনিয়া বানিয়ে রেখেছে।”
– “বলছিলাম, আমার কি সেখানে ঠাই হবে? আই মিন তোমার বোনের কাছে?”
– “কি জানি? বড় আপু তার দেবরের বউ করে আপু কে নিয়ে যেতে চাইছে।
অথচ, কোনো দিক থেকে’ই আমার মেঝো আপুর যোগ্য বলে মনে হয়না ইমান ভাইয়া ওই ছেলে টাকে ” ইমান জড়ানো গলায় তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি নাম কি ওই ছেলের?”
– “ফোন নম্বর টা দিয়ে যেও ডিটিয়েলসে জানাবো তোমাকে। এখন,
এখানে বসে আলোচনা করা যাবে না। তোমার সাথে আমার অনেক আগে থেকেই যোগসাজশ আছে জানলে বাড়িতে ঝামেলা হবে।”
– “কি বললে তুমি? মানে টা কি? বিনা কারণে শাস্তি পেতে হয় এই বাড়ির মানুষজনকে?
– “হুমম, মেঝো আপু পেয়েছিল। হয়তো সেসব তিক্ত স্মৃতি এখনো আপুর মনের মধ্যে রয়ে গেছে। বড় আপুর কিছু কিছু কাজে আমি বিরক্ত….।
ও আসলে নিজের মতে মনে করে সবাইকে ও এক টা প্রেমপএ নিয়ে ওই দিন বাড়িতে যে ঝামেলা করে ছিলো। সেদিন বাবা প্রথম মেঝো আপুর গায়ে হাত তুলেছিল আপুকে ভুল বুঝে।
পরক্ষণেই, সে নিজের ভুল টা বুঝতে পেরে খুব কষ্ট পেয়ে ছিল। কিন্তু, তার গিয়ে মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস হয়নি আপুকে। বাবা সেদিন রাতে খুব কেঁদে ছিল………..। আর কেউ তাকে চোখের জল ফেলতে না দেখলেও আমি দেখেছি বাবাকে। তারপর থেকেই তিনি কেমন যেন হয়ে গেছেন? সারাক্ষণ’ই আগলে আগলে রাখেন মেঝো আপুকে বড় আপুকে বাবা একটু ও সহ্য করতে পারেননা।
তারপর, সে পালিয়ে বিয়ে করে বাবার মন টা আরো বেশি বিষিয়ে তুলেছে,আপুর শশুর বাড়ির লোকদের বাবা একটুও পছন্দ করেন না তিনি বেঁচে থাকতে মেঝো আপুর বিয়ে কখনো হতে দেবেননা ও বাড়িতে
।”
– “আমি বেঁচে থাকতে ও সেটা কখনো পসিবল নয়। ওনারা কি টাকা-পয়সার লোভে এমন করছে?”
– “হুমম, বড় আপুকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে।”
– “নিজের সুখের জন্য ছোটো বোনের এমন চরম সর্বনাশ করতে চাইছেন তিনি?”
– “আর বলো না ভাইয়া, আমার বড় আপুটা বোধহয় পাগল হয়ে গেছে।” ইমান তার কথা শুনে হাসতে লাগলো ছাঁদে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বললো
– “তুমি তো আমাকে আগে বলোনি, নয়ন৷ তোমাদের একটা রুফটপ গার্ডেন আছে?” নয়ন মিটিমিটি হেসে বললো,
– “ওদিকে যাওয়া নিষেধ,একজন এসে তোমার এবং আমার দু’জনের’ই ঠ্যাং ভেঙে দেবে।” ইমান চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে?”
– “আরও কয়েক পা এগিয়ে যাও। তাহলেই দেখতে পাবে।” ইমান ওর কথায় বেশ চমকে গেলো। ও আর একটু সামনে এগিয়ে এসে দেখলো,
মিম গার্ডেনের মধ্যে দোলনায় বসে আছে। বসে বসে আপন মনে কি যেন ভাবছে মেয়েটা? একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে।
ইমান এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসলো মিম তার দিকে তাকাতেই সে তাকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
– “আপনার কাছে মানি প্লান্ট, স্নেক প্লান্ট, ইনডোর প্লান্ট আছে?”
– “কেন কি প্রয়োজন আপনার?”
– “না আসলে এই প্লান্ট গুলো নেই আমার কাছে।”
– “সময় বের করে এক দিন বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ঘুরে আসবেন সেখানে এই গাছ গুলো আছে।”
– “একটা কথা বলবো?”
– “কি?”
– “আপনি এরকম রোবটের মতো কথা বলছেন কেন আমার সাথে?” মিম দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– “নিচে খেতে চলুন, বাবা-মা আপনার জন্য টেবিলে অপেক্ষা করছে।”

চলবে,,,